আত্মহত্যা, আত্মঘাতী সম্পর্কে দু’টি কথা। এ সম্পর্কে বাইবেল কী বলে?

আত্মহত্যা করা ঠিক নয়। আত্মহত্যা অন্যায় এবং অপরাধ, কারণ এতে দশ আজ্ঞা (Ten Commandments) অবমাননা করা হয়, অপবিত্র করা হয় ঈশ্বরের আদেশকে। “নরহত্যা করিও না” (যাত্রাপুস্তক ২০:১৩ পদ)। ঈশ্বরের জীবন দেবার অধিকার তাঁর আছে এবং জীবন নেওয়ারও অধিকার তাঁর আছে। আত্মহত্যা করলে আপনি ঈশ্বরের বাক্যের অবাধ্য হলেন আর ঈশ্বরের জীবন নেওয়ার অবস্থানটি আপনি নিজেই সেই চেষ্টা করলেন।   

হতাশা, নিরাশা এবং পাপ প্রায়ই মানুষকে মরার ইচ্ছা জাগায়। ইস্রায়েল লোকদের অবাধ্যতা, প্রতিবাদ, বিদ্রোহ এবং বিভিন্ন রকমের পাপ মোশীর জন্য একটা বোঝা হয়ে দাড়িয়েছিল যাতে তিনিও চাইছিলেন যেন ঈশ্বর তাকে বধ করেন (গণনাপুস্তক ১১:১৫ পদ)। যখন এলিয় কর্মিল পর্বতে মহা বিজয়ের পর মনের দিক থেকে সতেজ হয়ে উঠলেন, তখন দুষ্ট রাজা আহাবের পাজী স্ত্রী ঈষেবেলের হুঙ্কার আর ভয় দেখানোর কারণে তিনি মরুপ্রান্তরে রোতন গাছের তলায় বসলেন। এলিও ক্লান্তিতে হতাশায় এবং দুঃখে মর্মহত হয়ে ঈশ্বরের কাছে নিজের মরণ কামনা করলেন যেন তিনি মরতে পারেন। তিনি মনে করলেন তার মরণই ভালো (১ রাজাবলি ১৯:৪ পদ)। এখানে বলে রাখা ভালো যে রাণী ইষেবেল বাইবেলের ইতিহাসে একজন নিষ্ঠুর মহিলা ছিলেন। ঈষেবেল এর আগেও বহু ঈশ্বর ভক্তদেরকে হত্যা করেছে। এই রানির একটি কথায়, একটি হুঙ্কারে মহাপরাক্রমী ঈশ্বরের পরম ভক্তকে এতই ভীত করে তুলেছে যে তিনি পালাবার পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। ইয়োব ৬:৮-১১ পদ -  ইয়োব তার জীবনে কঠিন অবস্থায় এবং বন্ধুদের বারবার অভিযোগ ও প্রশ্নবানে জর্জরিত হয়ে জীবনের নির্মম যন্ত্রণায় ভীষণ দুঃখ কষ্ট নেমে এসেছিল তখন তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন আর উত্তেজনাবশত আর আবেগের ছলে তার জিভকে বশে রাখতে না পারায় তিনি চাইলেন যেন ঈশ্বর তাকে চূর্ণ করেন একদম খতম করে দেন। একটি পোকা এরগু গাছটি নষ্ট করলে রোদের অসহ্য তাপে যোনার প্রাণ যায় যায়। এতে যোনার বিরক্ত ও রাগ হলো আর জ্বালাময় দুরুহ অবস্থায় তার নিজের মৃত্যু কামনা করলেন (যোনা ৪:৮ পদ)। এমনকি পৌল আশ্রয়, শরনাপন্ন হতে এবং প্রভুর সঙ্গে থাকার ইচ্ছা করেছিলেন, যদিও তিনি ঈশ্বরের ইচছানুসারে থাকতে চেয়েছিলেন (২ করিন্থীয় ৫:২,৮; ফিলিপীয় ১:২০-২৪)। যদিও এই সমস্ত কিছুর একটি কারণে এবং অনুরূপ অন্য আরেকটি মৃত্যু কামনা ছিল আর এই অবস্থায় একবারও উল্লেখ করে না যে কোনো আচরণে বা কোনো অবস্থায় আত্মহত্যা করার ইচ্ছা করেছিলেন।

সে যাহোক, বাইবেল আমাদের অনেক লোকদের কথা বলে যারা আত্মহত্যা করেছিলেন যেমন : অবীমেলক (বিচারকর্তৃকগণ ৯:৫৪ পদ)।  পাপেপূর্ণ শৌল, যখন গিলবোয় পাহাড়ে ফিলিস্তিনীদের সঙ্গে যুদ্ধে হেরে গেলে তিনি নিজেই তরবারির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। আর শৌলের সাথে তার অস্ত্রবাহকও (১ শমুয়েল ৩১:৪-৬ পদ)। অহীথোফল রাজা দায়ূদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করায় সে নিজেই গলায় দড়ি দিয়া মরল (২ শমূয়েল ১৭:২৩)। সিম্রি যিনি কিনা নিজে পাপ করে ইস্রায়েলকেও পাপ করিয়েছিল আর নিজের বিশ্বাসঘাতকতায় নিজেই আগুনে পুড়ে মরল (১ রাজাবলি ১৬:১৮ পদ)। ঈস্করিয়োতীয় যিহুদা প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেওয়ায় নিজেই গলায় দড়ি দিয়ে মারা গেল (মথি ২৭:৫ পদ)। উপরে উল্লেখ করা এরা ছিল দুষ্ট, পাজি আর এদের প্রত্যেকটি ঘটনা খারাপ ও দুষ্ট লোকদের কৃতকর্ম যা ঈশ্বরের ইচ্ছার বহির্ভূত। অনেকে শিমশোনকে আত্মহত্যার দৃষ্টান্ত দেন (বিচারকর্তৃকগণের বিবরণ ১৬:২৬-৩১ পদ), কিন্তু শিমশোনের লক্ষ্য ছিল পলেস্টিয়দের হত্যা করা কিন্তু তার নিজেকে নয়। বাইবেলের বিবেচনায় আত্মহত্যা যা হত্যার সমান। আর যাহোক আত্মহত্যা হত্যাই। ঈশ্বর-ই হলেন একমাত্র তিনিই যিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কখন, কাকে কীভাবে মারবেন বা জীবন নেবেন। 

আমরা মনে করি যে প্রভু যীশুর সাথে সঠিক সম্পর্কে থাকার আত্মহত্যার প্রতিকার পাওয়া যায়। যখন ফিলিপী নগরের করারক্ষী আত্মহত্যা করতে যাচ্ছিলেন, পৌল বললেন, নিজের ক্ষতি করো না। তার আত্মহত্যার প্রবণতা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় ছিল প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করায় (প্রেরিত ১৬:২৫-৩৪ পদ)। আমরা বিশ্বাস করি যে এটাই আজ অধিকাংশ আত্মহত্যার ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়ার বিষয় হবে।

বাইবেল অনুসারে, একজন ব্যক্তি কখনই আত্মহত্যার মাধ্যম স্বর্গে প্রবেশের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। একজন অপরিত্রাণপ্রাপ্ত ব্যক্তি আত্মহত্যা করলে তার কিছুই হলো না কিন্তু নরকে যাওয়াটা তার জন্য দ্রুত হলো। যাহোক আত্মহত্যার ব্যক্তিটি তার আত্মহত্যার কারণে নয় কিন্তু খ্রীষ্টের মাধ্যমে পরিত্রাণ প্রত্যাখ্যান করায় নিজ ইচ্ছাতেই শেষমেষ নরকে থাকলেন। আমাদের বুঝতে হবে যে সত্যিকারার্থে কেউ বুঝতে পারে না যে আত্মহত্যার ব্যক্তিটির মৃত্যুর মুহূর্তে তার মনে এমন কী হচ্ছিল। অনেকে মৃত্যুকালীন সময় স্বীকারোক্তি করেন এবং মৃত্যুর আগের সেই মুহূর্তে খ্রীষ্টকে গ্রহণ করেন। আত্মহত্যার মুহুর্তেই তার হৃদয়ের পরিবর্তনের শেষ সুযোগের সম্ভব হয় এবং ঈশ্বরের দয়ায় জন্য কেদে চিৎকার করে উঠতে পারে। আমরা এ ধরনের বিবেচনা ঈশ্বরের প্রতি তুলে ধরতে পারি - “কিন্তু সদাপ্রভু অন্তঃকরণের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন” (১ শমূয়েল ১৬:৭ পদ)।

একজন খ্রীষ্টিয়ান যিনি আত্মহত্যা করেন তার সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? বাইবেল এই শিক্ষা দেয় যে, যে মুহুর্তে আমরা সত্যিকারে খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করি, আমরা অনন্ত জীবনের অধিকারী হই - “কারণ ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার এক জাত পুত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাকে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়” (যোহন ৩:১৬ পদ)। বাইবেল অনুযায়ী, খ্রীষ্টিয়ানরা নিশ্চিতভাবে জানেন যে তারা অনন্ত জীবন পেয়ে গেছেন - “তোমরা যাহারা ঈশ্বরের পুত্রের নামে বিশ্বাস করিতেছ, আমি তোমাদিগকে এই সকল কথা লিখিলাম, যেন তোমরা জানিতে পার যে, তোমরা অনন্ত জীবন পাইয়াছ”  (১ যোহন ৫:১৩ পদ)। ঈশ্বরের প্রেমে থাকায় এমন কোনো কিছুই তাকে আলাদা করতে পারে না - “কেননা আমি নিশ্চয় জানি, কি মৃত্যু, কি জীবন, কি দূতগণ, কি আধিপাত্য সকল, কি উপস্থিত বিষয় সকল, কি ভাবী বিষয় সকল, কি পরাক্রম সকল, কি ঊর্ধ্ব স্থান, কি গভীর স্থান, কি অন্য কোন সৃষ্ট বস্তু, কিছুই আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশুতে অবস্থিত ঈশ্বরের প্রেম হইতে আমাদিগকে পৃথক করিতে পারিবে না” (রোমীয় ৮:৩৮-৩৯ পদ)। একজনের আত্মহত্যার প্রমাণ হলো তিনি হতাশায়, নিরাশায় ভুগেছেন এসব শত্রুর কাজ, আমাদের শত্রু হলো ঐ সেই শয়তান- “সে আদি হইতেই নরঘাতক” (যোহন ৮:৪৪ পদ)। আত্মহত্যা এখনও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে সাংঘাতিক পাপ। বাইবেল অনুযায়ী নিজেকে হত্যা করা পাপ। খ্রীষ্টিয়ানদের তাদের জীবনে ঈশ্বরের জন্য জীবনযাপন করতে আহ্বান করা হয়েছে আর আমার সিদ্ধান্ত হলো যখন মরি তখনও ঈশ্বরেরই থাকি এবং একমাত্র ঈশ্বরের অধিকারে আমি। আমরা গীতরচয়িতা সাধু দায়ূদের সাথে বলতে পারি, “আমার সময় সকল তোমার হস্তে রহিয়াছে” (গীতসংহিতা ৩১:১৫ পদ)।

এতে কোনো সন্দেহ নেই অশুচি মন্দ আত্মা একজনকে তার নিজেকেই মেরে ফেলার কারণ হয়ে দাড়ায় (মার্ক ৯:১৭-২৭ পদ)। অনেকে নিজেদের কষ্ট বা শস্তিভোগে থাকায় মরতে ইচ্ছা করে, তারা চিন্তা করে না যে তাদের এই কষ্টভোগে থাকায় ঈশ্বরের কোনো উদ্দেশ্যে থাকতে পারে, মানসিক হতাশা, নৈরাশা একেবারে চরম অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে, এর জন্য ঈশ্বরের দিকে থেকে এক প্রতিকার আছে (ফিলিপীয় ৪:৪-১৯ পদ; গীতসংহিতা ৩৭:৩-৭ পদ; যিশাইয় ২৬:৩ পদ)। এ সময় আত্মহত্যার সবকিছুর প্রতিকার হয়তো আমি এখন দিতে পারছি  না, তবে আপনি অবশ্যই নিশ্চিত হবেন যে ঈশ্বরের বাক্যে ঠিকই এর উত্তর আছে। আত্মহত্যার না করেও বিকল্প বা ভিন্ন এক পথ আছে আর আপনি অবশ্যই নিশ্চিত হবেন যে ঈশ্বরের পথই উত্তম।  

শেষ কথায় বলি যে কেউ কোনো ঘটনায় আত্মহত্যা করলেই তিনি নির্দোষ এমন ভাবার কোনও যুক্তি নাই। মানসিক অসুস্থ্যতার কারণে অনেকে আত্মহত্যা করে। রাগে জেদে হিংসায় ঘৃণায় হিতাহিত জ্ঞান হারিয়েও কেউ কেউ আত্মহত্যা করে। কাউকে প্রতিশোধ নিয়ে পালানোর পথ না পেয়ে শাস্তির ভয়ে বা গ্লানিতেও অনেকে আত্মহত্যা করে। আবার কারোর প্রতি প্রতিশোধ নিতে না পেরেও মানুষকে আত্মহত্যা করতে প্ররোচনা দেয়। ঈর্ষা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলে কী করে মানুষ? হয় হত্যা করে নয়তো আত্মহত্যা করেন। কেউ একজন আত্মহত্যা করেছে তাই বলে তিনি সৎ ছিলেন, সরল ছিলেন, মহান ছিলেন, মহামানব ছিলেন - এই ধারণাটি মস্ত ভুল ধারণা। কুখ্যাত খুনী হিটলার আত্মহত্যা করেছিলেন। বহু খুনী সন্ত্রাসী, অপরাধীরাই আত্মহত্যা করেছে, এসব ইতিহাস বলে।       

Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?