বড়দিন অবশ্যই আসছে . . জয়ধ্বনি সহকারে, তুরিধ্বনি সহকারে . .

একটি অসাধারণ ঘটনার মধ্য দিয়ে বড়দিন আজও একটি ঐতিসাহিক দলিলস্বরূপ টিকে আছে। ঈশ্বর মানব দেহে জগতে এসেছিলেন, কিন্তু একটি মহা বড়দিনের জন্য আমাদের এখনো অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সত্যিকারে খ্রীষ্টের প্রথম ও দ্বিতীয় আগমন বলতে গেলে একবোরে একই ধাঁচের। তবুও এমন একটি বড়দিন রয়েছে যা-কিনা আসছে। খ্রীষ্ট প্রথমবার এসেছিলেন একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে আর তা হলো পাপ সম্পর্কে। তিনি কোনো দেশের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য আসেননি কিংবা এ জগতেই বেঁচে থাকার জন্য কোনো জ্ঞান দিতে বা সে বিষয়ে কোনো পরামর্শ বা আলোচনা করতে আসেননি। তিনি প্রথম এসেছিলেন পাপের সমস্যার প্রসঙ্গে। তিনি এসেছিলেন মুক্তিদাতারূপে।

তিনি যখন প্রথমবার এসেছিলেন তখন তাঁর মুখের উপর পান্থশালার সমস্ত দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সজোরে রুদ্ধ করা সেই দ্বারের শব্দ ২০২২ বছর পরেও এখনো শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। তিনি আজও দরজার বাইরে আছেন। এমনকি এই বড়দিনের মাসে তাঁর জন্মের উৎসবে, তাঁকে দৃষ্টির বাইরে রাখা হচ্ছে। বাজার, মার্কেট, সুপারমার্কেট আর হকারদের হাকডাক চিৎকারে সে সব পান্থশালার সমস্ত দরজা সজোরে বদ্ধ করার শব্দ আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন না! কিন্তু সজোরে সেসব দ্বার বদ্ধ হচ্ছেই যেন উৎসব আয়োজনে যীশু খ্রীষ্ট বাইরেই থাকেন।

একটি বড়দিন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে যা-কিনা আসছে। অত্যন্ত প্রতাপে ও গৌরবে তাঁর আগমনের কথা শাস্ত্রে উল্লেখ আছে। পুরাতন নিয়মে সে কথা বারবার বলা হয়েছে। প্রভু যীশু খ্রীষ্ট নিজেও জগতে তাঁর প্রচার-পরিচর্যার সময়ে নিশ্চিতভাবে সেই প্রতিজ্ঞা করেছেন।

স্বর্গে ফিরে যাবার সময়, জগত ত্যাগের পূর্বে তিনি বলেছেন, “আমি আবারো আসবো”। এ সব কথা গত বিশ শতাব্দী ধরে হাজার হাজার বিশ্বাসীদের জন্য প্রত্যাশা ও শান্তনা তিনি খ্রীষ্টরূপে গৌরবান্বিত, এ সব কথা পাটম দ্বীপে সেই প্রেরিতশিষ্য যোহনকে জানানো হয়েছে। এখানে তিনি স্পষ্টভাবে তাঁর প্রতিজ্ঞা করেছেন আর চমৎকারভাবে সে কথা বলেছেন, “দেখ আমি শীঘ্র আসিতেছি; এবং আমার দাতব্য পুরষ্কার আমার সহবর্তী, যাহার যেমন কার্য, তাহাকে তেমন ফল দিব” (প্রকাশিত বাক্য ২২:১২ পদ)। অর্থাৎ তিনি বলেছেন যে তিনি শিগগিরিই আসছেন। তিনি পুরষ্কার সঙ্গে নিয়ে আসেছেন, যার যেমন কাজ সেই অনুসারে সে পুরষ্কার পাবে।

তিনি সেভাবে সে কথা বলেননি যে তিনি তখনই আসছেন। “আমি শীঘ্র আসিতেছি” এ কথায় তিনি বলেছেন যে এ সময়ের মধ্যেই সমস্ত কিছুর ব্যবস্থা করেই তিনি আসবেন। এই হলো স্বর্গ থেকে আসা আমাদের কাছে তাঁর শেষ কথা যা তাঁর প্রতিজ্ঞা।

খ্রীষ্টের দ্বিতীয় আগমন হবে তাঁর প্রথম আগমনের সমাপ্তি। তিনি অবশ্যই আসবেন তাঁর প্রথম আগমনের কার্য সম্পূর্ণতার জন্য। “কিন্তু”, আপনি হয়তো বলতে পারেন, “যীশু ক্রুশের উপর বলেছেন, সমাপ্ত হইল।”

হ্যাঁ, মুক্তির কর্ম শেষ হয়েছে। তিনি আপনার ও আমার জন্য মুক্তির উপায় করে দিয়েছেন। পৌল যেমন একদম নির্দিষ্ট করে বলেছেন, “কেননা কেবল যাহা স্থাপিত হইয়াছে, তাহা ব্যতীত অন্য ভিত্তিমূল কেহ স্থাপন করিতে পারে না, তিনি যীশু খ্রীষ্ট” (১ করিন্থীয় ৩:১১ পদ)। তিনি আপনার ও আমার জন্য পরিত্রাণ রেখে গেছেন। তিনি আপনার আর আমার জন্য পরিত্রাণের ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন। কিন্তু সেই ভিত্তির উপর এখনো দুর্গ স্থাপন করা হয়নি।

সত্যিকারার্থে পরিত্রাণের তিনটি কাল থাকে। যেমন আমি বলতে পারি - আমি পরিত্রাণ পেয়েছি; আমি এখনও বলতে পারি - আমি পরিত্রাণ পেতে যাচ্ছি; এছাড়াও আমি এও বলতে পারি - আমি পরিত্রাণ পেয়ে যাব। আমার অনন্ত জীবনের অধিকার রয়েছে। আমি সম্পূর্ণ তাঁর উপর, তাঁর দ্বারাই পরিত্রাণপ্রাপ্ত - আমি যে মুহূর্তে খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করি অর্থাৎ খ্রীষ্টর উপর আস্থা, নির্ভর ও ভরসা করি সেই মুহূর্তে আমি ঈশ্বরের অনন্ত জীবনের দান গ্রহণ করে থাকি। খ্রীষ্টের দ্বারা পরিপূর্ণ ও নিখুঁতভাবে যতটুকু পরিত্রাণপ্রাপ্ত হওয়া দরকার আজ আমি ততটুকুই পরিত্রাণপ্রাপ্ত।

আমি যেহেতু পরিত্রাণ পেতে যাচ্ছি, আমার মধ্যে সে ধরনের কর্ম চলতে থাকা দরকার। কিন্তু এ কথা সত্য যে আমি পরিত্রাণ পেয়ে যাব। তবে একটি চমৎকার দিনে, যে দিনটিতে আপনি বা আমি যতক্ষণ পর্যন্ত না সত্যিকার উপলব্ধিতে যীশুর মতন হবো ততক্ষণ আমাদের কারোরই সম্পূর্ণরূপে পরিত্রাণ সম্পন্ন হচ্ছে না। আমাদের পরষ্পর ধৈর্য ধরে থাকতে হয়। আপনি বড়দিনে কী পেতে যাচ্ছেন? আমি কী পেতে যাচ্ছি সে কথাই বলছি - সম্ভবত এই বড়দিনটিতে নয়, কিন্তু যখন সেই মহান বড়দিন আসছে - আমি নতুন দেহ পাব! এটি এমন একটি দেহ যাতে কোনো ব্যথা, রোগ, দুর্বলতা থাকবে না, আর এ জীবনের কোনো সীমাবদ্ধতাও থাকবে না। কিন্তু আমাদের এখনো তা হয়নি। যে উপহারের প্যাকেটটি তিনি আমাদের দিয়েছেন তাতে লেবলে লাগানো আছে যে “বড়দিন না আসা পর্যন্ত খুলবে না।” সেই দেহের মুক্তি সেই ভাবিষ্যতে। সেই উপহারটি কী চমৎকারই না হবে!

অনেকে হয়তো মনে করতে পারেন, “আমি বাজি ধরে বলতে পারি যে, যে বড়দিন আসছে, আমি সেই ভবিষ্যতের বড়দিনের অংশীদার হবো।” আপনি তা বলতে পারেন। তবে বাজি ধরে বলার বিষয় হলো আপনার মুক্তিদাতারূপে প্রভু যীশুকে গ্রহণ করার এখনই উপযুক্ত সময়। খ্রীষ্টিয়ানত্ব কোনো ধর্মকর্ম পালনের বিষয় নয়। এটি একটি সম্পর্ক - যীশু খ্রীষ্টের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক থাকা। “ঈশ্বরের অনুগ্রহ-দান আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টেতে অনন্ত জীবন” (রোমীয় ৬:২৩ পদ)। এটা হতে পারে এখনই, যদি আপনি আপনার মন্দ পাপ থেকে মন ফিরান। “আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তাহা নয়; বরং যদি মন না ফিরাও, তোমরা সকলেই তদ্রূপ বিনষ্ট হইবে” (লূক ১৩:৩ পদ)। আমেন!!

যীশু আপনার মুক্তিদাতা হতে ২০২২ বছরের আগে উদয় হয়েছেন। বাইবেলে সেই প্রতিশ্রুতির কথা পাওয়া যায় “তিনি তাঁহার আপনের নিকটে আসিলেন, আর তাঁহার আপনেরা তাঁহাকে গ্রহণ করিল না; কিন্তু অনেকে যেমন তাঁহাকে গ্রহণ করিল, সেই সকলকে, যাহারা তাঁহার নামে বিশ্বাস করে তাঁহাদিগকে তিনি ঈশ্বরের সেই সন্তান হইবার অধিকার দিলেন” যোহন ১:১১-১২ পদ।

তিনি পূর্বে এসেছিলেন জগতের মুক্তিদাতারূপে। তিনি আগামীতে আসবেন জগতের সার্বভৌম ক্ষমাসম্পন্ন হয়ে। আপনি কি সেই মহান বড়দিনের অংশী হতে প্রস্তুত আছেন? তাই যদি হয় “প্রভু যীশু আইস”।

আসবেন প্রভু মেঘরথে আবার ফিরে ধরাতলে।
মহাতুরী ধ্বনি সহ, পাঠাবেন দূত দলে দলে।
রবি শশী গ্রহ তারা নভে হবে জ্যোতি হারা।
বিলাপকারী মানবেরা, দেখবে তখন কুতুহলে।
হানাহানি হিংসা দ্বেষে, ভরে যাবে ভুবনখানি।
মহামারি ভূকম্পনে, ধ্বংস হবে জগত জানি।
পাপতাপী ত্রাণকামী, হওগো প্রভুর অনুগামী।
তাঁরই আগমনের তরে জেগে থাক প্রতি পলে। 

Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?