বড়দিনের সাজানো উপকরণ
বড়দিনের সময় সবার ইচ্ছা হয় ঘর-বাড়ি সাজানো। সাজানোর জিনিসগুলো হয় যেমন রঙিন কাগজের ঝালর, পতাকা, বিভিন্ন রঙের কাগজের, প্লাস্টিকের, কাচের, মাটির তৈরি অনেক কিছু; ক্রিসমাস-ট্রি সাজানো, নানারঙের ইলেকট্রিক বাতি, তারা তৈরির ফ্রেমে রঙিন কাগজ ও বাতি লাগানো, বিভিন্ন রং এছাড়াও নিত্য নতুন জোগার করা সাজানোর বিভিন্ন উপকরণ, আর শোভনীয় অলংকার আর অনেক রকমের গহনা তো আছেই। আমি যখন সাজানোর জিনিসের কথা চিন্তা করি তখন আমি এসব জিনিসকে চকচকে, উজ্জ্বল, ঝলমলে এবং খুব সুন্দর মনে করি। একজনের কথা “এক অর্থে অলংকার, ভালো কোনো স্মৃতিচারণ হতে পারে বা খারাপ কোনো স্মৃতি চারণও হতে পারে।” যাহোক আমি মনে করি যে সাজানো অলংকার স্পর্শে নয়, ধরলে নয়, দেখলেও নয়, কিন্তু অলঙ্কারের সৌন্দর্যকে অন্তরে অনুভব করতে হয়; আর এতেই মন জুড়ায়।
অনেক সময় এসব সাজানো অলংকার বা উপকরণ স্মরণ করিয়ে দেয় আগেকার কোনো বড়দিনের কথা। মনে করিয়ে দেয় কোনো জন্মদিনের কথা, কোনো উৎসবের কথা আর নিজের সংগ্রহে থাকা সাজানো কিছু অলংকারের কথা কিংবা কোনো বিশেষ কারোর হাতে এসব সাজানোর কথা, তাদের হাতে বানানোর কথা।
আভিধানিক ব্যাখ্যায় - অলংকার এমন কোনো জিনিস যা ভক্তি, শ্রদ্ধা ও পূজার উপযোগী করা হয়, যা দিয়ে সৌন্দর্যবৃদ্ধি করা হয়, যার দ্বারা ভূষিত করে সম্মান জানানো হয়, সাজানো গোছানো হয় অর্থাৎ কিনা অলংকৃত করা হয় এমন। তাই আমরা এভাবে সাজসজ্জার উপকরণ দিয়ে ঘরবাড়ি সাজিয়ে গুছিয়ে অলংকারে শোভায় শোভিত করে থাকি। আমরা যদি ঘরবাড়ি রং-বেরং এর বাতি দিয়ে, সাজানোর উপকরণ দিয়ে, বিভিন্ন প্রকার অলংকার দিয়ে না সাজাই, রংচং না করি তাহলে ঘরটা সাধারণ একটা সাদামাটা ঘর-ই থেকে গেল। বিদেশে কি আর আজ আমাদের দেশেও অনেকে ঘরে বিভিন্ন প্রকার সাজানো অলংকার দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজিয়ে রাখেন, অনেকে বাতি দিয়ে তারা সাজিয়ে ঝুলিয়ে রাখেন। বেশ ভালোই লাগে দেখতে।
বাইবেল অলংকারের বিষয়ে বলে। ১ পিতর ৩:৪ পদে বলে, “কিন্তু হৃদয়ের গুপ্ত মনুষ্য, মৃদু ও প্রশান্ত আত্মার অক্ষয় শোভা, তাহাদের ভূষণ হউক; তাহাই ঈশ্বরের দৃষ্টিতে বহুমূল্য।” অর্থাৎ ‘কোমলতা, ও শান্তিতে পূর্ণ আত্মার অক্ষয় শোভায় হৃদয়ের গুপ্ত স্থান ভূষিত কর, নরম ও শান্ত স্বভাব দিয়ে তোমাদের অন্তরকে সাজাও ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সেটাই মহামূল্যবান।’ আমরা কীভাবে আমাদের দেহ সাজাবো যা খ্রীষ্ট আমাদের দিয়েছেন? আমরা ১পিতর ৩:৩ পদ দেখি - “আর কেশবিন্যাস ও স্বর্ণাভরণ কিংবা বস্ত্র পরিধানরূপ বাহ্য ভূষণ, তাহা নয়, কিন্তু হৃদয়ের গুপ্ত মনুষ্য।” অর্থাৎ ‘নানা রকম চুলের বেণী, গয়নাগাটি বা সুন্দর সুন্দর কাপড় - এসব বাইরের সাজপোষাক দিয়ে নিজেকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ো না . . কিন্তু তোমাদের অন্তরকে সাজাও।’ হ্যাঁ, আমাদের অন্তরকে তো সাজানো উচিত।
পিতর এমন কথা বলেননি যে মহিলারা তাদের চুল বাঁধতে পারবে না কিংবা অলংকার ও গহণা পরতে পারবে না বরং সে নিজেকে এমনভাবে সাজাবে “যার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে না।” নরম ও শান্ত স্বভাব দিয়ে তার অন্তরকে সাজাতে হবে যা ঈশ্বরের চোখে খুব দামি। পিতর এ বিষয়ে জোর দিয়ে বলেছেন যে অন্তর যতটা-না গুরুত্বপূর্ণ বাইরের সাজসজ্জাটা অতোটা নয়। আমাদের অন্তরের আচরণের উপরেই আমাদের জীবন নির্ভর করে। বাহ্যিক বিষয় নিয়ে অর্থাৎ যা প্রয়োজন নয় এমন সব বিষয় নিয়ে সব সময় চিন্তা করবেন না, কারণ আমাদের চারিদিকের সবাই আমাদের জীবনে, আমাদের অন্তরে যা প্রকাশ পায় সে দিকেই তাকিয়ে থাকে বা দৃষ্টি দেয়।
বড়দিনে যেভাবে আমাদের ঘরবাড়ি ও গাছপালায় সাজানো অলংকার ঝুলছে; ঠিক সেভাবেই আমাদের জীবনটাও অন্যদের দেখাবার জন্য প্রকাশ্যে ঝুলছে। আমরা কীভাবে খ্রীষ্টের দেওয়া দেহটাকে ভক্তি শ্রদ্ধার উপযোগী, সৌন্দর্যবৃদ্ধি ও সম্মানে ভূষিত করে, অন্তর সাজিয়ে অলংকৃত করে উজ্জ্বল করতে পারি?
এবারে দেখি যে পাঁচ ধরনের অলংকার আছে :
১। মরচে ধরা ও ফ্যাকাসে অলংকার
২। বিশ্রী, কুৎসিত ও জঘন্য অলংকার
৩। ভাঙাচোড়া ও ছেঁড়া-ফাটা অলংকার
৪। বাক্স-বন্দি অবস্থায় থাকা অলংকার
৫। একেবারে নিখুঁত অলংকার
মরচে ধরা ও ফ্যাকাসে সাজানো অলংকারে চাকচিক্য থাকে না, আর তার গায়ে রঙ থাকে না - রংচটা। চলনে-বলনে মানুষ খ্রীষ্টিয় জীবনে থাকতে পছন্দ করতে পারে, কিন্তু লোকেরা যখন সত্যিকারে আপনার আত্মিক জীবনের স্পর্শ পায় তখন তাদের দৃষ্টিতে আপনার চাকচিক্য দেখতে পায় না, কারণ এসব শুধু অভিনয় ও ভান করা।
বিশ্রী, কুৎসিত ও জঘন্য সাজানো অলংকার আমাদের সেসব খ্রীষ্টিয়ানদের মনে করিয়ে দেয় - যারা বিশ্রী অঙ্গভঙ্গিতে এবং কুৎসিত কথাবার্তায় আত্মিকতায় একেবারে জঘন্য, যাদেরকে কেউ তাদের সাথে রাখতে চায় না।
অনেক অনেক সাজানো অলংকার আছে যা ছেঁড়া-ফাটা বা ভাঙাচোড়া। যখন এসব দূরে কোথাও রাখা ছিল তখন ভালোই ছিল, কিন্তু কোনো এক সময় দেখা যায় সেগুলো ছিঁড়ে গেছে, ফেটে গেছে বা ভেঙে গেছে। এগুলো কোনো-না কোনোভাবে ভেঙে থাকে। খ্রীষ্টিয়ানেরাও শেষ পর্যন্ত ভেঙে যেতে পারে, যদি তারা তাদের আত্মিক জীবনকে অবজ্ঞা করে। তারা তাদের জীবনকে ভঙ্গুর দেখতে পায়, কারণ তারা সঠিক ও উপযুক্ত স্থানে থাকতে নিজেদের সেরকম কোনো গুরুত্ব দেয় নাই।
অনেকের অনেক সাজানো অলংকার আছে যা লুকানো ও বাক্স-বন্দি অবস্থায় থাকে আর এরপর এসব আর কখনোই ব্যবহার করা হয় না। অনেক অনেক খ্রীষ্টিয়ানেরা সেভাবে কোথাও কোনো গুদামে বাক্স-বন্দি অবস্থায় থাকে, লুকিয়ে থাকে আর প্রভুর দ্বারা কখনোই ব্যবহৃত হয় না। তাদের বাইবেল পাঠ বন্ধ, প্রার্থনা শেষ, সাক্ষ্য নাই, আর ঈশ্বর এদের পরিবর্তে অন্য কাউকে ব্যবহার করেন অলংকারে সাজানোর জন্য যাদের দ্বারা শোভা বৃদ্ধি পায়।
এরপরও নিখুঁত অর্থাৎ ভালো ভালো কিছু অলংকার থেকেই যায়। অলংকারটা ভালো ভালো স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়, আর খুবই প্রশংসনীয়, আর তা সবসময়ই বাড়িঘরে ও গাছে লাগানো হয়। এসব অলংকার দেখলে চোখ জুড়ায়, আর সুগন্ধে মনও ভরে।
একজন খ্রীষ্টিয়ানরূপে আমাদের অবশ্যই নম্র-ভদ্র, শান্তশিষ্ট, সাজানো অন্তর, সমর্পিত, বাধ্য, উৎসাহী এবং মনোরম একটি অলংকার হওয়ার আগ্রহ থাকতে হয়, যার কথা সাধু পিতর বলেছেন। ঈশ্বর সচেতনতায় থাকা এবং তাঁর প্রতি আগ্রহ থাকায় আমাদের জীবন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। সেজন্য ভালো ভালো স্মৃতি সবসময় আমাদের মনেই থাকে, যা প্রশংসনীয় এবং ঈশ্বর তাদের ব্যবহার করেন।
আজ আমি ও আপনি কোন্ অলংকারে সজ্জিত?
Comments