যীশুর কি লম্বা চুল ছিল? Did Jesus were long hair?

অনুবাদ: নথনিয়েল হাজরা
 আজ অনেকের মাথায় লম্বা চুল রাখতে দেখা যায়। অনেক অনেক গায়ক ও বাজনাদারদের মাথায়ও লম্বা লম্বা চুল থাকতে দেখা যায়। লম্বা চুলে হিপ্পিদের (hippie) মতো ভাব ও আচরণ প্রায় সব দেশেই রয়েছে, এরা পুরুষদের লম্বা চুল রাখা সমর্থন করেন। বিদেশে “জিজাস ফ্রিকস্” (Jesus Freaks) নামে একটি দল রয়েছে যারা এরকম লম্বা চুল রাখেন। বিদেশে তো রয়েছে, আমাদের দেশেও খ্রীষ্টের দাবিদার কিছু কিছু গোষ্ঠী রয়েছেন যারা এরকম লম্বা চুল রাখেন। পুরুষদের এরকম লম্বা চুলের ভঙ্গিমা খুবই দুঃখজনক। এরকম লম্বা চুল রাখার পুরুষেরা যুক্তি দেখায় যে যীশু খ্রীষ্টের তো লম্বা চুল ছিল তাই তারাও লম্বা চুল রাখেন। তাই সত্য কথা বলতে কি, এখনই এর সত্যতার সঠিক প্রমাণ করার সময় এসেছে।

যীশুর লম্বা চুল ছিল এমন ধারণা ইতিহাস কখনই সমর্র্থন করে না।
আজ বহু ছবি আঁকিয়েরা অর্থাৎ আর্টিস্টরা যীশুর লম্বা চুলের ছবি আঁকছেন। তারা এভাবে যীশুর ছবি এঁকে ভুল করছেন। Philip Vollmer এর লেখা ও কয়েক বছর আগে Fleming H. Revell কোম্পানীর প্রকাশ হওয়া "The Modern Student's Life of Christ" বইটির লেখার কিছু অংশ এখানে উল্লেখ করা হলো দেখুন :

“প্রত্নতত্ত্ববিদেরা খ্রীষ্টের প্রচলিত ছবি মেনে নিতে রাজি নন্, যীশুর এরকম ছবিতে তাদের ঘোর আপত্তি রয়েছে কারণ ইতিহাস অনুযায়ী এসব ছবি সত্য নয়। L. Fahrenkrong নামে একজন জার্মান চিত্রকর বলেন : ‘নিঃসন্দেহে খ্রীষ্টের কখনোই দাড়ি ছিল না এবং পেছনে প্রায় সমান পর্যায়ে খাটো করে চুল ছাঁটা ছিল। তা সত্ত্বেও আমাদের কাছে ঐতিহাসিক প্রমাণও আছে। অনেক আগেকার পুরোনো দিনের রূপদান করা, সেই প্রথম শতাব্দির খ্রীষ্টিয়ানের দিকে ফিরে যাই, আর প্রথমত আমরা  রোমের ভূ-গর্ভস্থ সমাধি পাই, সমস্ত প্রকার শিল্পকর্মের প্রতিটি প্রতিকৃতি দাড়িবিহীন অবস্থায় করা হয়েছে। আর খ্রীষ্টের সমস্ত প্রকার আঁকা ছবি (লম্বা চুল বানিয়ে) অন্ততঃ চতুর্থ শতাব্দির পর থেকে আজ পর্যন্ত এই ধরনের করা হচ্ছে’।”

এমনকি লিওনার্দো দা ভিঞ্চি (Leonardo da Vinci) এবং মাইকেলএ্যাঞ্জেলো (Michaelangelo) শেষ বিচারে যীশুকে পুরাতন ধরন অনুযায়ী ছবি এঁকেছেন।

১৯৭১ সালের জুন মাসে প্রকাশিত "Tomorrow's World" নামে একটি পত্রিকায় “যীশুর কি লম্বা চুল ছিল?” নামে একটি শিরোনাম ছিল। লেখাটিতে দৃষ্টান্ত ছিল যে প্রাচীন জগতের রোমান সাম্রাজ্যের নেতাদের পাথরের আবক্ষ মূর্তি দ্বারা এই সত্য কথা প্রমাণিত হয় যে রোম-দখলকৃত জুডিয়াতে (যিহূদীয়াতে) ছোট চুলের চল গ্রহণযোগ্য ছিল।

জেনারেল পম্পেই, জুলিয়াস সীজার, আগস্টাস সীজার, সম্রাট ট্রাজান, রাজা হেরদ আগ্রিপা এদের পাথরে খোদাই করা, কাঁসা ও জিপসামে নকশি করা তৈরি ও আবক্ষ মূর্তির সবটাতে ছোট চুলের ভাস্কর্য দেখা যায়। এই পত্রিকাটিতে আরো লেখা আছে :

“দৃষ্টান্ত স্বরূপ, Avi-Yonah's work (A History of the Holy Land) বইটির ১২৬-১২৭ পৃষ্ঠায় পাওয়া যায় পম্পেই, অগাস্টাস, এবং বিশ্বাস করা যায় যে একই হেরদ এর পাথরের আবক্ষমূর্তির সবকটাতে ছোট চুলসহ ছিলেন। ব্রোন্জ, কাঁসা, পাথর ও কাঠ খোদাইকৃত বা নকশা করা সমস্ত সৈনিকদের মূর্তিতে দেখা যায় যে তাদের মাথায় খাটো করে চুল কাটা। একজন রোমীয়র লম্বা চুল থাকাটা যেমন অস্বাভাবিক, অদ্ভুত প্রকৃতির ছিল - তেমনি আমাদের সমাজেও পুরুষদের লম্বা চুল রাখাটা অস্বাভাবিক ও অদ্ভুত একটি ব্যাপার। আসলে সমস্ত রোমীয় সাম্রাজ্যের আগে ঐ সময়কালে আর খ্রীষ্টের সময়কালে, জুলিয়াস সীজার থেকে ট্রাজান পর্যন্ত, মাথায় খাটো করে চুল ছেঁটে রাখতেন। সম্রাট তিনি সেই বিশিষ্ট ব্যক্তি যিনি উৎকৃষ্ট রীতি, আদর্শ ও পরিধেয় বস্ত্রের নকশা, ধরণ ও চল স্থাপন করতেন।”

যীশু খ্রীষ্টের যে কোনো প্রকারের ছবি গির্জা ঘরে কিংবা নিজেদের ঘরে টাঙ্গানো শাস্ত্রসম্মত বলে মনে করাটা ঠিক নয়। আজকাল প্রায় সব আঁকানো ছবিতেই যীশুর লম্বা চুল ও সুন্দর নীল চোখ দেখানো হচ্ছে। যেহেতু কোনো চিত্রকর/আর্টিস্ট তাঁকে দেখেন নাই, তাই আঁকানো ছবিতে যেভাবে তাঁকে উপস্থাপন করা হয় তা সাজান, মিথ্যা, ও মানুষদের কল্পনায় আর এইভাবে খ্রীষ্টকে বিকৃত করা হচ্ছে। তুলনামূলকভাবে আজকাল যীশুর নানান বিচিত্রের যেসব ছবি মানুষের দ্বারা আঁকানো হচ্ছে, তাতে যীশুর এমন লম্বা চুল আঁকিয়ে শয়তানিকেই টিকিয়ে রাখা হচ্ছে।

একটি বিষয়ে অবাক হতে হয় যে, যেখানে শিল্পীরা যীশুর শিষ্যদের ছবি আঁকতে গিয়ে তাদের আদর্শ বা নীতি অনুসরণে ছোট চুলে আঁকছেন; আর অন্যদিকে তাদের প্রভুকে দেখতে কি-না মেয়েলিপনা হিপ্পিদের মতন? বিষয়টি অত্যন্ত অদ্ভুত; এটি ঈশ্বরভক্তিহীনতা, জঘন্য।

আমাদের মুক্তিকর্তা কখনোই “হিপ্পিদের” মত দেখতে ছিলেন না। আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে তিনি কখনো লম্বা চুল রাখেননি।

ধর্মীয় ছবিতে খ্রীষ্টের প্রতিকৃতিতে তাঁর আসল রূপ বাদ দিয়ে যেমন নীল চোখ, লম্বা সোনালী কেশ, এবং উজ্জল বর্ণ দেওয়া হচ্ছে। আমাদের প্রভু যীশু দেখতে আগেকার এক সাধারণ যিহূদীদের মতন - গায়ের রং ধুসর (olive - হলদে-বাদামি), এবং মাথায় ছোট করে কাটা কালো চুল ছিল।

বাইবেলে এমন কোনো প্রমাণ নেই যে যীশু মাথায় লম্বা চুল রেখেছেন।
“স্বয়ং প্রকৃতিও কি তোমাদিগকে শিক্ষা দেয় না যে, পুরুষ যদি লম্বা চুল রাখে, তবে তাহা তাহার অপমানের বিষয়?” ১করিন্থীয় ১১:১৪ পদ।

যীশু একজন নাসরীয় (Nazarite) ছিলেন না! একজন নাসরীয়, গণনাপুস্তক ৬:১-২৭ পদ অনুযায়ী লম্বা চুল রাখতেন। আর যাহোক, যীশু একজন নাসরতীয় (Nazarene) ছিলেন, কিন্তু তিনি কোনো নাসরীয় (Nazarite) ছিলেন না। বাংলা বা ইংরেজিতে এই শব্দ দু’টি দেখতে কিছুটা একইরকম হলেও বাইবেলের মূল ভাষায় তা দেখতে এবং অর্থে সম্পূর্ণ আলাদা। মথি ২:২৩ পদ অনুযায়ী যিনি নাসরতীয় তিনি নাসারৎ এ বাস করতেন। একজন নাসরীয় যিনি গণনাপুস্তক ৬ অধ্যায় অনুযায়ী নাসরীয় ব্রত অর্থাৎ শপথ গ্রহণ করতেন।

নাসরীয় ব্রত বা ঐ শপথ প্রচলন ছিল সাময়িক (শিমশোন ও শমূয়েলকে বিশেষভাবে নিয়মের অন্যথা হতে দেখা যায়, তাদের ব্রতের কারণ ছিল জীবন বা জীবনীশক্তির জন্য। দেখুন ১শমূয়েল ১:১১ পদ; বিচারকর্তৃক বিবরণ ১৩:৫ পদ; ১৬:১৭ পদ)।

নাসরীয় ব্রত ছিল স্বতন্ত্র/পৃথকভাবে বসবাসের ব্রত। তিনটি বিষয় ছিল নিষিদ্ধ যতদিন পর্যন্ত তিনি ঐ ব্রতের অধিনে থাকেন। (১) “তখন সে দ্রাক্ষারস (আঙুররস) ও সুরা (উগ্র পানীয়) হইতে পৃথক থাকিবে, দ্রাক্ষারসের সিরকা বা সুরার সিরকা পান করিবে না, এবং দ্রাক্ষাফলোৎপন্ন (আঙ্গুরফল দিয়ে তৈরি) কোন পানীয় পান করিবে না, আর কাঁচা কি শুষ্ক দ্রাক্ষাফল খাইবে না” গণনাপুস্তক ৬:৩ পদ। (২) সে তার মাথার চুল কাটাতে পারবে না। (৩) সে মৃত ব্যক্তির দেহ স্পর্শ কিম্বা কাছাকাছি আসতে পারবে না, অর্থাৎ লাশের কাছে সে যাবে না। গণনা ৬:৬-৯ পদ।

একজন নাসরীয় আঙুর ফল দিয়ে তৈরি কিছু গ্রহণ করতে পারতেন না, আর তাই যীশু যদি নাসরীয় হয়ে থাকতেন তাহলে তিনি প্রভুর ভোজের বিধান করতেন না। এতকিছু সত্ত্বেও, তিনি আঙুরের ফল তাঁর কাজে লাগিয়েছেন।

তিনি যদি একজন নাসরীয় হয়ে থাকতেন, তাহলে লূক ৭:১১-১৮ পদে তিনি শবসৎকারে মানুষের মরা দেহ বা লাশ স্পর্শ করতে পারতেন না।

তিনি যদি একজন নাসরীয় হয়ে থাকতেন, তাহলে পবিত্র আত্মা পৌলকে দিয়ে ১করিন্থীয় ১১:১৪ পদে “পুরুষ যদি লম্বা চুল রাখে, তবে তাহা তাহার অপমানের বিষয়?” এই উদ্দেশ্যে লেখানো সন্দেহজনক হতো বৈকি।

তিনি যদি একজন নাসরীয় হয়ে থাকতেন, তাহলে গেৎশিমানী বাগানে তাঁকে চিহ্নিত করতে যিহূদাকে প্রয়োজন ছিল না, কারণ আর কেউ না-হোক যীশুই একমাত্র লম্বা চুলওয়ালা বিশিষ্ট ব্যক্তি হতেন। নতুন নিয়মে সবকিছুতে জানানো হয় যে যীশুকে তাঁর সময়কালে তাঁকে দেখতে অত্যন্ত অন্যান্য যিহূদী লোকদের মতনই ছিলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে বাইবেলে এ বিষয়ে উল্লেখ থাকবেই।

যিহূদীদের ধর্মীয় আইন ও উপদেশাবলীর (Talmudic) কারণে যিহূদী যাজকদের জন্য প্রতি ৩০ দিনে মাথার চুল কাটার নির্দেশ রয়েছে। খ্রীষ্টও একজন যাজক ছিলেন (যিহিষ্কেল ৪৪:২০ পদ)।

“স্বয়ং প্রকৃতিও কি তোমাদিগকে শিক্ষা দেয় না . . .” যে পুরুষের খাটো চুল থাকবে আর মহিলাদের লম্বা চুল থাকবে? আমি কখনও মহিলাদের নেড়ে মাথায় দেখি নাই, আর যাদের সেরকম অবস্থা হয় তারা খুব সতর্কতায় তাদের নেড়ে মাথা গোপন করবেন বা ঢেকে রাখার জন্য পরচুল ব্যবহার করে থাকবেন নিশ্চয়। “প্রকৃতি” অবশ্যই এভাবেই আমাদের শিক্ষা দেয়।

বাইবেল আমাদের স্পষ্টভাবে জানায় যে পুরুষের মাথায় চুলের আকৃতি অবশ্যই খাটো হবে, আর মহিলাদের মাথার চুল অবশ্যই লম্বা থাকতে হবে। একজন পুরুষ ও একজন মহিলার মাথার চুলের স্পষ্ট পার্থক্য অবশ্যই থাকতে হবে। এদের পৃথক দু’টি সাজে, দু’টি ভিন্ন বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে এবং তাদের মুখ দেখে স্ত্রীকে স্ত্রীতে এবং পুরুষকে পুরুষের অবস্থানে সৃষ্টি করা হয়েছে। যদিও উভয়ের ভেদাভেদের সুবিধাজনক বিষয় হলো আসলে তাদের মাথায় কতটুকু লম্বা বা খাটো চুল থাকতে হবে, এটি সুনিশ্চিত যে পুরুষের মাথার চুলের আকৃতি অবশ্যই খাটো হবে, আর মহিলাদের চুল অবশ্যই লম্বা হবে (১করিন্থিীয় ১১:১-১৬ পদ)। পুরুষ ও মহিলার চুলের স্পষ্ট পার্থক্য অবশ্যই রয়েছে। লম্বা চুলের নিদর্শন হলো ঈশ্বর স্থিরকৃত আদেশের প্রতি নারীর বশ্যতাস্বীকার করা। শাস্ত্রের বহু স্থানে শিক্ষা দেয়ে যে মহিলাদের মাথায় চুল ছিল এবং অবশ্যই থাকবে লম্বা অবস্থায়। (দেখুন : লূক ৭:৩৮, ৪৪; যোহন ১১:২; ১পিতর ৩:৩; ১তীমথিয় ২:৯)। শাস্ত্র আরেক দিকে ঠিক তেমনি পুরুষের জন্য বিপরীত ইঙ্গিত দেয়, আপনি উপরের ঐ বিষয় শাস্ত্রের কোথায় পুরুষদের সম্পর্কে সেরকম কিছু পাবেন না। পুরাতন নিয়মে খুবই অল্প কিছু নামোল্লেখ নাসরীয় (Nazarites) বাদে আমরা স্মরণ করে দেখতে পারি বাইবেলে একমাত্র একজন লম্বা চুলওয়ালা ব্যক্তি যিনি ছিলেন - অবশালোম। তিনি ছিলেন দায়ূদের অবাধ্য ও বিদ্রোহী পাজি তৃতীয় পুত্র।

“পুরুষ যদি লম্বা চুল রাখে, তবে তাহা তাহার অপমানের বিষয়”
ঈশ্বরের ঐশ্বরিক প্রেরণায় সাধু পৌল “পুরুষ যদি লম্বা চুল রাখে, তবে তাহা তাহার অপমানের বিষয়” কথাটি লিখেছেন। সেজন্য বর্তমান আধুনিক হাল ফ্যাশন অনুসরণ করার চেয়ে বরঞ্চ ঈশ্বর যা বলেন তাই আমাদের গ্রহণ করা উচিত। খ্রীষ্টিয়ানদের জন্য বাইবেল হলো চূড়ান্ত কথা - কোনো রকম আঁকা ছবি বা মানুষের প্রচলিত কোনো প্রথায় নয়।

প্রমাণের জন্য, ১করিন্থীয় ১১:১৪ পদ সম্পর্কে বিদ্বান, প-িত ও জ্ঞানী ব্যক্তিগণ কী বলেছেন আমরা সে সব কথার উদ্ধৃতি দিচ্ছি।

Lange বলেছেন, “আগেকার কোনো অমার্জিত, অসভ্যতা ও বর্বরতার ধরন যখন মাথায় লম্বা চুলের ব্যাপক প্রচলন ছিল, আর তখন সেখানেই সবচেয়ে বেশি সভ্য জাতি গড়ে উঠেছে, আর তাহলো রুচিসম্মত, সৌন্দর্যবোধপূর্ণ যা-কিনা পুরুষদের জন্য খাটো চুল রাখা এবং মহিলাদের জন্য লম্বা চুল রাখার পক্ষে নিজেদের থেকেই প্রকাশ পেয়েছে। পুরুষদের মধ্যে, এখন লম্বা চুল রাখা হলো মেয়েলি স্বভাবের লক্ষণ আর এক্ষেত্রে উভয়ের জন্য অসম্মান ও অপমানজনক, আর কোনো অবস্থাতে তাদের সম্মতি দেওয়া যায় না, যেহেতু সহজে ও স্বচ্ছন্দে এদের দিকে তাকিয়ে থাকাটা সত্যিই অস্বস্তিকর।”

Matthew Henry বলেছেন, “মহিলাদের চুল হলো প্রাকৃতিক আবরণ দেওয়া; লম্বা চুল থাকা তাদের জন্য গৌরবের বিষয় এবং এটাই স্বাভাবিক; কিন্তু একজন পুরুষের জন্য লম্বা চুল থাকা বা লম্বা চুল যত্নে পালন করা হলো নরমভাবাপন্ন এবং মেয়েলি/মেয়েলিপনার, পৌরুষহীন স্বভাবের প্রতিক।”

“. . . পুরুষ যদি লম্বা চুল রাখে, তবে তাহা তাহার অপমানের বিষয়?” গ্রিক শব্দ "ATIMA" ইংরেজী বাইবেলে অনূদিত হয়েছে "shame" আর বাংলা বাইবেলে শব্দটি পাওয়া যায় “অপমান” যা-কিনা শাস্ত্রে ১করিন্থীয় ১১:১৪ পদে আমরা দেখতে পাই। নতুন নিয়মের অন্যান্য স্থানে এই একই শব্দের অর্থ যেমন “অনাদর” “অপমান” “নিন্দনীয়” এবং “জঘন্য”। Thayer এই শব্দের উপর আকর্ষণীয় এবং তথ্যপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন : "ATIMA", অপমান, লজ্জা, জঘন্য, কলঙ্ক, ১করিন্থীয় ১১:১৪; ১৫:৩৪ পদ, (মৃত দেহের জন্য অশোভনীয় ও অপমানকর অবস্থা ব্যবহৃত হয়েছে); . . . হীন, কামুক, জঘন্য অনুভূতি, রোমীয় ১:২৬ পদ।”

আশা করি বিষয়টি সহজভাবে বুঝতে পারা যাচ্ছে? লম্বা চুলের “অপমান” (atima) হলো অন্যভাবে কোনো মৃত ও পচন, ক্ষয়প্রাপ্ত দেহের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। রোমীয় ১:২৬, "atima" কে “জঘন্য” শব্দে অনুবাদ হয়েছে। আমরা শাস্ত্র পদটি সতর্কতার পাঠ করি।

“এইজন্য ঈশ্বর তাহাদিগকে জঘন্য রিপুর বশে সমর্পণ করিলেন; এমন কি, তাহাদের স্ত্রীলোকেরা স্বাভাবিক ব্যবহারের পরিবর্তে স্বভাবের বিপরীত ব্যবহার করিয়াছে। আর পুরুষেরাও তদ্রুপ স্বাভাবিক স্ত্রীলোক ত্যাগ করিয়া পরস্পর কামানলে প্রজ্বলিত হইয়াছে, পুরুষ পুরুষে কুৎসিত ক্রিয়া সম্পন্ন করিয়াছে, ও নিজেদেরকে নিজ নিজ বিপথগমনের সমুচিত প্রতিফল পাইয়াছে। আর যেমন তাহারা ঈশ্বরকে নিজেদের জ্ঞানে ধারণ করিতে সম্মত হয় নাই, তেমনি ঈশ্বর তাহাদিগকে অনুচিত ক্রিয়া করিতে ভ্রষ্ট মতিতে সমর্পণ করিলেন” রোমীয় ১:২৬-২৮ পদ)

বাক্যের এ কথা অনুসারে মাথায় লম্বা চুল রাখার হাবভাবে পায়ুকামী এবং সমকামীতার “জঘন্য” আচরণে তাদের এক করা যেতে পারে। আজ এই প্রজন্মে লম্বা চুল রাখা মেনে নিচ্ছে আর বিদেশে সমকামীতার জনপ্রিয়তা ও বৈধতার চেষ্টা চলছে। এখন অনেক দেশে সমকামীদের মণ্ডলী দেখা যায় আর বহু রকম মণ্ডলী তাদেরকে সদস্যরূপে গ্রহণ করতে তাদের অভ্যর্থনার হাত বাড়িয়ে স্বাগত জানায়। লম্বা চুল ও সমকামীদের সবসময় এক করা যায় না, কিন্তু তাদের ধারণা, যুক্তি, নীতি প্রায়ই একই। তারা দু’পক্ষই ঈশ্বরের দেওয়া বৈশিষ্ট্যের আর তাঁর বহুমূল্য বাক্যের অবাধ্য।

পালক, মণ্ডলী ও পিতামাতাদের অবশ্যই লম্বা চুলের বিরুদ্ধে প্রতিহত করা উচিত।
যেসব বাবা মায়েরা তাদের ছেলেদের মাথায় এইরকম লম্বা চুল থাকা মেনে নিচ্ছেন তারা ঈশ্বরের বিপক্ষেই বিরোধিতা করছেন। বিষয়টি নিঃসন্দেহে একটি ছেলেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং শাসন করার ক্ষমতাকে ক্ষতি করার পদক্ষেপ। পালক, প্রচারকেরা যদি এই বিষয়ে বলতে নিশ্চুপ থাকেন বা আপোষ করেন, তাহলে বহু যুব সন্তানেরা এইভাবে সত্যিকারে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে তরতর করে এগিয়ে যাবার সুযোগ পাচ্ছে। তাই যে-কোন মূল্যে আমাদেরকে এদের গতিরোধ করা দরকার।

আমরা বিশ্বাস করি যে খ্রীষ্টিয়ান যুবকেরা, যখন সত্যের শিক্ষা পায়, তারা তাদের মাথার চুল ছোট করে রাখবে। জ্ঞানী খ্রীষ্টিয়ানেরা “লজ্জা, অপমানজনক” পরিচয়ে এমন লম্বা চুল রেখে অবাধ্য হতে চাইবে না কখনও।
Translated from:
"Did Jesus were long hair?" by E. L Bynum,
and "Way of life encyclopedia of the Bible & Christianity" 



Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?