“কুকুর হইতে সাবধান” translation of "Beware of gods" by Charles H Spurgeon.


‘কুকুর হইতে সাবধান’
বিখ্যাত প্রচারক সি এই স্পারজন এর একটি প্রচার। বাংলায় অনুবাদক: নথনিয়েল হাজরা।

সেই কুকুরদের হইতে সাবধান . . .” এই সতর্ক বাণীটি ফিলিপীয় পত্রের তৃতীয় অধ্যায়ের দ্বিতীয় পদ থেকে নেওয়া হয়েছে। কুকুরেরা কেমন তা আপনি ভালোভাবেই জানেন, আপনি আরো জানেন যে, যখন কোনো ক্ষিপ্ত কুকুর তার গলায় শিকলে বাধা টান টান অবস্থায় হটাৎ আপনার উপর রেগে উঠে বা হটাৎ আক্রমণ করে, তখন আপনি কেমন ভয় পেয়ে থাকেন আর ঐ কুকুরের থেকে সতর্ক থাকতে আপনি কত না দূরে থাকেন। কারণ এ অবস্থায় কুকুরটাকে বারণ করলে তাকে থামানো যায় না।

আশ্চর্য আর মজার বিষয় হলো যে, বাইবেল কখনো কুকুরদের সম্পর্কে ভালো বলে না। অনেকে ঘরে কুকুর রাখা খারাপ মনে করেন, মানতে চান না ঘরে কুকুর থাকুক। আমাদের দেশে বিভিন্ন স্থানে কুকুররা প্রায় অসভ্যভাবে বা বন্যভাবে থাকে। নির্দিষ্টভাবে তাদের কোনো প্রভু বা মালিক থাকে না। না-খাওয়া, আধ-মরা, রোগা-রোগা কুকুরগুলো কিছু খাবারের তালাশে সারাদিন ঘুরঘুর করে বেড়ায়। কোনো সন্দেহ নেই যে কুকুরেরা মানুষদের পছন্দ করে, আর দুঃখজনক হয় যখন কুকুর নিজেই নিজের প্রভু হয়। কারোর উপর লক্ষ্য রাখার জন্য আমাদের বিশেষ দায়িত্ব থাকে, কিন্তু অনেকে বলেন যে, সবচেয়ে নীচু জাতের কুকুরদের প্রতি তাদের কোনো আগ্রহ বা ভালোবাসা নেই এবং এমনকি এদের দেখাশুনার জন্য কেউ থাকেও না। কিন্তু কোনো-না-কোনোভাবে তারা বেঁচে থাকে আমাদের মাঝেই।

অনেকের মতো আমারও কিছু একটা বলার আছে, আর সেই অধিকার আমার আছে, কারণ এসব জন্তু-জানোয়ার আমাদের কাছে একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রথমত, আমরা নোংরা ও কুৎসিত কুকুরদের হতে সাবধানতা সম্পর্কে দেখি - কিংবা সাধু পৌল যেমন এদের “দুষ্ট কার্যকারী” বলেছেন - যারা নোংরা বা অশ্লীল আর ঐরকম কিছুতে গাঁ লাগিয়ে গড়াগড়ি খায়। নোংরা, কুৎসিত কুকুরেরা আপনার পরনের কাপড়চোপড় নষ্ট করে, ক্ষতি করে, আর তারা নিজেরা যেমন সেরকম আপনাকেও নোংরা ও দুর্গন্ধ বানায়। কোনো একজনকে চিনতে হলে তার সঙ্গী-সাথীদের দ্বারা তাকে চেনা যায়। আপনি যদি খারাপ সঙ্গীর সঙ্গে চলাফেরা করেন তাহলে আপনার চরিত্র তাদের মতোই একই দোষে দোষী হবে। এদের মধ্যে বসবাসে মানুষেরা আলাদাভাবে খুব একটা ভালো হতে পারে না; কেউ যদি একটা পাখিকে সবসময়ই কাকদের সঙ্গে উড়তে দেখেন, তাদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া ও তাদের সঙ্গে বাসায় থাকতে দেখেন, তিনি যদি ঐ পাখিটিকে একটা কাক বলেন, তাহলে একশতের মধ্যে নিরানব্বই জনই বলবেন, তিনি ঠিক বলছেন। আপনি যদি কুকুরের খুপরিতে থাকতে পছন্দ করেন, আর ঐ সমস্ত নেড়ি-কুকুর, খেঁকি-কুকুর, বুনো-কুকুরের সাথে চলতে পছন্দ করেন, তাহলে আপনি কাউকে বিশ্বাস করাতে পারবেন না যে, আপনি একটা পোষা মেষশাবক। খারাপ সঙ্গী মানুষকে অবশ্যই ক্ষতি করে, কারণ কথায় বলে, আপনি যদি কুকুরের সঙ্গে শুয়ে থাকেন আপনি কীট হয়ে উঠবেন।

আপনি কখনো কোনো ব্যক্তিকে জ্বর বা অসুস্থ হওয়া থেকে দূরে রাখতে পারবেন না, পারবেন না মন্দ অসৎ বা দুষ্টামী জীবন থেকে দূরে রাখতে। আপনি দেখলেন একটা কুকুর নোংরা দুর্গন্ধযুক্ত জলাময় ডোবা থেকে উঠে এসে নিজের শরীরের জল ঝরাতে ঝাঁকি দিচ্ছে আর তার বেশ কিছু দূরে সুন্দর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরা একজন মহিলা অত্যন্ত সতর্কভাবে ঐ কুকুরটার থেকে দূরে দাঁড়ালেন। আমরা এই দৃষ্টান্ত থেকে একটা শিক্ষা নিতে পারি যে, যখন আমরা দেখি মদে চুর হওয়া আধা-মাতাল কোনো ব্যক্তি তার নোংরা কথা ও আচরণ চারিদিকে ছড়ায়, কিংবা কারোর দুষ্ট আচরণ, ইতরামিতে থাকে আমাদের ভালো হয় তার থেকে আধা মাইল দূরে থাকা। আমাদের বলা হয়েছে, ঐসব অশ্লীল ইতর অভদ্র “সেই কুকুরদের হইতে সাবধান”

দ্বিতীয়ত, দাঁত বের করা ক্রুদ্ধ গর্জনকারী কুকুরদের থেকে সাবধান। এদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়; এরা প্রাণী হিসাবে বেশ ছোট, কিন্তু এদের নাকের সাইজের তুলনায় এরা অনেক বেশি মেজাজ দেখায়। তীব্রকন্ঠে চিৎকার করতে পারে, প্রচণ্ডভাবে আক্রমণ করতে পারে বা হঠাৎ কট্ করে কামড় দিতে পারে। ড. ওয়াটস্ বলেছেন - “কুকুরদের আনন্দে ঘেউ ঘেউ করতে দেও, কামড়াতে দেও, কারণ ঈশ্বর তাদের সেজন্যই গঠন করেছেন।”

কিন্তু আমি দু’পাওয়ালা কুকুরদের জন্য কোনো কৈফিয়ত দাবি করছি না, আমি তাদের লজ্জাজনক, অরুচিকর, বীভৎস, কুৎসিত, জঘন্য ও বিগড়ানো মেজাজ সম্পর্কে, আর তারা শয়তানিতে থাকায় কেমন হয় সেই সম্পর্কে লিখছি। এদের দ্বারা যে-কোনো কিছু, যা-কিছু আর সবকিছুই হয় এবং এদের সবকিছুতেই দোষ-ক্রটি পাওয়া যায়। যখন তারা সাহসী কিংবা বেপরোয়া হয়, তারা হুঙ্কার দেয়, তাদের চিৎকারে চরম ভাব প্রকাশ পায়, আর যখন তারা তা করতে না পারে, তখন তারা মুখ বুজে শুয়ে থাকে এবং ভিতরে ভিতরে ক্রুদ্ধ থাকে আর গর্জন করে। এদের কিংবা এসব মনুষ্যতর ইতর প্রাণীদের থেকে সাবধান। কোনো রুষ্ট, ক্রুদ্ধ ও ভয়ঙ্কর লোকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা আর কাঁটার তৈরি বিছানায় বিষধর একটা সাপের সঙ্গে শুয়ে থাকা একই কথা; এদের সঙ্গে কখনো বন্ধুত্ব করা যায় না। এ ধরনের কোনো ব্যক্তি এখনো যদি আপনার ভক্ত হয়, তার থেকে সাবধান। কারণ এই ব্যক্তি, যিনি আজকে অন্যের উপর গর্জে উঠতে পারে, আর কোনো কারণ ছাড়াই খামোখা আপনার উপরেও একদিন হুঙ্কার দিয়ে উঠতে পারে। এ জাতের খেঁকি কুকুরকে রাখার জন্য আপনার ঘরের কোনো আঙ্গিনায় তাকে সুযোগ দেবেন না। তা না হলে সেও একদিন তার শিকলের সঙ্গে আপনাকে বন্দি করে ফেলবে। আপনি যখন কারোর কটু, বিকৃতরুচি বা তিক্ত মানসিকতা দেখতে পান আর যদি সে কারোর সঙ্গে ভালো ব্যবহার না করে, যত তাড়াতাড়ি পারেন অন্য দিকে যান, আর যদি পারেন তার গতিবিধি বা কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকুন। গুলি ভরা বন্দুক এবং চট করে রেগে যাওয়া মেজাজী লোকেরা হলো কাঠের টুকরো স্তরে স্তরে সাজানো স্তুপ; এদের দেখলে মনে হয় এরা কোনো প্রকার ক্ষতি করে না, কিন্তু এরা খুবই চালাকচতুর, ক্ষুরধার বুদ্ধি রাখে এবং সুযোগ বুঝে চটপট চম্পট দেয় আর স্বপ্নের মতো আপনার ক্ষতি করে। ভালো হয় এদের সঙ্গে কোনো প্রকার দ্বন্দ্বে না জড়িয়ে তাদের থেকে এক মাইল বৃত্তের বাইরে থাকা; কোনো ক্রুদ্ধ মেজাজী প্রতিবেশীর সঙ্গে বিরোধ বা অশান্তি করার চেয়ে আল উঁচু করা এক ডজন কাঁটার উপর বসে থাকা অনেক ভালো। আমাদের বলা হয়েছে, এসব বদমেজাজী চটা “সেই কুকুরদের হইতে সাবধান  . .”

তৃতীয়ত, হীনমন্যতাপূর্ণ তোষামোদ করা লাফিয়ে বা লেজ নাড়া কুকুরদের থেকে সাবধান। এরা আপনার উপর লাফিয়ে উঠে এবং এদের নোংরা অশোভন থাবার কিংবা আঁচড়ের চিহ্ন (কলঙ্ক) লাগিয়ে দেয়। এরা যতক্ষণ না আপনার কাছ থেকে কোনো মাংসের একটি হাড় না পায়, ততক্ষণ আপনার হাত চেটে তোষামোদ করবে এবং হাত বুলিয়ে সোহাগ করতে থাকবে : ভ- লোভী লোকদের মতো যতক্ষণ-না আপনার দ্বারা তাদের স্বার্থের কোনো কাজ হয়, ততক্ষণ তোয়াজ করে বলতে থাকে “দাদা, আমি আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।” কথায় অতিরিক্ত মিষ্ট কথা আমাদের সন্দেহ বা আশঙ্কায় থাকতে বাধ্য করায় যে, এসব চামচাগিরিদের মনের মধ্যে কিছু একটা ফন্দি আছে। এ ধরনের লোকদের প্রতি আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে ক্ষণিকের জন্য কিছু কিছু ব্যক্তি আপনার গুণগান বা প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে পারে, কারণ সে আপানার প্রতি অত্যন্ত সম্মান ও শ্রদ্ধা দেখাতে আপনার আগে-পিছে ঘুরঘুর করতে থাকে। চাটুবাদ বা তোষামোদ করতে গিয়ে যদি সেই ব্যক্তিকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়, তবে সে এর জন্য কষ্ট স্বীকার করতে রাজি থাকে, আর সে ঠান্ডা মাথায় হিসাব করে নেয় যে, সে তার কটুচাল ব্যবহার করে তার পুরস্কার আদায় করে নেবে। যখন লোকে নিচের দিকে ঝুঁকে, তখন তারা সাধারণত কিছু একটা তুলে নেয়। ঠিক একইভাবে লোকেরা আপনার প্রতি চাটুবাদে বা তোষামোদে লেজ গুটিয়ে ঝুঁকে পড়বে, যতক্ষণ-না তারা আপনার থেকে কিছু পেতে ভরসা পায়। যখন আপনি কারোর মধ্যে অতিরিক্ত, অতিরঞ্জিত শিষ্টতা ও মার্জিতভাব লক্ষ্য করেন, আর যদি আপনি নাক দিয়ে সুন্দরভাবে একটা শ্বাস নেন, আপনি তখন একটা ইঁদুরের গন্ধ পাবেন। তাই চাটুবাদে কিংবা তোষামোদের দিকে না গিয়ে সকলের সতর্কভাবে পা ফেলা উচিত। আমাদের বলা হয়েছে, ঐসব সুবিধাবাদী পা চাটা চাটুকার “সেই কুকুরদের হইতে সাবধান . .”

চতুর্থত, লোভী কুকুরদের থেকে সাবধান। এদের কখনোই খায়েশ মেটে না, তারা কিছুতেই পরিতৃপ্ত হয় না। কিছুতেই সন্তুষ্ট হয় না আর বিড়বিড়িয়ে তার নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে। একজন অতৃপ্ত ব্যক্তি সবসময় অন্যের দোষ ধরার চেষ্টা করে, অন্যের বিষয়ে নালিশ জানায়, অন্যের অভিযোগ করে আর এই হলো একটা খারাপ মন-মানসিকতার অবস্থা। লোকেরা যারা লোভী তারা কখনো সত্য কথা বলতে পারে না, তারা বিশ্বস্ত নয় আর তারা যদি সুযোগ পেয়ে আপনার বন্ধুর পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিতে পারে, তাহলে কেন আপনার পকেটেও হাত ঢুকাবে না? দেখুন ছ্যাঁচড়ামীতে তারা কেমন চতুর! আগে তাদেরকে বেশ কিছুদিন আপনার গায়ে গায়ে লেগে থাকতে এবং আপনার পিছে পিছে ঘুরঘুর করতে দেখবেন। এদেরকে সহজে যেমন আপনি ধরতে পারছেন না তেমনি অবিশ্বাসে তাদের ত্যাগ করতেও পারছেন না। আপনার ভালো হয় এসব মিটমিটে শয়তান, অসৎ লোকদের সান্নিধ্য এড়িয়ে যাওয়া। যখন কোনো লোক গর্ব করে বড়াই করে বলে যে এরা কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে না, তাদের একটা কথায় সতর্ক থাকা উচিত যে - কুকুরদের থেকে সাবধান। একজন উদার, দয়ালু বন্ধু আপনার স্বার্থপরতা দমিয়ে রাখতে সাহায্য করে, কিন্তু পাওয়ার জন্য একজন উদ্গ্রীব লোভী আপনার মাথায় বিভিন্ন রকম ফন্দি আটতে সুড়সুড়ি দেবে। ক্ষুধার্ত হিংস্র লোভী কুকুরেরা হুড়মুড় করে সপাসপ যে-কোনো পরিমাণের মাংস খেয়ে সাবাড় করে ফেলে, তারপর আরো পাবার জন্য এদিক ওদিক তাকায়, আর ঠিক ঐভাবে লোভী লোকেরা পুরো বাড়িসুদ্ধ গিলে খেতে ঢোক গেলে, তারপর আরো কিছু পাবার জন্য গন্ধ শোকে। এসব ইতর জন্তু-জানোয়াদের জন্য অর্থাৎ আমি বুঝাতে চাচ্ছি এসব মনমানসিকতার লোকদের জন্য আমার বমি আসে, আমি অসুস্থ বোধ করি। কীভাবে টাকা পয়সা রোজগার করা যায় আর কীভাবে সঞ্চয় করা যায় আর এসব ছাড়া যখন কথা নাই, তখন কেন একজনকে নেড়ি-কুকুর, খেঁকিকুকুর, বুনোকুকুর, জাতকুকুর কুকুর অর্থাৎ কি-না বলতে হচ্ছে জঘন্য লোকদের সঙ্গে জীবনযাপন করা আর মরা গরুর ভাগ নেবার লোভে এত হুঙ্কার, এত আর্তনাদ। লোভ-লালসা আর ছ্যাঁচড়ামী মানুষের অন্তঃকরণে যে কতো ক্ষতি সাধন করে তা মুখে বলা যায় না; এভাবে কেউ হয়তো পাগলা কুকুরের কামড় খেতে পারে আর এই উগ্র, মাতালের আক্রমণে সারা জীবন যন্ত্রণায় যেমন ভুগতে হয়, তেমনি লোভও মারাত্মক। এসব খেপা, প্যাঁচ লাগানো, কঞ্জুস, ছ্যাঁচড়, রক্তচোষা জোকের মতো নিষ্ঠুর সঙ্গীদের থেকে দূরে থাকুন। আমাদের বলা হয়েছে, ঐসব খাঁইখাঁই স্বভাবের লোভী “সেই কুকুরদের হইতে সাবধান . .” 

পঞ্চমত, তীব্র চিৎকার করা কুকুরদের থেকে সাবধান। যারা অতিরিক্ত বেশি কিংবা ঘন কথা বলে তারা অনেক বড় বড় মিথ্যা কথা বলে আর আপনি যদি সত্যে প্রীত হন অর্থাৎ সত্য কথা পছন্দ করেন তাহলে আপনার জন্য ভালো হয়, ঐ ওনাদের ভক্তি না করা বা তাদের প্রেমে না পড়া। যারা বেশি বেশি কথা বলে, তারা তাদের এই বকবকানিতে তাদের প্রতিবেশীদের অসুস্থ করে তোলে, বিরক্ত করে তোলে, এমনকি তার সঙ্গে থাকায় আপনার নিজেকেও শান্ত থাকতে দেয় না; তাই আপনি যদি বাজেবকা, গল্পবাজ, বাচাল ব্যক্তি না হতে চান, তাহলে আপনার বুদ্ধিমানের কাজ হবে বন্ধুত্বের জন্য অন্য লোক খুঁজে বের করা। বোকার মতো বকর-বকর করা, আবোল-তাবোল বলা, নিরর্থক, অর্থহীন কথাবার্তা বলা, বাজে কথা বলা একদিন আপনাকে ক্লান্ত ও বিরক্ত করে ছাড়বে। এসব পরিচয়ের লোকদের থেকে আগেভাগেই সম্পর্ক না রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কখনো কোনো সময় দোকানে বা অন্যের বাড়িতে গিয়ে পরচর্চা, খোশ-তামাশা করার জন্য আড্ডা না দেওয়া ভালো। কোনো কুৎসা/কলঙ্ক রটনাকারীদের সঙ্গে সিংহের চোপার (বাচালতার) মিল কখনো এক হয় না। আপনার যদি কোনো কুকুর থাকে যা সারাক্ষণই ঘেউঘেউ করে, তাহলে সেই ঘ্যানর ঘ্যানর করা ব্যক্তিটাকে সুযোগ বুঝে দূরে সরিয়ে রাখুন, তার মন পাবার জন্য পয়সা খরচ করবেন না।

বাচালতা, সারাক্ষণ অনর্থক বাজে বকবক করা, অতিরিক্ত গল্পবাজ, সারাক্ষণ মুখ খেঁচিয়ে কথা বলা লোকেরা সাধারণত মানুষের স্বাভাবিক স্বভাব-সুলভ জীবনকে দিনরাত শান্ত ও স্বস্তিতে থাকতে দেয় না। এসব চরিত্রের লোকদের তুলনায় কিছু কিছু কুকুরদের সমর্থন করা যায়, এমনকি বিনা প্রতিবাদে তাদের নিরবে সহ্য করা যায় - যারা সারারাত গর্জন করে বাড়ির বিশ্বস্ত সৎ লোকজনদের জাগিয়ে তোলে। আমাদের বলা হয়েছে, ঐসব বাচাল “সেই কুকুরদের হইতে সাবধান . .”

ষষ্ঠত, সেই কুকুরদের থেকে সাবধান - যারা মেষদের অশান্তিতে ও সঙ্কটে ফেলে, এমনকি দাঁত দিয়ে কামড়ায়। এই ধরনের অবস্থা আমাদের ম-লীতে ম-লীতে দেখা যায় আর এর জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হয় জগতের সকলের। অনেকে বিপদজনক, ক্ষতিকর নতুন নতুন তত্ত্ব/মতবাদ নিয়ে উপস্থিত হয়, অনেকে নতুন নতুন ফন্দি, নতুন বাতিক, পাগলামিতে এবং নিজেদের মনগড়া শিক্ষা নিয়ে হাজির হয়। এক্ষেত্রে যতক্ষণ না এদের পরখ করে দেখা যায়, ততক্ষণ তাদের গ্রহণ করা ঠিক হবে না। দুই নাম্বারি আর একটা দল রয়েছে যারা সবাইকে ও সবকিছুকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করতে পারে না, প্রেম ভালবাসা যেন তাদের মধ্যে নেই। তারা মণ্ডলীতে প্রবেশ করে এই পরিচয় দিতে চায় যে, তারা যে-কোনোভাবেই হোক-না কেন, তারা কারোর না কারোর সঙ্গে হৈচৈ, ঝগড়া, অশান্তিপূর্ণ ঘটনা ঘটাতে পারে। এরা শুধু ফাঁস দিতে জানে, প্যাঁচ লাগাতে জানে, কিন্তু জট খুলতে জানে না। এদের চিহ্নিত করুন আর এদের প্রতি তীক্ষè নজর রাখুন। বহু নম্র ও বিশ্বস্ত খ্রীষ্টিয়ান রয়েছেন, যারা শান্তশিষ্টভাবে ও নিজের কাজে মনোনিবেশ করে বেঁচে থাকতে চান আর এসব ঝুট ঝামেলা অশান্তিকারীরা তাদের জন্য আপদ বা বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের সমস্ত সদস্য/সদস্যাগণ সুসমাচার শুনতে চান ও সৎ কর্ম করার উৎসাহ কিংবা সহযোগীতা পেতে চান আর এসব হয়রানী বা উদ্বেগকারীরা তাদের অদ্ভুত সব তত্ত্ব এবং তালগোল পাকানো ধাঁধা এবং দুর্বোধ্য কঠিন সব বাচনভঙ্গি তাদের জন্য দুঃখ বিষাদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একজন ভালো মেষপালক যত শীঘ্র পারেন উপযুক্ত আঘাতে এই কুকুরদের মাথা ফাটিয়ে দেন যেন তারা আর এগুতে না পারে; কিন্তু তারা আবারো তাদের অভ্যাসমতো কর্মে লিপ্ত থাকবে, যদি তারা আবারো কিছুটা সুযোগ পায়। এতে তারা কী আনন্দ পায়? নির্ঘাৎ তাদের চরিত্রে নেকড়ে বা হায়নার ছোঁয়া রয়েছে। যে-কোনো মূল্যে, কুকুরদের থেকে সাবধান। আমাদের বলা হয়েছে, ঐসব ভণ্ড “সেই কুকুরদের হইতে সাবধান . .”

সপ্তমত, সেই কুকুর থেকে সাবধান - যারা তাদের বমির দিকে ফিরে। স্বমত, স্বধর্ম বা পক্ষত্যাগী অর্থাৎ সুবিধাবাদী দলছাড়াবাদঁর কুষ্ঠরোগীর মতন। যারা একবার যীশুর অনুসারী হওয়া স্বীকার করে আবার ভিন্ন পথে চলে তাদের মতো ক্রুশের চরম বিশ্বাসঘাতক আর একজনও হয় না। যে ব্যক্তি কি-না খ্রীষ্টকে ত্যাগ করতে পারে, সে কখনো কোনো বিশ্বস্ত ব্যক্তির সঙ্গী হবার জন্য উপযুক্ত নয়। আজকাল চারিদিকে প্রায় সব জায়গাতে অনেকেই আছে, যারা সহজেই ধর্মীয় জীবন-যাপন থেকে যেন রেহাই পেতে চায়। এসব খেয়ালী লোকদের জন্য ভয়ঙ্কর দিন আসছে যখন স্বর্গ থেকে তাদের উপর আগুন নিক্ষিপ্ত হবে আর তাদের পায়ের নিচে থাকবে জ্বলন্ত পৃথিবী। যদি কোনো ব্যক্তি নিজেকে আমার বন্ধু বলে দাবি করে আর ঈশ্বরের পথ থেকে বিদায় নেয়, তাহলে তার ও আমার পথের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে; যিনি উত্তম বিষয়ের বন্ধু নন, তিনি আমারও বন্ধু নন। আমাদের বলা হয়েছে, ঐসব মত পালটানো, সুযোগসন্ধানী, জনস্বার্থবিরোধী “সেই কুকুরদের হইতে সাবধান . .”

সবশেষে, চূড়ান্ত, এবং সবকিছু বলার পর, সেই কুকুর থেকে সাবধান - যার কোনো প্রভু নেই। যে ব্যক্তি বাইবেলের শিক্ষায় চলে না, প্রভুত্ব কর্তৃত্ব মানতে চায় না, কারোর অধীনে থাকতে চায় না এবং দেশের আইন-কানুন, ও স্বাভাবিক শালীনতা বা শিষ্টাচার থেকে দূরে থাকে, ঠিক ছাড়া কুকুরের মতো নিজের মরজিতে চলে, এদের সঙ্গ থেকে বরঞ্চ তাদের আস্তানা থেকে আমাদের পৃথকভাবে থাকার কথা খোলাখুলিভাবে তাকে জানানোর এখনই উপযুক্ত সময়। এক ধরনের অদ্ভুত প-িত ব্যক্তিরা বড় বড় জ্ঞানের কথা বলেন, আর তাদের প্রভু, কর্তা কিংবা পিতারা যেসব সঙ্গতিপূর্ণ পবিত্র কথা ও ভালোভালো উপদেশ দিয়ে গিয়েছেন তার উপর তারা তাদের নোংরা কলঙ্কিত হাত চালায়। অধম মূর্খের দল, তারা নিজেদের যতটা চালাক মনে করে বাস্তবে তারা তার অর্ধেকও নয়। ফুলের বাগানে অবাধে চষে বেড়ানো শুকরের ছাও/বাচ্চার মতো তারা সবকিছু উপড়ে ফেলে আর কিছু কিছু লোকেরা এত ভীত বা আতঙ্কে থাকে যে আঘাত পাবার ভয়ে চুপচাপ থাকে এবং ভয়েভয়ে তারা ঐসব হীন ইতর জন্তু-জানোয়ারের কথা শুনে, তাদের কথায় চলে ও ভয়ের চোটে তাদের সমর্থন করে। শুকরের ছাও/বাচ্চারা যখন আমাদের প্রভুর বাগান চষে বেড়ায়, তখন আপনার হাতে থাকা চাবুক চালিয়ে ঝেটিয়ে সাফ করুন।

কুকুর হইতে সাবধান। যারা আপনার ক্ষতি করে তাদের থেকে সাবধান। ভালো সঙ্গী থাকতে কেন খারাপ সঙ্গীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব? শাস্ত্র বলে “বাহিরে রহিয়াছে কুকুরগণ” (প্রকাশিত বাক্য ২২:১৫) অর্থাৎ শাস্ত্রে এখানে ওদের সম্পর্কে এই রকম কথা বলে যে, এই কুকুরের দল জঘন্য লোক এদের কার্যকলাপ হলো মানুষ ভুলানো, বশকরা, ব্যভিচার করা, লম্পটতা, ম-লীর অর্থ লুট করা, মিথ্যা কথা বলা। এরা আমাদের চারপাশে সব সময়ই থাকে। আমাদের আন্তরিক বন্ধুত্ব থাকবে সেই তাদের সঙ্গে, যারা স্বর্গে যাবার জন্য সতর্ক হচ্ছেন, কারণ সেখানে যেতে আমরাও প্রস্তুত রয়েছি। আমরা দুষ্ট লোকদের সাথে নরকে সারাক্ষণ আগুনে জ্বলতে নয়, কিন্তু আমাদের মৃত্যুর পরে আমরা আমাদের এই প্রভুতে বিশ্বস্ত সঙ্গীদের কাছে স্বর্গে যাই; আর কুকুরদের সঙ্গে নয়, কিন্তু ঐ বিশ্বস্ত সঙ্গীদের সঙ্গে চলাই হোক আমাদের গর্ব। আমেন!

Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?