খ্রীস্টিয়ানরা কেন ক্রুশে নির্ভরশীল এতো বিশ্বাস !!

...অনেকের জন্য মুক্তির মূল্যরূপে তাঁহার জীবন দিতে আসিয়াছেন” মার্ক ১০:৪৫ পদ।

যীশু খ্রীষ্ট পাপীদের  মুক্তিপণ হিসাবে তাঁর নিজের জীবন দিতে এসেছিলেন।

পবিত্র বাইবেল বিশ্বাসী খ্রীষ্টিয়ানদের এই ক্রুশতত্ত্ব অর্থাৎ যীশু খ্রীষ্টের ক্রুশীয় মৃত্যু নিয়ে অন্যান্য ধর্ম বিশ্বাসীদের মধ্যে মারাত্মক একটি সমস্যা রয়েছে। 
এ বিষয়ে জানার জন্য কিছু প্রশ্নও উঠে যা পাপ সম্পর্কীয়, আর আরেকটি বিষয় হলো ঐ পাপের প্রায়শ্চিত্ত সাধনের জন্য যীশুর কী দরকার ছিল ক্রুশীয় মৃত্যুবরণ করা? 

ঠিক জানি না যে এধরণের কোনো প্রশ্ন আপনারও আছে কি না। 

তবে এ বিষয়ে শাস্ত্রের ইব্রীয় পুস্তকের প্রথম দশটি অধ্যায় পাঠ করলে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির একটি সচ্ছ ও সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে

পাপ সম্পর্কে অন্যান্য ধর্ম মতামত থেকে খ্রীষ্টিয় শিক্ষার বহু পার্থক্য রয়েছে।

অনেকে যেমন বলেন যে, আদম ও হবার অবাধ্যতার একটি ভুলে পাপ করেছিলেন, এই অবাধ্যতা ছিল তাদের একটি ভুল, বা পাপ।
তারা এই পাপ স্বীকার করে ক্ষমা পেয়েছেন।
আরও অনেক মতের লোকেরা বলেন যে পাপ মানব চরিত্রের কোনো অংশ বিশেষ নয় আর যদিও মানুষ ভুল করতেই থাকে, তা ক্ষমা করা হবে, যদি কিনা তারা আত্ম-ধার্মিকতার প্রতি সব সময় অনেক অনেক ভালো কাজ করতে আগ্রহ থাকে, তাহলে বিচার দিনে ঈশ্বর মুখ তুলে তাদের প্রতি তাকাবেন ও সদয় হবেন।

পবিত্র শাস্ত্র মানবজাতিকে ভালো কাজ করার জন্য বিশেষভাবে শিক্ষা দেয়, কিন্তু ষ্পষ্টভাবে এও শিক্ষা দেয় যে মানবজাতির আত্মরক্ষার্থক আবরণের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা - পাপ কখনই সততাপরায়ণ আচরণ হতে পারে না।

ভাববাদী দায়ূদ, গীতসংহিতা ৫১:৫ লিখেছেন “দেখ আমি অপরাধে গঠিত হইয়াছি, আর পাপে আমার মাতা আমাকে গর্ভে ধারণ করিয়াছিলেন”। প্রেরিত পৌল, রোমীয় ৩:২৩ বলেছেন “কারণ সকলেই পাপ করিয়াছে, আর ঈশ্বরের গৌরব-বিহীন হইয়াছে।” ভাববাদী যিশাইয় ৬৪:৫,৬ প্রশ্ন করেছেন “আমরা কি প্রকারে পরিত্রাণ পাব?” কারণ তিনি বলেছেন “আমাদের সকল প্রকার ধার্মিকতা মলিন বস্ত্রের ন্যায়” ঈশ্বরের পবিত্র বাক্য, তীত ৩:৫,৬ পদে আমাদের উত্তর দেয় - “ধর্মকর্মের দ্বারা নয় যেসকল আমরা সাধন করিয়াছি, কিন্তু তাঁহার দয়ানুসারে পুনজন্মের সেই স্নান, আর সেই পবিত্র আত্মার নূতনীকরণ দ্বারা তিনি আমাদের পরিত্রাণ করিলেন;”
প্রথম থেকেই আমাদের করুণাময় ঈশ্বর আমাদের পাপ ঢাকা ও ক্ষমার জন্য তিনি এক উপায় প্রস্তুত করে রেখেছেন। অব্রাহাম ঈশ্বরের বাধ্যতায় তার নিজ পুত্রকে ঈশ্বরের যজ্ঞরূপে উৎসর্গ করতে গেলেন, কিন্তু আমাদের করুণাময় ঈশ্বর আগেই অব্রাহামের যজ্ঞের জন্য যজ্ঞ উৎসর্গের স্থানে মেষ যোগার করেছিলেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে - একটি পশু হত্যা করে যজ্ঞ উৎসর্গের কী প্রয়োজন ছিল? আমরা পুরাতন নিয়মে দেখতে পাই যে মানব জাতির পাপ ঢাকার জন্য ঠিক এভাবেই রক্ত যুক্ত যজ্ঞ উৎসর্গ করার আদেশ ছিল। কিন্তু ইব্রীয় পুস্তকে আমরা দেখি যীশু খ্রীষ্ট মানব জাতির জন্য ক্রুশে উৎকৃষ্ট বলিরূপে নিজেই উৎসর্গীকৃত হলেন। তখন থেকে মানব জাতি খ্রীষ্টের প্রায়শ্চিত্তমূলক কাজের মাধ্যমে ও তাঁর নামের বিশ্বাসের গুণে পাপের দোষারোপ থেকে মুক্তি লাভ করেছ।

এখানে শুধুমাত্র যীশু খ্রীষ্টের অনুসারীদের গভীর অনুভূূতিতে সূক্ষ্ম চেতনা দেবার জন্য “ক্রুশ” ও “যীশু খ্রীষ্টের ক্রুশীয় মৃত্যু” হওয়ার কথাটি উল্লেখ করা হয়েছে। খ্রীষ্টিয়ানেরা বিমুগ্ধ হয় যে যীশু খ্রীষ্ট নিজ ইচ্ছায় যন্ত্রণা ভোগ করছেন আর মৃত্যুবরণ করছেন যেন এভাবে মানবজাতি ক্ষমা পেতে পারে ও পাপের শাস্তি ও দোষারোপ থেকে মুক্তিলাভ করতে পারে। খ্রীষ্টিয়ানদের মধ্যে এই বিষয়টি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত একটি পবিত্র ও সফল কর্ম।

জগতের অনেকেই বলে থাকেন যে যীশুকে ক্রুশে মারা হয়নি, তারা আরও বলেন যে রোমীয় সৈন্যরা খ্রীষ্টের বদলে যিহুদা বা অন্য কাউকে দোষীসাবস্ত করে ক্রুশে টাঙ্গিয়ে মৃত্যু ঘটিয়েছিল। তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে বদলি হিসাবে যিহুদা বা অন্য কেউ তাদের প্রতি অত্যন্ত ভুল করা হচ্ছে বলে তারা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে থাকতো নিশ্চয়।

যীশু ছাড়া আর কে, কীভাবে তাঁর ক্রুশীয় তীব্র যন্ত্রণার মাঝে প্রার্থনা উৎসর্গ করতে পারতেন, যেন ঈশ্বর তাঁর নির্যাতনকারীদের ক্ষমা করেন? কীভাবে এরকম করুণাময়ী ও সহানুভূতিসম্পন্ন অনুভুতি অন্য কোনো সাধারণ ব্যক্তির মুখ থেকে শোনা যেতে পারতো যিনি কিনা বদলি হিসাবে ঐ ক্রুশে পেরেক বিদ্ধ অবস্থায় ঝুলে থাকতেন। যীশুর মা মরিয়ম যীশুকে চিনেই ক্রুশের কাছে দাঁড়িয়েছিলেন আর তাঁর প্রতি পুত্রের স্নেহ ও সদয় কন্ঠে কথা শুনেছিলেন, তিনিইবা কীভাবে সেরকম কোনো ছলনা/প্রবঞ্চনা দেখতে পাননি? যদি ক্রুশের উপর অন্য কেউ হতো, তাহলে তিনি নিশ্চই তা প্রকাশ করতেন !!!

তিনটি বিষয় রয়েছে, যা খ্রীষ্টের ক্রুশীয় মৃত্যুর অবিশ্বাসীদের সতর্কতার বিবেচনা করা উচিত -

প্রথমতঃ তাদের ভেবে দেখা উচিত যে ভাববাদীরা আগেই থেকেই এই ক্রুশবিদ্ধ প্রাণবধ হওয়ার কথা বলে আসছেন। ভাববাদী যিশাইয় ৫৩:৫-৭ বলেছেন “তিনি আমাদের অধর্মের জন্য বিদ্ধ, আমাদের অপরাধের জন্য চূর্ণ হইলেন; আমাদের শান্তিজনক শাস্তি তাঁহার উপরে বর্তিল, ও তাঁহার ক্ষত সকল দ্বারা আমাদের আরোগ্য হইল। আমরা সকলে মেষগণের ন্যায় ভ্রান্ত হইয়াছি, প্রত্যেকে আপন আপন পথের দিকে ফিরিয়াছি; আর সদাপ্রভু আমাদের সকলকার অপরাধ তাঁহার উপরে বর্তাইয়াছেন। তিনি উপদ্রুত হইলেন, তবু দুঃখভোগ স্বীকার করিলেন, তিনি মুখ খুলিলেন না; মেষশাবক যেমন হত হইবার জন্য নীত হয়, মেষী যেমন লোমচ্ছেদকদের সম্মুখে নীরব হয়, সেইরূপ তিনি মুখ খুলিলেন না।”

ভাববাদী দায়ুদ গীতসংহিতা ২২:১৫-১৮ পদে বলেছেন, “. . .তুমি আমাকে মৃত্যুর ধূলিতে রাখিয়াছ। কেননা কুকুরেরা আমাকে ঘেরিয়াছে, দুরাচারদের মন্ডলী আমাকে বেষ্টন করিয়াছে; তাহারা আমার হস্তপদ বিদ্ধ করিয়াছে। আমি আপন অস্থি সকল গণনা করিতে পারি; উহারা আমার প্রতি দৃষ্টি করে, চাহিয়া থাকে। তাহারা আপনাদের মধ্যে আমার বস্ত্র বিভাগ করে, আমার পরিচ্ছদের জন্য গুলিবাঁট করে।”
দ্বিতীয়তঃ যুগ যুগ ধরে জগতের ইতিহাস “যীশু খ্রীষ্টের ক্রুশীয় মৃত্যুর” কথা স্বীকার করে নিশ্চিত করেছে। রোমীয় সাম্রাজ্যের সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক ছিলেন কর্নেলিউস টেসিটাস। তিনি লিখেছেন, খ্রীষ্টের থেকে খ্রীষ্টিয়ান নামের উৎপত্তি, যিনি রোম সম্রাটের অধীন প্রদেশিক দেওয়ান পিলাতের অধীনে বিচারিত হয়েছে।”

যোসিকাস তার Antiquitatis ludaice, volume ১৮, ১১১:৩ লিখেছেন, “তখনকার সময়ে যীশু একজন জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন, ইনি আশ্চর্য্য আশ্চর্য্য কাজ করতেন, তিনি মানুষকে সত্য শিক্ষা দানে আনন্দ পেতেন, আর এ কারণে তাঁকে আইনসংগত একজন মানুষ বলা চলে। তার শিক্ষায় অনেক যিহুদী ও পরজাতি তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল। তিনি ছিলেন সেই খ্রীষ্ট। পিলাত যখন তাঁকে ক্রুশে দেবার আদেশ দিলেন, দোষী সাব্যস্ত করলেন, এতে যারা তাঁকে প্রথম থেকেই ভালোবাসতো তারা তাঁকে ত্যাগ করে যায়নি, একেবারে ছেড়ে যায়নি; এজন্য তিনি তাদের নিকটে তৃতীয় দিনে পুনঃ জীবিত অবস্থায় উপস্থিত হয়েছিলেন যা কিনা স্বর্গীয় ভাববাদীরা আগে থেকেই উপরন্ত তাঁর বিষয় অন্যান্য আরও ১০,০০০ টি আশ্চার্য্য বিষয় উল্লেখ করেছেন। তাঁর নাম অনুসারে যে দলটির ‘খ্রীষ্টিয়ান’ নাম দেওয়া হয়েছিল তারা আজও আছে”

তৃতীয়তঃ শাস্ত্রে “যীশু খ্রীষ্টের ক্রুশীয় মৃত্যু” হওয়ার সবচেয়ে বেশী প্রভাব সম্পর্কে বিবেচনা করুন। নতুন নিয়মের সমগ্র মূলসুর হলো “যীশু খ্রীষ্টের ক্রুশীয় মৃত্যু” ও তাঁর “পুনরুত্থান”।

বাইবেল শিক্ষা দেয় যে যীশু খ্রীষ্টকে ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল ও ক্রুশীয় মৃত্যু হয়েছিল, আবার তিনি জীবিত হয়েছিলেন আর বাইবেলের মূল কথা ঠিক তাই। চারটি সুসমাচারে এক তৃতীয়াংশ কথা যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যু ও পুনরুত্থানের প্রত্যক্ষ সাক্ষীর বর্ণনা রয়েছে। বাইবেলের মূল গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হলো যীশু খ্রীষ্টের সুসমাচার যা পাপীদের জন্য ক্রুশে তাঁর মৃত্যু, তাঁর সমাধি ও মৃত্যু হতে তাঁর পুনরুত্থানের বিষয়। প্রেরিত পৌল, ১করিন্থীয় ১৫:১-৪ পদে সেই সুসমাচারের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যু, সমাধি ও পুনরুত্থানের কথা বলেছেন “হে ভ্রাতৃগণ, তোমদিগকে সেই সুসমাচার জানাইতেছি, যে সুসমাচার তোমাদের নিকট প্রচার করিয়াছি, . . . ফলতঃ প্রথম স্থলে আমি তোমাদের কাছে এই শিক্ষা সমর্পণ করিয়াছি, এবং ইহা আপনিও পাইয়াছি যে, শাস্ত্রানুসারে খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য মরিলেন, ও কবর প্রাপ্ত হইলেন, আর শাস্ত্রনুসারে তিনি তৃতীয় দিবসে উত্থাপিত হইয়াছেন;”  যীশু খ্রীষ্ট তাঁর লোকদের পাপের জন্য মৃত্যুবরণের উদ্দ্যেশ্যে এবং এই সঠিক কারনেই তিনি এই জগতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১যোহন ৪:১৪ “ইহাতেই প্রেম আছে; আমরা যে ঈশ্বরকে প্রেম করিয়াছিলাম, তাহা নয়; কিন্তু তিনিই আমাদিগকে প্রেম করিলেন, এবং আপন পুত্রকে আমাদের পাপার্থক প্রায়শ্চিত্ত হইবার জন্য প্রেরণ করিলেন।” মার্ক ১০:৪৫ পদে প্রভু নিজেই বলেছেন “কারণ বাস্তবিক মনুষ্যপুত্রও পরিচর্যা পাইতে আসেন নাই, কিন্তু পরিচর্যা করিতে এবং অনেকের পরিবর্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপ দিতে আসিয়াছেন” ১করিন্থীয় ১:২৩ পদে বলেছেন যে খ্রীষ্টের মৃত্যু বিষয় প্রেরিত কী প্রচার করেছেন “কিন্তু আমরা ক্রুশে হত খ্রীষ্টকে প্রচার করি . . .” ১করিন্থীয় ২:২ পদে বলেছেন যে সবকিছুর উর্দ্ধে তিনি খ্রীষ্টের ক্রুশের কথা প্রচার করতে মনে স্থির করেছিলেন “আর কিছুই জানিব না, কেবল যীশু খ্রীষ্টকে, এবং তাঁহাকেই ক্রুশে হত বলিয়াই, জানিব” ক্রুশের উপর যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যুতে দায়মুক্ত হওয়ার এই একটি বিষয় ঈশ্বরের লোকেরা গৌরব প্রশংসা করে। গালাতীয় ৬:১৪ পদ “কিন্তু আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ক্রুশ ছাড়া আমি যে আর কোন বিষয়ে শ্লাঘা করি, তাহা দূরে থাকুক।”
বাইবেলের শিক্ষা মানুষ জন্ম থেকেই পাপী আর কোনো সাহায্য ছাড়া নিজেকে মুক্ত করতে পারে না। তাকে অবশ্যই তার পরিবর্তে একজনকে প্রায়শ্চিত্ব করতে হবে আর বদলিরূপে ঈশ্বর একমাত্র যীশু খ্রীষ্টকে ও তাঁর ক্রুশের উপর মৃত্যুকে গ্রহণ করবেন। খ্রীষ্টের মৃত্যু একমাত্র পরিত্রাণের অর্থ প্রকাশ করে। একমাত্র খ্রীষ্টের মৃত্যুই মিলনসাধন করে। ঈশ্বরের বাক্য স্পষ্টই বলে “যীশু খ্রীষ্টের ক্রুশীয় মৃত্যু” ছাড়া পাপের আর কোনো ক্ষমা নেই ও অনন্ত জীবনও নেই। যীশু খ্রীষ্ট যদি ক্রুশে মৃত্যুবরণ না করতেন আর মৃত্যু থেকে না উঠতেন তাহলে খ্রীষ্টিয়ানদের বিশ্বাস খুবই নগণ্য অবস্থায় পরিত্যাক্ত হতো। ১করিন্থীয় ১৫:১৪-১৭ দেখি “খ্রীষ্ট যদি উত্থাপিত না হইয়া থাকেন, তাহা হইলে ত আমাদের প্রচারও বৃথা, তোমাদের বিশ্বাসও বৃথা। আবার আমরা যে ঈশ্বরের সম্বন্ধে মিথ্যা সাক্ষী, ইহাই প্রকাশ পাইতেছে; কারণ আমরা ঈশ্বরের বিষয়ে এই সাক্ষ্য দিয়াছি যে, তিনি খ্রীষ্টকে উত্থাপন করিয়াছেন; কিন্তু যদি মৃতগণের উত্থাপন না হয়, তাহা হইলে তিনি তাঁহাকে উত্থাপন করেন নাই।কেননা মৃতগণের উত্থাপন যদি না হয়, তবে খ্রীষ্টও উত্থাপিত হন নাই। আর খ্রীষ্ট যদি উত্থাপিত না হইয়া থাকেন, তাহা হইলে তোমাদের বিশ্বাস অলীক, এখনও তোমরা নিজ নিজ পাপে রহিয়াছ”
জগতের অনেকেই বাইবেলের মূল ও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বার্তা, “যীশু খ্রীষ্টের ক্রুশীয় মৃত্যু ও পুনরুত্থান” প্রত্যাখ্যান করে আসছে। এভাবে উপেক্ষা করাতে মুক্তিদাতাকে দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে আর ঈশ্বরের দয়া-অনুগ্রহ অবজ্ঞা হচ্ছে। জগতের অন্যান্যরা বলেন যে যীশুকে একজন নবীরূপে উচ্চ মর্যাদায় গণ্য করা যায় কিন্তু যীশু খ্রীষ্টের কর্ম ও তাঁর ব্যক্তিত্ব যখন সমাদর ও বিশ্বাসের বিষয়বস্তু হয় না তখন তাঁকে খোদার দিকে থেকে তাঁর সমপর্যায় একজন নবীরূপে শ্রদ্ধার জন্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

একজন ব্যক্তি কতো ধর্মপরায়ণ হতে পারে বা কতো খাঁটি তিনি হতে পারে এতে কোনো পরিবর্তন ঘটে না, কিন্তু যীশু খ্রীষ্ট সেই মুক্তিদাতাকে বাদ দিয়ে সত্যের অধিকারী বা পরিত্রাণ পেতে পারে না। যীশু খ্রীষ্টের কর্ম ও তাঁর ব্যক্তিত্ব নিয়ে খ্রীষ্টয়ানদের ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে চরম বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে। যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যু হলো পূর্ণাঙ্গ ও একমাত্র উৎসর্গকৃত যা ঈশ্বর পাপীদের পক্ষে তিনি গ্রহণ করেন। প্রেরিত ৪:১২ আছে “কেননা আকাশের নীচে মনুষ্যদের মধ্যে দত্ত এমন আর কোন নাম নেই, যে নামে আমাদিগকে পরিত্রাণ পাইতে হইবে”
হ্যাঁ, পবিত্র শাস্ত্র স্বীকৃতি দিচ্ছে যে যীশু খ্রীষ্ট ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন আর মৃতদের মধ্য থেকে তিনি উত্থাপিত হয়েছেন। “যীশু খ্রীষ্টের ক্রুশীয় মৃত্যু” যারা বিশ্বাস করেন না তাদের আমি আগ্রহ দেখাতে চাই যে তারা যেন যত্নসহকারে শিক্ষা গ্রহণ করেন যে কেন যীশুর মৃত্যুর কী প্রয়োজন ছিল? আমি আবার ইব্রীয় পত্রের প্রথম দশ অধ্যায় পাঠের পরামর্শ দিচ্ছি বোঝার জন্য যে কেন যীশু খ্রীষ্টের ক্রুশীয় মৃত্যু ও পুনরুত্থান এত জরুরী বিষয়।

প্রিয় বন্ধু, ঈশ্বরের পূর্ব বিধান অনুযায়ী আমাদের অপরাধের জন্য একটি রক্তযজ্ঞ উৎসর্গ প্রয়োজন ছিল, যা আমাদের পাপ ঢাকতে নিযুক্ত। পিতা ঈশ্বর তাঁর একমাত্র পুত্র, যীশু খ্রীষ্টকে আমাদের পাপ বহন করতে পাঠিয়েছেন। যীশু খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য উপযুক্ত যজ্ঞ ছিলেন তাই তিনি নিজে ক্রুশে মৃত্যু ঘটিয়ে রক্ত ঝরিয়ে তিনি জগতের সকলের জন্য, চিরকালের জন্য একবারই রক্ত-যজ্ঞ উৎসর্গ করেছেন (আজকের দিনে আমাদের আর কোনো পাঠা-বলি বা কোরবানির পদ্ধতীর প্রয়োজন হয় না - ইব্রীয় ৯:১২ “ছাগদের ও গোবৎসদের রক্তের গুণে নয় কিন্তু নিজ (খ্রীষ্টের) রক্তের গুণে”), তারপর তিনি সশরীরে উঠলেন, এখন তিনি স্বর্গে ঈশ্বরের সঙ্গে আছেন। পরিত্রানের জন্য এই সাক্ষ্য বিশ্বাস করা ও যীশু খ্রীষ্টের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখা প্রয়োজন (পাঠ করুন কলসীয় ১:১২-২২ পদ ও রোমীয় ৫:১ পদ)। 

প্রিয় বন্ধু, যীশু খ্রীষ্টের ক্রুশের নীচে মাথা নত করুন, বাইবেলের ঈশ্বরের কাছে, একমাত্র সত্য ঈশ্বরের কাছে নিজেকে সমর্পণ করুন। প্রাণের মুক্তি নিন্ অনন্ত চিরকালের জন্য।
“পরিত্রাণ চাহ যদি মান, মান এই কথা”  (খ্রীষ্ট সঙ্গীত)   । আমেন।   

Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?