যোষেফের বিশ্বাস ও তার সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন ছিল যীশুর জন্মগ্রহণে, যদিও বাইবেলে তাঁর সম্পর্কে আর বিস্তারিত লেখা হয়নি।

“পরে যোষেফ নিদ্রা হইতে উঠিয়া, প্রভুর দূত তাঁহাকে যেরূপ আজ্ঞা করিয়াছিলেন, সেইরূপ করিলেন, আপন স্ত্রীকে গ্রহণ করিলেন” মথি ১:২৪ পদ

সুসমাচার বলতে আমাদের কাছে মথি, মার্ক, লূক ও যোহন এই চারটি সুসমাচার রয়েছে। মথি লিখিত সুসমাচারে প্রভু যীশু খ্রীষ্ট, যিহূদীদের রাজা এবং মসীহর আগমনের প্রতিজ্ঞার কথা আমাদের বলে। মথি ১:১৮-২৫ পদে ঈশ্বরের বাক্য বলে “যীশু খ্রীষ্টের জন্ম এইরূপে হইয়াছিল। তাঁহার মাতা মরিয়ম যোষেফের প্রতি বাগ্দত্তা হইলে তাঁহাদের সহবাসের পূর্বে জানা গেল, তাঁহার গর্ভ হইয়াছে - পবিত্র আত্মা হইতে। আর তাঁহার স্বামী যোষেফ ধার্মিক হওয়াতে ও তাঁহাকে সাধারণের কাছে নিন্দার পাত্র করিতে ইচ্ছা না করাতে গোপনে ত্যাগ করিবার মানস করিলেন। তিনি এই সকল ভাবিতেছেন, এমন সময় দেখ, প্রভুর এক দূত স্বপ্নে তাঁহাকে দর্শন দিয়া কহিলেন, যোষেফ, দায়ূদ-সন্তান, তোমার স্ত্রী মরিয়মকে গ্রহণ করিতে ভয় করিও না, কেননা তাঁহার গর্ভে যাহা জন্মিয়াছে, তাহা পবিত্র আত্মা হইতে হইয়াছে; আর তিনি পুত্র প্রসব করিবেন, এবং তুমি তাঁহার নাম যীশু (মুক্তিদাতা) রাখিবে; কারণ তিনিই আপন প্রজাদিগকে তাহাদের পাপ হইতে ত্রাণ করিবেন। এই সকল ঘটিল, যেন ভাববাদী দ্বারা কথিত প্রভুর এই বাক্য পূর্ণ হয়। “দেখ, সেই কন্যা গর্ভবতী হইবে, এবং পুত্র প্রসব করিবে, আর তাঁহার নাম রাখা যাইবে ইম্মানুয়েল” অনুবাদ করিলে ইহার অর্থ, ‘আমাদের সহিত ঈশ্বর’। পরে যোষেফ নিদ্রা হইতে উঠিয়া, প্রভুর দূত তাঁহাকে যেরূপ আজ্ঞা করিয়াছিলেন, সেইরূপ করিলেন, আপন স্ত্রীকে গ্রহণ করিলেন; আর যে পর্যন্ত ইনি পুত্র প্রসব না করিলেন, সেই পর্যন্ত যোষেফ তাঁহার পরিচয় লইলেন না, আর তিনি পুত্রের নাম যীশু রাখিলেন।”
 
কী চমৎকার একটি ঘটনা! যীশু খ্রীষ্টের জন্মের মতো এমন বাস্তব কাহিনী এ জগতে আর একটিও নেই এবং হতেও পারে না কখনো।
 
বাইবেল পাঠ করে আমরা মরিয়ম এবং যোষেফ সম্পর্কে জানতে পারি এবং তাদের জীবন সম্পর্কে বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই যে এ দু’জন মানুষ সম্পর্কে তেমন গুরুত্বসহকারে বিশেষ কোনো বর্ণনা ঈশ্বর দেননি। আমি এজন্য আর এ কারণে বিশ্বাস করি যে, শাস্ত্র না মরিয়মকে না যোষেফকে গুরুত্ব দেয় কিন্তু তার চেয়েও প্রতিজ্ঞাত সেই মসীহ্, প্রভু যীশু খ্রীষ্টকেই গুরুত্ব দিয়েছে। আমরা তাদের সম্পর্কে ততটুকুই পাই, যতটুকু ঈশ্বর তাদের বিষয়ে আমাদেরকে জানাতে চান। মরিয়মকে কখনো আরাধনা বা ভজনা করা যায় না। আমাদের সকলের পাপে পতিত হওয়া সৃষ্টর মতো মরিয়মও পতিত সৃষ্ট। মরিয়মের একজন মুক্তিদাতার প্রয়োজন ছিল যেভাবে আমাদের প্রয়োজন হয়ে থাকে। আমাদের সকলের মতোই মরিয়ম একজন পাপী ছিলেন।
 
যদিও জগতের কিছু কিছু ভিন্ন ধর্মীয় মতবাদের বিশ্বাসী দল রয়েছে যারা আরাধনা বা ভজনা করার উদ্দেশ্যে যোষেফের মূর্তি তৈরি করে, কিন্তু ঈশ্বরের পবিত্র বাক্য কখনোই সেরকম নির্দেশ দেয় না। তিনিও পাপে পতিত সৃষ্ট, একজন পাপী, যার একজন মুক্তিদাতার প্রয়োজন, যেমন আমাদের প্রয়োজন হয়ে থাকে। যাহোক, আমরা যখন শাস্ত্রের ঐ অংশ পাঠ করি, তখন জানতে পারি যে যোষেফ ঈশ্বরের একজন বড় বিশ্বাসী ব্যক্তি ছিলেন। বাইবেলে তিনি সত্যিকারে মহান একজন ব্যক্তি ছিলেন।

আমরা তার বিশ্বাসের দৃষ্টান্ত দেখি।
 
যোষেফের বিশ্বাস প্রয়োজন ছিল
 
যোষেফের বিশ্বাস ছাড়া প্রয়োজনমতো কিছুই হতে পারতো না। বাইবেলে মথি ১:১৮-১৯ পদ বলে “যীশু খ্রীষ্টের জন্ম এইরূপ হইয়াছিল। তাঁহার মাতা মরিয়ম যোষেফের প্রতি বাগ্দত্তা হইলে তাঁহাদের সহবাসের পূর্বে জানা গেল, তাঁহার গর্ভ হইয়াছে - পবিত্র আত্মা হইতে। আর তাঁহার স্বামী যোষেফ ধার্মিক হওয়াতে ও তাঁহাকে সাধারণের কাছে নিন্দার পাত্র করিতে ইচ্ছা না করাতে গোপনে ত্যাগ করিবার মানস করিলেন।”
 
বাইবেলে ১৯ পদ বলে যে যোষেফ একজন ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন। এর অর্থ এই যে তিনি একজন মানুষ ছিলেন, যিনি তার বিশ্বাস প্রতিজ্ঞাত ঈশ্বরের উপর স্থাপন করেছিলেন।
 
ঠিক ঐরকম একটা সময় আমার জীবনে হয়েছিল যখন কেউ একজন আমাকে ঈশ্বরের পরিত্রাণের পরিকল্পনা সম্পর্কে বুঝিয়েছিলেন এবং আমি ঈশ্বরের কাছে আমার পাপের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলাম আর বিশ্বাসের মাধ্যমে আমি যীশু খ্রীষ্টকে আমার নিজের মুক্তিদাতা বলে গ্রহণ করেছিলাম। যোষেফের জীবনেও একবার সেরকম সময় হয়েছিল যখন তিনি প্রতিজ্ঞাত ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন আর ঈশ্বর তাকে ধার্মিক গণিত করেছিলেন। ঈশ্বর তাকে একজন ধার্মিক মানুষরূপে প্রকাশ করেছেন; ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস স্থাপনের কারণে তিনি ধার্মিকতা লাভ করেছিলেন। তার বিশ্বাস থাকাটা অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল।
 
আমাদের বুঝতে হবে যে যোষেফের জন্য মরিয়মকে মনে প্রাণে সমর্থন করার কী অর্থ প্রকাশ করে। এই গোপন বিষয়টি আমরা বিয়ের চুক্তির সময়সীমা অর্থাৎ এনগেজমেন্ট বলে ব্যাখ্যা দিতে পারি। মরিয়ম ও যোষেফ একে অন্যের প্রতি সমর্থন বা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। আপনি যাকে বিবাহের জন্য সমর্থন করবেন তার কাছ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে তার ভালো স্বভাব, সুন্দর আচরণ, নৈতিকতা, শালীনতা, আনুগত্যতা এবং বিশ্বস্ততা আশা করবেন। বিবাহের জন্য বাগ্দান কয়েক মাস স্থায়ী হয়ে থাকে।
 
আমি জানি না যে মরিয়ম আর যোষেফের মধ্যে কয়টি মাস এ ধরনের বাগ্দানের সমর্থন বা সম্পর্ক ছিল; কিন্তু তাদের বিবাহের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত যোষেফ মরিয়মের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত বিশ্বস্ত। যোষেফ এরকম একটা কথা শুনতে পেয়েছিলেন যে মরিয়ম একজন সন্তানসম্ভবা মাতা। মানব ইতিহাসে এমন কোনো ঘটনার নজির নেই আর এখনো পর্যন্ত এমন ঘটনা ঘটেনি যে একজন পুরুষ ও একজন স্ত্রীলোক তাদের উভয়ের একত্র সহবাস ছাড়া একটি শিশুর গর্ভধারণ হয়েছে। যোষেফ যখন শুনতে পেলেন যে মরিয়ম একজন সন্তানসম্ভবা মা, আমাদের মনে আর কোনো সন্দেহ থাকে না যে তিনি কী চিন্তা করতে পারেন আর অন্তরে তিনি কেমন কষ্ট পেয়েছিলেন ও কতো নিরুৎসাহিতও হয়েছিলেন!
 
বাইবেলে ২০ পদ বলে, “তিনি এই সকল ভাবিতেছেন . .” চিন্তা ভাবনায় তিনি কতো গভীরে চলে গিয়েছিলেন! তিনি মনে মনে ঐসব কথা চিন্তা করছিলেন। তিনি এসব বিষয় নিয়ে যখন চিন্তা করছিলেন, তখন তিনি মনের গভীরে চলে গিয়েছিলেন। তিনি ঠিকই চিন্তা করছিলেন, “এখন আমি কী করতে পারি?” তিনি ছিলেন একজন দরদি ও কোমলহৃদয়ের মানুষ। তিনি মরিয়মকে ভালোবাসতেন। তিনি নিজে নিজে চিন্তা করছিলেন, “আমি তাকে ত্যাগ করে চলে যাবো, কিন্তু তা গোপনে করতে হবে।”
 
আপনি দেখুন, বাগ্দান অর্থাৎ এনগেজমেন্টের সম্পর্ক ভঙ্গ করতে হলে আপনাকে লিখিতভাবে সম্পর্ক ভঙ্গ করতে হয়। বিষয়টা বিবাহের মতোই, তাই ডিভোর্স অর্থাৎ বিবাহবিচ্ছেদের মাধ্যমে এই সম্পর্কটা শেষ হয়। এ অবস্থায় এখানে অন্তত দুজন সাক্ষীর প্রয়োজন হতে পরে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে যোষেফ চিন্তা করেছিলেন, “খানিকটা গোপনে, লিখিতভাবে পরস্পরের মধ্যে এ সম্পর্ক মুছে ফেলার জন্য আমার একটি গুপ্ত স্থান প্রয়োজন। আমাকে সতর্কভাবে দুজন সাক্ষী যোগার করতে হবে। এ ঘটনাটি ঘটানোর জন্য আমাকে অবশ্যই গোপন রাখতে হবে।”
 
তিনি ভগ্নচূর্ণ হৃদয়ে, গভীর মর্মপীড়ায়, অত্যন্ত আবেগপ্রবণতায় এসব চিন্তা করছিলেন যে এরপর তিনি কী করবেন। যখন তিনি এসব বিষয় চিন্তা করছিলেন, প্রভু স্বপ্নে তার কাছে এলেন। তিনি যোষেফকে জানালেন যে মরিয়ম হলেন সেই নারী যাকে ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে এ পৃথিবীতে আনতে মনোনীত করেছেন। যোষেফ যখন ঈশ্বরের থেকে এ বার্তা পেলেন, তিনি তা বিশ্বাস করলেন। বাইবেল ২০ পদের প্রথম থেকে বলে,  “তিনি এই সকল ভাবিতেছেন, এমন সময় দেখ, প্রভুর এক দূত স্বপ্নে তাঁহাকে দর্শন দিয়া কহিলেন, যোষেফ, দায়ূদ-সন্তান, তোমার স্ত্রী মরিয়মকে গ্রহণ করিতে ভয় করিও না, কেননা তাঁহার গর্ভে যাহা জন্মিয়াছে, তাহা পবিত্র আত্মা হইতে হইয়াছে; আর তিনি পুত্র প্রসব করিবেন, এবং তুমি তাঁহার নাম যীশু (মুক্তিদাতা) রাখিবে; কারণ তিনিই আপন প্রজাদিগকে তাহাদের পাপ হইতে ত্রাণ করিবেন। এই সকল ঘটিল, যেন ভাববাদী দ্বারা কথিত প্রভুর এই বাক্য পূর্ণ হয়। “দেখ, সেই কন্যা গর্ভবতী হইবে, এবং পুত্র প্রসব করিবে, আর তাঁহার নাম রাখা যাইবে ইম্মানূয়েল” অনুবাদ করিলে ইহার অর্থ, ‘আমাদের সহিত ঈশ্বর’।” যিশাইয় ৭ অধ্যায়ের প্রতিজ্ঞার কথা আমরা দেখি। যিশাইয় ৭:১৪ পদে ঈশ্বর বলেন “অতএব প্রভু আপনি তোমাদিগকে এক চিহ্ন দিবেন; দেখ, এক কন্যা গর্ভবতী হইয়া পুত্র প্রসব করিবে, ও তাঁহার নাম ইম্মানূয়েল (আমাদের সহিত ঈশ্বর) রাখিবে।”
 
ঈশ্বর ঠিক এভাবে বল্লেন “একটি সময় সমস্ত মানব ইতিহাসে আমার পুত্র জন্মগ্রহণ করতে যাচ্ছে। এ সময় সমস্ত মানব ইতিহাসে, পুরুষ ছাড়া, পুরুষের দ্বারা কিছু করা ছাড়া পৃথিবীতে একটি শিশু জন্মিবে। আর পৃথিবীতে আমার পুত্রকে নিয়ে আসার জন্য আমি একটি কুমারীর গর্ভ মনোনীত করবো। ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা ঐ কুমারীর গর্ভকে ছায়াবৃত করবে আর সেই ঈশ্বর-পুত্র জন্মিবে। সেই পুত্র স্ত্রীজাত হবে; তাঁর জন্ম অন্যান্যদের জন্মের মতো হবে না, যেভাবে মানব ইতিহাসে এ-যাবৎ হয়ে আসছে।”
 
ঈশ্বর যখন যোষেফকে জানালেন যে সেই স্ত্রীলোকটি হলেন মরিয়ম, তার বাগ্দত্তা স্ত্রী। যিশাইয় ৭:১৪ পদে যাকে কুমারী বলা হয়েছে। যোষেফ ঈশ্বরের কথায় বিশ্বাস রাখলেন আর এর মধ্য দিয়ে তিনি তার বিশ্বাস দেখালেন।
 
তার এই বিশ্বাস করাটা প্রয়োজন ছিল। এরকম একটি ভগ্ন অন্তঃকরণের মানুষ কীভাবে এরকম ঘটনার মধ্য দিয়ে তার বাগ্দান সম্পর্ক রক্ষা করে চলতে পারে? কীভাবে এ রকম ঘটনার মধ্য দিয়ে বাগ্দান সম্পর্ক রক্ষা করে এরকম হতাশাগ্রস্থ একজন মানুষের জীবন চলতে পারে? কীকরে একজন মানুষ এসব বিষয়ে চিন্তা করে নিজেকে মনে মনে খুব নিচু ও দুর্বল মনে করে তাদের বাগ্দান সম্পর্ক রক্ষা করে চলতে পারে? ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস না রেখে যদি বিশ্বাস করা হয় যে ঈশ্বর পূর্ব থেকেই মরিয়মের জীবনে তা বহন করতে পরিকল্পনা করেছিলেন, তাহলে এই বাগ্দান সম্পর্ক রক্ষা করা অত্যন্ত কঠিন।
 
নিঃসন্দেহে আপনি এবং আমি কখনোই ঐ রকম একটি পরিস্থিতিতে পড়বো না যা যোষেফ নিজে সেরকম একটি পরিস্থিতিতে ছিলেন। কিন্তু জীবনে অনেক সময় আসে যখন আমাদের হৃদয় ভেঙে যায়। যা আমাদের বোধগম্য হয় না সেসব বিষয় বিবেচনা করে আমাদের অবশ্যই সম্পর্ক রক্ষা করে চলতে হয়। আমরা সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পারি না যে আমাদের চারিদিকে কী হচ্ছে এবং আমাদের প্রতি কী ঘটছে। এ বিষয়ে চিন্তা করে আমরা অবাক হই আর বলি “প্রিয় ঈশ্বর, আমি তলিয়ে যাচ্ছি। আমি কী করতে পারি?” ঈশ্বর আমাদেরকে বলবেন, “একমাত্র উপায় হলো আমার উপর তোমার বিশ্বাস স্থাপন করা। আমাকে বিশ্বাস কর, আমার উপর আস্থা রাখ, আমার কথা রাখ, এই বিশ্বাস, আস্থা ও ভরসার মধ্য দিয়ে তোমার উপর নজর দিতে আমাকে গ্রহণ কর।” জয়ী হতে হলে এই হলো একমাত্র উপায়।
 
বাইবেলে ১যোহন ৫:৪ পদে বলে “কারণ যাহা কিছু ঈশ্বর হইতে জাত, তাহা জগতকে জয় করে; এবং যে জয় জগতকে জয় করিয়াছে, তাহা এই, আমাদের বিশ্বাস।”
 
অন্য কথায়, প্রভুর উপর আমাদের বিশ্বাস স্থাপন না করলে আমাদের জীবনে কোনো জয় নেই। অনেকে আছেন যারা বিষয়-সম্পত্তির উপর সম্পর্ক রাখছেন আর তারা জানেন না এসব কীভাবে কর্তৃত্বে রাখতে হয়, দায়িত্বভার গ্রহণ করতে হয়, দেখাশোনা করতে হয় বা বশে রাখতে হয়। অনেকে আছেন যারা অন্যান্যদের যেসব জানা চিন্তা রয়েছে তা নিজেরা ভালোবেসে গ্রহণ করে তাদের মন ও অন্তরে বোঝা চাপিয়ে মনোবলচূর্ণ করছেন। আপনি অবাক হচ্ছেন যে কীকরে বাঁচবো? কীকরে চলবো? এর মধ্য দিয়ে কীকরে কী করবো? এরকম বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে কখনো কি জয়ী হতে পারবো? সত্য কথা হলো, একটি মাত্র উপায় আছে : প্রভুতে আপনার বিশ্বাস রাখা। এখানে আর অন্য কোনো উপায় নেই, এর কোনো বিকল্প পথ নেই।

যোষেফের বিশ্বাস করাটা প্রয়োজন ছিল। এছাড়া অন্য আর কোনো উপায় ছিল না। তিনি তার বিশ্বাস ঈশ্বরের উপর রেখেছিলেন আর এই বিশ্বাস স্থাপনের মধ্য দিয়েই তিনি মরিয়মের সঙ্গে তার সম্পর্ক রক্ষা করতে পেরেছিলেন।
 
তার বিশ্বাস ছিল নিন্দনীয়, ভর্ৎসনার যোগ্য, মানহানিকর, অপমানজনক।
 
এই বিশ্বাস করাটা ছিল খুবই কষ্টকর একটা বিষয়। অপমান, নিন্দা, মানহানি, ভর্ৎসনা করা হলো একজনকে ব্যঙ্গ-পরিহাস করা, তাকে নিয়ে তামাশা করা টিটকারি দেওয়া, তাকে উপহাস করা। আর এরকম উপহাসের পাত্র হওয়াতে অসম্মান অপমানে, অবজ্ঞায়, উপেক্ষায় একেবারে নিচে মিশে যাওয়া। এতে জানতে হচ্ছে যে আপনি কী করতে যাচ্ছেন, আপনি যা বিশ্বাস করেছেন, যে পরিকল্পনা আপনি অনুসরণ করছেন এবং যে পথ আপনি নিয়েছেন তা অন্যদের কাছে উপহাস্যযোগ্য এবং নিন্দনীয় হতে পারে।
 
মরিয়ম জানতেন যে, কোনো পুরুষ তাকে কখনোই স্পর্শ করে নাই। তার সারা জীবনেই এই সত্যটি তিনি জানতেন যে যীশু খ্রীষ্ট কুমারী জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি জানতেন যে যীশু খ্রীষ্টের জন্মগ্রহণে কোনো পুরুষের কোনো হাত ছিল না। ঈশ্বর-পুত্র যীশু ছিলেন কুমারী জন্ম।
 
প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে এ জগতে বেঁচে থাকতে হয়েছিল নিষ্ঠুর ব্যঙ্গ-পরিহাসে ও অপমানজনকভাবে আর আমরা বিশ্বাস করি যোষেফকেও একই পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকতে হয়েছিল। যোহন সুসমাচারের ৮ অধ্যায়ে যীশু ঐসব লোকদের সাথে কথা বলছেন যারা তাঁর বিরুদ্ধে ছিল। ৩৯ পদ থেকে ৪১ পদে রয়েছে “তাহারা উত্তর করিয়া তাঁহাকে বলিল, আমাদের পিতা অব্রাহাম। যীশু তাহাদিগকে বলিলেন, তোমরা যদি অব্রাহামের সন্তান হইতে, তবে অব্রাহামের কর্ম করিতে। কিন্তু ঈশ্বরের কাছে সত্য শুনিয়া তোমাদিগকে জানাইয়াছি যে আমি, আমাকেই বধ করিতে চেষ্টা করিতেছ; অব্রাহাম এরূপ করেন নাই। তোমাদের পিতার কার্য তোমরা করিতেছ। তাহারা তাঁহাকে কহিল, আমরা ব্যভিচারজাত নহি; আমাদের একমাত্র পিতা আছেন, তিনি ঈশ্বর।”
 
যে বাক্য আমাদের দেওয়া হয়েছে তা এইমাত্র পাঠ করেছি, কিন্তু আমরা তাদের কষ্ঠস্বর শুনতে পাইনি কিংবা তাদের কথার ভঙ্গিমাও আমরা দেখতে পাইনি। কেমন ব্যঙ্গ, কেমন ব্যবহার, কতো তীক্ষ্ণ কতো বিশ্রী জঘন্য তাদের কথাগুলো ছিল! যীশু যখন তাদের বললেন, “তোমাদের পিতার কার্য তোমরা করিতেছ,” তারা ক্রুদ্ধ হয়ে যীশুকে আঘাত করে জানালো আর যীশুকে বললো, “আমরা ব্যভিচারজাত নহি।” অন্য কথায় তাদের কথাগুলো বলা যায় যে “আমরা জানি যে কে আমাদের পিতা; কিন্তু আমরা জানি যে, তোমার মা বিয়ের আগেই গর্ভবতী হয়েছিল, আমরা তোমার মা সম্পর্কে খুবই ভালো জানি। আমরা জানি কীভাবে তোমার জন্ম হয়েছিল। তোমার সম্পর্কে আমরা সবকিছুই জানি। তোমার পাপেপূর্ণ অবস্থায় শুরু হওয়াটা, তোমরা গর্ভধারণ হওয়াটা আমরা জানি। সমস্ত ঘটনা আমরা সবাই জানি। আর এর সমস্ত কিছু তুমি তোমার জীবনে বহন করে চলছো। আমরা ভালো করেই তোমার সম্পর্কে জানি। এমন সব কথা তারা যীশু সম্পর্কে চিন্তা করেছিল।
 
ঈশ্বরের প্রতি যোষেফের বিশ্বাসের কারণে তিনি মরিয়মকে তার স্ত্রীরূপে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি নিজ ইচ্ছায় নিন্দা, মানহানি, ভর্ৎসনা, অপমান সহ্য করেছেন। মরিয়ম জানতেন যে তার সম্পর্কে লোকেরা কী বলাবলি করছে। তারা বলছিল, এমন ঘটনা আগে কখনোই ঘটেনি, হয়নি। যদিও কিছু কিছু লোক তার সঙ্গে ছিল। মরিয়মের একটি শিশু সন্তান ছিল। যোষেফ, শিশুটি কি তোমার? তোমার যদি হয়, তাহলে ঠিক হলো না। তোমার যদি নাও হয় তাহলেও ঠিক হলো না। কোথাও না কোথাও সেই পুরুষটা লুকিয়ে আছে।” মরিয়ম জানতেন যীশুর জন্ম হওয়ার জন্য কোথাও কোনো পুরুষ যুক্ত নেই যে তার হাত থাকতে পারে তার শিশুর গর্ভধারণে। যোষেফ ঈশ্বরকে বিশ্বাস করতেন যে যীশুর জন্মগ্রহণে কোনো পুরুষ যুক্ত নেই।
 
যোষেফ অন্তরে যা-কিছু জানতেন তা অন্যান্য লোকেরা জানতো না। যোষেফ বুঝতে পেরেছিলেন যে ঈশ্বর কী করেছেন। তিনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন। তিনি ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার উপর আস্থা রেখেছিলেন। ঈশ্বরের প্রতি তার বিশ্বাস ছিল যে ঈশ্বর তাকে এই নিন্দা, ভর্ৎসনা ও অপমান থেকে রক্ষা করার ক্ষমতা প্রদান করবেন।
 
এই দম্পত্তি দরিদ্র সাদামাটা একটা পরিবার ছিল। যদিও দরিদ্র তবুও তারা দুজনই রাজকীয় কুল বা বংশের। তাদের কোনো বড় প্রাসাদ ছিল না, ছিল না তাদের পর্যাপ্ত কোনো ধন-সম্পদ। মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য এবং মানুষের অনুগ্রহ বা সমর্থন পাওয়ার জন্য তাদের এমন কোনো কৃতিত্ব বা মহত্ত্বতা ছিল না। আপনি যখন মরিয়ম এবং যোষেফের মতো লোকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যাদের তেমন কোনো জাগতিক বিষয়-আশয় নেই, এক্ষেত্রে তাদের কী এমন জিনিষ অবশ্যই থাকতে পারে? তাদের একজন প্রভু রয়েছে এবং পরস্পর একে অন্যের প্রতি সমর্থন রয়েছে। এ ধরনের মানুষ ছিলেন যোষেফ ও মরিয়ম।
 
যোষেফের বিশ্বাস করাটা ছিল নিন্দনীয়, মানহানিকর, ভর্ৎসনা ও অপমানজনক। তিনি জানতেন যে লোকেরা তার পিছনে তার সম্পর্কে অনেক কিছুই বলাবলি করছে। যখন কি-না যীশু খ্রীষ্ট তাঁর পার্থিব পরিচর্যায় রক্তমাংসে পুরুষে বড় হচ্ছিলেন, তখনো তারা ঐসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন রকম কথা বলাবলি করতো। আর এতে কোনো সন্দেহ থাকে না যে, যীশু যখন ঠিক শিশু ছিলেন তখনো তাঁর সম্পর্কে অনেক কথাই বলা হতো। যোষেফ অন্তরে যা-কিছু জানতেন, যা তিনি জানতে পেরেছিলেন, সেসব বিষয়ে ঐসব লোকেরা জানতো না।
 
বাইবেলে ১পিতর ৪:১৪ পদ বলে “তোমরা যদি খ্রীষ্টের নাম প্রযুক্ত তিরস্কৃত হও, তবে তোমরা ধন্য; কেননা প্রতাপের আত্মা, এমন কি, ঈশ্বরের আত্মা তোমাদের উপরে অবস্থিত করিতেছেন।”
 
“তিরস্কৃত” কথাটি লক্ষ্য করুন। আমরা আমাদের চিন্তায় অনেক সময় সঙ্কুচিত ও দুর্বল হয়ে পড়তে পারি যে আমরা প্রভুর সঙ্গে চিহ্নিত হয়ে গেলাম যা অনেকে আমাদেরকে অসত্যবাদী কিংবা আপদ বলে মনে করবে। যে কর্মে খ্রীষ্টের সঙ্গে আমরা দলভুক্ত যাতে কি-না লোকেরা আমাদের সম্পর্কে বলবে, “এ তো একজন প্রচারক” বা খেতাব দেবে “এরা ঐ দলের লোক, ওদের সদস্য বা অমুক অমুক।” তখন এরকম একটা ধারণায় আমরা কুন্ঠিত হতে পারি কিংবা পিছিয়ে যেতে পারি। তারা আপনাকে নিন্দা ও উপহাস করতে চাইবে কারণ আপনি প্রভুকে ভালোবাসেন। তারা জানে না যে ঈশ্বর বাস্তব ও সত্য এবং তিনি আপনার জীবন পরিবর্তন ও রূপান্তরিত করেছেন। আপনি ঈশ্বর সম্পর্কে ভীত ও লজ্জিত।
 
তাদের মতো করে তারা এক দিকে দৃষ্টি দিতে চেষ্টা করে; আপনার দিক দিয়ে আপনি ভিন্ন দিকে দৃষ্টি দেন। তাদের দিক দিয়ে তারা তাঁকে নিন্দা করে, তাঁর বিষয়ে মন্দ কথা বলে তাঁর কুৎসা রটায়; কিন্তু আপনার দিক দিয়ে বাইবেল বলে, তিনি গৌরবান্বিত ও মহিমান্বিত। তাদের দিক দিয়ে তারা অবিশ্বাসের মাধ্যমে দৃষ্টিপাত করে আর তারা বিশ্বাস সম্পর্কে বা ঈশ্বরের বাক্য সম্পর্কে কিছুই বোঝে না। তাদের কাছে কিছুই বোধগম্য হয় না। তাদের পাপে তারা অন্ধ। শয়তান তাদের মৃত্যুর চিন্তা থেকে এবং ঈশ্বরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে। তাদের দিক দিয়ে তারা যীশুর সম্পর্কে মন্দ কথা বলে কুৎসা রটায়। তারা যীশুকে নিয়ে রঙ্গ-তামসা করে। তাদের একজন খ্রীষ্ট আছে, কিন্তু তা বাইবেলের খ্রীষ্ট নয়। তারা তাদের কল্পনা অনুযায়ী এক মুক্তিদাতা খুঁজে বের করে যিনি তাদের প্রত্যেকের সবকিছু করা পছন্দ করেন। তিনি ঠিক দয়ালু ব্যক্তি যিনি তাদের প্রত্যেকের প্রতি এবং তাদের সবকিছুতে সঠিক ও সুন্দর; কিন্তু তিনি কখনো পবিত্র পবিত্রতম এবং ধার্মিকতার ঈশ্বর নন্ যা বাইবেল শিক্ষা দেয়। তিনি সেই ঈশ্বর নন্ যিনি বলেন যে সকল মানুষই পাপী এবং স্বর্গে যাবার একমাত্র উপায় হলো তাঁর বহুমূল্য প্রাণ-পবিত্রকরণ রক্ত দ্বারা ধৌত ও পরিষ্কৃত হওয়া। তিনি কখনো খ্রীষ্টের প্রতিরূপ নন্ যা জগৎ পেতে পছন্দ করে। তারা খ্রীষ্টকে যাবপাত্রে একটি সামান্য, নিরীহ, কোমল এবং স্নেহশীল শিশুরূপে রেখে দিতে চায়। তিনি কোমল এবং স্নেহশীল কিন্তু তাঁর কোমলতা এবং স্নেহপরায়ণতা জানার একমাত্র উপায় হলো প্রথমে তাঁকে জানা। আপনি যদি তাঁকে না জানেন, কোনো একদিন তিনি করুণা, মায়া-মমতা ছাড়া বিচারে রায় দেবেন। কী ভয়ানক ব্যাপার হবে যখন সেই মেষশাবক বিচারাসনে একজন সিংহ হবেন।
 
আমি যোষেফের প্রশংসা করি। আমি তাঁর আরাধনা বা তাঁর ভজনা করি না; আমি যোষেফের প্রশংসা করি এজন্য যে ঈশ্বরের প্রতি তাঁর বিশ্বাস রাখার কারণেই তিনি নিন্দা, মানহানি, ভর্ৎসনা ও অপমানের মধ্য দিয়েও তিনি মরিয়মের সঙ্গে তার সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পেরেছিলেন। খ্রীষ্টিয়ানরূপে আমাদের সকলের ইচ্ছাকৃতভাবে পূর্বাকার এই নিন্দা, মানহানি, অপমান সহ্য করা এবং পাপে অভিশপ্ত জগতে প্রকাশ্যে ও স্পষ্টভাবে সানন্দে স্বাধীনভাবে প্রভু যীশুর সঙ্গে চিহ্নিত হওয়া প্রয়োজন বলে উচিত হবে। আপনি কি ইচ্ছকৃতভাবে ঐরকম নিন্দা, ভর্ৎসনা, কলঙ্ক, অপমান সহ্য করতে চান? আপনি কি এসব সম্পর্কে ইচ্ছকৃতভাবে স্পষ্টভাবে বলতে চান?
 
এ জগৎ কত-না নির্দয় ও নিষ্ঠুর হতে পারে। মানুষেরা এ সমস্ত বিষয় বলতে চায় না। তারা বলে যে যখন তারা প্রার্থনা করতে থাকবে তখন বলবে। তারা দোষ দেয়, যখন তাদের প্রশংসা বা শুভেচ্ছা জানানো উচিত। তারা মন্দ কথা বলে, যখন তাদের ঈশ্বরের প্রশংসা করা উচিত।
 
কোনো-কোনো সময় এই একই আত্মা আমাদের মণ্ডলীর মধ্যেও পাওয়া যায়। আপনি ঈশ্বরের জন্য কিছু করতে চেষ্টা করতে পারেন, এতে আপনার সমস্ত অন্তর দিয়ে করতে চেষ্টা করতে পারেন, তবুও অশুভ আত্মায় কেউ কেউ জড়িয়ে থাকতে পারে। অনেকে জানেন যে তাদের অনুচিতভাবে, খারাপভাবে কথা বলা উচিত নয় কিন্তু তারা সেভাবে কথা বলে। অনেক সময় আমরা নিজেদের অনেক কিছু চেপে রেখে অন্যদের দোষ দেই। কথা হলো আমার নিজেরও তো সেরকম অভ্যাস থাকতে পারে। কারণ আমার এমন কোনো অন্যায় থাকতে পারে যা অন্যেরা হয়তো জানে না। অন্যেরা না জানলেও আপনি আপনার অন্তর থেকে জানেন যে কী আপনি করছেন ও কেন এমন করছেন। মানুষের অন্তরের অনেক কিছুই দেখতে পাওয়া যায় না; যা তার অভিপ্রায় হতে পারে। আপনার অন্তরের অভিপ্রায় প্রভুর জন্য প্রেম থাকা উচিত কারণ তিনি আপনার হারানো প্রাণ উদ্ধার করেছেন আর এজন্য আপনি প্রভুর সেবা করতে চাইবেন এবং তাঁকে সন্তুষ্ট করতে চাইবেন। এভাবে আপনার সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়।
 
আমার খ্রীষ্টিয় জীবনের প্রথম দিকের একটি ঘটনার কথা খুব মনে পড়ছে। যুবকদের পরিচালনার জন্য একজন ব্যক্তি তাদের সাহায্য করছিলেন আর তাকে সাহায্য করার জন্য আমি কিছু দায়িত্ব চেয়েছিলাম। প্রথম বিকেলে আমি কাজ করার জন্য চার্চে আমার কাজের ভার গ্রহণ করার জন্য হাজির হলাম। আমি যখন সেই গৃহে প্রবেশ করলাম আমি দলনেতার কাছ থেকে আমার সম্পর্কে নির্দয় ও নিষ্ঠুর কথা শুনতে পেলাম। তিনি ঈর্ষাপরায়ণ। ঈর্ষা করার মতো তার কোনো কারণ ছিল না, কিন্তু তিনি ঈর্ষা করছিলেন। তিনি চিন্তা করেছিলেন পালকবাবু হয়তো আমার প্রতি অনেক বেশি মনোযোগী ও যতœবান হচ্ছেন। আমাদের সকলের প্রতি কোনো-না-কোনো দুষ্টপ্রকৃতির লোক থাকে। আমরা যদি তার মুখে বারবার খাবার তুলে দেই, সে দিনে দিনে বড় হয়ে আরো বড় হতে থাকবে। যা-হোক আমি ঘরে ঢুকলাম, কিন্তু কোনো বিষয়ে আমি পুরোপুরি ভালোভাবে কাজ করতে পারলাম না কারণ আমি অস্থির ছিলাম। আমি আমার নিজের ঘরে ফিরে এসে আমার স্ত্রীকে সব ঘটনা খুলে বললাম যে কী ঘটনা ঘটেছে। আমি নিরুৎসাহিত ছিলাম আর আমার স্ত্রীকে বললাম, “শোনো, এভাবে যদি তুমি কাজ করতে চাও তুমি গিয়ে করতে পার, কিন্তু আমি আর পারছি না” এর উত্তরে আমার স্ত্রী যে কথা আমাকে বললো সে কথা আমি কখনোই ভুলতে পারবো না। সে বললো, “তোমার মনকে স্থির কর ও সেভাবে সাজাও, যা-ই ঘটুক না কেন তুমি যা করছো তা প্রভুর জন্য করছো আর করছো মানুষের জন্য।”
 
আপনি যখনই করেন আপনি প্রভুর জন্য করে থাকেন। আপনি যখন ঈশ্বরের বাধ্য, আপনি যখন জানেন যে ঈশ্বর কী চান, আর এতে লোকেরা কী বলে বা করে এতে যা-ই হোক না কেন আপনি সামনের দিকে এগিয়ে চলতে পারেন। এ কারণে যোষেফও ঐ সমস্ত কঠিন প্রতিবন্ধক অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন কারণ ঈশ্বরের উপর তার বিশ্বাস ছিল। তার বিশ্বাস করাটা ছিল নিন্দনীয়, ভর্ৎসনার যোগ্য, কলঙ্ককর, মানহানিকর, অপমানজনক, কিন্তু তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে চলছিলেন।
 
যোষেফের বিশ্বাস ছিল পুরস্কৃত
 
যে গৃহে যীশু বড় হয়েছেন, বৃদ্ধি পেয়েছেন সেই গৃহের কর্তা হওয়াটা কি আপনি কল্পনা করতে পারেন? এই গৃহের কর্তা হওয়াটা সেই ব্যক্তির জন্য উপযুক্ত সম্মান যিনি ঈশ্বরের প্রতি যতটুকু আস্থা, ভরসা ও নির্ভর করেছিলেন। ঈশ্বরের প্রতি এমন বিশ্বাস রাখার ফলে প্রভু তাকে সেই গৃহের কর্তা হতে দিয়েছিলেন যেখানে যীশু খ্রীষ্ট, ঈশ্বরের পুত্র শিশু থেকে বৃদ্ধি পেয়েছিলেন। তার বিশ্বাস করাটা ছিল এমনই পুরস্কৃত।
 
ঈশ্বর তাকে এমন স্ত্রী দ্বারা পুরস্কৃত করেছেন যিনি প্রভুকে প্রেম করতেন।
 
যোষেফ মরিয়মের স্বামী। যে মরিয়ম প্রভুকে ভালোবাসেন তার সঙ্গে জীবন কাটানো সম্ভব হওয়াটা আনন্দের বিষয়। যিনি প্রভুর সেবা করতে চান ও যিনি প্রভুকে সন্তুষ্ট করতে চান তাকে বিবাহ করা আনন্দের বিষয়। এটা ঈশ্বরের কাছ থেকে পুরস্কৃত হওয়া।
 
যোষেফ ঈশ্বরের থেকে আশীর্বাদিত ও পুরস্কৃত হয়েছিলেন। তাঁর বিশ্বাস পুরস্কৃত হয়েছিল। মরিয়ম প্রভুকে ভালোবাসতেন। তার অন্তঃকরণ প্রভুকে দিয়েছিলেন যেন ঈশ্বর বলেন “আমার পুত্রকে এ জগতে নিয়ে আসার জন্য এই সেই স্ত্রীলোক যাকে আমি মনোনীত করেছি।” এই ছিল পুরস্কার।
 
ঈশ্বর যোষেফের পরিবারকে পরিচালনা করার সুযোগ দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন।
 
যোষেফ তার পরিবারকে পরিচালনা করেছিলেন। যখন তারা এ কথাটি জানতে পেরেছিলেন যে হেরোদ হত্যা করার জন্য শিশুদের খোঁজ করছে, আপনি জানেন তারা কী করেছিলেন? ঈশ্বর যোষেফের সঙ্গে কথা বললেন, আর যোষেফ ঐশ্বরিক পথ নির্দেশনায় তার পরিবারকে মিশরে পরিচালিত করেছিলেন। তিনি ঈশ্বরকে অনুসরণ করেছিলেন এবং তার পরিবার পরিচালনা করেছিলেন।
 
ঈশ্বরের সঙ্গে চলতে, ঈশ্বরকে জানতে এবং আত্মিক বিষয়ে আপনার পরিবারকে পরিচালনা করতে এই হলো আশীর্বাদিত সুযোগ এবং পুরস্কার।
 
ঈশ্বর যোষেফকে তার প্রয়োজনীয় বিষয় যুগিয়ে দিয়ে তাকে পুরস্কৃত করেছেন।
 
যোষেফ দেখেছেন ঈশ্বর যুগিয়ে দেন। তিনি একজন কাঠমিস্ত্রী ও সাদাসিদে মানুষ ছিলেন। ঈশ্বর তার যতœ নিলেন। ঈশ্বর তার প্রয়োজনীয় বিষয়ের যোগান দিলেন। তার বিশ্বাস ছিল পুরস্কৃত। আমরা জানি যে তার জাগতিক বিষয়বস্তু তেমন মোটেও ছিল না, কারণ তিনি যখন মন্দিরে উৎসর্গ করতে এসেছিলেন, তখন তিনি অত্যন্ত সাধারণ বস্তু উৎসর্গ করতে এসেছিলেন যা এতই নিকৃষ্ট উৎসর্গ যা সকলের পক্ষে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা সম্ভব। বিশ্বাসী জীবন হলো একটি সমৃদ্ধশালী জীবন। এ জগতের প্রয়োজনে সম্পদশালী বা ধনী হওয়ার বিষয় নয়, কিন্তু ঈশ্বরে ধনী। ঈশ্বর যোগান দেন এবং ঈশ্বর পুরস্কৃত করেন।
 
যোষেফ জানতেন যে প্রভু তার মধ্যে কাজ করছেন। এটাই পুরস্কৃত হওয়া। আমার কাছে ঈশ্বর কতই না ভালো যে আমি যা করছি তাতে অনুমতি দিচ্ছেন, আমাকে আশীর্বাদ করছেন, তাঁর বাক্যের মধ্য দিয়ে, অন্যান্য খ্রীষ্টিয়ানদের মাধ্যমে এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তিনি আমার সঙ্গে কথা বলছেন। তিনি আমার জীবন পরিচালনা করছেন এবং তাঁর জন্য আমার করা উচিত বলে সেসব বিষয়ে অনুপ্রাণিত করছেন ও প্রভাবিত করছেন। আমি ঈশ্বরের সদ্গুণের প্রতি দৃষ্টি রাখি। বিশ্বাসী জীবন হলো একটি পুরস্কৃত জীবন।
 
আমি ও আমার স্ত্রী ঈশ্বরের উত্তমতা ও সদ্গুণের বিষয় নিয়ে কথা বলছিলাম। সে বলছিল যে আমাদের পরিবারের জন্য ঈশ্বর কত-না ভালো আর এই বলে সে কাঁদতে শুরু করলো। সে বললো, “আমি খুবই সুখী এবং পরিপূর্ণ। আমার প্রাণ অত্যন্ত আশীর্বাদিত। আমাদের জন্য এবং আমাদের সন্তানদের জন্য ঈশ্বর ভালো করেছেন, ভালো রেখেছেন।” প্রিয় বন্ধু, বিশ্বাসী জীবন হলো আশীর্বাদিত জীবন।
 
বিশ্বাস অবশ্যই অত্যন্ত প্রয়োজনীয়; এটা নিশ্চয়তা। বিশ্বাস হলো নিন্দিত হওয়া, অপমানিত হওয়া আর ভর্ৎসনা পাওয়া যাতে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বিশ্বাস হলো পুরস্কৃত হওয়া আর এজন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই। ভিন্ন আর অন্যতর জীবনের সঙ্গে আমার বিশ্বাসী জীবন পরিবর্তন করতে চাই না। ঈশ্বরের বাক্যে যখন যোষেফের জীবনের প্রতি লক্ষ্য করি, উপলব্ধি করি ঈশ্বর তাকে কত-না স্পর্শ করেছেন এবং ব্যবহার করেছেন, কত-না কথা বলেছেন এবং পরিচালনা দিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি তিনি আপনাকে বলবেন যে মানবীয় জীবনে এ যাবৎ সবচেয়ে মহা আনন্দ এবং বড় সুযোগ হলো সেই ব্যক্তির জন্য যাকে ঈশ্বর ব্যবহার করেন এবং আশীর্বাদিত করেন। আমি সেই ব্যক্তি হতে চাই যাকে ঈশ্বর ব্যবহার করেন এবং আশীর্বাদ করেন।

আমেন! আমেন!! আমেন!!!

অনুবাদ : নথনিয়েল হাজরা।

Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?