ডাক্তার বিধি-ব্যবস্থা এবং ডাক্তার দয়া-অনুগ্রহ (Dr. Law and Dr. Grace)

Translated by Nathaniel Hazra

প্রয়াত Lester Roloff একজন বিখ্যাত ইভ্যানজেলিস্ট ছিলেন। তিনি ১৯৮২ সালে প্লেন ক্রাশে মারা যান। Dr. Law and Dr. Grace নামে এই প্রচারটি তার অত্যন্ত প্রশংসিত একটি প্রচার। তিনি বলেছিলেন যে দেশের সমস্ত লোকের কাছে প্রচার করার জন্য যদি কেউ আমাকে উঁচু একটি টাওয়ারের ব্যবস্থা করে দিতেন আর সবাইকে শোনানোর জন্য যদি সেরকম সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবস্থা করে দিতেন, তাহলে লক্ষ লক্ষ লোক আমার কথা শুনতে পেতেন। আর যদি ঈশ্বর আমাকে সমস্ত ভাষায় কথা বলার জ্ঞান দিতেন বা সমস্ত আঞ্চলিক ভাষায় আমার কথা বুঝিয়ে দেবার মতো যথেষ্ট অনুবাদকদের দিতেন তাহলে আমি একটি কথাই প্রচার করতাম যে “ডাক্তার বিধি-ব্যবস্থা এবং ডাক্তার দয়া-অনুগ্রহ” নামে মস্ত বড় বড় ডাক্তার রয়েছেন যারা চিরকাল বেঁচে আছেন আর বেঁচে থাকেন। সহজ সরল ভাবে অর্থাৎ বিনামূল্যে পরিত্রাণ পাওয়ার বিষয়ে শয়তান লোকদের বিভ্রান্ত ও প্রতারণা করার জন্য আর চরম ধ্বংসের পথে নিয়ে যাবার জন্য এই শয়তান ভালোই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পরিত্রাণ কিন্তু মানুষ ও শয়তানের মধ্যে কোনো দৌড়-প্রতিযোগিতায় নয়, কিন্তু সবার জন্য এই পরিত্রাণ প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে ঈশ্বরের দেওয়া একটি উপহার, একটি দান।

তীত ২:১১-১৪ পদ, “কেননা ঈশ্বরের অনুগ্রহ প্রকাশিত হইয়াছে, তাহা সমুদয় মনুষ্যের জন্য পরিত্রাণ আনয়ন করে, তাহা আমাদিগকে শাসন করিতেছে, যেন আমরা ভক্তিহীনতা ও সাংসারিক অভিলাষ সকল অস্বীকার করিয়া সংযত, ধার্মিক ও ভক্তিভাবে এই বর্তমান যুগে জীবন যাপন করি, এবং পরমধন্য আশাসিদ্ধির জন্য, এবং মহান ঈশ্বর ও আমাদের মুক্তিদাতা যীশু খ্রীষ্টের প্রতাপের প্রকাশ প্রাপ্তির জন্য অপেক্ষা করি। ইনি আমাদের জন্য নিজেকে প্রদান করিলেন, যেন মূল্য দিয়া আমাদিগকে সমস্ত অধর্ম হইতে মুক্ত করেন, এবং আপনার নিমিত্ত নিজস্ব প্রজাবর্গকে, সৎক্রিয়াতে উদ্যোগী প্রজাবর্গকে শুচি করেন” 

 এখন “ডাক্তার বিধি-ব্যবস্থা এবং ডাক্তার দয়া-অনুগ্রহ” এই দুই ডাক্তারের সঙ্গে কিছুক্ষণ সাক্ষাৎ করা যাক। অত্যন্ত অসাধারণ নামকরা এই আশ্চর্যজনক খ্যাতিমান ডাক্তারদের জগৎ সব সময় জেনে আসছে। কারণ, প্রথমত তারা কখনোই কোনো চিকিৎসাধীন রোগীকে হারান না এবং তারা কখনোই টাকা-পয়সা দাবি করেন না। এনারা এ কারণে অসাধারণ যে তাদের অন্য কোনো ডাক্তারের কাছ থেকে কখনোই কোনো পরামর্শ নিতে হয় না। এনারা এ কারণেও অসাধারণ যে তারা কখনোই বাহ্যিক কোনো রোগের চিকিৎসা করেন না। এনারা এ কারণেই অসাধারণ যে তারা কখনোই রুগীর পরামর্শ, উপদেশ ও নির্দেশ অনুযায়ী চিকিৎসা করার জন্য জানতে চান না কিংবা তার চিকিৎসার ব্যাপারে তার রোগের কোনো চিহ্ন বা পূর্ব লক্ষণর সম্পর্কে জানতে চান না। তারা আইনসম্মত অধিকারে, হুকুম দেবার আর তা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার সেই ক্ষমতায় কথা বলেন, তারা কর্তৃত্বে কথা বলেন। এনারা সত্য-সত্যই অসাধারণ যে প্রতিটি রুগীর ক্ষেত্রে একশত ভাগ সফল হওয়ার নজির থাকা সত্ত্বেও এনাদের সাহায্য পাওয়ার জন্য এনাদের কাছে যাওয়ার ইচ্ছাটা অধিকাংশ লোকেরই থাকে না।

বাইবেল অনুযায়ী সঠিক ব্যাখ্যা।

রোমীয় ৫:১৩ পদ প্রথমে শাস্ত্রের রোমীয় পুস্তক থেকে দেখি।
“কারণ ব্যবস্থার পূর্বেও জগতে পাপ ছিল; কিন্তু ব্যবস্থা না থাকিলে পাপ গণিত হয় না” 

২০ ও ২১পদ, “আর ব্যবস্থা তৎপরে পার্শ্বে উপস্থিত হইল, যেন অপরাধের বাহুল্য হয়; কিন্তু যেখানে পাপের বাহুল্য হইল, সেখানে অনুগ্রহ আরও উপচিয়া পড়িল; যেন পাপ যেমন মৃত্যুতে রাজত্ব করিয়াছিল, তেমনি আবার অনুগ্রহ ধার্মিকতা দ্বারা, অনন্ত জীবনের নিমিত্ত, আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা; রাজত্ব করে।” রোমীয় ৭ অধ্যায়ের ৫ পদ থেকে শুরু করি, “কেননা যখন আমরা মাংসের বশে ছিলাম, তখন ব্যবস্থা হেতু পাপ-বাসনা সকল মৃত্যুর নিমিত্ত ফল উৎপন্ন করিবার জন্য আমাদের অঙ্গমধ্যে কার্য সাধন করিত। তবে আমরা কি বলিব? ব্যবস্থা কি পাপ? তাহা দূরে থাকুক; বরং পাপ কি, তাহা আমি জানিতাম না, কেবল ব্যবস্থা দ্বারা জানিয়াছি; কেননা “লোভ করিও না,” এই কথা যদি ব্যবস্থা না বলিত, তবে লোভ কি, তাহা জানিতাম না; কিন্তু পাপ সুযোগ পাইয়া সেই আজ্ঞা দ্বারা আমার অন্তরে সর্বপ্রকার লোভ সম্পন্ন করিল; কেননা ব্যবস্থা ব্যতিরেকে পাপ মৃত থাকে। আর আমি এক সময়ে ব্যবস্থা ব্যতিরেকে জীবিত ছিলাম, কিন্তু আজ্ঞা আসিলে পাপ জীবিত হইয়া উঠিল, আর আমি মরিলাম।”

পাপীরূপে মৃত্যুবরণ করতে এই মৃত্যু আমাদের প্রয়োজন।

১০ পদ “এবং জীবনজনক যে আজ্ঞা, তাহা আমার মৃত্যুজনক বলিয়া দেখা গেল। ফলতঃ পাপ সুযোগ পাইয়া আজ্ঞা দ্বারা আমাকে প্রবঞ্চনা করিল, ও তদ্বারা আমাকে বধ করিল। অতএব ব্যবস্থা পবিত্র, এবং আজ্ঞা পবিত্র, নায্য ও উত্তম। তবে যাহা উত্তম, তাহাই কি আমার মৃত্যুস্বরূপ হইল? তাহা দূরে থাকুক। বরং পাপই এইরূপ হইল, যেন উত্তম বস্তু দ্বারা আমার মৃত্যু সাধনে তাহা পাপ বলিয়া প্রকাশ পায়, যেন আজ্ঞা দ্বারা পাপ অতি মাত্রায় বৃদ্ধিলাভ করে। কারণ আমরা জানি, ব্যবস্থা আত্মিক, কিন্তু আমি মাংসময়, পাপের অধীনে বিক্রীত। কারণ আমি যাহা সাধন করি, তাহা জানি না; কেননা আমি যাহা ইচ্ছা করি, তাহাই যে কাজে করি, এমন নয়, বরং যাহা ঘৃণা করি, তাহাই করি। কিন্তু আমি যাহা ইচ্ছা করি না, তাহাই যখন করি, তখন ব্যবস্থা যে উত্তম, ইহা স্বীকার করি। এইরূপ হওয়াতে সেই কার্য আর আমি সাধন করি না, আমাতে বাসকারী পাপ তাহা করে। যেহেতু আমি জানি যে আমাতে, অর্থাৎ আমার মাংসে, উত্তম কিছুই বাস করে না; আমার ইচ্ছা উপস্থিত বটে, কিন্তু উত্তম ক্রিয়া সাধন উপস্থিত নয়।”

 ২৪ পদ, “দুর্ভাগ্য মনুষ্য আমি! এই মৃত্যুর দেহ হইতে কে আমাকে নিস্তার করিবে? আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা আমি ঈশ্বরের ধন্যবাদ করি। অতএব আমি নিজে মন দিয়া ঈশ্বরের ব্যবস্থার দাসত্ব করি, কিন্তু মাংস দিয়া পাপ-ব্যবস্থার দাসত্ব করি।”

 ৮ অধ্যায় থেকে, “অতএব এখন, যাহারা খ্রীষ্ট যীশুতে আছে তাহাদের প্রতি কোন দণ্ডাজ্ঞা নাই। কেননা খ্রীষ্ট যীশুতে জীবনের আত্মার যে ব্যবস্থা, তাহা আমাকে পাপের ও মৃত্যুর ব্যবস্থা হইতে মুক্ত করিয়াছে। কারণ ব্যবস্থা মাংস দ্বারা দুর্বল হওয়াতে যাহা করিতে পারে নাই, ঈশ্বর তাহা করিয়াছেন, নিজ পুত্রকে পাপময় মাংসের সাদৃশ্যে এবং পাপার্থক বলিরূপে পাঠাইয়া দিয়া মাংসে পাপের দণ্ডজ্ঞা করিয়াছেন, যেন আমরা যাহারা মাংশের বশে নয়, কিন্তু আত্মার বশে চলিতেছি, ব্যবস্থার ধর্মবিধি সেই আমাদের মধ্যে সিদ্ধ হয়। কেননা যাহারা মাংসের বশে আছে, তাহারা মাংসিক বিষয় ভাবে; কিন্তু যাহারা আত্মার বশে আছে, তাহারা আত্মিক বিষয় ভাবে। কারণ মাংসের ভাব মৃত্যু, কিন্তু আত্মার ভাব জীবন ও শান্তি। কেননা মাংসের ভাব ঈশ্বরের প্রতি শত্রুতা, কারণ তাহা ঈশ্বরের ব্যবস্থার বশীভূত হয় না, বাস্তবিক হইতে পারেও না। আর যাহারা মাংসের অধীনে থাকে, তাহারা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করিতে পারে না। কিন্তু তোমরা মাংসের অধীনে নয়, আত্মার অধীনে রহিয়াছ, যদি বাস্তবিক ঈশ্বরের আত্মা তোমাদের মধ্যে বাস করেন। কিন্তু খ্রীষ্টের আত্মা যাহার নাই, সে খ্রীষ্টের নয়। আর যদি খ্রীষ্ট তোমাদের মধ্যে থাকেন, তবে দেহ পাপ প্রযুক্ত মৃত বটে, কিন্তু আত্মা ধার্মিকতা প্রযুক্ত জীবন।”

দ্বিতীয় অংশ : শাস্ত্রের অন্যান্য প্রসঙ্গ

 গালাতীয় ২:১৬ পদ থেকে “. . . ব্যবস্থার কার্য হেতু নয়, কেবল যীশু খ্রীষ্টে বিশ্বাস দ্বারা মনুষ্য ধার্মিক গণিত হয়। সেই জন্য আমরাও খ্রীষ্ট যীশুতে বিশ্বাসী হইয়াছি, যেন ব্যবস্থার কার্য হেতু নয়, কিন্তু খ্রীষ্টে বিশ্বাস হেতু ধার্মিক গণিত হই; কারণ ব্যবস্থার কার্য হেতু কোন মনুষ্য ধার্মিক গণিত হইবে না। কিন্তু আমরা খ্রীষ্টে ধার্মিক গণিত হইবার চেষ্টা করিতে গিয়া আপনারাও যদি পাপী বলিয়া প্রতিপন্ন হইয়া থাকি, তবে তৎপযুক্ত খ্রীষ্ট কি পাপের পরিচারক? তাহা দূরে থাকুক। কারণ আমি যাহা ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছি, তাহাই যদি পুনর্বার গাঁথি, তবে আপনাকেই অপরাধী বলিয়া দাঁড় করাই। আমি ত ব্যবস্থার দ্বারা ব্যবস্থার উদ্দেশে মরিয়াছি, যেন ঈশ্বরের উদ্দেশে জীবিত হই। খ্রীষ্টের সহিত আমি ক্রুশারোপিত হইয়াছি, আমি আর জীবিত নই, কিন্তু খ্রীষ্টই আমাতে জীবিত আছেন; আর এখন মাংসে থাকিতে আমার যে জীবন আছে, তাহা আমি বিশ্বাসে, ঈশ্বরের পুত্রে বিশ্বাসেই যাপন করিতেছি; তিনিই আমাকে প্রেম করিলেন, এবং আমার জন্য নিজেকে প্রদান করিলেন; আমি ঈশ্বরের অনুগ্রহ বিফল করি না; কারণ ব্যবস্থা দ্বারা যদি ধার্মিকতা হয়, তাহা হইলে খ্রীষ্ট অকারণে মরিলেন।”

 ৩ অধ্যায়ের ১০ পদ থেকে “বাস্তবিক যাহারা ব্যবস্থার ক্রিয়াবলম্বী, তাহারা সকলে শাপের অধীন, কারণ লেখা আছে, যে কেহ ব্যবস্থাগ্রন্থে লিখিত সমস্ত কথা পালন করিবার জন্য তাহাতে স্থির না থাকে, সে শাপগ্রস্ত। কিন্তু ব্যবস্থার দ্বারা কেহই ঈশ্বরের সাক্ষাতে ধার্মিক গণিত হয় না, ইহা সুস্পষ্ট, কারণ ধার্মিক ব্যক্তি বিশ্বাস হেতু বাঁচিবে। কিন্তু ব্যবস্থা বিশ্বাসমূলক নয়, বরং যে কেহ এই সকল পালন করে, সে তাহাতে বাঁচিবে। খ্রীষ্টই মূল্য দিয়া আমাদিগকে ব্যবস্থার শাপ হইতে মুক্ত করিয়াছেন, কারণ তিনি আমাদের জন্য শাপস্বরূপ হইলেন; কেননা লেখা আছে, যে ব্যক্তিকে গাছে টাঙ্গান যায়, সে শাপগ্রস্ত।”

 ২২-২৬ পদ, “কিন্তু শাস্ত্র সকলই পাপের অধীনতায় রুদ্ধ করিয়াছে, যেন প্রতিজ্ঞার ফল, যীশু খ্রীষ্টে বিশ্বাস হেতু, বিশ্বাসীদিগকে দেওয়া যায়। কিন্তু বিশ্বাস আসিবার পূর্বে আমরা ব্যবস্থার অধীনে রক্ষিত হইতেছিলাম, যে বিশ্বাস পরে প্রকাশিত হইবে, তাহার অপেক্ষায় রুদ্ধ ছিলাম। এই প্রকারে ব্যবস্থা খ্রীষ্টের কাছে আনিবার জন্য আমাদের পরিচালক দাস হইয়া উঠিল, যেন আমরা বিশ্বাস হেতু ধার্মিক গণিত হই। কিন্তু যে অবধি বিশ্বাস আসিল, সেই অবধি আমরা আর পরিচালক দাসের অধীন নহি। কেননা তোমরা সকলে, খ্রীষ্ট যীশুতে বিশ্বাস দ্বারা, ঈশ্বরের পুত্র হইয়াছ।”

 ইফিষীয় ২:৮-১০ পদ, “কেননা অনুগ্রহেই, বিশ্বাস দ্বারা তোমরা পরিত্রাণ পাইয়াছ; এবং ইহা তোমাদের হইতে হয় নাই, ঈশ্বরের দান; তাহা কর্মের ফল নয়, যেন কেহ শ্লাঘা না করে। কারণ আমরা তাঁহারই রচনা, খ্রীষ্ট যীশুতে বিবিধ সৎক্রিয়ার নিমিত্ত সৃষ্ট; সেইগুলি ঈশ্বর পূর্বে প্রস্তুত করিয়াছিলেন, যেন আমরা সেই পথে চলি।” 

ডাক্তার বিধি-ব্যবস্থার সাথে সাক্ষাৎ।

বাইবেলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল বিষয়বস্তু হলো দয়া-অনুগ্রহ। এখন দয়া-অনুগ্রহ বিনামূল্যে পাওয়া যায় আর পাবার উপযুক্ত ও পাবার যোগ্যতা না থাকলেও ঈশ্বরের আনুকূল্য ও প্রশ্রয়ে তা পাওয়া যায় অর্থাৎ ঈশ্বর প্রদান করেন। ব্যবস্থা ও দয়া-অনুগ্রহের মধ্যে এক অভঙ্গুর সম্পর্ক টিকে থাকে, অর্থাৎ এই সম্পর্ক ভাঙা যায় না। বিষয়টি মনে রেখে, আমাকে পাপী হতে হয়েছে কারণ আমরা সবাই পাপ করেছি এবং ঈশ্বরের গৌরব থেকে বঞ্চিত হয়েছি।

যিশাইয় ৫৩:৬ পদ “আমরা সকলে মেষগণের ন্যায় ভ্রান্ত হইয়াছি, প্রত্যেকে আপন আপন পথের দিকে ফিরিয়াছি।” 

রোমীয় ৩:১২ পদ, “সৎকর্ম করে এমন কেহই নাই, একজনও নাই।”

 ১০ পদ। “ধার্মিক কেহই নাই, একজনও নাই।”  

ঠিক এই একটা কারণে আমি বুঝতে পেরেছি আমার ভিতরে কিছু মারাত্মক সমস্যা রয়েছে, আর এ জন্য আমি ডাক্তার বিধি-ব্যবস্থা-এর কাছে গেলাম, আর ডা. বিধি-ব্যবস্থা পাপীদের দেখার জন্য সব সময়ই তার চেম্বারে থাকেন। ডাক্তারের চেম্বারের একজন কর্মচারী বললেন যে ডাক্তারবাবু আমার জন্যই অপেক্ষা করে আছেন। আমি তার চেম্বারে ঢুকে আমার রোগের সমস্ত চিহ্ন এবং লক্ষণগুলো তাকে বলতে শুরু করতেই তিনি বললেন, “আমাকে এভাবে তোমার রোগের লক্ষণগুলো জানিয়ে তোমার কোনো রকম সাহায্যের দরকার আমার নেই।” তাতে আমি বললাম, “আপনি কি মনে করেন যে আমার কী কী সমস্যা রয়েছে তা আপনি খুঁজে বের করতে পারবেন?” তিনি বললেন, “ঠিক তা নয় মশাই, আমি সে রকম চিন্তা করছি না; আমি জানি তুমি কী সমস্যায় ভুগছ; আমি বলছি তোমার রয়েছে হৃদয়-অন্তঃকরণের সমস্যা। তোমার এই সমস্ত কিছুর জন্যই তুমি এখন আমার রুগী।”

আমার আগেকার ও পুরানো মাংসিক অবস্থা অর্থাৎ আমি আত্মিক লোক না হবার কারণে, পবিত্র আত্মা না থাকার কারণে আমি কোনো চেতনা পাচ্ছি না বা বুঝতে পারছি না যে এই ডাক্তারের সমস্ত রুগীই একই রোগের রুগী। কিন্তু প্রিয় পাঠক বন্ধু, অসুস্থ হওয়ার পর বিধি-ব্যবস্থা পাপীদেরকে চেতনা দেয় না, বুঝতেও দেয় না কারণ . . .

১ করিন্থীয় ২:১৪ পদ “কিন্তু প্রাণিক মনুষ্য (অর্থাৎ যে লোক আত্মিক নয় সে) ঈশ্বরের আত্মার বিষয়গুলি গ্রহণ করে না, কেননা তাহার কাছে সেই সকল মূর্খতা; আর সেই সকল সে জানিতে পারে না, কারণ তাহা আত্মিকভাবে বিচারিত হয়।” 

তাই সেই মাংসিক লোক অর্থাৎ আত্মিক লোক না হবার কারণে এবং পবিত্র আত্মা না থাকার কারণে এসব বিষয়ে মতের মিল না হওয়ায়, তার কথায় পাত্তা না দিয়ে আমি বল্লাম, “ডাক্তার সাহেব, আপনি আমার অবস্থা ঠিক বুঝতে পারছেন না। আমার হাতের সমস্যা আছে। আমি তাস খেলে, জুয়া খেলে অনেক টাকা পয়সা নষ্ট করি, সেজন্য অনেক সময়ও নষ্ট হয়ে যায় আর এরজন্য আমি প্রায়ই মারামারি পর্যন্তও করি। আমার এই হাত আমাকে অনেক সমস্যার মধ্যে ফেলে।” ডাক্তার সাহেব আমার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে বল্লেন, “এসব কখনোই সমস্যা নয়, বরং তোমার সমস্য হলো হৃদয়-অন্তঃকরণের।”

আমি বল্লাম, “ডাক্তার সাহেব আপনি যদিও একজন ডাক্তার হতে পারেন তবুও আপনার সঙ্গে তর্ক করতে হচ্ছে, আমাকে বলতে হচ্ছে যে আপনি আমাকে বুঝতে পারলেন না। আমি চোখের সমস্যায় ভুগছি। একরাতে আমার দুই তিন ঘণ্টা টেলিভিশনের সামনে বসে, সিনেমা দেখে, ঘণ্টাখানেক ম্যাগাজিন ও পত্রিকা পাঠ করে, ইণ্টারনেট চ্যাট/ব্রাউজিং করে, গেম খেলে মনের সাধ কিছুতেই মেটে না। আমি কিছুতেই আয়েশ পাই না, কোনো শান্তি পাই না, আর আমার চোখ কখনোই পুরোপুরি তৃপ্ত হয় না, সন্তুষ্ট হয় না, আর যা দেখে মন লাগে তাই কিনতে চাই, তাই আমার চোখের সমস্যা আছে।” বৃদ্ধ ডাক্তার সাহেব বললেন, “না বন্ধু, তোমার আসলেই হৃদয়-অন্তঃকরণের সমস্যা আছে, পুরোপুরি হৃদয়-অন্তঃকরণের সমস্যা।”

আমি বল্লাম, “ডা. বিধি-ব্যবস্থা, এ বিষয়ে আপনি একদম ঠিক ঠিকভাবে কাজ করবেন। আমার জিহ্বায় সমস্যা রয়েছে। আমার এই জিহ্বা দিয়ে জঘন্য, কুৎসিত যা চিন্তা করা যায় না সেসব অশ্লীল কথাবার্তা বলি, নোংরা রসিকতা করি, মানুষের কুৎসা রটাই, তাই আমি বিশ্বাস করি আমার জিহ্বায় কিছু পচন ধরেছে। দয়া করে আমার জিহ্বা পরীক্ষা করুন।” ডা. বিধি-ব্যবস্থা বললেন, “না, তোমার হয়েছে হৃদয়-অন্তঃকরণের সমস্যা।”

এ সময়ে, আমি চরমভাবে আপত্তি জানালাম, আর আমি ক্লান্ত হয়ে “ডা. বিধি-ব্যবস্থাকে বল্লাম যে আমার কান দিয়ে আমি অর্ধামিক, নষ্টামি, বাজে কথা শুনি। আমার পা দিয়ে উচ্ছৃঙ্খল গানবাজনায় নাচানাচি করি, আর আমার পা আমাকে সেই সমস্ত জায়গায় নিয়ে যায় যেখানে আমার যাওয়া উচিত নয়, এমনকি আমি লাথিও মারি।” আর তিনি আমার এসব কথা শুনে জানালেন, “তোমার হৃদয়-অন্তঃকরণের একটি ক্ষতিকর অবস্থা ঘটেছে, সেজন্য এমন হয়।” আমি আরেকবার চরম হতাশায় বললাম, “ডা. বিধি-ব্যবস্থা, আসলে একটু মজা করার জন্য, একটু আসক্তির জন্য আমার জিব সবসময়ই খাঁইখাঁই করে আর এজন্য আমার জিহ্বার বিকৃতি ঘটেছে। এমনকি আমি নেশায় থাকার জন্য, মাতলামি করার জন্য, উত্তেজিত হবার জন্য খারাপ নেশায় লেগে থাকি, এমনকি মাদকতার আসক্তিও আমার রয়েছে, আর এর জন্য নিশ্চয় কোনো উপায় আছে যাতে আপনি আমার এই বিকৃতরুচির বিষয়ে সাহায্য করতে পারেন।” আমার এসব কথার পর ডা. বিধি-ব্যবস্থা বল্লেন, “তোমার হৃদয়-অন্তঃকরণের একটি স্থায়ী আর একটি সুব্যবস্থা করা হলেই এই সমস্ত বিষয়ে সতর্ক ও সাবধান হওয়া যাবে।”

হতাশায় ও আক্ষেপে আমি বল্লাম, “ডা. বিধি-ব্যবস্থা, আমি অন্য কোনো ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি।” তাতে তিনি বল্লেন, “এসব জঞ্জাল ও আবর্জনায় তোমার হৃদয়-অন্তঃকরণ পরিপূর্ণ, কিন্তু তুমি কখনোই সুস্থ্য হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার হৃদয়-অন্তঃকরণ সঠিকভাবে গঠন করা না হয়।” আমি ডা. বিধি-ব্যবস্থাকে বল্লাম “আপনি কি আমাকে ভালোভাবে গঠন হবার জন্য অন্য যে-কোনো ডাক্তারের সুপারিশ করতে পারেন?” তিনি বল্লেন, আমার সুপারিশ করার মতো শুধুমাত্র একজনই ডাক্তার আছেন আর যদি তুমি আমার কথা না শুন, তুমি তার কাছে কখনোই যেতে পারবে না, আর এছাড়া আমি অন্য আর কাউকে কখনোই সুপারিশ করতে পারি না।”

ডাক্তার ধর্মকর্ম ও সহকারীরা।

 সুতরাং আমি এর একটা বিহিত করার জন্য হেঁটে হেঁটে ডাক্তার ধর্মকর্ম-এর চেম্বারের দরজার কড়া নাড়লাম, আর আমার মনে হলো ইনিই আমার খুঁজে পাবার উপযুক্ত ব্যক্তি, ইনি একেবারে পাকা পুরোদস্তুর একজন ব্যক্তি। যাহোক তিনি বল্লেন, “ভিতরে এসো গোপাল, আমি তোমাকে দেখে খুব খুশি হয়েছি!” আর আমি তাকে বল্লাম, “হ্যাঁ, আমিও আপনার খোঁজ পেয়ে আর আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরে খুবই খুশি হয়েছি। আমি বৃদ্ধ ডা. বিধি-ব্যবস্থাকে দেখিয়েছিলাম। এ কথায় ডা. ধর্মকর্ম বল্লেন, “আরে ধুর! উনি তো আদিকালের, সেকেলে প্রাচীন ধ্যান-ধারণার লোক। বর্তমান, আধুনিককালের লোকেরা তার কাছে যায় না। উপযুক্ত কোনো শিক্ষা তার নেই। আধুনিক কালের চিকিৎসা বিদ্যার ও আধুনিক ওষুধপত্রের জ্ঞান তার একেবারেই নেই।”

তার কথাগুলো আমার কাছে বেশ ভালোই লাগছিল, আর আমি তাকে বল্লাম, “আমি নিজেও ঐ ওনাকে তেমন একটা পছন্দ করি নাই। ডা. ধর্মকর্ম, আপনি কি আমাকে একটু দেখবেন, আর আমার ভুল ভ্রান্তি বা অপরাধ কী, একটু ভালো করে দেখুন?” তিনি বল্লেন “নিশ্চয় দেখব!” এরপর তিনি আমাকে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে বল্লেন, “কোথায়, তোমার তো কোনো মারাত্মক ভুল ভ্রান্তি বা অপরাধ আমি দেখছি না! আমি তোমাকে রীতিমত গির্জায় যাওয়া শুরু করতে পরামর্শ দিচ্ছি।” আমি বল্লাম, “কোন্ মণ্ডলীতে যাওয়া শুরু করব?” তিনি বল্লেন “আরে বাবা, যে-কোনো একটা মণ্ডলীতে গেলেই তো হলো, সব মণ্ডলই ঠিক।”

সুতরাং পরবর্তী রবিবার, একটি গির্জায় আমি গেলাম তারপর পরের কয়েক রোববারও সেখানে গেলাম কিন্তু আমি কোনো ভালো বোধ করতে পারলাম না। আমি আবারো সেই ডা. ধর্মকর্ম-এর কাছে গিয়ে বল্লাম, “ডা. ধর্মকর্ম, আমি ভালো হয়েছি বলে তো তেমন কিছুই বুঝতে পারছি না, বিশ্বাসও করতে পারছি না যে সেরকম কিছু হয়েছে।” তিনি বল্লেন, “ভালো কথা, তুমি কি গির্জায় যেতে শুরু করেছিলে?” আমি বল্লাম, “নিশ্চয়, আমি প্রতিটি রবিবার গির্জায় যাচ্ছি।” এরপর তিনি বল্লেন, “তুমি বাপ্তিস্ম নিয়ে কোনো মণ্ডলীতে যুক্ত হয়েছ কি?” আমি বল্লাম “না, আমি তো বাপ্তিস্ম নিয়ে কোনো মণ্ডলীতে যুক্ত হই নাই। কিন্তু কেন?” তিনি বল্লেন, “তুমি বাপ্তিস্ম নাও, আর এতে তুমি খুবই ভালো বোধ করবে।” আমি বল্লাম, আমি নিশ্চয় তাই করব আর আমার স্ত্রীকেও তাই করতে বলব।”

তার কথামতো আমি গির্জায় গেলাম আর বাপ্তিস্ম নিয়ে সেই মণ্ডলীতে যোগ দিলাম, কিন্তু আমি কখনোই বেশিক্ষণ ভালো বোধ করতে পারছিলাম না। তাই আমি পুনরায় ডাক্তার ধর্মকর্ম-এর কাছে ফিরে গিয়ে বল্লাম, “ডা. ধর্মকর্ম, হয়তো এমন কোনো ভুল বা অপরাধ আমার হচ্ছে যার কারণে আমি আসলেই ভালো হতে পারছি না।” তিনি বল্লেন “বেশ, তুমি কি সত্যিকারে এক্ষেত্রে কোনো কর্ম করছ বা কোনো কর্মে যুুক্ত আছ কি? মণ্ডলীর কোনো সেবা বা এরকম কোনো কর্ম করতে তুমি যুক্ত থাক, আর অন্যান্যদের সাহায্য সহযোগিতা করতে আরম্ভ করো।” আর আমি সেভাবে করতে থাকলাম। কিন্তু আমি প্রাণপণ চেষ্টা করে ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। আবার মণ্ডলীর মধ্যে কয়েকজন ভাই আমাকে ‘ডাক্তার, ভালো হওয়া’ ও ‘ডাক্তার, ভালো করা’ এদের কাছে যেতে বলল্, আর আমি তাদের কাছে গেলাম, কিন্তু কোনো উপকার হল না। সেখানে কোনো নিশ্চয়তা নেই আর নেই কোনো পরিত্রাণের প্রতিশ্রুতি। আর তখন কেউ কেউ আমাকে ‘ডাক্তার, আশা করি’ এর কাছে যেতে বলল্। এরপরে আমি গেলাম ‘ডাক্তার, মনে করি’ এর কাছে এবং এদের মধ্যে কেউ আমাকে সাহায্য করতে পারল না। এখন আমি ক্লান্ত, শ্রান্ত, হতাশায় আর নিজের শেষ অবস্থায় আবারো ডা. বিধি-ব্যবস্থার কাছে ফিরে যেতে সিদ্ধান্ত নিলাম।

ডাক্তার বিধি-ব্যবস্থার কাছে ফেরা।

 ডা. বিধি-ব্যবস্থা রোগের লক্ষণ দেখার ব্যাপারে একই রকম কঠোর ও অটল থাকায় এই বৃদ্ধ ডাক্তার আমার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন, তিনি আমাকে দেখেই বল্লেন “তোমার হৃদয়-অন্তঃকরণের সেই একই রকম অবস্থা, পরিবর্তন নেই।” তার কথায় আমি বল্লাম, “আপনি কী সুপারিশ করেন?” তিনি বল্লেন, “শুধু একটা কাজ করার আছে আর তা হলো অপারেশন করা। তোমার হৃদয়-অন্তঃকরণ বের করে আনতে হবে আর নতুন একটি হৃদয়-অন্তঃকরণ ভিতরে রাখতে হবে।” আমি বল্লাম “ডা. বিধি-ব্যবস্থা, আপনি কখন অপারেশন করবেন?” তিনি বল্লেন, “আমি অপারেশন করব না।” আমি বল্লাম, “আপনি বুঝাতে চাচ্ছেন যে আমার ভুল বা অপরাধ কোথায় তা আপনার জানা সত্ত্বেও আমি মরতে যাচ্ছি?” ডা. বিধি-ব্যবস্থা উত্তর দিলেন “আমি সেকথা বলছি না যে তোমাকে মরতেই হচ্ছে। ব্যাপারটা আমার জন্য যতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, আমি শুধু রোগ নির্ণয় করে তোমাকে দেখাতে পারছি যে তুমি মরতে যাচ্ছ। কিন্তু তুমি যদি সত্যিই বাঁচতে চাও তাহলে আমি বলতে পারি যে তোমাকে কী করতে হবে।”

প্রিয় পাঠক, এ অবস্থায় ভয়ে, রাগে, চিন্তায়, ঘেমে, কাঁপতে কাঁপতে এই পাপী এই রকম একজন অকরুণ, দয়ামায়াহীন ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বলল্, “অনুগ্রহ করে আমাকে সাহায্য করুন!” আর তিনি আমার হাত ধরে একটি কক্ষের কাছে নিয়ে গিয়ে দরজার কড়া নাড়লেন আর একজন উদার, প্রেমিক, হাসিখুশি ডাক্তার দরজার কাছে এলেন আর “ডা. বিধি-ব্যবস্থা বল্লেন, “ডা. দয়া-অনুগ্রহ, এই হলো সেই গোপাল। এই গোপাল আমার আগেকার সমস্ত অসুস্থ লোকদের মতো একই রকম অস্থিরতায় ভুগছে যাদের কি-না আমি আপনার কাছে এনেছিলাম। গোপাল আপনার কাছে অপারেশনের জন্য এসেছে।”

অপারেশন।

 ঠিক সেই সময়ে, ডা. বিধি-ব্যবস্থা চুপচাপ সেখান থেকে সে তার নিজের চেম্বারে ফিরে গেলেন আর আমাকে একাকি এই ডাক্তার দয়া-অনুগ্রহের সামনে ভয়ে ভয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হলো আর নানান রকম প্রশ্ন, চিন্তা ও সন্দেহ আমার মনের মধ্যে আসতে থাকল। আমি প্রথম জানতে চাইলাম “ডা. দয়া-অনুগ্রহ, অপারেশনে কি ঐ ডা. বিধি-ব্যবস্থা বা অন্য কোনো ডাক্তার আপনাকে সাহায্য করবেন?” তিনি বল্লেন, “না, আমার কোনো সহকারীর কিংবা কারোর কোনো সাহায্যের দরকার পড়ে না।” আমি বল্লাম, “ডা. দয়া-অনুগ্রহ, আপনার কি ভালো ট্রেনিংপ্রাপ্ত নার্স আছে?” তিনি বল্লেন “না, মশাই, আমার কখনোই কোনো নার্সের দরকার পড়ে না, আমি নিজেই সবকিছু করি।” আমি বল্লাম “ডা. দয়া-অনুগ্রহ, অপারেশনে আমাকে গভীর ঘুমের মধ্যে রাখতে কি আপনি কোনো অচেতন হবার ইংজেকশন দেবেন?” তিনি বল্লেন, “না মশাই, আমি কখনোই অচেতনমূলক কিছুই দেই না কারণ আমি তোমার জন্য এখন যা যা করতে থাকব তা তোমাকে আমি দেখাতে চাই ও জানাতে চাই যেন তুমি পৃথিবীর সবাইকে বলতে পার।” আমি বল্লাম, “ডা. দয়া-অনুগ্রহ, আপনি কি আমার স্ত্রীকে অনুমতি দেবেন যেন সে এসময় আমার কাছে থাকতে পারে?” ডা. দয়া-অনুগ্রহ হাসলেন আর বললেন, “না, বাপু, কারণ এ মুহূর্ত শুধুমাত্র তোমার ও আমার মধ্যে একান্ত ব্যক্তিগত ঘটনা। এর সবকিছু ঘটার পরেই তুমি তোমার স্ত্রীকে জানাতে পারবে।”

আমি বল্লাম, “ ডা. দয়া-অনুগ্রহ, আমি ভয় পাচ্ছি,” যাহোক, তিনি আমার দুর্বল ও কম্পিত কাঁধে তার মস্ত বড় হাত রেখে বল্লেন, “ভয় পেও না, ভয়ের কিছু নেই, আমি কখনোই কোনো অসুস্থ ব্যক্তির বিষয়ে ব্যর্থ হই নাই ও আমার দ্বারা কারোর উপকার ছাড়া অপকার হয় নাই। এই অপারেশনটি সার্থক হবেই।” আমি বল্লাম, “ডা. দয়া-অনুগ্রহ, এই ভয়ঙ্কর অপারেশনে কেমন খরচ পড়বে আর আমাকে কত দিতে হবে?” তিনি বল্লেন, “এরজন্য ইতোমধ্যেই পরিশোধ করা হয়েছে।” আমি বল্লাম, “কে এরজন্য পরিশোধ করেছেন?” তিনি বল্লেন, “তোমার শুভাকাক্সক্ষী এক বন্ধু।” আমি বল্লাম “আহা! আমি তাকে দেখতে চাই আর তাঁর সাথে কথা বলতে চাই।” তিনি বল্লেন, “তোমার অপারেশনের পরে তাঁর সাথে তোমার সাক্ষাৎ করিয়ে দেব, আমি তোমার সাথে তাঁর পরিচয় করিয়ে দেব।”

আমি বল্লাম, “ডা. দয়া-অনুগ্রহ, এটি কী সত্য কথা যে আপনি আমার পুরাতন হৃদয়-অন্তঃকরণ বের করে ফেলে দেবেন আর নতুন একটি সেখানে রাখবেন?” তিনি বল্লেন, “হ্যাঁ”। এরপর আমি আবারো বল্লাম, “আপনি নতুন হৃদয়-অন্তঃকরণ কোথায় পাচ্ছেন?” তিনি বল্লেন, “তুমি অপারেশনের পর দেখতে পাবে।” এরপর আমি ঠিকমত সঠিক বিশ্বাস নিয়ে আমি সেই অপারেশন টেবিলের উপর শুয়ে পড়লাম। বড় শল্য চিকিৎসক যাকে আবার অস্ত্রচিকিৎসকও বলা হয়, সেই ডা. দয়া-অনুগ্রহ ধারালো ছুরি নিয়ে আমার হৃদয়-অন্তঃকরণ কেটে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর, কুখ্যাত চরিত্রের, দুর্গন্ধযুক্ত, কলঙ্কিত, কুৎসিত ঘেন্না ধরা হৃদয়-অন্তঃকরণটি বের করে আনলেন - এজন্যে আমার গা ঘিনঘিন করছিল, বমি আসছিল। আর এই প্রথম আমি বুঝতে পারলাম যে ডাক্তার বিধি-ব্যবস্থা আমার হৃদয়-অন্তঃকরণের অস্থিরতা ও অসুস্থতার বিষয়ে ঠিকঠিক বলেছিলেন।

ঐ মুহূর্তেই ডা. দয়া-অনুগ্রহ সেই পুরানো হৃদয়-অন্তঃকরণ ছুঁড়ে ফেলে দিলেন আর একটি নতুন, বিশুদ্ধ, নির্মল, পবিত্র হৃদয়-অন্তঃকরণ নিয়ে এলেন আর কেটে ফেলা স্থানে লাগিয়ে দিলেন, এমন কি সেখানের কাটা দাগও চলে গেল। আমার মধ্যে নতুন জীবনের জোয়ার বইতে লাগল, আত্মিকতার উজ্জ্বল প্রলেপ আমার চোখে-মুখে। আমার জিহ্বা বলতে শুরু করল “এখন আমার সবচেয়ে ভালো অবস্থা, আমি সত্যিই অপূর্ব ও চমৎকার উপলব্ধি করতে পারছি”। মুহূর্তেই আমার মুখে হাসি ফুটে এলো আর কৃতজ্ঞতায় আমার চোখে জল এলো। আমি বল্লাম, “ডা. দয়া-অনুগ্রহ, আমাকে কবে আবার চেকআপের জন্য, সবকিছু ঠিকঠাক চলছে কি-না তা দেখার জন্য আসতে হবে?” তিনি বল্লেন, “বৎস, আর কোনো চেকআপের প্রয়োজন হবে না, অপারেশন সফল ও সার্থক হয়েছে আর তা হয়েছে একেবারে স্থায়ীভাবে।”

আমি বল্লাম, “আপনি আর কী সুপারিশ করেন?” তিনি বল্লেন, “এখন থেকে প্রতিদিন ঠিক কিছু ভালো ভালো অভ্যাস করতে থাকবে, ভালো কিছু চর্চা করতে থাকবে।” আমি বল্লাম, “আপনি কি নির্দিষ্ট কোনো কিছু করার কথা বলছেন?” তিনি বল্লেন, “হ্যাঁ, তুমি মাঝে মাঝে, একান্ত নির্জনে হাঁটুগেড়ে, মুখ তুলে ঈশ্বরের প্রশংসা ও তাঁর গৌরব করবে। সমাজের মধ্যে ভালো ভালো পদক্ষেপ নেবে, দ্বারে দ্বারে আঘাত করে তোমার ও প্রভুর সাক্ষ্য দেবে, প্রশংসা করতে তোমার কণ্ঠ চর্চা করবে।”

একজন মুক্তিদাতার সাথে পরিচয়।

 আমি সেখান থেকে চলে যাবার জন্য দরজায় পা বাড়াতেই ভিতর থেকে কেউ বল্লেন, “ফিরে যাও।” আমি বল্লাম, “ডা. দয়া-অনুগ্রহ, আপনি বলেছিলেন যে আপনি আমাকে সেই বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন, যিনি আমার সমস্ত খরচ পরিশোধ করে দিয়েছেন।” তিনি বল্লেন, “আমি জানি একথা জানার জন্য তোমাকে ফিরে আসতেই হতো” আর মুহূর্তে সেই প্রেমময় বন্ধু দরজার কাছে এসে দাঁড়ালেন যার সঙ্গে আমি এযাবৎ এতক্ষণ একত্রে ছিলাম। যখন তিনি তাঁর হাত উঁচু করলেন, আমি তাঁর হাতের পাতায় পেরেক বিদ্ধের চিহ্ন দেখতে পেলাম। তাঁর কপালে কাঁটাগাছের আচড় ও ক্ষতচিহ্ন দেখতে পেলাম। যখন তাঁর পরনের সুন্দর ঢিলা লম্বা আঙরাখা কিছুটা সরে পড়লো, আমি তাঁর গায়ে বল্লম ও বর্শার আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেলাম। ডা. দয়া-অনুগ্রহ বললেন, “গোপাল, আমি তোমাকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই, আমি যীশু।” আমি তাঁর গাঁয়ে ক্ষতচিহ্নের দিকে তাকিয়ে বললাম, “ডা. দয়া-অনুগ্রহ, এখন আমি বুঝতে পারলাম যে কোথা থেকে আমার নতুন হৃদয়-অন্তঃকরণ এসেছে। এই ইনি তাঁর নিজেরটি আমাকে দিয়েছেন।”

আর আমি স্পষ্টত অনুভব করলাম এখনই আমার প্রার্থনা শুরু করা উচিত, ঈশ্বরের সম্মুখে অবনত হওয়ার জন্য প্রস্তুত হওয়া উচিত আর একাগ্রচিত্তে সব সময়ই এরকম অভ্যাসে থাকা উচিত। এরপর যিনি আমার জন্য মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁর প্রশংসা, কৃতজ্ঞতা, ধন্যবাদ ও ভক্তিশ্রদ্ধা জানাই। আনন্দ ও বিজয় আমার জীবনের সাথে সাথেই ধাবিত হচ্ছে, কিন্তু আমার আবারো একবার ডা. বিধি-ব্যবস্থার কাছে ফিরে যাওয়ার কথা মনে এলো, যাকে আমি প্রথমে পছন্দ করি নাই। যখন আমি অন্তরে তার সম্মুখীন হয়েছি, তিনি মিষ্টি হাসিতে আমার সাথে মিলিত হলেন। আমি আমার হাত এগিয়ে দিলাম, তিনি তার প্রশস্ত দৃঢ় ও বলিষ্ঠ হাতে আমাকে ধরলেন। আমি বল্লাম, “আমার যে ভুল-ভ্রান্তি, অন্যায়, অপরাধ ছিল তা আমাকে বলার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই।” আমি ডা. বিধি-ব্যবস্থাকে দেখতে অত্যন্ত উদার ও অত্যন্ত অন্যরকম মনে হওয়ায় আশ্চর্য হয়েছি আর তার সাথে আমার ভারী সুন্দর সহভাগিতা হলো আর ডা. দয়া-অনুগ্রহের দিকে পথ দেখিয়ে দেবার জন্য আমি তাকে সব সময়ই ভালোবেসে যাবো। 

শেষ কথা।

 প্রিয় পাঠক বন্ধু, আমি এখন আপনাকে এই দু’জন বড় ডাক্তারের সুপারিশ করতে পারি। ডা. বিধি-ব্যবস্থা আপনাকে আপনার ভুল, ভ্রান্তি, অন্যায় ও অপরাধ দেখিয়ে দেবেন আর ডা. দয়া-অনুগ্রহ আপনাকে খাঁটি ও সঠিক করে তুলবেন। ডা. বিধি-ব্যবস্থা এবং ডা. দয়া-অনুগ্রহ এর কাছে আপনার ঘটনা ও বর্তমান অবস্থা খুলে বলুন। পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য এবং ঈশ্বরের পথে আসতে অন্যান্য সমস্ত রকম আশা, কামনা ও প্রত্যাশা বিদায় করে দিন। আমেন!!

Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?