পরিত্রাণ সম্পর্কে রোমীয় পুস্তক থেকে কিছু আলোচনা।

পরিত্রাণ সম্পর্কে রোমীয় পুস্তক থেকে কিছু আলোচনা।
বাইবেল আমাদেরকে প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে পাপ থেকে উদ্ধারের কথা বলে। পরিত্রাণ সুসমাচারকে উল্লেখ করে। নতুন নিয়মে রোমীয় পুস্তকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে পরিত্রাণের শিক্ষা তুলে ধরেছে।
পরিত্রাণের প্রয়োজনে,
প্রথমত: বুঝতে হবে যে ঈশ্বর পবিত্র এবং তিনি পাপের শাস্তি দেন।
রোমীয় ১:১৮ পদ, “কারণ ঈশ্বরের ক্রোধ স্বর্গ হইতে সেই মনুষ্যদের সমস্ত ভক্তিহীনতা ও অধার্মিকতার উপরে প্রকাশিত হইতেছে, যাহারা অধার্মিকতায় সত্যের প্রতিরোধ করে।”
দ্বীতিয়ত: বুঝতে হবে যে মানুষ পাপে ডুবে আছে আর ঈশ্বরের ব্যবস্থা পালন ব্যর্থ।
রোমীয় ১:১৯ পদ, “কেননা ঈশ্বরের বিষয়ে যাহা জানা যাইতে পারে, তাহা তাহাদের মধ্যে প্রকাশিত আছে, কারণ ঈশ্বর তাহা তাহাদের কাছে প্রকাশ করিয়াছেন।”
রোমীয় ৩:১৮ পদ, “ঈশ্বর-ভয় তাহাদের চক্ষুর অগোচর।”
তৃতীয়ত: বুঝতে হবে যে মানুষেরা এভাবে এ অবস্থায় থাকায় তারা কোনো ভাবেই কোনো অবস্থাতেই ঈশ্বরের সমর্থন পাচ্ছে না, কোনো সুবিধা পাচ্ছে না ঈশ্বরের থেকে।
রোমীয় ৩:১৯-২০ পদ, “আর আমরা জানি, ব্যবস্থা যাহা কিছু বলে, তাহা ব্যবস্থার অধীন লোকদিগকে বলে; যেন প্রত্যেক মুখ বন্ধ এবং সমস্ত জগৎ ঈশ্বরের বিচারের অধীন হয়। যেহেতু ব্যবস্থার কার্য দ্বারা কোনো প্রাণী তাঁহার সাক্ষাতে ধার্মিক গণিত হইবে না, কেননা ব্যবস্থা দ্বারা পাপের জ্ঞান জন্মে।”
এখন জানা যাক পরিত্রাণের উপায়।
পরিত্রাণ হলো ঈশ্বরের থেকে চিরস্থায়ী অনন্তকালীন আশির্বাদের জন্য বিনামূল্যের একটি দান যা যীশু খ্রীষ্টের প্রায়শ্চিত্বের মাধ্যমেই হয়েছে। এর সবকিছু হয় যারা খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করেন তাদের।
রোমীয় ১:১৬-১৭ পদ, “কেননা আমি সুসমাচার সম্বন্ধে লজ্জিত নহি; কারণ উহা প্রত্যেক বিশ্বাসীর পক্ষে পরিত্রাণার্থে ঈশ্বরের শক্তি; প্রথমতঃ যিহূদীর পক্ষে, আর গ্রীকেরও পক্ষে। কারণ ঈশ্বর-দেয় এক ধার্মিকতা সুসমাচারে প্রকাশিত হইতেছে, তাহা বিশ্বাসমূলক ও বিশ্বাসজনক, যেমন লেখা আছে, “কিন্তু ধার্মিক ব্যক্তি বিশ্বাস হেতু বাঁচিবে”
রোমীয় ৩:২২-৩০ পদ, “ঈশ্বর-দেয় সেই ধার্মিকতা যীশু খ্রীষ্টে বিশ্বাস দ্বারা যাহারা বিশ্বাস করে, তাহাদের সকলের প্রতি বর্তে- কারণ প্রভেদ নাই; কেননা সকলেই পাপ করিয়াছে এবং ঈশ্বরের গৌরব-বিহীন হইয়াছে- উহারা বিনামূল্যে তাঁহারই অনুগ্রহে, খ্রীষ্ট যীশুতে প্রাপ্য মুক্তি দ্বারা, ধার্মিক গণিত হয়। তাঁহাকেই ঈশ্বর তাঁহার রক্তে বিশ্বাস দ্বারা প্রায়শ্চিত্ত বলিরূপে প্রদর্শন করিয়াছেন; যেন তিনি আপন ধার্মিকতা দেখান- কেননা ঈশ্বরের সহিষ্ণুতায় পূর্বকালে কৃত পাপ সকলের প্রতি উপেক্ষা করা হইয়াছিল- যেন এক্ষণে যথাকালে আপন ধার্মিকতা দেখান, যেন তিনি নিজে ধার্মিক থাকেন, এবং যে কেহ যীশুতে বিশ্বাস করে, তাহাকেও ধার্মিক গণনা করেন। অতএব শ্লাঘা কোথায় রহিল? তাহা দূরীকৃত হইল। কিরূপে ব্যবস্থা দ্বারা? কার্যের ব্যবস্থা দ্বারা? না; কিন্তু বিশ্বাসের ব্যবস্থা দ্বারা। কেননা আমাদের মীমাংসা এই যে, ব্যবস্থার কার্য ব্যতিরেকে বিশ্বাস দ্বারাই মনুষ্য ধার্মিক গণিত হয়। ঈশ্বর কি কেবল যিহূদীদের ঈশ্বর, পরজাতীয়দেরও কি নহেন? হাঁ, পরজাতীয়দেরও ঈশ্বর, কেননা বাস্তবিক ঈশ্বর এক, আর তিনি ছিন্নত্বক লোকদিগকে বিশ্বাস হেতু, এবং অচ্ছিন্নত্বক লোকদিগকে বিশ্বাস দ্বারা ধার্মিক গণনা করিবেন।”
রোমীয় ৪:৩-৮ এবং ২৪ পদ, “কিন্তু ঈশ্বরের কাছে নাই; কেননা শাস্ত্রে কি বলে? “অব্রাহাম ঈশ্বরে বিশ্বাস করিলেন, এবং তাহা তাঁহার পক্ষে ধার্মিকতা বলিয়া গণিত হইল। যে কার্য করে, তাহার বেতন ত তাহার পক্ষে অনুগ্রহের বিষয় বলিয়া নয়, প্রাপ্য বলিয়া গণিত হয়। কিন্তু যে ব্যক্তি কার্য করে না- তাঁহারই উপরে বিশ্বাস করে, যিনি ভক্তিহীনকে ধার্মিক গণনা করেন- তাহার বিশ্বাসই ধার্মিকতা বলিয়া গণিত হয়। এই প্রকারে দায়ূদও সেই ব্যক্তিকে ধন্য বলিয়া উল্লেখ করেন, যাহার পক্ষে ঈশ্বর কার্য ব্যতিরেকে ধার্মিকতা গণনা করেন, যথা, “ধন্য তাহারা যাহাদের অধর্ম ক্ষমা হইয়াছে, যাহাদের পাপ আচ্ছাদিত হইয়াছে; ধন্য সেই ব্যক্তি, যাহার পক্ষে প্রভু পাপ গণনা করেন না।” . . ২৪ পদ “আমাদের পক্ষেও তাহা গণিত হইবে, কেননা যিনি আমাদের প্রভু যীশুকে মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপিত করিয়াছেন, আমরা তাঁহার উপরে বিশ্বাস করিতেছি।”
রোমীয় ১০:৮-১৩ পদ, “কিন্তু ইহা কি বলে? সেই বার্তা তোমার নিকটবর্তী, তোমার মুখে ও তোমার হৃদয়ে রহিয়াছে, অর্থাৎ বিশ্বাসেরই সেই বার্তা, যাহা আমরা প্রচার করি। কারণ তুমি যদি ‘মুখে’ যীশুকে প্রভু বলিয়া স্বীকার কর, এবং ‘হৃদয়ে’ বিশ্বাস কর যে, ঈশ্বর তাঁহাকে মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপন করিয়াছেন, তবে পরিত্রাণ পাইবে। কারণ লোকে হৃদয়ে বিশ্বাস করে, ধার্মিকতার জন্য, এবং মুখে স্বীকার করে, পরিত্রাণের জন্য। কেননা শাস্ত্রে বলে, “যে কেহ তাঁহার উপরে বিশ্বাস করে, সে লজ্জিত হইবে না।” কারণ যিহূদী ও গ্রীক কোনো প্রভেদ নাই; কেননা তিনি সকলেরই একমাত্র প্রভু; যত লোক তাঁহাকে ডাকে সেই সকলের পক্ষে তিনি ধনবান। কারণ “যে কেহ প্রভুর নামে ডাকে, সে পরিত্রাণ পাইবে।”
এসব হয় এককভাবে শুধুমাত্র বিশ্বাস আর দয়া-অনুগ্রহের মধ্য দিয়েই, তবে হয় না . . দয়া/অনুগ্রহ আর এর সঙ্গে বিধি-ব্যবস্থার মিশ্রণে, আর হয় না . . বিশ্বাস আর এর সঙ্গে কর্মের মিশ্রণে।
রোমীয় ৪:১৩-১৬ পদ, “কারণ ব্যবস্থা দ্বারা নয়, কিন্তু বিশ্বাসের ধার্মিকতা দ্বারা অব্রাহামের বা তাঁহার বংশের প্রতি জগতের দায়াধিকারী হইবার প্রতিজ্ঞা করা হইয়াছিল। কেননা যাহারা ব্যবস্থাবলম্বী, তাহারা যদি দায়াধিকারী হয়, তবে বিশ্বাসকে নিরর্থক করা হইল, এবং সেই প্রতিজ্ঞাকে নিষ্ফল করা হইল। ব্যবস্থা ত ক্রোধ সাধন করে; কিন্তু যেখানে ব্যবস্থা নাই, সেখানে ব্যবস্থা লঙ্ঘনও নাই। এই জন্য উহা বিশ্বাস দ্বারা হয়, যেন অনুগ্রহ অনুসারে হয়। অভিপ্রায় এই, যেন সেই প্রতিজ্ঞা সমস্ত বংশের পক্ষে, কেবল ব্যবস্থাবলম্বী বংশের পক্ষে নয়, কিন্তু অব্রাহামের বিশ্বাসবলম্বী বংশেরও পক্ষে অটল থাকে; তিনি আমাদের সকলের পিতা।”
রোমীয় ১১:৬ পদ, “তাহা যখন অনুগ্রহে হইয়া থাকে, তখন আর কার্য হেতু হয় নাই; নতুবা অনুগ্রহ আর অনুগ্রহই রহিল না।”
এখন পরিত্রাণের নিশ্চয়তার কথা।
প্রথমত, বিশ্বাসীদের ধার্মিক গণিত হওয়া অর্থাৎ নির্দোষ হওয়ার কথা বলা হয়েছ।
রোমীয় ৫:১ পদ, “অতএব, বিশ্বাস হেতু ধার্মিক গণিত হওয়াতে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা আমরা ঈশ্বরের উদ্দেশে সন্ধি লাভ করিয়াছি।” এরপর তাদের আর ঈশ্বরের মধ্যে শান্তি হয়েছে, যা ঐ রোমীয় ৫:১ পদে লেখা আছে।
এরপর তারা স্থিরভারে দয়া ও অনুগ্রহের পথে চলছে,
রোমীয় ৫:২ পদ, “আর তাঁহারই দ্বারা আমরা বিশ্বাসে এই অনুগ্রহের মধ্যে প্রবেশ লাভ করিয়াছি, যাহার মধ্যে দাঁড়াইয়া আছি, এবং ঈশ্বরের প্রতাপের প্রত্যাশায় শ্লাঘা করিতেছি।” তাদের থাকে অনন্তকালীন চিরকাল স্থায়ী পরিত্রাণের নিশ্চয়তা।
রোমীয় ৫:২,৯,১০ পদ, “আর তাঁহারই দ্বারা আমরা বিশ্বাস এই অনুগ্রহের মধ্যে প্রবেশ লাভ করিয়াছি, যাহার মধ্যে দাঁড়াইয়া আছি, এবং ঈশ্বরের প্রতাপের প্রত্যাশায় শ্লাঘা করিতেছি।” ৯ পদ, “সুতরাং সম্প্রতি তাঁহার রক্তে যখন ধার্মিক গণিত হইয়াছি, তখন আমরা কত অধিক নিশ্চিত যে, তাঁহা দ্বারা ঈশ্বরের ক্রোধ হইতে পরিত্রাণ পাইব।” ১০ পদ, “কেননা যখন আমরা শত্রু ছিলাম, তখন যদি ঈশ্বরের সহিত তাঁহার পুত্রের মৃত্যু দ্বারা সম্মিলিত হইলাম, তবে সম্মিলিত হইয়া কতো অধিক নিশ্চিত যে, তাঁহার জীবনে পরিত্রাণ পাইব।” তারা ঈশ্বরের সুরক্ষিত তত্ত্বাবধানে থাকে।
রোমীয় ৫:৩,৪ পদ, “কেবল তাহা নয়, কিন্তু নানাবিধ ক্লেশেও শ্লাঘা করিতেছি, কারণ আমরা জানি, ক্লেশ ধৈয্যকে, ধৈর্য পরীক্ষাসিদ্ধতাকে এবং পরীক্ষাসিদ্ধতা প্রত্যাশাকে উৎপন্ন করে”। তাদের থাকে পবিত্র আত্মার বায়না/অঙ্গীকার।
রোমীয় ৫:৫ পদ “আর প্রত্যাশা লজ্জাজনক হয় না, যেহেতু আমাদিগকে দত্ত পবিত্র আত্মা দ্বারা ঈশ্বরের প্রেম আমাদের হৃদয় সেচিত হইয়াছে।”
পরিত্রাণে যা থাকে।
শুধুমাত্র বিশ্বাস/আস্থা-ই হলো ঈশ্বরের চমৎকার পরিত্রাণে প্রবেশের দ্বার। ক্ষমা পাওয়ায় এবং খ্রীষ্টেতে অনন্ত আশির্বাদে আশির্বাদিত পরিত্রাণপ্রাপ্তরা কৃতজ্ঞচিত্তে ঈশ্বরের সেবা/পরিচর্যা করতে শুরু করেন, তাদের সম্পূর্ণ আর নিখুঁতভাবে পরিত্রাণ করার উদ্দেশে নয়, কারণ তারা ইতিমধ্যেই উদ্ধার পেয়েছি তাই।

Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?