আপনার পালক মহাশয় কেমন আছেন?



“আর আমি তোমাদিগকে আপন মনের মত পালকগণ দিব, তাহারা জ্ঞান ও বিজ্ঞতায় তোমাদিগকে চরাইবে”
যিরমিয় ৩:১৫ পদ। 

এ জগতে পালকীয় আহ্বান হলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, উচ্চপদমর্যাদাসম্পন্ন এবং মহৎ একটা আহ্বান। পালকীয় আহ্বান সমস্ত জগতের একটা গৌরবজনক আহ্বান। এ আহ্বান প্রশংসনীয় এবং একটা আদর্শ ব্রত। এর সাথে ঈশ্বরের অনন্তের হিসাব দেবার দায়িত্ব পাওয়ার বিশেষ সুযোগ আসে। ঈশ্বরের লোকদের কাছে, ঈশ্বরের গৃহের তত্ত্বাবধান এবং একটা নতুন নিয়মের মণ্ডলী লালন-পালনের জন্য শিক্ষা ও প্রচারে যুক্ত থাকার জন্য এটা একটি বিশেষ অধিকার পাওয়া। এ আহ্বান একটি মহা আহ্বান। এ আহ্বান একটি বিশেষ অনুগ্রহে এই পদমর্যাদা পাওয়া। এ বিষয়ে চিন্তা করলে এই দায়িত্বে থাকায় আমাকে অবশ্যই ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়নে থাকতে হয়, তাঁর শিক্ষা প্রচার করতে হয়, ঈশ্বরের সন্তানদের দিনে দিনে বৃদ্ধি করার কর্মে রপ্ত থাকতে হয়। আমাকে সব সময়ই সেই জ্ঞান বা সেই সচেতনায় থাকতে হয় যে আমি ঈশ্বরের সেবায় এই দায়িত্ব পালন করতে এই পদমর্যাদায় অধিকারপ্রাপ্ত হয়েছি আর সেই বাসনায় আমি আবিষ্ট থাকছি। 

আগেকার দিনে রোমীয় বৃদ্ধ সৈনিকেরা তাদের ভোঁতা, বাঁকানো আর জংধরা তরবারি নিয়ে যুদ্ধে যাবার সুযোগ পেতেন না। আজকের দিনে আত্মিকতায় ঐরকম অনুজ্জ্বল, মলিন কিংবা অনুভূতিহীন, একঘেয়ে, নেতিয়ে পড়া, আনন্দহীন, অতৃপ্তিতে থাক পালকেরা ঐ সুযোগে থাকতে পারেন না। সত্যের আলোতে পথ দেখাতে আমরা অত্যন্ত ভিন্নতর এক সরলবিশ্বাসী পালককে আশা করি। কেমন হবে সেই ভিন্নতর?? যিনি নির্ভিক সত্য প্রচার করেন। যিনি কোনো ঝিমানো, অসাড়, নিষ্প্রাণ প্রচার করেন না, করেন না হতাশ কিংবা আপোষমূলক কোনো প্রচার। যিনি ঈশ্বরের উত্তম আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য সতর্ক থাকেন এবং সমস্ত কাজের জন্য সব সময়ই প্রার্থনা করতে সজাগ থাকেন। পালকের কাছে আপনার প্রত্যাশা থাকে আমাদের প্রাণের প্রফুল্লতা ও সতেজতার জন্য। পালকবাবু প্রভুর বাক্যের তীক্ষ্ণ তরবারি দ্বারা আমাদের আত্মিক শক্তিতে বলবান করতে সাহায্য করেন।  

আজ অনেককে দেখে ভীষণভাবে অবাক হতে হয়; প্রভুর বাক্য প্রচারে প্রচারমঞ্চে কারা দাঁড়িয়ে আছেন! এখানে যতœহীন, অযোগ্য, অনাত্মিক, পরিবর্তনবিহীন, ঈশ্বরভক্তিহীন বহু লোকেরা বহু পুলপিট দখল করে আছেন। বহু পালকেরা হীন মর্যাদাসম্পন্ন, বদমেজাজী, নিজেদের মর্যাদা রক্ষা করতে জানেন না। তাদের অনেকে তাদের এই গুরুত্বপূর্ণ, উচ্চপদমর্যাদাসম্পন্ন এই উচ্চাসন ছেড়ে অধীনন্থ লোকদের তোষামোদে ব্যস্ত থাকেন। অনেকের মধ্যে অপ্রেম দেখা যায় আর তাদের আচরণ অখ্রীষ্টিয়ানদের মতন, তাদের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে একই অভিযোগ থাকে। একজন ব্যাপ্টিস্ট প্রচারক ‘চার্লস স্পার্জন’ পালকদের নতুন জন্মের জন্য আহ্বান করেছেন। তিনি পালকদের এবং এই পালকীয় সুযোগে থাকা পালক বা প্রচারকদের পরিত্রাণ হয়েছে কি-না ও তার নিজের কোনো সাক্ষ্য আছে কি-না তা জানতে বলেছেন, কারণ তারা যে বিষয়ে প্রচার করতে আগ্রহী, সে বিষয়ে ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে নিশ্চয় তারা নিজেরাই একমত। 

একজন পালক ও প্রচারকের প্রভুর পরিচর্যা কর্মে সফল হতে তার জীবন দৃঢ়ভাবে পবিত্র আত্মার আবরণের উপর নির্ভর করতে হয়। পালকের পরিচর্যা কর্মে ঈশ্বরের আবেশে না থাকলে ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য ফলানো ফল স্থায়ী হবে না। পরিচর্যার জন্য একমাত্র ঈশ্বর আত্মিকভাবে শক্তিমান করেন, আর তা না হলে একজন পালকের পরিচর্যা হবে মৃত, নির্জীব, প্রাণহীন।                   

আপনি যদি প্রভুতে বিশ্বস্ত ও আত্মিকতায় নির্ভরযোগ্য কোনো বাইবেল বিশ্বাসী মণ্ডলীর সদস্য হন, তাহলে আপনাকে উদ্দেশ্য করে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছি, ‘আপনার পালকবাবু কেমন?’ প্রশ্নটা এজন্য জানতে চাওয়া হচ্ছে, কারণ আমরা জানি আজকালকার আধুনিকপন্থী, হালফ্যাশনের, হুজুগে পালক হওয়া, আত্মিক পরিপক্বতার অভাব, ছেলেমি মনোভাবের পালক বা ধমের্র ভ্রান্ত প্রচারক কিংবা এ ধরনের কোনো নেতা হলো “দুষ্ট লোকেরা ও বঞ্চকেরা” (২ তীমথিয় ৩:১৩ পদ)। 

অযোগ্য, অপরিপক্ব আর অপবিত্র বহু লোকেরা প্রভুর পরিচর্যা করতে হুড়মুড় করে আসে। প্রভুর সেবাকর্মে যতোই অসুস্থ, দুর্বল, বিভ্রান্ত, উদ্দেশ্যহীন, শক্তিহীন লোকেরা থাকছে, আত্মিক উদ্দীপনার প্রয়োজনে ততই নিদারুণ হতাশাগ্রস্ত হচ্ছে। পালক যদি না জানেন কীভাবে পথ দেখাতে হয়, পালক যদি না জানেন কীভাবে বিভিন্ন লোকদের মধ্যে কাজ করতে হয়, ক্রমে ক্রমে এগিয়ে যেতে হয়, এমনকি যদি না জানেন নিজের পরিবার কীভাবে শাসন করতে হয়, তাহলে কীভাবে প্রভুর মণ্ডলী পরিচালনা করবেন?

“আপনার পালকবাবু কেমন?” প্রশ্নটা এজন্য করা হচ্ছে কারণ অনেক ভালো ভালো মণ্ডলীতে কিছু কিছু সমালোচক সভ্য-সভ্যাগণ রয়েছেন, যারা উপলব্ধি করতে পারছেন যে, তাদের পালক যতই বিশ্বস্ততায় থাকুন না কেন, তিনি কেমন যেন সাদাসিধে ধরনের, সহজ প্রকৃতির মানুষ। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পালকবাবু বিদায় হোক। প্রশ্ন হলো, কেন এরকম হয়?

বেশ, প্রথমত - “যেহেতুক মাংস অনুসারে জ্ঞানবান অনেক নাই, পরাক্রমী অনেক নাই, উচ্চপদস্থ অনেক নাই; কিন্তু ঈশ্বর জগতীস্থ মূর্খ বিষয় সকল মনোনীত করিলেন, যেন জ্ঞানবানদিগকে লজ্জা দেন; এবং ঈশ্বর জগতের দুর্বল বিষয় সকল মনোনীত করিলেন, যেন শক্তিমন্ত বিষয় সকলকে লজ্জা দেন . . .” (১ করিন্থীয় ১:২৬-২৮)। শাস্ত্রের এ অংশে প্রচারকদের সম্পর্কে বলা হয়েছে আর স্পষ্ট কথা যে ঈশ্বরের সেবাকর্মে শ্রদ্ধা করার মতো কিছু কিছু উত্তম মহানব্যক্তি, মহাপুরুষ রয়েছেন।

সমালোচকেরা মনে করছেন যে, তাদের পালকবাবু “খুবই সাধারণ মানের কিংবা স্বভাবে নরম প্রকৃতির।” যেভাবে মোশি ছিলেন “অতিশয় মৃদুশীল” (নমনীয়, কোমল - কোনো ব্যক্তিভাব বা ভান ছিল না) গণনাপুস্তক ১২:৩ পদ; এবং প্রেরিতদূত পৌল ছিলেন “সমস্ত সাধু ব্যক্তিদের থেকে ততটুকুই ক্ষুদ্র্রতম যতটুকু হওয়া যায়” (তাঁর কোনো খ্যাতি, মর্যাদা ছিল না) ইফিষীয় ৩:৮ পদ। 

ঈশ্বরের অনুগ্রহে সাধারণত অবনত, নমনীয়, বিনয়ী, অমায়িক এবং নিরহংকার লোকদের মনোনীত করেন “যেন কোন মনুষ্য ঈশ্বরের সাক্ষাতে শ্লাঘা (গর্ববোধ) না করে।” এর চেয়ে বরং “প্রভুতেই শ্লাঘা (গর্ব) করুক” (১ করিন্থীয় ১:২৯-৩১ পদ)। 

সমালোচনা বা নিন্দা করার মূলে সাধারণত থাকে গর্ব, অহঙ্কার কিংবা নিজের তৃপ্তি ভাব, আরো থাকে অভিমান। আর যা-কিনা আশীর্বাদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায় আর সমস্যাও ঘটায় অনেক - কারণ “অহঙ্কারে কেবল বিবাদ উৎপন্ন হয়; কিন্তু যাহারা পরামর্শ মানে, প্রজ্ঞা তাহাদের সহবর্তী” (হিতোপদেশ ১৩:১০ পদ)।

আপনার পালক যদি খ্রীষ্টকে ঈশ্বর ও মুক্তিদাতারূপে মহিমান্বিত করেন এবং বাইবেলভিত্তিক ও সেই অনুযায়ী বার্তা প্রচার করেন এবং ঈশ্বরের বাক্যের মানদণ্ডে থাকেন, তাহলে তিনি নিশ্চিত সেই ধরনের একজন পালক, যাঁকে ঈশ্বর আপনার মণ্ডলীতে চেয়েছেন এবং তিনি আপনার আন্তরিক সমর্থন ও আপনার সহযোগিতা পাওয়ার উপযুক্ত। “কিন্তু, হে ভ্রাতৃগণ; যাঁহারা তোমাদের মধ্যে পরিশ্রম করেন এবং তোমাদিগকে চেতনা দেন, তাঁহাদিগকে চিনিয়া লও, আর তাঁহাদের কর্ম প্রযুক্ত তাঁহাদিগকে প্রেমে অতিশয় সমাদর কর” (১ থিষলনীকীয় ৫:১২-১৩)। 

মনে রাখা দরকার যে, পালকবাবু আপনার ভাড়া-করা কোনো ব্যক্তি নন্ যে, মণ্ডলীর সদস্যদের সন্তুষ্ট করার জন্য তাঁকে মজুরি দিতে হবে - এর চেয়ে বরং তিনি পবিত্র আত্মা দ্বারা “পালক, তত্ত্বাবধায়ক, অধ্যক্ষ কিংবা শিক্ষাগুরু” রূপে নিযুক্ত এবং প্রতিটা স্থানীয় মণ্ডলীর জন্য খ্র্রীষ্টের “উপহার”, এবং “পবিত্রগণকে পরিপক্ব করিবার নিমিত্ত করিয়াছেন, যেন পরিচর্যা কার্য সাধিত হয়, যেন খ্রীষ্টের দেহকে (মণ্ডলীকে) গাঁথিয়া তোলা হয়” (ইফিষীয় ৪:১১,১২ পদ)। পালকের মানদ- হলো ঈশ্বরের বাক্য।

বিশ্বাসী, আন্তরিক ও বিশ্বস্ত পালকদের সম্পর্কে মণ্ডলীর সভ্য ও সভ্যাদের প্রতি ঈশ্বরের আদেশ : “তোমরা তোমাদের নেতাদের আজ্ঞাগ্রাহী ও বশীভূত হও, কারণ নিকাশ দিতে হইবে বলিয়া তাঁহারা তোমাদের প্রাণের নিমিত্ত প্রহরি-কার্য করিতেছেন - যেন তাঁহারা আনন্দপূর্বক সেই কার্য করেন, আর্তস্বরপূর্বক না করেন; কেননা ইহা তোমাদের পক্ষে মঙ্গলজনক নয়” (ইব্রীয় ১৩:১৭ পদ)। 

চোখে দেখার মতো অতিরিক্ত ফলের দাবি করবেন না - কারণ আপনার পালককে ঈশ্বরের বাক্যের বীজে জল দেওয়ার জন্য বিশ্বস্তায় আহ্বান করেছেন এবং প্রভু “বৃদ্ধি দিতে থাকেন” ১করিন্থীয় ৩:৫-১০) যা-কিনা আপনার চোখে তা দৃশ্যমান হতেও পারে কিংবা না-ও হতে পারে।

আমরা অনেক মণ্ডলীর সদস্যদের একটা পবিত্র কাজে যুক্ত থাকার জন্য প্রশংসা করতে পারি, যারা এই কঠিন দিনে তাদের পালককে তাদের প্রার্থনায় স্মরণ করেন, পালককে উৎসাহ দেন। পালকের ক্ষেত্রে যখন তার আত্মিক আচরণ প্রকাশ পায় কিংবা এ ধরনের মনোভাবের সমালোচনা প্রকাশ পায়, তখন আমরা বলতে পরি যে, মণ্ডলী নতুন নতুন বহু আশীর্বাদ উপভোগ করবে, চমৎকার উন্নতিতে পৌঁছাবে; পালকের কঠোর প্রচেষ্টায় বহু ফল ধরবে এবং প্রতিটা প্রাণ আত্মিকতায় পরিপূর্ণ হবে।

আপনার পালকবাবু কেমন? এ সময়ে আপনার মণ্ডলীকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য আপনি খুব সম্ভবত সে ধরনের একজন পালক আশা করেন, যাকে ঈশ্বর আপনাকে দিতে চান! আর ঈশ্বরের দেওয়া ঐ মানুষটাই আপনার জন্য অত্যন্ত ভালো।


Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?