কেন মূর্তি ও ছবির প্রতি এতো শ্রদ্ধা, প্রণাম এতো অনুরক্ত?

(অনুবাদ)

রোমের সীমান্ত অঞ্চলে যারা বাস করেন তাদের জন্য কাথলিক ধর্মীয় মূর্তির সমস্যা বাস্তবে ততটা গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর নয়। কিন্তু ইতালির কেন্দ্রস্থলে মূর্তির প্রতি মনোভাব এখন পর্যন্ত মানদণ্ডস্বরূপ, যা অধিকাংশ কাথলিকরা প্রোটেস্টান্টদের মধ্যে এ নিয়ে তাদের পার্থক্য দেখিয়ে থাকেন। তারা বলে, “ওহ, তোমরা প্রোটেস্টান্ট মতাবলম্বী! তোমরা সাধুদের বিশ্বাস কর না, তাই না?”

কাথলিক ধর্মমত বর্ণনা করে, “সাধুদের মূর্তির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন অনুমতি দানের যোগ্য। অন্যান্য ক্ষমতাধর রোমান কাথলিক দেশের জন্য এই মূর্তিগুলো আর সাধু ব্যক্তিরা যা প্রকাশ করে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা শুধু মণ্ডলীর নিজের জন্য সত্য নয় কিন্তু যারা নীতিগতভাবে ধর্মীয় লোক নয় এই রকম বহু বহু লোক এমনকি যারা কখনো প্রায় কোনো মণ্ডলীর দ্বারপ্রান্তে যায়নি তারাও নিজেদের উৎসর্গকৃত কাথলিক মনে করে। কারণ তারা কোনো না কোনো মূর্তির বা একাধিক মূর্তির প্রতি একান্তভাবে অনুরক্ত, প্রীত।

প্রোটেস্টান্টরা তাদের প্রতিবেশী কাথলিকদের থেকে পৃথক, স্বতন্ত্র এবং আলাদা। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো প্রোটেস্টন্টদের দৃঢ় উক্তি যে, প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে ঈশ্বরকে জানা প্রয়োজন। প্রকৃতপক্ষে এর বিশেষ কারণ খ্রীষ্ট যীশু এ জগতে এসেছিলেন, তিনি আমাদের পাপের জন্য মরেছেন এবং তিনি আমাদের পাপসকল যা ঈশ্বর থেকে আমাদের বিচ্ছিন্ন করে তা তুলে নিতে পুনরায় মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠেছেন, যেন আমরা ব্যক্তিগত উপায়ে তাঁকে জানতে পারি। বাইবেল আমাদের শিক্ষা দেয় যে ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের প্রত্যেকের সরাসরি অবিরাম সম্পর্ক থাকা উচিত, কিন্তু বর্ণিত কোনো একটি মূর্তির মাধ্যমে কিংবা বর্ণিত কোনো সাধুর মাধ্যমে বহু দূরে সম্পর্ক থাকতে নয়। বাইবেলের আদিপুস্তকের শুরু থেকে শেষ পুস্তক প্রকাশিত বাক্য পর্যন্ত অপরিহার্য একটি বিষয় হলো মূর্তিগুলোর জন্য প্রভুর ঘৃণা। এছাড়ও আরো একটি কারণ হলো অন্য কিছুর নিকট প্রার্থনা করা আর অন্য কিছুকে বিশ্বাস করার ব্যবস্থা করা প্রভুর সঙ্গে মানুষের সরাসরি সম্পর্ককে বিঘ্নিত করে, পৃথক করে।

হারিয়ে যাওয়া আজ্ঞার রহস্য

অধিকাংশ কাথলিকরা খুবই আশ্চর্য হন যখন তারা দশ আজ্ঞার একটি আজ্ঞায় মূর্তিগুলোর ব্যবহার সম্বন্ধে নিষেধাজ্ঞা দেখেন। এখানে প্রোটেস্টান্টদের প্রকাশিত কোনো গ্রন্থ থেকে নয় কিন্তু কাথলিকদের বাইবেল থেকে দ্বিতীয় আজ্ঞাটির উদ্ধৃতি দেওয়া হলো: “তুমি তোমার জন্য খোদাই করা কোন প্রতিমূর্তি তৈরি করবে না; উপরে সেই আকাশে, নিচে এই পৃথিবীতে, ও পৃথিবীর নিচে জলরাশির মধ্যে যা কিছু রয়েছে, তার সাদৃশ্যেও কোন কিছুই তৈরি করবে না। তুমি তেমন বস্তুগুলির উদ্দেশে প্রণিপাত করিবে না, সেগুলির সেবাও করবে না; কেননা আমি, তোমার পরমেশ্বর প্রভু যিনি, আমি এমন ঈশ্বর, যিনি কোন প্রতিপক্ষকে সহ্য করেন না; যারা আমাকে ঘৃণা করে, তাদের বেলায় আমি পিতার শঠতার দ- সন্তানদের উপরে ডেকে আনি - তাদের তৃতীয় ও চতুর্থ পুরুষ পর্যন্ত; কিন্তু যারা আমাকে ভালবাসে ও আমার আজ্ঞাগুলি পালন কর, আমি সহস্র পুরুষ পর্যন্তই তাদের প্রতি কৃপা দেখাই।” (যাত্রাপুস্তক ২০:৪-৬ পদ)।

কাথলিক মণ্ডলী যখন নিয়মিতভাবে ধর্মীয় শিক্ষায় দশ আজ্ঞার বিষয় শিক্ষাদান করেন তখন তারা একেবারেই ঐ পদটি বা এ প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান। তবুও সব সময়ই কাথলিক বা প্রোটেস্টান্টদের দ্বারা ছাপানো প্রকাশিত যে কোনো বাইবেলে বিষয়টি পাওয়া যায়। যদি আপনার কাছে বাইবেল থাকে, আপনি এখনই তা খুলে দেখতে পারেন।

যদি আপনার কাছে একটি রোমান কাথলিক (স্তোত্র) প্রশ্নোত্তর মালা থাকে তা-ও খুলে দেখুন না কেন? আপনি তখনই দেখবেন না যে মূর্তি নির্মাণ করা এবং তার সম্মুখে প্রণিপাত করা বাদ দেওয়া হয়েছে। কারণ সেখানে তখনো দশ আজ্ঞা আছে। যদি কাথলিক এবং প্রোটেস্টান্ট উভয় বাইবেলের প্রথম তিনটি আজ্ঞা পাঠ করেন আর প্রশ্নোত্তর মালা দেখেন তবে আপনি লক্ষ্য করবেন যে, দ্বিতীয় আজ্ঞাটি অন্য সকল আজ্ঞা অপেক্ষা দীর্ঘ, আর প্রশ্নোত্তর মালার বর্ণনায় দেখা যায় এটি বাদ দেয়া হয়েছে। এই বাদ দেয়া অংশটি পূরণের জন্য এবং দশ আজ্ঞা পূর্ণ করতে দশের আজ্ঞাটিকে কৌশলে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। কাথলিক বাইবেলে দশ আজ্ঞা কীভাবে পড়া হয় এখানে দেখানো হলো: “তোমার প্রতিবেশীর ঘরের প্রতি লোভ করবে না; প্রতিবেশীর স্ত্রী, তার দাস-দাসী, তার বলদ-গাধা, তার কোন কিছুরই প্রতি লোভ করবে না” (যাত্রাপুস্তক ২০:১৭ পদ)। প্রশ্নোত্তর মালায় নয় আজ্ঞাটি হলো, ‘প্রতিবেশীর স্ত্রী . . . লোভ করবে না’ আর বাকি অংশ ‘দাসে কি দাসীতে ইত্যাদি একত্রে কৌশলে দশ আজ্ঞারূপে গঠন করা হয়েছে। এই আজ্ঞাগুলো আবার দ্বিতীয় বিবরণ পুস্তকের ৫ অধ্যায়ে পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। এই দ্বিতীয় অংশে এটা লক্ষ্য করা যায় না যে কৌশলে দ্বিতীয় আজ্ঞাটি সরিয়ে নিতে দশ আজ্ঞাটিকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সম্ভবত এ কারণেই কাথলিক মণ্ডলী সাধারণত যাত্রাপুস্তকের মূল দশ আজ্ঞার পরিবর্তে দ্বিতীয় বিবরণে পুনরায় দেয়া অংশটি ব্যবহার করে থাকে।

ঘটনাটি এই যে, দ্বিতীয় আজ্ঞাটি সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে আর বাদ দেওয়া গুপ্ত বিষয় দেখায় যে অন্যরা যেভাবে করছে তা থেকে কাথলিক মণ্ডলী ভিন্ন ব্যাখ্যা করছে এটা কোনো ব্যাপার নয়। তাদের মূর্তিগুলোর বিষয়ে যে তাদের দোষী করা হচ্ছে এটা যদি তারা না বুঝতো তাহলে কেন তারা এই আজ্ঞা তাদের প্রশ্নোত্তর মালা এবং অন্যান্য জনপ্রিয় কাথলিক শিক্ষা থেকে সরিয়ে রাখলো?

ফটোগ্রাফ/ছবি

অনেকে মূর্তির কাছে প্রার্থনা করার বিষয়টি সমর্থন করার চেষ্টায় বলে থাকেন যে, আমাদের যদি আক্ষরিকভাবে দ্বিতীয় আজ্ঞা পালন করতে হয়, তবে তো আমরা আমাদের বন্ধু প্রিয়জনদেরও ছবি/ফটোগ্রাফ রাখতে পারি না। বাইবেল এ বিষয়ে একটি অংশে পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করেছে যে, কী প্রকারের মূর্তিগুলো ব্যবহারের অযোগ্য। নিষিদ্ধ মূর্তিগুলো হলো যার প্রতি লোকেরা শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে এবং উপাসনা করে: যেমন, “তোমরা নিজেদের জন্য অবস্তু কোন প্রতিমা তৈরি করবে না, খোদাই করা কোন মূর্তি কিংবা স্মৃতিস্তম্ভ দাঁড় করাবে না, তার সামনে প্রণিপাত করার জন্য তোমাদের দেশে খোদাই করা কোন পাথর রাখবে না; কেননা আমি প্রভু তোমাদের পরমেশ্বর।” (লেবীয় পুস্তক ২৬:১ পদ)। লক্ষ্য করুন এখানে, যেমন যাত্রাপুস্তকে মূর্তি ব্যবহারের জন্য একটি উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে, উপাসনার জন্য; একই অর্থে ইব্রীয় শব্দটি মাঝে মাঝে অনুবাদ করা হয়েছে ‘প্রণিপাত করা’ আমাদের বন্ধুদের এবং পরিবারের স্বাভাবিক ফটো সম্বন্ধে এই উদ্দেশ্য বাদ দেয়া হয়নি। একটি সুস্পষ্ট ব্যতিক্রম হলো মৃত আত্মীয়দের ফটো নিয়ে প্রার্থনার অনুশীলন করা

প্যাগান মূর্তি (পৌত্তলিক)

অনেকে ঈশ্বরের সুস্পষ্ট শিক্ষা এড়াতে চেষ্টা করে। একটি কর্তৃত্বপূর্ণ বর্ণনা তারা দেয় যে ঈশ্বর শুধু পৌত্তলিক মূর্তিগুলো সম্পর্কে বলেছেন, তাদের ‘খ্রীষ্টিয়ান’ প্রতিমা/মূর্তিগুলো সম্পর্কে নয়।

আমারা লক্ষ্য করি যে :

মোশি বলছিলেন, পৌত্তলিকদের কাছে ঈশ্বরের মনোনীত লোক ইব্রীয়দের কাছে নয়। তিনি তাদের বলেছিলেন যে, সদাপ্রভু যখন তাদের দশ আজ্ঞা দিয়েছিলেন তখন তিনি তাদের কাছে নিজেকে দেখাননি এর একটি মূল্যবান কারণ ছিল: যেন ঈশ্বরের লোকেরা ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি নির্মাণ না করে, “তাই যেদিন প্রভু হোরেবে আগুনের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, যেহেতু সেদিন তোমরা মূর্তিমান কিছু দেখনি, সেজন্য তোমাদের নিজেদের বিষয়ে খুবই সাবধান হও, পাছে ভ্রষ্ট হয়ে তোমরা নিজেদের জন্য কোন দেবতার খোদাই করা মূর্তি তৈরি কর - তা পুরুষলোকের বা স্ত্রীলোকের প্রতিমূর্তি হোক” (দ্বিতীয় বিবরণ ৪:১৫-১৬ পদ; আরও পাঠ করুন ১৭-২৯ পদ)। এখানে যা নিষিদ্ধ ছিল তা কোনো পৌত্তলিক মূতি নয় কিন্তু ঈশ্বরের মনোনীত লোকদের নির্মিত যে-কোনো মূর্তি, হতে পারে তা ঈশ্বরের নিজের বা পুরুষদের বা স্ত্রীলোকদের কোনো।

ঈশ্বর একজন যিহূদী রাজার প্রশংসা করেছিলেন, যিনি একটি পিত্তল নির্মিত সর্পমূর্তি ধ্বংস করেছিলেন। মূর্তিটি তাঁর দ্রুত আজ্ঞায় নির্মিত হয়েছিল এবং যা তাঁর লোকেরা একটি নিরূপিত সময়ের পর উপাসনা করতে শুরু করেছিল। এই রাজার বিষয়ে বাইবেল বলে, “. . . তাঁর পিতৃপুরুষ দাউদের সমস্ত কাজ অনুসারে প্রভুর দৃষ্টিতে যা ন্যায় তেমন কাজই করলেন। তিনি উচ্চস্থানগুলি নিশ্চিহ্ন করলেন, যত স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে দিলেন, পবিত্র  দণ্ডগুলো ছিন্ন করলেন, ও মোশী যে ব্রঞ্জের সাপ তৈরি করেছিলেন, তা ভেঙে ফেললেন, কেননা সেসময় পর্যন্ত ইস্রায়েল সন্তানেরা তার উদ্দেশে ধূপ জ্বালাত;. . . .” (২ রাজাবলি ১৮:৩-৪ পদ)।

নতুন নিয়মে প্রতিমা পূজা নিষিদ্ধ

অনেকে ঈশ্বরের সুস্পষ্ট বাক্যের শিক্ষা এড়াবার চেষ্টায় এমন দাবি করে যে, পুরাতন নিয়মে মূর্তিপূজা নিষিদ্ধ হলেও এখন অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তারা দাবি করে যে, আমরা এখন আর পুরাতন নিয়মের সময়ে নেই, আমরা নতুন নিয়মের অধীন। এই যুক্তির মারাত্মক দুর্বলতা এই যে এটা সত্য নয়। নতুন নিয়মে মূর্তি সম্বন্ধে অনেক কথা লিপিবদ্ধ আছে যা সব সময়ই মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে। ঠিক যেমন আছে পুরাতন নিয়মে। নতুন নিয়মের গোড়ার দিকে একটি অংশে ১করিন্থীয় ১০:১৪ পদে লেখা রয়েছে, “ . . . হে আমার প্রিয়জনেরা, প্রতিমা-পুজা এড়িয়ে চল” এই আলোচ্য বিষয়টি নতুন নিয়মের সর্বত্রই আছে। এমনকি, নতুন নিয়মের শেষের দিকে পুস্তক ১যোহন ৫:২১ পদে লেখা আছে; যেখানে বলা হয়েছে, “বৎস, তোমরা অলীক দেবতাগুলো থেকে দূরে থাক।”

যে পদগুলো উল্লেখ করা হলো তা ছাড়াও এ বিষয়ে উল্লেখ করার মতো আরো অনেক পদ আছে, কিন্তু সেগুলো আমরা নিজেরাই দেখার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছি। আপনি দেখবেন যে, নতুন নিয়মের প্রায় সর্বত্রই মূর্তিপূজা করা নিষিদ্ধ। যেমন ১করিন্থীয় ৬:৯; ১০:৭; ১২:২ পদ; প্রেরিত ৭:৩৯-৪২; ১৭:১৬, ২৯ পদ; রোমীয় ১:২৩ পদ; ১পিতর ৪:৩ পদ; প্রকাশিত বাক্য ২:১৪; ৯:২০; ২১:৮; ২২:১৫ পদ ইত্যাদি।

মণ্ডলীতে প্রতিমা উপাসনার ইতিহাস

প্রথম শতাব্দীর মণ্ডলীগুলোতে প্রতিমার ব্যবহার ছিল না ( মাছ প্রতীক ছাড়া অন্যান্য যা চিহ্নরূপে ব্যবহৃত হতো, মূর্তিরূপে নয়)। প্রায় তৃতীয় শতাব্দীর শেষভাগে মণ্ডলীতে প্রথম মূর্তি সুন্দর অলঙ্কাররূপে প্রবেশ করে। ৪০০ খ্রীষ্টাব্দে নির্দেশ সংক্রান্ত উদ্দেশ্যেও সেগুলো ব্যবহৃত হয়েছে এবং পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে মূর্তিগুলোকে পবিত্র বলে সম্মান করা হয়। সেগুলো ৭৪৭ খ্রীষ্টাব্দে নিসিয়া কাউন্সিলে এবং পরে ১৫৬২ খ্রীষ্টাব্দে ট্রেণ্ট দ্বারা রোমীয় মণ্ডলীতে শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য গ্রহণ করা হয়।

কাথলিক প্রথা অনুযায়ী যখন কোনো ব্যক্তি প্রার্থনা করেন বা কোনো মূর্তির উপাসনা করেন, তখন তিনি সাধুর উপাসনা করেন। এই ব্যাখ্যায় এই দল দ্বিমত পোষণ করতে পারে কিন্তু মূর্তির নিকট প্রার্থনা কখনো যথাযথ ন্যায্যতা প্রতিপাদন করে না। কারণ ঈশ্বর সেরকম করতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। কাথলিক মণ্ডলীর বিশিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তি এ বিষয়টি বুঝেছেন। ২৩তম পোপ জন পল এর সংস্কার সাধনের কাজ শুরু করলে, অনেক মূর্তি মণ্ডলীগুলো থেকে বের করা হয়। পোপ জন এবং আরও কয়েকজন পোপ তার অনুসরণ করেছিলেন তারাও মণ্ডলীতে অন্যান্য পৌত্তলিক কাজের অনুশীলন বন্ধ করেছিলেন। একটি মূর্তি নিয়ে মিছিল বা প্রসেসন করা তার প্রমাণ বহন করে।

মূর্তিগুলো কাদের?

অধিকাংশ ক্ষেত্রে যে মূর্তিগুলোর প্রতি ছবির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়, প্রকৃতপক্ষে সেগুলো সাধুদের মূর্তি নয় কারণ তাদের জীবনকালে ক্যামেরা ছিল না। আর তাদের অনেকেই ছবি আঁকাবার জন্য বা মূর্তি করার জন্য শিল্পীর সামনে বসে থাকেননি। এর সুস্পষ্ট বিষয় এই যে, মূর্তিগুলো হলো মডেলদের, শিল্পীরা যাদের ভাড়া করে আনতো। অনেক শিল্পী ধর্মীয় এবং ধর্মহীন শিল্পকর্মে একই মডেল ব্যবহার করতো। কখনো কখনো শিল্পকর্মের বিষয়বস্তু ছিল খুব ধার্মিক ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি। আবার কখনো কখনো সেরকম ছিল না। অন্যান্য ঘটনায় শিল্পীদের ধ্যান চিন্তায় একজন সাধু ব্যক্তির চেহারা দেখতে কেমন হতে পারে মনে মনে স্থির করে নেন। তাদের শিল্পকর্মে তারা তা-ই রূপায়িত করেন। এটা সুস্পষ্ট হয়, যখন একজন অনেক মাতৃমূর্তির “Madonnas” সাধারণ বিবর্ণ মুখের চেহারা স্মরণ করেন, পরে বিখ্যাত কালো ম্যাডোনাকে স্মরণ করেন খ্রীষ্টমাতা মেরী হিসাবে।

লোকেরা সাধারণত কার কাছে প্রার্থনা করে, সে বিষয়ে একজন মহিলা চমৎকার একটি শিক্ষা পেয়েছিলেন। প্রকৃতপক্ষে যে মূর্তিগুলোর সামনে প্রার্থনা করা হয়, তা প্রায়ই ক্ষেত্রে সাধুদের মূর্তি নয়। একদিন এই মহিলা যখন তার কুকুর সঙ্গে নিয়ে একটি স্টুডিওর সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন, তখন স্টুডিওর শিল্পী দোকান থেকে বের হয়ে মহিলাটিকে বললেন, ‘আমি কি আপনার কুকুরের লেজ থেকে কয়েক গোছা চুল আমার তৈরি একটি সাধুর মূর্তির চোখের ভুরু করতে নিতে পারি?’ মহিলা স্বেচ্ছায় তার কুকুরের লেজের চুল নিতে দিলেন। তারপর ঘরে ফিরে এসে তিনি বুঝতে পারলেন এবং হৃদয়ঙ্গম করলেন, “এর অর্থ এই যে আমি আর কখনো কুকুরের লেজের চুলের সম্মুখে মাথা অবনত করবো না।” আর সঙ্গে সঙ্গে সেই দিন থেকেই তিনি নিজে মূর্তিপূজা বন্ধ করে দিলেন।

বাইবেলে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হলো মূর্তি

বাইবেলে মূর্তিগুলোর বিষয়ে এত বেশি ঘটনা আছে যে, ঈশ্বরের বিবেচনায় তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নতুন নিয়মের অনেক অংশ আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। পুরাতন নিয়মে এ বিষয় আরো বিরাট অংশে উল্লেখ থাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো নিজে উল্লেখ করা হলো। সেগুলো পাঠ করলে, মূর্তিগুলো সম্বন্ধে ঈশ্বরের অভিমত বা বিবেচনার ধারা সুস্পষ্ট হয়ে যাবে বলে আশা করা যায়। এর সংখ্যাগুলো কোনো সাহায্য করে না কিন্তু এ পদগুলো পাঠ করলে, ঈশ্বরের দৃষ্টিতে এই বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। যেমন: যাত্রাপুস্তক ২৩:২৪ পদ, ৩৪:১৪ পদ; লেবীয় পুস্তক ১৯:৪ পদ, ২৬:৩০ পদ; গণনাপুস্তক ৩৩:৫২ পদ; দ্বিতীয় বিবরণ ৫:৮-৯ পদ; ৯:১২-১৭ পদ, ১৬:২১ পদ; ২৭:১৫ পদ; ১রাজাবলি ১৪:৯ পদ, ২২-২৩ পদ; গীতসংহিতা ৭৮:৫৮ পদ, ৯৭:৭ পদ, ১০৬:১৯-২০ পদ, ১১৫:৪-৯ পদ, ১৩৫:১৫-১৮ পদ; যিশাইয় ১০:১০-১১ পদ, ৩০:২২ পদ, ৩১:৬-৭ পদ, ৪২:৮-১৭ পদ, ৪৪:৮-২০ পদ, ৪৫:২০ পদ, ৪৬:৬-৭ পদ; যিরমিয় ১০:৩-১৬ পদ; যিহিষ্কেল ১৬:১৭-২১ পদ, ৩০:১৩ পদ; দানিয়েল ৩:১-১৮ পদ; হোশেয় ১১:২ পদ, ১৩:২-৪ পদ; মীখা ১:৭ পদ, ৫:১২-১৩ পদ এবং হবক্কুক ২:১৮-২০ পদ।

সাধুদের সম্মুখে কি প্রার্থনা করা উচিত?

অনেকে পরামর্শ দিতে পারেন যে মূর্তির নিকট প্রার্থনা করা ভুল হলেও সাধুদের নিকট আমাদের প্রার্থনা করা ঠিক। এর কারণ হলো সাধু ব্যক্তিরা ঈশ্বর ও আমাদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী। যীশু নিজেই বলেছিলেন যে, “পিতার কাছে কেউই যেতে পারে না, যদি না সে আমার মধ্য দিয়ে যায়” (যোহন ১৪:৬ পদ)। আরো স্পষ্টভাবে ১তীমথিয় ২:৫-৬ পদে বলা হয়েছে, “কেননা ঈশ্বর এক, এবং ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে মধ্যস্থ এক - তিনি সেই মানুষ যীশুখ্রীষ্ট যিনি সকলের মুক্তিপণ হিসাবে নিজেকে দান করলেন”। খ্রীষ্ট হলেন আমাদের মধ্যস্থতাকারী। কারণ তিনি ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সংযোগ স্থাপন করেছেন। আমাদের পাপের জন্য যা প্রয়োজন ছিল তিনি তার সমস্তই পরিশোধ করেছেন, যেন আমরা পাপীরা সরাসরি ‘আমাদের স্বর্গস্থ পিতা’র কাছে প্রার্থনা করতে পারি। সুতরাং সাধুদের মাধ্যম করে প্রার্থনার বিষয়টি একেবারেই অর্থহীন, গুরুত্বহীন।

ঐ পদটি কেরি ভার্ষণ বাইবেলেও লেখা আছে যে, “কারণ একমাত্র ঈশ্বর আছেন; ঈশ্বরের ও মনুষ্যদের মধ্যে একমাত্র মধ্যস্থও আছেন, তিনি মনুষ্য, খ্রীষ্ট যীশু, তিনি সকলের নিমিত্ত মুক্তির মূল্যরূপে আপনাকে প্রদান করিয়াছেন।” এ পদের আলোকে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে যে, খ্রীষ্ট ব্যতিরেকে যদি মধ্যস্থতার অন্য কোনো সুযোগ থাকতো, তাহলে ঈশ্বর কেন আমাদের বলেছেন, যে খ্রীষ্ট যীশু একমাত্র মধ্যস্থতাকারী?

কজন যাজক একটি টিভি প্রোগ্রামে এই পদটির একটা ফাঁক তালাশ করার চেষ্টা করেছিলেন, যাতে সাধুদের কাছে কাথলিকদের প্রার্থনা করার সমর্থন পাওয়া যায়। সেজন্য তিনি ঐ আলোচনায় থাকা অন্যজনকে ব্যাখ্যা দিলেন : “সাধুরা সরাসরি প্রার্থনার উত্তর দিতে পারে না তা নয় কিন্তু তারা যীশুর কাছে প্রার্থনা করেন আর যীশু পিতা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন আর ঈশ্বর প্রার্থনার উত্তর দেন।” সেই প্রোগামে থাকা অন্যজন কাথলিক মতবাদ সম্পর্কে অবগত থাকায় যাজককে জিজ্ঞাসা করলেন, “সাধুরা কি সর্বজ্ঞ এবং সর্বত্র বিরাজমান? সমগ্র জগত থেকে যখন বিভিন্ন ভাষায় একই সময়ে প্রার্থনা করা হয়, সাধুরা কি তা শুনতে পান, বুঝতে পারেন সবার প্রার্থনা?” যাজকে অবশ্য উত্তর দিতে হয়েছিল - “না, একমাত্র ঈশ্বর সর্বজ্ঞ এবং সর্বত্র বিরাজমান; তারা ঐ সকল প্রার্থনা শুনতে পারেন না আর বুঝতে পারেন না।” যাজক নিজে কী বলেছিলেন, সেই বিষয়ে বুঝতে পেরে তার খেসারত দিতে গিয়ে বলেছিলেন, “ঈশ্বর পিতা প্রার্থনাগুলো শুনেন এবং সাধুদের বলেন, লোকেরা কী জন্য যাচ্ঞা করেছিল . . .!!!”

মনে রাখুন, একমাত্র ঈশ্বর একই সময়ে সকল স্থানে থাকেন এবং জগতের চারদিকের হাজার হাজার লোকের প্রার্থনাগুলো একই সময়ে শুনতে পারেন। আপনি কি এর চেয়ে ভালো কারণ চিন্তা করতে পারেন যে সরাসরি প্রথমেই তাঁর কাছে প্রার্থনা করবো না কেন?

ঈশ্বর আমাদের প্রেম করেন। তিনি আমাদের বন্ধু ও পিতা হতে চান। তিনি আমাদের তাঁর কাছে সরাসরি প্রার্থনা করতে অনুরোধ করেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে বলেন। তাঁকে সম্মান করতে এবং তাঁর প্রশংসা করতে বলেন। যখন আমরা অন্য একজনকে বা অন্য কোনো কিছুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং প্রশংসা করি তখন ঈশ্বর নিজেকে পরিত্যক্ত অনুভব করেন। বাইবেল আমাদের বলে যে, তিনি আমাদের প্রেম সংরক্ষণে সতর্কভাবে যত্নশীল এবং আমাদের বুঝাবার জন্য একজন গৃহকর্তা অর্থাৎ স্বামীর দৃষ্টান্ত দেন, যে সেই স্বামীর স্ত্রী বাইরে অন্য লোকদের কাছে যায় তা তিনি চাইতেন না। আমরা ঈশ্বরের কাছে কি বলবো যখন আমরা তাঁর দিকে পিছন ফিরাই এবং একজন সাধুর কাছে প্রার্থনা করি? এরকম মনে করা বা এরকম একটি সিদ্ধান্ত করা মহা অপরাধ যে, ঈশ্বর সাধুদের মতো দয়ালু, সুবিবেচক ও সহানুভূতিশীল নন্।

আসুন, আমরা একটি দৃষ্টান্ত পরীক্ষা করি যা আক্ষরিকভাবে শত শত ইতালিবাসী আমাদের দেখিয়ে থাকে। সাধুদের কাছে কেন আমাদের প্রার্থনা করা উচিত? তারা বলেছেন, “আপনি যদি কোনো একটি কারখানায় কাজ করতে চান আর আপনার কাকা সেই কারখানার মালিকের বন্ধু হয়ে থাকেন তবে আপনি নিশ্চয়ই একটি কাজের জন্য সরাসরি মালিকের কাছে যাবেন না। আপনি আপনার কাজের জন্য কাকাকে মালিকের কাছে যেতে অনুরোধ করবেন। এই দৃষ্টান্তটিতে কাকা সাধুর প্রতিরূপ বা মূর্তি এবং কারখানার মালিক ঈশ্বরের প্রতিরূপ। এই দৃষ্টান্তে পরোক্ষভাবে প্রকাশ করা হয়েছে যে, সাধু ব্যক্তি কাকার প্রতিরূপ আপনাকে জানেন এবং আপনাকে প্রেম করেন আর আপনাকে সাহায্য করতে চান। ঈশ্বর, যিনি কারখানার মালিকের প্রতিরূপ তিনি কিছুই করেন না। সত্য কথা হলো এই যে, ঈশ্বর আমাদের জানেন এবং আমাদের প্রেম করেন, আর ঈশ্বর যীশু খ্রীষ্টের নামে, যিনি একমাত্র মধ্যস্থতাকারী, আমাদের তাঁর নিকটে সরাসরি আসতে নির্দেশ করেন।

বাইবেল কখনও এই সিদ্ধান্ত দেয়নি যে, জীবিত বা মৃত কোনো সাধু ঈশ্বরের চেয়ে আমাদের প্রতি তারা বেশি সহানুভূতিসম্পন্ন। এমনকি, একবারও উল্লেখ করা হয়নি যে কোনো একজন তাদের কাছে প্রার্থনা করেছে বা তাদের মাধ্যমে প্রার্থনা করছে। খ্রীষ্ট সম্বন্ধে বলা হয়েছে “কেননা আমরা এমন একজন মহাযাজককে পাইনি, যিনি আমাদের দুর্বলতার সমব্যথী হতে অক্ষম, তিনি বরং পাপ ছাড়া আমাদের মতই সবদিক দিয়ে পরীক্ষিত হয়েছেন। সুতরাং এসো, সাহসভরে আমরা অনুগ্রহের সিংহাসনের কাছে এগিয়ে যাই, যেন দয়া লাভ করি এবং প্রয়োজনের দিনে সহায়তার সঙ্গে অনুগ্রহ পাই”। (ইব্রীয় ৪:১৫-১৬ পদ; আরও পাঠ করুন ইফিষীয় ৩:১২ পদ)। ঈশ্বর জানেন এবং তিনি যত্ন নেন্।

খ্রীষ্ট স্বয়ং আমাদেরকে বলেছেন যে আমাদের কার কাছে প্রার্থনা করা উচিত। মথি ৭:৭-১১ পদে খ্রীষ্ট যীশু এভাবে বলেছেন, “যাচ্ঞা কর, তোমাদের দেওয়া হবে;” . . . এটা এখানেই শেষ হয়েছে “সুতরাং তোমরা মন্দ হয়েও যখন তোমাদের ছেলেদের ভাল ভাল জিনিষ দিতে জান, তখন যারা তাঁর কাছে যাচ্ঞা করে, তোমাদের স্বর্গস্থ পিতা যে তাদের ভাল ভাল জিনিষ দেবেন তা আরও কতই না নিশ্চিত”।। সাধু যোহন, যোহন ১৫:১৬ পদে বলেছেন, যীশুর নামে পিতার কাছে আমাদের যাচ্ঞা করা উচিত। যোহন, যীশুর বিষয়ে ঐ পদে বলেছেন, “তোমরা আমাকে বেছে নাওনি, আমিই তোমাদের বেছে নিয়েছি, তোমাদের নিযুক্তও করেছি, যেন তোমরা গিয়ে ফলশালী হয়ে ওঠ ও তোমাদের ফল স্থায়ী হতে পারে, যাতে তোমরা পিতার কাছে যা কিছু আমার নামে যাচ্ঞা কর, তিনি তা তোমাদের দেন।” বাইবেলের প্রার্থনাগুলো পাঠ করলে আপনি দেখবেন যে সমস্তই পিতা ঈশ্বরকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে; কোনো মৃত সাধুকে সম্বোধন করে বলা হয়নি।

প্রোটেস্টান্টরা কি সাধুদের উপর বিশ্বাস করে?

এতক্ষণ যা বলা হলো তাতে এটাই বলা যায়, ‘প্রেটেস্টান্টরা সাধুদের বিশ্বাস করে না!’ বাইবেল সাধু ব্যক্তিদের সম্বন্ধে যা বলে আমরা তা বিশ্বাস করি;  আর সেসব বিশ্বাস কাথলিক প্রথা থেকে একেবারেই আলাদা। প্রোটেস্টান্টরা সাধুদের এতটুকু বিশ্বাস করে যে, ঈশ্বর তাদের অনুপ্রাণিত করে বাইবেলে যে আজ্ঞাগুলো যা লিখিয়েছিলেন আমরা সেগুলো পালন করতে চাই। অন্যান্য অনেক কিছুর মধ্যে সাধু ব্যক্তিরা আমাদেরকে ঈশ্বরের নিকটে প্রার্থনা করতে বলেছেন, তারা সাধুদের নিকটে বা মূর্তিগুলোর নিকটে প্রার্থনা করতে বলেননি। এছাড়াও, বাইবেলে সাধু ব্যক্তিরা যা লিখেছেন আমরা তা পালন করার চেষ্টা করছি, সেই সাধুরা যারা প্রকৃতই সাধু আমাদের কাছে তারা দৃষ্টান্তস্বরূপ। বাইবেল সকলকে আহ্বান করে, যারা প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করে পবিত্র হয়েছে। পবিত্রগণ শব্দটি নতুন নিয়মে খ্রীষ্টে বিশ্বাসীদের নির্দিষ্ট করতে ব্যবহার করা হয়েছে। কোনো একজন ব্যক্তিকে স্বতন্ত্রভাবে চিহ্নিত করার জন্য নয়।

বাইবেলে পবিত্র শব্দটি তাদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে, যারা তখনো জীবিত ছিলেন। বাইবেলে পৌলের লেখায় এই শব্দটি বহুবার ব্যবহার করা হয়েছে। আসুন, আমরা পরীক্ষা করে দেখি তিনি কীভাবে এটি ব্যবহার করেছেন “. . . পবিত্রজন ও খ্রীষ্টযীশুতে বিশ্বাসী যারা, তাদের সমীপে . . .” (ইফিষীয় ১:১ পদ, এই অংশটি রোমান কাথলিক বাইবেল থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে)। অন্যান্য অনুবাদে প্রায় একই রকম করা হয়েছে। আরো দেখুন ইফিষীয় ১:১৫, ১৮; ২:১৯; ৩:১৮; ৪:১২; ৫:৩ এবং ৬:১৮ পদ; রোমীয় ১:৭ পদ; প্রেরিত ৯:১৩, ৩২; ২৬:১০ পদ। কেউ বিষয়টি এড়াতে পারে না কিন্তু পবিত্রগণ শব্দটির দ্বারা আকর্ষিত হতে পারে যে শব্দটি সাধারণ খ্রীষ্টিয়ান দল বা জনগণকে বুঝাতে সর্বদাই ব্যবহৃত হয়েছে।

করিন্থীয় মণ্ডলীর বিশ্বাসীরা পবিত্রীকৃত ছিল (১করিন্থীয় ১:২; ৬:১১; ১৪:৩৪ পদ)। তবুও তাদের কতকগুলো গুরুতর ভুল ও পাপ ছিল। আর পৌল তাদের বলতে পারেননি আত্মিক খ্রীষ্টিয়ান, বলেছেন মাংসময়/পাপ-স্বভাবের (১করিন্থীয় ১:১১; ৩:১; ৬:৫-৮; ১১:২২ পদ)।

প্রোটেস্টান্টরা পবিত্রগণের অর্থাৎ সাধু ব্যক্তিদের নিকটে প্রার্থনা করে না কেন?

বাইবেলে স্পষ্টভাবে লেখা আছে “কেননা ঈশ্বর এক, এবং ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যস্থ এক - তিনি সেই মানুষ যীশুখ্রীষ্ট” এছাড়াও আরো অনেক কারণ আছে যার জন্য প্রোটেস্টান্টরা সাধু লোকদের বা পবিত্রগণের নিকটে প্রার্থনা করে না। যেমন :

ঈশ্বর বাইবেলে এমন কারও দৃষ্টান্ত দেননি যারা সাধুদের কাছে, পবিত্রগণের নিকটে কখনো প্রার্থনা করেছেন বা শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তিনি আমাদের সেরকম কোনো নির্দেশও দেননি যে আমাদের সেরকম করাতে চান।

শাস্ত্র আমাদের আরও বলে : “তোমার ঈশ্বর প্রভুকেই প্রণাম করবে, কেবল তাঁকেই উপাসনা করবে।” (লূক ৪:৮ পদ)।

বাইবেলে আমরা স্বর্গদূত এবং মানুষ উভয়েরই দৃষ্টান্ত পাই, যাদের সামনে মানুষকে মস্তক অবনত করতে নিষেধ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে শিক্ষা দেয় সেরকম করা উচিত নয়। “পিতর বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করার সময়ে কর্নেলিউস এগিয়ে এসে তাঁর পায়ে পড়ে প্রণিপাত করলেন। কিন্তু পিতর তাঁকে মাটি থেকে তুলে নিয়ে বললেন, ‘উঠুন; আমি নিজেও মানুষ।” (প্রেরিত ১০:২৫-২৬; ১৪:১৩-১৫ পদ এবং প্রকাশিত বাক্য ২২:৮-৯ পদ)।

প্রেরিত পৌল পবিত্রীকৃতদের একজন যিনি ফিলিপীয় পত্রে ব্যাখ্যা করেছেন যে, তিনি শুধু তাদের জীবনে সাহায্যকারী হতে পারেন (ফিলিপীয় ১:২৩-২৬ পদ)।

আশ্চর্য কাজের সঙ্গে পবিত্রগণ, সাধুরা প্রার্থনার উত্তর দেন এই যুক্তি-তর্কের উত্তরে আমরা অবশ্যই স্মরণ করবো যে, আত্মিক গুপ্ত বিষয়ের প্রকাশ (আশ্চর্য কাজসহ) দু’টি ভিন্ন স্থান থেকে আসতে পারে: ঈশ্বরের কাছ থেকে অথবা দিয়াবল আর তার অপদেবতাদের কাছ থেকে আসতে পারে। ঈশ্বরের আজ্ঞা হলো যে, আমরা কখনো ক্ষোদিত প্রতিমা নির্মাণ করবো না। আর যখন মনে হয় যে, পবিত্রগণ, সাধুদের দ্বারা আশ্চর্য কাজ হয় এবং বহু লোক ঈশ্বরকে ছেড়ে অন্য কোনো প্রতিমা উপাসনায় অংশগ্রহণ করে, তাহলে এই আশ্চর্য কাজ ঈশ্বর হতে নয়।

এমন অনেক সাধু বা পবিত্রকৃত ব্যক্তি আছেন, যাদের কাথলিক মণ্ডলী পদচ্যুত করেছে, কারণ ঐতিহাসিকভাবে তাদের কখনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। দৃষ্টান্তস্বরূপ সাধু ফিলোমেনার বিষয়ে ধারণা করা হয় যে, অলৌকিকভাবে তিনি পোপ দশম পিউসকে সুস্থ করেছিলেন। যাহোক, অতি সাম্প্রতিককালে অন্য পোপ দ্বারা তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো বন্ধ করা হয়েছে। আর এক তদন্ত কমিশন বিষয়টিকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। মণ্ডলী কর্তৃক প্রকাশ করা হয়েছে যে তার অস্তিত্ব কখনো ছিল না। যারা তার মূর্তি বিশ্বাস করে, তাদের দাবি যে এখনো তার দ্বারা অলৌকিক কার্য সাধিত হয়।

আপনিও একজন পবিত্র ব্যক্তি সাধু হতে পারেন যদি যীশুকে বিশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করেন। যিনি বলেছেন, “আমিই সেই পথ, সেই সত্য, সেই জীবন! পিতার কাছে কেউই যেতে পারে না, যদি না সে আমার মধ্য দিয়ে যায়” (যোহন ১৪:৬ পদ)। মণ্ডলীর বর্ণনানুযায়ী পবিত্র লোক তৈরি হয় না বা নিষ্পাপ একটি জীবনযাপন দ্বারাও পবিত্রতা অর্জন করা যায় না, আশ্চর্য কাজ দ্বারাও নয়। ঈশ্বর পাপীদের মধ্য হতেই সাধুদের তৈরি করেছেন . . . শাস্ত্রে বলা হয়েছে “. . . যীশুখ্রীষ্টের সেই একবার চিরকালের মত দেহ-নৈবেদ্য গুণেই আমাদের পবিত্র করে তোলা হল” (ইব্রীয় ১০:১০ পদ আরও পাঠ করুন প্রেরিত ২৬:২৮ পদ)। আপনার পাপ দূর করতে প্রভু যীশু খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাস ও নির্ভর করুন। তা হলে আপনিও একজন পবিত্রীকৃত ব্যক্তি হবেন।

অনুবাদ : Answers to my Catholic Friends, page # 26


Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?