উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস


উপবাস সংক্রান্ত সতর্কবাণীসমূহ
উপবাসের গুরুত্ব
কখন উপবাস করা কর্তব্য?
উপবাস কেন গুরুত্বপূর্ণ
বাইবেল অনুযায়ী উপবাস পালনের সময় কতক্ষণ?
বাইবেল অনুযায়ী উপবাস কী
যদি উপবাস করি তাতে কি কিছু হয়?
আধুনিক বাইবেল অনুবাদগুলো উপবাস শিক্ষার উপর আঘাত করে।

পরিত্রাণের জন্য উপবাস নয়
“যাহারা আপনাদের উপরে বিশ্বাস রাখিত, মনে করিত যে, তাহারাই ধার্মিক এবং অন্য সকলকে হেয়জ্ঞান করিত, এমন কয়েকজনকে তিনি এই দৃষ্টান্ত কহিলেন। দুই ব্যক্তি প্রার্থনা করিবার জন্য ধর্মধামে গেল; একজন ফরীশী, আর একজন করগ্রাহী। ফরীশী দাঁড়াইয়া আপনা আপনি এইরূপ প্রার্থনা করিল, হে ঈশ্বর, আমি তোমার ধন্যবাদ করি যে, আমি অন্য সকল লোকের মত উপদ্রবী, অন্যায়ী ও ব্যভিচারীদের মত, কিংবা ঐ করগ্রাহীর মত নহি; আমি সপ্তাহের মধ্যে দুইবার উপবাস করি, সমস্ত আয়ের দশমাংশ দান করি। কিন্তু করগ্রাহী দূরে দাঁড়াইয়া স্বর্গের দিকে চক্ষু তুলিতেও সাহস পাইল না, বরং সে বক্ষে করাঘাত করিতে করিতে কহিল, হে ঈশ্বর, আমার প্রতি, এই পাপীর প্রতি দয়া কর। আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, এই ব্যক্তি ধার্মিক গণিত হইয়া নিজ গৃহে নামিয়া গেল, ঐ ব্যক্তি নয়; কেননা যে কেহ আপনাকে উচ্চ করে, তাহাকে নত করা যাইবে; কিন্তু যে আপনাকে নত করে, তাহাকে উচ্চ করা যাইবে” (লূক ১৮:৯-১৪ পদ)।

এই দৃষ্টান্তে প্রভু যীশু খ্রীষ্টের শিক্ষা হচ্ছে সৎকর্ম এবং ধর্মকর্মে পরিত্রাণ লাভ করা যায় না। এই ফরীশী নিজেকে ধার্মিক মনে করায় ঈশ্বরের সম্মুখে অপরিত্রাণপ্রাপ্ত অবস্থায় ধর্মধাম ত্যাগ করল। অনুতাপী করগ্রাহী নিজেকে নত করে এবং ঈশ্বরের করণা ভিক্ষা করে পরিত্রাণ লাভ করল। খ্রীষ্ট এখানে উপবাসের গুরুত্ব হাল্কা করেননি, দশমাংশ প্রদানকেও খাটো করেননি। কিন্তু উপবাস বা দশমাংশ প্রদান অথবা অন্য কোনো ধর্মীয় কর্তব্যপালন একজন মানুষকে পবিত্র ঈশ্বরের সম্মুখে ধার্মিক পরিগণিত করে না।

উপবাস কখনো লোক দেখানোর জন্য নয়

“আর তোমরা যখন উপবাস কর, তখন কপটীদের ন্যায় বিষণœ-বদন হইও না; কেননা তাহারা লোক দেখাইবার নিমিত্ত আপনাদের মুখ মলিন করে; আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, তাহারা আপনাদের পুরষ্কার পাইয়াছে। কিন্তু তুমি যখন উপবাস কর, তখন মাথায় তৈল মাখিও এবং মুখ ধুইও; যেন লোকে তোমার উপবাস না দেখিতে পায়। কিন্তু তোমার পিতা, যিনি গোপনে বর্তমান, তিনিই দেখিতে পান; তাহাতে তোমার পিতা, যিনি গোপনে দেখেন, তিনি তোমাকে ফল দিবেন” (মথি ৬:১৬-১৮ পদ)।

ঈশ্বরের দৃষ্টিতে ধার্মিক না হওয়া সত্ত্বেও যারা মানুষদের কাছে নিজেদের ধার্মিক দেখানোর চেষ্টা করে, ঈশ্বর সেই ভ- ধর্মাচারণকারীদের ঘৃণা করেন। বাইবেলের এই অংশে খ্রীষ্ট ঐ ধরনের উপবাস পালনকে তিরষ্কার করেন, যা পালন করা হয় অন্যদের দৃষ্টিতে ধার্মিক গণিত হবার জন্য। তিনি উপবাস পালনকে খাটো করে দেখেননি, যদি তা সঠিকভাবে পালিত হয়। প্রকৃতপক্ষে, তিনি এই নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন যে, তাঁর অনুসারীরা উপবাস পালন করবে। তিনি বলেননি, “যদি তুমি উপবাস কর”, বরং বলেছেন, “যখন তুমি উপবাস কর।” আর একটি চমৎকার ও সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, যারা বাইবেলসম্মত উপবাস পালন করবে, পিতা ঈশ্বর তাদের প্রকাশ্যে পুরষ্কৃত করবেন।

উপবাস কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়

“আমি সপ্তাহের মধ্যে দুইবার উপবাস করি . . ” (লূক ১৮:১২ পদ)

ঈশ্বরের দৃষ্টিতে ধার্মিক গণিত হবার জন্য এই ফরীশী ধর্মীয় আচারনিয়ম পালন করত। সে নিয়মিত উপবাস করত। যদিও, বাইবেলের কোথাও এই ধরনের আচারানুষ্ঠানের কথা লেখা নেই। উপবাস শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয় যে সপ্তাহে একবার অথবা মাসে একবার অথবা প্রভুর ভোজ গ্রহণ করার পূর্বে পালন করতে হবে। বরং উপবাস এমন একটি বিষয় যা পালন করতে হবে বিশেষ প্রয়োজনে এবং পবিত্র আত্মার পরিচালনায়।

ঈশ্বরের সঙ্গে সঠিক সম্পর্ক ছাড়া উপবাস অগ্রহণযোগ্য ও নিষ্ফল

“আমরা উপবাস করিয়াছি, তুমি কেন দৃষ্টি কর না? আমরা আপন আপন প্রাণকে দুঃখ দিয়াছি, তুমি কেন তাহা জান না?’ দেখ, তোমাদের উপবাস-দিনে তোমরা সুখের চেষ্টা ও আপন আপন কর্মচারীদের প্রতি দৌরাত্ম্য করিয়া থাক; দেখ, তোমরা বিবাদ ও কলহের জন্য এবং দুষ্টতার মুষ্টি দ্বারা আঘাত করিবার জন্য উপবাস করিয়া থাক; অদ্যকার ন্যায় উপবাস করিলে তোমরা ঊর্ধ্বলোকে আপনাদের রব শুনাইতে পরিবে না।

আমার মনোনীত উপবাস কি এই প্রকার? মনুষ্যের আপন প্রাণকে দুঃখ দিবার কি এই প্রকার? নলের ন্যায় মস্তক হেঁট করা এবং চট ও ভষ্ম পাতিয়া বসা, তুমি কি ইহাকেই উপবাস এবং সদাপ্রভুর প্রসন্নতার দিন বল?

আমার মনোনীত উপবাস কি এই নয়?  দুষ্টতার গাঁট সকল খুলিয়া দেওয়া, যোঁয়ালির খিল মুক্ত করা এবং দলিত লোকদিগকে স্বাধীন করিয়া ছাড়িয়া দেওয়া ও প্রত্যেক যোঁয়ালি ভগ্ন করা কি নয়? ক্ষুধিত লোককে তোমার খাদ্য বণ্টন করা। তাড়িত দুঃখীদিগকে গৃহে আশ্রয় দেওয়া কি নয়? উলঙ্গকে দেখিলে তাহাকে বস্ত্র দান করা। তোমার নিজ মাংস হইতে আপনার গা না ঢাকা, ইহা কি নয়?” (যিশাইয় ৫৮:৩-৭ পদ)।

“তখন বাহিনীগণের সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, তুমি দেশের সকল লোককে ও যাজকগণকে এই কথা বল, তোমার এই সত্তর বৎসর কাল পঞ্চম ও সপ্তম মাসে যখন উপবাস ও বিলাপ করিয়াছ, তখন তাহা কি আমার, আমারই উদ্দেশ্যে করিয়াছ? আর যখন ভোজন পান কর, তখন কি আপনারাই ভোজন ও আপনারাই পান কর না?” (সখরিয় ৭:৪-৬ পদ)।

ইস্রায়েলের ধর্মভ্রষ্ট সন্তানদের ভ-ামিপূর্ণ উপবাসকে ঈশ্বর তিরষ্কার করেন। তারা সঠিক ধর্মপালনের ভান করত, কিন্তু তাদের হৃদয় ছিল ঈশ্বর থেকে অনেক দূরে এবং তারা ঈশ্বরের ব্যবস্থাকে সরাসরি লঙ্ঘন করত। কোনো ধরনের ধর্মীয় কর্তব্য পালন ঈশ্বরের নিকট গ্রহণযোগ্য নয়, যদিনা তা নবজীবনপ্রাপ্ত কারোর জীবন থেকে আসে এবং বাইবেল সম্মত ও পবিত্র আত্মার পরিচালনায় না হয়।

বাইবেল সম্মত উপবাস দৈহিক স্বাস্থ্যের জন্য নয়

অনেক জনপ্রিয় খ্রীষ্টিয় পুস্তকে দৈহিক স্বাস্থ্যের জন্য উপবাসের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে; কিন্তু ঐ ধরনের উপবাস বাইবেলসম্মত উপবাস নয়। আমরা বলতে পারি না যে, উপবাস স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী অথবা উপকারী নয় এবং আমরা বলতে পারি না যে, উপবাস স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বা মন্দ। আমরা একথা বলছি যে, বাইবেলে স্বাস্থ্যের আলোকে বা সেই উদ্দেশ্যে উপবাসের কথা বলা হয়নি।

উপবাস কঠোর ব্রত নয়

“তোমরা যখন জগতের অক্ষরমালা ছাড়িয়া খ্রীষ্টের সহিত মরিয়াছ, তখন কেন জগজ্জীবীদের ন্যায় এই সকল বিধির অধীন হইতেছ, যথা, ধরিও না, আস্বাদ লইও না, স্পর্শ করিও না? সেই সকল বস্তু ত ভোগ দ্বারা ক্ষয় পাইবার নিমিত্তই হইয়াছে। ঐ সকল বিধি মনুষ্যদের বিবিধ আদেশ ও ধর্মসূত্রের অনুরূপ। আত্মপূজা, নম্রতা ও কৃচ্ছ্রসাধন এই সকল জ্ঞান নামে কীর্তিত বটে, তথাপি মাংসের পোষকতার বিরুদ্ধে কিছুর মধ্যে গণ্য নহে” (কলসীয় ২:২০-২৩ পদ)।

ঐ সময় কলসী নগরে অনেক ভ-, ভানকারী, ভাক্ত গুরু ছিল। তারা শিক্ষা দিত যে, নানা ধরনের কষ্ট, ক্লেশ ও প্রায়শ্চিত সাধনের মাধ্যমে আধ্যাত্মিকতা অর্জন করা সম্ভব। এর মধ্যে ছিল বিশেষ খাদ্যবিধি ও উপবাস, যাতে দেহের কামনাকে দমন করা যায়। রোমান কাথলিক এবং গ্রিক অর্থোডক্স ম-লীর কোনো কোনো সন্ন্যাসী সম্প্রদায় এই ধরনের ব্রত পালন করে। তারা নিজেদের স্বাভাবিক জনজীবন থেকে দূরে সরিয়ে মঠে আবদ্ধ রাখে: খাদ্য, কাজকর্ম এবং ধ্যান করার জন্য কঠোর নিয়ম মেনে চলে; তারা উপবাস, নির্জনতা এবং নিস্তব্ধতা পালনের কর্মসূচি কঠোরভাবে পালন করে; তারা দেহকে নানাভাবে শাস্তি প্রদান করে, এমনকি কেউ কেউ নিজ দেহকে চাবুক দিয়ে আঘাত করে। এই কষ্ট, কঠিন, দুরূহ ও অসহ্য সাধনাকে মনে করা হয় একটি উপায় যার মাধ্যমে সন্ন্যাসীরা ব্যক্তিগতভাবে পরিত্রাণ লাভ করতে পারে এবং ঈশ্বরের আরো নিকটবর্তী হয়। হিন্দু ও বৌদ্ধ পুরোহিতেরা উচ্চতর আধ্যাত্মিক স্তরে পৌঁছানোর জন্য তাদের ভ্রান্ত ধর্মীয় প্রথানুসারে এই ধরনের কষ্ট, ক্লেশ ও প্রায়শ্চিত্ততা পালন করে।

প্রেরিত পৌল এই ধরনের বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছেন। পরিত্রাণ বা আধ্যাত্মিকতা কষ্ট, ক্লেশ ও প্রায়শ্চিত সাধনের মাধ্যমে অর্জন করা যায় না। ক্রুশে মৃত খ্রীষ্টের প্রতি বিশ্বাসে এবং মন পরিবর্তনের (অনুতাপ, অনুশোচনা ও মন ফিরানোর) মাধ্যমে, খ্রীষ্টের সঙ্গে মুক্তিদাতার সম্পর্কের মাধ্যমে পাপের ক্ষমা এবং অনন্তজীবন লাভ করা যায়। পুনরুত্থিত খ্রীষ্টের সহভাগিতায় চলাচল করলে বাস্তব পবিত্রতায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়া যায়। প্রেরিত পৌল কলসীয় খ্রীষ্টিয়ানদের এটাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিলেন, কারণ তারা ভ্রান্ত কঠোর ব্রত দ্বারা প্রতারিত হবার বিপদের সম্মুখীন ছিল।

“দেখিও, দর্শন বিদ্যা ও অনর্থক প্রতারণা দ্বারা কেহ যেন তোমাদিগকে বন্দি করিয়া লইয়া না যায়; তাহা মনুষ্যদের পরম্পরাগত শিক্ষার অনুরূপ, জগতের অক্ষরমালার অনুরূপ, খ্রীষ্টের অনুরূপ নয়; কেননা তাঁহাতেই ঈশ্বরত্বের সমস্ত পূর্ণতা দৈহিকরূপে বাস করে; এবং তোমরা তাঁহাতে পূর্ণীকৃত হইয়াছ, যিনি সমস্ত আধিপত্যের ও কর্তৃত্বের মস্তক। আর তাঁহাতেই তোমরা অহস্তকৃত ত্বকছেদে, মাংসের দেহ বস্ত্রবৎ পরিত্যাগে, খ্রীষ্টের ত্বকছেদে, ছিন্নত্বক হইয়াছ; ফলতঃ বাপ্তিস্মে তাঁহার সহিত সমাধিপ্রাপ্ত হইয়াছ, এবং তাহাতে তাঁহার সহিত উত্থাপিতও হইয়াছ, ঈশ্বরের কার্যসাধনে বিশ্বাস দ্বারা হইয়াছ, যিনি তাঁহাকে মৃতগণের মধ্য হইতে উঠাইয়াছেন। আর ঈশ্বর তোমাদিগকে, অপরাধে ও তোমাদের মাংসের ত্বকছেদে মৃত তোমাদিগকে, তাঁহার সহিত জীবিত করিয়াছেন, আমাদের সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করিয়াছেন; আমাদের প্রতিকূল যে বিধিবদ্ধ হস্তলেখ্য আমাদের বিরুদ্ধ ছিল, তাহা মুছিয়া ফেলিয়াছেন, এবং ক্রুশে প্রেকবিদ্ধ করিয়া দূর করিয়াছেন। আর আধিপত্য ও কর্তৃত্ব সকল দূর করিয়া দিয়া ক্রুশেই সেই সকলের উপরে বিজয়-যাত্রা করিয়া তাহাদিগকে স্পষ্টরূপে দেখাইয়া দিলেন। অতএব ভোজন কি পান, কি উৎসব, কি অমাবস্যা, কি বিশ্রামবার, এই সকলের সম্বন্ধে কেহ তোমাদের বিচার না করুক; এই সকল ত আগামী বিষয়ের ছায়ামাত্র, কিন্তু দেহ খ্রীষ্টের” (কলসীয় ২:৮-১৬ পদ)

খ্রীষ্টিয় জীবনের ও পরিচর্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে উপবাস। কিন্তু আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যে, আমরা যেন মনে না করি যে দেহকে শাস্তি দিয়ে এবং নানারকম খাদ্যবিধি পালন ও নানা অনুষ্ঠান পালনে আধ্যাত্মিকতা লাভ করা যায়। আধ্যাত্মিকতা আসে যীশু খ্রীষ্টের সঙ্গে সহভাগিতায়।

উপবাস প্রার্থনা গ্রাহ্যের নিশ্চয়তা প্রদান করে না

২শমূয়েল পুস্তকের ১২ অধ্যায়ে আমরা দেখতে পাই যে, দায়ূদ কেমন করে তাঁর দ্বারা বৎশেবার অবৈধ গর্ভজাত সন্তানের প্রাণ রক্ষার জন্য উপবাস ও প্রার্থনা করেছিলেন। ঐ বিশেষ ক্ষেত্রে, ঈশ্বর প্রার্থনার উত্তর প্রদান করেননি এবং উপবাসের প্রতি কোনো সম্মান দেখাননি। এটা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আধ্যাত্মিক সংগ্রামে উপবাস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেও এতে কোনো নিশ্চয়তা নেই যে, ঈশ্বর আমাদের প্রার্থনা অনুসারে ফল প্রদান করবেন। অবশ্য, উপবাস সহকারে আন্তরিক প্রার্থনা প্রায়ই আমাদের আশানুরূপ ফল প্রদান করে। বাইবেলে এ বিষয়ে অনেক উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু এর কোনো নিশ্চয়তা নেই।

উপবাস একটি ব্যক্তিগত বিষয়

খ্রীষ্টিয় জীবনে ও সেবায় উপবাস একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় বিষয়। কিন্তু এটা কোনো বাধ্যবাধকতার বিষয় নয়, একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। উপবাস এমন কোনো বিষয় নয় যার দ্বারা কারো আধ্যাত্মিক জীবনের বিচার করা যেতে পারে। এই নীতির একটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে ইহুদি সন্ন্যাসীদের শপথ। ঈশ্বর চাননি যে, লোকে ঐ শপথ গ্রহণ করুক (কয়েকটি ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র ছাড়া। যেমন শিমশন, শমূয়েল ও যোহন বাপ্তাইক)। এটা ছিল স্বাধীন ইচ্ছার শপথ, যা ব্যবস্থা পালনের চেয়ে অতিরিক্ত। এই হচ্ছে উপবাসের ধরন।

উপবাসের গুরুত্ব

বাইবেলে পুরাতন ও নতুন নিয়মে উপবাসের গুরুত্ব সম্পর্কে বেশ কিছু স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে।

শাস্ত্রে উপবাস সম্পর্কে ৩০টির অধিক স্থানে স্পষ্ট উল্লেখ ও নির্দেশ রয়েছে।

যুদ্ধে জয়লাভের জন্য ইস্রায়েল উপবাস করেছিল - বিচার ২০:২৬ পদ
হান্না পুত্র লাভের জন্য উপবাস করেন - ১শমূয়েল ১:৬-৭ পদ
ইস্রায়েল অনুতাপ সহকারে উপবাস করে - ১শমূয়েল ৭:৬ পদ
যাবেশ-গিলিয়দ নিবাসীগণ শৌলের শোকে উপবাস - ১শমূয়েল ৩১:১৩ পদ
শৌল, যোনাথন ও তাদের সঙ্গে পতিত ইস্রায়েলের জন্য শোকে দায়ূদ এবং তাঁর লোকেরা উপবাস করেন - ২শমূয়েল ১:১২ পদ
সন্তানের প্রাণ রক্ষার জন্য দায়ূদ ঈশ্বরের করুণা ভিক্ষা করে উপবাস করেন - ২শমূয়েল ১২
আহাব ঈশ্বরের করুণা ভিক্ষা করে উপবাস করেন - ১রাজাবলি ২১:২৭
যিহোশাফট ও ইস্রায়েল ঈশ্বরের সাহায্য এবং নিরাপত্তা কামনা করে উপবাস করেন - ২বংশাবলি ২০:৩ পদ
ইষ্রা ও তাঁর লোকেরা সাহায্য ও নিরাপত্তা কামনা করে উপবাস করেন - ইষ্রা ৮:২১-২৩ পদ
নহিমিয় রোদন ও শোকে জেরুশালেমের প্রতি সাহায্যের জন্য উপবাস করেন - নহিমিয় ১:৪ পদ
ইস্রায়েল শোকে, অনুতাপে উপবাস করে - নহিমিয় ৯:১-২ পদ
ইস্টের ও তাঁর বন্ধুরা জয়লাভের জন্য উপবাস করেন - ইষ্টের ৪:১৬ পদ
জয়লাভের জন্য উপবাসের ভূমিকা বিবেচিত হয় - ইষ্টের ৯:৩ পদ
প্রার্থনায় ও শোকে উপবাস - গীতসংহিতা ৬৯:১০-১১ পদ
উপবাস ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে - যিশাইয় ৫৮:৫-৮ পদ
ইস্রায়েল করুণা ভিক্ষা করে উপবাস করে - যিরমিয় ৩৬:৯ পদ
ঈশ্বর উপবাস ও শোক করতে আদেশ দেন - যোয়েল ১:১৪; ২:১২,১৫ পদ
নীনবীর লোকেরা করুণার জন্য শোকে উপবাস করে - যোনা ৩:৫ পদ
দানিয়েল জ্ঞানসম্পন্নতার জন্য উপবাস করেন - দানিয়েল ৯:৩ পদ
প্রান্তরে পরিক্ষীত হবার সময় যীশু উপবাস করেছিলেন - মথি ৪:২ পদ
যীশুর প্রতিশ্রুতি, পিতা উপবাসকে আশীর্বাদ করবেন - মথি ৬:১৭-১৮ পদ
যীশু বলেন যে তাঁর শিষ্যরা উপবাস করবে - মথি ৯:১৪-১৫ পদ
ভূত ছাড়াইবার সাধ্যের জন্য উপবাস প্রয়োজন - মথি ১৭:২১ পদ
ভূত ছাড়াইবার ক্ষমতার জন্য উপবাস প্রয়োজন - মার্ক ৯:২৯ পদ
হান্নার ঈশ্বরের প্রতি আরাধনার অংশ ছিল উপবাস - লূক ২:৩৭ পদ
আন্তিয়োখের কর্মীদের পরিচর্যার অংশ ছিল উপবাস - প্রেরিত ১৩:২-৩ পদ
হস্তার্পণের সঙ্গে ছিল উপবাস - প্রেরিত ১৩:৩ পদ
অভিষেকের সঙ্গে ছিল উপবাস - প্রেরিত ১৪:২৩ পদ
বৈবাহিক সম্পর্ক থেকে পৃথক থাকার একমাত্র কারণ প্রার্থনা ও উপবাস - ১করিন্থীয় ৭:৫ পদ
যীশু খ্রীষ্টের পরিচারক হিসাবে যোগ্যপাত্র হবার অন্যতম উপায় উপবাস - ২করিন্থীয় ৬:৫ পদ
পৌল প্রায়ই উপবাস থাকতেন - ২করিন্থীয় ১১:২৭ পদ

উপবাস সংক্রান্ত এসব উদাহরণ এবং নির্দেশাবলী হাল্কাভাবে দেখা যাবে না। ১করিন্থিয় ১০:১১ পদ; রোমীয় ১৫:৪ পদে আমাদের বলা হয়েছে যে, শাস্ত্রের উদাহরণ সরাসরি আজ্ঞার মতোই গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐ পদগুলোতে সুনির্দিষ্টভাবে পুরাতন নিয়মের উদাহরণের কথা বলা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে প্রভু যীশু খ্রীষ্ট হচ্ছেন আমাদের আদর্শ (১পিতর ১:২১ পদ)। প্রান্তরে পরিক্ষীত হবার সময় খ্রীষ্টের উপবাস আমাদের জন্য উদাহরণ। সেভাবে পরিক্ষীত হবার সময় উদ্যানে তাঁর প্রার্থনাও আমাদের জন্য উদাহরণ। আরো বলা হয়েছে প্রেরিত পৌলের অনুকারী হতে (ফিলিপীয় ৩:১৭; ৪:৯ পদ)। পৌল আমাদের জন্য প্রায়ই উপবাসের দৃষ্টান্ত রেখেছেন (২করিন্থিয় ১১:২৭ পদ)।

ঈশ্বরের লোকদের সামনে উপবাস বিষয়ক এতো উদাহরণ রাখার যে ব্যবস্থা পবিত্র আত্মা রেখেছেন, তাতেই এই আধ্যাত্মিক রীতির গুরুত্ব প্রকাশ পায়।

খ্রীষ্টের যোগ্য পরিচর্যাকারী হতে উপবাস হচ্ছে অন্যতম উপায়।

“কিন্তু ঈশ্বরের পরিচারক বলিয়া সর্ববিষয়ে আপনাদিগকে যোগ্যপাত্র দেখাইতেছি  - বিপুল ধৈর্যে, নানা প্রকার ক্লেশে, অনটনে, সঙ্কটে, প্রহারে, কারাবাসে, উপপ্লবে, পরিশ্রমে, অনিদ্রায়, অনাহারে . . .” (২করিন্থীয় ৬:৪-৫ পদ)।

এখানে, উপবাসকে (অনাহার) উল্লেখ করা হয়েছে ঠিক ধৈর্য, শুদ্ধতা ও জ্ঞানের পাশাপাশি। স্পষ্টতই পৌল উপবাসকে পরিচর্যার একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে মনে করতেন।

উপবাস সম্পর্কে প্রভু যীশুর একটি সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি

যখন কেউ সঠিক কারণে, সঠিকভাবে উপবাস পালন করে, তখন “পিতা, যিনি গোপনে দেখেন, তিনি তোমাকে প্রকাশ্যে পুরষ্কৃত করিবেনই” (মথি ৬:১৭-১৮ পদ)। এটাই বাইবেলের অতি উত্তম প্রতিশ্রুতিগুলোর অন্যতম, যা হাল্কাভাবে উড়িয়ে দেয়া যায় না। ঈশ্বর এ ধরনের প্রতিশ্রুতি দিতেন না, যদি তিনি উপবাসকে গুরুত্বপূর্ণ মনে না করতেন। খ্রীষ্ট কখনো সঠিকভাবে উপবাস পালনকে নিরুৎসাহিত করেননি। তিনি ভ্রান্ত রীতিকে তিরস্কার করেছেন ও নিয়মানুগ করেছেন। কিন্তু কখনো শাস্ত্রসম্মত উপবাস পালনকে নিরুৎসাহিত করেননি। প্রকৃতপক্ষে, তিনি এই নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে, তাঁর অনুসারীরা উপবাস পালন করবে। মথি ৬:১৭ পদে তিনি একথা বলেননি, “যদি তোমরা উপবাস কর,” বরং বলেছেন, “তুমি যখন উপবাস কর”

প্রভু যীশু অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে, যখন তাঁকে শিষ্যদের কাছ থেকে উঠিয়ে নেয়া হবে, তখন শিষ্যরা উপবাস করবে।

“তখন যোহনের শিষ্যগণ তাঁহার নিকটে আসিয়া কহিল, ‘ফরীশীরা ও আমরা অনেকবার উপবাস করি, কিন্তু আপনার শিষ্যগণ উপবাস করে না, ইহার কারণ কি?’ যীশু তাঁহাদিগকে কহিলেন, ‘বর সঙ্গে থাকিতে কি বাসর ঘরের লোকে বিলাপ করিতে পারে? কিন্তু এমন সময় আসিবে, যখন তাহাদের নিকট হইতে বর নীত হইবেন; তখন তাহারা উপবাস করিবে” (মথি ৯:১৪-১৫ পদ)।

যীশু কখনো উপবাস করাকে নিরুৎসাহিত করেননি। তিনি নিজে উপবাস পালন করেছেন এবং বলেছেন তাঁর শিষ্যরাও তা পালন করবে। আধ্যাত্মিক জীবনের অন্যান্য বিষয়ের মতো উপবাসকে ঘিরে যে সমস্ত ভ্রান্ত ধারণা ও অনাচার ছিল, তিনি তা সংশোধন করেন। কিন্তু কখনো তা নিরুৎসাহিত করেননি অথবা গুরুত্বহীন করেননি।

যুগ যুগ ধরে ঈশ্বরের প্রিয় সেবকেরা উপবাস পালন করেছেন

উপবাস যদি অপ্রয়োজনীয় অথবা গুরুত্বহীন হয়ে থাকে, তবে ঈশ্বরের সর্বোত্তম লোকেরা তাঁদের চিন্তা-ভাবনায় দারুণভাবে বিপথে চালিত হয়েছেন। দেখুন, অন্যেরা যখন ভোজন-পান করছে, শমূয়েলের মা তখন উপবাস করছেন (১শমূয়েল ১:৬-৭ পদ)। দেখুন ইষ্রা, নহিমিয়, ইষ্টের ও মর্দখয়, ধার্মিক রাজা যিহোশাফট, দানিয়েল, শমূয়েল, ভাববাদিনী হান্না, পৌল সকলেই উপবাস করেছেন। মাংসে মূর্তিমান ঈশ্বর, প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে দেখুন, উপবাস করেছেন। আজ সেই সমস্ত খ্রীষ্টানদের রয়েছে চমৎকার সম্পর্ক যারা বাইবেলভিত্তিক কারণে উপবাস পালন করেন। এটা স্পষ্ট যে, সমস্ত যুগের যে সমস্ত ঈশ্বরভক্ত লোক উপবাস করতেন তাঁরা এমন কিছু জানতেন যা আজকাল যারা উপবাস পালন করে না, তারা তা জানে না। যারা বলে যে উপবাস অপ্রয়োজনীয় অথবা পুরাতন নিয়মের রীতি বা ইহুদী প্রথা। তারা মূলত উপবাসের বিষয়কে উপেক্ষা করে।

উপবাস ও প্রার্থনা হচ্ছে বিবাহিত জীবনের আধ্যাত্মিক রীতি, যা দৈহিক সম্পর্কে হস্তক্ষেপ করে।

“স্বামী স্ত্রীকে তাহার প্রাপ্য দিউক; আর তদ্রƒপ স্ত্রীও স্বামীকে দিউক। নিজ দেহের উপরে স্ত্রীর কর্তৃত্ব নাই, কিন্তু স্বামীর আছে; আর তদ্রূপ নিজ দেহের উপরে স্বামীর কর্তৃত্ব নাই, কিন্তু স্ত্রীর আছে। তোমরা এক জন অন্যকে বঞ্চিত করিও না; কেবল প্রার্থনার নিমিত্তে অবকাশ পাইবার জন্য উভয়ে এক পরামর্শ হইয়া কিছুকাল পৃথক থাকিতে পার; পরে পুনর্বার একত্র হইবে, যেন শয়তান তোমাদের অসংযমের কারণে তোমাদিগকে পরীক্ষায় না ফেলে” (১করিন্থিয় ৭:৩-৫ পদ)।

ঈশ্বর সতর্ক করে দিচ্ছেন যেন স্বামী ও স্ত্রী একে অন্যের দৈহিক চাহিদা মিটাতে অবশ্যই যতœবান হয়। এটা হচ্ছে বিবাহিত জীবনে ঈশ্বর নির্দেশিত অন্যতম কর্তব্য। “ব্যভিচার নিবারণের জন্য প্রত্যেক পুরুষের নিজের নিজের ভার্যা থাকুক এবং প্রত্যেক স্ত্রীর নিজের নিজের স্বামী থাকুক” (১করিন্থিয় ৭:২ পদ)। বিবাহিত দম্পতির মধ্যে নিয়মিত যৌন সম্পর্ক ভঙ্গ করার জন্য মাত্র একটি বিষয়ের অনুমতি রয়েছে, আর তা হচ্ছে উপবাস ও প্রার্থনা। আবার, বাইবেলে এমন কোনো নির্দেশ নেই যে, খ্রীষ্টানরা উপবাস করুক, কিন্তু এটা নিশ্চিত যে তারা উপবাস করবে এবং নিয়মিত করার প্রস্তুতি নেবে।

ভূত ছাড়াবার জন্য উপবাস অত্যাবশ্যক

“পরে যীশু তাহাকে ধমক্ দিলেন, তাহাতে সেই ভূত তাহাকে ছাড়িয়া গেল, আর বালকটি সেই দ- অবধি সুস্থ হইল। তখন শিষ্যেরা বিরলে যীশুর নিকটে আসিয়া কহিলেন, কি জন্য আমরা উহা ছাড়াইতে পারিলাম না? তিনি তাঁহাদিগকে বলিলেন, তোমাদের বিশ্বাস অল্প বলিয়া; কেননা আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যদি তোমাদের একটি সরিষাদানার ন্যায় বিশ্বাস থাকে, তবে তোমরা এই পর্বতকে বলিবে, ‘এখান হইতে সরিয়া যাও,’ আর ইহা সরিয়া যাইবে এবং তোমাদের অসাধ্য কিছুই থাকিবে না। কিন্তু প্রার্থনা ও উপবাস ভিন্ন আর কিছুতেই এই জাতি বাহির হয় না”
(মথি ১৭:১৮-২১ পদ)।

উপবাস খ্রীষ্টিয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ কি না, তা এই শাস্ত্রাংশই স্থির করে দেয়। প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বলেন যে, আধ্যাত্মিক সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যাবশ্যক অংশ হচ্ছে উপবাস। যাঁরা ভূত ছাড়ান, তাঁরা এটাকে সত্য বলে জানেন। সত্যি সত্যি ভূতাত্মা, ভূতাবেশে বা মন্দ-আত্মায় থাকলে তা প্রার্থনা এবং উপবাস ভিন্ন অন্য কিছুতেই ছাড়ানো যায় না।

কখন উপবাস করা কর্তব্য?

১।     উপবাস করুন, যখন ভীষণভাবে পরীক্ষিত হন বা অন্তরে পাপের টান বোধ করেন - মথি ৪:২ পদ
২।     উপবাস করুন, যখন জ্ঞানের খুব প্রয়োজন - দানিয়েল ৯:৩ পদ
৩।     উপবাস করুন, যখন সাহায্য ও সুরক্ষা প্রয়োজন - ইষ্রা ৮:২১-২৩; ২বংশা ২০:৩; যিরমিয় ৩৬:৯
৪।     উপবাস করুন, যখন ভূতাবেশ বা মন্দ-আত্মার বিরুদ্ধে বিজয় কাম্য -মথি ১৭:২১; মার্ক ৯:২৯
৫।     উপবাস করুন, যখন অসম্ভব, অসাধ্য ও দুরূহ অবস্থায় বিজয় কাম্য বোধ করেন - 
ইষ্টের ৪:১০-১৭; ৯:৩১; নহিমিয় ১:৪ পদ
৬।     উপবাস করুন, যখন ঈশ্বরের নিকট বিশেষ কিছু পাবার জন্য প্রার্থনা করেও ফললাভ হচ্ছে না - ১ শমূয়েল ১:৬-৭ পদ
৭।     উপবাস করুন, মৃত প্রিয়জনদের শোকে অথবা ঈশ্বরভক্তদের পরাজয়ে - ২শমূয়েল ১:১২ পদ
৮।     উপবাস করুন, যখন নতুন পরিচর্যাকারী নিযুক্ত এবং প্রভুর বাক্য প্রচারের জন্য বের হন এবং আত্মিক শত্রুদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন - প্রেরিত ১৩:২-৩; ১৪:২৩ পদ
৯।     উপবাস করুন, যখন আধ্যাত্মিক পরিচর্যায় জড়িত হন - ২করিন্থীয় ৬:৫; ১১:২৭ পদ
১০। উপবাস করুন, বিশেষ অনুতাপ, পাপস্বীকার এবং পুনর্জাগরণ কালে - যোয়েল ১:১৪; ২:১২; ২:১৫; নহিমিয় ৯:১-২ পদ

উপবাস কেন গুরুত্বপূর্ণ?

আধ্যাত্মিক মঙ্গলের জন্য উপবাস গুরুত্বপূূর্ণ - 

(মথি ১৭:২১ পদ)

যখন আমরা উপবাস করি, তখন আমাদের জন্য কোনো কাজ করতে ঈশ্বরের উপর জোর খাটাই না বরং অতিপ্রাকৃত শক্তি এবং প্রভাবকে প্রতিরোধ করার জন্যই উপবাস করি। হয়তো কেউ প্রশ্ন করতে পারে, “খ্রীষ্টের হাতে যখন সমস্ত ক্ষমতা, তখন এর প্রয়োজন কেন?” এ প্রশ্নের উত্তর আমি জানি না। তবে এটুকু জানি খ্রীষ্ট বলেছেন, “প্রার্থনা ও উপবাস ভিন্ন আর কিছুতেই এই জাতি বাহির হয় না।”

উপবাস অন্তরের বাসনা এবং আন্তরিকতা প্রকাশ করে -

(ইব্রীয় ১১:৬; যিরমিয় ২৩:৯-১৩ পদ) 

ঈশ্বর মানুষের অন্তর দেখেন কিন্তু বাইবেল বলে, তিনি অন্তরের বাসনার প্রকাশ্য প্রমাণ চান। “সদাপ্রভু বলেন, ‘এখনও তোমরা সমস্ত অন্তঃকরণের সহিত এবং উপবাস, রোদন ও বিলাপ সহকারে আমার কাছে ফিরিয়া আইস” (যোয়েল ২:১২ পদ)।

এই অবস্থাটা দেখা যায় অব্রাহাম কর্তৃক ইসহাককে উৎসর্গে। ঈশ্বর জানতেন যে অব্রাহাম তাঁর কথা মান্য করবেন এবং প্রিয় পুত্রকে বলি দেবেন। কিন্তু তিনি চেয়েছিলেন, অব্রাহাম যেন প্রিয় পুত্রের বুকে ছুরি বসিয়ে দেবার ঠিক সেই মুহূর্ত পর্যন্ত এগিয়ে যান। শুধু সেই সময় সদাপ্রভু বললেন, “এখন আমি বুঝিলাম, তুমি ঈশ্বরকে ভয় কর, আমাকে আপনার অদ্বিতীয় পুত্র দিতেও অসম্মত নও” (আদিপুস্তক ২২:১২ পদ)।

প্রার্থনার বিষয়ে উপবাসকে দেখা যেতে পারে আমাদের আন্তরিকতা এবং একনিষ্ঠতার প্রমাণ হিসাবে। আমরা বলতে পারি যে ঈশ্বর যেহেতু আমাদের অন্তর জানেন, তাই উপবাস অপ্রয়োজনীয়। কিন্তু অব্রাহাম ও তাঁর পুত্রের দৃষ্টান্ত প্রমাণ করে যে ঈশ্বর আমাদের আন্তরিকতা ও বিশ্বাসের প্রমাণ চান।

উপবাস দেহকে বশে রাখে

“তোমরা কি জান না যে, দৌঁড়ের স্থলে যাহারা দৌঁড়ে, তাহারা সকলে দৌঁড়ে, কিন্তু কেবল একজন পুরস্কার পায়? তোমরা এরূপে দৌঁড়, যেন পুরস্কার পাও। আর যে কেহ মল্লযুদ্ধ করে, সে সর্ববিষয়ে ইন্দ্রিয় দমন করে। তাহার ক্ষয়ণীয় মুকুট পাইবার জন্য তাহা করে, কিন্তু আমরা অক্ষয় মুকুট পাইবার জন্য তাহা করি। অতএব আমি এরূপে দৌঁড়িতেছি যে বিনা লক্ষ্যে নয়; এরূপে মুষ্টিযুদ্ধ করিতেছি যে শূন্যে আঘাত করিতেছিনা। বরং আমার নিজ দেহকে প্রহার করিয়া দাসত্বে রাখিতেছি, পাছে অন্য লোকদের কাছে প্রচার করিবার পর আমি কোনো ক্রমে অগ্রাহ্য হইয়া পড়ি”
(১করিন্থিয় ৯:২৪-২৭ পদ)।

দেহ সবসময় নিজ পথে চলতে চায়। দেহের কামলালসা চায় তৃপ্ত হতে। আর উপবাস দৈহিক ক্ষুধাকে দমিয়ে রাখে। প্রেরিত পৌল জানতেন যে, বড় বড় যুদ্ধে জয়লাভ করা যায় ছোটখাটো যুদ্ধে জয়লাভ করার মাধ্যমে এবং ভেতরকার অর্থাৎ আভ্যন্তরীণ যুদ্ধগুলোতে জয়লাভ হয় প্রতিটি নিজেস্ব লড়াইয়ের জয়লাভের মাধ্যমে। দানিয়েলকে বৃদ্ধ বয়সে বড় লড়াইয়ে জয়লাভ করার জন্য, প্রার্থনার বিষয়ে রাজআজ্ঞা অমান্য করার লড়াইয়ে জয়লাভ করার জন্য, প্রথমে তাঁর যুবক বয়সে দৈহিক ক্ষুধার মতো ছোটখাটো যুদ্ধে জয়লাভ করতে হয়েছিল। তাকে খাদ্যের উপর জয়লাভ করতে হয়েছিল সিংহের বিরুদ্ধে জয়লাভ করার আগেই।

এই একটি কারণের জন্য খুব সামান্য কিছু ম-লীর সদস্যরা প্রার্থনা সভায় যোগ দেয়। প্রায়ই আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রার্থনায় জয়লাভ করতে পারি না। প্রায়ই আমরা মাংসের অর্র্থাৎ দেহের ক্ষুধা বা দৈহিক প্রয়োজন কিংবা অনাধ্যাত্মিকতার বাসনাকে দমন করে আত্মার অধীনে চলতে ব্যর্থ হই। বাইবেল বলে যে, পুরোহিত এলি ছিলেন ভারী অর্থাৎ স্থূল বা মোটা দেহের অধিকারী (১শমূয়েল ৪:১৮ পদ)। তিনি তেল-চর্বি অর্থাৎ উঁচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাদ্যের জন্য দৈহিক ভোজনের ইচ্ছাকে দমন করতে পারেননি। ভয়ংকর সত্য বিষয় হলো খাদ্যের বিষয়ে তার এই অসচেনতার জন্য তার জীবন ও পরিচর্যার সকল ক্ষেত্রে বিঘœস্বরূপ ছিল। তিনি রাতে তাবুর প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা বাদ দিয়ে ঘুমের জন্য তার দৈহিক ইচ্ছাকে পূরণ করেছিলেন। প্রতি রাতে প্রদীপ নিভে যেত, যদিও তা জ্বালিয়ে রাখা উচিত ছিল। নিজের দেহকে দমনের ব্যর্থতার কারণে তিনি তার সন্তানদের উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে সঠিক নিয়ম-শৃঙ্খলায় রাখতে পারেননি। ঈশ্বর বলেছেন যে, এলি নৈবেদ্যের সেরা অংশ অর্থাৎ মেদযুক্ত উৎসর্গ ভালোবাসতেন, যেমনটি ভালোবাসতো তার দুষ্ট ছেলেরাও। ঐসব খেয়ে মোটা-সোটা হয়েছে (১শমূয়েল ২:২৯ পদ)। যদিও এলি তার ছেলেদের মতো সমাগম-তাম্বুর দ্বারে থাকা স্ত্রীলোকদের সঙ্গে পাপাচার করতেন না। কিন্তু খাদ্য ও আরামের প্রতি অদমনীয় আকর্ষণ অর্থাৎ এইসবের অধীনে থাকার ভালোবাসায় তার পরিচর্যা কাজের জন্য ক্ষতিকর হয়েছিল। ভোজনপান ও বসে থাকার চেয়ে এলির প্রয়োজন ছিল উপবাস করা এবং কাজ করা।

বাইবেল অনুযায়ী উপবাস পালনের সময় কতক্ষণ?

উপবাসের জন্য বাইবেল নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা স্থির করে দেয়নি। দানিয়েল ২১ দিন উপবাস করেছিলেন। ইষ্টের ও মর্দখয় ৩ দিন ৩ রাত উপবাস করেছিলেন। প্রভু যীশু খ্রীষ্ট প্রান্তরে ৪০ দিন উপবাস করেছিলেন। কিন্তু বাইবেলে একেবারে সেভাবে বলতে দেখা যায় না যে লোকেরা কতক্ষণ যাবত উপবাস করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের বলা হয়নি যেরূশালেমে যাত্রা করার পূর্বে ইষ্রা কতক্ষণ উপবাস করেছিলেন (ইষ্রা ৮:২১-২৩ পদ)। উপবাস অবশ্যই পবিত্র আত্মার পরিচালনায় একজনের ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও নিজের স্বাধীনতায় ইচ্ছা অনুযায়ী বিষয়। ঈশ্বরের নির্দেশনায় কারো প্রয়োজন ও সময় অনুযায়ী উপবাস হতে পারে একবেলার খাবার কিংবা বহুবারের খাবারের বিষয়। এ বিষয়ে রোমীয় ১৪ অধ্যায় বলে, “প্রত্যেক ব্যক্তি আপন আপন মনে সুনিশ্চিত হউক” (রোমীয় ১৪:৫ পদ)। নিজ নিজ অন্তরে দৃঢ়নিশ্চিত হোক অর্থাৎ এই ব্যাপারে কে কী করবে না করবে, তাতে যেন তার মন পুরোপুরিভাবে সায় দেয়।

বাইবেল অনুযায়ী উপবাস কী?

আবারো বলা যায় যে বাইবেলে উপবাসের জন্য কোনো নির্দিষ্ট বা অলঙ্ঘনীয় নির্দেশনা নেই। দানিয়েল যখন ২১ দিন উপবাস করেছিলেন। আমাদের বলা হয়েছে যে তিনি “কোনো সুস্বাদু খাদ্য, মাংস কিংবা দ্রাক্ষারস” গ্রহণ করেননি (দানিয়েল ১০:৩ পদ)। বোঝা যায় যে দানিয়েল কিছু না কিছু খেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সুস্বাদু খাবার থেকে বিরত ছিলেন। দানিয়েল সুস্বাদু খাবার খায়নি। ঈশ্বর উপবাসের বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি দেননি। কারণ উপবাস একজন ব্যক্তি এবং প্রভুর মধ্যে ব্যক্তিগত বিষয়। উদাহরণস্বরূপ, একজন স্তন্যদানরত মা অত্যন্ত অবিবেচক হবেন যদি কোনো সুনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খাদ্য থেকে দূরে থাকেন বা তিনি খাবার না খেয়ে থাকেন। কারণ তিনি শুধু একাই সেই খাবারের উপর নির্ভর করেন না, সেই সঙ্গে তার শিশু সন্তানও জড়িত রয়েছে। ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছেন, “আমি তোমাকে বুদ্ধি দিব, ও তোমার গন্তব্য পথ দেখাইব, তোমার উপরে দৃষ্টি রাখিয়া তোমাকে পরামর্শ দিব” (গীতসংহিতা ৩২:৮)। এই মহামূল্যবান প্রতিজ্ঞা উপবাস সম্পর্কেই করা হয়েছে। কখন আমরা উপবাস করব অথবা কতক্ষণ ধরে উপবাস করব? যখন আপনি উপবাস থাকেন, তখন আপনার কী থেকে বিরত থাকা উচিত? যদি আপনি ঈশ্বরের সঙ্গে সহভাগিতায় চলেন, তাহলে তিনিই আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে এবং অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে এসব বিষয়ে পরিচালনা দেবেন।

যদিও বাইবেল উপবাসের সমস্ত খুটিনাটি বিষয় ব্যাখ্যা করে না, তবুও বাইবেল উপবাস সম্পর্কে নিচে উল্লেখ করা নির্দেশনা প্রদান করে :

খাদ্য ও স্বাভবিক শারীরিক আনন্দ উপভোগ থেকে বিরত থাকা  

(দানিয়েল ১০:৩; ১ করিন্থীয় ৭:৫ পদ)

আবারো লক্ষ্য করুন যে, দানিয়েল সম্পূর্ণরূপে খাদ্য থেকে বিরত থাকেননি কিন্তু ‘সুস্বাদু খাদ্য’ থেকে বিরত ছিলেন। দানিয়েল সুস্বাদু খাবার খায়নি। এই উদাহরণ থেকে আমরা দেখি যে উপবাস পালনের জন্য বহু পদ্ধতি আছে। কেউ হয়তো সম্পূর্ণরূপে, একেবারেই সমস্ত রকম খাবার এবং পানীয় থেকে বিরত থাকতে পারে কিংবা আবার কেউ শুধু সুস্বাদু ও লোভনীয় খাবার না খেয়ে থাকতে পারে। দানিয়েল স্পষ্টতই তাই করেছিলেন। শাস্ত্রীয় উপবাস ব্যক্তির নিজের ও ঈশ্বরের মধ্যে ব্যক্তিগত বিশেষ বিষয় এবং উপবাস পালনের জন্য কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। ঈশ্বর হয়তো উপবাস পালনের জন্য বিশেষ সময়ে বিশেষ কাউকে একটি পদ্ধতিতে পরিচালনা দিতে পারেন। আবার অন্য সময়ে সম্পূর্ণ এর ভিন্ন কোনো পদ্ধতিতেও পরিচালনা দিতে পারেন। যাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা যেমন বহুমূত্র (ডায়াবেটিক্স) আছে তাদের অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন যে, তারা কীভাবে উপবাস করতে পারেন। আমি বিশ্বাস করি, এ ধরণের ব্যক্তির পক্ষে ঈশ্বরের সম্মুখে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিভিন্ন প্রিয় খাবার এবং শারীরিক আনন্দ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে উপবাস করা সম্ভব।

প্রার্থনা

“কেননা প্রার্থনা ও উপবাস ভিন্ন আর কিছুতেই এই জাতি বাহির হয় না” (মথি ১৭:২১ পদ)।

বাইবেল নির্দেশিত উপবাস সবসময় প্রার্থনার প্রতি মনোযোগ বাড়ানো এবং ঈশ্বরের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রার্থনা ছাড়া উপবাস বাইবেল নির্দেশিত উপবাস নয়।

পাপস্বীকার

“পরে আমি উপবাস, চট পরিধান ও ভস্ম লেপন করিয়া প্রার্থনার ও বিনতির চেষ্টায় প্রভু ঈশ্বরের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলাম। আর আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করিলাম ও পাপ স্বীকার করিয়া কহিলাম ‘হে প্রভু তুমিই সেই মহান ও ভক্তিপূর্ণ ভয় জাগান ঈশ্বর, যিনি তাহাদের সহিত নিয়ম ও দয়া রক্ষা করেন, যাহারা তাঁহাকে প্রেম করে ও তাঁহার আজ্ঞা পালন করে। আমরা পাপ ও অপরাধ করিয়াছি, দুষ্টামি করিয়াছি ও বিদ্রোহী হইয়াছি, তোমার বিধি ও শাসনপথ ত্যাগ করিয়াছি; আর তোমার যে দাস ভাববাদিগণ আমাদের রাজগণকে, অধ্যক্ষগণকে, পিতৃপুরুষগণকে ও জনপদস্থ প্রজা সকলকে তোমার নামে কথা কহিতেন, তাঁহাদের কথায়ও আমরা কর্ণপাত করি নাই” (দানিয়েল ৯:৩-৬, পদ। পুরো অধ্যায়টি দেখুন)।

উপবাসের বিষয়ে বাইবেলের উদাহরণগুলো প্রায়ই বিশেষ নির্দিষ্ট কোনো কারণের জন্য চেতনা, অনুশোচনা, মন পরিবর্তন ও পাপস্বীকারের সঙ্গে সম্পর্কিত।

ঈশ্বরের প্রতি সেবাকর্ম

(যিশাইয় ৫৮:৬-৮ পদ)

খ্রীষ্টিয় উপবাস হলো নির্দিষ্ট ও স্পষ্ট আত্মিক সমস্যা ও প্রয়োজনের দিকে মনোযোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে। এজন্য খাদ্য এবং যতদূর সম্ভব অন্যান্য দৈহিক আনন্দ উপভোগ থেকে সাময়িক বিরত থাকা। উপবাস কোনো ধর্মাচার বা ধর্মগত কোনো আচারানুষ্ঠান নয় যা অযৌক্তিক উদ্দেশ্যে ধৈর্যসহকারে পালন করতে হবে এই আশায় যে, খাদ্য থেকে বিরত থাকা কোনো আশীর্বাদ বয়ে আনতে পারে। বরং এটি হলো স্বাভাবিক আনন্দ থেকে বিরত হয়ে প্রার্থনায় ঈশ্বরের প্রতি আত্ম-নিবেদনের একটি বিশেষ সময়।

যদি উপবাস করি তাতে কি কিছু হয়?

উপবাস যদি স্বতন্ত্র, আলাদা কিংবা ব্যক্তিগত বিষয় হয় এবং তা যদি বিশেষভাবে ঈশ্বর কর্তৃক নির্দেশিত না হয়, তাহলে তা কি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ? উপবাস কি পালন না করে উপেক্ষা করার বিষয়? না! প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বলেছেন, আত্মিক যুদ্ধে প্রার্থনা এবং উপবাস ছাড়া জয়লাভ করা সম্ভব নয়। শুধু প্রার্থনা নয় কিন্তু প্রার্থনা ও উপবাস। এর মানে শত্রুর উপর জয়লাভের জন্য আত্মিক ও বাইবেল নির্দেশিত উপবাস মাঝে মাঝে সত্যিই প্রয়োজনীয়।

নিঃসন্দেহে পৌল জীবন ও পরিচর্যা কাজে জয়লাভের জন্য উপবাসকে প্রয়োজনীয় বলে মানতেন। এটি নিশ্চিত নয় যে তিনি খাদ্য ছাড়াই অদ্ভুত আনন্দ পেতেন।

উপবাস প্রয়োজনীয় কি না এই কথা যদি আমরা হান্নাকে জিজ্ঞেস করতে পারতাম তাতে কী হতো! তিনি কী উত্তর দিতেন? অবশ্যই বলতেন, উপবাস গুরুত্বপূর্ণ। ঈশ্বর তাকে সন্তান দিয়েছেন, যে সন্তানের জন্য তিনি অত্যন্ত আকাক্সিক্ষত ছিলেন। এটি কি প্রার্থনা ও উপবাসের মাধ্যমে সম্ভব হয়নি?

আমরা ইষ্টের ও মর্দখয়ের কাছ থেকে কী শুনতাম? কেন তিনি তিন দিন ও তিন রাত উপবাসের কষ্ট স্বীকার না করে শুধু একটি প্রার্থনাসভা ডাকেননি? নিঃসন্দেহে তাঁর উত্তর হতো শুধু প্রার্থনা সবসময় যথেষ্ট নয়। কিছু আত্মিক যুদ্ধ আছে যা প্রার্থনা ও উপবাস ছাড়া জয় করা যায় না।

কখনো কখনো জয়লাভের জন্য উপবাস প্রয়োজনীয়। এই সত্যে ইষ্রাও অবশ্যই আমেন বলতেন। কেন তিনি আহবা নদীর তীরে লোকদের জড়ো করে উপবাসের ত্যাগস্বীকার ছাড়াই কয়েক ঘণ্টা প্রার্থনায় কাটাননি? স্পষ্টতই তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, ঐ সমস্ত বিপদপূর্ণ জায়গা দিয়ে নিরাপদে ভ্রমণ করার জন্য উপবাসসহ প্রার্থনা প্রয়োজন। “অতএব আমরা উপবাস করিলাম ও আমাদের ঈশ্বরের কাছে সেই বিষয়ের জন্য প্রার্থনা করিলাম; তাহাতে তিনি আমাদের অনুরোধ গ্রাহ্য করিলেন” (ইষ্রা ৮:২৩ পদ)।

এই প্রাচীন ঘটনাগুলোর সঙ্গে বর্তমানের ব্যস্ত, আধুনিক সময়ে বসবাসকারী খ্রীষ্টিয়ানদের সম্পর্ক কী? “আর এই সকল তাহাদের প্রতি দৃষ্টান্তস্বরূপ ঘটিয়াছিল, এবং আমাদেরই চেতনার জন্য লিখিত হইল; আমাদের, যাহাদের উপর যুগকলাপের অন্ত আসিয়া পড়িয়াছে” (১করিন্থিয় ১০:১১ পদ)।

আধুনিক বাইবেল অনুবাদগুলো উপবাস শিক্ষার উপর আঘাত করে

বাইবেলের আধুনিক সংস্করণগুলো উপবাসের বিষয়ে, নতুন নিয়মের শিক্ষার উপর আশ্চর্যজনক আঘাত করে। যদিও উপবাসের উপর কিছু কিছু উদ্ধৃতি থাকে, তবুও এসব আধুনিক সংস্বরণে বহু গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

মথি ১৭:২১ পদ - কিং জেমস্ ভার্সন (KJV) বাইবেল বলে, "Howbeit this kind goeth not out but by prayer and fasting" “কিন্তু প্রার্থনা ও উপবাস ভিন্ন আর কিছুতেই এই জাতি বাহির হয় না।” এই পদটির সম্পূর্ণই বাদ দেওয়া হয়েছে নিউ আমেরিকান স্টান্ডার্ড ভার্সন (NASV), রিভাইজ্ড স্টান্ডার্ড ভার্সন (RSV), নিউ ইণ্টারন্যাশনাল ভার্সন (NIV), নিউ ইংলিশ বাইবেল, জেরূশালেম বাইবেল এবং ফিলিপের অনুবাদ থেকে। টুডেস্ ইংলিশ ভার্সন (TEV) পদটিকে বন্ধনীর (ব্রাকেটের) মধ্যে রেখেছে।

মার্ক ৯:২৯ পদ - কিং জেমস্ ভার্সন (KJV) বাইবেল থেকে পাঠ করি, "And he said unto them, This kind can come forth by nothing, but by prayer and fsting" “এবং তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, প্রার্থনা এবং উপবাস ভিন্ন কিছুতেই এই জাতি বাহির হয় না।” বাইবেল সোসাইটির গ্রিক অনুবাদ এবং নতুন সংস্করণগুলো এই অংশ থেকে ‘এবং উপবাস’ বাক্যাংশটি বাদ দিয়েছে। একই কথা এনআইভি, এনএএসভি, আরএসভি, লিভিং বাইবেল, নিউ ইংলিশ বাইবেল, জেরূশালেম বাইবেল এবং ফিলিপের অনুবাদের ক্ষেত্রেও হুবহু একই হয়েছে।

উপবাস সম্পর্কে এই দুটি পদই শাস্ত্রের একমাত্র উদ্ধৃতি নয় কিন্তু এই দুটো একমাত্র উদ্ধৃতি যা বিশেষভাবে সরাসরি আত্মিক যুদ্ধে উপবাসের গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষা দেয়। যারা অন্ধকারের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে আত্মিকযুদ্ধ করেছেন, তারা জানেন, কী মহামূল্যবান সত্য যীশু এই আলোচিত অংশগুলোতে বলেছেন। প্রার্থনা একটি শক্তিশালী আত্মিক সম্পদ। কিন্তু কিছু শয়তানি বাধা আছে যা উপবাস ছাড়া এককভাবে প্রার্থনার দ্বারা ভাঙা যায় না।

বাইবেল থেকে এই অংশগুলো বাদ দেওয়া বোকামি ও দুষ্টতার কাজ। বিষয়টি এরকমই যে, কোনো সৈন্যকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানোর আগে তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মধ্য থেকে অস্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ সরিয়ে রাখার মতো।

উদ্ধৃত অংশগুলোর শাস্ত্রীয় প্রমাণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সত্যিকারে এই উদ্ধৃতিগুলো (যা উপবাসের শিক্ষাগুলো সমর্থন করে) ওয়েস্টকট ও হর্টের পছন্দ করা দুর্বল, ঠুনকো ও অনির্ভরযোগ্য ভাটিকানাস ও সাইনাইটিকাস পাণ্ডুলিপি দুটির বিরুদ্ধে জোরালো শাস্ত্রীয় প্রমাণ।

আমার বাইবেল থেকে এই পবিত্র শাস্ত্রাংশগুলো বাদ দেওয়া সমর্থন করার আগে আমি ব্যক্তিগতভাবে আরো জোরালো প্রমাণের দাবি করব। প্রকৃতপক্ষে, কেউই সেগুলো আমার বাইবেল থেকে বাদ দিতে পারবে না। আত্মিকভাবে এই শাস্ত্রাংগুলো আমি এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করি যে, এত জোরালো শাস্ত্রীয় প্রমাণ উপেক্ষা করে এই দুটো অনুচ্ছেদের অপসারণ আমার কাছে সাইনাইটিকাস ও ভাটিকানাস পা-ুলিপিকে অনুমোদন দেওয়া ওয়েস্টকর্ট-হর্টের শাস্ত্রীয় মূলনীতিগুলো অনুসরণ করার ভ্রান্তি তুলে ধরে।

উপবাসের শিক্ষার উপর আরো চারটি অনুচ্ছেদ আছে যেগুলো নতুন সংস্করণসমূহ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

প্রেরিত ১০:৩০ পদ - এখানে আমরা কিং জেমস্ ভার্সন এবং এছাড়াও বিভিন্ন ভাষার অনেক পুরাতন প্রোটেস্টান্ট অনুবাদগুলো থেকে পাঠ করে দেখি যে, কর্ণেলিয়াস উপবাস এবং প্রার্থনা করছিলেন। নতুন সংস্করণগুলো অর্থাৎ যেগুলো ওয়েস্টকর্ট-হর্টের গ্রিক মূলপাঠ অনুসরণ করে, সেগুলো উপবাস শব্দটি বাদ দিয়েছে। একই কথা এনআইভি, এনএএসভি, আরএসভি, লিভিং বাইবেল, টিইভি, নিউ ইংলিশ বাইবেল, জেরূশালেম বাইবেল, নিউ বার্কলে ভার্শন এবং ফিলিপের অনুবাদের ক্ষেত্রেও হয়েছে।

১করিন্থীয় ৭:৫ পদ - কিং জেমস্ ভার্সন (KJV) বাইবেল থেকে পাঠ করি, "Defraud ye not one the other, except it be with consent for a time, that ye may give yourselves to fasting and prayer; and come together again, that Satan tempt you not for your incontinency" “তোমরা এক জন অন্যকে বঞ্চিত করিও না; কেবল উপবাস ও প্রার্থনার নিমিত্তে অবকাশ পাইবার জন্য উভয়ে এক পরামর্শ হইয়া কিছু কাল পৃথক থাকিতে পার; পরে পুনর্বার একত্র হইবে, যেন শয়তান তোমাদের অসংযমের কারণে তোমাদিগকে পরীক্ষায় না ফেলে।” আমরা যদি আবারো শাস্ত্রীয় সাক্ষীগুলোর দিকে দৃষ্টি দেই তবে দেখতে পাবো যে, নতুন সংস্করণগুলো এই গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ থেকে উপবাস শব্দটি বাদ দিয়েছে। এই একই কথা উপরে জানানো সমস্ত সংস্করণ, যেগুলো আমরা পরীক্ষা করছি সেগুলোর ক্ষেত্রেও খাটে।

২করিন্থীয় ৬:৫ পদ - কিং জেমস্ ভার্সন (KJV) বাইবেল এর শিক্ষা “উপবাস” (fasting) নতুন সংস্করণগুলোতে “অনাহার”-এ (hunger) পরিবর্তন করা হয়েছে। স্পষ্টই উপবাস (fasting) এবং অনাহার (hunger) দুটি ভিন্ন বিষয়। ২করিন্থীয় ১১:২৭ পদে প্রেরিত পৌল তাঁর পরিচর্যা কাজের একই প্রকার কিছু বিষয়ের তালিকা দিচ্ছেন, যেখানে তিনি উপবাস এবং অনাহার উভয়ই উল্লেখ করেছেন। এ থেকে আমরা দেখি যে পবিত্র আত্মা এই দুটি শব্দ একই অর্থে বা একই মানে ব্যবহার করছেন না। আসলে উপবাসের আত্মিক উপকারিতার বিষয়ে বাইবেলের শিক্ষার প্রতি এটি আরেকটি আঘাত।

২করিন্থীয় ১১:২৭ পদ - কিং জেমস্ ভার্সন (KJV) বাইবেল এর শিক্ষা “প্রায়ই উপবাসে "fasting often" নতুন সংস্করণগুলোতে “প্রায়ই খাদ্য বিহীন often without food"-এ পরিবর্র্র্তন করা হয়েছে। ২করিন্থীয় ৬:৫ পদের উপরের মন্তব্য এখানেও ঠিক একই। ক্ষুধায় থাকা ও খাদ্য বিহীন বা খাবারের অভাবে থাকা আত্মিক জীবন ও যুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত নয়। খাদ্য বিহীন বা খাবারের অভাবে থাকা অবশ্যই উপবাস নয়। কোনো জোরালো প্রমাণ ছাড়া এ শিক্ষার পরিবর্তন করা এবং কিং জেমস্ বাইবেল অনুবাদকেরা ভুল করেছিলেন এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা খুবই বিপদজ্জনক। আধুনিক অনুবাদকদের হাতে এরূপ কোনো জোরালো প্রমাণই নেই। কিং জেমস্ বাইবেল অনুবাদ বলে “ক্ষুধা ও তৃষ্ণায়, প্রায়ই উপবাসে in hunger and thirst, in fastings often" এখানে স্পষ্টভাবে ‘ক্ষুধা’ - যা পৌল খাদ্যের অভাবে সহ্য করেছেন এবং আত্মিক উপবাসের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করে। এই দুই অনুচ্ছেদে যদি পবিত্র আত্মা এই প্রেরিতের আত্মিক যুদ্ধ, আত্মিক উপবাসের কথা বলে থাকেন - যা খুবই যুক্তিযুক্ত, যেহেতু এই ধরনের একটি পার্থক্য নির্দেশ করা হয়েছে, তাহলে আধুনিক অনুবাদকেরা তাদের অনুবাদগুলো থেকে এই শিক্ষা বাদ দিয়ে খুবই অন্যায় কাজ করেছেন।

যখন এই ছয়টি পদের শিক্ষাকে একত্র করা হয়, তখন নতুন গ্রিক মূলপাঠ (Greek texts) এবং অনুবাদগুলোতে আত্মিক অস্ত্র হিসাবে উপবাসের শিক্ষার উপর এক ধরনের আঘাত দেখতে পাওয়া যায়। শাস্ত্রে আমাদের সতর্ক করা হয়েছে, যখন খ্রীষ্টের আগমন সন্নিকট হবে তখন আত্মিক যুদ্ধ আরো তীব্র আকার ধারণ করবে। সেজন্য বিষয়টি আরো গুরুতর। “কিন্তু ইহা জানিও, শেষকালে বিষম সময় উপস্থিত হইবে . . . কিন্তু দুষ্ট লোকেরা ও বঞ্চকেরা, পরের ভ্রান্ত্রি জন্মাইয়া ও আপনারা ভ্রান্ত হইয়া, উত্তর উত্তর কুপথে অগ্রসর হইবে” (২তীমথিয় ৩:১,১৩ পদ)। প্রিয় খ্রীষ্টিয়ান ভাই বোনেরা, বাইবেলের যে অনুবাদ এই গুরুত্বপূর্ণ আত্মিক অস্ত্রগুলো আপনার জীবন থেকে সরিয়ে ফেলে, তা গ্রহণ করে প্রতারিত হবেন না, ভ্রান্ত হবেন না।

মূল বিষয় হলো, শয়তানের এমন দুর্গ আছে যা বাইবেল নির্দেশিত উপবাস ছাড়া ভাঙা যায় না। যখন মণ্ডলীগুলো উপবাস করে, তখন শয়তান লেজ গুটিয়ে পালায়।

এই সত্যতার অভিজ্ঞতা আমরা এক সময় লাভ করি। প্রতিমা পূজার দেশ নেপালে আমাদের পরিচর্যার ক্ষেত্রে হতাশ হতে হতে শেষ পর্যায় পৌঁছি। সেখানে আমাদের কাজ শুরু করার প্রথম দিকের এই রকম এক অভিজ্ঞতার কথা আমার মনে পড়ে। আমার মনে হয়েছিল যে আমাদের সামনে এমন এক অভেদ্য শক্ত দেয়াল আছে যা ভাঙা সম্ভব নয়। আমরা প্রভুর বাক্য প্রচার করি আর কিছু হিন্দু লোক আগ্রহ দেখায়; অনেকেই প্রচারসভায় আসে। কয়েজন বিশ্বাস করেছে বলে কথাও দেয়। কিন্তু প্রতিমাপূজার একজনও সত্যিকারে মন পরিবর্তন করেনি এবং নতুন জন্মও পায়নি।

এছাড়া বিভিন্ন দিক থেকে নানা সমস্যা আমাদের উপরে এসে উপস্থিত হয়, যা এই কঠিন দেশে আমাদের পরিচর্যার সম্ভাবনা শেষ হতে চলছিল। ন্যাশনাল ইক্যুমেনিক্যাল ফেলোশিপ আমাদের মিথ্যা অপবাদ দেয় আর আমাদের প্রচার পরিচর্যা একেবারে বাদ দেবার কথা জানায়। পর্যটক হিসেবে আসা আমরা সবসময় নেপাল সরকারের আইনি অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার বিপদের মধ্যে থাকি। অবস্থা এমন এক পর্যায় হয় যে, মনে হচ্ছিল নেপালে একটি মণ্ডলী প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের আকাক্সক্ষা, যা যীশু খ্রীষ্টের গৌরব বহন করবে, তা কখনোই পূর্ণ হবে না।

সত্যিকারে, বিশেষ এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যে আমার এইরকমভাবে উপবাসে থাকাটা ছিল প্রথমবারের মতো। আমি স্বীকার করছি যে এই উপবাস আমার জন্য মোটেও সহজ ছিল না। এর পরপরই একজন নেপালি লোক আমাদের ঘরে আসে। প্রথম সাক্ষাতেই আমাদের বসার ঘরে তিনি পরিত্রাণপ্রাপ্ত হন। শীঘ্রই সে তার এক বন্ধুকে খ্রীষ্টের কাছে নিয়ে আসে এবং সেই বন্ধুটি আবার তার বোনকে খ্রীষ্টের কাছে নিয়ে আসে। এ সবই মন পরিবর্তনের সত্যিকার প্রমাণ। অনেক নির্যাতন থাকা সত্ত্বেও তারা প্রতিমার সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সম্পর্কচ্ছেদ করে এবং প্রভু যীশু খ্রীষ্টের সেবা করতে শুরু করে। শীঘ্রই আরো অনেকে পরিত্রাণপ্রাপ্ত হয় এবং আমাদের সাহায্য করার জন্য প্রভু তখন একজন বিশ্বস্ত প্রচারককে নিয়ে আসেন। যাকে সহ-কার্যকারী পরিচর্যায় খুবই প্রয়োজন ছিল। অনেক দুঃখ-কষ্ট ও দারিদ্রতার মধ্যেও আজকে সেই দল একটি চমৎকার নতুন নিয়মের মণ্ডলীতে পরিণত হয়েছে। এই মণ্ডলীর নিজস্ব পরিচালনা রয়েছে। মণ্ডলীর খরচ নিজেই বহন করে এবং এদের উদ্যমী প্রচার ও পরিচর্যামূলক কার্যক্রম রয়েছে।

উপবাস সহকারে প্রার্থনা হলো নিজ নিজ ম-লীর পরিচর্যার একটি স্বাভাবিক অংশ। উপবাস ছাড়া কি এই বিজয় সম্ভব হতো? ঈশ্বর পুত্রের সাক্ষ্যানুযায়ী তা সম্ভব হতো না। কারণ তিনি বলেছেন, “প্রার্থনা ও উপবাস ভিন্ন কিছুতেই এই জাতি বাহির হয় না।”

ঐ পৌত্তলিক দেশে আমরা এক অতিপ্রাকৃত বাধার সম্মুখীন হচ্ছিলাম। যে পর্দা আমাদের দৃষ্টি থেকে অতিপ্রাকৃত রাজ্য ঢেকে রাখে, শাস্ত্র সেই পর্দা উন্মোচন করে এবং আমাদের শত্রুদের পরিচয় প্রকাশ করে। “কেননা রক্তমাংসের সহিত নয়, কিন্তু আধিপত্য সকলের সহিত, কর্তৃত্ব সকলের সহিত, এই অন্ধকারের জগৎপতিদের সহিত, স্বর্গীয় স্থানে দুষ্টতার আত্মাগণের সহিত আমাদের মল্লযুদ্ধ হইতেছে” (ইফিষীয় ৬:১২ পদ)।

আরো বহু উদাহরণ দেওয়া যায় তবে এতটুকুই যথেষ্ট। ঈশ্বরের বাক্য কী বলে আমরা তা দেখেছি। আমরা বিভিন্ন যুগের ঈশ্বরভক্ত লোকদের উদাহরণ দেখেছি। আমরা ঈশ্বর পুত্রের উদাহরণও দেখেছি। আমাদের এ বিষয়ের মুখোমুখি হওয়া এবং উপলব্ধি করা প্রয়োজন যে আত্মিক উপবাস খ্রীষ্টিয় জীবন ও পরিচর্যার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এই ধরণের অনুশীলন বর্তমানে বিশেষ প্রয়োজন।

আমরা শত্রুদের শক্তিও দেখেছি। আমরা তার ভয়ংকর গর্জন শুনেছি। তারপরও আমরা প্রভু যীশু খ্রীষ্টের সতর্কতা এবং শাস্ত্রের বহু অভ্রান্ত ও সত্য উদাহরণে বিশ্বাস করি। শাস্ত্রীয় উপবাস খুবই প্রয়োজনীয়।

বাইবেলের নিশ্চিত প্রতিজ্ঞার জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। “কিন্তু তুমি যখন উপবাস কর, তখন মাথায় তৈল মাখিও, এবং মুখ ধুইও; যেন লোকে তোমার উপবাস দেখিতে না পায়, কিন্তু তোমার পিতা, যিনি গোপনে বর্তমান, তিনিই দেখিতে পান; তাহাতে তোমার পিতা, যিনি গোপনে দেখেন, তিনি তোমাকে ফল দিবেন” (মথি ৬:১৭-১৮ পদ)।

লেখক : ডেভিড ডব্লিউ ক্লাউড
ইংরেজী সংস্করণ : FASTING : What does the Bible say?
অনুবাদ : নথনিয়েল হাজরা


 









Comments

Popular posts from this blog

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?