যীশু খ্রীষ্ট শুক্রবার মৃত্যুবরণ করেন নাই। তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন বুধবার।


মূল : স্কট অ্যাসলী

পুণ্য শুক্রবার থেকে পুনরুত্থান রোববার পর্যন্ত তিন রাত তিন দিন হয় না - হিসাবেও মেলে না, মিলবেও না - তা হলে? কখন, কবে, কোনদিন প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে ক্রুশে দেয়া হয়েছিল, সমাধিস্থ করা হয়েছিল এবং কবে তিনি পুনরুত্থান করেছেন?


পৃথিবীর একশ কোটি প্রোটেস্টান্ট এবং একশ কোটি কাথলিকেরা সকলেরই বিশ্বাস : যীশু খ্রীষ্টকে শুক্রবার, মানে ‘পুণ্য শুক্রবার’ই (Good Friday) ক্রুশে দেয়া হয়েছিল, সমাধিস্থ করা হয়েছিল এবং তিনি দেড় দিন পর, রোববার পুনরুত্থিত হয়েছেন।

আমরা যদি যীশু খ্রীষ্টের কথাগুলো ভালোভাবে পর্যালোচনা করে দেখি, তা হলেই বুঝতে পারব যে, ভুল কোথায় আর কোন্ কথাগুলো অসঙ্গত। যীশু খ্রীষ্ট কত দিন কবরে থাকবেন বলেছিলেন? ‘কারণ যোনা যেমন তিন দিবারাত্র বৃহৎ মৎস্যের উদরে ছিলেন, তেমনি মনুষ্যপুত্রও তিন দিবারাত্র পৃথিবীর গর্ভে থাকিবেন’ (মথি ১২:৪০ পদ)। "For as Jonas was three days and three nights in the whale's belly; so shall the Son of Man be three days and three nights in the heart of the earth" (Matthew 12:40)

শ্রী যীশুর বক্তব্য শুনে সে-সব কথার সততা নিয়ে যখন লোকদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হচ্ছিল, তখনই ইহুদিদের অধ্যাপক ও ফরীশীরা তাঁকে (যীশুকে) অলৌকিক চিহ্ন দেখাতে এবং প্রমাণ করতে বলেছিলেন, যেন তারা বিশ্বাস করতে পারেন যে, তিনিই প্রকৃত ইহুদিদের প্রতিশ্রুত সেই ‘ভাববাদী’ বা ত্রাণকর্তা। তিনি তাদেরকে বলেছিলেন, ‘. . . এই কালের দুষ্ট ও ব্যভিচারী লোকে চিহ্নে অন্বেষণ করে, কিন্তু যোনা ভাববাদীর চিহ্ন ছাড়া আর কোন চিহ্ন ইহাদিগকে দেওয়া যাইবে না’ (মথি ১২:৩৯ পদ)।

প্রতিশ্রুত ও ত্রাণকর্তা হিসেবে ওই একটি চিহ্নই যীশু খ্রীষ্ট প্রকাশ করেছিলেন। ‘কারণ যোনা যেমন তিন দিবারাত্র বৃহৎ মৎস্যের উদরে ছিলেন, তেমনি মনুষ্যপুত্রও তিনি দিবারাত্র পৃথিবীর গর্ভে থাকিবেন’ (মথি ১২:৪০ পদ)। "For as Jonas was three days and three nights in the whale's belly; so shall the Son of Man be three days and three nights in the heart of the earth" (Matthew 12:40)

ঐতিহ্যগত সময় কখনোই বাড়ানো হয় না।

যোহন সুসমাচারের ১৯:৩০-৩২ পদে একথা পরিষ্কারভাবেই বলা হয়েছিল যে, যীশু মারা গেছেন এবং তাঁকে ওই দিনিই বিকালে সূর্যাস্তের আগে খুব তাড়াহুড়া করে সমাধিস্থ করা হয়েছিল - কারণ তার পরদিন বিশ্রামবার ছিল।

ঐতিহ্যগতভাবে ওই সময় ছিল ‘পুণ্য শুক্রবার থেকে পুনরুত্থান রোববার’ (Good Friday-Easter Sunday) পর্যন্ত। শুক্রবার সূর্যাস্ত থেকে শনিবার সূর্যাস্ত একরাত একদিন। শনিবার রাত থেকে রোববার সূর্যোদয় পর্যন্ত আরেক রাত . . . তার মানে হিসাবে আমরা দু’রাত একদিনই পাচ্ছি মাত্র।

হিসাবে একরাত দু’দিনের গড়মিল হচ্ছে, তাই না? কিন্তু যীশু খ্র্রীষ্ট নিজেই বলেছিলেন, তিনি তিন রাত তিন দিন সমাধিস্থ থাকবেন।

হয়তোবা অনেক ধর্মতত্ত্ববিদ এবং ধর্মগুরুরা দিনের কিংবা রাতের আংশিক ভাগকেও পুরোদিন কিংবা পুরো রাত হিসাবেই হিসাব করতে পারেন। এই যেমন শুক্রবার বিকালের অল্প সময়কে পুরো প্রথম দিন, শনিবার দ্বিতীয় দিন এবং রোববার সকালকে তৃতীয় দিন।

শুনতে ভালোই লাগে, তা ঠিক, তবু সেভাবে ঠিক কাজ হচ্ছে না। হিসাব মিলছে না। তাতেই হিসাবে শুধু তিন দিন দু’রাতই হচ্ছে . . . ঠিক তিন দিন তিন রাত হচ্ছে না।

এবার তা হলে যীশুর শিষ্য সাধু যোহনের কথাই শুনি, ‘সপ্তাহের প্রথম দিন প্রত্যুষে অন্ধকার থাকিতে থাকিতে মগ্দলীনী মরিয়ম কবরের নিকটে যান, আর দেখেন, কবর হতে পাথরখানা সরান হইয়াছে’ যোহন ২০:১ পদ)।

সমস্যাটি কোথায়, তা কি আপনি লক্ষ করেছেন? যোহন বলছেন, মরিয়ম যখন রোববার সকালে সমাধিতে যান, তখনও অন্ধকার ছিল এবং সমাধিও শূন্য ছিল। তার মানে সূর্য ওঠার অনেক অনেক আগেই যীশ খ্রীষ্ট পুনরুত্থান করেছেন। সমাধিতে তিনি ছিলেন না, তাই রোববারকে যোগ করা যাবে না।

তার মানে আমরা আংশিক শুক্রবার দিন পাচ্ছি এবং শুক্রবার রাত পাচ্ছি, আবার শনিবার দিন, সারা রাত পাচ্ছি। তাতেও হিসাব দেড় দিন দু’রাত হচ্ছে মাত্র। কিন্তু তিন রাত তিন দিন পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে না।

এবার আমরা পরিষ্কারই বুঝতে পারছি যে, কোথাও কোনো গড়মিল আছে। গড়মিল হচ্ছে। হয় যীশুর দেয়া হিসাব ভুল আর না হয় বাইবেলের হিসাব ‘পুণ্য শুক্রবার থেকে পুনরুত্থান রোববারে’ গড়মিল।

তা-ও অসম্ভব। এমন ভুল কখনোই হতে পারে না, তা হলে? কোনটি সত্য?

নিরূপিত সময়ই ছিল ঈশ্বরের বিধান . . . 

যীশু খ্রীষ্টের ক্রুশীয় মৃত্যু এবং পুনরুত্থান-সম্বন্ধে পূর্ণাঙ্গভাবে বুঝতে হলে ঈশ্বরের নিরূপিত সময়ের বিধানই আগে আমাদের সম্পূর্ণরূপে বুঝতে হবে। বুঝতে হবে তাঁর (ঈশ্বরের) সময়ের হিসাব। কখন দিন শুরু এবং কখন দিন শেষ। একই সঙ্গে বাইবেলের নির্দেশাদির মতো বাৎসরিক ‘বাসন্তী উৎসবে’র পরমাঙ্কও আমাদের মনে রাখতে হবে।

সর্বপ্রথমেই একটি কথা আমাদের বোঝা দরকার যে, ঈশ্বর কখনোই আমাদের মতো দিনের শুরু এবং শেষ মাঝ রাত থেকে গণনা করেন না। আদিপুস্তক ১:৫ লক্ষ্য করলেই আমরা পরিপূর্ণভাবে বুঝতে পারব, ‘আর ঈশ্বর দীপ্তির নাম দিবস ও অন্ধকারের নাম রাত্রি রাখিলেন। আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে প্রথম দিবস হইল’ (আদিপুস্তক ১:৫ পদ)। তখন থেকেই ঈশ্বর বাকি ছয় দিনই তাঁর বিধি-ব্যবস্থা মতোই কাজ করেছিলেন।

তারপর ঈশ্বর পবিত্র বিশ্রাম দিন (Sabbath-শনিবার) নিরূপিত করলেন এবং ধর্মীয় উৎসবের দিনগুলো তালিকাভুক্ত করলেন। ‘সেই দিন তোমাদের বিশ্রামার্থক বিশ্রামদিন’ হইবে, আর তোমরা আপন আপন প্রাণকে দুঃখ দিবে; মাসের নবম দিবস সন্ধ্যাকালে, এক সন্ধ্যা অবধি অপর সন্ধ্যা পর্যন্ত, আমাদের বিশ্রামদিন পালন করিবে’ (লেবীয় পুস্তক ২৩:৩২ পদ)।

সেজন্যই সূর্যাস্তের আগে ‘আরিমাথিয়ার যোষেফ এবং নীকদীম’ খুব তাড়াহুড়া করে যীশু খ্রীষ্টকে যোষেফের নিকটস্থ সমাধিতে সমাধিস্থ করেছিলেন। ‘আর যিনি প্রথমে রাত্রিকালে তাঁহার কাছে আসিয়াছিলেন, সেই নীকদীমও আসিলেন, গন্ধরসে মিশ্রিত অনুমান পঞ্চাশ সের আগুরু লইয়া আসিলেন। তখন তাঁহারা যীশুর দেহ লইয়া যিহূদীদের কবর দিবার রীতি অনুযায়ী ঐ সুগন্ধি দ্রব্যের সহিত মসীনার কাপড় দিয়া বাঁধিলেন। আর যে স্থানে তাঁহাকে ক্রুশে দেওয়া হয়, সেই স্থানে এক উদ্যান ছিল, সেই উদ্যানের মধ্যে এমন এক নতুন কবর ছিল, যাহার মধ্যে কাহাকেও রাখা হয় নাই। অতএব ঐ দিন যিহূদীদের আয়োজন-দিন বলিয়া, তাঁহারা সেই কবর মধ্যে যীশুকে রাখিলেন, কেননা সেই কবর নিকটেই ছিল . . .” (যোহন ১৯:৩৯-৪২ পদ)। যেহেতু ওই দিন সূর্যাস্তের পর থেকেই পবিত্র বিশ্রাম দিন (মহাদিন) শুরু হওয়ার কথা আর প্রথানুযায়ী বিশ্রাম দিনে কাজ করাও অবিধেয়, তাই।

বিশ্রামদিন (Sabbath) দু রকমের, তাই মাঝে-মধ্যে খুব সমস্যা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতো।

সাধু যোহন বলেছেন, ‘সেইদিন আয়োজন দিন, অতএব বিশ্রামবারে সেই দেহগুলো যেন ক্রুশের উপরে না থাকে - কেননা ঐ বিশ্রামবার মহাদিন ছিল - ওই নিমিত্ত যিহূদিগণ পীলাতের নিকটে নিবেদন করিল, যেন তাহাদের পা ভাঙ্গিয়া তাহাদিগকে অন্য স্থানে লইয়া যাওয়া হয়’ (যোহন ১৯:৩১ পদ )।

ইহুদিদের কৃষ্টিতে ঈশ্বরের মনোনীত বিশ্রাম দিনকে নেন পবিত্ররূপেই পালন করতে পারে এবং সেদিন ওদের আর কোনো কিছুই যেন করতে না হয়, সেজন্যই তার আগের দিনই সব কাজ ওরা করে রাখত, এই যেমন - রান্না করা, ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা ইত্যাদি। আর বিশ্রাম দিনের আগেই দিনকে ওরা বলত ‘আয়োজনের দিন’ (the preparation day) । ওই একই কারণে বিশ্রাম দিনের আগের দিনই যীশু খ্রীষ্টকে খুব তাড়াহুড়া করে সমাধিস্থ করা হয়েছিল।

প্রশ্ন হচ্ছে, সেটি কোন্ বিশ্রাম দিন ছিল?

অনেকেরই ধারণা, সাধু যোহন যথারীতিসিদ্ধ বিশ্রামবারের কথাই বলেছেন, তার মানে শুক্রবার সূর্যাস্ত থেকে শনিবার সূর্যাস্তের কথাই বলেছেন। এত পরিষ্কারভাবে সাধু যোহন তাদের বললেও তাদের সকলেরই ধারণা, যীশুর মৃত্যু শুক্রবারই হয়েছে এবং ওই দিনই তাঁকে কবরও দেয়া হয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবেই ওই দিন ছিল পুণ্য শুক্রবার (Good Friday)।

আবার একথাও হয়তো সত্য যে, বিশ্রামবার যে দু’ধরনের সে কথাও হয়তো অনেকেই জানতো না। ‘সপ্তাহিক বিশ্রাম দিন’ (weekly Sabbath day) হচ্ছে সাধারণত সপ্তাহের সপ্তম দিন (normal weekly Sabbath day),  কিন্তু তার মানে রোববার নয়। রোববার হচ্ছে সপ্তাহের প্রথম দিন)। তারপর বাৎসরিক সপ্তম বিশ্রাম দিন (seven annual Sabbath day) হচ্ছে লেবীয় পুস্তকের ২৩ অধ্যায় অনুযায়ী। সপ্তাহের যে কোনো দিনই তা পড়তে পারে, হতেও পারে।

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, যেহেতু ঐতিহ্যগতভাবে কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত খ্রীষ্টধর্ম পরিবর্জিত ছিল, তাই বাইবেলের সেই বাৎসরিক বিশ্রাম দিন (annual Sabbath day) এবং সাপ্তাহিক বিশ্রাম (weekly Sabbath day) দিনগুলোকে ঠিকমতো চিহ্নিত করাও সম্ভবপর হয়নি। ওই একই কারণেই সুসমাচারের মাধ্যমে একথাই প্রচারিত হয়েছিল যে, যীশু খ্রীষ্টকে শুক্রবারেই ক্রুশে দেয়া হয়েছে এবং ওই দিনই তাঁকে কবরও দেয়া হয়েছে এবং তিনি রোববারে পুনরুত্থান করেছেন, তবে কেন পুণ্য শুক্রবার (Good Friday) এবং পুনরুত্থান রোববার (Easter Sunday) তা-ও ঠিকমতো প্রকাশ করেনি।

ওই দিনই সূর্যাস্তের পর থেকেই ‘বাৎসরিক বিশ্রাম দিন’ (annual Sabbath day) শুরু হওয়ার কথা ছিল, তাই খুব তাড়াহুড়া করে সূর্যাস্তের আগেই প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে সামধিস্থ কর হয়েছিল। এ-সব কথাই সাধু যোহন যীশু খ্রীষ্টকে সামধিস্থ করা হয়েছিল। এ-সব কথাই সাধু যোহন সুন্দরভাবে বিশদ ব্যাখ্যা করেছিলেন, কিন্তু তাঁর সে-সব কথাই কেউই ঠিকমতো মনোযোগ দেয়নি এবং খেয়ালও করেনি। যোহন লিখিত সুসমাচারের ১৯:৩১ পদে সাধু যোহন বলেছিলেন, ‘কেননা ঐ বিশ্রামবার মহাদিন ছিল’ (that Sabbath was a high day)। মহাদিন (high day) . . . বাৎসরিক সপ্তম বিশ্রামবার (seven annual Sabbath day) - সেটি সাপ্তাহিক বিশ্রামবার (regular weekly sabbath) থেকে সম্পুর্ণ ভিন্ন - আলাদা। আর তাই তিনি ওই দিনকে আলাদা করার জন্যই ওই ‘মহাদিন’ (high day) শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।

সেই ‘মহাদিন’ (high day) আসলেই কী ছিল, যার জন্য যীশু খ্রীষ্টকে এত তাড়াহুড়া করে সমাধিস্থ করতে হয়েছে?

সুসমাচারের তথ্যানুযায়ী দোষী সাবস্ত এবং ক্রুশারোপিত হওয়ার আগে ওই দিনই সন্ধ্যায় যীশু খ্রীষ্ট তাঁর শিষ্যদের নিয়ে নিস্তারপর্ব (Passover) পালন করেছিলেন। মথি ২৬:১৯-২০ পদ, মার্ক ১৪:১৬-১৭ পদ, লূক ২২:১৩-১৫ পদ। এর অর্থই হচ্ছে, যীশুকে ক্রুশারোপিত করা হয়েছিল নিস্তারপর্বের দিন (Passover day)।

‘নিস্তারপর্ব’ এবং ‘তাড়ী শূণ্য রুটির পর্ব’ (Passover day and the Feast of Unleavened Bread) - এই দু’টি পর্ব বা উৎসবই আবার আলাদা। সে-কথা স্পষ্টভাবেই ঈশ্বর উল্লেখ করেছেন লেবীয় পুস্তক ২৩:৫-৭ পদে, ‘প্রথম মাসে, মাসের চতুর্দ্দশ দিবস সন্ধ্যাকালে সদাপ্রভুর উদ্দেশে ‘নিস্তারপর্ব’ হইবে। এবং সেই মাসের পঞ্চদশ দিবসে সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে ‘তাড়ীশূন্য রুটীর উৎসব হইবে; তোমরা সাত দিন তাড়ীশূন্য রুটী ভোজন করিবে। প্রথম দিবনে তোমাদের ‘পবিত্র সভা’ (a holy convocation) হবে; তোমরা কোন শ্রমসাধ্য কর্ম  (no customary word) করিবে না।’

এটিই হচ্ছে ঈশ্বরের বাৎসরিক ‘বিশ্রামার্থক বিশ্রামপর্ব’ - বা ‘মহদিন পর্ব’ (day is the first of God's annual Sabbaths)- এই মহাদিনপর্বের (high days) কথাই সাধু যোহন উল্লেখ করেছিলেন। এমনকি কয়েকজন ‘বাইবেল ব্যাখ্যাকার’ এবং বিশ্বকোষ ও অভিধানেও সাধু যোহনের ‘মহাদিবপর্ব’ বা বিশ্রামার্থক পর্ব’ কথা স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করেছেন, কিন্তু সাপ্তাহিক বিশ্রামবারের (weekly Sabbath day) কথা তিনি উল্লেখ করেননি।

যখন এই বাৎসরিক ‘বিশ্রামার্থক বিশ্রামপর্ব’ (annual Sabbath) শুরু হয়, তখনই ‘নিস্তারপর্ব’ও (Passover) শুরু হয় - এক সূর্যাস্ত থেকে তার পরদিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত। যে রাতে যীশু তার শিষ্যদের নিয়ে এই ‘নিস্তারপর্ব’ (Passover) পালন করেছিলেন, সেই রাতেই তিনি বন্দি বা গ্রেফতারও হয়েছিলেন। আর তার পরদিন সকালে তাঁকে পন্টিয়াস পিলাতে’র কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, পরে ক্রুশে দেয়া হয়েছিল এবং ওই দিনই তাড়াহুড়া করে তাঁকে সমাধিস্থও করা হয়েছিল। কারণ ওই দিনই সূর্যাস্তের পর থেকেই ‘মহাদিন-পর্ব’ (high day) - ‘তাড়ীশূন্য রুটীপর্ব’ (the Feast of Unleavened Bread) শুরু হওয়ার কথা ছিল।

এসব ঘটনার কথা লেবীয় পুস্তক ২৩ অধ্যায়ে, সব কিছুই, এমনকি দিন-সময় পর্যন্ত এবং একই সঙ্গে সুসমাচারের সব তত্ত্বও খুব সুন্দর এবং খুব স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয়া আছে। ব্যাখ্যা এবং বিশ্নেষণ করাও আছে।

প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে বুধবারই ক্রুশে দেয়া হয়েছিল, শুক্রবার নয়।

ইদানিং আধুনিক কম্পিউচারের সাহায্যে অনেক তথ্যই উদঘাটন এবং সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে, বিশেষ করে, এই যোহন - ‘নিস্তারপর্ব’ ও ঈশ্বরের নির্ধারিত অন্যান্য উৎসবগুলো কোন্ বছরে, কখন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইত্যাদি। ওই সব অনুষ্ঠানলিপিগুলো পর্যালোচনা করে জানা গেছে যে, খ্রীষ্টাব্দ ৩১-এ (AD 31)। ‘নিস্তারপর্বের’ ভোজ হয়েছিল মঙ্গলবার রাতে এবং বুধবার সূর্যাস্তের পরই শুরু হয়েছিল ‘মহাদিনপর্ব’ - তাড়ীশূন্য রুটীর পর্বে’র প্রথম দিন ('high day', the first day of the Feast of Unleavened Bread)।

সুতরাং এটিই নিশ্চিত প্রমাণিত হয়েছে যে, যীশু খ্রীষ্টকে বুধবারই ক্রুশে দেয়া হয়েছিল এবং সমাধিস্থও করা হয়েছিল, কিন্তু শুক্রবার নয়।

এসব সততার প্রমাণ কি আমরা আর কোথাও পেতে পারি? নিশ্চয় সুসমাচারের সব প্রমাণই পাওয়া যায়।

তাহলে এবার আমরা অন্যান্য সাধারণ ঘটনাগুলোর দিকেও একটু সজর দিই। মার্ক ১৬:১ পদে আছে, ‘বিশ্রামদিন অতীত হইলে পর মগ্দলীনী মরিয়ম, যাকোবের মাতা মরিয়ম এবং শালোমী সুগন্ধি দ্রব্য ক্রয় করিলেন, যেন গিয়া তাঁহাকে মাখাইতে পারেন।’

সে-সময় অনেকেই আপন-প্রিয়জনদের মাটিতে কবর (সমাধি) না দিয়ে পাথরের সমাধিতেই সমাধিস্থ করতে বেশী পছন্দ করত এবং পচা-গলা, দুর্গন্ধ দূর করতে বন্ধু-বান্ধব এবং আপন-প্রিয়জনরা মৃতদের পাশাপাশি সমাধির চারদিকে সুগন্ধি তৈল, সুগন্ধি মশলা ইত্যাদি সুন্দরভাবে ছড়িয়ে-সাজিয়ে দিত।

‘বিশ্রামার্থক বিশ্রাম দিন’ বা ‘মহাদিনপর্বে’র (high-day Sabbath) আগের দিনই যীশুকে কবর বা সমাধিস্থ করায় ওই মহিলারা সুগন্ধি তৈল এবং সুগন্ধি মশলা ইত্যাদি কেনার কোনো সময় পাননি। তদুপরি বিশ্রামদিনেও দোকানপাট, হাট-বাজারগুলো সব বন্ধ থাকায় কেনার সুয়োগও ছিল না। তাই সাধু মার্ক বলেছিলেন, তাঁরা সুগন্ধি তৈল, সুগন্ধি মশলা ক্রয় করেছিলেন বিশ্রামবারের পরদিন। ‘বিশ্রামদিন অতীত হইলে পর মগ্দলীনী মরিয়ম, যাকোবের মাতা মরিয়ম এবং শালোমী সুগন্ধি দ্রব্য ক্রয় করিলেন, যেন গিয়া তাঁহাকে মাখাইতে পারেন’ (মার্ক ১৬:১ পদ )।

আরেকটি প্রমাণীকৃত সততাও লক্ষ করুন, ‘আর যে স্ত্রীলোকেরা তাঁহার সহিত গালীল হইতে আসিয়াছিলেন, তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ গিয়া সেই কবর, এবং ফিরিয়া গিয়া সুগন্ধি দ্রব্য ও তৈল প্রস্তুত করিলেন’ (লূক ২৩:৫৫-৫৬ পদ)।

হয়তো সব ঘটনাই লক্ষ করেছেন? সাধু মার্ক পরিষ্কার মন্তব্য করেছেন, ‘বিশ্রামদিন অতীত হলে . . . ‘ আর সাধু লূকও বলেছেন, স্ত্রীলোকেরা সুগন্ধি তৈল এবং সুগন্ধি মশলা প্রস্তুত করে . . . ‘বিশ্রামবারে তাঁরা বিধিমত বিশ্রাম করেছিলেন . . . ’

তার মানে এবার আমরা স্পষ্টভাবেই অনুমান করতে পারি যে, তাঁরা বিশ্রামবারের পরদিন সুগন্ধি দ্রব্য, মশলা ইত্যাদি ক্রয় করেছেন, প্রস্তুত করেছেন এবং ‘বিশ্রামবারে’ বিশ্রামও করেছেন। একই সঙ্গে পরপর দু-দু’টি বিশ্রামবার অন্তর্ভূক্ত না হলে দুই সুসমাচারে এমন পরষ্পর-বিরোধী শব্দযুক্ত উক্তি প্রকাশ হতো না।

আসলে এটিই ঠিক যে, দু-দু’টি বিশ্রামবারের কথাই সুন্দর ও সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ করলে আর কোনো সমস্যাই হতো না, অসুবিধাও হতো না।

সাধু মার্ক উল্লেখ করেছেন, ‘মহাদিনপর্ব’ (high day) শুরু হয়েছিল বুধবার সূর্যাস্তের পর এবং তা শেষ হয়েছিল বৃহস্পতিবার সূর্যাস্তের পর। ওই অবসরে স্ত্রীলোকেরা সুগন্ধি তেল, মশলা সব ক্রয় করেছিলেন কবরে গিয়ে যীশুর দেহে প্রলেপ দিতে। তারপর সাধু লূকও উল্লেখ করেছেন, খুব সম্ভবত ও সুগন্ধি মশলাগুলো প্রস্তুত করেছিল শুক্রবার। ‘শুক্রবার সূর্যাস্ত থেকে শনিবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত সাধারণ সাপ্তাহিক বিশ্রামবার - তাই উনারা বিশ্রাম করেছিলেন . . . ’   

বাইবেলের তথ্যানুযায়ী প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ক্রুশীয় মৃত্যু ও পুনরুত্থানের নিরূপিত সময় নির্ধারণ।

মঙ্গলবার . . . 
মঙ্গলবার সন্ধ্যারাতে প্রভু যীশু তাঁর শিষ্যদের নিয়ে নিস্তারপর্ব পালন করেছিলেন এবং ওই সময়েই ‘নতুন নিয়মে’র NISAN প্রবর্তন করেছিলেন, ‘পরে তাঁহারা ভোজন করিতেছেন, এমন সময়ে যীশু রুটী লইয়া আশীর্বাদপূর্বক ভাঙ্গিলেন, এবং শিষ্যদিগকে দিলেন, আর কহিলেন, লও, ভোজন কর, ইহা আমার শরীর। পরে তিনি পানপাত্র লইয়া ধন্যবাদপূর্বক তাঁহাদিগকে দিয়া কহিলেন, তোমরা সকলে ইহা হইতে পান কর; কারণ ইহা আমার রক্ত নূতন নিয়মের রক্ত, যাহা অনেকের জন্য, পাপমোচনের নিমিত্ত, পাতিত হয়’ মথি ২৬:২৬-২৮ পদ। সেই রাতেই ইষ্করিয়োতীয় যিহূদা বিশ্বাসঘাতকতা করে প্রভু যীশুকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন এবং পরে যীশুকে মহাযাজকের কাছে নিয়ে গিয়েছিল।

বুধবার . . . 
ওই দিনই প্রভু যীশুকে ক্রুশে দেয়া হয় এবং আনুমানিক বিকাল ৩টায় তিনি মারা যান। ‘যীশু উচ্চ রবে চিৎকার করে ডেকে বললেন, ‘এলী এলী লামা শবক্তানী’, অর্থাৎ, ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করিয়াছ? তখন যারা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাদের মধ্যে অনেকেই সে-কথা শুনে বলল, এ ব্যক্তি এলিয়কে ডাকছে আর তাদেরই একজন তখনই দৌড়ে গিয়ে একখানা স্পঞ্জ নিয়ে তাতে সিরকা ভরে একটি নলে লাগিয়ে তাঁকে পান করতে দিল। কিন্তু অন্য সকলে বলল, দেখি এলিয় তাঁকে রক্ষা করতে আসে কি-না। পরে যীশু আবার উচ্চ রবে চিৎকার করে নিজ আত্মাকে সমর্পণ করলেন মথি ২৭:৪৬-৫০ পদ। সেদিন বাৎসরিক আয়োজনের দিন ছিল। অর্থাৎ, বিশ্রামবারের পূর্বের দিন কিন্তু সাপ্তাহিক বিশ্রামবার নয়, (মার্ক ১৫:৪২ পদ, লূক ২৩:৫৪ পদ, যোহন ১৯:৩১ পদ। সেদিনই সূর্যাস্তের আগে যীশুকে সমাধিস্থ করা হয়, (মথি ২৭:৫৭-৬০ পদ)।

বৃহস্পতিবার . . . 
ওই দিন ‘বিশ্রামার্থক মহাদিন’ ছিল এবং তাড়িশূন্য রুটীর উৎসবের প্রথমদিনও ছিল, যোহন ১৯:৩১ পদ; লেবিয় ২৩:৪-৭ পদ আর সেদিন আয়োজনের দিনও ছিল মথি ২৭:৬২ পদ।

শুক্রবার . . . 
‘বিশ্রামার্থক মহাদিন’ পার হলে স্ত্রীলোকেরা সুগন্ধি দ্রব্য ক্রয় করলেন এবং প্রস্তুত করলেন যেন তাঁরা  সাপ্তাহিক বিশ্রামবারের পরের দিন কবরে গিয়ে যীশুর দেহে প্রলেপ দিতে পারেন, মার্ক ১৬:১ পদ, মথি ২৩:৫৬ পদ।

শনিবার . . . 
দশ আজ্ঞার চতুর্থ আজ্ঞানুসারে ওই স্ত্রীলোকেরা সাপ্তাহিক বিশ্রামবারে নিয়মিত (বিধিমতো) বিশ্রাম করলেন, লূক ২৩:৬ পদ, যাত্রাপুস্তক ২০:৮-১১ পদ। ঠিক তিন রাত এবং তিন দিন গত হলে যীশু পুনরুত্থান করেন। ভাববাদী যোনার কথাই সত্য প্রমাণিত হলো - ‘তিনিই মুক্তিদাতা . . . ’।

রবিবার . . . 
ওই স্ত্রীলোকেরা খুব ভোরে সূর্য ওঠার আগে সুগন্ধি দ্রব্য ও তৈল নিয়ে সমাধিতে গিয়ে দেখলেন, 
লূক ২৪:১ পদ, যোহন ২০:১ পদ। যীশু করবে নেই, কিন্তু পুনরুত্থান করেছেন।  মথি ২৮:১-৬ পদ, লূক ২৪:২-৩ পদ, মার্ক ১৬:২-৪ পদ, যোহন ২০:১ পদ, তবে তিনি রবিবার পুনরুত্থান করেননি, কিন্তু শনিবার সূর্যাস্তের আগেই পুনরুত্থান করেছেন।

সব ঘটনা পরপর সুন্দরভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে ধীর-স্থির চিত্তে, চিন্তা-ভাবনা, বিচার-বিবেচনা করে দেখলেই আমরা সব স্পষ্ট বুঝতে পারি যে, দুই বিশ্রামবারের মাঝে ছিল একটি সাধারণ কাজের দিন। প্রথম বিশ্রামদিন ছিল ‘মহাদিনপর্ব’। ‘তাড়ীশূন্য রুটীপর্বে’র প্রথম দিন বৃহস্পতিবার (The first Sabbath was a "high day" - the first day of the Feast of Unleavened bread, which fell on a Thursday), আর দ্বিতীয় বিশ্রামদিন ছিল সাপ্তাহিক সপ্তম দিবস শনিবার - সাধারণ বিশ্রাম দিবস (The second was the weekly seventh-day Sabbath)। (বাইবেলের তালিকাটি একটু লক্ষ করলে সব প্রমাণই পাবেন)।

গ্রিক ভাষায় লেখা আদি বাইবেলের (মূল গ্রন্থ) দু’টি বিশ্রামবারের কথাই স্পষ্টই উল্লেখ করেছেন, ‘বিশ্রামবারের পর’ স্ত্রীলোকেরা সমাধিতে গিয়েছিলেন। উল্লেখিত সেই ‘বিশ্রামবার’, কিন্তু একদিন ছিল না, ছিল পরপর দু’দিন। আসলে ইংলিশ ভাষায় ভাষান্তর করার সময় ‘বিশ্রামবারটা’ বহুবচন হওয়ার কথাই ছিল। দুর্ভাগ্যবশত গ্রিক ভাষা থেকে ইংলিশ ভাষায় তর্জমা করার সময় খুব সম্ভবত দৃষ্টির একটু বিভ্রম হওয়াতেই . . .

তাহলে প্রভু যীশু কখন কবে পুনরুত্থান করেছেন?

এবার আমরা নিশ্চিত যে, প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে সমাধিস্থ করা হয়েছিল বাৎসরিক ‘বিশ্রামদিনের’ আগের দিন ‘বুধবার’, কিন্তু সেটি ‘সাপ্তাহিক বিশ্রামবার’ ছিল না। তাহলে তিনি কবে পুনরুত্থান করেছেন?

সাধু যোহন বলেছেন, ‘সাপ্তাহিক প্রথম দিন প্রত্যুষে অন্ধকার থাকিতে থাকিতে মগ্দলীনী মরিয়ম কবরের নিকটে যান, আর দেখেন, কবর হইতে পাথরখানা সরান হইয়াছে’ (যোহন ২০:১ পদ)। সাধু যোহন বলেছেন, ‘অন্ধকার থাকিতে থাকিতে . . . ’ তার মানে তখনও ঠিক ভোর হয়নি, সূর্যও ওঠেনি, কিন্তু মরিয়ম শূন্য সমাধিই দেখেছেন।

তাহলে এটিই প্রমাণিত হয় যে, যীশু রোববার সকালে সূর্য ওঠার আগে পুনরুত্থান করেননি। তবে কখন - কবে তিনি পুনরুত্থান করেছেন? উত্তর খুবই সোজা এবং সহজ। সুসমাচার এবং যীশুর কথাগুলো একটু লক্ষ করুন, সেখানেই উত্তর পাবেন।

‘কারণ যোনা যেমন তিন দিবারাত্র বৃহৎ মৎস্যের উদরে ছিলেন, তেমনি মনুষ্যপুত্রও তিন দিবারাত্র পৃথিবীর গর্ভে থাকিবেন’ (মথি ১২:৪০ পদ)। "For as Jonas was three days and three nights in the whale's belly; so shall the Son of Man be three days and three nights in the heart of the earth" (Matthew 12:40)

এবার আমরা সব প্রমাণই পেলাম। যীশু খ্রীষ্ট ‘বুধবার’ সূর্যাস্তের আগে ‘পৃথিবীর গর্ভেই ছিলেন’ - সমাধিতে। এরপর দরকার শুধু দিন এবং রাত গণনা করে সব হিসাব মিলানো। বুধবার সূর্যাস্ত থেকে বৃহস্পতিবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত এক রাত এক দিন বৃহস্পতিবার সূর্যাস্ত থেকে শুক্রবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত দু’রাত এবং দু’দিন, শুক্রবার সূর্যাস্ত থেকে শনিবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত তিন রাত এবং তিন দিন . . . 

যীশু খ্রীষ্ট তাঁর নিজের কথানুসারেই তিন দিবারাত সমাধিস্থ থাকার পর ওই একই সময়ে সূর্যাস্তের একটু আগে পুনরুত্থান করেছিলেন। তার মানে ধর্মগ্রন্থের সততাও প্রমাণিত হলো . . . তা-ই নয় কি? ঠিকই, আমরা যা জেনেছি এবং যা বুঝেছি, রোববার সকালে সূর্য ওঠার অনেক-অনেক আগেই তিনি পুনরুত্থান করেছেন, যার জন্য মরিয়ম গিয়ে শুধু শূন্য সমাধিই দেখেছিলেন . . ‘তখনও অন্ধকারই ছিল . . .’

যদিও তাঁর পুনরুত্থান-সাক্ষ্য দেয়ার মতো তখন এমন কেউই কাছে ছিল না, তা ঠিক (আসলেই এসব ঘটনাই ঘটেছিল সিল মোহরাঙ্কিত সমাধির ভেতরে। বাইবে সর্বক্ষণই সশস্ত্র প্রহরী পাহারা ছিল)। সবচেয়ে বড় কথা যীশু খ্রীষ্টের কথাতেই সত্যতা প্রমাণিত হলো এবং একই সঙ্গে সুসমাচারের সত্যতাও প্রমাণিত হলো যে, তিনি তিন দিবারাত্র সমাধিস্থ থাকার পর সাপ্তাহিক বিশ্রামদিনের শেষে সূর্যাস্তের আগেই পুনরুত্থান করবেন।

তাই বলছিলাম, এবার আপনিও চেষ্টা করে দেখুন, অসম্ভব সম্ভব হতেও পারে। দেখুন শুক্রবার বিকাল থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত ঠিক তিন দিন তিন রাত হয় কি-না! পুণ্য শুক্রবার থেকে পুনরুত্থান রোববার - আসলেই তা কিন্তু ঠিক বাইবেলের নির্ণিত সময় ছিল না। তবে আপনি যদি সব ঘটনা পূর্ণাঙ্গরূপে পুনরূপযোজন - পুনরুল্লেখ করে মিলিয়ে দেখেন, তাহলে সুসমাচারের প্রকাশিত কথায় সত্যতার সঙ্গে যীশুর নিজের কথাগুলোর নির্ভুল সত্যতার প্রমাণই পাবেন।

শূন্য সমাধি দেখে স্তম্ভিত স্ত্রীলোকেরাও স্বর্গদূতের কথার প্রমাণ পেয়েছিল, ‘সেই দূত স্ত্রীলোক কয়জনকে কহিলেন, তোমরা ভয় করিও না, কেননা আমি জানি যে, তোমরা ক্রুশে হত যীশুর অন্বেষণ করিতেছ। তিনি এখানে নাই; কেননা তিনি উঠিয়াছেন, যেমন বলিয়াছিলেন; আইস, প্রভু যেখানে শুইয়াছিলেন, সেই স্থান দেখ’ (মথি ২৮:৫-৬ পদ)।

আসুন, আমরা শুধু ধর্মীয় ঐতিহ্যে এবং ধর্মীয় চিন্তা-দৃষ্টিতে ধর্মীয় পুস্তকের সমর্থন না করে বরং বিশ্বাসে, চেতনায় আচার-আচরণে, নিষ্ঠায় নিরবধি বাইবেলের ওপর ঐকান্তিক ঐশ্বিক ভিত্তি স্থাপন করি। আর আপনি কি জাগতিক সুখ-ভোগ-বিলাস, লোভ-লালসা, স্বস্ত্যয়ন পরিত্যাগ করে একমাত্র জীবন্ত ঈশ্বরের সাকারোপসনা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ! তিনি স্নিগ্ধকান্তি-স্নেহসিক্ত-স্ববৈর্দ্য।



Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?