সংরক্ষিত ঈশ্বরের বাক্য এবং যেভাবে কিং জেমস বাইবেল অনুবাদ করা হয়েছিল The preserved Word of God, and the way The King James Bible Translated

“তোমার পবিত্র মন্দিরের পানে আমি প্রণিপাত, ও তোমার অনুরাগসিক্ত দয়া ও তোমার সত্য প্রযুক্ত তোমার নামের স্তুতি করিব: কেননা তোমার সমস্ত নাম অপেক্ষা তুমি তোমার বচন মহিমান্বিত করিয়াছ” (গীতসংহিতা ১৩৮:২ পদ)।

এ পর্যন্ত আমাদের পাঠ্যক্রমে আমরা তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। প্রথম প্রশ্ন, ঈশ্বর কি আমাদের নির্ভুলভাবে বাইবেল দিয়েছেন? উত্তর হ্যাঁ। প্রথম স্বহস্তলেখাগুলো যা ঈশ্বর আমাদের দিয়েছেন, সেগুলোর মধ্যে সর্বতোভাবে কোনো ভুল নেই। ঈশ্বর যেমন চেয়েছিলেন তদ্রুপ প্রত্যেকটি শব্দ ছিল সঠিক মনোনয়ন। প্রকৃতপক্ষে, এটি ঠিক মানুষের কোনো মনোনয়ন ছিল না, ছিল ঈশ্বরের নিজের পছন্দ।

দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছিল, কেন ঈশ্বরকে আমাদের কাছে সঠিক বাইবেল দিতে হয়েছে? আমরা দেখেছি যে ঈশ্বরের জন্য প্রয়োজন ছিল যেন আমরা জানতে পারি ঈশ্বর কী বলেছেন, তাই তিনি আমাদের জন্য শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে সঠিক বাইবেল দিয়েছেন। আপনার জন্য সঠিক চিন্তাগুলো প্রকাশ করা সম্ভব নয়, যদি না আপনার চিন্তা প্রকাশ করার জন্য সঠিক শব্দগুলো (কথা) থাকে। আপনি যা চান সেসব আপনি সঠিকভাবে চিন্তা করতে পারেন কিন্তু যদি আপনার কথায় তা প্রকাশ না পায়, আপনি কখনো আর একজনের কাছে আপনার চিন্তাগুলো পৌঁছে দিতে পারবেন না। সেজন্য ঈশ্বর সঠিক শব্দসমূহের বিষয়ে বিশেষ যত্নবান ছিলেন।

তৃতীয় প্রশ্নটি ছিল, সঠিক শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে যদি ঈশ্বর আমাদের বাইবেল দিয়ে থাকেন, তাহলে ঈশ্বর কি বাইবেলটি বছরের পর বছর ধরে সংরক্ষণ করে রেখেছেন? আবার এর উত্তর হ্যাঁ, ঈশ্বর তাঁর বাক্য যুগের পর যুগ ধরে অক্ষুণ্ন রেখেছেন, সংরক্ষণ করেছেন। যদিও আমাদের মাঝে প্রথম স্বহস্তলেখাগুলোর একটিও নেই, আমাদের আছে কেবল পাণ্ডুলিপি বা প্রথমটির কপিসমূহ। তথাপি আমরা জানতে পারি যে ঈশ্বর তাঁর বাক্য সঠিকভাবে সংরক্ষণ করেছেন। আমরা শাস্ত্র থেকে অনেকগুলো পরীক্ষা করে দেখেছি যা এ বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়। তাছাড়া ঈশ্বরের বাক্যের সর্বত্র আরও পদ আছে যা আমরা আমাদের উত্তর প্রমাণের জন্য দেখাতে পারি।

আমরা কি নিশ্চিত হতে পারি যে, আজকে আমাদের হাতে যে বাইবেল আছে তাতে কোনো ভুল নেই? আবার আমরা হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিতে “হ্যাঁ” বলতে পারি। ঈশ্বর যা করার জন্য প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তা তিনি করেছেন। তারপরও আমরা প্রশ্ন করব, “সেটি কোথায়?” যদি ঈশ্বর আমাদের বাইবেল দেন যা শব্দের পর শব্দ সঠিক এবং যদি ঈশ্বর তা শব্দের পর শব্দ সঠিক রাখার প্রতিশ্রুতি দেন, তাহলে সেটি আজ কোথায়? ঈশ্বরের বাক্য খুঁজবার জন্য আজ আমরা কোথায় যাব?

১। অনুবাদ সম্পর্কে বিচার্য বিষয়   THE VERSION ISSUE

বিগত একশত বছরে বাইবেল যত অনুবাদ হয়েছে সেসব যদি আমাদের কপি করতে হতো, তাহলে আমাদের কমবেশ ছয় ফুট উঁচু এক বইয়ের স্তুূপ থাকতো। বিগত ১০০ বছরে ইংরেজি ভাষাতে কমবেশ ১০০টি অনুবাদ হয়েছে। এই অনুবাদগুলো একটি অপরটির সঙ্গে মিলে না। তাহলে আমরা কোথায় ঈশ্বরের বাক্য খুঁজব? যদি ঈশ্বর তাঁর বাক্য সংরক্ষণ করার প্রতিজ্ঞা করে থাকেন, কীভাবে তিনি তা করছেন? এটি কোথায় আছে, কোথায় আমরা দেখব?

ক) প্রামাণিকতা বা কর্তৃত্বকারীতার প্রশ্ন THE QUESTION OF AUTHORITY

১) কাথলিক মণ্ডলীতে - পোপ : In The Catholic Church-The Pope
আমি রোমান কাথলিক মণ্ডলীতে বড় হয়েছি। সেই মণ্ডলীতে, আমরা শিখেছি যে কর্তৃত্বকারী তিনজন ছিল। প্রথমটি বাইবেল। আমাকে শিক্ষা দেওয়া হয় যে বাইবেল ঈশ্বরের বাক্য। আমাকে তা বসে অধ্যয়ন করতে শিক্ষা দেওয়া হয়নি। আমাদের কোনো বাইবেল ক্লাস ছিল না। পুরোহিত এসে Catechism (খ্রীষ্টধর্মের সারসংক্ষেপ) সম্পর্কে বাইবেলে কী বলে সে বিষয়ে উপদেশ দিতেন না। আমরা একটি বই থেকে Catechism (সাধারণ জনগণের জন্য খ্রীষ্টধর্ম বিষয় প্রাথমিক জ্ঞান) পড়তাম। গির্জার খ্রীষ্টযাগ-অনুষ্ঠানে আমাদের জন্য একটি বই (missal) ছিল যা আমরা শব্দ করে পড়তাম। আমাদের শিক্ষা দেওয়া হতো কী বলতে হবে তাই। কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য থেকে নয়। আমাকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল যেন আমি ঈশ্বরের বাক্যকে অত্যন্ত সম্মান করি।

দ্বিতীয় কর্তৃত্বকারী মণ্ডলীর ঐতিহ্য (Church tradition - মণ্ডলীল পরম্পরাগত মতবাদ বা প্রথা)। আমাদের কাথলিক ধর্মশিক্ষাতত্ত্ব (Catechism) শিক্ষা দেওয়া হতো এবং বলা হতো যে এটি ঈশ্বরের বাক্যের ন্যায় সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল যে মণ্ডলীর ঐতিহ্য অর্থাৎ পরম্পরাগত মতবাদ বা প্রথা যা-ই হোক না কেন অথবা যা কিছু তারা প্রথানুযায়ী পালন বা শাসন করত, তার উপরে আমরা আমাদের বিশ্বাস স্থাপন করতে পারি। মণ্ডলীর ঐতিহ্য অর্থাৎ পরম্পরাগত মতবাদ বা প্রথা বিশ্বাসযোগ্য।

আপনি কী করবেন যখন ঈশ্বরের বাক্য এবং ঐতিহ্যের অর্থাৎ পরম্পরাগত মতবাদ বা প্রথার মধ্যে পার্থক্য হয়? যেমন ১তীমথিয় ২:৫ বাইবেল বলে, “কারণ একজন ঈশ্বর আছেন, আর ঈশ্বর ও মনুষ্যদের মধ্যে একজন মধ্যস্থ আছেন, সেই মনুষ্য খ্রীস্ট যীশু।” যখন একজন কাথলিক পাপ স্বীকার করতে যায়, সে আসলে একজন মানুষের কাছে প্রার্থনা করে এবং একজন মানুষের কাছে তার পাপ স্বীকার করে। সে খ্রীষ্টের পরিবর্তে তার পুরোহিতকে মধ্যস্থ করে, অর্থাৎ খ্রীষ্টকে নয়। আমাকে আমার রক্ষাকর্তা সাধু মার্কের কাছে প্রার্থনা করতে শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল। আমাকে সরাসরি মরিয়মের কাছেও প্রার্থনা করতে বলা হয়েছিল। কারণ মরিয়ম তখন আমার প্রার্র্র্থনা শুনে যীশুর কাছে যাবেন এবং আমার প্রার্থনার উত্তর পেতে সাহায্য করবেন। এ দু’টি ধারণা সম্পূর্ণ বিপরীত। অপরদিকে, বাইবেল বলে, ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে কেবল একজন মধ্যস্থ আছেন, তিনি ঈশ্বরের বাক্যের যীশু খ্রীষ্ট। অপরদিকে মণ্ডলীর ঐতিহ্য অর্থাৎ পরম্পরাগত মতবাদ বা প্রথা বলে আপনি সাধুদের কাছে প্রার্থনা, পুরোহিতের কাছে পাপ স্বীকার ও মরিয়মের কাছে প্রার্থনা করবেন।

এই সমস্যার উত্তর দিতে রোমান কাথলিক তৃতীয় কর্তৃত্বকারী পর্যন্ত এসেছে। তিনি হলেন পোপ। পোপ যা-কিছু সিদ্ধান্ত করেন, তিনি যা-কিছু বলেন যখন তিনি উচ্চারণ করেন “ex cathreda” (ঈশ্বরের আসন থেকে - ক্ষমতাসীন/আসনে উপবিষ্ট হয়ে পোপের ঘোষণা) এর অর্থ হলো কাথলিকদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও নৈতিকতা সম্পর্কে পোপের অভ্রান্ত ঘোষণা। ফলে, মণ্ডলীর ঐতিহ্য অর্থাৎ পরম্পরাগত মতবাদ বা প্রথা এবং বাইবেল, এ দুটোই একই পর্যায়ে। কিন্তু যখন দু’টি একটি অপরটির বিরোধীতা করে, তখন পোপ হন্ প্রকৃত কর্তৃত্বকারী। তার কথাই হয় অলঙ্ঘনীয় কথা বা মূল কথা। তারা একজন লোককে তাদের কর্তৃৃত্বকারী হতে অধিকার দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, তারা বাইবেল অনুসরণ করে না কিংবা ঐতিহ্য অর্থাৎ পরম্পরাগত মতবাদ বা প্রথা অনুসরণ করে না। পোপ এবং কার্ডিনালদের কাউন্সিল যা কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তারা তা-ই অনুসরণ করে। তাই এসবই আমাকে বলে দেয় যে রোমান কাথলিক পদ্ধতি ঈশ্বরের বাক্যের উপরে গঠিত হয়নি বরং একজন অথবা কতক লোক একত্র বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

২) প্রোটেস্টান্ট ধর্মে-বিশেষজ্ঞ In Protestant Religion-The Scholar 

প্রোটেস্টান্ট মতবাদ কিছু করেছে যা খুবই সূক্ষ্ম। তথাপি সেই একই সঙ্গে সেটি একইভাবে মারাত্মক ও ভ্রান্তি এখনো আছে। যেমন রোমান কাথলিক পদ্ধতিতে করা হয়েছে। প্রোটেস্টান্ট মতবাদ বাইবেলকে গ্রহণ করেছে, বিশ্বাস করেছে এবং ঘোষণা দিয়েছে যে, বাইবেল ঈশ্বরের বাক্য। তবু যদি আপনি বর্তমানে যে কোনো খ্রীষ্টিয়ান বইয়ের দোকানে যান এবং বলেন “আমি একটি বাইবেল কিনতে চাই,” তারা আপনাকে কী বলতে পারে? “কোন্ বাইবেলটি আপনি চান?” - Good News For Modern Man? বা আপনি সাম্প্রতিক কোন্ বাইবেল চান? New King James, the Reach Out অথবা The Living Bible, Emphasized, New International Version? কোনটি আপনি চান? আমাদের আরো কয়েক প্রকার আছে। যদি আপনি এসব পছন্দ না করেন, তাহলে আমি নিশ্চয়ই অপর আরেকটি আপনাকে খুঁজে দিতে পারব। মোটের উপর, বিগত ১০০ বছরে ১০০টির উপরে বাইবেলের বিভিন্ন অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। আপনি হয়ত জিজ্ঞাসা করবেন “ভালো কথা, আসলে এসবের মধ্যে কি যথেষ্ট পার্থক্য আছে?” সত্য এই যে তাদের প্রত্যেকটির মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই, কারণ এগুলো একই বিকৃত গ্রন্থ থেকে এসেছে।

আরো একটি বাইবেল আছে যা অপর দিকে স্থির অটল হয়ে দাড়িয়ে আছে। সেটি অন্যান্য বাইবেল থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। এটি হলো King James Authorized 1611 Bible. এটির পার্থক্য এজন্য হলো কারণ এটির অনুবাদ হয়েছে মূলপাঠ থেকে। আমি আপনাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য দেখাচ্ছি। লূক ২:৩৩ পদে কিং জেমস্ বাইবেল বলে “আর যোষেফ ও তাঁহার মাতা সেই সকল বিষয়ে আশ্চর্য জ্ঞান করিলেন যাহা তাঁহার বিষয়ে বলা হইয়াছিল।” কিন্তু আপনি যদি অন্যান্য বাইবেল দেখেন সেখানে ঐ পদে লেখা হয়েছে “আর তাঁহার পিতা ও মাতা আশ্চর্য জ্ঞান . . .” অথবা একই ধরনের অন্য আর কিছু। যোষেফ কি যীশুর পিতা ছিলেন? না, তিনি কখনো ছিলেন না। তিনি কেবল তাঁর পালক-পিতা ছিলেন। খ্রীষ্টের কোনো পার্থিব পিতা ছিল না।

আমরা কী করে জানব যে কোনটি ঠিক? দু’টি বাইবেলের পাঠ্যবস্তু যখন দুই রকম হয়, তখন আমরা কেমন করে জানব কোন্টি বিশ্বাস করতে হবে? গির্জায় যোগদানকারী অধিকাংশ লোক গ্রিক বা হিব্রু শাস্ত্র বিশেষজ্ঞ নয়। তাদের অধিকাংশ লোকেরা বাইবেল কলেজে যায়নি। সেজন্য তারা সমাধানের জন্য তাদের প্রচারকের দিকে তাকায়। প্রচারক বাবু বলবেন, “ঠিক আছে, এখানে এরকম পাঠ করা উচিত হবে।” আমি কি আপনাকে একটি প্রশ্ন করব? ঐ ক্ষেত্রে কে হবেন আপনার চূড়ান্ত পথ পদর্শক বা কর্তৃত্বকারী? সেটি কি ঈশ্বরের বাক্য, না-কি যিনি পুলপিটে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি? আপনার চূড়ান্ত পথ প্রদর্শক বা কর্তৃত্বকারী কে হবেন যে লোক পুলপিটে রয়েছেন তিনি, সেই পোপ, এদের মধ্যে পার্থক্য কী?

সেজন্য আমাদের সমস্যা হলো এই - কোথায় ঈশ্বরের বাক্য পাওয়া গেছে? কোন্ গ্রিক পাণ্ডুলিপি আপনি দেখবেন? গ্রিক পাণ্ডুলিপিতে একাধিক প্রকারের পাঠ রয়েছে। ইংরেজি অনুবাদেও বিভিন্ন ধরনের পাঠ রয়েছে। সেই কারণেই আপনি ইংরেজিতে (কিংবা বাংলায়) বিভিন্ন অনুবাদের পাঠ করছেন। কারণ তারা অনুবাদ করার সময় বিভিন্ন গ্রিক পাণ্ডুলিপি ব্যবহার করেছেন। এদের মধ্যে আপনি কোনটি দেখবেন? কোথাও যদি আমাদের কাছে কোনো বাইবেল না থাকে যা ঈশ্বরের বাক্য, তাহলে বিশেষজ্ঞরাই চূড়ান্ত পথ-প্রদর্শক বা কর্তৃত্বকারী হন। কারণ তারা ঈশ্বরের বাক্য বিচার করে দেখেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যেটিকে তারা শ্রেষ্ঠ মনে করেন।

খ) প্রকৃত কর্তৃৃত্বকারী The True Authority

একজন শাস্ত্র বিশেষজ্ঞের চূড়ান্ত কর্তৃৃত্বকারী হওয়ার প্রয়োজন নেই। ঈশ্বর বলেন, তিনি আমাদের নির্ভুল, খাঁটি বাইবেল দিয়েছেন। ঈশ্বর বলেছেন যে তিনি তাঁর বাক্য নির্ভুলভাবে রাখবেন, কেবল প্রথম সেই লেখনীতেই নয় কিন্তু চিরকালের জন্য। কে ঈশ্বরের বাক্য সংরক্ষণ করে চলেছেন? শাস্ত্র বিশেষজ্ঞগণ ও পুলপিটে যিনি প্রচার করেন তিনি? না, ঈশ্বর নিজে সেটি করেন। আমাকে ভুল বুঝবেন না। মানুষ যন্ত্র হিসাবে সর্বদা ব্যবহৃত হয়েছে কিন্তু চূড়ান্তভাবে একজন সেটি তদারক করেন যেন উৎপাদিত জিনিষটি খাঁটি হয়ে থাকে। আর তিনি হলেন ঈশ্বর। যদি আপনাদের উৎপাদন খাঁটি না হয়, তাহলে আমাদের হাতে শব্দের পর শব্দসহ সঠিক বাইবেল নেই। আর যদি আমাদের হাতে শব্দের পর শব্দ সঠিক বাইবেল না থাকে, তাহলে আমরা কেমন করে জানব যে আমাদের চিন্তাসমূহ সঠিক এবং ঈশ্বর যা বলেছেন সেসব ঠিকভাবে বুঝি? ঈশ্বর আমাদের খাঁটি, সঠিক বাক্য দিয়েছেন এবং তা যুগের পর যুগ ধরে সংরক্ষণও করেছেন। এখন আমাদের এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, “কোথায় আমরা আজ সেটি পাব?” আমি বলি ইংরেজি ভাষাভাষী লোকদের জন্য সেটি পাওয়া যায় কিং জেমস্ অনুবাদে। 

২। আমরা কেন কিং জেমস্ এর নামে প্রচলিত (ইংরেজি) অনুবাদটি স্বীকৃতি দিই WHY WE ACCEPT THE KING JAMES VERSION

আমরা তাহলে জিজ্ঞাসা করি, “কেন আমরা কিং জেমস্ বাইবেলকে স্বীকৃতি দিই?” এ বিষয়ে অনেক শাস্ত্র বিশেষজ্ঞ আমাদের সঙ্গে তর্ক করেন এবং বলেন যে কিং জেমস্ অনুবাদটি শ্রেষ্ঠ নয়। সেজন্য আমি আপনাদের দেখাতে চাই, ইংরেজি ভাষাভাষী লোকদের জন্য কিং জেমস্ বাইবেল ঈশ্বরের বাক্য কি না।

ক) এর সমালোচকদের ভিত্তি The Basis Of Its Critics:

এসব কারণের জন্য আমি নিশ্চিত যে কিং জেমস্ অনুবাদের বিরুদ্ধ সমালোচকগণ সঠিক নয়। আমি যা বলতে চাচ্ছি তার ব্যাখ্যা আমি একটু পরে দেব। প্রথমে, বর্তমানে যেসব পাণ্ডুলিপি বিদ্যমান আছে সেসব সম্পর্কে কিছু তথ্য আমাদের জানা প্রয়োজন। আমাদের কাছে ঈশ্বরের বাক্যের প্রথম সেই স্বহস্তেলেখা নেই।

ঈশ্বরের বাক্যের আদি স্বহস্তলেখাগুলো আমাদের কাছে নেই। আমি যেমন ইতিপূর্বে ব্যাখ্যা করেছি যে প্রথম স্বহস্তেলেখাগুলো আসল লেখা। সেই আসল প্যাপিরাস যার উপরে লেখা হয়েছিল অথবা পাথরে। আর সেগুলোর অস্তিত্ব বর্তমানে নেই। বর্তমানে আমাদের কাছে যা-কিছু আছে সেগুলোর কপি এবং কপির কপি। সেগুলোকে পাণ্ডুলিপি বলা হয়। বর্তমানে ৫,২২৫ টি পাণ্ডুলিপি আছে। এই ৫,২২৫ টি পাণ্ডুলিপির মধ্যে আছে প্যাপিরাসের টুকরো/অংশ। একটি প্যাপিরাস খ- হলো ঈশ্বরের বাক্যের কোনো অসম্পূর্ণ অংশ বা ভাগ। এটি এ-রকম যে আপনি আপনার বাইবেল থেকে কয়েকটি পাতা ছিঁড়ে ফেললেন। এটি সমগ্র বাইবেল নয়। কতকগুলো গোটা গোটা বড় হরফে লেখা পাণ্ডিুলিপি আছে। গোটা গোটা বড় হরফে লেখা পাণ্ডুলিপি খুবই সাদাসিধা, বড় অক্ষরে লেখা হয়েছে। তারপর আমাদের ২,৪২৯ টি ছোট হরফে লেখা পাণ্ডুলিপি আছে। ছোট হরফে লেখাগুলো ছোট হাতের অক্ষরে লেখা। ১০০-৩০০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে লেখা পাণ্ডুলিপি খুব কমই টিকে আছে। দ্বিতীয় শতাব্দীর একটি প্রামাণ্য দলিল যাকে বলা হয় “ফিফটি-টু” (“fifty-two) যা টেক্সাস্ রিসেপটাস্ (Textus Receptus) এর সঙ্গে মেলে।

বর্তমানে যে ৫,২২৫ টি পা-ুলিপি আছে সেগুলো একে অপরের সঙ্গে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ মিল রয়েছে। এসব ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ টেক্সাস্ রিসেপ্টাস এর সঙ্গেও মিল রয়েছে। কিং জেমস্ বাইবেল এসব মূলপাঠ থেকে অনুবাদ করা হয়েছে। বিদ্যমান পাণ্ডুলিপিগুলোর পাঁচ থেকে দশ শতাংশকে বলা হয় আলেকজান্দ্রিয় মূলপাঠ বা লিপি (Alexandrian Test). এই আলেকজান্দ্রিয় মূলপাঠ বা লিপি এসেছে উত্তর মিশর দেশ থেকে। বর্তমানে যতগুলো অনুবাদ প্রচলিত আছে, কিং জেমস্ অনুবাদ তার ব্যতিক্রম হলো, তা আলেকজান্দ্রিয় মূলপাঠের ৫ থেকে ১০ শতাংশ পাণ্ডুলিপির অংশ থেকে অনুবাদ করা হয়েছে। এটিই একমাত্র অনুবাদ যার অধিকাংশ পঙ্ক্তি, ৯০%- ৯৫% টেক্সাস্ রিসেপ্টাস এর সঙ্গে মিলে আর সেটি হলো কিং জেমস্ অনুবাদ।

আমি পূর্বে বলেছি যে, সংরক্ষণ যদি সত্য হয়, যদি ঈশ্বর নিখুঁতভাবে আমাদের বাইবেল দিয়ে থাকেন, তিনি এটি নির্ভুলভাবে রক্ষাও করেছেন। আজ একটি নিখুঁত বাইবেল আছে, তাহলে আমরা এই উদ্দেশ্যে তিনটি সিদ্ধান্তের প্রতি দৃষ্টি দিতে পারি যে কোথায় সেই বাইবেল রয়েছে যা খুঁজে পেতে পারি।
ক) বাইবেল হবে সেই বাইবেল যা অধিকাংশ খ্রীষ্টিয়ানদের দ্বারা ব্যবহৃত That Bible will be the Bible that used by the majority. কারণ প্রভু বলেছেন যে পবিত্র আত্মা আমাদের সকল সত্যে নিয়ে যাবেন। পাণ্ডুলিপির কোন্ পঙ্ক্তি অথবা কোন্ ধরণের বাইবেল খ্রীষ্টিয়ানগণ বিগত সব কয়টি শতাব্দীতে ব্যবহার করেছেন? আমরা ইতিহাস অনুসন্ধান করে দেখতে পারি, এবং পাণ্ডুলিপির যে পঙ্ক্তি অথবা কী ধরনের বাইবেল খ্রীষ্টিয়ানগণ ব্যবহার করেছেন সেই পাণ্ডুলিপির অধিকাংশ পঙ্ক্তি যা টেক্সাস্ রিসেপ্টাস (Textus Receptus)  এর সঙ্গে মিলে। এদেশে একজনও উদারপন্থী নেই যারা এটি অস্বীকার করবে।

খ) বাইবেল যুগের পর যুগ ধরে বিদ্যমান থাকবে That Bible will be in existence through all the ages. অধিকাংশ পাণ্ডুলিপি ৯০%-৯৫% যা টেক্সাস্ রিসেপ্টাসের (Textus Receptus)  সঙ্গে মিলে। প্রথম স্বহস্তেলেখাগুলো (original autographs) থেকে সেগুলোর সন্ধান বিগত শতাব্দীগুলো থেকে আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়। এসব সকল যুগেই বিদ্যমান ছিল। কিন্তু সংখ্যালঘু পাণ্ডুলিপি (minority manuscripts) ৫% থেকে ১০% সম্পর্কে তা বলা চলে না। কমবেশ ১৪০০ বছর ধরে আলেকজান্দ্রিয় মূলপাঠ (Alexandrian Test) ব্যবহার করা হয়নি এবং কোথাও ছিল না। এটি অবশেষে ১৮০০ শতকে পুনরায় প্রকাশিত হয়। যদি আলেকজান্দ্রিয় মূলপাঠ ঈশ্বরের বাক্য হয়, তাহলে আমাদের ১৪০০ বছরের একটি সময় গেছে যখন পৃথিবীতে একটিও বাইবেল ছিল না। সেজন্য যদি আমরা কিং জেমস্ অনুবাদ (King James) ছাড়া অন্য অনুবাদগুলোর একটি গ্রহণ করি, তাহলে আমরা প্রস্তুত থাকবো উত্তর দেবার জন্য যে কেন ১৪০০ বছর ধরে বাইবেল ছিল না। সংরক্ষণের বিষয়ে বাইবেল যা বলে সেই আলোকে আমি প্রস্তুত নই উত্তর দেবার।
গ) বাইবেল হবে খাঁটি এবং অপরিবর্তিত That Bible will be pure and untampered with. অধিকাংশ পাণ্ডুলিপির ৯০%-৯৫% বিগত শতাব্দীগুলোতে কোনো পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু আলেকজান্দ্রিয় পাণ্ডুলিপি যা আমরা কিছুটা দেখব, যা অনেকবার সংশোধন করার জন্য পুনঃনিরীক্ষণ করা হয়েছে, কিছু লোকের দ্বারা পরিবর্তিত হয়েছে। এমনকি অনেক জায়গায় একে অপরের সঙ্গে মিলে না বা একমত হয় না। সেজন্য, ঐগুলো খাঁটি নয়। এখন আসুন দেখি কিং জেমস্ অনুবাদ সম্পর্কে সমালোচকেরা কী বলেন?

১) ওয়েস্টকট্ ও হর্টের মতবাদ The Westcott and Hort Theory

বর্তমানে প্রচলিত বিতর্কগুলোর মধ্যে একটি হলো এই যে আলেকজান্দ্রিয় অনুবাদ কিং জেমস্ অনুবাদ থেকে ভালো। আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি যে এই অনুবাদগুলো বিকৃত শ্রেণীর পাণ্ডুলিপি (corrupted line of manuscripts) থেকে এসেছে। এই শ্রেণীর পাণ্ডুলিপিগুলো ১৪০০ বছর ধরে হারিয়ে ছিল। তাহলে কেন লোকেরা এই অনুবাদগুলোর কাছে যায় ও বলে এগুলো শ্রেষ্ঠ?

এই প্রশ্নের উত্তরে, আমরা প্রথমে দু’জনকে দেখব, তারা ওয়েস্টকট (Westcott and Hort)। তারা ১৮০০ শতকে ছিলেন। তারা বিশ্বাস করতেন যে, কমবেশ ৪২৫ থেকে ১৮০০ শতক পর্যন্ত বাইবেল হারিয়ে যায়। ঐ নির্দিষ্ট সময়ে খ্রীষ্টিয়ানদের হাতে যে বাইবেল ছিল, তা কেবল বিকৃত পাণ্ডুলিপিগুলো (corrupted manuscripts)  থেকে সংকলিত। কিন্তু ১৮০০ শতকের শেষ দিকে দু’টি পাণ্ডুলিপি প্রকাশ পায় ভাটিকানাস ও সাইনাইটিকস (Vaticanus and Sinaiticus)। তারা বিশ্বাস করেন যে এই পাণ্ডুলিপি দু’টি ছিল প্রকৃত ঈশ্বরের বাক্য যা বিগত ১৪০০ বৎসর যাবত পাওয়া যায়নি। তারা বিশ্বাস করেন যে এগুলো অন্যগুলোর চেয়ে সঠিক। তাদের এসব কথা তিনটি যুক্তির উপরে প্রতিষ্ঠিত।

প্রথমত, তারা বলেন, এ দু’টি পাণ্ডুলিপি টেক্সাস্ রিসেপ্টাস থেকে পৃথক আর এরাই ঠিক। আলেকজান্দ্রিয় পাণ্ডুলিপি (ভাটিকানাস ও সাইনাইটিকাস) এবং টেক্সাস্ রিসেপ্টাস পাণ্ডুলিপিগুলির মধ্যে একটি বড় পার্থক্য আছে।

দ্বিতীয়ত, তারা বলেন যে টেক্সাস্ রিসেপ্টাস্ সংশোধন করার জন্য পুনঃনিরীক্ষণ করা হয়েছিল। সেজন্য এটি আসলটি নয়। তারা এই অনুমান করেন যে, ৩৫০-৪০০ খ্রীষ্টাব্দে সমস্ত ম-লীর পালক, পুরোহিত ও শাস্ত্র বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বড় সম্মেলন হয়েছিল। তারা একত্র হয়ে পুনরায় বাইবেল লিখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেজন্য তারা বাইবেল সংশোধন করার জন্য পুনঃনিরীক্ষণ করেন এবং এজন্য তারা টেক্সাস্ রিসেপ্টাস্টি ব্যবহার করেন। বর্তমানে যে কিং জেমস্ বাইবেল রয়েছে এটি তার থেকে অনুবাদ। সম্মেলনের শেষে পালক পুরোহিতেরা সকলে তাদের লোকদের কাছে ফিরে যান এবং বলেন, “এই বাইবেলটি আপনারা পড়বেন”। এভাবে তারা খ্রীষ্টিয়ানদের উপরে তাদের বাইবেল চাপিয়ে দেন। অথচ এটি আসল বাইবেল নয়। এই কারণে আলেকজান্দ্রিয় উদ্ধৃত অংশ ( (texts) চাপা পড়ে যায়।

ওয়েস্টকট ও হর্টের এই যুক্তিতে একটি বাস্তব সমস্যা আছে। এমন কোনো ছিটে ফোঁটা ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই যে তা দিয়ে প্রমাণ করা যায় এমন কিছু ঘটেছিল। যদি ঐ প্রকার একদল শাস্ত্র বিশেষজ্ঞ একত্র হয়ে উল্লেখযাগ্য এই জাতীয় কিছু কাজ করে থাকেন, তাহলে ঐতিহাসিক লেখনীতে যে-কোনো স্থানে এর প্রমাণ থাকত। কিন্তু কোথাও কোনো প্রমাণ নেই, এতে বুঝা যায় এরূপ কোনো ঘটনা ঘটেনি।

তাদের তৃতীয় যুক্তি এই যে, আলেকজান্দ্রিয় পাণ্ডুলিপি টেক্সাস্ রিসেপ্টাস পাণ্ডুলিপির চেয়ে পুরাতন, সেজন্য আলেকজান্দ্রিয় পাণ্ডুলিপি শ্রেষ্ঠ। ওয়েস্টকট ও হর্ট বিশ্বাস করতেন যে বাইবেলের আসল কথাগুলো খুঁজে পাওয়ার উপায় হলো প্রথম লেখার নিকটতম উৎসে ফিরে যাওয়া। প্রাথমিকভাবে এটি মনে হয় বেশ যুক্তিযুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, যদি আমার শেক্সপিয়ারের লেখা একটি নাটকের তিনটি কপি থাকে, একটি ছাপান হয়েছে ১৯৫৫ সালে, একটি ছাপান হয়েছে ১৯০০ সালে এবং তিনি মারা যাওয়ার পাঁচ বছর পর একটি ছাপানো হয়েছে। সেগুলোর একটিরও সঙ্গে অপরটির মিল নেই। এদের মধ্যে কোন্টি আসল বলে আমি মনোনীত করব অথবা শেক্সপিয়ারের আসল লেখার নিকটতম বলে স্থির করব? স্বাভাবিকভাবে আমি সবচেয়ে পুরাতনটি পছন্দ করব। এটি আসলটির সবচেয়ে নিকটতম এবং নিশ্চয় এতে সবচেয়ে কম ভুল থাকবে।

ওয়েস্টকট ও হর্টের মতবাদ বাইবেলকে জাগতিক সাহিত্যরূপে গণ্য করে। তারা বলছে, আপনি বাইবেলের মূলপাঠ খুঁজে পাবেন ঠিক সেভাবে, যেভাবে আপনি জাগতিক কোনো কাজের মূলপাঠ পেয়ে থাকেন। আপনি তুলনা করার সময় সাম্প্রতিক পাণ্ডুলিপিগুলোর চেয়ে অপেক্ষাকৃত পুরাতন পাণ্ডুলিপিগুলোর উপরে বেশি গুরুত্ব দান করবেন, মনোযোগের সঙ্গে সেটি পাঠ করবেন। অবশেষে আপনি আসলটির একটি যুক্তিযুক্ত অবিকল প্রতিরূপে পৌঁছাবেন। এটিই ঠিক যদি আপনি জাগতিক সাহিত্য নিয়ে কাজ করেন। কিন্তু বাইবেল কোনো জাগতিক সাহিত্য নয়। এটি ঈশ্বরের পবিত্র বাক্য। ঈশ্বর কেবল শাস্ত্র বিশেষজ্ঞ এবং অনুবাদকের ইচ্ছার উপর তাঁর বাক্য সংরক্ষণ করার কাজটি ছেড়ে দেননি। ঈশ্বর তাঁর বাক্য নির্ভুলভাবে রাখার জন্য আমাদের দেননি। ঈশ্বর বলেছেন তিনি তাঁর বাক্য খাঁটি রাখবেন। ঈশ্বর বলেছেন যে তিনি আমাদের একটি বিশুদ্ধ বাইবেল দিয়েছেন এবং তিনি চিরকালের জন্য তা বিশুদ্ধ রাখবেন।

সেজন্য, আমাদের সবচেয়ে পুরাতন পাণ্ডুলিপিগুলোর কাছে সঠিক লেখাগুলো পাওয়ার জন্য ফিরে যাওয়ার তেমন দরকার নেই। ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছেন যে তিনি তাঁর বাক্য সংরক্ষণ করবেন। সেজন্য এটি এখনো আমাদের মাঝে আছে। যেমন এটি ৩০০ খ্রীষ্টাব্দে ছিল। বলছি না যে পুরাতন পাণ্ডুলিপিগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে। কিন্তু সেগুলো বেশি পুরাতন বলে বেশি ভালো তা নয়।

কেন ভাটিকানাস এবং সাইনাইটিকাস পাণ্ডুলিপিগুলোকে টেক্সাস্ রিসেপ্টাস্ পাণ্ডুলিপি থেকে প্রাচীন বলা হয়? প্রথমত, ভাটিকানাস ও সাইনাইটিকাস মিশরের আলেকজান্দ্রিয়াতে পাওয়া গিয়েছিল, যেখানে আবহাওয়া খুব গরম ও শুষ্ক ছিল। যে প্যাপিরাসগুলোতে পাণ্ডুলিপি লেখা হয়েছিল তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার জন্য সেখানে যথেষ্ট আদ্রতা ছিল না। বস্তুতঃ প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিষের সবচেয়ে বেশি প্রাপ্ত হওয়ার স্থানগুলোর মধ্যে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ার চারিপাশ হলো একটি। সে কারণে জিনিষগুলো সেখানে সুষ্ঠভাবে রক্ষিত ছিল। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের আবহাওয়া অনেক পৃথক। সেখানেও অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিষ পাওয়া গিয়েছে। সেগুলো আরো বেশি ক্ষয়িষ্ণু অবস্থায় আছে।

আলেকজান্দ্রিয়ার পাণ্ডুলিপিগুলো টেক্সাস্ রিসেপটাস্ থেকে অপেক্ষাকৃত পুরাতন বলার দ্বিতীয় কারণ টেক্সাস্ রিসেপ্টাস এর পাণ্ডুলিপিগুলো খ্রীষ্টিয়ানগণ যুগের পর যুগ ধরে ব্যবহার করেছেন আর এত ব্যবহৃত হয়েছিল যে তার অনেকগুলো কপি আসলে নষ্ট হয়ে যায়। প্যাপিরাস খুবই ভঙ্গুর। আবহাওয়া আর সর্বদা ব্যবহারের দরুন অপেক্ষাকৃত পুরাতন অনেক টেক্সাস্ রিসেপ্টাস্ পাণ্ডুলিপি নষ্ট হয়ে যায়। খ্রীষ্টিয়ানগণ তাদের বাইবেলগুলো পুড়িয়ে ফেলতেন যখন তারা দেখতেন যে তাদের বাইবেলগুলো এমন অবস্থাতে আছে যা তারা আর কখনো ব্যবহার করতে পারবেন না। তারা এই কাজটি করতেন কারণ তারা চাইতেন না যে তাদের শত্রুরা বাইবেলগুলো পায় এবং সেগুলো তুচ্ছতার সঙ্গে ব্যবহার করে। প্রাথমিক খ্রীষ্টিয়ানদের কাছে বাইবেল ছিল অত্যন্ত মূলবান। সেজন্য এটি তারা ব্যবহার করতেন যে পর্যন্ত না তা ব্যবহারের অযোগ্য হতো। তারপর ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি শ্রদ্ধার কারণে নষ্ট করা হতো। অপরদিকে আলেকজান্দ্রিয় পাণ্ডুলিপিকে প্রকৃত খ্রীষ্টিয়ানগণ বিকৃত ও ঈশ্বরের প্রকৃত বাক্য নয় বলে বিবেচনা করতেন। এইসব পাণ্ডুলিপি খ্রীষ্টিয়ানগণ ব্যবহার করতেন না বলে ঐগুলো ভালোভাবে সংরক্ষিত ছিল। এ দু’টি কারণ দেখিয়ে দিচ্ছে যে কেন আমরা টেক্সাস্ রিসেপ্টাস্ পাণ্ডুলিপি ঈশ্বরের খাঁটি বাক্যরূপে গ্রহণ করি। যদিও সেগুলো সম্পর্কে ধারণা করা হয় যে আলোকজান্দ্রিয় পাণ্ডুলিপির মতো পুরাতন নয়।

২) ওয়েস্টকট্ ও হর্টের জীবন The Lives of Westcott and Hort

টেক্সাস্ রিসেপটাসের পরিবর্তে, আলেকজান্দ্রিয় মূলপাঠ যে ঈশ্বরের বাক্য এর প্রতি মানুষের বিশ্বাসের ভিত্তির উপরে ওয়েস্টকট ও হর্টের মতবাদ প্রতিষ্ঠিত। আমরা ওয়েস্টকট ও হর্ট এই দু’জনকে এখন একটু দেখি। তারা কেমন খ্রীষ্টিয়ান ছিলেন?

ওয়েস্টকট ৪ঠা মার্চ ১৮৯০ সালে পুরাতন নিয়ম সমালোচনা সম্পর্কে ক্যান্টারবেরীর আর্চবিশপকে লেখেন। তিনি লেখেন, “আমার ধারণা, বর্তমানে এমন কেউ নেই, যে মনে মনে পোষণ করে যে আদিপুস্তকের প্রথম তিনটি অধ্যায়, দৃষ্টান্তস্বরূপ কোনো আক্ষরিক ইতিহাস প্রদান করে। আমি কোনো ক্রমেই বুঝতে পারি না যদি কেউ চোখ খুলে ঐসব পাঠ করে, তবে কেমন করে এসব বিশ্বাস করে বলে চিন্তা করতে পারে।” অর্থাৎ তিনি বিশ্বাস করতেন না যে আদিপুস্তকের প্রথম তিনটি অধ্যায় সত্য।

১৮৬৫ সালে পূণ্য শুক্রবারে ওয়েস্টকট তার স্ত্রীকে লেখেন, “আজ সকালে আমি একটি প্রচার শুনতে যাই। প্রচারক প্রায়শ্চিত্তের বিষয় প্রচার করেন। সবকিছুই ভালো বলেছেন। কিন্তু তিনি আত্মোৎসর্গের প্রবণতা এবং বদলিস্বরূপ শাস্তির মতো কঠিন বিষয়ে প্রবেশ করেননি। আমার কাছে, এটি সবসময়ই অত্যন্ত তৃপ্তিকর যে একজন খ্রীষ্টিয়ানকে বিবেচনা করা হয় সে খ্রীষ্টে আছে। সম্পূর্ণরূপে তাঁর সঙ্গে একীভূত এবং খ্রীষ্ট যা করেছেন সেও তা করে। খ্রীষ্টের কাজগুলো হয়ে উঠে তার এবং খ্রীষ্টের জীবন ও মৃত্যু, কতক পরিমাণে হবে তার জীবন ও মৃত্যু।” অর্থাৎ তিনি বলছেন খ্রীষ্ট যে আমাদের পাপের জন্য মরেছেন তা তার পক্ষে বিশ্বাস করা খুব কঠিন এবং গোঁড়া খ্রীষ্টিয়ানদের মতো তিনি এটি মেনে নেননি। তার নিজের সাক্ষ্য অনুসারে, মি. ওয়েস্টকট কখনো একজন পরিত্রাণপ্রাপ্ত ব্যক্তি নন্।

এখন আমরা মিঃ হর্টকে দেখি। মিঃ জন ইলারটনকে লেখা এক চিঠিতে তিনি লেখেন, “আমি চিন্তা করতে বাধ্য অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি যে এদন সম্পর্কে যে সাধারণ ধারণা আছে তা কখনো ছিল না। আদমের পতন তার প্রত্যেক বংশধরদের পতন থেকে কোনো তুলনায় ভিন্নরূপ নয়।” অর্থাৎ তিনি বিশ্বাস করতেন যে এদন উদ্যান ছিল না। আদম হবার পাপে পতন এটি এক খারাপ দৃষ্টান্ত ছাড়া আপনার আমার উপরে কোনো প্রভাব ফেলে না।

১৮৪৮ সালের ৬ই জুলাই তিনি মিঃ জন ইলারটনকে আবার লেখেন, “কাথলিক মণ্ডলীর (Romish) খাঁটি ধারণাগুলো ধর্মপ্রচারকদের (Evangelical) চেয়ে সত্যের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য অধিক বিশ্বাসযোগ্য। আমরা সাক্রামেন্টসমূহ পরিত্যাগ করতে সাহস করব না, অন্যথায় ঈশ্বর আমাদের পরিত্যাগ করবেন।”

১৮৬০ সালের ১৫ই অক্টোবর তিনি মি. ওয়েস্টকটকে লেখেন, “আজকের ডাকে পিওন আপনার চিঠি দিল। প্রায়শ্চিত্ত সম্পর্কে আপনি তখন যা বলেছেন তার একটি শব্দ সংশোধন করে আমি সম্পূর্ণরূপে একমত। অনেক বছর ধরে বিশ্বাস করে এসেছি যে খ্রীষ্টিয়ানের অথবা একজন মানুষের সঙ্গে স্বয়ং খ্রীষ্টের পরিপূর্ণ মিলন। এই আত্মিক সত্য যার সম্পর্কে প্রচলিত বদলির মতবাদ (doctrine of substitution) অর্থাৎ পাপী মানুষের পরিবর্তে খ্রীষ্টের শাস্তি ভোগ একটি নীতি বহির্ভূত স্থূল মিথ্যা (an immoral and material counterfeit) । নিশ্চয় এর চেয়ে বেশি আর কত অশাস্ত্রীয় হতে পারে যে বর্তমানে খ্রীষ্টকে সীমাবদ্ধ করে আমাদের পাপ ও দুঃখের বোঝা তিনি তাঁর মৃত্যুতে বহন করেন! কিন্তু বাস্তবিকই এটি কেবল প্রায় বিশ্বজনীন ধর্ম বিরোধীতার (Heresy) দৃষ্টিভঙ্গির একটি।” প্রিয় পাঠক, আপনি কি জানেন তিনি কী বলছেন? তিনি বলছেন যে যখন যীশু ক্রুশে মরেছিলেন, কতক বোধে তিনি আমাদের পাপের জন্য মরেছেন কিন্তু তাঁর ক্রুশে মরণের চেয়েও আমাদের পাপের জন্য আরো বেশি পরিশোধ করতে হবে। খ্রীষ্টের মৃত্যু যথেষ্ট নয়। প্রায়শ্চিত্ত সম্পর্কে কাথলিক মণ্ডলীর খাঁটি ধারণা (অর্থাৎ কর্মের মাধ্যমে পরিত্রাণ) তার কাছে বেশি ভালো মনে হয়েছে।

মিঃ হর্র্ট বিয়ে করেন, তার স্ত্রীর নাম মেরি ছিল না। কিন্তু তিনি তার জীবনভর জিদ করে এসেছেন যেন তাকে মেরি বলে ডাকা হয়। মিঃ হর্ট মনে করতেন যে কোনো স্ত্রীলোকের জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট নাম হতে পারে মেরি, কারণ মেরি ছিলেন ঈশ্বরের মা।

যখন আমরা এই দু’জন লোকের জীবন ও লেখাগুলো পর্যালোচনা করি, আমরা স্পষ্টত দেখতে পাই যে তারা পরিত্রাণপ্রাপ্ত ছিলেন না। তাদের জীবনে প্রচুররূপে কাথলিকদের স্পষ্ট প্রভাব ছিল। তথাপি তাদের মতবাদ আলেকজান্দ্রিয় পা-ুলিপি ভালো এবং টেক্সাস্ রিসেপ্টাস্ ঈশ্বরের সেই বাক্য নয় একথা আজকাল অনেক স্কুলে শিক্ষা দেওয়া হয়। অনেক বিশেষজ্ঞ তা বিশ্বাস করেন। বিগত শতাব্দীগুলোতে গোঁড়া খ্রীষ্টিয়ানগণ এসব ধারণায় বদ্ধ ছিলেন না। ১৮০০ সালের পূর্বে এ-বিষয়ে কখনো কিছু শোনা যায়নি। যখন ওয়েস্টকট ও হর্ট দৃশ্যপটে আসলেন এবং আলেকজান্দ্রিয় পা-ুলিপির উপর ভিত্তি করে সংশোধিত অনুবাদ (Revised Version) প্রকাশ করলেন। তবুও বর্তমানে ঐসব মতবাদ আমেরিকার অনেক স্কুলে সত্য বলে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।

৩) সাইনাইটিকাস ও ভাটিকানাস The Sinaiticus and Vaticanus

যে দু’টি আলেকজান্দ্রিয় পা-ুলিপির উপরে ওয়েস্টকট ও হর্ট নির্ভর করেছিলেন সেগুলো ছিল সাইনাইটিকাস ও ভাটিকানাস। এই দু’টি প্রধান পাণ্ডুলিপি থেকে আজকাল প্রতিটি বাইবেল অনুবাদ করা হচ্ছে একমাত্র কিং জেমস্ ছাড়া। স্কফিল্ড (Scofield) বাইবেল, যদিও এতে টেক্সাস্ রিসেপটাস ব্যবহৃত হয়েছে কিন্তু এর প্রতিটি পৃষ্ঠার নিচে সাইনাইটিকস ও ভাটিকানাস সম্পর্কে টীকা দিয়েছেন। যখন তিনি “বেশি পুরাতন পাণ্ডুলিপির” কথা বলেছেন তখন সাইনাইটিকাস ও ভাটিকানাসের কথা উল্লেখ করেছেন। এর অর্থ এই নয় যে আপনাকে স্কফিল্ড বাইবেল ফেলে দিতে হবে। নিচের ও মাঝের কলামের টীকাগুলো ঈশ্বরের বাক্য নয়। এসব তিনি লিখেন আর তাতে পাঠের জন্য অনেক ভালো টীকা আছে। কিন্তু ড. স্কফিল্ড একজন মানুষ ছিলেন, মানুষেরা ভুল করে।

ক) এদের উৎপত্তি Their Origin

সাইনাইটিকাস এবং ভাটিকানাস এই দু’টি পাণ্ডুলিপি কোথা থেকে এসেছে? সাইনাইটিকাস লেখা হয়েছে কমবেশ ৩৭৫ খ্রীষ্টাব্দে। এটি ১৮৪৪ সালে পাওয়া যায়, হারিয়ে যাওয়ার প্রায় ১৪০০ বছর পর। এটি যে লোকটি পান তার নাম টিসেনড্রফ (Tischendoref)। এটি পাওয়া যায় সিনয় পাহাড়ের নিচে একটি কাথলিক মঠে। টিসেনড্রফ কিছু প্রাচীন পাণ্ডুলিপির খোঁজে উক্ত মঠে যান। তিনি শুনেছিলেন যে তারা শত শত পাণ্ডুলিপি পুড়িয়ে ফেলছিল। তাদের থেকে উদ্ধার করতে, সেজন্য তিনি স্থির করলেন সেখানে গিয়ে দেখতে যে কিছু পাওয়া যায় কি না। সমস্ত দিন খুঁজে কোনো পাণ্ডুলিপি না পাওয়াতে তিনি ঘুমাতে যাবেন স্থির করলেন। যখন তিনি বিছানায় শুয়ে পড়লেন, তার হাত গিয়ে পড়ল একটি আবর্জনার ঝুড়িতে। তিনি সেটির মধ্যে খসখস শব্দ শুনতে পেলেন, তখন অনুসন্ধান করে একটি টিনের ময়লা ফেলার পাত্রের মধ্যে পেলেন প্যাপিরাসের পাণ্ডুলিপি (Papyrus manuscript)। তিনি এর নাম দিলেন সাইনাইটিকাস।

ওয়েস্টকট ও হর্টের মতবাদ বলে যে বাইবেল মূলত হারানো অবস্থায় কমবেশ ১৪০০ বছর ছিল, পুড়িয়ে ফেলা হলে বাস্তবে এটি চিরকালের জন্য হারিয়ে যেত। কিন্তু ঈশ্বর দয়াপরবশ হয়ে হারানো ও মৃত্যুপথযাত্রী পৃথিবীকে তাঁর ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপের দ্বারা রক্ষা করার অভিপ্রায়ে তাঁর বাক্যের ঐ একমাত্র কপি, একটি টিনের ময়লা ফেলার পাত্রের মধ্য থেকে একমাত্র আদি পাণ্ডূলিপি রক্ষা করলেন। ওহো! এজন্য কি আপনি ভালো বোধ করছেন না? এর জন্য কি আপনি প্রভুর প্রশংসা করতে চাইবেন না? একটি টিনের ময়লা ফেলার পাত্র দ্বারা বাইবেল রক্ষিত হয়েছিল! আমরা এটি প্রায় হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমি বলি ধ্যাত!

আসুন সাইনাইটিকাস সম্পর্কে কিছু তথ্য দেখি। নতুন নিয়মে ২৩৭টি শব্দ বাদ পরেছে। কিছু কিছু ফাঁকা জায়গা আছে যেখানে কোনো কোনো শব্দ থাকা উচিত ছিল। শব্দগুলো বাদ পড়েছে বা শব্দটি মুছে ফেলা হয়েছে। কমপক্ষে পাঁচ জন পা-ুলিপিটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পুনঃপরীক্ষা করে কিছু অংশ যোগ বা কিছু অংশ পরিবর্তন করেন। ওয়েস্টকট ও হর্ট বিশ্বাস করেন এর দ্বারা পাণ্ডুলিপিটি আরো ভালো করা হয়েছে। আমার ধারণা যদি আপনি অবিশ্বাস করেন যে ঈশ্বর তাঁর বাক্য সংরক্ষণ করেন, তবে আপনি ভাববেন লোকেরা শব্দগুলো পরিবর্তন করেছে এটি ভালো বিষয়, কারণ সম্ভবত তারা এটিকে আরো ভালো করেছে। কিন্তু আপনি যদি বিশ্বাস করেন যে ঈশ্বর তাঁর বাক্য সংরক্ষণ করেন, তাহলে আপনি বুঝবেন যে, যদি কেউ এটি সংশোধন করে, তাহলে সে তা তালগোল পাকিয়ে বিশৃঙ্খলা করবেন।
আসুন আমরা ভাটিকানাস সম্পর্কে কিছু তথ্য দেখি। এটি কমবেশ ৩৫০ খ্রীষ্টাব্দে লেখা হয়েছিল। ওয়েস্টকট ও হর্ট এটিকে বলেন “উন্নততর পাণ্ডুলিপি” (Improved Manuscript) , সাইনাইটিকস থেকে ভালো, কারণ দশ ব্যক্তি এটি পরীক্ষা করে সংশোধন করেছিলেন। ভাটিকানাসে নতুন নিয়মের শেষের ইব্রীয় ৪র্থ অধ্যায় থেকে প্রকাশিত বাক্যের শেষঅংশ পর্যন্ত বাদ পরেছে অর্থাৎ নেই। প্রাচীন পাণ্ডুলিপিসমূহের শেষের অংশ হারিয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। ঐ অংশগুলো হয় হারিয়ে গেছে না-হয় নষ্ট হয়েছে। কিন্তু যখন আমরা এই দু’টি পাণ্ডুলিপি তুলনা করি তখন বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দেখা যাবে।

ভাটিকানাস পাওয়া গিয়েছে রোমের ভাটিকানে। রিফরমেশনের (পোপ বিরোধী ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন) সময় ঈশ্বরের বাক্য পুনরায় প্রকাশ হয়। খুলে দেওয়া হয় জনগণের নিজ নিজ ভাষাতে পড়তে ও বুঝতে পারার জন্য। কাথলিকেরা দেখল কী হতে চলেছে। তারা বুঝল জনগণ সত্য ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করতে ও পরিত্রাণপ্রাপ্ত হচ্ছে। তারা বুঝল তাদের শীঘ্রই কিছু করা দরকার। সেজন্য তখন ভাটিকানাস প্রকাশ করা হলো। কাথলিক মণ্ডলী জনগণকে বলল, “আমরা আমাদের সংরক্ষণাগারে মূল্যবান দলিলপত্রের মাঝে ঈশ্বরের প্রকৃত বাক্য খুঁজে পেয়েছি। এরমধ্যে কিছু অতিরিক্ত পুস্তক আছে যা তোমাদের নেই, এজন্য এটি আরো বেশি ভালো।” আমি আশ্চর্য হই কেন রোম লোকদের হাতে অপর একটি বাইবেল দিতে চাইল যা অন্য সবকটি থেকে পৃথক? সম্ভবত রোম বিষয়গুলোতে কিছুটা বিভ্রান্ত সৃষ্টি করতে চেয়েছিল, যেমন তারা সর্বদা করে।

খ) দুটি পা-ুলিপির তুলনাকরণ Comparing The Two Manuscripts

যেহেতু সাইনাইটিকাস ও ভাটিকানাস পুরাতন পাণ্ডুলিপি, আদি লেখাগুলোর নিকটতম। আমরা আশা করব যে সেগুলো সঠিক পাঠের নিকটতম। তাই তাদের একটির সঙ্গে অপরটির প্রায় অভিন্ন হওয়া উচিত। কিন্তু যখন আমরা দু’টি পাণ্ডুলিপির একটি অপরটির সঙ্গে তুলনা করি, আমরা অনেকগুলো বড় পার্থক্য দেখতে পাই। যখন আমরা কেবল ৪টি সুসমাচার মথি, মার্ক, লূক ও যোহন - একটি অপরটির তুলনা করি, তখন ৩০০০ এর বেশি পার্থক্য লক্ষ্য করি। নতুন নিয়মে, মথি থেকে ইব্রীয় ৪ অধ্যায় পর্যন্ত দু’টি পাণ্ডুলিপির মধ্যে ৫০০০ এর উপর পার্থক্য রয়েছে।
এখন আপনারা বুঝতে শুরু করেছেন যে কেন বর্তমানে এতগুলো অনুবাদ। এর কারণ তারা ভাটিকানাস ও সাইনাইটিকাস চালু রেখেছে। তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না যে কোন্টি নির্ভুল, যেহেতু দু’টির মধ্যে বহু পার্থক্য রয়েছে। এজন্য আপনাদের কাছে অনেকগুলোর অনুবাদ আছে। Revised Version ১৮৮১ সালে, এবং American Standard Version ১৯০১ সালে প্রকাশ হয়। কারণ কী লেখা উচিত সে-বিষয়ে নিশ্চিত না হওয়াতে আমেরিকানরা ইংরেজ শাস্ত্রজ্ঞদের সঙ্গে একমত হতে পারেনি। তারপর থেকে প্রায় প্রতিটি বছর একটি করে নতুন অনুবাদ প্রকাশ করা হয়। এটি উপহাসযুক্ত যে প্রতিটি নতুন অনুবাদ প্রকাশ করার সময় তারা সর্বদা বলে “এটি কিং জেমস্ অনুবাদ থেকে ভালো”। কেন তারা বলে না যে এটি তাদের আগের প্রকাশিত অনুবাদ থেকে ভালো? কারণ তারা জানে যে আগেরটিও কেবল এক আবর্জনার অংশমাত্র, ঐটি বাতিল। তারা আরো জানে খ্রীষ্টিয়ানেরা কিং জেমস্ বাইবেল অনুবাদকে খাঁটি বলে গ্রহণ করে। কিন্তু তারা চেষ্টা করে আমাদের বুঝাতে যে তাদের অনুবাদটি ভালো।

Revised Standard ও American Standard Version দু’টিতে Apocryphal বইগুলো আছে। টেক্সাস্ রিসেপ্টাস্ এ এ্যাপক্রিফাল বইগুলো আছে পুরাতন ও নতুন নিয়মের মাঝে। এতে যা লেখা আছে তাতে আপনি একটি মন্তব্য পাবেন যে, এই বইগুলো ঈশ্বরের বাক্য নয়। এগুলো ইতিহাসের জন্য ভালো। ভাটিকানাস ও সাইনাইটিকাসে এ্যাপক্রিফাল বইগুলো অন্যান্য বইগুলোর মাঝে মাঝে রয়েছে, ঠিক যেন সেগুলো ঈশ্বরের বাক্য! যদিও তা নয়। যেহেতু ভাটিকানাস ও সাইনাইটিকাস উভয়টির পিছনে কাথলিক ইতিহাস আছে, তাই সেগুলো অধিকাংশ ব্যক্তি মেনে নেয়। সেজন্য আমরা ভাটিকানাস ও সাইনাইটিকাস গ্রহণ করতে পারি না। রোমের সঙ্গে এর উভয়ই পূর্বাপর সম্পর্কযুক্ত এবং নিশ্চিতরূপে কাথলিক প্রভাবান্বিত। সেগুলো ঈশ্বরের বাক্য নয়।

খ) অনুবাদের বিকৃতিকরণ The Perversion of the Veresions

কিং জেমস্ অনুবাদ সত্য ঈশ্বরের বাক্যরূপে গ্রহণ করার পিছনে আর একটি কারণ হলো ঐসব অনুবাদগুলোর বিকৃতিকরণ। অন্যান্য অনুবাদের সঙ্গে আমরা যদি কিং জেমস্ অনুবাদটি তুলনা করি, তাহলে অনেক পার্থক্য দেখতে পাব। খ্রীষ্টের ঈশ্বরত্ব সম্পর্কে অনেকগুলো পদ পরিবর্তন করা হয়েছে । কিং জেমস্ বাইবেল থেকে আমার ১৬২টি পদের একটি চার্ট রয়েছে যা অন্যান্য অনুবাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। রিভাইজড স্ট্যান্ডর্ড অনুবাদে ১৫৮টি পদ কিং জেমস বাইবেল থেকে পৃথক। লিভিং বাইবেলে ১৩৪টি ভিন্নরূপ। আমেরিকান স্ট্যান্ডর্ড অনুবাদে ১৬২টির মধ্যে ১৩৫টি ভিন্নরূপ এবং নিউ আমেরিকান স্ট্যান্ডর্ড অনুবাদে পদগুলোর ১৪৭টি ভিন্নরূপ। আসুন আমরা প্রথমে রিভাইজড স্ট্যান্ডর্ড অনুবাদ থেকে কয়েকটি পার্থক্য আপনাদের দেখাই।

লূক ২:৩৩ পদে রিভাইজড স্ট্যান্ডর্ড অনুবাদ বলে যে যোষেফ যীশুর বাবা। প্রেরিত ৮:৩৭ সম্পূর্ণ বাদ পড়েছে। কিং জেমস্ অনুবাদে এই পদটি বলে, “ফিলিপ কহিলেন, সমস্ত অন্তঃকরণের সহিত যদি বিশ্বাস করেন, তবে হইতে পারেন। আর তিনি উত্তর করিয়া কহিলেন, যীশু খ্রীষ্ট যে ঈশ্বরের পুত্র; ইহা আমি বিশ্বাস করিতেছি।” এই পদটি খ্রীষ্টের ঈশ্বরত্বের বিষয় বলে। রিভাইজড স্ট্যান্ডর্ড অনুবাদে এটি বাদ পড়েছে। প্রেরিত ৯:৫-৬ পদে যেখানে খ্রীষ্টকে ঈশ্বর প্রভু বলা হয়েছে, রিভাইজড স্ট্যান্ডর্ড অনুবাদ থেকেও এটি সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া হয়েছে। ১যোহন ৫:৭-৮ পদে ত্রিত্বের বিষয় বলে। সত্যটি এই যে পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মা সকলে তিনে এক, এটি সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া হয়েছে। অনেকে দাবি করে যে ঐসব পদ বাইবেলে থাকা ঠিক নয় কিন্তু  পাণ্ডুলিপির সাক্ষ্য প্রমাণের জন্য পদগুলো এখানে রয়েছে। এসবই ঈশ্বরের বাক্যের অংশবিশেষ।

আসুন আমরা লিভিং বাইবেল দেখি। এটি একটি সহজতর শব্দান্তরিত (Paraphrased) বাইবেল, যা আসলে বুঝায় বাইবেল কী বলে সে সম্পর্কে একজন মানুষের মন্তব্য। এটি কেনেথ টেইলরের (Kenneth Taylor) বাইবেলের উপরে টীকা। এটি অনুবাদের জন্য এমনকি তিনি গ্রিক পাণ্ডুলিপি অথবা গ্রিক উদ্ধৃত অংশ (texts) ব্যবহার করেননি। তিনি যখন বিমানে এক শহর থেকে অন্য শহরে ভ্রমণ করেন তখন ইংরেজি অনুবাদগুলো নিয়ে যান ও নোট করেন আর তার চিন্তামতো প্রতিটি পদে কী বুঝায় তা সংক্ষেপে লিখেন। তিনি বলেছিলেন যে, তিনি এমন একটি বাইবেল লিখতে চান যা লোকেরা বুঝতে পারে। কিন্তু আপনি তার লিভিং বাইবেল লক্ষ্য করে দেখবেন এর আরম্ভে একটি গ্রন্থস্বত্ব - সর্র্বস্বত্ব সংরক্ষিত (Copyright) আছে অর্থাৎ তিনি অর্থ রোজগার করার জন্য এটি করেছিলেন। আজকাল যেসব অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে, কিং জেমস্ অনুবাদ ছাড়া আর সব কয়টির কপি রাইট আছে। এতবেশি অনুবাদ হওয়ার আরো একটি কারণ হলো তারা টাকা রোজগারের জন্য সেগুলো প্রকাশ করেন।

আসুন, আমরা লিভিং বাইবেলের ক’টি পদ দেখি। মথি ১৯:৯ ব্যভিচার সম্পর্কে দশটি শব্দ নেই। যোহন ১৬:১৬ “কেননা আমি সেই পিতার নিকটে যাই” এই উক্তি বাদ দেওয়া হয়েছে। এখানেও খ্রীষ্টের ঈশ্বরত্বের উপরে একটি আক্রমণ।

আমার কলেজে আমাকে আমেরিকান স্ট্যা-ার্ড অনুবাদের জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল। তখন এটিকে মনে করা হতো “শ্রেষ্ঠ” অনুবাদ। আমি গ্রাজুয়েট হওয়ার পর নিউ আমেরিকান স্ট্যা-ার্ড অনুবাদ বাইবেলটি হয়েছিল শ্রেষ্ঠ। সম্প্রতি নিউ ইন্টারন্যাশনাল অনুবাদ (NIV) হয়েছে শ্রেষ্ঠ। আমেরিকান স্ট্যা-ার্ড অনুবাদে লূক ২:৩৩ যোষেফকে যীশুর পিতা বলা হয়েছে। যোহন ১৬:১৬ পদে “কেননা আমি সেই পিতার নিকটে যাই” শব্দগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। এই রকম আরো অনেক আছে যা খ্রীষ্টের ঈশ্বরত্বের উপরে আক্রমণ করা হয়েছে। নিউ আমেরিকান স্ট্যান্ডর্ড অনুবাদে লূক ২:৩৩ পদেও যোষেফকে যীশুর পিতা বলা হয়েছে। যোহন ১৬:১৬ পদে “কেননা আমি সেই পিতার নিকটে যাই” এই উক্তিটিও বাদ দেওয়া হয়েছে।

তথাকথিত বিশেষজ্ঞদের মতে নিউ ইন্টারন্যাশনাল ভার্শনকে বর্তমানে শ্রেষ্ঠ ভার্শন (অনুবাদ) বলা হয়ে থাকে। লূক ২:৩৩ পদে আবার যোষেফকে যীশুর পিতা বলা হয়েছে। প্রেরিত ২:৩৮ পদে “পাপ মোচনের নিমিত্ত বাপ্তাইজিত হও” এই শব্দগুলো পরিবর্তন করে “যীশুর নামে অবগাহিত হও যেন তোমার পাপসমূহের ক্ষমা হয়” লিখেছে। অনেকে বলেন কিং জেমস্ বাইবেলে প্রেরিত ২:৩৮ পদটি খারাপ অনুবাদ। এখানে বলা হয়েছে বলে তারা দাবি করেন যে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আপনাকে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু কিং জেমস্ এর অনুবাদটি একটি সঠিক অনুবাদ। বিষয়টি আমি এভাবে ব্যাখ্যা করছি। চুরি করার দায়ে যোহন কারাগারে গেল। কেন সে কারাগারে গেল? চুরি করার জন্য। চুরি করবে বলে কি তারা তাকে কারাগারে পাঠিয়েছিল? কখনো না। সে এ-কাজটি করেছে বলেই তারা তাকে সেখানে পাঠিয়েছিল। প্রেরিত ২:৩৮ বলে পাপ মোচনের নিমিত্ত আপনি বাপ্তাইজিত হয়েছেন, অর্থাৎ আপনি বাপ্তিস্ম গ্রহণ করেছেন কারণ আপনার সকল পাপ ক্ষমা করা হয়েছিল।

নিউ ইন্টারন্যাশনাল অনুবাদ অনুসারে আপনি বাপ্তিস্ম গ্রহণ করছেন যেন আপনার সব পাপের ক্ষমা হয়। ঈশ্বরের বাক্য এরূপ কথা আমাদের শিক্ষা দেয় না। প্রকৃতপক্ষে রোমান কাথলিক মণ্ডলী এটাই বিশ্বাস করে, ওয়েস্টকট ও হর্টও ঠিক এটি বিশ্বাস করতেন। বাইবেল বিকৃতকারীগণও ঠিক তাই বিশ্বাস করে। যীশু খ্রীষ্টের রক্তের দ্বারা পুনর্জন্ম তারা বিশ্বাস করে না। তারা জলে বাপ্তিস্মের দ্বারা পুনর্জন্ম বিশ্বাস করে।

১তীমথিয় ৩:১৬ পদে কিং জেমস্ যীশুর বিষয় বলছে, ঈশ্বর মাংসে প্রকাশিত হইলেন। ইন্টারন্যাশনাল অনুবাদে ঈশ্বর শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। সেখানে বলা হয়েছে “যিনি মাংসে প্রকাশিত হইলেন”। অর্থাৎ এর দ্বারা বলছে যে যীশু কেবল একজন মানুষ ছিলেন। খ্রীষ্টের ঈশ্বরত্ব এখানেও আক্রান্ত।

নিউ কিং জেমস্ অনুবাদে আপনি চরম বিকৃতি অর্থাৎ স্ববিরোধী বক্তব্য পাবেন, যদি তেমন একটি বিকৃত বাইবেল কিনতে চান। এটি শ্রেষ্ঠ একথা বলার কারণ তারা অনুবাদের সময় টেক্সাস্ রিসেপটাস্ এর মূলপাঠ (text) ব্যবহার করেছেন। তারা আলেকজান্দ্রিয় পাণ্ডুলিপিগুলোও ব্যবহার করেছেন, সেজন্য আপনি পাচ্ছেন অল্পকিছু সত্য আর একেবারে অনেক ভুল। নিউ কিং জেমস্ অনুবাদে ১করিন্থীয় ৮:১১ পদে Shall থেকে Will শব্দ পরিবর্তন হয়েছে। ফিলিপীয় ২:৬ পদে নিউ কিং জেমস্ অনুবাদ (NKJV) বলছে “ঈশ্বরের সহিত কিছু সমান থাকা ধরিয়া লইবার বিবেচনা করিলেন না,” অর্থাৎ যীশু খ্রীষ্ট নিজেকে প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বর বলে বিবেচনা করেননি। আরো অনেক পদ খ্রীষ্টের ঈশ্বরত্বকে আক্রমণ করেছে ফলে এই অনুবাদও গ্রহণযোগ্য নয়।

গ) কিং জেমস্ বাইবেল  The King James Bible

আমি কিং জেমস্ বাইবেল সমর্থন করি কেবল এর সমালোচকদের ভিত্তিতেই নয়, অন্যান্য অনুবাদে বিকৃতির জন্যই নয় কিন্তু সবচেয়ে বেশি আমি কিং জেমস্ বাইবেল ঈশ্বরের বাক্যরূপে বিশ্বাস করি ঐ বইটির কারণে। কেমন করে এটির উৎপত্তি বা অনুবাদ করা হয়েছিল?

১) যেভাবে এর অনুবাদ করা হয়েছিল The Way It Was Translated

রাজা জেমস্ (King James) এর দ্বারা নিযুক্ত ৫৪ জন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি দ্বারা কিং জেমস বাইবেল অনুবাদ করা হয়েছিল। প্রকৃত অনুবাদে রাজা জেমস্ কিছু করেননি। সমস্ত গ্রেট ব্রিটেন থেকে এসব শাস্ত্র বিশেষজ্ঞদের তিনি মনোনীত করেন, এবং তাদের অর্থ দেন যেন তাদের বাইবেল অনুবাদকালীন উক্ত অর্থ দিয়ে তারা জীবন ধারণ করতে পারেন। সে সময়ের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সরকার প্রচারকদের বেতন দিত। অবশ্য আমেরিকাতে, ঐ নিয়মের প্রচলন নেই। কিন্তু অধিকাংশ দেশে এই নিয়মে কাজ করা হতো।

যে ৫৪ জনকে মনোনীত করা হয়েছিল তারা স্বনামধন্য পণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন। আমি তাদের পাণ্ডিত্যের উপরে নির্ভর করে কিং জেমস্ বাইবেলকে সমর্থন করছি না। যদি আমরা পা-িত্যের সঙ্গে পাণ্ডিত্যের তুলনা করি তাহলে যেসব লোকেরা বর্তমানে অনুবাদের কাজ করেছেন তারা নেহাত শিশু। এইসব ব্যক্তিদের বয়স যখন ৫ বছর তখন থেকে তারা হিব্রু ও গ্রিক ভাষায় ভালোভাবে কথা বলতে পারতেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন কুড়ি থেকে পঁচিশটি ভাষা ভালোভাবে জানতেন। তারা ঈশ্বরভক্ত লোক ছিলেন, ঘন্টার পর ঘন্টা প্রার্থনায় কাটাতেন এবং অধ্যয়নের জন্য তারা দিনের ১৬ ঘন্টা ব্যয় করতেন। এমনকি তাদের স্ত্রীরা দুপুরের খাওয়ার জন্য বিরক্ত করতেন না বরং তাদের পড়ার ঘরের দুয়ারে নীরবে খাবার দিয়ে আসতেন।

সর্বমোট ৪৭ জন এই অনুবাদের কাজটি সম্পন্ন করেছিলেন। কারণ তাদের মধ্যে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছিল। অনুবাদের সময় তারা ৬টি দলে বিভক্ত হয়েছিলেন। এই দলগুলো আবার আরো ছোট ছোট অংশে বিভক্ত হয়। প্রত্যেককে শাস্ত্রাংশের একটি অংশ বাড়িতে নিয়ে যেতে দেওয়া হতো যেন তিনি অধ্যয়ন করে অনুবাদ করেন। তিনি অন্যান্য মূলপাঠের পুঁথি, পাণ্ডুলিপিসমূহ এবং তাদের অন্যান্যদের ইংরেজি অনুবাদের সঙ্গে সেটি তুলনা করতেন যেন তারা কীরূপে অনুবাদ করেছেন তা জানতে পারেন। তারপর তিনি তার অংশটি ছোট দলের কাছে নিয়ে যেতেন এবং তারা সকলে সেটি পরীক্ষা করে দেখতেন। তারপর তাদের দলের অন্যান্যদের কাছে দেওয়া হতো, অন্যান্য সমস্ত দলের কাছে ও সবশেষে প্রধান কমিটির কাছে। এভাবে অনুবাদ করা প্রতিটি পদ কমপক্ষে ১৭বার পরীক্ষা করা হতো। যদি কোনো পদ বিশেষভাবে কঠিন হতো, তবে তারা অন্যদের ডাকতেন সেটি দেখবার জন্য, যেন পদটির সঠিক অনুবাদ নিশ্চিত করা যায়। তারা উপলব্ধি করেছিলেন যে ঈশ্বরের বাক্য অনুবাদ করছেন। সেজন্য তারা অত্যন্ত শ্রদ্ধাসহ কাজটি করতেন। এইসব ব্যক্তিদের সঙ্গে সমগ্র গ্রেট ব্রিটেনের আরো অনেকে ছিলেন। সেইসঙ্গে অন্যান্য দেশ তাদের সাহায্য করার জন্য তথ্য প্রদান করেন। অনুবাদক মণ্ডলীর সদস্যগণ আনন্দের সঙ্গে তাদের সাহায্য এবং গবেষণার বিষয়সমূহ গ্রহণ করতেন।

বর্তমানে যেসব অনুবাদ প্রকাশ করা হয়েছে সেগুলো অনেক ভিন্ন উপায়ে করা হয়। তারা তাদের অনুবাদের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য সময় দেন না এবং গবেষণা করেন না। সাধারণত যে বিষয়ে তারা আগ্রহান্বিত সেটি হলো গ্রন্থস্বত্ব - সর্র্বস্বত্ব সংরক্ষিত (Copyright)। যেন তারা তাদের প্রাপ্য টাকার অংশটি পকেটে ঢুকাতে পারেন। আপনাকেও এটি বিবেচনা করতে হবে যে তারা নিম্নতর মাল মশলা দিয়ে কাজ করছে।

২) যে মূলগ্রন্থ তারা ব্যবহার করেছিলেন  The Text They Used

কতক লোক তর্ক করে বলেন যে, কিং জেমস্ এর অনুবাদকগণ কেবল বিশপের বাইবেলটি (Bishop's Bible) ব্যবহার করেছেন, যা ঐ সময়ে ছিল এবং কেবল কিছু শব্দ পরিবর্তন করেছেন। এটি সত্য নয়। কিং জেমস্ বাইবেলের জন্য যেসব কথন বা বচন (test) তারা ব্যবহার করেছেন সেগুলো ছিল ইরাসমাস বচন, স্টিফানাস বচন এবং বেজা এর বচন থেকে (Erasmus text, the Stephanus text)। মনে রাখবেন আমরা বলেছি, কোনো বচন বা কথন হচ্ছে কতগুলো পাণ্ডুলিপি যা একত্রে সংকলন করা। যখন তারা কিং জেমস্ বাইবেল অনুবাদ করেন তখন ঐ তিনটি প্রধান উদ্ধৃত অংশ (texts) ব্যবহার করেছিলেন। তারা অবশ্য বেশ কয়েকটি ইংরেজি অনুবাদ ব্যবহার করেছিলেন দেখবার জন্য যে অন্যান্য লোকেরা ঐসব অংশগুলো কীভাবে অনুবাদ করেছেন।

ওয়েস্টকট ও হর্টের মতবাদে বলা হয়েছে যে, বাইবেল ৪০০ থেকে ১৮০০ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত হারিয়ে গিয়েছিল। তারা আরো বলেন যে, তাদের পাণ্ডুলিপি কিং জেমস্ এর পাণ্ডুলিপি থেকে পুরাতন অর্থাৎ কিং জেমস্ এর পাণ্ডুলিপিটি তাদের মতন পুরাতন পাণ্ডুলিপির দিকে ফিরে যায়নি। সেজন্য তাদেরটি বেশি ভালো। কিন্তু তারপরেও ৫২টি প্যাপিরাসের ভগ্নাবশেষ আবিষ্কৃত হয়। এটির সময়কাল দ্বিতীয় শতাব্দী এবং পাঠগুলো টেক্সাস্ রিসেপটাস এর সঙ্গে মেলে অর্থাৎ একমত। এটি কেবলমাত্র ভগ্নাবশেষ। কিন্তু এটি ভাটিকানাস ও সাইনাইটিকাসের পূর্বেরকার। আমি আরো দেখাতে পারি যে ম-লীর ফাদারদের লেখাগুলো আলেকজান্দ্রিয় মূলপাঠের চেয়ে পূর্বের এবং লেখাগুলো টেক্সাস্ রিসেপ্টাস এর মূলপাঠের সঙ্গে মিলে যা কিং জেমস্ বাইবেলকে সমর্থন করে।

৩) বাঁকা হরফে লেখা শব্দসমূহ The Italicized Words  

কিং জেমস্ বাইবেলের অনুবাদকগণ ঈশ্বরের বাক্য অনুবাদের বিষয়ে এত সতর্ক ছিলেন যে, যখন তারা এমন সব শব্দ পেলেন যার অর্থ স্পষ্ট করার জন্য কিছু সংযোগের প্রয়োজন সেজন্য তারা সেগুলো বাঁকা (italic) হরফে  লিখেছিলেন। এই শব্দগুলো মূলপাঠে নেই কিন্তু পাঠের মধ্যে সেই অর্থ নিহিত বা রক্ষিত আছে। যে-কোনো সময়ে যখন আপনি একটি ভাষা থেকে অপর ভাষাতে অনুবাদ করেন তখন মাঝে-মধ্যে শব্দ যোগ করতে হয় যেন আমাদের নিজেদের ভাষাতে বিষয়টি পরিস্কার হয়। কিন্তু যখনই তারা কোনো শব্দ যোগ করেছেন সেসব সর্বদা বাঁকা হরফে লিখেছেন। তারা এই কাজ করেছিলেন কারণ তারা বিশ্বাস করতেন যে ঈশ্বরের দেওয়া প্রত্যেকটি শব্দ গুরুত্বপূর্ণ। তারা আরও বিশ্বাস করতেন যে তারা ঈশ্বরের সংরক্ষিত বাক্যসমূহ ব্যবহার করছেন। সেজন্য তারা নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন যে যখন তারা এর মধ্যে কিছু যোগ করছেন, অন্যরা জানতে পারবেন যে তারা এটি সেখানে যোগ করেছেন কারণ তারা বিশ্বাস করতেন যে ঐ অংশে বিষয়টির অর্থ নিহিত বা রক্ষিত আছে। আপনি আমাকে অন্য যে কোনো অনুবাদ দেখান যেসব কিং জেমস্ এর পরে প্রকাশিত হয়েছে, যার মধ্যে কোনো বাঁকা হরফে লেখা শব্দাবলী আছে কি না। অন্যান্য অনুবাদে অনুবাদকগণ শব্দ যোগ করলে বা বাদ দিলেও কখনো বলেন না যে তারা সেটি করেছেন। কারণ তারা প্রথমত বিশ্বাস করেন না যে বাইবেল শব্দের পর শব্দ খাঁটি।

অনেকে বলেন যে কিং জেমস্ বাইবেলে বাঁকা হরফে লেখা শব্দসমূহে অনেক ভুল আছে। আমি বলতে পারি যে আমি সেখানে কোনো একটিও ভুল পাইনি। আমি বাইবেল বহুদিন ধরে পাঠ করছি। যদি বাঁকা হরফে লেখা শব্দগুলোতে ভুল থেকে থাকে সেগুলো খুঁজে পেতে আমি খুবই আগ্রহান্বিত, যদি আপনি আমাকে দয়া করে দেখিয়ে দেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাঁকা হরফে লেখা শব্দের জন্য সমস্যা নয়। সমস্যা যিনি পাঠ করছেন তার বুঝবার উপরে। উদাহরণস্বরূপ : ১করিন্থীয় পত্রে ভাষাগুলো সম্পর্কে “অজানা” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। “অজানা” শব্দে একথা বুঝায় না যে এমন কোনো ভাষা যা কেউ জানে না। নানা ভাষায় কথা বলার অলৌকিক কাজটি হচ্ছে, যিনি নানা ভাষায় কথা বলেন। তিনি এমন কোনো বোধগম্য ভাষাতে কথা বলেন যা তারা নিজেরা জানতেন না। সেজন্য অজানা শব্দটি সেখানে সঠিক প্রয়োগ।

উপসংহার Conclusion

কিং জেমস্ অনুবাদের যে বাইবেলটি আমাদের হাতে আছে, সেটি হলো ঈশ্বরের বাক্য। এর মধ্যে কোনো ভুল নেই। এটি ঈশ্বরের বিশুদ্ধ এবং সংরক্ষিত বাক্য। ১৬০০ খ্রীষ্টাব্দের পর থেকে প্রত্যেকটি আত্মিক পুনঃজাগরণ এসেছে কিং জেমস্ বাইবেল থেকে। অনুবাদের পরে যে বাইবেল ঈশ্বর আশীর্বাদ করেছেন, সেটি কিং জেমস্ বাইবেল। যদি আমি বাইবেলের অনুবাদগুলো সম্পর্কে এটি ছাড়া কিছু না জানতাম, আমি জানি কোথায় আমাকে ঈশ্বরের বাক্যের খোঁজ করতে হবে। আমাকে অপর একটি সংগ্রহ করার জন্য আমারটি ফেলে দিতে হবে না। ঈশ্বর যেটিকে ব্যবহার করছেন আমি সেটিই ব্যবহার করতে থাকব। ঈশ্বর আমাদের একটি বাইবেল দিয়েছেন। আমাদের দায়িত্ব যেন আমরা সেটি অধ্যয়ন করি এবং অন্বেষণ করি তিনি আমাদের জীবনের জন্য কী চান। 

 অনুবাদ : The Word of God by Missionary Doug Hammett.

Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?