আমার কথা . . আমার সাক্ষ্য . .

“আমি এখন তাঁর ধার্মিকতায় দণ্ডায়মান”

আমার প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে কীভাবে আমার জীবন পরিবর্তন হয়েছে সেই অভিজ্ঞতার কথা আজ আপনাদের কাছে প্রকাশ করতে খুবই অনুপ্রাণিত হচ্ছি। 

“তুমি তোমার বাবাকে জান, তুমি কি ঈশ্বরকে জান?” প্রশ্নটি আমাকে করা হয়েছিল যখন আমি ফার্স্ট ব্যাপ্টিস্ট চার্চ, সেভিল, নিউ ইয়র্ক, চার্চের রবিবারের উপাসনা শেষে একটি কারে নিউ ইয়র্ক সিটিতে ফিরছি সন্ধ্যায় আবারো একটি বাইবেল শিক্ষা ক্লাসে যোগ দিতে। প্রশ্নটি করেছিলেন সেই মণ্ডলীর একজন সদস্য ব্রাদার রেন্ডি ইনসেস্টার। যিনি আমাকে তার গাড়িতে করে সেখানে পৌঁছে দিয়ে সেখানেই আমাদের অনেককে বাইবেল শিক্ষা দিতেন। সময়টি ছিল ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারি। গাড়ি চলতে চলতে অনেক কথার মাঝে হঠাৎ তিনি ঐ প্রশ্নটি আমাকে করলেন। আমি এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর কখনো কাউকে দেইনি কারণ এভাবে কেউ আমাকে জানতে চয়নি কোনোদিন। প্রশ্নটি আমার কাছে ছিল অত্যন্ত নতুন আর তখন ঐ মুহূর্তে ছিল বেখাপ্পা/বেমানান। গাড়ীতে থাকায় অনেক সুন্দর সুন্দর আলোচনার মাঝে এই প্রশ্নটি আমাকে বিপত্তিকর অবস্থায় ফেলল। আমি হতভম্ব ছিলাম। আমি সে মুহূর্তে চাচ্ছিলাম তিনি প্রসঙ্গটি ঘুরিয়ে নিক, কিন্তু দেখছি তিনি গভীর আগ্রহে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে উত্তরের অপেক্ষায়। বারবার আমার চোখ তার চোখের দিকে তাকিয়ে ফিরিয়ে নিচ্ছিলাম। মনে প্রাণে চাচ্ছিলাম অন্য প্রসঙ্গে যাক। কিছুক্ষণ আমার চোখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে কোনো উত্তর না দিলেও নিরবে তাকে বুঝিয়ে দিলাম, বন্ধু প্রশ্নটি বড়ই কঠিন, অন্য কিছু বলো। তিনি আমার মনের উত্তর বুঝেছিলেন।

এমনিতেই সেই মণ্ডলীর পালক, পাস্টর জন গ্রাফের রোববারের প্রতিটি জোড়ালো প্রচারে আমি খতবিক্ষত। পালক যেন আমার জীবনের সবকিছুই জানেন, প্রতি রোববার প্রচারে অনেক লোক উপস্থিত থাকা সত্বেও যেন উনি আমাকেই ইঙ্গিত করছেন। আমার জীবনের সবকিছুই তিনি উপড়ে তুলছেন। তার প্রচারে আমি এটাই বুঝে নিয়েছিলাম যে, পূর্বে আমার জীবনে যতই ধর্মকর্ম থাক, যতই প্রভুর ভোজ হোক, আমার জীবনে যদি বাপ্তিস্ম থাকে, তবুও এসবের কিছুই আমাকে নরকে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারছে না। আমি আমার মৃত্যুর পর নরকে যাচ্ছি। যে নরকের আগুন কখনো নেভে না। যে নরক যাতনার স্থান। যে নরকের যাতনা দিবারাত্রি কখনও বিশ্রাম নাই। যে নরক ভয় ও অন্ধকারের স্থান। যে নরক তৃষ্ণার স্থান। যে নরকে প্রার্থনার উত্তর নাই। ঈশ্বর নাই, দয়া নাই, সুখ নাই, ভালোবাসা নাই, যাতনা মুক্তের অসুধ নাই। কারণ আমার জীবনে নরকে যাওয়া ছাড়া স্বর্গে যাবার কোনো নিশ্চয়তা নাই। আমি নিশ্চিত ছিলাম না খ্রীষ্ট আমার জন্য প্রাণ দিয়েছেন কি না। আমি জানতাম না তাঁর মৃত্যুতে ও তাঁর রক্তে আমার প্রাণের ব্যবস্থা আছে। যদিও এর আগে আমি বাইবেল বহুবার পাঠ করেছি। মনে পড়ে একবার বাইবেল পড়ে শেষ করেছিলাম। ছোটবেলায় খ্রীষ্টিয়ান স্কুলে পড়েছি, বাপ্তিস্ম নিয়েছি। তবুও এতক্ষণে আমি বুঝতে পেরেছি যে আমি যেখানে দাড়িয়ে ছিলাম, আমি সেখানেই আছি। জীবনের কোনো পরিবর্তন, পরিত্রাণের কোনো নিশ্চয়তা আমার নেই। পিতা ঈশ্বর যে উদ্দেশ্যে আমায় সৃষ্টি করেছেন (যিশাইয় ৪৩:৭ ও ২১ পদ) ও তার কোনো কিছুই আমার জীবনে ঘটেনি। আমি বুঝতে পারলাম, পিতা ঈশ্বর আমাকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তাঁর সৃষ্টির সমস্ত কিছু উপভোগ করে তারই গৌরব প্রশংসা করার জন্য, তারই আরাধনা করার জন্য, কেবল তাঁরই ভজনা করার জন্য।

আমি আরো ভালো থাকার জন্য আরো টাকা উপার্জন করার জন্য দেশে আমার স্ত্রী ও ছেলে মেয়েকে রেখে ১৯৯২ মার্চ মাসে আমেরিকা যাই। আর সেখানে আমি ঈশ্বরের লোকদের সান্ধিধ্য পেয়ে আমার নিজেকে পাপী বলে আসল পরিচয় জানতে পারি। জানতে পারি ঈশ্বরকে।

সেদিন যিনি আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন যে “তুমি তোমার বাবাকে জান, তুমি কি ঈশ্বরকে জান?” এ প্রশ্নটি আমাকে করার আগেও ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরে বাইবেল শিক্ষা দেওয়ার মূহুর্তে তিনি আমার কাছ থেকে এও জানতে চেয়েছিলেন, আমি পরিত্রাণপ্রাপ্ত কি না? এর উত্তরে আমি বলেছিলাম আমি একজন খ্রীষ্টিয়ান, আর আমরা কয়েক পুরুষ থেকে খ্রীষ্টিয়ান। আমার বাবা একজন পালক। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আমার উত্তরে তিনি সন্তুষ্ট হতে পারেননি। আর এতে আমি আমার সঙ্গীদের সেকথা বলায় তারা বল্ল যে তিনি তোমাকে ঐ প্রশ্ন করে বারবার জ্বলাতন করতে থাকবে, আর আমাদেরও তাই করে, এরপরে যদি তিনি আবারো কখনো এমন প্রশ্ন করেন তো তুমি উত্তর দেবে ‘আমি পরিত্রাণপ্রাপ্ত’, তাতে তুমি তার ঐ প্রশ্ন থেকে রেহাই পারে।

পরবর্তী বাইবেল ক্লাসে সেই ডিসেম্বর মাসেই তিনি আমাকে আবারো প্রশ্ন করলেন আমি পরিত্রাণপ্রাপ্ত কি না। আমি ঝটাপট উত্তর দিলাম, ‘হ্যা আমি পরিত্রাণপ্রাপ্ত। তাতে তিনি জানতে চাইলেন যে, কবে এবং কীভাবে আমি পরিত্রাণ পেয়েছি, আমার হারানো অবস্থা বুঝতে পেরেছিলাম কি না। তখন আমি একটা সমস্যায় পরে গেলাম আর আমার বন্ধুদের দিকে তাকালাম। ঐ মুহুর্তে তারা আমার কাছ থেকে সরে গেল। আমি মনে করতে থাকলাম, কবে যেন বাপ্তিস্ম নিয়েছি। যাহোক আমার বাপ্তিস্ম নেওয়ার একটি বছরের কথা তাকে বললাম। তিনি আমাকে অত্যন্ত আগ্রহে পরবর্তী রোববার তাদের গির্জায় যেতে বললেন। বললেন, সেখানে পালকের প্রচারে আমার অনেক উপকার হবে নিজের পরিত্রানের জন্য। নিউ ইর্য়ক শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে সেই মণ্ডলী। আমি সে রাতে বাইবেল ক্লাস থেকে মনমরা হয়ে ঘরে ফিরলাম। আর মনে মনে নিজের বিষয়ে খুবই লজ্জিত হলাম যে ‘কেন আমি তাকে সন্তুষ্টজনক উত্তর দিতে পারলাম না, আমি কেন এসব উত্তর জানি না?’। আমার জীবনে কেউ কখনো এমনতর প্রশ্ন করেনি আর বুঝিয়ে বলেনি কখনো। কেবল তার কাছ থেকেই বার বার এইসব আত্মিক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে থাকি।

প্রিয় পাঠক, একটি কথা আপনাদের জানানো ভালো যে আমি আমেরিকায় যাওয়ার পর আমার সেখানে মোটেও ভালো লাগছিল না। আমি আমার স্ত্রী, ছেলেমেয়েদের দেশে রেখে আমি কোনো ক্রমেই শান্তিতে ছিলাম না। এ কারণে ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরে বড়দিনের পরেই দেশে ফেরার চিন্তা করছিলাম। কিন্তু এই বাইবেল ক্লাসে যোগ দিয়ে এবং তার ঐসব প্রশ্নে আমি খুবই অনুপ্রাণিত হলাম যে সে রাতেই সিদ্ধান্ত নিলাম আমার আত্মিক অবস্থার একটি ব্যবস্থা না করে দেশে ফিরবো না। আমি তার ঐ মণ্ডলীতে যাবো। আমি আমার জীবনে এর উত্তর জানতে চাই। এসব উত্তর আমি জেনেই সিদ্ধান্ত নেব যে কী করা যায়। আমি ১৯৯৫ সালের জানুয়ারি থেকে ঐ লং আইল্যান্ডের ব্যাপ্টিস্ট মণ্ডলীতে যাওয়া শুরু করি। মণ্ডলীর পালকের প্রচার আমাকে আকর্ষণ করল, তার প্রচার আমাকে আমার জীবন সম্পর্কে বিচলিত করলো। আমি বুঝতে পারলাম আমি হারানো মেষ, আমি ঈশ্বরকে চিনি না আর তিনি আমাকেও চেনেন না। পাস্টর, পরিত্রাণ সম্পর্কে, মন পরিবর্তন সম্পর্কে প্রচার করতেন। পাপী মানুষের পরিত্রানের জন্য খ্রীষ্টের প্রায়শ্চিত্বে রক্ত ঝরা ক্রুশের কথা, তাঁর মৃত্যুর কথা প্রচার করতেন। তার সমস্ত আঘাত করা প্রচার আমার কছে মনে হয়েছে গির্জায় এত লোক থাকা সত্বেও তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করেই প্রচার করছেন, যেন তিনি আমার জীবনের সমস্ত কিছুই জানেন। এতে আমি আশ্চর্য হচ্ছি আর নিজের জীবন সম্পর্কে ভীত হচ্ছি আর দুঃখ করছি, অথচ তিনি আমার জীবনের কিছুই জানেন না। আর আমি আমার নিজেকে চিনতে থাকলাম, নিজেকে চিনলামও। আমি নিজেকে ধিক্কার দিতে থাকলাম।

এভাবে প্রতি রোববার গির্জায় তার প্রচার শুনতে এবং সন্ধ্যায় বাইবেল শিক্ষায় যেতে থাকলাম। দিনে দিনে আমি আত্মিকতায় খুবই দুর্বল হতে থাকলাম। যাহোক আমি যখন ১৯৯৫ মার্চ মাসের শেষ রোববার গির্জায় যাই। সেদিন পালকের চেতনাদায়ক প্রচারে আমি নিজেকে খুবই অসহায় বোধ করলাম যে আমি হারানো আর পরিত্রাণবিহীন। ঈশ্বর আমাকে চেনেন না। আমি অহেতুক একটি লোক এই জগতে বেঁচে আছি। পরের দিন সোমবার রাতে আমার কাজ থেকে ঘরে ফেরার পথে শুধু আমার আত্মিক অবস্থার কথাই চিন্তা করছিলাম আর ঘরে ফিরে আমার সেই বন্ধুকে রাত সারে এগারোটায় ফোন করি (যিনি আমাকে ঐ সেই প্রশ্নটি করেছিলেন) আর বলি, ‘বন্ধু আমি খুবই মর্মাহত, আমি নিজের অবস্থার জন্য খুবই দুর্বল হয়ে পরেছি আমাকে সাহায্য কর।’ যদিও তিনি রাতে ঘুমে ছিলেন তবুও আমাকে উত্তরে জানালেন যে এত রাতে তো আমি তোমার কাছে যেতে পারছি না, তবে তোমার বাইবেল খুলে ১ম যোহনের প্রথম অধ্যায় থেকে পাঠ করতে থাক আর দেখে কোনো উত্তর পাও কি না। তার কথায় আমি যখন বাইবেল খুলে ৫ পদ থেকে পাঠ করতে শুরু করি তখন সেই অংশের প্রতিটি কথা এক একটি শেলের মতো আমাকে বিদ্ধ করতে লাগলো। যদিও এই অংশ আমি আগেও অনেকবার পাঠ করেছি তবে এখন আমাকে আঘাত করছে।

যখন আমি ৯ পদটি পাঠ করতে থাকি যে “যদি আমরা আপন আপন পাপ স্বীকার করি, তিনি বিশ্বস্ত ও ধার্মিক, সুতারাং আমাদের পাপ সকল মোচন করিবেন এবং আমাদিগকে সমস্ত অধার্মিকতা হইতে শুচি করিবেন।” অংশটি পাঠ করে আমি আবারো বুঝতে পারলাম যে ঈশ্বর ধার্মিক এবং আমি নিজেই একজন পাপী। আমি এও বুঝতে পারলাম যে আমার সঙ্গে ঈশ্বরের কোনো সম্পর্ক নাই। “আমরা যদি বলি যে, আমাদের পাপ নাই, তবে আপনারা আপনাদিগকে ভুলাই, এবং সত্য আমাদের অন্তরে নাই।” আমি স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছি যে পাপ সম্পর্কে অনেক মিথ্যা বলেছি। আর এতে আমি নিজেই নিজেকে প্রতারণাই করছি। অংশটি পাঠ করে প্রভুর কাছে প্রার্থনা করে ক্ষমা চাইলাম। কিন্তু একটি সমস্যা, আমি কিছুতেই উপলব্ধি করতে পারছি না যে আমার পাপের ক্ষমা হয়েছে।

সেই বন্ধুটি পরের দিনে আমার সঙ্গে দেখার করার কথা ছিল কিন্তু তার কাজের ব্যস্ততার কারণে তার ইচ্ছা থাকা সত্বেও সেই অতদুর থেকে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসতে পারেননি। সেই সপ্তাহটি আমি বেশ অসস্তিকর অবস্থায় কাটালাম। পরের বোরবার সেই ২রা এপ্রিল ১৯৯৫। আগে আগেই গির্জায় যাই। গির্জায় বসে প্রচার শুনছি আর নিজেকে প্রভুর জন্য প্রস্তুত করছি।

প্রচারের শেষে, যখন পাস্টর আহ্বান জানালেন, আমি আমার সিট থেকে উঠে সামনে পুলটিটের কাছে যেতে পারছি না, অনেকেই যাচ্ছে কিন্তু আমি যেতে পারছি না, যেন বেঞ্চে আটকে গেছি। যাহোক, গির্জার পরে সবাই বের হয়ে গেলেন কিন্তু আমি উঠতে পারছি না। আমি একা বসে আছি বলে বেশ কিছুক্ষণ পরে পাস্টর সবাইকে বিদায় দিয়ে আমার পিছনে কাধে হাত রাখলেন। আমি চমকে উঠলাম আর তখন উঠে আমি তাকে বললাম, পাস্টর আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই তাতে তিনি আমাকে গির্জার একটি রুমে নিয়ে গেলেন আর আমি নিজের আত্মিক অবস্থার কথা জানালাম। তিনি প্রার্থনা করে আমাকে বাইবেল থেকে কয়েটি পদ পাঠ করে ব্যাখ্যা করলেন আর আমি হৃদয়ে খুবই সস্তিবোধ করতে থাকলাম। আমি সে মূহুর্তে প্রভুকে আহ্বান করলাম, আমি মন পরিবর্তন করলাম, আমি যীশুকে আমার মুক্তিদাতারূপে আমার প্রভুরূপে বিশ্বাস করলাম।

আমার মন থেকে একটি বোঝা ঝরে গেল। আমাকে মন ফিরাতে পবিত্র আত্মা সাহায্য করলেন। আমি বিশ্বাস করলাম প্রভু যীশু আমার পাপের জন্য তিনি ক্রুশে রক্ত ঝরিয়েছেন, মৃত্যুবরণ করেছেন, আমাকে অনন্ত জীবন দানের জন্য পুনরত্থিত হয়েছেন। সেই দিনই সেই ক্ষনেই ঠিক বারোটা পয়তাল্লিস মিনিটে আমি পরিত্রাণ লাভ করি অনন্তকালের জন্য। অন্তর আমার আনন্দে ভরে উঠল। আমার পাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া, মন পরিত্রাণ ও যীশুকে আমার মুক্তিদাতা ও প্রভুরূপে গ্রহণ করার জন্য পবিত্র আত্মা আমাকে সাহায্য করেছেন। আমি ঈশ্বরকে জেনেছি আমার পিতারূপে। আমি তাঁর একজন সন্তান। “ . . . যত লোক তাঁহাকে গ্রহণ করিল, সেই সকলকে, যাহারা তাঁহার নামে বিশ্বাস করে তাহাদিগকে, তিনি ঈশ্বরের সন্তান হইবার ক্ষমতা দিলেন। তাহারা রক্ত হইতে নয়, মাংসের ইচ্ছা হইতে নয়, মানুষের ইচ্ছা হইতেও নয়, কিন্তু  ঈশ্বর হইতে জাত”  (যোহন ১:১২,১৩ পদ)। আমেন।

১৫ই এপ্রিল ১৯৯৫ তারিখে আমি ফাস্ট ব্যাপ্টিস্ট চার্চে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করে মণ্ডলীর সদস্য হই (বর্তমানে এই মণ্ডলী নাম পরিবর্তন করে ‘লং আইল্যান্ড ব্যাপ্টিস্ট চার্চ’ রাখ হয়েছে)। আমি জানি, যে বাক্য আমি পেয়েছি ও যে শিক্ষায় বিশ্বাসে আমি পরিত্রাণ পেয়েছি তা আমার পরিবারে কেউ, আমার দেশের অনেকেই পায়নি। এর মধ্যেই আমি প্রেরণা পাচ্ছি যে আমি আমার জীবনের সাক্ষ্য মন খুলে আমার লোকদের বলি। আমি পাস্টরকে একথা বলি। তিনি বললেন “প্রার্থনা কর আর দেখ ঈশ্বরের থেকে আর কোনো আহ্বান পাও কি না, হয়তো একটি আহ্বান তোমার জীবনে আসছে।” এক মাসের মধ্যেই আমি ঈশ্বরের থেকে আহ্বান পেলাম যেন প্রভুর নাম প্রচার করি আর এজন্য নিজেকে প্রস্তুত করি। আমার এই আহ্বানের কথা পালককে বলি আর মণ্ডলী আমাকে দুই বছরের বাইবেল শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। আমি এজন্য নিউইয়র্ক সিটি থেকে লং আইল্যান্ডে ঘর ভাড়া করি আর কিছুদিন পর মণ্ডলীর একটি পরিবার, ম্যাকগ্রেথ ও তার স্ত্রী বিং আমাকে তাদের ঘরে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। তাদের পরিবারের ছেলে ও মেয়েসহ সবাই আমাকে শ্রদ্ধা ও সন্মান করতেন। খ্রীষ্টেতে তাদের পরিবারে সকলের ভালোবাসা আমি পেয়েছি। এরমধ্যে আমি আমাদের মণ্ডলীর একটি প্রচার পত্র 'An important message from the people who care' এবং ডাকযোগে বাইবেল শিক্ষা কোর্স ‘বাইবেল শিক্ষার ভিত্তি’ বাংলায় অনুবাদ করি। এগুলো আমি নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশীদের মধ্যে বিলি করি। আমার বাইবেল শিক্ষা চলাকালিন জানতে পারলাম যে নিউ জার্সিতে প্রায় আট হাজার বাঙ্গালীদের এক ক্যালচারাল সমাবেশে হতে যাচ্ছে। আমেরিকার সমস্ত স্টেট থেকে বাঙ্গালীরা এবং বাংলাদেশ থেকে আর্টিস্টরা এখানে আসবে। আমি বুঝলাম এই আমার সুয়োগ। আমি স্থির করলাম সেখানে ট্রাক্টস্ অর্থাৎ সুসমাচার প্রচারপত্র বিলি করবো। মণ্ডলীর প্রিন্টার থেকে সিস্টার মেরি আমাকে দুই হাজার ট্রাক্টস্ ছাপাতে সাহায্য করেন। সেদিন এই ট্রাক্টস্গুলো নিয়ে গভীর আগ্রহে সেখানে গিয়ে রাতে সমাবেশের শেষে বিলি করতে থাকি। খুবই আনন্দ হচ্ছিল যখন লোকেরা আমার হাত থেকে প্রভুর বাণীর এই ট্রাক্টস্গুলো নিচ্ছিল। অল্পক্ষনেই আমরা দুই হাজার ট্রাক্টস্ শেষ হয়ে গেল। কিন্তু বাইরে গিয়ে দেখি, আমার বিলি করা সাদা ট্রাক্টস্-এ (সুসমাচার প্রচারপত্রে) কালো সিড়ি সাদা হয়ে গিয়েছে। লোকদেরকে দেওয়া ঈশ্বরের বাণী তারা ফেলে দিয়েছে। আমি তাদের থেকে মাত্র একটি উত্তর পেয়েছিলাম যা তাকে পরবর্তীতে ডাকে আরো বাইবেল শিক্ষামূলক বই পাঠালেও তিনি উত্তর দেননি। আমি সেদিন খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম। আমি অন্তরে প্রভুর কথা বুঝতে পারলাম যে এদেশে আমেরিকা আমার প্রচারের স্থান নয়। এদেশে আমার দেশের লোকেরা এসেছে অর্থ উপার্জন করার জন্য, নিজের ইচ্ছায় জীবন ভোগ করার জন্য, স্বর্গে যাবার জন্য নয় কারণ আমেরিকাই তাদের স্বর্গ। প্রভুর থেকে আমি বুঝতে পারলাম আমাকে যেতে হবে আমার দেশে আমার লোকদের কাছে যেখানে প্রভুর বাক্যের প্রয়োজন। কারণ আমার বাংলাদেশ আত্মিক অন্ধকারচ্ছন্ন দেশ। আমি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারলাম যে আমার লোকদের কাছে নিজের ভাষায় প্রচার করতে হবে। আমার এ আহ্বানের কথা আমি আমার পাস্টরকে বলি, আমি বলি আমার ম-লীর কাছে। তারা আমার জন্য প্রার্থনা করেন। আর আমি প্রস্তুতি নিতে থাকি আমার প্রভুর সঙ্গে আমার দেশে ফেরার জন্য।

আমি দেশে ফেরার আগে পেনসিলভেনিয়ায় ইম্মায়ুস ব্যাপ্টিস্ট চার্চে যাওয়ার সুযোগ পাই। আমার পাস্টর সেখানে যাবার সুযোগ করে দেন। সেই চার্চের পালক ডগলাস হ্যামেট আমাকে তাদের চার্চে আমার আত্মসাক্ষ্য বলার সুন্দর সুযোগ করে দেন। আমি রাতে সেই পালকের ঘরে থাকি। সেই মণ্ডলী, সেই পালক এবং তার পরিবারের সকলে আমাকে অত্যন্ত আন্তরিক ভালোবাসা প্রকাশ করেন ও আমাকে প্রচারের প্রতি উৎসাহ দেন। সেই মণ্ডলী আমার জন্য বিশেষ চাদা সংগ্রহ করে আমাকে দেশে ফেরার জন্য প্লেনের টিকিন কিনতে সাহায্য করেন। পালক আমাকে অনেক বই উপহার দেন আমার আরো পরিপক্কতার জন্য। আমি তাদের কাছে এজন্য চির কৃতজ্ঞ। এরপরের দিন সেই পালক আমাকে তার পরিচিত  নিউ জার্সিতে  “নিউ টেস্টামেন্ট ব্যাপ্টিস্ট মণ্ডলীতে যাবার সুযোগ করে দেন। সেখানে পাস্টর চাক সর্টার ও তার স্ত্রী আমাকে অভ্যর্থনা জানায় ও তাদের মণ্ডলীতেও আমি আত্মসাক্ষ্য দিই।

আমি ১৯৯৭ সালের আগস্ট মাসে দীর্ঘ সারে পাঁচ বছর পর দেশে ফিরে আমরা পরিবারের সাথে মিলিত হই। জগতের একটি আধুনিক, শক্তিশালি এবং সবচেয়ে ধনী দেশ আমেরিকায় গিয়েছি টাকা রোজগার করে ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য আর দেশে ফিরে আসি প্রভুর বাক্য নিয়ে।

আমি দেশে এসে প্রথমে আমার স্ত্রীকে শিক্ষা দিতে শুরু করি। প্রথম প্রচার ও শিক্ষা দেওয়া শুরু করি আমার পরিবার থেকে। মনে আছে পাস্টর ডগলাস হ্যামেট এবং আমার পালক বলেছিলেন যে আমাকে শিক্ষা দেওয়া শুরু করতে হবে আমার পরিবারের থেকে। আমার স্ত্রী ১৯৯৮ সালে ৩রা আগস্টে পরিত্রাণ লাভ করেন। এরপর আমার প্রিয় মানুষ, ঈশ্বরের লোক পাস্টর জন গ্রাফ ১৯৯৯ সালে সেপ্টেম্বরে আমার দেশে আসেন, আমাদের ঘরে এক সপ্তাহ থাকেন। তিনি আবারো আমার বিশ্বাস সম্পর্কে জানেন ও আমার স্ত্রীর সাক্ষ্য শোনেন এবং ঐ দিনেই তিনি আমার ঘরে আমার অনেক লোকের সামনে আমাকে অভিসিক্ত করেন। আমি পিতা ঈশ্বরকে কৃতজ্ঞতা জানাই আমাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ও এই আত্মিক অন্ধকার দেশে প্রভুর বাক্য প্রচার করার জন্য। আমি আমার মণ্ডলীর কাছে ও আমার পালক জন গ্রাফের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি আমার সকল খ্রীষ্টিয় ভাইবোনদের কাছে কৃতজ্ঞ যারা আমাদের জন্য প্রার্থনা করেন।

“অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর, পিতার ও পুত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজিত কর, আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি, সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও। আর দেখ, আমিই যুগান্ত পর্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।” (মথি ২৮:১৯:২০ পদ)


Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?