“আপনি কি পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্ম পেয়েছেন?” কী উত্তর দেবেন?

লেখক: টমাস উইলিয়ামসন

অনেক সময় খ্রীষ্টীয়ানেরা একটা প্রশ্নের সম্মুখিন হতে পারেন যে, তার পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্ম হয়েছে কি-না বা তার মণ্ডলী পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্মে আছে কি-না। কীভাবে এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাবে?

পবিত্র আত্মা দ্বারা বাপ্তিস্মের বৈশিষ্ট্যরূপে বহু তত্ত্ব ও মতবাদ দেওয়া হয়েছে। এসব আলোচনা না করে আসুন আমরা পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্ম সম্পর্কে ভালোভাবে বাইবেলের শিক্ষা যাচাই করে দেখি। (যে গ্রিক শব্দ থেকে বাপ্তিস্ম কথাটা এসেছে। বাপ্তিস্ম সবসময় অবগাহন বা নিমজ্জন (ডুবানো)-কে উল্লেখ করে। অনেক সময় সরাসরি জলে অথবা কোনো তরল পদার্থে আর আক্ষরিক অর্থে কখনো নিমজ্জন (ডুবানো) অর্থে বুঝায়। এছাড়া এ শব্দের অন্য আর কোনো অর্থ নতুন নিয়ম কিংবা প্রাচীন গ্রিক সাহিত্যের কোথাও পাওয়া যায় না)।

পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্ম সম্পর্কে যোহন বাপ্তাইজক মথি ৩:১১ পদে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যা ছিল একটি ভবিষ্যতের বিষয় এবং তা আগুনের সাথে সম্পর্কিত। “যিনি আমার পরে আসিতেছেন, তিনি আমা অপেক্ষা শক্তিমান, যাঁহার পাদুকা বহন করিবার যোগ্য আমি নই: তিনি তোমাদিগকে পবিত্র আত্মা ও অগ্নিতে বাপ্তাইজিত করিবেন।” বাইবেলের যে সমস্ত অনুচ্ছেদে যোহনের পরিচর্যার বর্ণনা পাওয়া যায়, সে সমস্ত অনুচ্ছেদে এই একই রকম ভবিষ্যৎবাণীরও উল্লেখ আছে।

ক। “ মথি ৩:১১ পদ “আমি তোমাদিগকে মনপরিবর্তনের জন্য জলে বাপ্তাইজ করিতেছি বটে, কিন্তু আমার পশ্চাৎ যিনি আসিতেছেন, তিনি আমা  অপেক্ষা শক্তিমান্; আমি তাঁহার পাদুকা বহিবার যোগ্য নহি ; তিনি তোমাদিগকে পবিত্র আত্মা ও অগ্নিতে বাপ্তাইজ করিবেন।”

খ।    মার্ক ১:৮ পদ  “আমি তোমাদিগকে জলে বাপ্তাইজ করিলাম, কিন্তু তিনি তোমাদিগকে পবিত্র আত্মায় বাপ্তাইজ করিবেন।”

গ।    লূক ৩:১৬ পদ “যোহন উত্তর করিয়া সকলকে কহিলেন, আমি তোমাদিগকে জলে বাপ্তাইজ করিতেছি বটে, কিন্তু এমন এক জন আসিতেছেন, যিনি আমা  অপেক্ষা শক্তিমান, যাঁহার পাদুকার বন্ধন খুলিবার যোগ্য আমি নহি; তিনি পবিত্র আত্মা ও অগ্নিতে তোমাদিগকে বাপ্তাইজ করিবেন।”

ঘ।    যোহন ১:৩৩ পদ, খ্রীষ্টকে এমন একজনের রূপে চিহ্নিত করে যার পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্ম দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে। “আর আমি তাঁহাকে জানিতাম না, কিন্তু যে তিনি আমাকে জলে বাপ্তিস্ম দিতে পাঠাইয়াছেন, তিনিই আমাকে বলিলেন, যাঁহার উপর সেই আত্মা নামিতে, আর তাঁহার উপর অবস্থান করিতে দেখিবে, সেই তিনি যিনি সেই পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্ম দেন।”

ঙ।    প্রেরিত ১:৫ পদ “কেননা যোহন জলে বাপ্তাইজ করিতেন বটে, কিন্তু তোমরা পবিত্র আত্মায় বাপ্তাইজিত হইবে, বেশী দিন পরে নয়।”

চ।    প্রেরিত ১১:১৬ পদ “তাহাতে প্রভুর কথা আমার স্মরণ হইল, যেমন তিনি বলিয়াছিলেন, ‘যোহন জলে বাপ্তাইজ করিতেন, কিন্তু তোমরা পবিত্র আত্মায় বাপ্তাইজিত হইবে।”

পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্ম সম্পর্কে সুসমাচারে আর কোনো উল্লেখ নেই। পরবর্তীতে প্রেরিত ১:৫ পদ নিঃসন্দেহে উল্লেখ করে যে কখন এই প্রতিজ্ঞাত ঘটনা ঘটেছিল। খ্রীষ্টের মৃত্যুর চল্লিশ দিন পরে তাঁর কবর থেকে উত্থান আর তাঁর স্বর্গারোহণের ঠিক পূর্বে তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেছেন, “কেননা যোহন জলে বাপ্তাইজ করিতেন বটে, কিন্তু তোমরা পবিত্র আত্মায় বাপ্তাইজিত হইবে, বেশী দিন পরে নয়।” স্বর্গারোহণের ঠিক ১০ দিন পরে এমন কোন্ বিশেষ ঘটনা যা ঘটেছিল? এটা ছিল পঞ্চাশপ্তমী দিনে পবিত্র আত্মার অবতরণ!

যেহেতু আমরা নিখুঁতভাবে পবিত্র আত্মায় প্রতিজ্ঞাত বাপ্তিস্ম ঘটনার সঠিক সময় নিরুপণ করেছি, সেহেতু এখন আমরা ঐ ঘটনার বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করে দেখতে পারি। যোহন বাপ্তাইজক আগেই বলেছিলেন যে এই বাপ্তিস্ম আগুনের সঙ্গে সম্পর্কিত। একেবারে অবিকল বা আক্ষরিক অর্থে কোনো আগুন নয় কিন্তু দৃশ্যমান ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোয়া কোয়া আগুনের মতো জিহ্বা (প্রেরিত ২:৩ পদ)। এমন সময় আকাশ থেকে প্রচণ্ড বাতাস বয়ে যাওয়ার শব্দ (প্রেরিত ২:২ পদ)। প্রেরিতশিষ্যেরা নানা ভাষায় কথা বলেতে থাকল (প্রেরিত ২:৪ পদ)। এসব ভাষা মানুষের বোঝার অযোগ্য কোনো স্বর্গীয় ভাষা ছিল না। আসলে সেগুলো ছিল বিদেশি ভাষা। সেখানে উপস্থিত শ্রোতারা পরিস্কারভাবে সেসব ভাষাগুলো বুঝতে পেরেছিল (প্রেরিত ২:৮-১১ পদ)। পবিত্র আত্মার অবতরণের এ ঘটনা কী একইভাবে বর্তমান মণ্ডলীগুলোতে হওয়া সম্ভব? পবিত্র আত্মার পুনরায় অবতরণের কোনো তথ্য বাইবেল কিংবা মণ্ডলীর ইতিহাসে নেই। ঈশ্বরের কাছ থেকে এমন কোনো নির্দেশও নেই যে, আমাদের জন্য পুনরায় এ ঘটনা ঘটা উচিত। যে সমস্ত মণ্ডলী পবিত্র আত্মার পুনঃ অবতরণের দাবি করে, তাদের পরীক্ষা করে দেখা দরকার ঐ সমস্ত চিহ্ন হুবহু তাদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে কি-না। আকাশ থেকে প্রচণ্ড বাতাস বয়ে যাবার শব্দ, দৃশ্যমান ক্ষুদ্র কোয়া কোয়া আগুনের মতো জিহ্বা এবং বিদেশি ভাষায় প্রচারিত সুসমাচার - যে ভাষা বক্তাদের কাছে অজানা ছিল।

পঞ্চশত্তমীর পবিত্র আত্মার অবতরণের ঘটনা কখনো যে আর ঘটবে না শুধু তাই নয়, কিন্তু এই ঘটা একবারের জন্যই ঐতিহাসিক ঘটনা যা এর বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে আর কখনো ঘটার প্রয়োজন নেই। আজকের কোনো মণ্ডলী লোহিত সাগরের পানি আবার কখনো দুইভাগ করবেন এমন আশা আমরা করতে পারি না। এই ঘটনাটা একবারের জন্যই সংঘটিত ঘটনা ছিল যার মাধ্যমে ইষ্রায়েলীয়দের মিশরীয় দাসত্ব থেকে মুক্তির উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়েছিল। মানব ইতিহাসে ঈশ্বরের দ্বারা এই অলৌকিক্ হস্তক্ষেপের উদ্দেশ্য আমাদের বোঝা উচিত এবং সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করা উচিত। আমাদের এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করার প্রয়োজন নেই।

পঞ্চাশপ্তমী দিনে পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্ম সম্পন্ন হওয়ায় এমন কী মহা ঐতিহাসিক উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়েছিল? ঐ সময়ে শিষ্যেরা তাদের খ্রীষ্টীয় পরিচর্যার জন্য শক্তিপ্রাপ্ত হয়েছিলেন (পেরিত ১:৮ পদ)। কোনো দৃশ্যমান আশ্চর্যজনক প্রকাশ ছাড়াই খ্রীষ্টের সাক্ষ্য বহনের জন্য পবিত্র আত্মা আজ আমাদের শক্তি যোগান। পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্মের আরো উদ্দেশ্য ছিল। পঞ্চাশপ্তমী দিনে মানুষের কাছে পবিত্র আত্মা দৃশ্যমানভাবে প্রকাশিত হয়েছেন একটি নতুন প্রতিষ্ঠানের প্রকাশ্য অনুমোদন দিতে। এটা হলো ঈশ্বরের নির্দেশিত সেই প্রতিষ্ঠান - যার মাধ্যমে পৃথিবীতে তাঁর কাজ সম্পন্ন হবে। আর সেই প্রতিষ্ঠান হলো মণ্ডলী।

পূর্বে ঈশ্বর এমন দুটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন, যাদের মাধ্যমে ঈশ্বরের লোকদের সমস্ত আরাধনা ও উপাসনা পরিচালিত হবে। এই দুটি প্রতিষ্ঠান হলো মোশীর সমাগম-তাম্বু ও শলোমনের মন্দির। ঈশ্বর যে এই দুটো প্রতিষ্ঠান অনুমোদন ও সত্যায়ন করেছেন সকল মানুষের কাছে তা প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে পবিত্র আত্মা প্রকাশ্যে ও দৃশ্যমানভাবে আবির্ভূত হয়েছিলেন সমাগম-তাম্বু (যাত্রাপুস্তক ৪০:৩৪-৩৫ পদ) এবং মন্দির (১ রাজাবলি ৮:১০-১১ পদ) উদ্বোধনের সময়। উভয় ক্ষেত্রেই পবিত্র আত্মার এই ধরনের বিশেষ প্রকাশ ছিল যথার্থ। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যে, প্রেরিত ২ অধ্যায়ে পবিত্র আত্মা একইভাবে প্রকাশ্যে মণ্ডলীকে অনুমোদন দিয়েছেন।

এটা পরিস্কার হওয়া প্রয়োজন যে, পঞ্চাশপ্তমী দিনে যে মণ্ডলীকে পবিত্র আত্মা অনুুমোদন দিয়েছেন, সে প্রতিষ্ঠান ছিল স্থানীয় মণ্ডলী। তথাকথিত ‘অতীন্দ্রিয়, অদৃশ্য, বিশ্বজনীন মণ্ডলী’ নয়। ‘বিশ্বজনীন মণ্ডলী’ হলো বাইবেল বিরুদ্ধ এমন এক ধারণা - যা মণ্ডলী সম্পর্কে নতুন নিয়মের সকল শিক্ষার বিপরীত। ‘বিশ্বজনীন মণ্ডলী’ হলো এর সমর্থকদের গর্ভজাত একটি অপ্রয়োজনীয়, অস্তিত্বহীন, বাজে ধারণা। এই মণ্ডলী একত্রে উপাসনায় সমবেত হতে পারে না, বাপ্তিস্ম দিতে পারে না, প্রভুর ভোজ অনুষ্ঠান পালন করতে পারে না, সদস্যদের সঠিক পরিচালনা দিতে অথবা দশমাংশ তুলতে পারে না। যেরূশালেমের ঐ মণ্ডলী এই সমস্ত কিছু মণ্ডলীর শুরু থেকে সবকিছুই তারা করতো।

এছাড়াও, পঞ্চাশপ্তমী দিন হলো ‘মণ্ডলীর জন্মদিন’ এই ভ্রান্ত ধারণাও আমাদের পরিহার করতে হবে। অনেকেই হর-হামেশা পঞ্চাশপ্তমী দিনকে মণ্ডলীর জন্মদিন হিসেবে বলে থাকেন। এই ধরনের বক্তব্যের পিছনে কোনো বাইবেলীয় ভিত্তি নেই। পঞ্চাশপ্তমীর দিনে যেরূশালেম মণ্ডলীতে ৩ হাজার সদস্য যুক্ত হয় (প্রেরিত ২:৪১ পদ)। ইতোমধ্যেই যদি তা অর্থাৎ সেই জিনিসটি (মণ্ডলীটি) না থাকে, তবে আপনি তার সাথে কিছু যোগ দিতে পারেন না। পঞ্চাশপ্তমীর পূর্বে প্রেরিত ১ অধ্যায়ে আমরা যেরূশালেমে মণ্ডলীর একটি সুশৃংঙ্খল সমাবেশ দেখি - যখন প্রেরিতরূপে পরিচর্যার জন্য মত্তথিয়কে বেছে নেওয়া হয়েছিল। মথি ১৮:১৭ পদে যখন যীশু তাঁর শিষ্যদের মণ্ডলীর নিয়ম-শৃংঙ্খলা সম্পর্কে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন, তখন তিনি তাদের ‘মণ্ডলীর কাছে বলতে’ উপদেশ দিয়েছিলেন। যীশু সেই সময় তাদের কাছে মণ্ডলী কী তা ব্যাখ্যা করেননি কারণ তার আগেই মণ্ডলীর অস্তিত্ব ছিল। আর এই মণ্ডলী যীশু খ্রীষ্টই স্থাপন করেছিলেন।

পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্মের বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্য পর্যালোচনা করার পর আসুন আমরা পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্ম সম্পর্কে বাইবেলের পরবর্তী (শেষ) প্রসঙ্গের দিকে নজর দেই। প্রেরিত ১১:১৬ পদে প্রেরিত পিতর কৈসরিয় পরজাতীয় পরিত্রাণপ্রাপ্ত লোকদের ভ্রাতা হিসেবে গ্রহণ করার ব্যাপারে তার সিদ্ধান্তের পক্ষে বলেছেন, “তাহাতে প্রভুর কথা আমার স্মরণ হইল, যেমন তিনি বলিয়াছিলেন, ‘যোহন জলে বাপ্তইজ করিতেন, কিন্তু তোমরা পবিত্র আত্মায় বাপ্তাইজিত হইবে।”

পিতর যখন প্রেরিত ১০:৪৪-৪৫ পদে কর্ণীলিয় ও তার সঙ্গীগণের পবিত্র আত্মার দানপ্রাপ্ত হওয়ার বিষয় বলছিলেন, তখন তা-কি পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্ম গ্রহণের আরেকটির উদাহরণ ছিল, না-কি শুধু পঞ্চাশপ্তমী দিনে তিনি যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন, তার তুলনা ছিল? এটা স্পষ্ট যে, পবিত্র আত্মা মহিমাম্বিতরূপে মানব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পরিত্রাণপ্রাপ্ত এই পরজাতীয়দের উপর পতিত হয়েছিলেন। এ ঘটনা ঘটেছিলো প্রকাশ্যে ঘোষণা দিতে যে ঈশ্বর তাঁর পরিবারে পরজাতীয়দেরও গ্রহণ করেছেন যেন ইব্রীয় খ্রীষ্টীয়ানেরাও তাদের গ্রহণ করে। পঞ্চাশপ্তমী দিনের মতো এই ঘটনাও ছিল একবারের জন্য ঐতিহাসিক ঘটনা - যা আজকের মণ্ডলীগুলোতে ঘটার সম্ভাবনাও নেই, প্রয়োজনও নেই। কোনো কিছুর জন্য ‘প্রথমবার’ মাত্র একবারই হতে পারে।

এ পর্যায়ে আমরা পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্ম সম্পর্কে বাইবেলে উল্লিখিত প্রসঙ্গগুলো একেবারে শেষে এসে পৌঁছেছি। পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্মের বিষয়ে আর কোনো উল্লেখ নেই। অনেকে অবশ্য পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্মের উদাহরণ হিসেবে প্রেরিত ১৯:১-৭ পদ উল্লেখ করে, যেখানে পৌল ইফিষের কিছু শিষ্যকে পুনরায় বাপ্তিস্ম দিয়েছেন। কিছু তা করতে আমাদের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। কারণ এই ধরনের শব্দ ঐ অনুচ্ছেদে ব্যবহার করা হয়নি। পবিত্র আত্মার শক্তির প্রকাশ সম্পর্কে কোন্ ধরনের শব্দ এখানে প্রয়োগ করা উপযুক্ত সে বিষয়ে তর্কাতর্কি না করে আসুন আমরা এই অনুচ্ছেদের প্রধান শিক্ষা - উপযুক্ত বাপ্তিস্মের প্রয়োজনীয়তা - সম্পর্কে আলোচনা করি।

বাপ্তিস্ম গ্রহণযোগ্য হতে হলে এ চারটি উপাদান বা বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে:

১।     উপযুক্ত পদ্ধতি (নিমজ্জন)।

২।     উপযুক্ত প্রার্থী (একজন নতুন জন্মপ্রাপ্ত বিশ্বাসী, কিন্তু কোনো অপরিত্রাণপ্রাপ্ত ব্যক্তি নয়)।

৩।     উপযুক্ত উদ্দেশ্য (যীশুর শিষ্য হিসাবে আমাদের বাধ্যতা দেখাতে, আমরা পরিত্রাণ যে পাবো - এ উদ্দেশ্যে নয়।)

৪।     উপযুক্ত বাপ্তিস্মদাতা (নতুন নিয়মের স্থানীয় কোনো মণ্ডলী কর্তৃক নিযুক্ত একজন প্রতিনিধি দ্বারা - যিনি সবসময়ই যে একজন অভিষিক্ত পরিচর্যাকারী হবেন - এমন নয়)।

কিছু নির্দিষ্ট কারণে ইফিষের ঐ শিষ্যদের বাপ্তিস্ম অগ্রহণযোগ্য ছিল। কারণ তারা জানতেনই না যে পবিত্র আত্মা কে। যখন তারা বাপ্তিস্ম গ্রহণ করেন, সম্ভবত তারা তখন পরিত্রাণপ্রাপ্ত ছিলেন না। স্পষ্টত তারা কোনো ভবঘুরে খ্রীষ্টীয়ানের দ্বারা বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন - যার কোনো স্থানীয় মণ্ডলীর অনুমোদন ছিল না। অন্যদিকে পৌল ছিলেন আন্তিয়খিয়া মণ্ডলী থেকে প্রেরিত (প্রেরিত ১৩:১-৩ পদ)। আপল্লোকে সুপারিশ করা হয়েছে দুষ্ট লোক হিসাবে।

যে ধরনের সমস্যাই হোক না কেন পৌল তা এড়িয়ে যাননি কিন্তু সমস্যা সমাধানের উপর জোর দিয়েছেন। কখনো কখনো এ কথা ঢালাওভাবে বলা হয় যে ষোড়শ শতাব্দীর আগে কোনো পুনঃবাপ্তিস্মদাতারা বা এনাব্যাপটিস্টগণ ছিল না। যারা এ ধরনের কথা বলে থাকে তারা পৌলের কথা ভুলে যায়। ইফিষের শিষ্যেরা ব্যাধ্যতার সঙ্গে পৌলের দ্বারা বাপ্তাইজিত হতে রাজি হয়েছিল, যখন তারা দেখতে পেয়েছিল যে তাদের আগের বাপ্তিস্ম ছিল অগ্রহণযোগ্য। আর পবিত্র আত্মা তাদের এ বাধ্যতার উপর প্রকাশ্যে তাঁর সমর্থনসূচক মুদ্রাঙ্কন করেছিলেন। 

অনেকে প্রেরিত ১৯:১-৭ পদকে বিকৃতভাবে ব্যবহার করে এরকম কথা বলতে পারে যে, যোহনের বাপ্তিস্ম খ্রীষ্টীয় বাপ্তিস্ম নয় এবং তা বর্তমানে উপযুক্ত নয়। এই ভুল ধারণার ভিত্তি হলো এই ধরনের ভ্রান্ত অনুমান যে, ইফিষের ঐ শিষ্যেরা, যোহন বাপ্তাইজকের সময় এবং দেশ থেকে অনেক দূরে থাকা সত্ত্বেও, আক্ষরিক অর্থে যোহনের দ্বারা বাপ্তাইজিত হয়েছিন। বাইবেলের এই অংশটিতে আদৌ সে কথা বলা হয়নি। পৌল যোহনের বাপ্তিস্ম সম্পর্কে ভালো ছাড়া খারাপ বলেনি (প্রেরিত ১৯:৪ পদ)। সত্য কথা হলো, যীশু আর প্রেরিত শিষ্যেরা - যারা ছিলেন খ্রীষ্টীয়ান রীতি-নীতির স্থপতি - সবাই যোহনের বাপ্তিস্মে সন্তুষ্ট ছিলেন এবং কখনো আরো আধুনিক কোনো বাপ্তিস্মের খোঁজ করেনি। যোহনের বাপ্তিস্ম যে বর্তমানেও প্রযোজ্য, এটা তার স্পষ্ট প্রমাণ।

পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্ম সম্পর্কে সকল - শাস্ত্রাংশ যা বাইবেলে উল্লেখ আছে - আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি। যাহোক, স্মরণে রাখা প্রয়োজন যে, অনেকে ১করিন্থিয় ১২:১৩ পদকে (“সকলেই এক দেহ হইবার জন্য একই আত্মাতে বাপ্তাইজিত হইয়াছি . . .”) পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্মের প্রসঙ্গ হিসেবে ব্যবহার করে। বিষয়টি সম্পর্কে পরিস্কার জ্ঞান লাভে, এ ধরনের ব্যাখ্যা অনেক গুরুতর ভ্রান্তির জন্ম দেয়। ১করিন্থিয় ১২:১৩ পদে তথাকথিত পবিত্র আত্মার বাপ্তিস্ম - যা আবিস্কৃত হয়েছে তাদের দ্বারা, যারা এ ধারণা বিশ্বাস করে - একান্তই স্বতন্ত্র ও ব্যক্তিগত। আগুন বা বাহ্যিক কোনো প্রকাশ এখানে নেই এবং তা ঘটে পরিত্রাণের সময়ে। কীভাবে পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্মের এ ধারণা প্রেরিত ২ অধ্যায়ে বর্ণিত পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্মের সাথে মিলানো যায়? কারণ প্রেরিত ২ অধ্যায়ের পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্ম ছিল প্রকাশ্য, যৌথ, আগুন সহযোগে বাহ্যিক প্রকাশ এবং তা ইতোমধ্যে পরিত্রাণপ্রাপ্ত বিশ্বাসীদের উপর পতিত হয়েছিল?

এ সমস্যা পুরোপুরি দূরীভূত হয় যখন আমরা বুঝতে পারি যে, ১ করিন্থিয় ১২:১৩ পদে উল্লিখিত বাপ্তিস্ম জলে বাপ্তিস্ম ছাড়া আর কিছুই ছিল না। এমনকি বাইবেলের অনেক ভাষ্যকার এ পদে পবিত্র আত্মার আদৌ উল্লেখ করা হয়েছে বলে বিশ্বাস করেন না। তারা এ পদটিকে - যারা একটি স্থানীয় মণ্ডলীর সদস্য, যাদের বলা হয় খ্রীষ্টের দেহ, তারা আত্মার একত্বে জলে বাপ্তিস্মের মাধ্যমে ঐ মণ্ডলীতে প্রবেশ করেছেন - এ শিক্ষা হিসাবে বিবেচনা করেন। অন্যরা বলেন যে, পবিত্র আত্মা এখানে দৃশ্যমান এবং পবিত্র আত্মার সাহায্য ও পরিচালনায় আমরা একটি স্থানীয় মণ্ডলীর বাপ্তাইজিত সদস্য হই। উভয় ব্যাখ্যাই নতুন নিয়মের শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। রূপান্তরের (পরিত্রাণের) সময় পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্মের ভ্রান্ত ধারণা অসঙ্গতিপূর্ণ। রূপান্তরের সময় পবিত্র আত্মা সকল বিশ্বাসীর অন্তরে প্রবেশ করেন, যেন তিনি সকল বিশ্বাসীর অন্তরে বাস করতে পারেন (রোমীয় ৮:৯-১৬ পদ)। আমাদের কখনোই বলা হয়নি যে, রূপান্তরের সময় পবিত্র আত্মা বিশ্বাসীদের বাপ্তিস্ম দান করেন। ইফিষীয় ৪:৫ পদ অনুযায়ী, একটিমাত্র বাপ্তিস্ম আছে। অবশ্যই এ বাপ্তিস্ম হলো জলে বাপ্তিস্ম - যা বাইবেল শিক্ষা দেয়। কিন্তু এ বাপ্তিস্ম হলো ‘পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্ম’ - বাইবেল এমন শিক্ষা দেয় না।

আমাদের আলোচনার উপসংহারে আমরা বলতে পারি যে, পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্মের বিষয়ে নতুন নিয়ম শিক্ষা দেয় যে, এটি ছিল একটি মহা গৌরবময় ঐতিহাসিক ঘটনা যার মাধ্যমে খ্রীষ্টের স্বর্গারোহণের পর ঈশ্বর মণ্ডলীর পরিচর্যার শুরুতেই তাঁর অনুমোদন দিয়েছিলেন। বর্তমান মণ্ডলীগুলোর জন্য এ ঘটনার নকল বা পুনরাবৃত্তির চেষ্টা করার নির্দেশ নেই। এছাড়াও কোনো ব্যক্তির রূপান্তরের (পরিত্রাণ) সময় বা তার পরে, ব্যক্তিগতভাবে পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্মের চেষ্টা করারও প্রয়োজন নেই।

এর অর্থ কি এই দাঁড়ায় যে, বর্তমানে আমরা পবিত্র আত্মার পরিচর্যা, দান ও পূর্ণতাকে প্রত্যাখ্যান করি? নিশ্চয়ই না! আমাদের পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হতে বলা হয়েছে (ইফিষীয় ৫:১৮ পদ) এবং এই শেষ যুগে পবিত্র আত্মা যে সমস্ত দান আমাদের দিতে চান, সে সকল গ্রহণের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকা উচিত।

যারা পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্মের বিষয়ে অন্য ধরনের মতবাদ উপস্থাপন করে, তাদের শিক্ষা কি আমরা প্রত্যাখ্যান করবো? ঠিক তা নয়। এ ধরনের অধিকাংশ শিক্ষারই সঠিক শাস্ত্রীয় ভিত্তি আছে। এমনকি যদিও এর প্রবক্তারা তাদের শিক্ষার বিষয়বস্তু সম্পর্কে কোনো অযথার্থ শব্দ ব্যবহার করে থাকে। আমাদের জীবনে পবিত্র আত্মার শক্তির অভিজ্ঞতা লাভ না করে নিঁখুত শিক্ষার সঠিক নামকরণ করার চেয়ে পবিত্র আত্মা যে সকল আশির্বাদ, দান ও পূর্ণতা আমাদের দিতে চান, এবং সে অভিজ্ঞতার সঠিক নামকরণ না করতে পারলেও, সে অভিজ্ঞতা লাভ করা আরো ভালো। যারা পবিত্র আত্মার অভিজ্ঞতাকে ‘বাপ্তিস্ম’ বলে বর্ণনা করেন, তাদের প্রতি সমালোচনার মনোভাব পোষণ করা উচিত হবে না। আবার যারা পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্মকে এর পারিভার্ষিক অর্থে গ্রহণ করতে রাজি নয়, তাদের সমর্থন করাও উচিত হবে না।

আমরা এখন আলোচনার সমস্ত কিছু এবং শুরুতে যে প্রশ্নটি তোলা হয়েছিল “আপনি কি পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্ম পেয়েছেন?” তার উপসংহার টানতে প্রস্তুত। আমরা যেন সব সময় এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর দানে নিজেদের হৃদয়কে নম্রভাবে পরীক্ষা করে দেখি যাতে আমরা সম্পূর্ণরূপে পবিত্র আত্মার বাধ্য থাকি এবং আমাদের জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে তাঁর পরিচালনায় চলি।

কিন্তু যারা পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্ম সম্পর্কে বাইবেলের শিক্ষার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চান, তারা যেন নিচের প্রশ্নটা পরীক্ষা করে দেখেন। “আপনি কি কোনো স্থানীয় মণ্ডলী সদস্য, যে মণ্ডলী যেরূশালেম মণ্ডলীর মতো একই বিশ্বাস ও আচার-আচরণ ধারণ করে এবং সেই ঐশ্বরিক প্রতিষ্ঠানের সহভাগী হয় - যাকে ঈশ্বর পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্মের দ্বারা সমর্থন ও অনুমোদন দিয়েছিলেন?”

আপনার উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তবে যে মণ্ডলীতে আপনি আছেন, সে মণ্ডলী যদি প্রেরিতদের শিক্ষা পালন করে থাকে (প্রেরিত ২:৪২ পদ) এবং সে মণ্ডলী যদি জলে নিমজ্জনের মাধ্যমে সদস্যরূপে গ্রহণ করে থাকে (প্রেরিত ২:৪১ পদ)। যদি আপনি সে ধরনের কোনো মণ্ডলীতে থাকেন, তবে আপনাকে পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্ম লাভের জন্য ঐ মণ্ডলী ত্যাগ করার প্রয়োজন নেই। পবিত্র আত্মার নিকট আপনার জীবন সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করুন যেন তিনি আরো বেশি করে যে মণ্ডলীতে আপনি আছেন, সেখানে আপনাকে ব্যবহার করতে পারেন।

Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?