ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?


ঈশ্বর যখন আপনাকে সৃষ্টি করেছেন তখন তাঁর বোধ, চিন্তা, জ্ঞান, উপলব্ধি ও অনুভূতিতে আপনি আর সাধারণ নন্, আপনি তাঁর সর্বোত্তম সৃষ্টি। সুতরাং আপনার জীবনের উদ্দেশ্য কী? কী অর্জন আপনার এই জীবনে?

জীবনের লক্ষ্য ও অর্থ অনুসন্ধানের জন্য মানুষ আজ আধুনিক জীবন যাপনের চাপ ও সমস্যায় অস্থির। জীবনটা অবশ্যই আশা-ভরসা, সুনাম ও আনন্দে পরিপূর্ণ হওয়া উচিত; কিন্তু এর পরিবর্তে অধিকাংশ মানুষকে দেখা যায় ব্যক্তিগত সমস্যা, ভয়, আশঙ্কা ও ভবিষ্যৎ চিন্তায় বন্দি। আর এই বন্দিত্ব থেকে মুক্তির চিন্তায় মানুষ আজ অস্থির, তাই মুক্তির জন্য মানুষকে করতে হয় অনেক রকম পরিকল্পনা। তবুও অস্থিরতা। মানুষের তৈরি সুখের পথে কোনো স্বস্তি নেই, কোনো সান্ত্বনা নেই। এর কারণ একটাই যে, অনেকেই জানেন না জীবনের উদ্দেশ্য কী?

ঈশ্বর মহান স্রষ্টা তাঁরই ক্ষমতায় জগতের সবকিছুই সৃষ্টি করেছেন, তিনিই এই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা। ঈশ্বরের ইচ্ছানুযায়ী তাঁর গৌরব ও প্রশংসার লক্ষ্যে তাঁরই সাদৃশ্যে ও প্রতিমূর্তিতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র বাইবেল বলে, “ঈশ্বর আপনার প্রতিমূর্তিতে (অনুরূপ মত) মানুষকে সৃষ্টি করিলেন; ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতেই তাহাকে সৃষ্টি করিলেন, পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাহাদিগকে সৃষ্টি করিলেন” (আদিপুস্তক ১:২৭ পদ)। এমন আর কোনো কথা নেই যে, অন্য কোনো জীবকে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে ও তাঁর সাদৃশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই সত্যটি কেবল মানুষ সৃষ্টিতে। ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টির সেরা ‘মানুষ’ করে বানিয়েছেন। আমরা মহান স্রষ্টার আনন্দ ও তৃপ্তির জন্য সৃষ্ট হয়েছি। তিনি নিজেই আমাদের সৃষ্টি করে অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত হয়েছেন। তিনি নিজেকেই নিজে বাহবা দিয়েছেন সর্বোত্তম সৃষ্টির সর্বোত্তম স্রষ্টা হিসাবে। ঈশ্বর সবকিছুরই সৃষ্টিকর্তা। তিনি তাঁর সৃষ্টির থেকে সম্মান ও সমাদর পেতে চান। ঈশ্বর তাঁর গৌরবার্থে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। মাবন জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব মানুষই মূল্যবান। পুরুষ ও মহিলা, ধনী-গরীব, যুবক ও বৃদ্ধ, সবাই ঈশ্বরের কাছে মূলবান। তাই আমাদের সৃষ্টির পর থেকেই আমরা তাঁকে আমাদের সর্বোত্তম ধন্যবাদ জানিয়ে আসছি, আমরা তাঁকে প্রণিপাত করছি, আমরা তাঁর আরাধনা করছি। আজ অনেকেই বিশ্বাস করেন না যে, আমরা ঈশ্বরের আরাধনা, তাঁরই ভজনা করার জন্যই সৃষ্ট। সৃষ্টিকর্তার আরাধনা ও নিজেকে তাঁর কাছে নিবেদন করা ছাড়া কোনো সৃষ্টিরই তার অস্তিত্বের কোনো অর্থ থাকে না।

আমাদের এই অস্তিত্ব দিয়ে জীবন শুরু করা পবিত্র ঈশ্বর ও পবিত্র আত্মার ইচ্ছা। মানুষকে সৃষ্টির সবকিছুর উপরে উচ্চ মর্যাদা দিয়ে তিনি খুবই সন্তুষ্ট ছিলেন। প্রথমে কোনো পাপ ঈশ্বরের ভালোবাসা ও তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক থেকে মানুষকে পৃথক করতে পারেনি। মানুষের মুখ সব সময় প্রভুর গৌরব-প্রশংসায় রত ছিল; মানুষের সাদৃশ্য ও স্বভাবের মধ্যে ছিল ঈশ্বরের সৌন্দর্য ও পবিত্রতা। মানুষ ছিল স্নেহশীল, ভালোবাসা প্রবণ। আর এই ভক্তি, শ্রদ্ধা পাবার যোগ্য ছিলেন ঈশ্বর। আপনি কি ঈশ্বরের সম্মুখে প্রণত হন? তাঁকে মান্য করেন, পরম সমাদরে তাঁর প্রশংসা করেন? কারণ তিনি আপনাকে সর্বোৎকৃষ্ট, পরম কৃতিত্বে সৃষ্টি করেছেন। ঈশ্বর তাঁর সাদৃশ্য ও স্বভাব স্পষ্টভাবে মানুষের কাছে প্রকাশ করতে আপনাকে আহ্বান করেছেন। ঈশ্বরের ইচ্ছায় আপনাকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে পবিত্র বাইবেল বলে : “. . . যাহাকে আমি আমার গৌরবার্থে সৃষ্টি করিয়াছি . . . আমি তাহাকে নির্মাণ করিয়াছি আমি তাহাকে গঠন করিয়াছি . . . সেই প্রজাবৃন্দকে আমি আমার নিজের জন্য নির্মাণ করিয়াছি, তাহারা আমার প্রশংসা প্রচার করিবে” (যিশাইয় ৪৩:৭,২১ পদ।

স্রষ্টার প্রতি মানুষের দায়িত্ব কী? মানুষের কি তার স্রষ্টাকে প্রেম করা উচিত? হ্যাঁ, উচিত? মানুষ কি তার স্রষ্টার আরাধনা করবে? হ্যাঁ, অবশ্যই। সে কি তার মহান স্রষ্টার আদেশ পালন করবে? হ্যাঁ, নিশ্চয়। সৃষ্টি স্রষ্টাপ্রেমে বাধ্য, এজন্যই তো আমরা সৃষ্ট।

কিন্তু মানুষ আত্মঅহংকারী হয়ে নিজের ইচ্ছামতো চলতে চাইলো। ঈশ্বরের প্রতি মানুষ আর নম্র ও নত হতে চাইলো না, এভাবে মানুষ ঈশ্বরের স্বভাব ও সাদৃশ্য থেকে বঞ্চিত হলো। মানুষকে যে মর্যাদায় স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল, নিজ স্বার্থপরতায় তার অপব্যবহার করল। ঈশ্বরের নিজ সাদৃশ্য ও স্বভাবে যে মানুষ ছিল, নিজের স্বার্থে মত্ত থাকায় তার সর্বনাশ হলো। ঈশ্বর প্রেম, তিনি প্রেমিক। আর মানুষের মধ্যে যে ঈশ্বরের সাদৃশ্য ও স্বভাব ছিল তার তার মৃত্যু হয় ঠিক এভাবে, যখন মানুষ ঈশ্বরের ভালোবাসাকে অমান্য করে, তাঁর ভালোবাসার উৎস থেকে অন্য দিকে যায়।

নিজের ইচ্ছামতো চলতে থাকা মানুষ আজ পাপের পথে। পাপের কারণে মানুষ আজ বহু সমস্যায় জর্জরিত। সমস্যা সমাধানের জন্য মানুষ আজ সমাধান খোঁজে। ক্লান্ত মানুষ তার জীবন পুনরায় গঠনের চেষ্টা করে থাকে। মানুষ সে চেষ্টা করবেও, তবুও, মানুষের তৈরি শান্তি বা কোনো সমাধান কখনো স্থায়ী হয় না। পাপ মানুষকে বারবার শান্তি থেকে পৃথক করে রাখে।

ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে, তাঁর হারিয়ে যাওয়া প্রিয়তম সৃষ্টি ‘মানুষকে’ সঠিক পথ দেখানোর জন্য তাঁর নিজ পুত্র যীশু খ্রীষ্টকে পাঠিয়েছিলেন। হারিয়ে যাওয়া মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের নিজ সাদৃশ্য ও স্বভাব পুনরায় উদ্ধারের জন্য যীশু খ্রীষ্ট মানব দেহ ধারণ করে এই পাপেপূর্ণ সর্বনাশের জগতে এসেছিলেন। তাঁর মধ্যে ‘ঈশ্বরের সমস্ত পূর্ণতার অস্তিত্ব ছিল’ তিনি অদৃশ্য ঈশ্বরের অনুরূপ ছিলেন। তিনি ‘ঈশ্বরের ঠিক সেই বৈশিষ্ট্যের ছাপ ধারণ করেছেন’ যে কেউ তাঁকে দেখেছে অর্থাৎ জেনেছে, সে সেই স্বর্গস্থ পিতা ঈশ্বরকে জেনেছে। তাঁর গৌরব অবিশ্বাসীদের কাছে অজানা, কিন্তু তাঁর অনুসারীদের তিনি তাঁর মহিমা দেখিয়েছেন। তাঁর ভালোবাসা, ক্ষমতা ও পবিত্রতা তাঁর বিশ্বাসীদের কাছে স্পষ্ট। অনেকেই যখন খ্রীষ্টকে জেনে তাঁর আরাধনায় অবনত হয়েছেন, তখনই তিনি সেই হারানো মানুষকে পুনরায় ঈশ্বরের নিজ সাদৃশ্য ও স্বভাব প্রদান করতে সম্ভব করেছেন।

যীশু খ্রীষ্ট নিজেকে বলি/প্রাণোৎসর্গ করে আমাদের পাপ থেকে পরিত্রাণের (মুক্তির) উপায় করেছেন। তিনি শত্রুদের ভালোবেসেছেন। যীশু খ্রীষ্ট, যিনি জগতের পাপ দূর করেন, তিনি কখনো কোনো অন্যায় করেননি বরং সব সময় নম্র ছিলেন, ঈশ্বরের মেষশাবকের মতন। তাঁর মৃত্যুতে তিনি আমাদের আত্মগর্ব ও আমাদের পাপ ক্ষমা করার উপায় করেছেন। তাই আমাদের পুনরায় তাঁর সাদৃশ্য ও স্বভাবের মতো হওয়ার বিশেষ সুযোগ রয়েছে।

কোনো মানুষেরই এমন কোনো যোগ্যতা নেই যে যীশু খ্রীষ্টকে না জেনে ঈশ্বরের ভালোবাসা, তাঁর সত্যতা, তাঁর পূর্ণতা ও ক্ষমতা দেখতে পায়। কিন্তু যখন পবিত্র আত্মা মানুষের অন্তরে থাকে, তখন ঈশ্বরের ‘স্বভাব ও প্রতিমূর্তি’ তাকে নতুন করে তোলে। আর তখনই ঈশ্বরের সত্যভাব তার সঙ্গে থাকে এবং সে তার স্বর্গস্থ পিতা ঈশ্বরের গৌরব প্রশংসা করতে শুরু করে, আর এভাবে সে ঈশ্বরের আরাধনা ও ভজনা করে।


খ্রীষ্ট যীশুর রক্ত আমাদের ধার্মিক করে, পবিত্র করে। যখন তিনি আবার আসবেন, তিনি অবিশ্বাসীদের অন্তরে থাকা সেই অজানা বিষয়টি প্রকাশ করবেন যে, তাঁর বিশ্বাসীরা ঈশ্বরের সন্তান। তাই তাঁর বিশ্বাসীরা এই প্রকৃত আনন্দের মধ্য দিয়ে জগতের সব রকম যন্ত্রণা ও সঙ্কটময় অবস্থা অতিক্রম করতে পারবে; কারণ যারা ঈশ্বরকে জেনেছে তাদের অন্তরে চিরশান্তি থাকে। তারা জগতের সমস্যা ধৈর্য সহকারে ধারণ করতে পারে। যীশু খ্রীষ্টের আনন্দ তাদের প্রাণে থাকে। তাদের দেহ পবিত্রকৃত হয়, নিজেদের কোনো শক্তিতে নয়, কিন্তু পবিত্র আত্মার শক্তিতে; আর তারা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মায় পবিত্র মন্দিরের জন্য একই সঙ্গে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

বিশ্বাসীদের জীবনে খ্রীষ্টকে দেখতে পাওয়া যায়। আপনার জীবনে কি ঈশ্বরের পরিচয় আছে? তাঁর ভালোবাসার উজ্জ্বলতা কি আপনার মাধ্যমে প্রকাশ পায়? আপনি কি এখনো পাপে বন্দি না-কি ঈশ্বরের গৌরব প্রশংসা করার জন্য বেঁচে আছেন? পরীক্ষা করে দেখুন, ঈশ্বরের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন? ঈশ্বরের ইচ্ছা, আপনাকে খ্রীষ্টের রক্তে ও তাঁর পবিত্র আত্মা লাভের মাধ্যমে তাঁর স্বভাবে বা সাদৃশ্যে গঠন করে তাঁর কাছে রাখা। এভাবেই আপনি তাঁর স্বর্গীয় পরিবারভূক্ত সদস্য হবেন। আপনি কি ঈশ্বরকে আপনার স্বর্গীয় পিতারূপে জেনেছেন? তাঁর কাছে অবনত হন; আপনাকে তাঁর সন্তান করতে তিনি কখনো লজ্জিত নন, কারণ খ্রীষ্ট আপনার প্রভু ও মুক্তিদাতা হতে তিনি অপমানিত হয়েছেন; আপনার পাপ থেকে মুক্তি দিতে তিনি গৌরব-বিহীন অর্থাৎ লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত হয়েছেন। 
  
তাই আমাদের সকলেরই হৃদয়ে উপলব্ধি করা প্রয়োজন যে, আমাদের পাপের জন্য আমরা ঈশ্বরের থেকে পৃথক রয়েছি। এখন পাপের পথ থেকে মন ফিরিয়ে ঈশ্বরের কাছে আসতে প্রবল ইচ্ছা থাকা প্রয়োজন। বিশ্বাস করা প্রয়োজন যে যীশু খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য মৃত্যুবরণ করেছেন ও বিজয়ের সাথে মৃত্যু থেকে জীবিতও হয়েছেন। আমাদের জীবন পরিচালনার জন্য যীশু খ্রীষ্টকে আহ্বান করা আবশ্যক। পবিত্র বাইবেলে আছে “যে কেহ প্রভুর নামে ডাকে, সেই পরিত্রাণ পাইবে” (রোমীয় ১০:১৩ পদ)। যারা যীশু খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করে তাদেরকে তিনি ঈশ্বরের আত্মিক সন্তান হবার অধিকার দেন। রোমীয় ১:১২ পদ।

প্রভু যীশু খ্রীষ্ট কেন এ জগতে এসেছিলেন?
‘প্রভু যীশু খ্রীষ্ট’ স্বর্গীয় রাজ-সিংহাসন ছেড়ে এই পৃথিবীতে সাধারণ মানুষের এক গরীব ছুতোর মিস্ত্রীর পরিবারে এবং বেথলেহমে সামান্য গোয়ালঘরের যাবপাত্রের মধ্যে দিয়ে এই জগতে পাপীদের খোঁজে পাপীদের কাছে এসেছিলেন। ‘প্রভু যীশু খ্রীষ্ট’ মানুষের পরিত্রাণ অর্থাৎ মুক্তির জন্য পরিত্রাণের (মুক্তির) পথ দেখাতে এই পাপময় দুষ্কর্মের জগতে এসেছিলেন। তিনি স্বর্গীয়জ্ঞান ও পাণ্ডিত্যের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি পাপীদের জানিয়েছেন স্বর্গরাজ্যের কথা, পথ দেখিয়েছেন এক নতুন জীবন ও সমাজের। মানুষের কাছে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন প্রেমের অমৃত বাণী। তিনি সবাইকে জানিয়েছেন তাঁকে অনুসরণ করার আমন্ত্রণ। রক্তমাংসে দেহ ধারণে তাঁর এই আবির্ভাবের উদ্দেশ্য ছিল মৃত্যুবরণ করা। প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মানবীয় জীবনে তাঁর মৃত্যু নিছক কোনো ঘটনা নয়, এতে মহত্তম উদ্দেশ্য ছিল। রক্তমাংসে মানুষের মতো তাঁর জন্ম হওয়ার উদ্দেশ্য যেন তিনি মানুষের মতো এবং মানুষের জন্য মৃত্যুবরণ করতে পারেন, এবং অনেকের বন্দিত্ব থেকে মুক্তি, পরিত্রাণ ও প্রায়শ্চিত্তের উদ্দেশ্যে তাঁর জীবন প্রদান করেন। “এই কথা বিশ্বসনীয় ও সর্বতোভাবে গ্রহণের যোগ্য যে, খ্রীষ্ট যীশু পাপীদের পরিত্রাণ করিবার জন্য জগতে আসিয়াছেন” (১তীমথিয় ১:১৫ পদ)।

Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?