বড়দিনের তাৎপর্য। লেখক : আমোষ দেউড়ী

ভূমিকাঃ

বড়দিন বা ক্রিসমাস হচ্ছে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা। ঈশ্বর তার একমাত্র পুত্রকে জগতে প্রেরণ করেছিলেন। ঈশ্বর মানুষের পরিত্রানের জন্যে স্থানটি তৈরী করেছিলেন যেন তাঁর জন্মস্থান বৈৎলেহম থেকে কালভেরীর রক্তঝরা পথ অতিক্রম পাপী মানুষের মুক্তির পথ উম্মোচন করেন। বড়দিন এমন একটি সেই ঘটনা যার মধ্য দিয়ে বাইবেলের এই সত্য প্রমাণ হয়, ঈশ্বরের মধ্যে যা মূর্খতা বলে মনে হয় তা মানুষের জ্ঞানের চেয়ে অনেক বেশী জ্ঞানপূর্ন, আর যা দুর্বলতা বলে মনে হয় তা মানুষের শক্তির চেয়ে অনেক বেশী শক্তিপূর্ণ,’’ (করিঃ :১৫ পদ) বড়দিনের সেই ঘটনা যে ঘটনা সমস্ত ঘটনার চেয়ে উত্তম ঘটনা যা সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তাঁর ইচ্ছা করে সম্পন্ন করেছেন যা মানুষের চিন্তার, যুক্তির, জ্ঞান বুদ্ধির অতীত। এই রচনায় ক্ষুদ্র পরিষরে বড়দিনের তাৎপর্য আলোচনা করা হবে।

খ্রীষ্টের
জন্মের পটভূমিকা :
পবিত্র বাইবেল আমাদের শিক্ষা দেয় ‘‘কিন্তু সময় পূর্ণ হলে পর ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে পাঠিয়ে দিলেন। সেই পুত্র স্ত্রীলোকের গর্ভে জন্ম গ্রহন করলেন এবং আইন-কানুনের অধীনে জীবন কাটালেন,’’ (গালাতীয় :৪ পদ) অর্থাৎ খ্রীষ্টর জন্মের জন্য ঈশ্বরের নিদিষ্ট সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে যে সময়ে তিনি তাঁর পুত্রকে পাঠানোর জন্যে রাজনৈতিক, ভৌগলিক, যোগাযোগ, দার্শনিক ধর্মীয় পরিবেশের সৃষ্টি করেছেন। রাজনৈতিকভাবে খ্রীষ্টের জন্মস্থান প্যালেষ্টাইন রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। সম্রাট আগস্ত কৈসর তৎকালীন রাজ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। কথিত আছে তিনি আশ্চর্য অর্থাৎ তার শাসনকাল রোমীয় শান্তি নামে অবহিত করা হয়ে থাকে। তাঁর সময়ে ভৌগলিক যাতায়াত ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়। তিনি বড় বড় রাস্তা ইমারত তৈরী করেন। যার কারণে প্রভু যীশু খ্রীষ্টের বাণী সমস্ত পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। যেহেতু রোমানরা সব কিছু নিয়ন্ত্রন করত সেই কারণে কোন সীমানা ছিলনা। দার্শনিক ভাবে বলতে যিহূদী ধর্ম দর্শনের মধ্যে দুরত্ব ছিল তা দুর করতে সক্ষম হয়েছিল। সক্রেটিস, এরিষ্টটল প্লেটোর শিক্ষা মানুষকে সত্য ঈশ্বর সম্পর্কে ভাবতে সাহায্যে করেছেন। ধর্মীয় দিক দিয়ে যিহূদী জাতির জীবনে অনেক পরিবর্তন লক্ষিত হয়। আমাদের জানা প্রয়োজন ঈশ্বর ইসরায়েল জাতিকে মনোনীত করেছিলেন যেন তার মধ্য দিয়ে পৃথিবীর সমস্ত জাতিকে আর্শীবাদ করতে পারেন,’’ (আদি ১২:- পদ) কিন্তু তারা মূর্ত্তি পূজাসহ অনান্য মহা পাপে পতিত হয়। কিন্তু তারা যখন খ্রীষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে বাবিলের বন্দিত্ব থেকে ইস্রায়েল দেশে ফিরে আসে তখন তারা আর মূর্ত্তি পুজায় ফিরে যায়নি। তাছাড়া অধ্যাপক ইষ্রা পুরাতন নিয়মে পুস্তকগুলি অর্থাৎ জড়ানো পুস্তকগুলি (ঝঈজঙখখ) একত্র করেন। যার কারণে তাদের লিখিত পুরাতন নিয়ম ছিল। বাবিলনের বন্দিত্বের পর সমাজ ঘরের আরম্ভ হয় যেখানে ধর্মীয় শিক্ষার জন্য সমস্ত পৃথিবীতে একত্রিত হয়। যা ছিল সুসমাচার প্রচারের প্রকৃত সময়। সেজন্য যিহূদীরা সত্যিকারের ঈশ্বরের আরাধনা করত। তাই ধর্মীয় ভাবে যীশু আগমনের সময়টা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সাংষ্কৃতিক দিক থেকে আলেকজান্ডার দি গ্রেট গ্রীক ভাষা সাংষ্কৃতির সাথে সমসাময়িক বিশ্বের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। গ্রীক ভাষা ছিল সেই সময়ে অতি প্রচলিত ভাষা যা ভাষার বাধা ছাড়াই সুসমাচার জানা প্রচারের সূবর্ণ সুযোগ উম্ক্তু হয় যা ছিল সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের হস্ত।

প্রভু
যীশু খ্রীষ্টের জন্মের ভাববানী পূর্ণতা :
প্রথমতঃ জগত সৃষ্টির প্রারম্ভেই পিতা ঈশ্বর ভাববাণী করে ছিলেন তাঁর পুত্রের আগমন বাণী।
সেই ভাববাণীতে তিনি বলেছিলেন,‘‘আমি তোমার স্ত্রীলোকের মধ্য দিয়ে আমার বংশের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করব। সেই বংশের একজন তোমার মাথা পিষে দেবে আর তুমি তার গোড়ালীতে ছোবল মারবে অন্যভাবে প্রভুর বাণী আমাদের জানায় যে, নারীর গর্ভে একজন জন্মগ্রহন করবেন যিনি পুরুষের বংশ থেকে নয় কিন্তু নারীর বংশধর হিসেবে স্বীকৃত হবেন অর্থাৎ তিনি অলৌকিকভাবে পবিত্র আত্মার প্রভাবে জন্মগ্রহন করবেন। এই বাণীর পরিপূর্ণ দেখতে পাই গালাতীয় : পদ,’’ কিন্তু সময়ে পূর্ণ হলে পর তাঁর পুত্রকে পাঠিয়ে দিলেন। সেই পুত্র স্ত্রীলোকের গর্ভে জন্মগ্রহন করলেন এবং আইন কানুনের অধীনে জীবন কাটালেন।বাইবেল আরও সাক্ষ্য দেয়‘‘স্বর্গদূত তাঁকে বললেন, মরিয়ম, ভয় করোনা, কারণ ঈশ্বর তোমাকে খুব দয়া করেছেন। শোন, তুমি গর্ভবতী হবে আর তোমার একটি ছেলে সন্তান হবে। তুমি তাঁর নাম যীশু রাখবে। তিনি মহান হবেন। তাকে মহান ঈশ্বরের পুত্র বলা হবে,’’ (লূক :৩০-৩১ পদ)

দ্বিতীয়ত
: প্রভু যীশু কুমারীর ঘরে জন্মগ্রহন করবেন।
প্রভু যীশুর জন্মের প্রায় ৮০০ বৎসর পূর্বে নবী যিশাইয় এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন,‘‘ একজন কুমারী মেয়ে গর্ভবতী হবে, আর তাঁর একটি ছেলে হবে; তার নাম রাখা হবে ইম্মানূয়েল।এই বাণীর পূর্ণতা যীশুর জন্মের সাথে সাথেই পূর্ণতা পায়। ঈশ্বরের এক দূত স্বপ্নে যীশুর পালক পিতা যোষেফকে বলেছিলেন, ‘‘ যোষেফ, দায়ুদ সন্তান, তোমার স্ত্রী মরিয়মকে গ্রহণ করিতে ভয় করিও না, কেননা তাহার গর্ভে যাহা জন্মিয়াছে, তাহা পবিত্র আত্মা হইতে হইয়াছে, আর তিনি পুত্র প্রসব করিবেন, এবং তুমি তাঁহার নাম যীশু রাখিবে (ত্রাণকর্ত্তা) রাখিবে, কারণ তিনিই আপন প্রজাদিগকে তাহাদের পাপ হইতে ত্রাণ করিবেন। এই সকল ঘটিল, যেন ভাববাদী দ্বারা কথিত প্রভুর এই বাক্য পূর্ণ হয়,‘‘দেখ, সেই কন্যা গর্ভবতী হইবে, এবং পুত্র প্রসব করিবে, আর তাঁহার নাম রাখা যাইবে ইম্মানূয়েল’(মথি :২০-২৩ পদ)

তৃতীয়ত
: প্রভু যীশুর জন্মস্থান সম্পর্কে ভাববাণী।
খ্রীষ্ট পূর্ব ৮ম শতাব্দীর নবী ছিলেন মীখা। তিনি এইভাবে ভবষ্যিদ্বানী করেছিলেন ,‘‘আর তুমি, হে বৈৎলেহম-ইফ্রাথা, তুমি যিহূদার সহস্রগণের মধ্যে ক্ষুদ্র বলিয়া অগণিতা, তোমা হইতে ইসরায়েলের মধ্যে কর্ত্তা হইবার জন্য আমার উদ্দেশে এক ব্যক্তি উৎপন্ন হইবেন প্রাক্কাল হইতে, অনাদিকাল হইতে তাঁহার উৎপত্তি’ (মীখা :২ পদ) নবী ভাববাদী বলেছিলেন যে, বৈৎলেহমে যা রাজা দায়ুদের জন্মস্থান। সেখান থেকে একজন শাসনকর্তা আসবেন যার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করবেন। এই ভবিষ্যদ্বাণীর পূর্ণতা দেখতে পাই মথি : পদে, ‘হেরোদ রাজার সময়ে যিহূদীয়ার বৈৎলেহমে যীশুর জন্ম হইলে পর, দেখ, পূর্বদেশ হইতে কয়েক জন পন্ডিত যিরুশালেমে আসিয়া কহিলেন, যিহূদীদের যে রাজা জন্মিয়াছেন, তিনি কোথায়? কারণ আমারা পূর্বদেশে তাঁহার তারা দেখিয়াছি, তাঁহাকে প্রণাম করিতে আসিয়াছি। এই কথা শুনিয়া হেরোদ রাজা উদ্বিগ্ন হইলেন, তাহার সহিত সমুদয় যিরুশালেমও উদ্বিগ্ন হইল। আর তিনি সমস্ত প্রধান যাজক লোক সাধারনের অধ্যাপকগণকে একত্র করিয়া তাঁহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, খ্রীষ্ট কোথায় জন্মিবেন? তাহারা তাহাকে বলিলেন, যিহূদীয়ার বৈৎলেহমে, কেননা ভাববাদী দ্বারা এইরূপ লিখিত হইয়াছে, ‘‘আর তুমি, হে যিহূদা দেশের বৈৎলেহম, তুমি যিহূদার অধ্যক্ষদের মধ্যে কোন মতে ক্ষুদ্রতম নও, কারণ তোমা হইতে সেই অধ্যক্ষ উৎপন্ন হইবেন, যিনি আমার প্রজা ইসরায়েলকে পালন করিবেন।’’

চতুর্থত
: প্রভু যীশুর ব্যক্তিত্ব, কর্তৃত্ব ক্ষমতা সম্পর্কে ভাববাণী।
খ্রীষ্ট পূর্ব ৮ম শতাব্দীর নবী যিশাইয় যীশুর জন্ম, তাঁর পাঁচটি আশ্চর্য নাম মশীহ হিসাবে তাঁর কাজের বর্ণনা করেছিলেন। যেমন- যিশাইয় :- পদে ‘‘কারণ একটি বালক আমাদের জন্য জন্মিয়াছেন, একটি পুত্র আমাদিগকে দত্ত হইয়াছে, আর তাঁহারই স্কন্ধের উপরে কর্তৃত্বভার থাকিবে, এবং তাঁহার নাম হইবে-‘আশ্চর্য্য মন্ত্রী, বিক্রমশালী ঈশ্বর, সনাতন পিতা, শান্তিরাজ দায়ুদের সিংহাসন তাঁহার রাজ্যের উপরে কর্তৃত্ব বৃদ্ধির শান্তির সীমা থাকবে না, যেন তাহা সুস্থির সুদৃঢ় করা হয়, ন্যায় বিচারে ধার্মিকতা সহকারে, এখন অবধি অনন্তকাল পর্য্যন্ত বাহিনীগণের সদাপ্রভুর উদ্যোগ ইহা সম্পন্ন করিবে। এই ভবিষ্যদ্বাণীর পূর্ণতা শাস্ত্র বিভিন্নভাবে পুরণ করেন। যেমন : প্রেরিত, যোহন সুসমাচারে এইভাবে বলা হয়েছে,‘‘ আদিতে বাক্য ছিলেন, এবং বাক্য ঈশ্বরের কাছে ছিলেন, এবং বাক্য ঈশ্বর ছিলেন’(যোহন :) আমরা দেখি সেই বাক্য মানুষ হিসেবে জন্ম গ্রহন করেছেন। শাস্ত্র সম্পর্কে বলে, ‘‘আর সেই বাক্য মাংসে মুর্ত্তিমান হইলেন, এবং আমাদের মধ্যে প্রবাস করিলেন, আর আমরা তাঁহার মহিমা দেখিলাম, যেমন পিতা হইতে আগত একজাতের মহিমা, তিনি অনুগ্রহ সত্যে পূর্ণ। পাশাপাশি সাধু পৌল প্রভু যীশুর প্রকৃত স্বভাব সম্পর্কে বলেন, ‘‘কেননা তাঁহাতেই [খ্রীষ্ট যীশুতে] ঈশ্বরের সমস্ত পূর্ণতা দৈহিকরূপে বাস করে,’’ (কলসীয় : পদ) প্রভু যীশুর রাজত্ব সম্পর্কে শাস্ত্র এই কথা বলে, তিনি যাকোব কুলের উপরে যুগে যুগে রাজত্ব করিবেন, তাঁহার রাজ্যের শেষ হইবে না’(লূক :৩৩ পদ)

প্রভু
যীশু খ্রীষ্টের জন্মের উদ্দেশ্য :- বেশ কয়েকটি কারণে প্রভু যীশু খ্রীষ্টের জন্ম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথমত
: ঈশ্বরের গৌরব প্রকাশ করার জন্য।
নবী যিশাইয় প্রভু যীশুর জন্মের প্রায় ৮০০ বৎসর পূর্বে প্রভুর বাণী এই ভাবে বলেছিলেন, ‘‘ সদা প্রভুর প্রতাপ প্রকাশ পাইবে, আর সমস্ত মর্ত্ত্য একসঙ্গে তাহা দেখিবে, কারণ সদাপ্রভুর মুখ ইহা বলিয়াছে,’’ (যিশাইয় ৪০: পদ) খ্রীষ্টের জন্মের দৃশ্যে ঈশ্বরের গৌরব প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর জন্মের সময় স্বর্গদূতগণ ঈশ্বরের স্তবগান করে বলেছিলেন,‘‘ ঊর্দ্ধলোকে ঈশ্বরের মহিমা, পৃথিবীতে [তাঁহার] প্রীতি পাত্র মনুষ্যদের মধ্যে শান্তি’’ (লূক :১৪ পদ) তাছাড়া মেষ পালকেরা যখন মেষ পাল পাহাড়া দিচ্ছিলেন তখন ঈশ্বরের গৌরব চারিদিকে প্রকাশিত হয়েছিল (লূক :৯ পদ) প্রভু যীশুর মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে ঈশ্বরের মহিমা প্রকাশিত হয়েছে যা পরবর্তীতে যীশুর শিক্ষা চাক্ষুষ সাক্ষী হিসাবে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন,‘‘ কারণ আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের পরাক্রম আগমনের বিষয় যখন তোমাদিগকে জ্ঞাত করিয়াছিলাম, তখন আমরা কৌশলকল্পিত গল্পের অনুগামী হই নাই, কিন্তু তাঁহার মহিমার চাক্ষুষ সাক্ষী হইয়াছিলাম। ফলতঃ তিনি পিতা ঈশ্বর হইতে সমাদর গৌরব পাইয়াছিলেন, সেই মহিমাযুক্ত প্রতাপ কর্তৃক তাঁহার কাছে এই বাণী উপনীত হইয়াছিল, ‘ইনি আমার পুত্র, আমার প্রিয়তম, ইহাঁতেই আমি প্রীত,” (২পিতর :১৬-১৭ পদ)

দ্বিতীয়ত
: ঈশ্বরের শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করার জন্যে।
বইবেল এই কথা বলে, ‘ঈশ্বর পূর্বকালে বহুরূপে ভাববাদিগণে পিতৃ লোকদিগকে কথা বলিয়াছেন, এই শেষ কালে পুত্রেই আমাদিগকে বলিয়াছিলেন।’’ প্রভু যীশু মানুষের পরিত্রাণ বা মুক্তির জন্য যা যা প্রয়োজন তা মানুষের কাছে প্রকাশ করে ক্ষান্ত হননি বরং স্বর্গে যাবার পথ তাঁর রক্ত দ্বারা রচনা করেছেন। ঈশ্বর সম্পর্কে যা মানুষের জানা উচিত তাই প্রভু যীশু খ্রীষ্ট প্রকাশ করেছেন যেন পাপী তাঁকে বিশ্বাস করে পরিত্রান পায়। কারণ পবিত্রশাস্ত্র এই কথা বলে,‘‘ কিন্তু বাস্তবিক তিনি এক বার যুগপর্য্যায়ের পরিণামে, আত্মযজ্ঞ দ্বারা পাপ নাশ করিবার নিমিত্ত, প্রকাশিত হইয়াছেন,’’ (ইব্রীয় :২৬ পদ)

তৃতীয়ত
: ঈশ্বরকে প্রকাশ করার জন্য।
শাস্ত্র এই কথা বলে,‘‘ ঈশ্বরকে কেহ কখনও দেখে নাই, একজাত পুঁত্র যিনি পিতার ক্রোড়ে থাকেন, তিনিই [তাঁহাকে] প্রকাশ করিয়াছেন যীশু ছাড়া মানুষের কোন উপায় ছিলনা ঈশ্বরকে পরিপূর্ণভাবে জানার। পুরাতন নিয়মে শক্তিশালী নবী মোশি ঈশ্বরকে দেখতে চেয়েছিলেন কিন্তু তাঁর ইচ্ছা পূরণ হয়নি। অন্যদিকে প্রভু যীশুর শিক্ষা ফিলিপ যীশুকে ঈশ্বরকে দেখানোর কথা বলেছিলেন। উত্তরে যীশু বলেছিলেন, ফিলিপ, এতদিন আমি তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি, তথাপি তুমি আমাকে জান না? যে আমাকে দেখিয়াছে, সে পিতাকে দেখিয়াছে, তুমি কেমন করিয়া বলিতেছ, পিতাকে আমাদের দেখাউন,’(যোহন ১৪:-১০ পদ) প্রভু যীশুর জন্ম মানব জাতিকে ঈশ্বরকে দর্শন করার সুযোগ আনয়ন করেছে যার মধ্যে অনুগ্রহ সত্যে পূর্ণতা রয়েছে।

চতুর্থতত
: প্রভু যীশুর জন্মের উদ্দেশ্য ছিল পাপী মানুষকে উদ্ধার করা।
বাইবেল বলে, ‘‘কেননা সকলেই পাপ করিয়াছে এবং ঈশ্বরের গৌরব বিহীন হইয়াছে,’’ (রোমীয় :-৩ পদ) পৃথিবীতে এমন কেহ নাই যে পাপ করে নাই। মানুষ জন্ম থেকেই পাপী যেমনটি বাইবেল বলে, ‘‘দেখ, অপরাধে আমার জন্ম হইয়াছে, পাপে আমার মাতা আমাকে গর্ভে ধারণ করিয়াছিলে,’’ (গীত ৫১: পদ) প্রকৃতপক্ষে পাপি মানুষ পাপীকে পথ দেখাতে পারেন না। তাই এমন একজন দরকার যিনি পাপ করেন নাই, এবং পাপ জানেন নাই। সেই জন্য প্রভু খ্রীষ্টকে ‘‘যীশুনাম দেওয়া ছিল। কারণ তাঁর নামের অর্থ ‘‘ত্রাণকর্তাবা মুক্তিদাতা যিনি তাঁর প্রজাদের পাপ থেকে উদ্ধার করবেন (মথি :২৩ পদ) সম্পর্কে প্রভু যীশু বলেন, কারণ বাস্তবিক, মনুষ্যপুত্রও পরিচর্য্যা পাইতে আসেন নাই, কিন্তু পরিচর্য্যা করিতে এবং অনেকের পরিবর্ত্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে দিতে আসিয়াছেন,’’ (মার্ক ১০:৪৪-৪৫ পদ) পাপী মানুষকে উদ্ধার করার জন্য বাইবেল শিক্ষা দেয়, বলিদান বা রক্ত সেচন ব্যতিরেকে পাপের ক্ষমা হয় না,’’ (ইব্রীয় :২২ পদ) খ্রীষ্টিয় ধর্মতত্ত্ব অনুসারে শুধু অনুতাপ করলে হয় না দরকার বলিদানের। এক সময় ঈশ্বর পশু বলিদানের প্রথা সৃষ্টির শুরু করেছিলেন যা ছিল অস্থায়ী। তাই পশু বলিদান শেষ করার জন্যে যীশু কালের পরিণামে প্রকাশিত হয়ে নিজের জীবন কালভেরী ক্রুশে শেষ বলিদান করেছেন অনন্তকালীন মুক্তি অর্জনের জন্য। প্রভু যীশু জন্মের পূর্বে পিতা ঈশ্বরের সাথে তাঁর আলোচনায় বলেছিলেন, ‘‘এই কারণ খ্রীষ্ট জগতে প্রবেশ করিবার সময়ে বলেন, ‘‘যজ্ঞ নৈবদ্য ইচ্ছা কর নাই, কিন্তু আমার জন্য দেহ রচনা করিয়াছ, হোমে পাপার্থক বলিদানে তুমি প্রীত হও নাই। তখন আমি কহিলাম, দেখ, আমি আসিয়াছি, গ্রন্থখানিতে আমার বিষয় লিখিত আছে-হে ঈশ্বর, যেন তোমার ইচ্ছা পালন করি।’-উপরে তিনি কহেন, ‘‘যজ্ঞ, নৈবদ্য, হোম পাপার্থক বলিদান তুমি ইচ্ছা কর নাই, এবং তাহাতে প্রীতও হও নাই’-এই সকল ব্যবস্থানুসারে উৎসৃষ্ট হয়-তৎপরে তিনি বলিলেন, ‘‘দেখ, তোমার ইচ্ছা পালন করিবার জন্য আসিয়াছি।’’ তিনি প্রথম বিষয় লোপ করিতেছেন, যেন দ্বিতীয় বিষয় স্থির করেন। সেই ইচ্ছাক্রমে, যীশু খ্রীষ্টের দেহ একবার উৎস্বর্গ করণ দ্বারা, আমরা পবিত্রীকৃত হইয়া রহিয়াছি,’’ (ইব্রীয় ১০:-১০ পদ)

পঞ্চমতঃ
শয়তানের কার্য ধ্বংশ করার জন্য।
শয়তান যিনি ঈশ্বরের বিপক্ষ সৃষ্টির শুরু থেকেই ঈশ্বর তার প্রজাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। শয়তানের কাজ হচ্ছে মূলতঃ ঈশ্বরের সাথে মানুষের সম্পর্ক চ্যুত্ত করা। তাছাড়া শয়তানকে বলা হয়েছে, পরীক্ষক যিনি মানুষকে নানান পাপে প্রলোভিত পতিত করে। তাছাড়া শয়তান মানুষকে মৃত্যুর ভরে আক্রান্ত করে যা শয়তানের দাসত্ব করার। যেহেতু মানুষের রক্ত মাংসের দেহ আছে এবং এই দেহের পতন রয়েছে। তাই যীশুকে মানুষের দেহে আসতে হয়েছে যেন শয়তানকে শক্তিহীন ধ্বংশ করেন। প্রভুর বাক্য এই কথা বলে, ‘‘ভাল, সেই সন্তানগণ রক্ত-মাংসের ভাগী, তখন তিনি আপনিও তদ্রুপ তাহার ভাগী হইলেন, যেন মৃত্যু দ্বারা মৃত্যুর কর্ত্তৃত্ববিশিষ্ট ব্যক্তিকে অর্থাৎ দিয়াবলকে শক্তিহীন করেন, এবং যাহারা মৃত্যুর ভয়ে যাবজ্জীবন দাসত্বের অধীন ছিল, তাহাদিগকে উদ্ধার করেন। কারণ তিনিত দূতগণেনর সাহায্য করেন না, কিন্তু অব্রাহামের বংশের সাহায্য করিতেছেন। অতএব সর্ববিষয়ে আপন ভ্রাতৃগণের তুল্য হওয়া তাঁহার উচিত ছিল, যেন তিনি প্রজাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করিবার নিমিত্ত ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কার্য্যে দয়ালু বিশ্বস্ত মহাযাজক হন। কেননা তিনি আপনি পরিক্ষিত হইয়া দুঃখভোগ করিয়াছেন বলিয়া পরীক্ষিতগণের সাহায্যে করিতে পারেন,’’ (ইব্রীয় :১৪-১৮ পদ) প্রভুর বাক্য আরও সাক্ষ্য দেয়,‘‘শয়তানের কার্য ধ্বংশ করার জন্যেই ঈশ্বরের পুত্র প্রকাশিত হয়েছিলেন,’’ (১যোহন :৮ পদ) এটি আশ্চর্য বিষয় যে, খ্রীষ্টের মধ্য দিয়েই আক্রান্ত ব্যাক্তি শয়তানের কর্তৃত্ব থেকে রক্ষা পায়।

ষ্ঠত
: জন্ম হয়েছিল সর্বোচ্চ মানবীয় আর্দশ স্থাপন করার জন্যে।
প্রতিটি মানুষের কোন বা কোন মডেল বা আইডল থাকে যাকে মানুষ অনুসরণ করতে চায়। পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ যদি মানবীয় আর্দশ থাকে তবে ইতিহাস শাস্ত্র যীশুকে পবিত্র হিসাবে পাওয়া যায়। তাঁর কুমারী গর্ভে জন্মগ্রহণ, নির্দোষ, নিষ্কলংক জীবন যুগের পর যুগ ধরে মানুষকে তাঁর আর্দশ অনুসরণ করতে সাহায্য করছে। যীশু নিজেও দাবী করেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কে আমাকে পাপী বলিয়া প্রমাণ করিতে পারে? (যোহন :৪৬ পদ) প্রভু যীশু এমন এক আর্দশ রেখে গেছেন যেন প্রতিটি মানুষই যা অনুসরণ করে ধন্য হয়। যেমন সাধু পিতর বলেন, ‘‘কারণ তোমরা ইহারই নিমিত্ত আহূত হইয়াছ, কেননা খ্রীষ্টও তোমাদের নিমিত্ত দুঃখ ভোগ করিলেন, বিষয়ে তোমাদের জন্য এক আদর্শ রাখিয়া গিয়াছেন, যেন তোমরা তাঁহার পদচিহ্নের অনুগমন কর, ‘‘তিনি পাপ করেন নাই, তাঁহার মুখে কোন ছলও পাওয়া যায় নাই তিনি নিন্দিত হইলে প্রতিনিন্দা করিতেন না, দুঃখভোগ কালে তর্জ্জন করিতেন না, কিন্তু যিনি ন্যায় অনুসারে বিচার করেন, তাঁহার উপর ভার রাখিতেন,’’ (১পিতর :২১-২৩ পদ)

সপ্তমত
: মহাযাজকের দায়িত্ব পালন করার জন্যে।
মহাযাজকের দায়িত্ব হচ্ছে ঈশ্বর মানুষের মাঝে মধ্যস্ততা করা। ইসরায়েল জাতির ইতিহাসে মহাযাজকের ভূমিকা অত্যন্ত গভীর ছিল যারা প্রধান সর্বশেষ মহাযাজকের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন যিনি হবেন অনন্তকালীন মহাযাজক। পিতা ঈশ্বরের কাছে মধ্যস্ততা করার মত প্রভু যীশু ছাড়া আর কেউ নেই যিনি স্বর্গীয় মন্দিরে দাড়াঁতে পারেন। প্রভুর বাক্য সাক্ষ্য দেয়, ‘‘কারণ একমাত্র ঈশ্বর আছেন, ঈশ্বরের মনুষ্যদের মধ্যে মধ্যস্থও আছেন,’’ (১তীমথিয় : পদ) প্রভু যীশু যিনি মানুষের সমস্ত দুঃখ বোঝেন কারণ কারণ তাঁর জাগতিক জীবনে সমস্ত দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা, প্রলোভনের সম্মুখীন হয়েছিলেন। যেমটি প্রভুর বাক্য বলে, ‘‘ভাল, আমরা এক মহান্ মহাযাজককে পাইয়াছি, যিনি স্বর্গ সকল দিয়া গমন করিয়াছেন, তিনি যীশু, ঈশ্বরের পুত্র, অতএব আইস, আমরা ধর্মপ্রতিজ্ঞাকে দৃঢ়রূপে ধারণ করি। কেননা আমরা এমন মহাযাজককে পাই নাই, যিনি আমাদের দুর্ব্বলতা-ঘটিত দুঃখে দুঃখিত হইতে পারেন না, কিন্তু তিনি সর্ব্ববিষয়ে আমাদের ন্যায় পরীক্ষিত হইয়াছেন, বিনা পাপে,’’ (ইব্রীয় :১৪-১৫ পদ)

উপসংহার
:
বড়দিন, বড় ঘটনা প্রভু যীশুর জন্মদিন। সেদিনে স্বর্গ পৃথিবী মিলিত হয়েছে। ঈশ্বর তাঁর উপযুক্ত সময়ে মানব জাতির মুক্তির জন্যে সবচেয়ে বড় আর্শীবাদ তাঁর পুত্রকে পাঠিয়েছিলেন যেন মানুষের সমস্ত প্রয়োজন তাঁর মধ্য দিয়ে পূর্ণতা লাভ করে। প্রভু যীশু স্বর্গ ছেড়ে মাটির ঘরে এলেন, বসবাস করলেন, ক্রুশীয় মৃত্যু ভোগ করলেন স্বর্গারোহন করলেন এবং বর্তমানে পিতা ঈশ্বরের দক্ষিণ পাশে অবস্থান করছেন। তাঁর রাজত্বের শেষ নেই। তাঁর মধ্য দিয়ে যারা ঈশ্বরের কাছে উপস্থিত তারা কখনো লজ্জিত হবে না যেমনটি প্রভুর বাক্য বলে,‘‘ যে কেহ তাঁহার উপরে বিশ্বাস করে, সে লজ্জিত হইবে না,’’ (রোমীয় ১০:১১ পদ) আজকে পাঠকদের প্রশ্ন করতে চাই আপনি কী নিজেকে শূন্য মনে করেন? একজন পাপীতাপী মনে করেন? অবহেলিত মনে করেন? হয়ত ভাবছেন কেউ আপানাকে বোঝে না? ক্ষমা বা পরিত্রাণ অথবা স্বর্গে লাভে সন্দেহ? তাহলে বড়দিন আপনার জীবনে সমস্ত আর্শীবাদের উৎস হতে পারে। আপনি প্রভু যীশুকে বিশ্বাস করে স্বর্গীয় পরিবারে জন্ম নিতে পারেন, পাপের ক্ষমা অনন্ত জীবনে অধিকারী হতে পারেন। আমার আন্তরিক প্রার্থনা আপনি যেন বড়দিনের মহৎ উদ্দেশ্য বুঝতে পারেন। ঈশ্বর আপনার হৃদয় বুদ্ধির দ্বার উম্মোচন করে দিন।শুভ বড়দিনআমেন

Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?