আমাদের কার কাছে পাপ স্বীকার করা উচিত? To whom should we confess?

আপনি স্মরণ করে দেখুন যে শিষ্যেরা যখন যীশুকে তাদের প্রার্থনা করতে শিক্ষা দিতে অনুরোধ করেছিলেন, তখন তিনি বলতে শুরু করেছিলেন, 

মথি ৬:৯-১৪ পদ
“অতএব তোমরা এই মত প্রার্থনা করিও, “হে আমাদের স্বগর্স্থ পিতঃ . . .”
 

যীশু তাদের শিক্ষা দিয়েছেন আর এই শিষ্যদের মাধ্যমে আমাদেরও শিক্ষা দেবার জন্য শিক্ষা দিয়েছিলেন, যে আমাদের প্রার্থনা সরাসরি পিতা ঈশ্বরকে উদ্দেশ্য করেই উৎসর্গ করতে হবে।
এই প্রার্থনাতে আমাদের পিতার প্রতি পিতার মুখোমুখি হওয়া।

যীশু আরও বলতে থাকলেন . . মথি ৬:১২ পদ
আর আমাদের অপরাধ সকল ক্ষমা কর, যেমন আমরাও আপন আপন অপরাধীদিগকে ক্ষমা করিয়াছি
 ” 

আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তিনি নিজেই পিতা ঈশ্বরের কাছে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ প্রার্থনা উৎসর্গ করতে শিক্ষা দিয়েছেন আর আমাদের জন্য তাঁর ক্ষমা পাবার অনুরোধ করতে আমাদেরও শিক্ষা দিয়েছেন।

লূক ১১:৪ পদে বিষয়টা এভাবে প্রকাশ করেছেন,
“আর আমাদের পাপ সকল ক্ষমা কর; কেননা আমরাও আপনাদের প্রত্যেক অপরাধীকে ক্ষমা করি”

আমরা সরাসরি পিতা ঈশ্বরের কাছে আমাদের পাপ স্বীকার করি আর সেজন্য আমরা মানুষের গতানুগতিক ইচ্ছানুযায়ী অন্যরকমভাবে করতে চাইনা, শুধু যেভাবে যীশু তাঁর শিষ্যদের শিক্ষা দিয়েছেন ঠিক সেভাবেই।

এই ছিল প্রথম শতাব্দীর মণ্ডলীর তাদের পাপ স্বীকার করার স্বাভাবিক ও নিয়মমাফিক প্রথা।
কিন্তু ১২২৫ অব্দে কাথলিক ধর্মতত্ত্বে পুরোহিতদের কাছে পাপ স্বীকার করার প্রথা রীতিমাফিক পরিবর্তন করা হয় আর এটা একটা বিশেষ স্থান দখল করে বসে।
পুরোহিতরা এর কিছু আগে থেকেই পাপ স্বীকার শ্রবণ কার্যে মনোনিবেশ করা শুরু করেছিলেন, কিন্তু এনারা লোকদের নিজেদের পাপ ক্ষমার দাবি করা দৃঢ়ভাবে বলার চেয়ে বরঞ্চ তারা ঐসব লোকদের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা উৎসর্গ করতে আরম্ভ করলেন, যেমন বর্তমানে তারা তাই করে আসছেন।

তাদের তৈরি পাপস্বীকারের রীতি বিধিসম্মত সমর্থন পাবার জন্য কিছু কিছু পুরোহিত যোহনের সুসমাচারের অংশ তুলে ধরেন, যেমন সেখানে লেখা আছে,

যোহন ২০:২১-২৩ পদ
“. . . পিতা যেমন আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন, তদ্রূপ আমিও তোমাদিগকে পাঠাই। ইহা বলিয়া তিনি তাঁহাদের উপরে ফুঁ দিলেন, আর তাঁহাদিগকে কহিলেন, পবিত্র আত্মা গ্রহণ কর; তোমরা যাহাদের পাপ মোচন করিবে, তাহাদের মোচিত হইল; যাহাদের পাপ রাখিবে, তাহাদের রাখ হইল।”   

এখানে লক্ষ্যনীয় প্রথম বিষয়টি হলো যে এই বাক্যগুলো কেবল প্রেরিতদের বা অন্য কোনো বিশেষ শ্রেনীর লোকদের জন্য বলা হয়নি, কিন্তু খ্রীষ্টের প্রতিটি অনুসারীদের জন্যই বলা হয়েছে যারা ঐ সময়ে একসঙ্গে থাকতেন।
পাপের ক্ষমা করা এটি কোনো যাজক, বিশপ, পরিসেবক বা পুরোহিতদের অধিকার নয়, কিন্তু সকল বিশ্বাসীবর্গের মধ্যে বিস্তার লাভ করেছে।

আমরা অবশ্যই আরও কিছু জানতে চাইবো, যীশুর কথার স্পষ্ট অর্থ কেমন করে সেখানে উপস্থিত থাকা লোকদেরকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল?
তারা তা পালন করার জন্য কী করেছিলেন?
তারা স্পষ্টত তখনই বুঝেছিলেন যে লোকেরা মুক্তিদাতারূপে যখন খ্রীষ্টেতে বিশ্বাস করে তখনই তাদের পাপ ক্ষমা হয়, এ কারণে তারা বাইরে গিয়ে সেই সুসংবাদটি প্রচার করেছেন যে খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাস অর্থাৎ আস্থা, ভরসা ও নির্ভরতায় আমাদের পাপমোচন হয়েছে
(পাঠ করুন : প্রেরিত ২:৩৭-৩৮; ১০:৪৩ পদ)।
তারা বাহিরে গোপন স্থানে গিয়ে কারোর পাপ স্বীকারের কথা শুনতে কান পাতেনি, কাউকে বলেওনি যে তারা নিজেরাই পাপসমূহের মোচন বা ক্ষমা করেন।

প্রাথমিক যুগের খ্রীষ্টিয়ানেরা কী করেছিল তার ইতিহাস হলো এই প্রেরিতদের কার্য-বিবরণী পুস্তক, আর ঈশ্বর কীভাবে তাদের মাধ্যমে সেই সময়ে সুসমাচার ছড়িয়ে ছিলেন তা এতে দেখানো হয়েছে।
এসব বুঝতে যদি আপনার এখনও সন্দেহ থাকে, আপনি যত্ন সহকারে এই পুস্তকটা পাঠ করলে সবকিছু বুঝতে পারবেন।

আমরা যোহন লিখিত সুসমাচারের ২০ অধ্যায় থেকে ২১-২৩ পদগুলো পরীক্ষা করে দেখেছি, এছাড়াও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সুসমাচার . .

লূক ২৪:৪৬-৪৮ পদের পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যা হলো :
“আর তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, এইরূপ লিখিত আছে যে, খ্রীষ্ট দুঃখভোগ করিবেন, এবং তৃতীয় দিনে মৃতগণের মধ্য হইতে উঠিবেন; আর তাঁহার নামে পাপমোনার্থক মন পরিবর্তনের কথা সর্বজাতির কাছে প্রচারিত হইবে - যিরূশালেম হইতে আরম্ব করা যাইবে। তোমরাই এই সকলের সাক্ষী।”

খ্রীষ্ট এখানে মনপরিবর্তনের অর্থাৎ অনুতাপ, অনুশোচনা ও মন-ফিরানোর প্রচার সম্পর্কে কথা বলেছেন আর পাপমোচনের কথা বলেছেন কিন্তু মানুষের কাছে আমাদের পাপকর্মের স্বীকারোক্তি সম্পর্কে বলেন নাই।

এখন জানতে চাইতে পারেন, “তাহলে যারা তখন তাঁর কথায় কর্ণপাত করেছিলেন অর্থাৎ মনোযোগ দিয়েছিলেন তারা কী করেছিলেন?”

এর উত্তর পেতে বাইবেল পাঠ করলে, আমরা সহজে দেখতে পারি আমাদের প্রভু কী বোঝাতে চেয়েছেন:
খ্রীষ্টের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়া, আর তাঁর প্রদানকৃত পরিত্রাণ প্রচার করা হলো তাই যা তারা জানতে পেরেছিলেন এবং খ্রীষ্ট তাদের তা করতে বলেছিলেন, আর এই হলো তাই যা তারা করেছিলেন।

কাথলিক পুরোহিতদের দ্বারা জনগণের পাপকর্মের স্বীকারোক্তি শোনার প্রথা মণ্ডলীতে এর শত শত বৎসর পরে উদয় হয়।

আপনি জানতে চাইতে পারেন,
 “আমাদের পাপকর্মের স্বীকারোক্তির প্রয়োজন আছে কি, বা নাই?
হ্যাঁ! প্রতিটি খ্রীষ্টিয়ানরই তাদের পাপসমূহ স্বীকার করা উচিৎ, তবে কোনো মানুষের কাছে আমাদের পাপকর্মের স্বীকারোক্তি দেওয়া যোগ্য বলে বিবেচনা করা উচিৎ নয়, কেননা পাপ ক্ষমার ক্ষমতা একমাত্র ঈশ্বরেরই আছে।

প্রেরিত যোহন লিখেছেন, ১যোহন ১:৯ পদ, 
“যদি আমরা আপন আপন পাপ স্বীকার করি (if we confess our sins), তিনি বিশ্বস্ত ও ধার্মিক , সুতরাং আমাদের পাপ সকল মোচন করিবেন এবং আমাদিগকে সমস্ত অর্ধামিকতা হইতে শুচি করেবেন” 

ঈশ্বরের কাছে আমাদের পাপসমূহ স্বীকার করার প্রেরণা বা উপদেশ স্পষ্টভাবে সম্পূর্ণ বাইবেল ভিত্তিক, কিন্তু ঘটনাচক্রে, প্রায় সকল অনুবাদের "confess" কথাটি প্রয়োগ করতে সেখানে কিনা acknowledge কথাটির ব্যবহারে এক প্রকার ভুল-বোঝাবুঝি হচ্ছে।
 এছাড়া, আপনি শাস্ত্রের পদগুলো আগে পাঠ করলে, আপনি দেখবেন যে বিশ্বস্ত ও ধর্মময় তিনি স্পষ্টত ঈশ্বরকে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঈশ্বরের কাছে অবশ্যই আমাদের সকল পাপ স্বীকার করতে হবে, ঈশ্বরের প্রতি নির্ভরতায় আমাদের ক্ষমা করার জন্য খ্রীষ্টের রক্তের ভিত্তিতে হয়েছে যা আমাদের পাপের জন্য ঝরিত হয়েছিল।

আমরা যেভাবে তাঁর উপর নির্ভর করি, আমরা সেভাবেই তাঁর বাক্যে পাব  যেভাবে বলা হয়েছে পাঠ করুন . .  

১ যোহন ১:৯ পদ
- “বিশ্বস্ত ও ধর্মময় তিনি! - তিনি আমাদের পাপমোচন সাধন করবেন ও সমস্ত অধর্ম থেকে আমাদের শোধন করিবেন” 

যদি আমরা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাপ করে থাকি, বাইবেল শিক্ষা দেয় যে এমনকি ক্ষমার জন্য তার কাছেও অনুরোধ করবো।
সেভাবে যদি আমি কোনো পালক বা পুরোহিতের বিরূদ্ধে পাপ করে থাকি, আমাকে অবশ্যই সেই পাপ তার কাছে স্বীকার করা উচিৎ ঠিক সেরকমভাবে ঈশ্বরের কাছেও স্বীকার করবো।

কখনও-কখনও এমনও সময় হয় যখন আমরা যা করে থাকি সে সম্পর্কে অন্য কারোর কাছে বলা আমাদের প্রয়োজন হয়।

ঈশ্বরের কাছে পাপকর্মের স্বীকারোক্তির পরিবর্তে যাজক বা পুরোহিতের কাছে পাপকর্মের স্বীকারোক্তি দেওয়ার চিন্তা বা ধারণা যতোই হোক না কেন শাস্ত্রে তা কখনও পাওয়া যায় না।

দায়ূদ তার পাপের জন্য চেতনাপ্রাপ্ত হয়ে পিতা ঈশ্বরের কাছে ক্ষমার জন্য প্রার্থনা করেছেন
(পাঠ করুন : গীতসংহিতা ৫১:১-১০ পদ)।

অনুতাপিনী স্ত্রীলোকের পাপ যীশু ক্ষমা করেছেন ( পাঠ করুন : লূক ৭:৪৮ পদ)।
আপন পাপ স্বীকারে বিশ্বস্ত ও ধার্মিক ঈশ্বর আমাদের সকল পাপ মোচন করেন (পাঠ করুন: ১যোহন ১:৮-৯ পদ)। 

আপনার স্বর্গস্থ পিতার কাছে সরাসরি প্রার্থনা উৎসর্গ করুন, তাঁর কাছে সকল পাপ স্বীকার করুন যা আপনি স্মরণে রেখে নিজেকে দায়ী করতে পারছেন, আর নির্ভর করুন যে আপনার ঐসব প্রতিটা পাপের জন্য খ্রীষ্ট পরিশোধ করেছেন।
এরপর ভবিষ্যতে, যখন আপনি কোনো প্রকার পাপে পতিত হন, আপনি তৎক্ষনাৎ সেই পাপ ঈশ্বরের কাছে ঠিক একইভাবে স্বীকার করুন।

সুসমাচার প্রচারক Thomas F. Heinze মিশনারিরূপে ত্রিশ বছরেরও বেশী ইতালিতে ছিলেন।
তাঁর লেখা "Answers to my Catholic Friends" বইটির শেষ ৬১ পৃষ্ঠায় উপসংহারে লিখেছেন যে “ঈশ্বর তাঁর দেওয়া পরিত্রাণকে গ্রহণ করতে সকলকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন।
মানুষদের যে-কোনো পদ্ধতি বা নিয়মবদ্ধ রীতিতে চলতে থাকা হবে বোকার মত কাজ যা ঈশ্বরের বাক্যকে পরিত্যাগ বা সরিয়ে রাখা হয়েছে আর যা-কিনা একদম অমিল ও আলাদা।
রোমান কাথলিক মণ্ডলীতে সত্যিকারে, প্রকৃত কোনো পরিত্রাণ নেই।”
তিনি আরও লিখেছেন যে . . .
“আমি পর্যটক হিসাবে একদিন রোম নগরের প্রসিদ্ধ Saint Peter Church এর মধ্য দিয়ে হাটছিলাম, ঐ সময়ে একদল স্কুলের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে তাদের সঙ্গে মিশে গেলাম এজন্য যেন আমি পুরোহিতের কথা শুনতে পারি যিনি তাদের ঐ ভবনের আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট ব্যাখ্যা করতে পরিচালিত করছিলেন।
বেজমেন্ট অর্থাৎ ভবনের ভিত্তির নীচে একটি কৌতুহলী ঘটনা ঘটলো যখন আমরা ২৩তম পোপ জনের কবর স্তম্ভের কাছে এলাম, পুরোহিত ছেলেমেয়েদের সবাইকে জানুপেতে ঐ মহান পোপের প্রাণের জন্য প্রার্থনা করতে বললেন যেন তার প্রাণ অচিরেই ঐ পারগেটরী হতে মুক্তি লাভ করে।

সকল সুফলের উদ্দেশ্য, আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনার নিজের পাপের জন্য যথোপযুক্তভাবে পরিশোধ করতে সবচেয়ে ভালো ঐ রোমান নিয়মবদ্ধ রীতি বা প্রথানুসারে কর্মের দ্বারা পরিত্রাণের চেষ্টা করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি পারগেটরীতে জ্বলতে থাকবেন।
এ ধরণের পদ্ধতি বা নিয়মবদ্ধ রীতেতে থাকা অবস্থায় এমনকি বিশিষ্ট পোপদের পরিত্রাণ পাবার নিশ্চয়তা যেখানে দেওয়া যায় না সেক্ষেতে আপনি কেন সুনিশ্চিত ও একমাত্র পরিত্রাণের দিকে ফিরছেন না যা-কিনা ঈশ্বর যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে প্রদান করেছেন।

যীশু বলেন, যোহন ১৪:৬ পদ 
“আমিই সেই পথ, সেই সত্য, সেই জীবন! পিতার কাছে কেউই যেতে পারে না, যদি না সে আমার মধ্য দিয়ে যায়” 

ঈশ্বর আপনাকে ভালোবাসেন এবং যীশু খ্রীষ্ট আপনার স্বর্গে প্রবেশের জন্য সম্পূর্ণরূপে যোগান দিয়েছেন।
তিনি আপনাকে আমন্ত্রণ জানান খ্রীষ্টেতে বিশ্বাস স্থাপন করতে, আস্থা রাখার জন্য যে তিনি মুক্তি দেন।
আপনি এখনই প্রার্থনায় মাথা নত করেন না কেন?
আর খ্রীষ্ট আপনাকে রক্ষা করতে ও আপনার প্রভুরূপে তাঁকে অনুসরণ করতে এখনই কেন সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিশ্বাস করেন না।
ঈশ্বরের সঙ্গে আপনার প্রাণের শান্তি পাওয়ার ও আপনার প্রাণের মুক্তির জন্য এটাই একমাত্র পথ।

রোমীয় ৫:১ পদ  
“. . . বিশ্বাসগুণে ধর্মময় হয়ে উঠে, আমাদের প্রভু যীশুখ্রীষ্ট দ্বারা আমরা এখন ঈশ্বরের সঙ্গে শান্তি ভোগ করি”  আমেন

Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?