নতুন বছরটি আমাদের সকলের জন্য আশির্বাদের হোক, নিয়ে আসুক সুখ ও শান্তি ।

নতুন বছরটি আমাদের সকলের জন্য আশির্বাদের হোক, নিয়ে আসুক সুখ ও শান্তি।

এক এক করে এযাবৎ বহু বছর পার করেছি, তেমনি গত বছরও ছিল। এসব বছরগুলোতে ছিল অনেক আনন্দ, অনেক অভিজ্ঞতা,  ছিল প্রেরণা ও উদ্দিপনা।

এমনকি আমাদের অনেকের প্রিয়জন, বন্ধুবান্ধব মারা গিয়েছেন। আবার অনেক পরিবারে নতুন শিশুর জন্মও হয়েছে। অবশ্যই বলতে হয় - ঈশ্বরের অনেক আশির্বাদ ছিল গত বছরটিতে।

নতুন বছরে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। 

আমাদের চারপাশে অনেকেই আছেন যারা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেন না, যীশু খ্রীষ্টকে পছন্দ করেন না, পবিত্র বাইবেলকে ভালো চোখে দেখেন না; তবুও আমরা দৃঢ়ভাবে আশা করছি এবং বিশ্বাস করছি যে এখনো কিন্তু ঈশ্বরভীত লোকেরা আছেন।

আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই তাদেরকে যারা ঈশ্বর-প্রেমিক ও ঈশ্বরভক্ত। আমরা শ্রদ্ধা জানাই তাদেরকে যারা তাদের পরিবারকে, মণ্ডলীকে কখনো জড়-জাগতিক অনুযায়ী চলতে দেন না।

অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যে খ্রীষ্টি বিশ্বাসীরা এমন-ই এক স্টাইলে জীবনযাপন করেন যাতে তারা সঠিকভাবে খ্রীষ্টের সাক্ষ্য দিতে সেই যোগ্যতা রাখেন।

সাধু পৌল কারাগারে থাকতে ফিলিপীয় মণ্ডলীকে উদ্দেশ্য করে একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন। কারণ মণ্ডলীতে কিছু কিছু ভ্রান্ত শিক্ষা চলতে থাকায় তিনি মানসিকভাবে অত্যন্ত অস্থির হয়ে পরেছিলেন। 

তিনি ফিলিপীয় মণ্ডলীকে লিখেছিলেন . . 
“কেবল, খ্রীষ্টের সুসমাচারের যোগ্যরূপে তাঁহার প্রজাদের মত আচরণ কর;” ফিলিপীয় ১:২৭ পদ। 

শাস্ত্রের এ অংশে লক্ষ্য করুন “যোগ্যরূপে” (politeuomal) কথাটি নাগরিকত্ব অর্থাৎ মানব সমাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। 

সাধু পৌলের কথা হলো যে, ‘আমার জীবনে যাই ঘটুক না কেন, তোমরা সব সময় প্রকৃত খ্রীষ্টিয়ানদের মতো জীবনযাপন কর, তোমাদের সঙ্গে আমার আর দেখা হয় বা না হয়, যেন সব সময় এই সুসংবাদ শুনি যে তোমরা এক মনপ্রাণ হয়ে পরষ্পরের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে সুভবার্তা প্রচার করে চলেছ’।

সমাজে চলতে আমাদের সেরকম যোগ্য আচরণে থাকা উচিত। 

প্রেরিত পৌল দৃঢ়তার সাথে তার এ কথায় সমস্ত বিশ্বাসীদের যোগ্য নাগরিকদের মত সেই আচরণে থাকার কথা বলেছেন। তিনি বিশ্বাসীদের আচরণের এক মাপকাঠি তুলে ধরেছেন। প্রেরিত পৌলের এ কথায় সেই একই সুর প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তিনি সারা জীবন সুসমাচার ছড়িয়ে দেবার জন্য প্রাণপণ করেছেন, এমনকি বন্দি জীবনেও থেমে থাকেননি। 

তাই যখনই আমরা আমাদের সঙ্গী, বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীদের সাথে কর্মে, পেশায়, কর্তব্যে ও দায়িত্বে থাকি, আমাদের নিজেদের খ্রীষ্টিয় সুন্দর সাক্ষ্য দিতে সেরকম যোগ্যরূপে, যোগ্য আচরণে থাকা উচিত। আমাদের যোগ্য আচরণে আমাদের সঙ্গী বন্ধু-বান্ধব আর সহকর্মীদের কাছে খ্রীষ্টকে সুপারিশ করা উচিত। আমাদের যোগ্য আচরণে খ্রীষ্টকে তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য করা উচিত। 

আমাদের সঙ্গী, বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীদেরকে জোর করে, চাপ দিয়ে খ্রীষ্টকে গ্রহণযোগ্য করানোর চেষ্টা করাটা ভুল। 

আমাদের দায়িত্ব হলো খ্রীষ্টকে উপস্থাপন করা, খ্রীষ্টকে তুলে ধরা আর ঠিক এভাবে আমাদের সঙ্গী, বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীরা প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে চিনতে পারবেন, তাঁর প্রতি আগ্রহী হবেন, তাঁকে গ্রহণ করতে ও তাঁকে স্বীকার করতে গুরুত্ব দেবেন এবং তাদের জীবনে এক বিশেষ পার্থক্য দেখতে পাবেন।

শাস্ত্র এখানে আমাদের আরও বলে যে “কেবল, খ্রীষ্টের সুসমাচারের যোগ্যরূপে তাঁহার প্রজাদের মত আচরণ কর; আমি আসিয়া তোমাদিগকে দেখি, কি অনুপস্থিত থাকি, আমি যেন তোমাদের বিষয়ে শুনিতে পাই যে, তোমরা এক আত্মাতে দৃঢ়স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে আছ, এক মন-প্রাণে সুসমাচারের বিশ্বাসের পক্ষে একসঙ্গে মল্লযুদ্ধ করিতেছ”

“মল্লযুদ্ধ করিতেছ”(sunathleo) কথাটি এখানে কোনো খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে বুঝানো হয়েছে। যেমন ফুটবল খেলায় খেলোয়াররা একেবারে নাছোরবান্দার মতো লেগে থাকে - তেমনি ঈশ্বরের শত্রুপক্ষের লোকদের প্রতিরোধ করতে একসাথে শক্তভাবে আক্রমণ করা, নিজের প্রাণকে বাজি রেখে শত্রুর মোকাবেলা করা। সেই লড়াইয়ের পরিণাম বিজয়, কারণ মৃত্যুঞ্জয়ী খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের সঙ্গে থাকেন, তাই স্থির ও অটলভাবে আমাদের সেই গুণ ও সেই তেজ থাকা উচিত। আগেরকার কোনো পুরানো বিষয় নিয়ে এগোনো যাবে না। খামখেয়ালিপনা, আবেগ বা দরদের স্থান এখানে দেওয়া যাবে না। “স্থির” হলো কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে নিজস্ব অবস্থানে দৃঢ়নিশ্চল থাকা। এর আরো অর্থ হলো অক্লান্ত, অবিরাম, একেবারে দৃঢ় চিত্তে অটল থাকা। তাছাড়া, নিজস্ব অবস্থানে দৃঢ়নিশ্চল থাকাটা হবে এক প্রাণে, তাই সবকিছুর মূলে শাস্ত্রীয় শিক্ষা এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

আরও বলা হয়েছে যে “এবং কোন বিষয়ে বিপক্ষগণ কর্তৃক ত্রাসযুক্ত হইতেছ না” (ফিলিপীয় ১:২৮ পদ)। 

অর্থাৎ শত্রুরা যাই করুক না কেন, তাতে ভয় পেও না। “বিপক্ষগণ” (বিরোধীরা) দক্ষতায় কৌশলে আর ক্ষমতায় খুব চাপ সৃষ্টি করতে পারে যা “ত্রাসযুক্ত” অর্থাৎ ভয়ের কারণ হতে পারে। কিন্তু আমাদেরকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে - আমরা যেন ভয়ে তাদের বশ না হই, আতঙ্কিত না হই। অর্থাৎ শত্রুরা যাই করুক না কেন, তাতে ভয় পেও না।  

ঈশ্বরের শত্রুরা আমাদেরকে ধাপ্পাবাজি ও ধোঁকা দিয়ে তাদের বশীভূত হতে, তাদের অধীনে থাকতে আর তাদের শাসনাধীনে রাখতে চায়। খ্রীষ্টের শত্রুরা মনে করে যে আমরা তাদের কারণে হুরমুর করে গর্তে গিয়ে লুকাবো। তারা হয়তো আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাসে প্রাণে বেঁচে থাকাটা সহ্য করতে পারে, কিন্তু তারা আমাদের চলাফেরা পছন্দ করে না। তারা তাদের চোখের সামনে আমাদের থাকাটা পছন্দ করে না, এমনকি আমাদের নাম তারা মুখে উচ্চারণও করতে চায় না।

বেশ, তবে ভালো খবর হলো, এরা হিসাবে ভুল করেছে। আমরা তাদের বিষয়ে ভীতু নই। আমরা আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আর নীতি-বোধ এড়িয়ে যাবো না। আমরা ঠিক বীরত্বের সঙ্গে সাহসী ও তেজীয়ান হবো আর ঠিক আজকের দিনের মতোই আগামী দিনেও উদ্দীপ্ত ও নির্ভয়ে থাকব। 

খ্রীষ্ট যীশুতে বিজয় নিশ্চিত আর সেই নিশ্চয়তাবোধ নিয়ে, দুঃখভোগকালে তাঁর প্রেমপূর্ণ সান্ত্বনা ও আত্মার সাহচর্য উপভোগ করতে করতে আর তা থেকে উৎপন্ন স্নেহ ও করুণায় ভরপুর হয়ে সুসমাচার বিস্তারের লক্ষ্যে একমানুষের মতো এগিয়ে যাওয়াই প্রভুর প্রজার উপযুক্ত আচরণ।

আসলে আমরা তাদেরকে আর তাদের ঐসব কৌশলকে গুরুত্ব দেই না। তাদের আমাদের ভয় দেখানো আমাদেরকে কখনো পিছিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না, আমাদের কাজকে কখনো বন্ধ করতে পারবে না।

একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হলেন ঈশ্বরের রাজ্যের নাগরিক, যেমন ইফিষীয় ২:১৯ পদে লেখা আছে যে আমরা ঈশ্বরের পরিবারের একজন, ঈশ্বরের রাজ্যের প্রজা। অর্থাৎ বিশ্বের আত্মিকভাবে প্রতিটি নতুন জন্মপ্রাপ্ত খ্রীষ্টিয়ানদের সঙ্গে আমরাও ঈশ্বরের বাড়ির লোক। 

প্রতিটি খ্রীষ্ট বিশ্বাসীর প্রভু হলেন যীশু, যেমন ফিলিপীয় ৩:২০ পদে লেখা আছে যে আমাদের মুক্তিদাতা ও প্রভু যীশু যেখানে আছেন সেই স্বর্গই আমাদের দেশ আর সেখান থেকে তাঁর পুনরুগমনের অপেক্ষায় আমরা আছি। একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হলেন ঈশ্বরের রাজ্যের নাগরিক যার প্রভু হলেন যীশু (ফিলিপীয় ৩:২০ পদ)। প্রতিটি খ্রীষ্টিয়ানের সংবিধান (গঠন তন্ত্র) হলো সুসমাচার। প্রতিটি খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা ঐশ্বরিক অনুগ্রহে সুসমাচারের যোগ্যরূপে জীবনযাপন করতে সক্ষম। 

খ্রীষ্টে আমাদের যে ঐক্য তার মূল বিষয়টি হলো খ্রীষ্টের যোগ্যরূপে চলা, এক আত্মাতে ও একই লক্ষ্যে স্থির হয়ে দাঁড়ানো, পরস্পরের সঙ্গে একত্রে যুদ্ধ করা, যাতে সুসমাচার এগিয়ে যায় আর তাঁর পক্ষ সমর্থন করা হয় আর যারা ক্রুশের শত্রু তাদের বিরুদ্ধে সমবেত প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায় আর সুসমাচারের সত্যের পক্ষ সমর্থন করা হয়। 

তাই আসুন খ্রীষ্টের যোগ্যরূপে ও তাঁর গণ্য হতে এই নতুন বছরে আরেকটিবার জেগে উঠি। 

আপনি যদি সেই যোগ্যরূপে থাকেন তো আপনাকে অভিনন্দন, আর যদি সম্ভব হয় আমাদের সকলের এই নতুন বছরে নতুন এক উদ্দীপনায় জীবন শুরু করা একটি ভালো সময়।

তাই খ্রীষ্টিয় উৎসবে লোকেরা শোভনীয় যা-কিছুই করে, আমাদেরও আন্তরিকতায় সেই রকম উৎসাহ ও উদ্দীপনায় থাকা উচিত।

আমরা তাই করব . . .

-  যেন আমাদের নতুন বছরের প্রথম দিনের আনন্দ সারাটি বছর-ই থাকে।

-  যেন আমরা সুসমাচারের সেই সাক্ষ্য দিতে থাকি যে - “আমি . . . সুসমাচার প্রচার করিতে উৎসুক। কেননা আমি  সুসমাচার সম্বন্ধে লজ্জিত নহি;” রোমীয় ১:১৪,১৫ পদ।

-  যেন আমরা গির্জায়, উপাসনা আরাধনায় সবসময়ই উপস্থিত থাকি। কোথাও যাওয়া, কারোর সঙ্গে দেখা করা কিংবা অন্য কোনো রকম কোনো কিছু আমাদের প্রভুর আরাধনা থেকে দূরে রাখতে পারবে না।

-   যেন ঈশ্বরের গৃহে আমাদের দান ও দশমাংশ দেওয়ার চিন্তা থাকে।

-   যেন খ্রীষ্টিয় সঙ্গতিপূর্ণ আলাদা একটি পরিবেশ আমার ঘরে ও পরিবারেই শোভা পায়।

-   যেন নেশা, অরুচিকর ও অবাধ্যতার অনেক কিছু আমার ঘর থেকে, আমার জীবন থেকে, আমার মুখ থেকে দূরে রাখি।

-   যেন আমাদের সমাজের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সব সময় সজাগ থাকি।

সকলের প্রতি আমাদের শুভ কামনা ও ভালোবাসা রইল আর রইল নতুন বছরের প্রীতি শুভেচ্ছা। ঈশ্বর আপনাকে আশির্বাদ করুন। আমেন!!

Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?