বিজাতীয় অর্থাৎ যিনি খ্রীষ্টের নন্ তাকে বিয়ে করা কি উচিত? হলে কী করা উচিত

একজন খ্রীষ্টিয়ানের কি তাকে বিয়ে করা কি উচিত, যিনি প্রভু যীশুর খ্রীষ্টের নন্। 

বিষয়টি এখন বড় চিন্তার আর খুবই স্পর্শকাতর।

এ সম্পর্কে পবিত্র বাইবেল আমাদের সঠিক নির্দেশনা দেয়। 
বাইবেলে করিন্থীয় পুস্তকে অবিশ্বাসীকে অর্থাৎ যিনি খ্রীষ্টের নন, যিনি প্রভু যীশুকে ভালোবাসে না এরকম অসমভাবে জোয়ালিতে কোনো সম্পর্ক স্থাপন করতে সাধু পৌল সতর্ক করেছেন, যেমন লেখা আছে . . 

“তোমরা অবিশ্বাসীদের সহিত অসমভাবে জোঁয়ালিতে বদ্ধ হইও না; কেননা ধর্মে ও অধর্মে পরষ্পর কি সহযোগিতা? অন্ধকারের সহিত দীপ্তরই বা কি সহভাগিতা?” ২ করিন্থীয় ৬:১৪ পদ। 

যদিও এ পদটি একেবারে নির্দিষ্টভাবে বিবাহকে উদ্দেশ্যে করে লেখা হয়নি।

তবুও সাধু পৌল আমাদের এ জগতের ভিন্ন বিশ্বাস, অধার্মিকতা, জড়জাগতিকতা, পৌত্তলিক চর্চাদের থেকে আমাদেরকে শুদ্ধ ও পবিত্র থাকতে বুঝিয়েছেন। 

ঈশ্বরের লোকদের সঙ্গে অবিশ্বাসীদের যারা পাপে জীবন কাটাচ্ছে তাদের কি সম্পর্ক? আলো কি করে অন্ধকারের সঙ্গে একত্রে থাকতে পারে?

একজন অবিশ্বাসীদের সঙ্গে অসঙ্গত সংসর্গের জোয়ালে নিজেকে আবদ্ধ করলে একজন বিশ্বাসীর জন্য ঈশ্বরের সাথে চলতে খুবই কঠিন হবে আর তাতে কিনা বিভিন্নভাবে পরিক্ষা, প্রলোভনে পরবে। 

আমরা প্রভুর কাছে প্রার্থনায় বারবার উচ্চরণ করি . . “আর আমাদিগকে পরীক্ষাতে আনিও না বা পরীক্ষার সম্মুখীন হতে দিয়ো না অথবা পরিক্ষায় পড়তে দিয়ো না” মথি ৬:১৩ পদ। 

কিন্তু অনেকে অবিশ্বাসীকে বিয়ে করায় তারা নিজের ইচ্ছায় চলছে। 

যিনি কিনা খ্রীষ্ট বিশ্বাসী নন্, যিনি খ্রীষ্টের নয়, যিনি প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে গ্রহণ করেন নাই ভালোবাসেন নাই, সেই অবিশ্বাসীকে বিয়ে করায় অনেকে বিশ্বাসী হয়েও অসম-বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে, স্বামীস্ত্রী সম্পর্ক স্থাপন করছে। 

বিয়ে করায় দু’জনে একাঙ্গ গঠন হলো নতুনভাবে। 

আদিপুস্তক ২:২৪ পদ “. . তাহারা একাঙ্গ হইবে।”

এ জন্যে খ্রীষ্ট বিশ্বসীর কর্তব্য অবিশ্বাসীর সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে না চলা, কারণ এর ফলে বিশ্বাসীর আত্মিক জীবনের ক্ষতি হয়, এমনকি খ্রীষ্টের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। 

অবিশ্বাসীদের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক, কারো সঙ্গে গোপনে বসবাস করা, ডেটিং করা, বিবাহ করা, ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব স্থাপন করা, ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কিছু বুঝায়। 

অবিশ্বাসীদের সঙ্গে খ্রীষ্টিয়ানের সম্পর্ক বলতে, সামাজিক বা অর্থনৈতিক কারণে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু সম্পর্ক বজায় রাখা অথবা তাদেরকে আমার প্রভুর কাছে নিয়ে আসার জন্য প্রয়োজনীয় বন্ধুত্ব স্থাপন করা।

আপনি যখন খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করে তাঁকে গ্রহণ করেছেন তখন আপনাকে অন্ধকার রাজ্য থেকে ঈশ্বরের প্রিয় পুত্রের (আলোর) রাজ্যে আনা হয়েছে।

দেখুন : কলসীয় ১:১৩ পদ। 

এখন আপনি চিন্তা করে দেখুন যে কীকরে সেই ব্যক্তিকে সহযাত্রী হিসাবে গ্রহণ করতে পারছেন যিনি কিনা এখনো অন্ধকারের কবলে আছে? 

আপনার জীবনে ঐরকম একজন ছেলে বা মেয়ের সাথে তোমার গুরুত্বপূর্ণ জীবনের ভাগী হওয়াটা একেবারেই অসম্ভব যেখানে আপনার আত্মিক সম্পর্ক প্রভু যীশুর সাথে। 

এছাড়াও আপনার যখন সন্তানসন্তুতি হবে তখন আপনারা (স্বামী ও স্ত্রী - বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী) মিলেমিশে অবস্থায় থাকাটা খুবই কঠিন হবে যখন আপনাদের সন্তানদের ছেলেবেলায় আত্মিক বিষয় শিক্ষাদীক্ষা দিতে ব্যবস্থা নিতে যাবেন।

তবুও বলছি যখন কোনো অবিশ্বাসীর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে শুরু করেন আর আপনাদের এই সম্পর্কটা আরো ঘনিষ্ঠর দিকে যায়, তখন আপনি তাকে প্রভু যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে, সুসমাচার সম্পর্কে তাকে জানাতে পারাটা একটা বড় সুযোগের সৃষ্টি হয়। 

আমাদের দেশে আমরা খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা খুবই কম আর তাই বিয়ে করতে একজন খ্রীষ্টিয়ান ছেলে বা মেয়ে খুঁজে পাওয়াটা অনেক কষ্টের হয়, তাই আপনি যার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে বিয়ে করতে ইচ্ছা করছেন তাকে আপনার চার্চের পাস্টরের কাছে নিয়ে আসতে পারেন আর এভাবে তাকে যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে শিক্ষা নিতে সুযোগ করে দিতে পারেন। 

অবশ্য এটাও ঠিক যে কাউকে জোর করে খ্রীষ্ট বিশ্বাসী করা যায় না আর এভাবে এতে অনেক সমস্যাও হয় যে, সে শুধুমাত্র আপনার কারণেই আপনাকে পাবার জন্যই খ্রীষ্টিয়ান হলেন, কিন্তু তার মনে অবিশ্বাসটা থেকেই যায়। 

প্রার্থনা করুন যেন পবিত্র আত্মা এ বিষয়ে আপনাকে পরিচালিত করুক আর তার উপর যেন আপনি আস্থা রাখতে পারেন।

আপনি কি নির্ভরযোগ্য বলে ঈশ্বরের বাক্যেকে বিশ্বাস করেন যখন আপনার জীবনে স্পর্শকাতর বিচার্যবিষয় বলে আরো বেশী গুরুত্ব পায়? 

আপনি কি আপনার জীবনে সমস্ত ক্ষেত্রে পিতা ঈশ্বরের উপর আস্থা, ভরসা ও নির্ভর করেন? 

আপনি কি আপনার প্রভুর পথে পরিচালিত করতে তাঁর উপর আস্থা রাখেন যিঁনি আপনার সমস্ত দিক থেকে তিনিই উত্তম। 

বাইবেলে কয়েকটি পদ তুমি দেখুন : 

হিতোপদেশ ৩:৬-৮ পদ; 
“তোমর সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন। আপনার দৃষ্টিতে জ্ঞানবান হইও না; সদাপ্রভুকে ভয় কর, মন্দ হইত দূরে যাও। ইহা তোমার দেহের স্বাস্থ্যস্বরূপ হইবে, তোমার অস্থিও মজ্জাস্বরূপ হইবে।”

গীতসংহিতা ৩২:৮-১১ পদ; 
“আমি তোমাকে বুদ্ধি দিব, ও তোমার গন্তব্য পথ দেখাইব, তোমার উপরে দৃষ্টি রাখিয়া তোমাকে পরামর্শ দিব। তোমার অশ^ ও অশ^তরের ন্যায় হইও না, যাহাদের বুদ্ধি নাই; বলগা ও লাগাম ভূষারূপে পরাইয়া তাহাদিগকে দমন করিতে হয়, নতুবা তাহারা তোমার নিকটে আসিবে না। দুষ্টের অনেক যাতনা হয়; কিন্তু যে ব্যক্তি সদাপ্রভুতে নির্ভর করে, সে দয়াতে বেষ্টিত হইবে। ধার্মিকগণ, সদাপ্রভুতে আনন্দ কর, উল্লাস কর; হে সরলচিত্ত সকলে, তোমরা আনন্দ ধ্বনি কর”

গীতসংহিতা ৯৫:৭-১১ পদ। 
“কেননা তিনিই আমাদের ঈশ^র, আমরা তাঁহার চরাণির প্রজা ও তাঁহার হস্তের মেষ। আহা! অদ্যই তোমরা তাঁহার রব শ্রবণ কর! আপন আপন হৃদয় কঠিন করিও না, যেমন মরীবায়, যেমন প্রান্তরের মধ্যে মঃসার দিবসে করিয়াছিল। তখন তোমাদের পিতৃপুরুষেরা আমার পরীক্ষা করিল, আমার বিচার করিল, আমার কর্মও দেখিল চল্লিশ বৎসর পর্যন্ত আমি সেই জাতির প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলাম, আমি বলিয়াছিলাম, ইহারা ভ্রান্তচিত্ত লোক; ইহারা আমার পথ জ্ঞাত হইল না। অতএব আমি আপন ক্রোধ শপথ করিলাম, ইহারা আমার বিশ্রামস্থানে প্রবেশ করিবে না”

বাইবেলের এসব পদগুলো সব একই কথা বলে যে ঈশ্বরের উপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখা আর এতেই আপনার সত্যিকারে আনন্দ পাওয়া। 

শেষে একটা কথা বলি: খ্রীষ্টিয়ানদের বিবাহ খ্রীষ্ট এবং মণ্ডলীর মধ্যে সেই সম্পর্কেরই প্রতিনিধিত্ব করে। 

একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসী আর অন্যজন যিনি খ্রীষ্টের নয় অর্থাৎ অবিশ্বাসী, তাদের মধ্যে বিবাহে এই প্রতিনিধিত্ব হয় না। 

সাধু পৌল আমাদের খ্রীষ্টিয় বিবাহের স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছেন যে . . 

“নারীগণ, তোমরা যেমন প্রভুর, তেমনি নিজ নিজ স্বামীর বশীভূত হও। কেননা স্বামী স্ত্রীর মস্তক, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর মস্তক, তিনি আবার দেহের ত্রাণকর্তা। কিন্তু মণ্ডলী যেমন খ্রীষ্টের বশীভূত, তেমনি নারীগণ সর্ববিষয়ে আপন আপন স্বামীর বশীভূত হউক। স্বামীরা তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে সেইরূপ প্রেম কর, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীকে প্রেম করিলেন, আর তাহার নিমিত্ত আপনাকে প্রদান করিলেন” ইফিষীয় ৫:২২-২৫ পদ।

যদি আপনার স্বামী একজন খ্রীষ্টিয়ান না হন, তাহলে . . 

১ পিতর ৩:১ পদ অনুসরণ করুন “আচার ব্যবহার” শব্দটি “জীবনের রীতি, কার্যের ধারা ধার্মিক, ঈশ্বরভক্তি” অর্থপ্রকাশ করে।

লক্ষ্য করুন : আপনার স্বামী যিনি খ্রীষ্ট বিশ্বাসী নন্ তার অবাধ্য হতে সেরকম এমন কিছুই প্রকাশ করবেন না, এমনকি এর অর্থ চার্চে যাওয়া, মণ্ডলী সভা, উপসনায় আসার সুযোগ হারাতে গেলেও তার অবাধ্য হওয়া নয়। 

একান্ত আগ্রহে প্রার্থনা করুন যেন ঈশ্বর তাকে স্থির ব্যবস্থা করেন। 

বাইবেলকে কখনই তার “মুখের উপর” জিদ করে ঠেলে দেবেন না। 

এর পরিবর্তে উপরের উল্লেখ করা শাস্ত্রের দৃষ্টান্ত, আদর্শ অনুসরণ করে তাকে সুসমাচারে জীবনযাপনে চলতে চেষ্টা করুন। 

আন্তরিকতায় তার জন্য প্রার্থনা ও তাকে ভালোবাসুন। 

আপনার স্বামীকে আপনার আত্ম-সাক্ষ্যের মাধ্যমে তাকে মণ্ডলীতে আমন্ত্রণ জানানোর সুযোগ করে দেবার জন্য প্রভুর কাছে যাচ্ঞা করুন।

১ করিন্থীয় ৭:৪,৫  স্ত্রী স্বামীকে বঞ্চিত না করুক। 

তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, কোনো একজন খ্রীষ্টবিশ্বাসী, স্বামী অথবা স্ত্রী যদি অন্য ধর্মীয় কোনো মহিলা বা পুরুষের সঙ্গে বিবাহ-বন্ধনে যুক্ত হয়, তিনি তার “শান্তি” হারিয়ে ফেলেন না।

বরং তার শান্তি তার বিয়ে করা ভিন্ন ধর্মীয় স্ত্রী অথবা স্বামীকে শান্তির স্পর্শ দেয়।

শান্তিতেই তারা সংসারধর্ম পালন করতে পারে। 

তবে এ ক্ষেত্রে খ্রীষ্ট-বিশ্বাসী শান্তিরদূত হিসাবে কাজ করতে হবে।

তবে হ্যাঁ, এ বিষয়ে সাবধানতার প্রয়োজন আছে।

খ্রীষ্ট-বিশ্বাসী নন্ যদি এমন কোনো স্বামী বা স্ত্রী খ্রীষ্টের শান্তি গ্রহণে ইচ্ছুক নয়, তাহলে তাকে জোর করে খ্রীষ্টের শান্তির আশ্রয়ে আনা যায় না। তাতে শান্তি নয়, বরং অশান্তিই হবে। শান্তি বাধ্যতামূলক নয়, ঐচ্ছিক।

যদি কেউ শান্তির প্রয়োজনীয়তা না বোঝে, তাকে জোর করে শান্তি চাপিয়ে দেওয়া যায় না।

শান্তি আসবে, বোঝাপড়ার মধ্যে দিয়ে, বোঝাপড়া আসে ন্যায়বিচারে মাধ্যমে, ন্যায়-বিচার আসে পক্ষপাতিত্বহীনতার অনুভ‚তির জন্য, আর পক্ষপাতিহীনতা আসে ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে।

যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রকৃত ভালোবাসা থাকে, তাহলে একে অন্যকে শান্তি খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।

একজন খ্রীষ্ট-বিশ্বাসীকে অবশ্যই খ্রীষ্টানুসারী হতে হয়। 

কারণ একজন খ্রীষ্টানুসারী-ই বুঝতে পারে, খ্রীষ্ট তাকে কেন আহ্বান করেছেন এবং তাকে কোন্ পথে চলতে বলছেন।

যে-কোনো খ্রীষ্টানুসারী বুঝতে পারবেন যে, খ্রীষ্ট তাকে শান্তির জন্য ও শান্তিময় পথে চলার জন্যই আহ্বান করেছেন।

যখন একজন খ্রীষ্ট-বিশ্বাসী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, সেই বন্ধন আসলে শান্তির বন্ধন। 
শান্তি চলার আহ্বান।
নিজে শান্তিতে থাকা, আর অন্যকে শান্তির পথে চলতে সাহায্য করার আহ্বান।

পরিতাপের বিষয় যে আজ অনেক খ্রীষ্টীয় পরিবার খ্রীষ্ট-বিহীন পরিবারে পরিণত হয়েছে, কারণ সেখানে খ্রীষ্টের কোনো স্থান নেই। 

খ্রীষ্টের উপস্থিতি ও শান্তির প্রয়োজনীয়তা তারা উপলব্ধি করলেও খ্রীষ্টের কাছে তাদের সময় নেই।

এই দুরাববস্থা যেন আমাদের না হয়।

খ্রীষ্টের শান্তিময় পথ থেকে যেন আমরা সরে না যাই। 


Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?