পবিত্র বাইবেলের শিক্ষাসমূহ

পবিত্র বাইবেলের শিক্ষাসমূহের এই ছোট্ট পুস্তিকায় সুসংবাদকে অর্থাৎ পাপ থেকে উদ্ধার পাবার বিষয়টিকে সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও এই পুস্তিকাটি তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে যারা বাইবেল সম্পর্কে কিছুই জানেন না। এই পুস্তিকাটিতে পবিত্র বাইবেল, মানুষ সৃষ্টি, মানুষের সমস্যা পাপ, যীশু খ্রীষ্ট, পাপ থেকে উদ্ধার, স্বর্গে, নরক এবং ভবিষ্যত ঘটনা সম্পর্কে মূল্যবান বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা করা হয়েছে।

এই পুস্তিকাটি পাঠ করে পাঠকেরা নিচের বিষয়গুলো বুঝতে পারবেন যে, বাইবেলের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা কী? ঈশ^র তিনি কে? কী এমন বিষয় যা মানুষকে ঈশ^রের কাছ থেকে পৃথক করেছে? যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যু এবং পুনরুত্থানের মূল্য কী? পাপী মানুষের জন্য যীশু খ্রীষ্ট কী করেছেন?

আমরা আশা করি এই পাঠের আলোচনাটি আপনার ভালো লাগবে এবং উপকৃত হবেন।

আমরা ঈশ^রের কাছে প্রার্থনা করি যেন এই ধারাবাহিক পাঠ্যক্রম আপনাকে বাইবেল বুঝতে আরও সাহায্য করেন এবং একই সঙ্গে আপনার ¯্রষ্টা ঈশ^রের সঙ্গে আপনার ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে।

পাঠ - ১

সত্যের সন্ধান আমরা কোথায় পাই?

সুনিশ্চিত সত্যের সন্ধানে আপনি কোথায় যাবেন? সত্য বলে কি কিছু আছে? অনেকে মনে করেন, নাই। শুধু একটি বিষয়েই নিশ্চিত যে, তাদের অনেকেই কোনো বিষয়েই সুনিশ্চিত হতে পারছেন না। অনেকে একটি ভালো বইয়ের মতো বাইবেল পড়েও শেষ করেন, কিন্তু সুনিশ্চিত সত্যে নয়। তারা নিশ্চিত! তারা যদি সন্দেহ মুক্ত হয়ে থাকেন, তাহলে কি একটি কারণ হয়ে দাঁড়ায় না যে তাদের সেই ‘সত্য’ অনুসন্ধানের জন্য উন্মুক্ত?
 
বাইবেল নিঃসন্দেহে সত্যের অধিকারী হওয়ার দাবি রাখে। আমরা আপনাকে নিজেই তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানাই। আপনার নিজের যদি এ বিষয়ে অজানা থাকে একবার অন্তত বাইবেল নিরীক্ষা করে দেখুন, প্রকৃতপক্ষে বাইবেল সত্য কি-না?
 
সত্যে আমরা কীভাবে পৌঁছাতে পারি? মানুষ এ প্রশ্নের অনেক উত্তর তৈরি করেছে। বাইবেল মানুষের প্রতিটি প্রতারণামূলক তথ্য, ভ্রান্ত্রি ও মিথ্যা ধারণার কথা আমাদের বলে।

অনেকে উল্লেখনীয় বিষয় ‘বিবেক’ (ঈঙঘঝঈওঊঘঈঊ) সম্বন্ধে তাদের বিশ্বাসে বলে থাকেন যে, “আপনার সংবেদ (বিবেক, মন ও অন্তর) বা সজ্ঞান/বোধ/অন্তর আপনাকে পরিচালিত করুক” বেশ ভালো কথা, কিন্তু নীচের বর্ণনানুযায়ী . . .
তীত ১:১৫ পদ,  অন্তর বা মন (বিবেক/বোধ) নোংরা (কলুষিত) হতে পারে।
১তীমথিয় ৪:২ পদ,  বিবেক (সংবেদ) অসার (দাগযুক্ত) হতে পারে।
১করিন্থীয় ৮:৭ পদ,  বিবেক (সংবেদ) দুর্বল বলে অশুচি হতে পারে।
মানুষের এই মন, বিবেক/বোধ বা অন্তর কি আসলেই তাকে পরিচালনা দানে উপযুক্ত? এ বিষয়ে জানতে আমাদের আর বেশি দূর অগ্রসর হতে হবে না যে, একটি বিষয় একজনের কাছে গ্রহণযোগ্য হলেও অন্যজনের কাছে তা না-ও হতে পারে। বর্তমানে এ কারণে আমাদের তৈরি করতে হয়েছে আইন আদালত ও কারাগারের ব্যবস্থা। এমনকি সরকার গঠনের ক্ষেত্রেও আমরা সরকারের মধ্যে অথবা ব্যক্তি-স্বাতন্ত্রবাদের মধ্যে পূর্ণ ঐক্যমত পাই না, যে কোন্টি সমর্থনযোগ্য আর কোন্টি গ্রহণযোগ্য নয়।
অন্যান্য অনেকে নিজ নিজ ক্ষমতায় নিজেদের তৈরি ধর্মমত অথবা নিজ নিজ ধর্মীয় কোনো দল তৈরি করে চলছে। কিন্তু আবারও ঠিক একইভাবে তাদের নীতির মানসকল অবিশ্বাস্য, কারণ ‘সত্য কী’ তার নির্ধারণ মানুষই করে।
কলসীয় ২:৮ পদে মানুষের অনর্থক দর্শনের শিক্ষা এবং মানুষের গড়া চলতি নিয়ম বা শিক্ষার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে (পডুন মথি ১৫:৩,৬,৯ পদ)।
অর্থাৎ আমাদের সাবধান করা হয়েছে, যেন কেউ মানুষের গতানুগতিক প্রথা, জগতের আদিম সংস্কার অনুসারে, জগতের ফাঁপা ছলনাপূর্ণ দর্শনের শিক্ষা ও প্রতারণাপূর্ণ দর্শন শাস্ত্রের বড় বড় কথা বলে কেউ যেন আমাদের বন্দী হিসাবে টেনে নিতে না পারে।
প্রকৃতপক্ষে, বিভিন্ন প্রকার ধর্মীয় বিশ্বাস এবং বহু প্রচলিত রীতির ধর্মমত রয়েছে, তবুও এক বিশেষ মানদ- (আদর্শ/নীতি) রয়েছে যার উপর ভিত্তি করে আমাদের সকলের বিচার হতে পারে। সেই মানদ- হলো পবিত্র বাইবেল। এ পাঠ্য বইয়ের আলোচনা থেকে আমরা আপনাকে কয়েকটি কারণ দেখাব, যে কারণে আমরা বিশ্বাস করি সকল বিশ্বাস এই আশ্চর্য গ্রন্থে রয়েছে, যা অন্য সব বিবেক, ধর্মগোষ্ঠী বা ধর্মমত থেকে উত্তম।
আমরা যখন পবিত্র বাইবেলের সংস্পর্শে আসি, আমরা অবশ্যই উপলব্ধি করি যে, এ গ্রন্থ থেকে অন্যান্য বইয়ের কী তফাৎ রয়েছে। পবিত্র বাইবেল খুবই কার্যকরী, ইতিহাসের নির্ভেজাল তথ্যসমৃদ্ধ বিবরণ যা এই পৃথিবীর বুকে পাওয়া গিয়াছে। মানুষদের জয় ও পরাজয় এমনকি তাদের ব্যর্থতার সময়েও ঈশ^রের নর-নারীদের প্রকাশ করেছিলেন। মানুষ তাদের জীবনের অত্যন্ত জটিল প্রশ্নের উত্তর এই পবিত্র বাইবেলে খুঁজে পেতে পারে। এই পাঠের আলোচনার মধ্যে আমরা কেবল মতামতই প্রকাশ করব না, কিন্তু আমরা দেখাবো কেন এসব সত্য! যদি পবিত্র বাইবেলকে সর্ব শক্তিমান ঈশ^রের বাক্যরূপে গ্রহণ করি, তাহলে অবশ্যই সেখানে কিছু প্রমাণ রয়েছে! হ্যাঁ রয়েছে !!! আমরা এই পাঠে আলোচনা করি।
প্রথমত . . . পবিত্র শাস্ত্র এই বাইবেল কী?
পৃথিবীতে যত বই-পুস্তক আছে তার মধ্যে পবিত্র বাইবেল একটি ভিন্ন ধরণের গ্রন্থ। যদিও পবিত্র বাইবেলকে দেখতে শুধু একটি গ্রন্থের মতো দেখায়, তবুও এর মধ্যে সংযুক্ত রয়েছে ৬৬খানা আলাদা আলাদা পুস্তক। ৬৬টি খ-িত পুস্তকের সংগ্রহেই পূর্ণ পবিত্র বাইবেল। এই পূর্ণ বাইবেল প্রধান দু’টি অংশে যেমন পুরাতন ও নতুন নিয়মে বিভক্ত। অনুগ্রহপূর্বক আপনার বাইবেলের প্রথম থেকে লক্ষ্য করুন এবং সূচিপত্রটি দেখুন। আপনি লক্ষ্য করবেন যে, পুরাতন নিয়মে ৩৯টি পুস্তক বা খ- এবং নতুন নিয়মে ২৭টি পুস্তক বা খ- রয়েছে।
পবিত্র বাইবেলের পুস্তকগুলো গণনা মাধ্যমে অর্থাৎ কালাক্রমানুসারীতে/পযৎড়হড়ষড়মরপধষষু সাজানো হয়নি, বরং ‘বিষয়ীভূত’ অর্থাৎ আলোচনা সম্পর্কানুযায়ী/ঃড়ঢ়রপধষষু ভাবে উভয় নিয়মের পুস্তকগুলোই সুবিন্যস্তভাবে, ভাগে ভাগে স্থাপন করা হয়েছে।
পবিত্র শাস্ত্র এই বাইবেলে কী আছে?
পৃথিবী সৃষ্টির সময় থেকে শুরু করে অদূর ভবিষ্যতে যে নতুন আকাশ এবং নতুন পৃথিবী সৃষ্টি হবে সেই সকল বিষয় আমরা পবিত্র বাইবেলে দেখতে পাই। এখানে আমাদের সাহায্য হবে দেখে যে, পবিত্র বাইবেল মানুষের দ্বারা প্রকাশিত অন্যান্য বইয়ের মতো নয়। প্রকৃতপক্ষে ঈশ^রের অনুপ্রেরণায় অবতীর্ণ (ঈশ^র-নিশ্বসিত) এই পুস্তক।
ব্যবস্থা পুস্তক Ñ আদিপুস্তক, যাত্রাপুস্তক, লেবীয়পুস্তক, গণনাপুস্তক, ও দ্বিতীয় বিবরণ।
এই পুস্তকগুলো ঈশ^রের নিকট থেকে মোশিকে দান করা হয়েছিল যেন তিনি যিহূদী লোকদের দেন। ধর্মীয়, সামাজিক ও নৈতিক জীবনের জন্য তারা এই ব্যবস্থাগুলো অন্তর্ভুক্ত করেছে। আদিপুস্তকে আমরা পৃথিবী সৃষ্টির বিবরণ, পাপের উৎপত্তি, পৃথিবীতে নোহের সময়ের জলপ্লাবন/মহাবন্যা এবং ই¯্রায়েল জাতির উত্থান ইত্যাদি বিষয় দেখতে পাই। যাত্রাপুস্তক থেকে ইস্টের পুস্তক পর্যন্ত রয়েছে ই¯্রায়েল জাতির ইতিহাস যা কি না যীশু খ্রীষ্টের জন্মের চার শত বছর পূর্বেই আরম্ভ হয়েছিল।
ইতিহাস পুস্তক Ñ যিহোশূয়, বিচারকর্ত্তৃগণ, রূতের বিবরণ, ১ম ও ২য় শামূয়েল, ১ম ও ২য় রাজাবলি, ১ম ও ২য় বংশাবলি, ইষ্রা, নহিমিয়া, ও ইষ্টের।
এই ইতিহাস পুস্তক হলো যিহূদী জাতির উত্থান ও পতনসমূহ। এই পুুস্তকগুলো জয় ও পরাজয়ের কাহিনী ব্যক্ত করে। এসব পুস্তক উল্লেখ করে যে যিহূদী জাতি ঈশ^রের বিরুদ্ধে বারবার পাপ করা সত্ত্বেও ক্ষমাশীল ঈশ^রের দয়া থেকে তারা বঞ্চিত হয়নি।
গীতিগ্রন্থ (কাব্যধর্মী পুস্তক) Ñ ইয়োব, গীতসংহিতা, হিতোপদেশ, উপদেশক, পরমগীত। 
ইয়োব পুস্তক থেকে পরমগীত পুস্তক পর্যন্ত চমৎকার কাব্য/কবিতা ও হিতোপদেশে পরিপূর্ণ রয়েছে। এই পুস্তকগুলোতে লেখকদের আনন্দ-উল্লাস, দুঃখ-বেদনা এবং বিশেষত ঈশ^রের সঙ্গে তাদের পারস্পরিক কার্যকলাপ প্রকাশ পায়। আমরা তাদের সর্বোত্তম অবস্থা এবং অত্যন্ত মন্দ অবস্থা দেখতে পাই।
ভাববাদী পুস্তক Ñ যিশাইয়, যিরমিয়, বিলাপ, যিহিষ্কেল, দানিয়েল, হোশেয়, যোয়েল, আমোষ, ওবদিয়, যোনা, মিখা, নহূম, হবক্কূক, সফনিয়, হগয়, সখরিয়, মালাখি।
পুরাতন নিয়মের অন্যান্য পুস্তকগুলো অর্থাৎ যিশাইয় থেকে মালাখি পর্যন্ত ই¯্রায়েল জাতি সম্পর্কে এবং তাদের প্রতি আগামী দিনের প্রতিশ্রুতির ভবিষ্যদ্বাণীগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এতে ঈশ^রের বাণী রয়েছে। এছাড়া ভবিষ্যৎ ঘটনাবলির পাশাপাশি ঈশ^র তাদের তৎকালীন অবস্থা সম্পর্কে সেখানে আলোকপাত করেছেন। এখানেই দেখতে পাব যে, অনেক বৎসরকাল অতিক্রম না হওয়া পর্যন্ত ভাববাণী পূর্ণ অর্থাৎ সফল হয়নি। পুরাতন নিয়মের শেষ (মালাখি) থেকে যীশু খ্রীষ্টের জন্ম (মথি) পর্যন্ত ৪০০ বৎসরগুলোকে বলা হয় ‘নীরব বৎসর বা কাল’ ওই সময়ে ঈশ^র আর কোনো ভাববাদী প্রেরণ করেননি।
সুসমাচার Ñ মথি, মার্ক, লূক, যোহন।
এসব পুস্তকগুলোতে প্রভু যীশু খ্রীষ্টের পার্থীব জীবন সম্পর্কে তুলে ধরেছে, এর প্রতিটি পুস্তকে এক ভিন্ন দৃষ্টিকোনে খ্রীষ্টের দর্শন, অভিপ্রায় এবং পুস্তকগুলোর প্রধান অংশে তাঁর শেষ সাড়ে তিন বৎসরের জীবন ও মৃত্যু এবং মৃত্যু থেকে জীবিত (পুনরুজ্জীবিত) হওয়া পর্যন্ত বর্ণনা করা হয়েছে।
ইতিহাস পস্তক Ñ প্রেরিত।
এই প্রেরিত পুস্তকে খ্রীষ্ট তাঁর পার্থিব সেবা কার্যের সময়ে যে ম-লী/পযঁৎপয আরম্ভ করেছিলেন তার প্রাথমিক অগ্রগতির বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। এখানে আমরা লক্ষ্য করি যে একটি ম-লী/পযঁৎপয থেকে অনেক ম-লী স্থাপিত হয়েছিল এবং জগতব্যাপী সুসংবাদরূপে বিস্তার হচ্ছে। সর্ব প্রথম খ্রীষ্টিয়ানদের ইতিহাস এবং সাধু পৌলের জীবন সম্পর্কে লেখা রয়েছে প্রেরিতদের কার্য বিবরণ পুস্তকে।
পত্রসমুহ Ñ রোমীয়, ১ম ও ২য় করিন্থীয়, গালাতীয়, ইফিষীয়, ফিলিপীয়, কলসীয়, ১ম ও ২য় থিষলনীকীয়, ১ম ও ২য় তীমথিয়, তীত, ফিলীমন, ইব্রীয়, যাকোব, ১ম ও ২য় পিতর, ১ম, ২য় ও ৩য় যোহন, যিহূদা।
এই পত্রগুলো চিঠি হিসাবে জানা যায়। প্রকৃত কোন্ সত্যে ম-লী স্থাপন, ম-লী পরিচালনা এবং ব্যক্তিগতভাবে ঈশ^রকে সন্তুষ্ট করা যায় সেসব বিষয়ে বিভিন্ন ম-লীকে উদ্দেশ্যে করে লেখা হয়েছিল। এই চিঠিগুলোতে খ্রীষ্টিয় বিশ^াসের মহান সত্যগুলোকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এখানে কীভাবে আমাদের জীবনযাপন করা উচিত সেই সম্পর্কে পরিষ্কার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। 
ভাববাণী পুস্তক Ñ প্রকাশিত কালাম।
শেষ পুস্তক প্রকাশিত পুস্তকে রয়েছে ভবিষ্যতের সেই সকল বিষয় যা এই পৃথিবীতে, স্বর্গে এমনকি নরকে যাকিছু ঘটবে। এই পুস্তককে নিগূঢ়তত্ত্ব পুস্তকও বলা হয়। সত্য ছাড়া আর এমন কিছুই বড় হতে পারে না। এ সত্য জানতে ও বুঝতে হলে আপনাকে অবশ্যই প্রথমে রচনাকারী সেই আদিকর্তাকে জানতে হবে। এ বিষয় পরবর্তী আলোচনার জন্য রেখে দেই।
বাইবেল আমাদের কী বলে?
যদিও বাইবেলে ৬৬খানা বই রয়েছে তবুও এর প্রধান বিষয়বস্তু কিন্তু একটি। আর সেই বিষয়বস্তু হলো প্রভু যীশু খ্রীষ্ট। যীশু খ্রীষ্টের আগমনের সময় যাকিছু ঘটবে তার অনেক কিছুই বাইবেলের পুরাতন নিয়মে লেখা হয়েছিল। যীশুর জন্ম, জীবন ও মৃত্যু সম্পর্কে তাঁর জন্মের পূর্বে পুরাতন নিয়মে আলোকপাত করা হয়েছে।
বাইবেল আমরা কীভাবে পেলাম?
বাইবেল শুধুমাত্র একটি সাধারণ পুস্তক নয়। এই ‘সেই গ্রন্থ বা পুস্তক’ যা অন্যান্য আর যেসব বই লেখা হয়েছে ও ভবিষ্যতে হবে সেসব বই থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাইবেল একটি ‘অতিপ্রাকৃত’ (ঝটচঊজঘঅঞটজঅখ) এক অলৌকিক গ্রন্থ কারণ এভাবেই ঈশ^র মনুষ্যজাতির কাছে হস্তান্তর করেছেন। ঈশ^র আমাদের জানাতে চান যে, এই ধারণা করাটা ভুল হবে যে মানুষ যা ‘চিন্তা’ করেছে তাই লিখেছে। বরং পবিত্র বাইবেলের দাবি ঈশ^র এর সব কিছুই মানুষের মাধ্যমে লিখেছেন।

ক।     দেখুন:  ২পিতর ১:২১ পদ,
    “কারণ নবীয় বাণী মানুষের ইচ্ছাক্রমে (ইচ্ছামত) কখনও উপনীত হয়নি, কিন্তু ঈশ^রের পবিত্র মানুষেরা পবিত্র আত্মা দ্বারা চালিত হয়ে যা পেয়েছেন তেমনি তাই বলেছেন।” 
    অর্থাৎ, নবিরা তাদের ইচ্ছামত কোনো কথা বলেননি; পবিত্র আত্মা দ্বারা পরিচালিত হয়েই তাঁরা ঈশ^রের কাছ থেকে ভাববাণী পেয়ে ও তাঁর দেওয়া কথা বলেছেন।
    পবিত্র বাইবেলের এই পদ থেকে আমরা তিনটি বিশেষ বিষয়ে জানতে পারি যে, কীভাবে বাইবেল আমাদের কাছে এসেছে।
১।     পবিত্র বাইবেল মানুষের দ্বারা তৈরি না (“. . . মানুষের ইচ্ছাক্রমে (ইচ্ছামত) কখনও উপনীত হয়নি . . .”)। মানুষেরা তাদের ইচ্ছামত কোনো কথা বলেননি।
২।     ঈশ^র বাইবেল সূচনাকারী (“. . . পবিত্র আত্মা দ্বারা চালিত . . . ”)। পবিত্র আত্মা দ্বারা পরিচালিত হয়েই . . . ।
৩।     ঈশ^রের পবিত্র লোকেরাই বাইবেল লিখেছেন (“. . . পবিত্র মানুষেরা পবিত্র আত্মা দ্বারা চালিত হয়ে যা পেয়েছেন তেমনি তাই বলেছেন”)। পবিত্র মানুষেরা পবিত্র আত্মা দ্বারা পরিচালিত হয়েই তাঁরা লিখেছেন।
 খ।     ঈশ^র তাঁর বাক্য লিখবার জন্য (মানব) লেখকদের নিযুক্ত করেছেন।
    ঈশ^র বাইবেল লিখবার জন্য চল্লিশ জন বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিদের ব্যবহার করেছিলেন। আর প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এই গ্রন্থের লেখার কাজ শেষ করতে ১৬০০ বছরের মতো সময় লেগে গিয়েছিল। যদিও এসব লেখকেরা অনেকেই একে অপরকে জানতেন না, তারা একই সঙ্গে বসবাস করেননি এবং অনেক ক্ষেত্রে একে অন্যের চাক্ষুষ দেখা সাক্ষাৎ ও হয়নি। এমনকি তাদের অনেকে একে অপরের লেখাও কখনো পাঠ করেননি। তবুও সত্যের বহু অনুসন্ধানের পর এই পবিত্র বাইবেলের এক চমৎকার ঐক্যে আমরা অবাক হই। এই বাইবেলের কোনো দ্বিমত বা বিরোধিতা নেই। পুস্তকগুলোর কোথাও কোনো ভুল-ভ্রান্তি নেই বা একটির সঙ্গে অন্যটির কোনো অমিল নেই। মানবজাতির অপরাপর আর যে-কোনো রচনা পুস্তক থেকে এই গ্রন্থ অনেক ঊর্ধ্বে। সেজন্য আজ আমরা সর্বান্তঃকরণে বলতে পারি পবিত্র বাইবেল ঈশ^রের বাক্য।
গ।    ঈশ^র পবিত্র বাইবেল সূচনাকারী (গ্রন্থনাকারী)।
    এই অলৌকিক কাজটির বিচারবিশ্লেষণের জন্য ভালো একটি উপায় হলো যে, কাগজে আপনি বিষয়গুলো কীভাবে লিখবেন। যদিও লেখার যোগ্য একটি ভালো কলম দিয়ে আপনি যে-ভাবে চালান সে-ভাবেই লেখা হয়।
    দেখুন:  ২তীমথিয় ৩:১৬ পদ,
“প্রত্যেক বাক্য ঈশ^র-নিশ্বসিত (অনুপ্রেরণার) দান, আর তাহা শিক্ষার জন্য, অনুযোগের জন্য, সংশোধনের জন্য, ধার্মিকতা সম্বন্ধীয় শিক্ষার জন্য উপকারী।”
অর্থাৎ, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যা আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে আর তাহলো পবিত্র বাইবেলের প্রত্যেকটি কথা ঈশ^রের দ্বারা অনুপ্রাণিত। তাঁর কাছ থেকে আসা প্রত্যেকটি শাস্ত্র শিক্ষা, চেতনা দান, সংশোধন এবং সৎ জীবনে গড়ে উঠবার জন্য দরকারী এবং উপকারীও।
পবিত্র বাইবেল বলে ঈশ^রের-নিশ্বসিত অন্য অর্থে ঈশ^রের অনুপ্রেরণায় আমাদের জন্য ঈশ^রের অবতীর্ণ বাক্য বা বাণী।
    ‘অনুপ্রাণিত’ (ঈশ^রের দ্বারা অনুপ্রাণিত) অবিকল অর্থ ‘ঈশ^র-নিশ্বসিত’ (ঈশ^র নিশ্বাস ফেললেন)। যেমন আমরা কথা বলার সময় শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ বা ত্যাগ করি। পবিত্র বাইবেলের ক্ষেত্রেও তাই। এটিই ঈশ^রের নিশ্বাস-প্রশ্বাস, অথবা সর্বশক্তিমান ঈশ^রের সত্য বাণী অর্থাৎ বাক্য।
পবিত্র বাইবেল অনুপ্রাণিত বলতে আমরা কী বুঝাতে চাচ্ছি? আমরা বুঝাতে চাচ্ছি যে, লেখার সময় এই গ্রন্থের লেখকরা সরাসরি ঈশ^রের বিশেষ তত্ত্বাবধানে ছিলেন। ঈশ^র তাদের এমনভাবে পরিচালিত করেছিলেন, যাতে তিনি যা চান ঠিক তাই যেন তারা লিখতে পারেন। মানব লেখকেরা পবিত্র আত্মায় অনুপ্রাণিত হয়ে ঈশ^রের সত্য বাক্য পবিত্র বাইবেল তাদের নিজেদের সাহিত্যে আক্ষরিক ঢং এর পদ্ধতিতে লিপিবদ্ধ করলেন। পবিত্র আত্মা লেখকদের এমনভাবে ব্যবহার করেছেন যে, ঈশ^র যে শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করতে চেয়েছেন তা-ই তিনি লেখকদের দ্বারা লিখিয়েছেন। ভাববাদী বা শিষ্য তাঁদের নিজেদের কথা পবিত্র বাইবেলে লেখনিনি, সুতরাং মানুষের কোনো চিন্তা বা কথা পবিত্র বাইবেলে নাই।
    ২পিতর ১:২১ পদগুলো পরিষ্কার ভাবে আমাদের শিক্ষা দেয় যে, পবিত্র বাইবেলের লেখকেরা ঈশ^রের দ্বারা অনুপ্রাণিত।
অতএব আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, পবিত্র বাইবেলের বাণী বা বাক্যগুলো ঈশ^রের অনুপ্রেরণায় লেখা হয়েছে এবং এটি ঈশ^রের বাক্য। ঈশ^র তাঁর আত্মিক শক্তিতে পবিত্র বাইবেলের মানবীয় লেখকদের মন আলোকিত এবং পরিচালিত করেছেন, যেন, ঈশ^র যা চান শুধুমাত্র তা-ই লেখকগণ লিখতে পারেন। তাই আমরা বলতে পারি যে, পবিত্র বাইবেল হলো ঈশ^রের কাছে থেকে আগত বাক্য, যে বাক্যের মাধ্যমে ঈশ^র মানুষের কাছে তাঁর ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
অনেকে ভুল অর্থে মনে করে যে, পবিত্র বাইবেলের মধ্যে ঈশ^রের বাক্য আছে। এর অর্থ এই যে, পবিত্র বাইবেলের কোনো কোনো অংশ ঈশ^রের বাক্য এবং কোনো কোনো অংশ ঈশ^রের বাক্য নয়। কিন্তু আসলে পবিত্র বাইবেলের প্রত্যেকটা অংশই Ñ অর্থাৎ সম্পূর্ণ পবিত্র বাইবেলটাই অনুপ্রাণিত বাক্য বা বাণী। পবিত্র বাইবেলই বলে যে পবিত্র বাইবেলের প্রত্যেকটা অংশই ঈশ^রের দ্বারা অনুপ্রাণিত।
আরো একটি বিষয় আছে, যা আমাদের মনে রাখা দরকার। সেটা হলো, ঈশ^র মানুষকে অন্য কোনো গ্রন্থ দেননি। পবিত্র বাইবেলই একমাত্র লিখিত শাস্ত্র বা ঈশ^রের প্রকাশ, যা তিনি আমাদের কাছে দিয়েছেন। পবিত্র বাইবেলের সর্বশেষ পদে ঈশ^র আমাদের সতর্ক করে দিয়েছেন যে, এই গ্রন্থের ভবিষ্যৎ বাণীর সাথে কোনো কিছু যোগ করা যেমন অনুচিত তেমনি কোনো কিছু এ থেকে বিয়োগ করাও আমাদের উচিত নয়। পাঠ করে দেখুন : প্রকাশিত বাক্য ২২:১৮,১৯ পদ।
পবিত্র বাইবেল সম্পর্কে মত প্রকাশ করতে গিয়ে একজন বলেছে : এই গ্রস্থে ঈশ^রের চিন্তা, মানুষের অবস্থা, পরিত্রাণের উপায়, পাপীদের বিচার এবং বিশ^াসীদের সুখ-শান্তির কথা আছে। এই গ্রন্থের শিক্ষা পবিত্র, এর আইন-কানুন অবশ্যই পালনীয়, এর ইতিহাস সত্য এবং এর সিদ্ধান্ত সকল অপরিবর্তনীয়। জ্ঞানী হবার জন্য এটা পড়–ন, পাপ থেকে উদ্ধারের জন্য বিশ^াস করুন এবং পবিত্র হবার জন্য এর বাধ্য হন। খ্রীষ্ট-ই এই গ্রন্থের প্রধান আকর্ষণ। এতে আপনার পরিচালনার জন্য আলো, আপনাকে বাঁচাবার জন্য খাদ্য, আপনাকে উৎফুল্ল রাখার জন্য সান্ত¡নার বাণী রয়েছে। আমাদের মংগলই এর কাম্য; ঈশ^রের মহিমা প্রকাশ করাই এর উদ্দেশ্য। এই বাইবেল ধীরে ধীরে পড়ৃন, প্রায়ই অধ্যয়ন করুন, আর তা করুন প্রার্থনা এবং বিনতীর সাথে। সকল বই-পুস্তকের মধ্যে পবিত্র বাইবেল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শাস্ত্র। ঈশ^র এই বাক্যের মাধ্যমে নিজেকে মানুষের কাছে প্রকাশ করেছেন।
পবিত্র বাইবেল যদি ঈশ^রের অনুপ্রাণিত (নিশ্বসিত) বাণী হয়ে থাকে, তাহালে আমরা আমাদের সকল বিশ^াসে ও কার্যে এর  প্রভুত্ব, কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা মেনে নিতে পারি।

পবিত্র বাইবেল নিঃসন্দেহে যদি ঈশ^রের বাক্য হয় তাহলে এর তো কিছু প্রমাণ থাকবে। হ্যাঁ, প্রমাণ অবশ্যই আছে . . .।  আমরা পরবর্তী পাঠে  দেখি।


প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখুন 
১ম পাঠ
১।     মানুষের বিবেকের (অন্তর বা মনের) ৩টি বর্ণনা দিন যা পবিত্র বাইবেলে তীত ১:১৫ পদ;  ১তীমথিয় ৪:২ পদ;  এবং ১করিন্থীয় ৮:৭ পদে উল্লেখ রয়েছে।

                


        

২।    মানুষের তৈরি ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে কলসীয় ২:৮ পদে আমাদের জন্য সতর্কবাণী কী?
   
                


        


৩।    পবিত্র বাইবেলে কতগুলো পুস্তক আছে এবং ঐগুলো কীভাবে পুরাতন এবং নতুন নিয়মের মধ্যে বিভক্ত রয়েছে?

                


        

৪।    পবিত্র বাইবেলের কোন্ পুস্তকগুলো “ব্যবস্থা পুস্তক” হিসাবে জানা যায়?

                


৫।    পত্রসমূহ পুস্তক বা চিঠিরূপে জানা পবিত্র বাইবেলের পুস্তকগুলোর উদ্দেশ্য কী?

                


        




৬।    পবিত্র বাইবেলের কোন্ পুস্তকটি ভাববাণী হিসাবে জানা যায়?
   
                
৭।    ২পিতর ১:২১ পদ অনুসারে পবিত্র বাইবেলের পুস্তকগুলো লিখবার জন্য পবিত্র ব্যক্তিরা কিসের দ্বারা চালিত হয়েছিলেন?

                


        

৮।    পবিত্র বাইবেল সম্পর্কে ২তীমথিয় ৩:১৬ পদে কী বলে?

                


        

৯।    পবিত্র বাইবেল যখন ঈশ^রের নিশ্বসিত (অনুপ্রাণিত) বাক্য, তখন আমরা এ বিষয়ে কী বলতে পারি?

                













২য় পাঠ
 পবিত্র বাইবেল কি ঈশ^রের বাক্য বা বাণী?
এ বিশ্ব বিভিন্ন ধর্মীয় মতের বিভিন্ন পুস্তকে ভরপুর। সেসব কি একই ধরনের নয়? কেন অন্যান্য পুস্তক থেকে পবিত্র বাইবেলের শ্রদ্ধা ও স্থান অনেক উপরে? যদি পবিত্র বাইবেলের দাবি সত্য না হয়, তবে এটি তাঁর নিজের মর্যাদায় নিজেই দাবি করে। নিচের বিষয়গুলো ভেবে বিচার করুন।
দেখুন: ইব্রীয় ১:১-২ পদ,
“ঈশ^র পূর্বকালে বহুভাগে ও বহুরূপে ভাববাদিগণে পিতৃপুরুষদিগকে কথা বলিয়া, এই শেষ কালে তাঁহার পুত্রেই আমাদিগকে বলিয়াছেন। তিনি ইহাঁকেই সর্বাধিকারী দায়াদ করিয়াছেন, এবং ইহাঁরই দ্বারা যুগকলাপের রচনাও করিয়াছেন।”
অর্থাৎ অনেক দিন আগে নবিদের মধ্য দিয়ে ঈশ^র আমাদের পূর্বপরুষদের কাছে নানাভাবে অনেকবার অল্প অল্প করে কথা বলেছিলেন। কিন্ত এই দিনগুলোর শেষে তিনি তাঁর পুত্রের মধ্য দিয়ে আমাদের কাছে কথা বলেছেন। ঈশ^র তাঁর পুত্রকে সব কিছুর অধিকারী হওয়ার জন্য নিযুক্ত করলেন। পুত্রের মধ্য দিয়েই তিনি সবকিছু সৃষ্টি করলেন।
বলা হয়েছে যে, পুরাতন নিয়মে ঈশ^র নবিদের মাধ্যমে কথা বলেছেন আর খ্রীষ্টকে প্রেরণের মাধ্যমে তাঁর সত্যের বাণী প্রকাশ সমাপ্ত করেছেন। ঈশ^রের আর অধিক কিছুই বলার নেই। তাঁর আমাদের আর কিছুই বলার প্রয়োজন নেই। তিনি ইতোমধ্যে আমাদের সব কিছুই দিয়েছেন।
পবিত্র বাইবেলের লেখকদের মনোভাব ছিল আপোষহীন।
দেখুন: ইফিষীয় ২:১২ পদ,
“তৎকালে তোমরা খ্রীষ্ট হইতে বিভিন্ন, ইস্রায়েলের প্রজাধিকারের বহিঃস্থ, এবং প্রতিজ্ঞাযুক্ত নিয়মগুলির অসম্পর্কীয় ছিলে, তোমাদের আশা ছিল না, আর তোমারা জগতের মধ্যে ঈশ^রবিহীন ছিলে।”
অর্থাৎ বলা হয়েছে Ñ মনে রেখো, আগে তোমরা খ্রীষ্টের কাছ থেকে আলাদা ছিলে; জাতি হিসাবে ই¯্রায়েলীয়দের যে অধিকার তোমরা সেই অধিকারের বাইরে ছিলে; ঈশ^র ই¯্রায়েল জাতির জন্য যে কয়টি প্রতিজ্ঞাযুক্ত ব্যবস্থা করেছিলেন তার সংগে তোমাদের কোনো সম্বন্ধ ছিল না; তোমাদের কোনো আশা ছিল না; আর এই জগতে তোমরা ঈশ^র ছাড়াই ছিলে।
এখানে পৌল সেই লোকদের কথা উল্লেখ করেন, যারা যীশু খ্রীষ্টের অনুসারী নন, যেমন ‘ঈশ^র বিহীন’ Ñ অর্থাৎ আমরা অন্য কথায় বলতে পারি ‘নাস্তিক’।
অন্যান্য পুস্তকে গভীর মানব অন্তর্দৃষ্টি, প্রকৃতির বিভিন্ন বিষয়ের পর্যবেক্ষণ, সূক্ষ্ম দার্শনিক যুক্তিতর্ক অথবা নৈতিক নীতিমালা থাকতে পারে। কিন্তু পবিত্র বাইবেলের বাক্য অনুসারে, ঐ সমস্ত পুস্তকের জ্ঞান মানুষের সবচেয়ে বড় চাহিদা বা প্রয়োজন Ñ সেই স্রষ্টার সঙ্গে মানুষের পরিচিতি ঘটাতে ব্যর্থ। একমাত্র যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমেই তারা সেই ঈশ^রকে জানতে পারে।
পবিত্র বাইবেল অপছন্দ করে এমন অনেক অসাধু ধর্মীয় নেতা পূর্বে ছিল। এই বর্তমান দিনেও আছে এবং দিনে দিনে বৃদ্ধিও পাচ্ছে। সম্পূর্ণ দৃঢ় সত্যেই তাদের বিচার করা যায়।
দেখুন: দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:২১-২২ পদ,
“আর তুমি যদি মনে মনে বল, সদাপ্রভু যে বাক্য বলেন নাই, তাহা আমরা কি প্রকারে জানিব? (তবে শুন,) কোন ভাববাদী সদাপ্রভুর নামে কথা বলিলে যদি সেই বাক্য পরে সিদ্ধ না হয়, ও তাহার ফল উপস্থিত না হয়, তবে সেই বাক্য সদাপ্রভু বলেন নাই; ঐ ভাববাদী দুঃসাহসপূর্বক তাহা বলিয়াছে, তুমি তাহা হইতে বিচলিত হইও না।”
অর্থাৎ বলা হয়েছে Ñ কোনো একটা কথা সম্বন্ধে তোমরা মনে মনে বলতে পার, ‘সদাপ্রভু এই কথা বলেছেন কি-না তা আমরা কী করে জানব? কোনো নবি/ভাববাদী যদি সদাপ্রভুর নাম করে কোনো কথা বলে আর তা যদি অসত্য হয় কিংবা না ঘটে, তবে বুঝতে হবে সেই কথা সদাপ্রভু বলেননি। সেই ভাববাদী/নবি দুঃসাহস করে ঐ কথা বলেছে। তাকে তোমরা ভয় কোরো না।
দেখুন: যিশাইয় ৪১:২২-২৩ পদ,
“উহারা সে সমস্ত লইয়া নিকটে আইসুক, যাহা যাহা ঘটিবে, আমাদিগকে জ্ঞাত করুক; পূর্বকার বিষয় কি কি তাহা বল; তাহা হইলে আমরা বিবেচনা করিয়া তাহার শেষ ফল জানিতে পারিব; কিম্বা উহারা আগামী ঘটনা সকল আমাদের কর্ণগোচর করুক। উত্তরকালে/ভবিষ্যতে কি কি ঘটিবে, তোমরা তাহা জ্ঞাত কর; তাহা করিলে তোমার যে দেবতা, তাহা বুঝিতে পারিব; হাঁ, তোমরা মঙ্গল কর বা অমঙ্গল কর, তাহাতে আমরা বিস্মিত হইয়া একত্র তাহা নিরীক্ষণ করিব।”
অর্থাৎ বলা হয়েছে, Ñ যাকোবের রাজা বলেছেন, দেবতারা, তোমরা এবার তোমাদের পক্ষে কথা বল। তোমাদের সব যুক্তি দেখাও। তোমরা সেই সব যুক্তি নিয়ে এসে যা ঘটবে তা আমাদের বল। আগেকার ঘটনাগুলো সম্বন্ধে আমাদের জানাও, যাতে আমরা সেগুলোর বিষয় ভেবে দেখে তাদের শেষ ফল কী তা জানতে পারি; কিংবা কী কী ঘটবে সেই বিষয় আমাদের কাছে ঘোষণা কর। ভবিষ্যতে কী হবে তা আমাদের বল, তা হলে আমরা জানতে পারব যে, তোমরা দেবতা। ভালো হোক বা খারাপ হোক একটা কিছু কর যা দেখে আমরা হতভম্ব হব।
ভাববাণীই হলো পবিত্র বাইবেলের প্রকৃত পরীক্ষা। আর এসব কি নির্ভুল? যদি এসব আংশিক সঠিক হয়, ঈশ^র আমাদের তদ্রƒপ বলেছেন যে, পবিত্র বাইবেলের বাকী অংশে মনোযোগ দেবার আর প্রয়োজন নাই। প্রকৃতপক্ষে অত্যন্ত দৃঢ় সত্যে পরিমাপ প্রয়োজন। তবুও এ পর্যন্ত নীতি ও আর্দশের মানদ-ে পবিত্র বাইবেল সম্পূর্ণরূপে ঈশ^রের পবিত্র বাক্য বা বাণী।
আসুন পবিত্র বাইবেল খুলে দেখি!  নিচের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো বিবেচনা করি।
১।    সোর নগর:
    যিহিষ্কেল ২৬ অধ্যায়ে সোর নগর ধ্বংস হওয়ার ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে উল্লেখ আছে। প্রদান করা ভবিষ্যদবাণী পূর্ণ হয়েছিল রাজা নবূখদ্রিৎসরের আগমনে ও তার দ্বারা নগর ধ্বংসের মাধ্যমে, ঠিক যেমন যিহিষ্কেল বর্ণনা করেছিল। নিঃসন্দেহে সোর নগর সম্বন্ধে যিহিষ্কেলের এই ভাববাণী সমগ্র পবিত্র বাইবেলের বৃহত্তর ভাববাণীর একটি। প্রকৃতপক্ষে সোর নগর ছিল দুইটি, একটি ছিল সমুদ্র উপকূলে যিরূশালেম হতে ৬০ মাইলের মতো উত্তর পশ্চিমে এবং অন্যটি একটি দ্বীপ, ভূমধ্যসাগরের অর্ধ-মাইল ভিতরে। এই ভাববাণীতে নিচে উল্লেখ করা যিহিষ্কেলের পূর্বসংকেতগুলো পূর্ণ হয়েছিল।
    ক। বাবিল-রাজা নবূখদ্্রিৎসর সোর নগর দখল করেছিল।
    খ। নগরটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে সমভুমি হয়েছিল, এমনকি চূড়ার পাথরগুলিও।
    গ। এই জায়গাটি জাল বিছিয়ে শুকবার স্থান হয়েছিল।
    ঘ। এই নগরটি আর কখনো পুননির্মাণ করা হয়নি।
    দেখুন: যিহিষ্কেল ২৬:৭-৯ পদ,
    “প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলেন, দেখ, আমি উত্তরদিক্ হইতে অশ^, রথ ও অশ^ারোহিগণের এবং জনসমাজের ও অনেক সৈন্যের সহিত রাজাধিরাজ বাবিল-রাজ নবূখ্দরিৎসরকে আনাইয়া সোরে উপস্থিত করিব। সে জনপদে অবস্থিতা তোমার কন্যাদিগকে খড়্গাঘাতে রধ করিবে, তোমার বিরুদ্ধে গড় গাঁথিবে, ও তোমার বিরুদ্ধে জাঙ্গাল বাঁধিবে, ও তোমার বিরুদ্ধে ঢাল উত্তোলন করিবে। আর সে তোমার প্রাচীরে দুর্গভেদক যন্ত্র স্থাপন করিবে, ও আপন তীক্ষèè অস্ত্র দ্বারা তোমার উচ্চগৃহ সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিবে।”
    দেখুন: যিহিষ্কেল ২৬:১৪-১৮ পদ,
    “আর আমি তোমাকে শুষ্ক পাষাণ করিব, তুমি জাল বিস্তার করিবার স্থান হইবে; তুমি আর নির্মিত হইবে না; কেননা আমি সদাপ্রভু ইহা কহিলাম, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমার পতনের শব্দে, তোমার মধ্যে আহত লোকদের কোঁকানিতে ও ভয়ানক নরহত্যায় উপকূল সকল কি কাঁপিবে না? তখন সমুদ্রের অধ্যক্ষগণ সকলে আপন আপন সিংহাসন হইতে নামিবে, আপন আপন  পরিচ্ছদ ত্যাগ করিবে, শিল্পকর্মের বস্ত্র সকল খুলিয়া ফেলিবে; তাহারা ত্রাস পরিধান করিবে; তাহারা ভূমিতে বসিবে, অনুক্ষণ ত্রাসযুক্ত থাকিবে ও তোমার বিষয়ে বিস্ময়াপন্ন হইবে। আর তাহারা তোমার বিষয়ে বিলাপ করিয়া তোমাকে বলিবে, হে সমুদ্রোৎপন্ন স্থাননিবাসিনি, তুমি কিরূপ বিনষ্ট হইলে! সেই বিখ্যাতা পুরী স্বনিবাসীদের সহিত সমুদ্রে পরাক্রান্তা ছিল, তাহারা তাহার সমস্ত অধিবাসীর উপর তাহাদের ভয়ানকতা অর্পণ করিত। এখন তোমার পতনের দিনে উপকূল সকল কাঁপিতেছে, তোমার শেষগতিতে সমুদ্রস্থিত দ্বীপ সকল বিহ্বল হইতেছে।” 
        এসব ঘটনা কি ঘটেছিল? নিচে ইতিহাসের প্রকৃত ঘটনাগুলো চিন্তা করুন।
ক।         যিহিষ্কেল এসব বিবরণ ৫৯০ খ্রীষ্টপূর্বের ঐ সময়কালে লিখেছিলেন। এই ঘটনা ৪ বৎসর পরে পূর্ণ হতে শুরু হয়েছিল . . . ৫৮৬ খ্রীষ্টপূর্বে। নবূখদ্্রিৎসর সোর নগরটি অবরোধ করলেন। সৈন্যদের দ্বারা নগর অবরোধ ও ধ্বংস করতে ১৩ বৎসর স্থায়ী ছিল, ৫৭৩ খ্রীষ্টপূর্বে সমুদ্রোপকূল নগরটি ধ্বংস হয়েছিল। কিন্তু তিনি দ্বীপ নগরটি দখল করতে পারেননি। পরবর্তী ২৪১ বৎসরব্যাপী সোরের দ্বীপনগর নির্বিঘেœ টিকে ছিল এবং যিহিষ্কেলের ভাববাণী অনুসারে এবং নগরটি সম্পূূর্ণ ধ্বংস হবার বিষয়টি নিয়ে নিঃসন্দেহে একটা উপহাসের পাত্র হয়েছিল।
খ।         কিন্তু ৩৩২ খ্রীষ্টপূর্ব বীর আলেকজান্ডার প্রকাশ্যে সেখানে উপস্থিত হন এবং দ্বীপ নগরটি ধ্বংস করলেন। আলেকজান্ডার পুরাতন নগরের ভগ্ন ধ্বংসস্তূপ জলে ফেলে সমুদ্র উপকূল হতে ঐ দ্বীপ পর্যন্ত একটি সেতু নির্মাণ করেন। এই কাজ করতে তিনি উপকূলের পরিত্যক্ত ধ্বংসস্তূপ সম্পূর্ণ পরিস্কার করে দিয়েছিলেন।
গ।         কয়েক বৎসর আগে এ্যাডোওয়ার্ড রবিনসন নামে আমেরিকান এক ভূতত্ত্ববিদ প্রাচীন সোর নগরের ঠিক উপকূলে পানির নীচে ৪০ থেকে ৫০টি মার্বেল পাথরের স্তম্ভ আবিষ্কার করেন। সৈন্য অবরোধের সাত মাস পর আলেকজা-ার দ্বীপ নগরটি দখল ও ধ্বংস করে ফেলেন। পরবর্তীকালে বেষ্টিত উপকূল এলাকা জুড়ে স্থানীয় জেলেরা তাদের মাছ ধরার জাল বিছিয়ে রাখত শুকানোর জন্য।
    ঘ।         সোর নগর পুনরায় আর নির্মিত হয়নি, তবুও সেখানে স্বচ্ছ জলের ঝর্ণার কথা জানা যায়, যার প্রবাহিত জলের পরিমাণ প্রতিদিন ১০,০০০ গ্যালন।
            এসব ঠিকই ছিল ঈশ^রের পূর্ব সংকেতেরই অনুরূপ।
পবিত্র বাইবেল নিজ বিশ্বস্ততায় তার সত্য প্রকাশ করে!
২।     যিরীহো নগর:
    যিহোশূরের পুস্তকে ৬ অধ্যায়ে আমরা যিরীহো নগর প্রাচীরের পতন ও পরবর্তীতে নগর বিনাশের বর্ণনা দেখি। এই নগরের পতনের পরপরই যিরীহো নগর সম্পর্কে যিহোশূহ তিন স্তরে আশ্চর্যজনক ভাববাণী করেন।
       

        দেখুন: যিহোশূয়ের পুস্তক ৬:২৬ পদ,
    “সেই সময়ে যিহোশূহ শপথ করিয়া লোকদিগকে কহিলেন, যে কেহ উঠিয়া এই যিরীহো নগর পত্তন করিবে, সে সদাপ্রভুর সাক্ষাতে শাপগ্রস্থ হউক; নগরের ভিত্তিমূল স্থাপনের দ-রূপে সে আপন জ্যেষ্ঠ পুত্রকে ও নগর-দ্বার সকল স্থাপনের দ-রূপে আপন কনিষ্ঠ পুত্রকে দিবে।”
        ক। ঐ যিরীহো নগর পুনরায় এক ব্যক্তির দ্বারা পুনস্থাপন হবে।
        খ। যখন নগরের কাজ আরম্ভ হবে, তখন নির্মাতার জ্যেষ্ঠ পুত্র মারা যাবে।
        ঘ। কাজ সম্পন্ন হতে হতেই নির্মাতার কনিষ্ঠ পুত্র মারা যাবে।
    যিহোশূয় ১৪৫০ খ্রীষ্টপূর্বের ঐ সময়কালে একথা ব্যক্ত করেন। এসব কি ঘটেছিল? পাঁচ শতাব্দীর কিছু পরে, ৯৩০ খ্রীষ্টপূূর্বে, নিচে দেখি যা আমাদের বলা হয়েছে।
        দেখুন: ১রাজাবলি ১৬:৩৪ পদ,
    “তাহার সময়ে বেথেলীয় হীয়েল যিরীহো নগর নির্মাণ করিল; তাহাতে সদাপ্রভু নূনের পুত্র যিহোশূয়ের দ্বারা যে বাক্য বলিয়াছিলেন, তদনুসারে তাহাকে ভিত্তিমূূল স্থাপনের দ-স্বরূপ আপন জ্যেষ্ঠ পুত্র অবীরামকে, এবং কবাট স্থাপনের দ-স্বরূপ আপন কনিষ্ঠ পুত্র সগূূবকে দিতে হইল”
    ক। বৈথল থেকে হীয়েল নামে এক ব্যক্তি যিরীহো নগর পুননির্মাণ করেন।
    খ। যখন তিনি ভিত্তি স্থাপন করেন সে সময় তার জ্যেষ্ঠ পুত্র অবীরাম মারা যায়।
    গ। যখন তিনি কবাট স্থাপন সম্পন্ন করেন, তখন তার কনিষ্ঠ পুত্র মারা যায়।
পবিত্র বাইবেল নিজ বিশ্বস্ততায় তার সত্য প্রকাশ করে!
৩।     নীনবী নগর:
    যোনার সময়কালে, ঈশ^র পাপেলিপ্ত দুষ্ট নীনবী নগর রক্ষার জন্য পাপ থেকে মনপরিবর্তনের মাধ্যমে সরাসরি শিক্ষাদানের জন্য এই ইব্রীয় ভাববাদী/নবি যোনাকে নিযুক্ত করেন (তার অপ্রীতিকর মৎস্য যাত্রার পরে)। কিন্তু নগরটি পুনরায় পাপের পথে চলে যায়। তজ্জন্য ৬৫০ খ্রীষ্টপূর্বে নহূম নামে আর এক ভাববাদী নীববীর সম্পূর্ণ ধ্বংস হওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তার ভাববাণী করার ঠিক সেই সময়ে নীনবী নগরের ১০০ ফুট উচ্চ প্রাচীর ও রথ উঁচুতে চলবার জন্য প্রাচীরের প্রশস্ত জায়গা সকলের দৃষ্টিগোচর হতো। এই নগরের পরিধি ৬০ মাইল ও ১২০০’র বেশি মজবুত ও সুন্দর কারুকাজের স্তম্ভ ছিল।
        দেখুন: নহূম ২:৭-১৩ পদ,
    “হাঁ, ইহা নিরূপিত; (নীববী) বিবস্ত্রা হইয়াছে, নীতা হইতেছে, ও তাহার দাসীগণ কপোতের ধ্বনির ন্যায় শোকধ্বনি করিতেছে, বক্ষঃস্থলে করাঘাত করিতেছে, নীববী তো জন্মবধি জলপূর্ণ পুষ্করিণীস্বরূপ, কিন্তু সকলে পলায়ন করিতেছে; দাঁড়াও, দাঁড়াও (বলিলেও) কেহ মুখ ফিরায় না। তোমরা রৌপ্য লুট কর, স্বর্ণ লুট কর; কেননা আয়োজিত সামগ্রীর শেষ নাই; সর্বপ্রকার রতেœর প্রতাপ আছে। সে শূন্য, শূন্যীকৃত ও উৎসন্ন; আর হৃদয় গলিত ও জানুতে জানুতে ঠেকাঠেকি হইল; আর সকলের কটিদেশে অঙ্গগ্রহ ও মানুষ্যমাত্রের মুখ কালিমাযুক্ত। কোথায় সেই সিংহগণের গর্ত, যুবাকেশরীদের সেই ভোজনস্থান, যে স্থানে সিংহ, সিংহী ও সিংহশাবক বিহার করিত, ভয় দেখাইবার কেহ ছিল না? সিংহ আপন শাবকদের জন্য যথেষ্ট পশু বিদীর্ণ করিত, আপন সিংহীদের জন্য অনেকের গলা চাপিয়া মারিত, আপন গুহা সকল হৃত পশুতে, ও গহ্বর সকল বির্দীর্ণ পশুতে পরিপূর্ণ করিত। দেখ, আমি তোমার বিপক্ষ, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন আমি তোমার রথ-সমুহ দগ্ধ করিয়া ধূমে লীন করিব এবং খড়গ তোমার যুবাকেশরীদিগকে গ্রাস করিবে; হাঁ আমি পৃথিবী হইতে তোমার লুট দ্রব্য উচ্ছিন্ন করিব; এবং তোমার দূতগণের রব আর শুনা যাইবে না।”
    কিন্তু তবুও নহূমের ভবিষ্যদ্বাণীর ৪০ বৎসর না যেতেই নিপুণ শিল্প কৌশলে নির্মিত নগরের সব পতন ঘটে। দুই মাস সৈন্য অবরোধের পর, ৬১২ খ্রীষ্টপূর্ব আগষ্ট মাসের দিকে মাদীয় বংশজাত ও ব্যবিলনবাসীরা নগরের প্রাচীর ভাঙে। ভিতরের শত্রুদের দ্বারা নগরের জল সরবরাহ ছেড়ে দেবার দরুন জয়ের এক উপযুক্ত কারণ ছিল। সম্পূর্ণ ধ্বংস এমনভাবেই হয়েছিল যে, বীর আলেকজা-ার তার সৈন্যদের উৎসন্ন ভূমির উপর দিয়ে পরিচালিত করলেন, যেখানে এক সময় বিশাল বড় বড় অট্টালিকা ছিল আর এখন দেখলে মনে হবে না যে, সেখানে একটি নগর গড়ে উঠেছিল।
পবিত্র বাইবেল নিজ বিশ্বস্ততায় তার সত্য প্রকাশ করে!
৪।     যিরূশালেম নগর:
    দেখুন:  মথি ২৪:১-২ পদ,
    “পরে যীশু ধর্মধাম হইতে বাহির হইয়া গমন করিতেছেন, এমন সময়ে তাঁহার শিষ্যেরা তাঁহাকে ধর্মধামের গাঁথনি সকল দেখাইবার জন্য নিকটে আসিলেন। কিন্তু তিনি উত্তর করিয়া তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরা কি এই সকল দেখিতেছ না? আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, এই স্থানের একখানি পাথর অন্য পাথরের উপরে থাকিবে না, সমস্তই ভূমিসাৎ হইবে।”
    এই দুর্দশার কথা যীশু নিজে কোনো অংশেই কম বলেননি। তিনি পূর্বসংকেত করেছিলেন যে, যিরূশালেম ধ্বংস হবে। সেখানকার নিবাসীদের হত্যা করা হবে এবং মন্দির সম্পূর্ণভাবে চূর্ণ হবে, একটি পাথর আরেকটি পাথরের উপর থাকবে না।
    ঘটনাটি হুবহু ঘটেছিল ৪০ বৎসর পূর্ণ হবার কিছু আগে। ৭০ খ্রীষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে রোমীয় সেনাপতি টাইটাস তার সঙ্গে ৮০,০০০ লোক দিয়ে যিরূশালেম নগরের চতুর্দিক ঘিরে ফেলেন, পাঁচ বৎসরের কিছু আগে এক বিদ্রোহে ধ্বংস করা শুরু হয়েছিল। ঐ একই বৎসরে এপ্রিল মাসে তিনি নগর অবরোধ করতে স্থিরসংকল্প করলেন আর পারিপার্শ্বিক অবস্থা দ্রুত এমনই হয়েছিল যে, চারিদিকে কান্নাকাটি ও চিৎকার শুরু হলো। মহিলারা তাদের নিজ নিজ শিশুসন্তানদের খেতে শুরু করল। আর পুরুষেরা তাদের জীবন বাঁচাতে পশুপাখীর মল খাবারের জন্য একে অন্যের সঙ্গে মারামারি শুরু করল। অবশেষে ঐ বৎসর সেপ্টেম্বর মাসে প্রাচীর ভূপাতিত হলো আর তখন নরহত্যা শুরু হয়ে গেল। যখন ধ্বংসপ্রাপ্ত ধুমায়িত নগর পরিষ্কার হলো, দেখা গেল যে, চারিদিকে পাঁচ লক্ষেরও বেশি নিহত যিহূদীদের লাশ পড়ে আছে। অনেক অগণিত লোকদের টাইটাসের দ্বারা ক্রুশে মারা হয়েছিল। পরিশেষে মন্দিরটি ভূমিস্মাৎ করা হয়েছিল ও স্বর্ণে খচিত সমস্ত পাথর থেকে স্বর্ণ খুলে নেওয়া হয়েছিল, আর ভূমি চাষ করা হয়েছিল, ঠিক যেমন আমাদের প্রভু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।
পবিত্র বাইবেল নিজ বিশ্বস্ততায় তার সত্য প্রকাশ করে!
৫।     যোশিয় :
    ১রাজাবলি ১৩:১-২ পদে দুষ্ট ও নীতিহীন যারবিয়াম নামে এক ই¯্রায়েলীয় রাজার নাম উল্লেখ আছে এবং যার ঘটনা আমাদের সকলকে দুশ্চিস্তাগ্রস্ত করে।
    দেখুন: ১রাজাবলি ১৩:১-২ পদ,
    “আর দেখ, ঈশ^রের একটি মানুষ সদাপ্রভুর বাক্যের যিহূদা হইতে বৈথেলে উপস্থিত হইলেন; আর যারবিয়াম ধূপদাহের জন্য বেদির কাছে দাঁড়াইয়া ছিলেন। আর সেই ব্যক্তি বেদির বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর বাক্যের দ্বারা এই কথা ঘোষণা করিলেন, হে বেদি, হে বেদি, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, দায়ূদ-কুলে যোশিয় নামে একটি বালকের জন্ম হইবে; উচ্চস্থলীসমূহের যে যাজকেরা তোমার উপরে ধূপদাহ করে, তাহাদিগকে তিনি তোমার উপরে বলিদান করিবেন, ও তোমার উপর মনুষ্যের অস্থি দগ্ধ করা যাইবে। 
    এই ভবিষ্যদ্ববাণী ৯৭৫ খ্রীষ্টপূর্বে করা হয়েছিল, ৩৫০ বৎসর অতীতের কিছু পরে, ৬২৪ খ্রীষ্টপূর্বে, ২রাজাবলি ২৩ অধ্যায়ে ই¯্রায়েলের নতুন বাজার কাজের কথা আমাদের বলে।
    দেখুন: ২রাজাবলি ২৩:১৫-১৬ পদ,
    “অধিকন্তু বৈথেলে যে যজ্ঞবেদি ছিল এবং নবাটের পুত্র যারবিয়াম, যিনি ই¯্রায়েলকে পাপ করাইয়াছিলেন, তিনি যে উচ্চস্থলীও নির্মাণ করেন, যোশিয় সেই যজ্ঞবেদী ও সেই উচ্চস্থলীও ভাঙ্গিয়া ফেলিলেন, আর সেই উচ্চস্থলী আগুনে পোড়াইয়া দিলেন, ও পিষিয়া গুঁড়া করিলেন, আর আশেরা পোড়াইয়া দিলেন। আর যোশিয় মুখ ফিরাইয়া তথাকার পর্Ÿতস্থ কবর সকল দেখিলেন, আর লোক পাঠাইয়া সেই সকল কবর হইতে অস্থি আনাইলেন, এবং ঈশ^রের যে লোক পূর্Ÿে এই সকল ঘটনা প্রচার করিয়াছিলেন, তাঁহার প্রচারিত সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে সেই যজ্ঞবেদির উপরে সেই সকল অস্থি পোড়াইয়া বেদি অশুচি করিলেন।”
পবিত্র বাইবেলে নিজ বিশ্বস্ততায় তার সত্য প্রকাশ করে!
৬।     কোরস
    সম্ভবত যিশাইয় ছিলেন পুরাতন নিয়মের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাববাদী বা নবি। ৬২ বৎসরের মতো এই বাকপটু ঈশ^রভক্ত ব্যক্তি প্রচার করেছেন ও লিখেছেনও। যদিও-বা তাঁর প্রচারকাল যিরূশালেমই স্থির ছিল। যিশাইয় যিরূশালেমের বন্দিদশা এবং উত্তরকালে পুনরুদ্ধারের ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার পূর্বসংকেত করেছিলেন। (যেমন যিরমিয় করেছিলেন, দেখুন, যিরমিয় ২৫:১২; ২৯:১০ পদ)
    দেখুন: যিশাইয় ৪৪:২৮ পদ,
    “তিনি কোরসের উদ্দেশ্যে কহেন, আমার পালরক্ষক, সে আমার সমস্ত মনোরথ সিদ্ধ করিবে। তিনি যিরূশালেমের বিষয়ে বলেন, সে পুননির্মিত হইবে, এবং মন্দিরকে বলেন, তোমার ভিত্তিমূল স্থাপিত হইবে।”
    যিশাইয় এই কথাগুলো ৭১২ খ্রীষ্টপূর্ব ঐ সময়কালে লিখেছিলেন। খ্রীষ্টপূর্ব ৬০৬ বাবিলনের রাজা নবূখদ্নিৎসর যিরূশালেম দখল করেন এবং অনেক যিহূদীদের বন্দি (দেখুন গীতসংহিতা ১৩৭ অধ্যায়ে) করে তার রাজধানীতে নিয়ে যান। দীর্ঘ ৭০ বৎসর তারা সেখানে বন্দি জীবনযাপন করে। অবশ্য এসব পূর্বসংকেত যিরমিয়ের দ্বারাই হয়েছিল। (দেখুন: যিরমিয় ২৫:১২; ২৯:১০ পদ) তারপর ৫৩৬ খ্রীষ্টপূর্বে এক অলৌকিক ঘটনা ঘটে।
    দেখুন: ইষ্রা ১:১-২ পদ,
    “পারস্য-রাজ কোরসের প্রথম বৎসরে যিরমিয়ের দ্বারা কথিত সদাপ্রভুর বাক্যসিদ্ধির জন্য সদাপ্রভু “পারস্য-রাজ কোরসের মনে প্রবৃত্তি দিলেন, তাই তিনি আপনার রাজ্যের সর্Ÿত্র ঘোষণা দ্বারা এবং লিখিত বিজ্ঞাপন দ্বারা এই আজ্ঞা প্রচার করিলেন, “পারস্য-রাজ কোরস এই কথা কহেন, স্বর্গের ঈশ^র সদাপ্রভু পৃথিবীর সমস্ত রাজ্য আমাকে দান করিয়াছেন, আর তিনি যিহূদা দেশস্থ যিরূশালেমে তাঁহার জন্য এক গৃহ নির্মাণ করিবার ভার আমাকে দিয়াছেন।”
    সুতরাং যিশাইয় সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, কোরস যিহূদীদের ফিরে যেতে দেবে এবং যিরূশালেমে তাদের মন্দির পুনঃনির্মিত করার অনুমতি দেবে এই ঘটনা সংঘটিত হবার ১৭৬ বৎসর পূর্বে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল।
পবিত্র বাইবেল নিজ বিশ্বস্ততায় তার সত্য প্রকাশ করে!


৭।     যোহন বাপ্তিস্মদাতা
    যিশাইয় ভাববাদী সঠিকভাবে, সাতশত বছর পূর্বেই যোহন বাপ্তাইজকের ভবিষ্যৎ প্রচারের বিষয় বর্ণনা দেন যে, যোহন বাপ্তাইজক পশুর চর্ম পরিধান করবে, পঙ্গপাল আর বনমধু খাবে ও প্রান্তরে সদাপ্রভুর পথ প্রস্তুত করবে।
    দেখুন: যিশাইয় ৪০: ৩-৫ পদ,
    “এক জনের রব, সে ঘোষণা করিতেছে, তোমরা মরু প্রান্তরে সদাপ্রভুর পথ প্রস্তুত কর, মরুভূমিতে আমাদের ঈশ^রের জন্য রাজপথ সরল কর। প্রত্যেক উপত্যকা উচ্চীকৃত হইবে, প্রত্যেক পর্বত ও উপপর্বত নিম্ন করা যাইবে; বক্র স্থান সরল হইবে; উচ্চনীচ ভূমি সমস্থলী হইবে; আর সদাপ্রভুর প্রতাপ প্রকাশ পাইবে, আর সমস্ত মর্ত্য (মনুষ্যলোক) একসঙ্গে তাহা দেখিবে, কারণ সদাপ্রভুর মুখ ইহা বলিয়াছে।”
    দেখুন: মথি ৩:১-৩ পদ,
    “সেই সময়ে যোহন বাপ্তাইজক উপস্থিত হইয়া যিহূদিয়ার প্রান্তরে প্রচার করিতে লাগিলেন; তিনি বলিলেন, ‘মন ফিরাও, কেননা স্বর্গ-রাজ্য সন্নিকট হইল।’ ইনিই সেই ব্যক্তি, যাঁহার বিষয়ে যিশাইয় ভাববাদী দ্বারা এই কথা কথিত হইয়াছিল “প্রান্তরে এক জনের রব, সে ঘোষণা করিতেছে, তোমরা প্রভুর পথ প্রস্তুত কর, তাঁহার রাজপথ সকল সরল কর।” 
পবিত্র বাইবেল নিজ বিশ্বস্ততায় তার সত্য প্রকাশ করে!
    আমরা লক্ষ্য করব যে, আরো অগণিত ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে। পূর্বঘোষিত মুক্তিদাতার পার্থিব পরিচর্যার কার্যের বিষয়ে পুরাতন নিয়মে প্রধানত ৩৭টির মতো ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে। যীশু খ্রীষ্টের এই জগতে আর্বিভাবেই সমস্ত ভাববাণী হুবহু পূর্ণ হয়েছিল! পরবর্তী পাঠে এ-বিষযে জানব।
    এই জগৎ সম্পর্কে ভাববাণী পূর্ণ হতে পবিত্র বাইবেল সম্পূর্ণ নির্ভুল, তাই অবশ্যই আমাদের ঈশ^রের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে অনন্তকালীন তাঁর শিক্ষা ও আদেশ অনুসরণ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
    আপনার জীবনে ঈশ^রের যেমন দৃষ্টি রয়েছে ঠিক তেমনি আপনার অনন্তকালীন অবস্থা স্থির হবে। প্রতিটি মানুষকেই একদিন ঈশ^রের সম্মুখে বিচারের জন্য দাঁড়াতে হবে।
    দেখুন: রোমীয় ১৪:১১-১২ পদ,
        “কারণ তাহা লেখা আছে, Ñ সেই প্রভু বলিতেছেন, যেহেতু আমি জীবন্ত, আমার সম্মুখে প্রত্যেক হাঁটু নত হইবে, আর প্রত্যেক জিহ্বা ঈশ^রকে স্বীকার করিবে। সুতরাং আমাদের প্রত্যেকজনকে ঈশ^রের কাছে নিজের নিজের হিসাব দিতে হইবে।”
    ঈশ^র আমাদের বলেছেন যে তিনি অত্যন্ত সততার মাধ্যমে আমাদের বিচার করবেন। আমাদের এই বর্তমানকালে কোর্টে যেমন সীমিত অভিযোগ দিয়ে বিচার করা হয়ে থাকে, ঈশ^র আমাদের বিচার কিন্তু তেমনি করবেন না, যখন তিনি মনুষ্যজাতির বিচার করবেন তখন তিনি এক চূড়ান্ত ও সম্পূর্ণ বিবেচনায় এ বিচার করবেন।
    দেখুন: রোমীয় ২:২ পদ,
    “আর আমরা জানি, যাহারা এইরূপ আচরণ করে, তাহাদের বিরুদ্ধে ঈশ^রের বিচার সত্যের অনুযায়ী।”
    যদি আমরা অনুসন্ধান করতে পারতাম যে ঈশ^র কী এবং কোন্ বিচারের মানদ-ে আমাদের বিচার করবেন, তাহলে আমরা বিচারের দিনের জন্য প্রস্তুত হতে পারতাম। ঈশ^র আমাদের জন্য পবিত্র বাইবেলে তাঁর সত্য অভিমত সবকিছুই লিপিবদ্ধ দিয়েছেন।
    দেখুন: যোহন ১৭:১৭ পদ,
    “তাহাদিগকে সত্যে পবিত্র কর; তোমার বাক্যই সত্যস্বরূপ।”
    আপনার ও ঈশ^রের সঙ্গে কি এমন অকৃত্রিম বিশুদ্ধ যোগাযোগ রয়েছে যে ঈশ^রের দয়ার প্রভাব আপনার জীবন পরিবর্তন করে? প্রশ্নটি অত্যন্ত জরুরী Ñ এবং অনবরত বাইবেল পাঠ করে আপনি আপনার নিজের জীবনের বিচার করতে পারবেন। কেবল পবিত্র বাইবেলের অভ্যন্তরে রক্ষণীয় সেই অজানা বিষয় থেকে সুস্পষ্টভাবে ঈশ^রের ঘনিষ্ঠ হওয়া যায়। পৃথিবীতে অন্যান্য পুস্তক থেকে পবিত্র বাইবেলের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত বেশি। পবিত্র বাইবেল আমাদের সঠিক বিধি ও আদর্শের বর্ণনা দেয় যার দ্বারা আমাদের বিচার করা হবে।
আমাদের পরবর্তী আলোচনা পাঠে আমরা দেখব যে, ঈশ^র মনুষ্যজাতির প্রতি দৃষ্টি দিয়ে কি বিবেচনা করেন।






















প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখুন
২য় পাঠ
১।       পুরাতন নিয়মে ঈশ^র মানুষদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলেছিলেন?

                


        


২।     পবিত্র বাইবেল সম্পূর্ণ সম্পাদন হওয়াতে, আমাদের কাছে কি আরো কিছু প্রকাশ করা ঈশ^রের প্রয়োজন
    আছে?

                


        


৩।     ভাববাদী সম্পর্কে সত্য নির্ধারণে দ্বিতীয় বিবরণ ১৮ অধ্যায়ে আমাদের কী বলে?

                


        




৪।      সোর নগরী সম্পর্কে যিহিষ্কেল ২৬ অধ্যায়ে কী চারটি বিষয় আমাদের বলে?

ক।                                      
   
খ।

গ।

ঘ।



৫।    যিহিষ্কেল ২৬ অধ্যায়ে কথিত বিষয় কি সোর নগরীর ভাগ্যে সত্য সত্যই ঘটেছিল?

                
৬।    পুরাতন নিয়মের কোন্ ভাববাদী/নবি নীনবী শহরে মন-পরিবর্তনের বাণী প্রচার করেছিলেন?

                
৭।    যীশুর ভবিষ্যদ্বাণীর কত পরে যিরূশালেম সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়েছিল?

                
৮।    যিশাইয় কার বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে, সে পশুর চর্ম পরে মরুভূমিতে ঘুরে বেড়াবে এবং পঙ্গপাল, বনমধু খাবে আর মাবুদের পথ প্রস্তুত করবে?

                
৯।    ঈশ^রের সম্মুখে আমাদের ভবিষ্যৎ বিচার সম্পর্কে রোমীয় ১৪:১১-১২ পদে কী বক্তব্য রাখে?

                


        

১০।     বিচার দিনে ঈশ^র তার কী মানদ- ব্যবহার করবেন?

                












৩য় পাঠ
সৃষ্টি এবং মানবজাতির পতন
১ম এবং ২য় পাঠে পবিত্র বাইবেলের নির্ভরযোগ্য সত্যতা প্রমাণ করার পর আমরা বুঝতে পেরেছি যে, ঈশ^র একদিন পবিত্র বাইবেলের সত্যতার দ্বারা আমাদের বিচার করবেন। আর এখন আমরা ঈশ^রের সৃষ্টির বিষয় আলোচনা করব।
আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন যে কীভাবে পৃথিবী, সূর্য, চন্দ্র, এবং তারকারাজি সৃষ্টি হয়েছে? হ্যাঁ, এগুলো ঈশ^র সৃষ্টি করেছেন। এগুলো আপনা আপনি সৃষ্টি হয়নি। পবিত্র বাইবেলের সর্বপ্রথম পদটি বলে,
দেখুন, আদিপুস্তক ১:১ পদ,
“আদিতে ঈশ^র আকাশম-ল ও পৃথিবীর সৃষ্টি করিলেন”
এই পদটি বলে যে, ঈশ^র মহান স্রষ্টা, তিনিই যিনি আকাশম-ল ও পৃথিবীর সৃষ্টি করেছেন। এই আলোচনার মধ্যে আমরা দেখতে পাবো ঈশ^রের নিখুঁত সৃষ্টিতে কী হয়েছিল।
সৃষ্টিপর্ব
ক।     ঈশ^র স্বর্গ এবং পৃথিবীর সৃষ্টি করলেন।
    পবিত্র বাইবেল আমাদের বলে যে, ঈশ^র আকাশম-ল এবং পৃথিবীর সৃষ্টি করেছেন। এগুলো আকস্মিকভাবে অথবা ভুলবশত এসে পড়েনি।
          দেখুন, গীতসংহিতা ৩৩:৬,৯ পদ,
        ৬ষ্ঠ পদ, “স্বর্গ নির্মিত হইল সদাপ্রভুর বাক্যে, তাহার সমস্ত বাহিনী তাঁহার মুখের শ্বাসে।”
    ঈশ^র মুখে উচ্চারণ করলেন, আর সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র ও পৃথিবীর উৎপত্তি হলো।
৯ম পদ, “তিনি কথা কহিলেন, আর উৎপত্তি হইল, তিনি আজ্ঞা করিলেন আর স্থিতি (প্রতিষ্ঠিত) হইল”
ঈশ^র শুধু সবকিছু সৃষ্টিই করেননি, কিন্তু তিনি তাঁর ক্ষমতায় সবকিছু নিয়ন্ত্রণও করেন।
আমরা কীভাবে এসব জানতে পারি? ঈশ^রের বাক্য থেকেই এসব জানতে পারি এবং বিশ্বাস করি পবিত্র বাইবেল ঈশ^রের বাক্য! তা সত্ত্বেও পবিত্র বাইবেল হলো সমস্ত বস্তুর সূত্রপাতের একমাত্র প্রত্যক্ষ সাক্ষী!
দেখুন, যিশাইয়া ৪৫:১২ পদ,
    ঈশ^র তাঁর পবিত্র বাক্য বাইবেলে বলেন,“ আমি পৃথিবী নির্মাণ করিয়াছি, আর তাহার উপরে মানুষের সৃষ্টি করিয়াছি; আমি নিজ হাতে আকাশম-ল বিস্তীর্ণ করিয়াছি, এবং আকাশের সমস্ত বাহিনীকে আজ্ঞা দিয়া আসিতেছি।”
যেহেতু ঈশ^র সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা তাই তিনি তাঁর সৃষ্টির থেকে সম্মান ও সমাদর পেতে আশা করেন।
    দেখুন, প্রকাশিত বাক্য ৪:১১ পদ,
“হে প্রভু, তুমিই প্রতাব ও সমাদর ও পরাক্রম গ্রহণের যোগ্য; কেননা তুমিই সকলের সৃষ্টি করিয়াছ, এবং তোমার ইচ্ছাহেতু সকলই অস্তিত্বপ্রাপ্ত ও সৃষ্ট হইয়াছে।”
খ।     ঈশ^রের অতীব আশ্চর্য সৃষ্টি।
১।  ঈশ^রের অতীব আশ্চর্য সৃষ্টি কী?  Ñ তা হলো ‘মানুষ!’
২।  এটি কেন সত্য?
দেখুন, আদিপুস্তক ১:২৬ পদ,
এটি সত্য কারণ “খোদা কহিলেন, আমরা আমাদের প্রতিমূর্তিতে, আমাদের সাদৃশ্য অনুসারে মানুষ্য নির্মাণ করি।” ঈশ^র তাঁর মত করে এবং তাঁর সংগে মিল রেখে মানুষ তৈরি করলেন।
ঈশ^র তাঁর গৌরবার্থে ও তাঁর প্রশংসা করার জন্য মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন যেন মানুষ তাঁর সাদৃশ্যে এবং তাঁর প্রতিমূর্তিতে অর্থাৎ ছুরতে সৃষ্টি হয়। পবিত্র বাইবেলে উল্লেখ নেই যে, অন্য আর কোনো জীবকে ঈশ^রের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করা হয়েছিল। এই সত্য শুধুমাত্র মানুষ সৃষ্টিতে।
দেখুন, আদিপুস্তক ১:২৭ পদ,
“পরে ঈশ^র নিজের প্রতিমূর্তিতে মানুষ্য সৃষ্টি করিলেন, ঈশ^র তাঁহার প্রতিমূর্তিতে তাহাকে সৃষ্টি করিলেন; পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তিনি তাহাদিগকে সৃষ্টি করিলেন।” ঈশ^র তাঁর মত করেই মানুষ সৃষ্টি করলেন।
ঈশ^রের কি দৃশ্যমান কোনো শারীরিক আকৃতি আছে?
দেখুন, যোহন ৪:২৪ পদ, 
“ঈশ^র আত্মা”
আত্মারূপে ঈশ^রের কোনো দৈহিক গঠন নেই। কখনো কখনো আমরা পবিত্র বাইবেলে ঈশ^রের অলঙ্কারিক ব্যাখ্যা বা বর্ণনা পাই। যেমন Ñ “তাঁহার হস্ত এমন খাটো নয়।” এখানে ঈশ^রের কর্মকা- এবং আমাদের জন্য যে ঈশ^র চিন্তা করেন তা বুঝতে আমাদের সাহায্য করে, কিন্তু এটি তাঁর দৈহিক কোনো আক্ষরিক (হুবহু) বর্ণনায় নয়।
ঈশ^রের যদি প্রকৃতপক্ষে কোনো দৈহিক আবরণ না থেকে থাকে তাহলে, মানুষ অবশ্যই অন্য কোনো উপায়ে তাঁরই মতো। মানুষ কীভাবে ঈশ^রের মতো? মানুষের এক আত্মিক ব্যক্তিত্ব রয়েছে।
ক।     মানুষের মন বা অন্তঃকরণ রয়েছে।
১।         যেহেতু ঈশ^রের একটি মন আছে, তেমনি তিনি পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির এক পরিকল্পনা করলেন, যার একটি মন থাকবে, যার দ্বারা সে ঈশ^রকে জানতে, তাঁর ন্যায় চিন্তা করতে পারবে এবং তাঁর ন্যায় সিদ্ধান্তে উপনীত হবার ক্ষমতা তার থাকবে।
২।     ঈশ^র মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইলেন এবং চাইলেন যেন মানুষও আত্মসচেতন হয়ে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে পারে।
৩।     ঈশ^র মানুষকে একটি মন দিলেন, যেন তিনি মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারেন, মানুষের সঙ্গে সঙ্গ দিয়ে উপভোগ করতে পারেন, আর মানুষকে শিক্ষা দিতে চাইলেন যেন মানুষ এই জগতে ঈশ^রের কাজ করতে পারে।
খ।     মানুষের অনুভূতি রয়েছে।
১।     ঈশ^রের একটি মন রয়েছে এবং তাঁর অনুভূতিও আছে।
২।     ঈশ^র প্রেম করেন অর্থাৎ ভালোবাসেন, (পাপ) ঘৃণা করেন, দুঃখ অনুভব এবং আনন্দ এবং সুখ উপভোগ করেন।
৩।     ঈশ^রের অনুভূতি রয়েছে, তাই ঈশ^র মানুষকে অনুভূতি দিয়ে সৃষ্টি করলেন।
৪।     ঈশ^র মানুষকে প্রেম করেন, কিন্তু ঈশ^র চাইলেন যেন মানুষও তাঁকে প্রেম করতে সক্ষম হয়।
৫।     এ কারণেই ঈশ^র মানুষকে আবেগ, অনুভূতি এবং সজ্ঞান ভালোবাসাবোধ দিয়ে সৃষ্টি করলেন।

গ।     মানুষের ইচ্ছাশক্তি রয়েছে।
১।     একটি মন এবং আবেগ ছাড়াও ঈশ^রের এক ইচ্ছাশক্তি রয়েছে।
২।    ঈশ^রের কিছু করা বা না করার সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা রয়েছে।
৩।     ঈশ^র মানুষকে আপন আপন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ইচ্ছাশক্তি দিয়ে সৃষ্টি করলেন।
৪।    ঈশ^র মানুষকে নিজের পছন্দ বা মনোনয়নের ক্ষমতা না দিয়েও সৃষ্টি করতে পারতেন। তাহলে মানুষকে ঈশ^রের হুকুম সরাসরি পালন করার উপযোগী করে সুতায় চালিত পুতুলের মতন করে সৃষ্টি করতে পারতেন।
৫।    তৎসত্ত্বেও, ঈশ^র মানুষকে এমনভাবে সৃষ্টি করলেন, যেন সে ঈশ^রকে প্রেম করতে এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হতে নিজের ইচ্ছায় বাধ্য হয়।
দেখুন, যোহন ৩:১৬ পদ,
“কারণ ঈশ^র জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, নিজের একজাত পুত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ^াস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।”
দেখুন, রোমীয় ১০:১৩ পদ,
“যে কেহ প্রভুর নামে ডাকে, সে পরিত্রাণ পাইবে।”
ঈশ^র সর্বপ্রথম মানুষটিকে কী দিয়ে সৃষ্টি করলেন?
দেখুন, আদিপুস্তক ২:৭ পদ,
“আর সদাপ্রভু ঈশ^র মাটির ধূলিতে আদমকে (অর্থাৎ মানুষকে) তৈরি করিলেন ও তাঁহার নাসিকায় ফুঁ দিয়া প্রাণবায়ু প্রবেশ করাইলেন, তাহাতে মানুষ সজীব প্রাণী হইল।”
সর্বপ্রথম মানুষটির নাম দেওয়া হয়েছিল আদম। ঈশ^র আদমের জন্য এক স্ত্রী তৈরি করলেন। তার নাম কী ছিল?
দেখুন, আদিপুস্তক ৩:২০ পদ, 
“পরে আদম আপন স্ত্রীর নাম হবা (জীবিত) রাখিলেন, কেননা তিনি জীবিত সকলের মাতা হইলেন।”
মানুষ কোনো ক্ষুদ্র ইতর জীবজন্তু থেকে বিকশিত হয়নি। ঈশ^রই তাকে সৃষ্টি করেছেন। ঈশ^র মানুষকে সকল জীবজন্তু থেকে স্বতন্ত্রভাবে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের একটি প্রাণ রয়েছে যা চিরকাল বেঁচে থাকবে, আর একটি আত্মাও রয়েছে।
আত্মা কী? আত্মা মানুষেরই একটি অংশ যা ঈশ^রকে জানতে পারে এবং তাঁর অস্তিত্ব পেতে পারে। ঈশ^র চাইলেন যেন মানুষের পক্ষে তাঁকে জানা সম্ভব হয়; তাঁর আরাধনা এবং তাঁর জীবন লাভ করতে পারে। মানুষকে এমনভাবে সৃষ্টি করা হয়েছিল যেন ঈশ^র তাদের মধ্যে বসবাস করতে পারেন। ঈশ^র আত্মা, এ কারণে মানুষের মধ্যে একটি আত্মা রয়েছে, তাই ঈশ^রের আত্মা মানুষের সঙ্গে বাস করতে পারেন।
গ।     সৃষ্টজীব Ñ স্রষ্টা সম্পর্ক।
    যখন ঈশ^র মানুষ সৃষ্টি করেন, তিনি তার মধ্যে একটি গভীর আকাক্সক্ষা স্থাপন করলেন অনুভব করতে যে, তার নিজের কোনো কিছুতে মূল্য রয়েছে, প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। মানুষের বেঁচে থাকার একটা কারণ থাকবে, জীবনের একটি উদ্দেশ্য থাকবে। মানুষ কারো ভালোবাসা চায় যিনি তার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ইচ্ছা পূরণ ব্যতিরেকে মানুষ নিজেকে উদ্দেশ্যহীন এবং অকেজো বলে মনে করে।
    কীভাবে এই চাহিদার অভাব পূরণ হয়েছিল? ঈশ^রের দ্বারাই এসবের পূরণ হয়েছিল। শুরুতে স্রষ্টার সঙ্গে মানুষের চমৎকার সহভাগিতা ছিল। সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে মানুষের এই সুসম্পর্কের জন্য নিজের অন্তরের চাহিদা মিটাতে সক্ষম হতো। সে ছিল সুখী ও সন্তুষ্ট।
    আসুন আমরা স্রষ্টা ঈশ^র এবং তাঁর সৃষ্ট মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে একটু চিন্তা করি। মানুষ ছিল ঈশ^রের সৃষ্টি; সুতরাং ঈশ^রের সঙ্গে তাদের একটি বিশেষ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
    স্রষ্টার প্রতি মানুষের দায়িত্ব কী? মানুষের কি তার স্রষ্টাকে প্রেম করা উচিত? হ্যাঁ, উচিত। মানুষ কি তার স্রষ্টার আরাধনা করবে? হ্যাঁ, অবশ্যই। সে কি তার মহান স্রষ্টার আদেশ পালন করবে? হ্যাঁ, নিশ্চয়।
    মানুষ তার স্রষ্টাকে প্রেম করবে, তাঁর আরাধনা করবে ও তাঁর আদেশ পালন করবে। মানুষ যখন তার স্রষ্টাকে প্রেম, তাঁর আরাধনা ও তাঁর আদেশ পালন করে, তখন স্রষ্টার সঙ্গে তার সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয়। এজন্যই তো আমরা সৃষ্ট হয়েছিলাম, আর আদিতে আদম ও হবাও তদ্রƒপ করতেন। ঈশ^র আদম ও হবাকে এদন নামে একটি চমৎকার উদ্যানে রাখলেন। বিশেষ করে, ঈশ^র তাদের জন্য ঐ উদ্যানটি প্রস্তুত করেছিলেন। সেখানে আদম ও হবার প্রয়োজনীয় সবকিছুই ছিল। গাছগুলো সুস্বাদু খাদ্য সামগ্রীতে পরিপূর্ণ ছিল। একটি জ্বলজ্বলে স্বচ্ছ নির্মল জলের নদীও ছিল যা উদ্যানের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়েছিল। সবচেয়ে বড় কথা হলো ঈশ^রের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক ছিল। প্রতিদিন সন্ধ্যায় ঈশ^র তাদের সঙ্গে চলতে ও কথা বলতে আসতেন। আদম ও হবা ছিল অত্যন্ত সুখী। কিন্তু একদিন একটা কিছু ঘটে গেল, যা সবকিছু বদলে দিল। পৃথিবীতে পাপ প্রবেশ করল! পাঠ করুন : আদিপুস্তক ২:৮-১৬ পদ।
পৃথিবীতে কীভাবে পাপ প্রবেশ করল!
ঈশ^র পৃথিবীর সবকিছু অতি উত্তম এবং সুন্দর করে সৃষ্টি করেছিলেন, কিন্তু এখন দেখা যায়, অনেক কিছুই সুন্দর নয় ও ভালো নয়। রোগ ব্যাধি এবং মৃত্যু রয়েছে। ঘৃণা ও দ্ব›দ্ধ চলছে। স্বার্থপর, দুষ্ট লোক রয়েছে। পাপ ঈশ^রের মনোরম পৃথিবীটাকে দূষিত ও নষ্ট করে দিয়েছে।
কীভাবে পৃথিবীতে পাপ প্রবেশ করল? কীভাবে পাপ মানুষের অন্তরে প্রবেশ করল? পবিত্র বাইবেল এসব প্রশ্নের উত্তরে আমাদের বলে দেয়।
ক।     দূতগণের বিদ্রোহ।
    যখন ঈশ^র দূতগণকে সৃষ্টি করেছিলেন, তখন একজন দূতকে অন্যান্য সব দূতগণের উপরে উচ্চ স্থানে স্থান দিলেন। তার নাম কী ছিল?
    দেখুন, যিশাইয় ১৪:১২ পদ,
    “হে লুসিফর! ভোরের সন্তান (ঊষা-নন্দন)! তুমি ত স্বর্গ হইতে পতিত হইয়াছ! হে জাতিগণের নিপাতনকারী, তুমি ছিন্ন ও ভূপাতিত হইয়াছ!”  সেই শয়তান লুসিফর ছাড়া কেউ নয়!
১।     দেখা যায়, সৃষ্টির পর কিছুকাল পর্যন্ত এই ক্ষমতাশালী দূত ঈশ^রকে প্রেম করতেন ও তাঁর আদেশ পালন করতেন নিখুঁতভাবে, কিন্তু এমন সময় এলো, যখন সে ঈশ^রের বিরোধিতা করতে মনস্থির করল।
২।     লুসিফর ছিল দেখতে অত্যন্ত সুন্দর এবং ক্ষমতাশালী, এ কারণে তার অন্তঃকরণ ছিল অত্যন্ত গর্বিত। সে স্থির করল তার ঈশ^র হওয়া উচিত, তার অন্তরের ইচ্ছাই ঈশ^রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল। লক্ষ্য করুন তার অন্তরে কী চিন্তা ছিল।
    দেখুন, যিশাইয় ১৪:১৩,১৪ পদ,
        “তুমি মনে মনে বলিয়াছিল, ‘আমি স্বর্গে উঠিব, ঈশ^রের নক্ষত্রগণের ঊর্দ্ধে (উপরে) আমার সিংহাসন উন্নত করিব; সমাগম-পর্ব্বতে, উত্তরদিকের প্রান্তে, উপবিষ্ট হইব; আমি মেঘরূপ উচ্চস্থানের উপরে উঠিব, আমি ঈশ^রের (অতি মহতের) তুল্য হইব।”
        পাঁচ বার সে বলেছিল;   “আমি উঠিব,  করিব,  হইব,  উঠিব,  হইব।”
৩।     লুসিফরের মহা পাপটি কী ছিল? ঈশ^রের বিদ্রোহাচরণ, তাঁর বিরোধিতাই সেই পাপ। লুসিফরের অন্তরের ইচ্ছা ছিল, “আমি ঈশ^রের আদেশ পালন করব না Ñ আমি আমার ইচ্ছামতো আমি চলব”
    দেখুন, যিহিষ্কেল ২৮:১৫ পদ,
    “তোমার (লুসিফর) সৃষ্টি দিন হইতে তুমি আপন আচারে (চালচলনে) সিদ্ধ ছিলে; শেষে তোমার মধ্যে অন্যায় পাওয়া গেল।”  লুসিফর সৃষ্টি দিন থেকে আচারে (চালচলনে) সিদ্ধ, নির্দোষ ছিল।
৪।     ঈশ^রের অধীনে থেকে লুসিফর কখনো সন্তুষ্ট ছিল না, অথচ সে সর্বশ্রেষ্ঠ দূত ছিল। সে ঈশ^রের স্থানে অধিষ্ঠিত হতে এবং নিজেই আরাধনা পেতে চেয়েছিল। কোনো সৃষ্টজীবের স্রষ্টার প্রতি বিরোধিতা করা, তা কতই না ভয়াবহ ব্যাপার!
    দেখুন, যিহিষ্কেল ২৮:১৭ পদ, লুসিফরকে উদ্দেশ্য করে বলা . . .
    “তোমার চিত্ত তোমার সৌন্দর্যে গর্Ÿিত হইয়াছিল; তুমি নিজ দীপ্তি হেতু আপন জ্ঞান নষ্ট করিয়াছ; আমি তোমাকে ভূমিতে নিক্ষেপ করিলাম, রাজাদের সামনে রাখিলাম, যেন তাহারা তোমাকে দেখিতে পায়।”
৫।    ঈশ^র লুসিফরের অন্তঃকরণের প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন আর তার উচ্চপদ থেকে অপসরণ করলেন। তার নাম লুসিফর (আলোবাহি) থেকে পরিবর্তন করে দিয়াবল (শয়তান) রাখলেন, যার অর্থ “বিপক্ষ” বা “শত্রু”।
    দেখুন, ১পিতর ৫:৮ পদ
    “তোমরা প্রবুদ্ধ হও, জাগিয়া থাক; তোমাদের বিপক্ষ দিয়াবল গর্জনকারী সিংহের ন্যায়, কাহাকে গ্রাস করিবে, তাহার অন্বেষণ করিয়া বেড়াইতেছ।”
    শয়তান অর্থাৎ দিয়াবল শুধু ঈশ^রের শত্রু নয়, কিন্তু সে আমাদেরও শত্রু।
৬।     শয়তানই ছিল সর্বপ্রথম দূত যে ঈশ^রের বিদ্রোহাচরণ করেছিল, কিন্তু অন্যান্য বহু দূতেরাও এই বিরোধিতায় তার অনুগামী হয়েছিল। জগতে দুইটি আত্মিক রাজ্য রয়েছে Ñ শয়তানের রাজ্য এবং ঈশ^রের রাজ্য।
পার্থক্য তুলনা করুন :
শয়তানের রাজ্য                       ঈশ^রের রাজ্য
    অন্ধকারের রাজ্য                              আলোর রাজ্য
    বিদ্রোহের রাজ্য                               আদেশ পালনের (অনুগত’র) রাজ্য
                     ঘৃণা, মিথ্যা এবং দুষ্টের রাজ্য              প্রেম, সত্য এবং ধার্মিকতার রাজ্য

৭।     ঈশ^র সর্বশক্তিমান ঈশ^র এবং তিনি চিরকাল ধরে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহাচরণ অর্থাৎ তাঁর বিরুদ্ধে কারোর কোনো বিরোধিতা করা বরদাস্ত করবেন না।
    একদিন শয়তান এবং তার সঙ্গে পতিত দূতগণ ও তাঁর অনুগামী সকলের বিচার হবে।
দেখুন, প্রকাশিত বাক্য ২০:১০ পদ,
    “আর তাহাদের ভ্রান্তিজনক দিয়াবল “আগুন ও গন্ধকের” হ্রদে নিক্ষিপ্ত হইল, যেখানে ঐ পশু ও ভাক্ত ভাববাদীও (নবিও) আছে; আর তাহারা যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে দিবারাত্র যন্ত্রণা ভোগ করিবে”
    অর্থাৎ বলা হয়েছে, যে কিনা মানুষদের ভুল পথে নিয়ে গিয়েছিল সেই শয়তানকে জ¦লন্ত গন্ধকের হ্রদে ফেলে দেওয়া হলো। সেই জন্তু আর ভ- ভাববাদী/নবিকে আগেই সেখানে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে তারা চিরকাল ধরে দিনরাত যন্ত্রণা ভোগ করবে।
    দেখুন, প্রকাশিত বাক্য ২০:১৫ পদ অনুসারে কে আগুনের  হ্রদে নিক্ষিপ্ত হবে?
    “আর জীবন-পুস্তকে যে কাহারও নাম লিখিত পাওয়া গেল না, সে আগুনের হ্রদে নিক্ষিপ্ত হইল”
৮।     ঠিক এখনি, ঈশ^র মানুষদের সুযোগ দিয়েছেন যে, কাকে তারা মনোনয়ন করবে বা বেছে নেবে Ñ 
         ঈশ^রকে না-কি শয়তানকে।
খ।     মানুষের বিদ্রোহ অথাৎ বিরোধিতা।
১।     ঈশ^র যখন আদম এবং হবাকে সৃষ্টি করে এদন উদ্যানে রাখলেন, তিনি তাদের বলেছিলেন যে তারা একটি গাছের ফল ছাড়া অন্যান্য সব গাছের ফল খেতে পারবে।
    সেই গাছ কোনটি?
    দেখুন, আদিপুস্তক ২:১৭ পদ,
“কিন্তু সদসদ্-জ্ঞানদায়ক যে বৃক্ষ, তাহার ফল খাইও না, কেননা যে দিন তাহার ফল খাইবে, সেই দিন মরিবেই মরিবে।”
২।     ঈশ^র তাদের এই বৃক্ষের ফল খেতে নিষেধ করলেন এবং সতর্ক করে দিলেন যে, যদি তারা তাঁর অবাধ্য হয়, তবে তাদের অবশ্যই মরতে হবে।
৩।     একদিন শয়তান/দিয়াবল হাওয়াকে ভুলাবার মতলবে সাপের বেশে বাগানে প্রবেশ করল।
    দেখুন, আদিপুস্তক ৩:১ পদ,
    “সদাপ্রভু ঈশ^র নির্র্মিত ভূচর প্রাণীদের মধ্যে সর্প সর্বাপেক্ষা খল (চালাক, প্রতারক) ছিল। সে ঐ নারীকে বলিল, ঈশ^র কি বাস্তবিক বলিয়াছেন, তোমরা এই বাগানের কোন গাছের ফল খাইও না?”
ক।     শয়তান/দিয়াবল পরোক্ষভাবে কার বিষয়ে উল্লেখ করেছে যে, মানুষের সর্বদা মঙ্গলের জন্য তাঁর কোনো ভাবনা নাই?                          ।
খ।     দেখুন, আদিপুস্তক ৩:৪-৬ পদ,
    “তখন সাপ নারীকে বলিল, কোন ক্রমে মরিবে না; কেননা ঈশ^র জানেন, যে দিন তোমরা তাহা খাইবে, সেই দিন তোমাদের চোখ খুলিয়া যাইবে, তাহাতে তোমরা ঈশ^রের মত হইয়া সদসদ্-জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে। নারী যখন দেখিলেন, ঐ গাছ সুখাদ্যদায়ক ও চোখের লোভজনক, আর ঐ গাছ জ্ঞানদায়ক বলিয়া কাম্য, তখন তিনি তাহার ফল পাড়িয়া খাইলেন; পরে নিজের মত নিজ স্বামীকে দিলেন, আর তিনিও খাইলেন।”
গ।     পদ ৪-এ শয়তান হবার কাছে কী বা কোন মিথ্যা কথাটি বলেছিল?
    কোনো ক্রমে মরিবে না।
ঘ।     পদ ৫-এ শয়তান হবাকে কী কথা বলেছিল যা হাওয়া ও তার স্বামী হতে পারত?   
              ঈশ^রের মতো।
ঙ।     পদ ৬ অনুসারে, হবা কি ঐ বৃক্ষের ফল খেয়েছিলেন?  হ্যাঁ না-কি না।
৪।     আদম তার স্ত্রী হবার কাছে এলে হবা আদমের সামনে ফলটি তুলে ধরল (আদিপুস্তক ৩:৬ পদ)। নিঃসন্দেহে হবা আদমকে সাপের দেয়া পরামর্শ বা যুক্তিটির কথা বলল যে, এই ফল খেলে তারা ঈশ^রের ন্যায় হবে।
৫।     আদম একটু ভেবেছিল, সে ভালোভাবেই জানত ঈশ^র কী বলেছিলেন। ঈশ^র তাকে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছিলেন যে, ঐ নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার পরিণাম মৃত্যু।
ক।     শয়তান/দিয়াবল হবাকে যেমনি বলেছিল, সেভাবে আদম প্রতারিত হয়নি, সে সবকিছু ভালোভাবে জানত।
খ।     তদ্সত্ত্বেও আদম ফলটি নিলো এবং খেলো।
৬।     আদমের মহা পাপটি কী ছিল? এটি ছিল ঈশ^রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহাচরণের পাপ।
ক।     ঈশ^রের আদেশ আদম জানত, তথাপি সে ঈশ^রের আদেশের অবাধ্য হওয়ার পথ বেছে নিল।
খ।     আদমের অন্তরের মনোভাবটি ছিল, “আমার যা ইচ্ছা, আমি তাই করব।”
গ।     ১শমূয়েল ১৫:২৩ পদানুসারে “কারণ বিদ্রোহ করা মন্ত্রপাঠের ন্যায় পাপ,”
৭।     আদমের এই বিরোধিতার পাপ তাকে অবাধ্যতার পথে পা বাড়াতে সাহায্য করল।
ক।     আদম নিষিদ্ধ গাছের ফল হাতে নিয়ে খেলো। ঈশ^রের অবাধ্য হয়ে আদম শয়তানের/দিয়াবলের পথ অনুসরণ করল!
খ।     যে দিন আদম এবং হবা ঈশ^রের অবাধ্য হলো, সেদিন থেকেই তাদের আত্মিক মৃত্যু শুরু হলো। আমরা পরবর্তী পাঠে এ বিষয়ে আরো জানব।
গ।     এরূপে তারা আদেশ অমান্য করায় ও পাপে (আত্মিকতায়) মৃত, (ইফিষীয় ২:১ পদ)
গ।     আদম এবং হবা এদন বাগান থেকে বিতাড়িত হলো।
১।     আদম এবং হবা ঈশ^রের অবাধ্য হলো। পবিত্র বাইবেল তাদের পাপ উপেক্ষা করলেন না। না, তেমন কিছুই হয়নি অথবা তিনি এ বিষয়ে কিছু জানতেন না, এমন ভান ঈশ^র করতে পারেন না।
দেখুন, আদিপুস্তক ৩:৮ পদ,
    “. . . আদম ও তাঁহার স্ত্রী সদাপ্রভু ঈশ^রের সম্মুখ হইতে উদ্যানস্থ বৃক্ষসমূহের মধ্যে লুকাইলেন।”
২।     উদ্যানে ঈশ^রের ডাক শুনে আদম এবং হবা কী করল?                               ।
৩।     কাহিনীটিতে আদম এবং হবার বিবরণ লক্ষ্য করুন। (আদিপুস্তক ৩:৯-১৩ পদ)
৪।     ঈশ^র তাদের উপরে তাঁর বিচারের রায় ঘোষণা করলেন (আদিপুস্তক ৩:১৪-১৯ পদ)
ক।     আদম এবং হবাকে মনোরম এদন বাগান পরিত্যাগ করতে হলো ।
খ।     স্রষ্টার সঙ্গে তাদের আর সম্পর্ক থাকল না।
গ।     ঈশ^রের এবং তাদের মধ্যে পাপ স্থান করে নিল।
পড়–ন:  আদিপুস্তক ৩:২৪ পদ,  ঈশ^র মানুষকে এদন থেকে বিতাড়িত করলেন।
৫।     আদম এবং হবা আদেশ লঙ্ঘনের কারণে তাদের প্রতি যা যা ঘটেছিল তার মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক ছিল: তারা ঈশ^রের থেকে বিচ্ছিন্ন হলো।
৬।     কিন্তু তবুও ঈশ^র আদম ও হবাকে ভালোবাসতেন। সেদিনই তিনি তাদের কাছে একটি চমৎকার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। (আদিপুস্তক ৩:১৫ পদ) তিনি তাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করলেন যে, একদিন তিনি মুক্তিদাতা পাঠাবেন। মুক্তিদাতা হবেন ঈশ^রের নিজ পুত্র, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট। তিনি জগতের পাপের জন্য মৃত্যুবরণ করবেন।
    দেখুন, লূক ২:১১ পদ,
    “তোমাদের জন্য এক মুক্তিদাতা জন্মিয়াছেন; তিনি খ্রীষ্ট প্রভু”
    দেখুন, ১করিন্থীয় ১৫:৩ পদ,
    “শাস্ত্রানুসারে খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য মরিলেন”
    দেখুন, ১পিতর ২:২৪ পদ,
     “তিনি (যীশু খ্রীষ্ট) আমাদের পাপের বোঝা তুলিয়া লইয়া আপনি নিজ দেহে কাঠের উপরে (ক্রুশে) বহন করিলেন, যেন আমরা পাপের পক্ষে মরিয়া ধার্মিকতার পক্ষে জীবিতা হই; তাঁহারই ক্ষত দ্বারা তোমরা আরোগ্য প্রাপ্ত হইয়াছ।”
প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখুন
৩য় পাঠ
১।     কীভাবে সূর্য, পৃথিবী, চন্দ্র এবং নক্ষত্রের অস্তিত্ব হলো (সৃষ্টি হলো)?

                    


        




২।     ঈশ^র কেন আমাদের কাছে সমাদর এবং সম্মান পেতে আশা করেন?

                


        

৩।     ঈশ^রের সর্বশ্রেষ্ট সৃষ্টি কী এবং কেন?

                


        

৪।     মানুষ কীভাবে ঈশ^রের মতো?

                


        




৫।     ঈশ^র কী উপায়ে প্রথম মানুষ তৈরি করলেন?

                


৬।    কখন ঈশ^রের (স্রষ্টার) সঙ্গে মানুষের সুসম্পর্ক হয়?

                


        


৭।    কেমন করে ঈশ^রের এই মনোরম পৃথিবী দূষিত ও নষ্ট হলো?

                


৮।    কে ঈশ^রের বিরুদ্ধে বিরোধিতা করল?

                
৯।     প্রকাশিত বাক্য ২০:১৫ পদ অনুসারে কে আগুনের হ্রদের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হবে?

                


১০।     এদন বাগানে আদম ও হবাকে কোন্ বৃক্ষের ফল খেতে নিষেধ করা হয়েছিল?

                


১১।     কে সাপের বেশে হবাকে সদসদ্-জ্ঞানদায়ক বৃক্ষের ফল খেতে ভুলিয়েছিল?

                


১২।     হবাকে ভুলাবার জন্য সর্প কী বলেছিল?

                


        

১৩।     আদমের মহা পাপটি কী ছিল ?

                

১৪।     আদম এবং হবা ফল খাবার পর তাদের কী রকম মৃত্যু হয়েছিল?

                


১৫।     আদম এবং হবার অবাধ্যতার কারণে তাদের প্রতি কী কী মারাত্মক ঘটনা ঘটল?

                


        



















৪র্থ পাঠ
মানুষের সমস্যাবলি
ইহকালে ও পরকালে সুখী হতে হলে, আমাদের অবশ্যই স্রষ্টার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। মানুষ যখন প্রথম সৃষ্টি হয়েছিল, ঈশ^রের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক ছিল। সে ঈশ^রকে প্রেম করত, ঈশ^রের আরাধনা করত এবং ঈশ^রের বাধ্য ছিল। কিন্তু এক সময় এলো যখন আদম তার স্রষ্টার বিরুদ্ধাচরণ করল ও তাঁর অবাধ্য হলো, ফলে ঈশ^র ও আদমের মধ্যে সুসম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেল।
আদমের বিদ্রোহ এবং অবাধ্যতার পরিণাম বড় ভয়ানক রূপ নিল। এই পাঠে আমরা তার কতগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
অভিশাপবাণী ব্যক্ত হলো
এই ঘটনাগুলো পাওয়া যায় আদিপুস্তক ৩:১৪-১৯ পদ
ক।    সাপের প্রতি অভিশাপ
      দেখুন, আদিপুস্তক ৩:১৪ পদ,
    “পরে সদাপ্রভু ঈশ^র সর্পকে বলিলেন, তুমি এই কাজ করিয়াছ, এই জন্য গ্রাম্য ও বন্য পশুগুলির মধ্যে তুমি সর্বাপেক্ষা অধিক অভিশাপগ্রস্থ; তুমি বুকে হাঁটিবে, এবং যাবজ্জীবন ধূলি খাইবে।” সর্পের প্রতি কোন্ দুইটি জিনিষ ঘটবে?                      ।
খ।     শয়তানের প্রতি অভিশাপ
দেখুন, আদিপুস্তক ৩:১৫ পদ,  
“আর আমি তোমাতে ও নারীতে, এবং তোমার বংশে ও তাহার বংশে পরস্পর শত্রুতা সৃষ্ট করিব; সে
 তোমার মাথা চূর্ণ করিবে, এবং তুমি তাহার পা চূর্ণ করিবে”
১।   শয়তান অবশ্যই মনে করেছিল তার কিছুসংখ্যক স্বেচ্ছানুগামী আছে।
২।   প্রকৃতপক্ষে শয়তানকে কী হতে দেখা গেছে Ñ মানুষের শত্রু।
       “. . . এবং তোমার বংশে ও তাহার বংশে . . .”
৩।   এই শত্রুতা চলতেই থাকবে।
৪।   অনেকেই থাকবে যারা শয়তানের অনুগামী হবে।
৫।   অন্যান্যরা অনেকেই তার বিরোধীতা করবে এবং ঈশ^রের অনুগামী হবে।
৬।   “সে তোমার মস্তক চূর্ণ করবে এবং তুমি তাহার পা চূর্ণ করবে।”
        এই কথাটি একজন মুক্তিদাতার আগমন সম্পর্কে পবিত্র বাইবেলের এটিই সর্বপ্রথম প্রকাশ।
৭।   আমরা আমাদের পরবর্তী পাঠে এ বিষয়ে পূর্ণভাবে আলোচনা করব।
গ।     হবার প্রতি অভিশাপ
    দেখুন, আদিপুস্তক ৩:১৬ পদ
    “পরে তিনি নারীকে বলিলেন, আমি তোমার প্রসববেদনা অতিশয় বৃদ্ধি করিব, তুমি বেদনাতে সন্তান প্রসব করিবে, এবং স্বামীর প্রতি তোমার বাসনা থাকিবে; ও সে তোমার উপরে কর্তৃত্ব করিবে।
    ১।    এটি ঈশ^রের পরিকল্পনা যে স্বামী পরিবারের মস্তকস্বরূপ (প্রধান) হবে।
    ২।    এ বিষয়েও আমরা পরে আলোচনা করব।
ঘ।     আদমের প্রতি অভিশাপ
    দেখুন, আদিপুস্তক ৩:১৭,১৯ পদ,
    পদ ১৭ “আর তিনি আদমকে বলিলেন, যে গাছের ফলের বিষয়ে আমি তোমাকে বলিয়াছিলাম, তুমি তাহা খাইও না, তুমি তোমার স্ত্রীর কথা শুনিয়া তাহার ফল খাইয়াছ, এই জন্য তোমার জন্য ভূমি অভিশপ্ত হইল; তুমি সারা জীবন ভীষণ পরিশ্রম করে (ক্লেশে) উহা ভোগ করিবে;”
    ১।    অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করে আদমের খাবার গ্রহণ করতে হবে।
    ২।    তাকে অনেক দুঃখ কষ্টে খাবার গ্রহণ করতে হবে।
            ১৯ পদ “তুমি ঘর্মাক্ত মুখে আহার করিবে, যে পর্যন্ত তুমি মাটিতে ফিরিয়া না যাইবে; তুমি তো তাহা
            হইতেই গৃহিত হইয়াছ; কেননা তুমি ধূলি, এবং ধূলিতে ফিরিয়া যাইবে।”
    ৩।    তার কেবল আত্মিকভাবে নয়, কিন্তু শারীরিক মৃত্যুরও অভিজ্ঞতা হবে।
    ৪।    এর পূর্বে কোনো মৃত্যু ছিল না।
ঙ।     ভূমির প্রতি অভিশাপ
    দেখুন, আদিপুস্তক ৩:১৮ পদ, 
    “আর উহাতে তোমার জন্য কাঁটা ও শিয়ালকাঁটা জন্মিবে, ও তুমি ক্ষেত্রের ওষধি খাইবে।” খাবার হবে ক্ষেতের ফসল।
    ঐ অভিশাপের কারণে এখন ফসলের জমিতে স্বাভাবিকভাবে ভালো ফসল উৎপাদন না হয়ে বরং কাঁটাগাছ, আগাছা ও ফসল বিনষ্টকারী অনেক রকম পোকামাকড় জন্মে।
আদমের আত্মিক মৃত্যু
আপনার হয়তো মনে থাকবে যে, ঈশ^র আদম এবং হবাকে সদাসদ্-জ্ঞানদায়ক গাছের ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন (আদিপুস্তক ২:১৭ পদ)। ঈশ^র তাদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন, “কেননা যে দিন তাহার ফল খাইবে, সেই দিন মরিবেই মরিবে।” আদম ও হবা ঈশ^রের অবাধ্য হলো। তারা নিষিদ্ধ গাছের ফল খেলো। তাদের অবাধ্যতার পরিণাম হলো মৃত্যু! কিন্তু এ মৃত্যু কেমন ছিল? এটি ত্রিবিধ মৃত্যু; শারীরিক, আত্মিক ও অনন্ত/অন্তহীন।
ক।      আত্মার ও দেহের বিচ্ছিন্ন হওয়াই হলো শারীরিক মৃত্যু।
এটি বাইবেলে, পাপের শাস্তির একটি দিক হিসাবে দেখানো হয়েছে।
১।      এটি আদিপুস্তকে ঈশ^রের অনুপ্রেরণায় সতর্কবাণীর অর্থ প্রকাশ।
 দেখুন, আদিপুস্তক ২:১৭ পদ,
 “সদাসদ্-জ্ঞানদায়ক যে গাছ, তাহার ফল খাইও না, কেননা যে দিন তাহার ফল খাইবে, সেই দিন  
  মরিবেই মরিবে।”
 দেখুন, আদিপুস্তক ৩:১৯ পদ,
 “তুমি ঘর্মাক্ত মুখে আহার করিবে, যে পর্যন্ত তুমি মাটিতে ফিরিয়া না যাইবে; তুমি তো তাহা হইতেই  
 গৃহীত হইয়াছ; কেননা তুমি ধূলি, এবং ধূলিতে ফিরিয়া যাইবে।”
২।     আমরা জানি মানব দেহ দুর্বল ও অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করে থাকে। প্রত্যেকের জন্য শারীরিক মৃত্যু 
       নিশ্চিত।
 দেখুন, রোমীয় ৫:১২ পদ,
 “অতএব যেমন এক মানুষ দ্বারা পাপ, ও পাপ দ্বারা মৃত্যু জগতে প্রবেশ করিল; আর এই প্রকারে মৃত্যু  
 সকল মানুষের কাছে উপস্থিত হইল, কেননা সকলেই পাপ করিল।”
 দেখুন, ইব্রীয় ৯:২৭ পদ,
 “আর যেমন মানুষের জন্য একবার মৃত্যু, তৎপরে বিচার নিরূপিত আছে।”
খ।     ঈশ^র হতে আত্মার বিচ্ছিন্ন হওয়াই আত্মিক মৃত্যু।
       মানুষের পাপে পতনের কারণে মানুষের শাস্তির দ্বিতীয় অংশটি হলো ঈশ^রের অভিমুখে আত্মিক মৃত্যু। পাপী মানব গোষ্ঠীর একজন সদস্যরূপে মানুষের বহুবিধ সমস্যা রয়েছে।
১।     মানুষ ঈশ^রের জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন। আদম ঈশ^রের অবাধ্য হবার সঙ্গে সঙ্গে তার আত্মিক মৃত্যু ঘটল। সে ঈশ^রের জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল।
    ক।    আদমের পাপের পরিণাম আত্মিক মৃত্যু; কেবল তার নিজের জন্য নয় কিন্তু গোটা মানব গোষ্ঠীর
            জন্য।
    খ।    প্রকৃতিগতভাবে, পৃথিবীতে জন্মগ্রহণকারী প্রত্যেকেই আত্মিকভাবে মৃত, ঈশ^রের জীবন থেকে
            বিচ্ছিন্ন।
    দেখুন, ইফিষীয় ২:১ পদ,
    “আর যখন তোমরা নিজ নিজ অপরাধে ও পাপে মৃত ছিলে, তখন তিনি তোমাদিগকেও জীবিত করিলেন।”
    দেখুন, ইফিষীয় ৪:১৮ পদ,
    “তাহারা চিত্তে (মন) অন্ধীভূত ঈশ^রের জীবনের বাহিরে চলিয়া গিয়াছে, আন্তরিক অজ্ঞানতার কারণে, হৃদয়ের কঠিনতার কারণে হইয়াছে।”
২।     মানুষের অভ্যন্তরে এক শূন্যতা রয়েছে এবং অনেক সময় মনে হয় জীবন কতই না শূন্যময়, ফাঁকা       এবং অকেজো। আমাদের এরূপ অনুভব করার পিছনে কারণটি এই যে, ঈশ^র আমাদের একটি গভীর
      আভ্যন্তরীণ অনুভূতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। বুঝতে হবে যে, আমাদের কোনো কিছুতে প্রয়োজন      রয়েছে। জীবনের উদ্দেশ্যে মানুষের প্রয়োজন তার মূল্য উপলব্ধি করা।
     ক।    এটি ছিল ঈশ^রের পরিকল্পনা যে তিনি মানুষের অভাব পূরণ করবেন।
     খ।    মানুষকে সঠিক মূল্য দিতে ঈশ^রের এক কর্তব্য ছিল।
    দেখুন, প্রকাশিত বাক্য ৪:১১ পদ,
“হে প্রভু, তুমিই প্রশংসা ও সম্মান ও ক্ষমতা পাবার যোগ্য; কেননা তুমিই সকলের সৃষ্টি করিয়াছ, এবং তোমার ইচ্ছাহেতু সকলই অস্তিত্বপ্রাপ্ত ও সৃষ্ট হইয়াছে।”
গ।        ঈশ^র মানুষকে প্রেম করেছিলেন এবং তাকে গ্রহণও করেছিলেন। যাবৎ মানুষ তাঁর স্রষ্টার সঙ্গে 
    একটি সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলছিল, তাবৎ তার আভ্যন্তরীণ সব চাহিদা পূর্ণও হয়েছিল। সে ছিল সুখী ও পরিতৃপ্ত।
ঘ।        কিন্তু মানুষ ঈশ^রের বিরোধিতা করল, সে ঈশ^রের থেকে বিচ্ছিন্ন হলো। তাই মানুষের গভীর আন্তরিক চাহিদা অতৃপ্ত থেকে গিয়ে মানুষ অসুখী হলো এবং তার মনে অশান্তি দেখা দিল।
৩।      মানুষের পাপপূর্ণ স্বভাব রয়েছে। মানুষকে প্রথম সৃষ্টি করার পর ঈশ^রের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল।
      সে ঈশ^রকে প্রেম করত, তাঁর আরাধনা করত এবং সে ঈশ^রের আদেশ পালন করত।
ক।       আদমের পাপের পর, তার অন্তরে একটা পরিবর্তন এলো। ঈশ^রের প্রেম এবং তাঁর ইচ্ছা পালন করার পরিবর্তে আত্ম-প্রেমিক হলো এবং তার নিজের ইচ্ছামতো চলতে চাইল, তখন তার মধ্যে একটি পাপপূর্ণ স্বভাব বিরাজ করল এবং নিজের জীবনকে ও নিজের ইচ্ছাকে বেশি             ভালোবাসল। 
খ।        আদমের পাপের স্বভাব তার সন্তানদের এবং মানব জাতির প্রতি বিস্তারিত হলো।
    দেখুন, রোমীয় ৫:১২ পদ,
    “যেমন এক মানুষ দ্বারা পাপ, ও পাপ দ্বারা মৃত্যু জগতে প্রবেশ করিল; আর এই প্রকারে মৃত্যু সকল মানষের কাছে উপস্থিত হইল, কেননা সকলেই পাপ করিল;”
    গ।   প্রত্যেকেই পাপপূর্ণ স্বভাব ও পাপের ইচ্ছা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। এ সবই আদমের অবাধ্যতার      
          পরিণাম।
    দেখুন, রোমীয় ৫:১৯ পদ,
    “কারণ যেমন সেই এক মানুষের অবাধ্যতা দ্বারা অনেককে পাপী বলিয়া ধরা হইল, তেমনি সেই আর এক ব্যক্তির বাধ্যতা দ্বারা অনেককে ধার্মিক বলিয়া ধরা হইবে!”
    দেখুন, ইফিষীয় ২:২ পদ, 
    “সেই সকলেতে তোমরা পূর্Ÿে চলিতে, এই জগতের যুগ অনুসারে, আকাশের কর্তৃত্বাধিপতির অনুসারে, যে আত্মা এখন অবাধ্য সন্তানগণের মধ্যে কাজ করে।”
    অর্থাৎ এখানে বলা হয়েছে Ñ জগতের চিন্তাধারা অনুসারে তোমরাও এক সময় সেই অবাধ্যতা আর পাপের মধ্যে চলাফেরা করতে। যে আত্মা আকাশের ক্ষমতাশালীদের রাজা সেই দুষ্ট আত্মা ঈশ^রের অবাধ্য লোকদের মধ্যে কাজ করছে, আর তোমরা সেই আত্মার পিছনে পিছনে চলতে।
    ঘ।    সেই আত্মা শয়তানের আত্মা! শয়তান ঈশ^রের বিরুদ্ধাচরণ করল এবং তার অন্তরের কথা,
           “আমি আমার নিজের ইচ্ছামতো চলব।”
    ঙ।    আদম তাঁর  বিদ্রোহাচরণে  শয়তানের  অনুসরণ করল এবং বলল “আমি আমার নিজের  
                 ইচ্ছামতো চলব।”
    চ।    এখন আপনি এবং আমিও একই কথা বলি, “আমি আমার নিজের ইচ্ছামতো চলব।”
৪।     মানুষ অনেক অনেক পাপ করে Ñ কেননা মানুষের একটি পাপপূর্ণ স্বভাব রয়েছে, সে অনেক পাপ করে থাকে। কোনো-কোনো লোক অন্যদের চাইতে মারাত্মক পাপ করে চলছে, কিন্তু সকলেই পাপ করেছে।
দেখুন, রোমীয় ৩:১০-১২ পদ,
“ধার্মিক কেহই নাই, এক জনও নাই, বুঝে, এমন কেহই নাই, ঈশ^রের অন্বেষণ করে, এমন কেহই নাই। সকলেই বিপথে গিয়াছে, তাহারা একসঙ্গে অকর্মণ্য হইয়াছে; সৎকর্ম করে, এমন কেহই নাই, একজনও নাই।”
গ।     অনন্ত মৃত্যু : সম্পূর্ণভাবে শারীরিক এবং আত্মিক মৃত্যুর চূড়ান্ত ও শেষ অবস্থা।
    এটিই হলো ঈশ^র থেকে আত্মার অনন্তকালীন বিচ্ছেদ, সেই একই সঙ্গে অনুশোচনা, করুণার শেষ ও বাহ্যিক দ- ভোগ ঘটে।
    দেখুন, মথি ১০:২৮ পদ,
    “আর যাহারা শরীর বধ করে, কিন্তু প্রাণ বধ করিতে পারে না, তাহাদিগকে ভয় করিও না; কিন্তু যিনি প্রাণ ও শরীর উভয়ই নরকে বিনষ্ট করিতে পারেন, তাঁহাকেই ভয় কর।”
    দেখুন, মথি ২৫:৪১ পদ,
    “পরে তিনি বামদিকে স্থিত লোকদিগকেও বলিবেন, ওহে অভিশপ্ত সকল, আমার নিকট হইতে দূর হও, দিয়াবলের ও তাহার দূতগণের জন্য যে অনন্ত অগ্নি প্রস্তুত করা হইয়াছে, তাহার মধ্যে যাও।”
পাপ কী?
কোনটি ঠিক এবং কোনটি ভুল এ বিষয়ে মানুষ নিজেদের মান মর্যাদায় নিজেরা স্থির নির্ধারণ করতে পছন্দ করে। কোনো-কোনো লোক জিজ্ঞেস করে থাকে ‘পাপ কী?’ পাপ সম্পর্কে ঈশ্বর কী বলেছেন এই প্রশ্নের সর্বোত্তম উত্তর পাওয়া যাবে ঈশ^রের পবিত্র বাক্যে (পবিত্র বাইবেলে)।
ক।     ঈশ^রের আদেশ লঙ্ঘন করাই পাপ। ঈশ^র তাঁর বাক্যে আমাদের বলেছেন তাঁর দৃষ্টিতে কোনটি ঠিক ও কোনটি ভুল।
১।      ঈশ^রের আদেশ লঙ্ঘনের অর্থ ঈশ^র যা সঠিক বলেছেন, তার বিপরীত চলা।
২।      ১যোহন ৩:৪ পদ বলে,
     “যে কেহ পাপাচরণ করে, সে ব্যবস্থালঙ্ঘনও করে, আর ব্যবস্থালঙ্ঘন করাই পাপ।”
     অর্থাৎ যারা পাপ করে তারা ঈশ^রের কথা অমান্য করে। পাপ হলো ঈশ^রের কথা অমান্য করা।
৩।      আমরা যখন কোনো দেওয়ালে অথবা বেড়ায় একটি লেখা দেখি, “অনধিকারে প্রবেশ নিষেধ” এর
       মানে আমাদের এই সীমারেখার ওপাশে যাবার অনুমতি নেই। যদি আমরা বেড়া ডিঙ্গিয়ে যাই, তবে  
       আমরা অনধিকার প্রবেশ করছি; তা আমরা এক ধাপ যাই বা এক মাইল পথ হেঁটে যাই।
৪।      ঈশ^রের বাক্যের (বিধি ব্যবস্থামালার) ক্ষেত্রেও তাই। ব্যবস্থা লঙ্ঘনের অর্থ তিনি যা বলেছেন, তার 
     বাইরে যাওয়া অথবা অন্য কিছু করা। ঈশ^রের ব্যবস্থামালার যে-কোনো একটি লঙ্ঘন করা কী?
                                       ।
খ।     অবিশ্বাস পাপ। পবিত্র বাইবেল ঈশ^রের পবিত্র বাক্য। ঈশ^র তাঁর বাক্যে যা বলেছেন, তা বিশ্বাস না করা মহাপাপ এবং যীশু খ্রীষ্টকে অগ্রাহ্য করে আমরা করি চরম পাপ।
    দেখুন, ১যোহন ৫:১০ পদ,
    “ঈশ^রের পুত্রে যে বিশ^াস করে, ঐ সাক্ষ্য তাহার অন্তরে থাকে; ঈশ^রে যে বিশ^াস না আনে, সে তাঁহাকে মিথ্যাবাদী করিয়াছে; কারণ ঈশ^র আপন পুত্রের বিষয়ে যে সাক্ষ্য দিয়াছেন, তাহাতে সে বিশ^াস করে নাই।”
গ।     আপনার যা করা উচিত তা না করাই পাপ। যখন আমরা এমন কিছু করি যা আমাদের করা উচিত নয়, আর যখন আমরা জানি আমাদের কী করা উচিত কিন্তু তা করি না, তখনই ঈশ^রের বিরুদ্ধে পাপ করা হয়।
    দেখুন, যাকোব ৪:১৭ পদ,
     “বস্তুতঃ যে কেহ সৎকর্ম করিতে জানে, অথচ না করে, তাহার পাপ হয়।”
ঘ।     ঈশ^রের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধাচরণ করা পাপ। কর্তৃত্বের অর্থ শাসন করার অধিকার এবং আদেশ পালন/অনুগত হবার অধিকার। সমস্ত কর্তৃত্বের ক্ষমতা ঈশ^রের অধিকারে, কেননা তিনি সমস্ত কিছুর স্রষ্টা।
    দেখুন, ১শমূয়ের ১৫:২৩ পদ,
     “কারণ বিদ্রোহ করা মন্ত্রপাঠের ন্যায় পাপ, এবং অবাধ্যতা, পৌত্তলিকতা ও মূর্তিপূজার (ঠাকুরপূজার) সমান। তুমি সদাপ্রভুর কথা অগ্রাহ্য করিয়াছ, এই জন্য তিনি তোমাকে অগ্রাহ্য করিয়া রাজ্যচ্যুত করিয়াছেন।”
ঙ।     সকল অধার্র্মিকতা পাপ। পবিত্র বাইবেল বলে ঈশ^রের আদেশ পালনে যে-কোনো ব্যর্থতাই পাপ।
    এটি সত্য যে, কোনো-কোনো পাপ  অন্য  সকল  পাপ  অপেক্ষা  মারাত্মক, কিন্তু এটিও সত্য যে, যে-কোনো প্রকার অন্যায় কাজই পাপ।
    দেখুন, ১যোহন ৫:১৭ পদ,
     “সমস্ত অধার্র্মিকতাই (অন্যায়ই) পাপ ; আর এমন পাপ আছে, যাহা মৃত্যুজনক নয়।”
    দেখুন, রোমীয় ৩:২৩ পদ,
     “কেননা সকলেই পাপ করিয়াছে আর ঈশ^রের গৌরব-বিহীন (প্রশংসা পবার অযোগ্য) হইয়াছে।”
পাপের মূল কারণ
পাপের মূল কারণটি আবিষ্কার করা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা পাপ করেছি, আর তা কেবল জানাই যথেষ্ট নয়। আমাদের বুঝতে হবে আমরা কেন পাপ করি।
ক।     পাপের মূল কারণ কী? অহমিকা বা আত্মগরিমা পাপের মূল কারণ; আমাদের ঐ পাপপূর্ণ প্রকৃতি বা  স্বভাবে ব্যক্ত হয় যে, “আমার  ইচ্ছামতো আমার যা ইচ্ছা আমি তাই করব।”
১।     মানুষ ঈশ^রকে তার হৃদয় সিংহাসন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে সেখানে নিজের স্বার্থ বা আত্ম-অহমিকাকে স্থান দেয়।
২।     ঈশ^রকে প্রেম করার পরিবর্তে এবং তাঁর ইচ্ছা পালন না করে, মানুষ কেবল নিজেকেই ভালোবাসে এবং তার নিজের ইচ্ছা পালন করে।
৩।     স্বার্থ বলে, “আমাকে আমার নিজের পথেই চলতে হবে, আর আমি যদি তা না করতে পারি, আমি অসন্তুষ্ট হব।”
খ।     স্বার্থ-সিদ্ধি এবং প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে স্বার্থপরতা।
১।     স্বার্থপ্রিয় জগৎ মনে করে থাকে যে, এক ব্যক্তি নিজের জন্য বেঁচে থাকে এবং সে যেথায় ও যে-বিষয়ে সন্তুষ্ট হয় সে তার অন্বেষণ করে, আর তাই স্বাভাবিক।
২।     জগতের স্বার্থপর মানুষ মনে করে যে, তাদের বিষয়ে পবিত্র বাইবেলে যা-কিছুই বলুক না কেন যেমন তাদের পাপপূর্ণ স্বার্থপর জীবন ঈশ^রের কাছে ঘৃর্ণাহ ও তাদের পক্ষেও তা ধ্বংসাত্মক, তাতে কিছু আসে যায় না।
৩।     যীশু এগুলোকে মানুষের সকল পাপের উৎস বলে উল্লেখ করেছেন।
    দেখুন, মার্ক ৭:২০-২৩ পদ,
    “তিনি আরও বলিলেন, মানুষ হইতে যাহা বাহির হয়, তাহাই মানুষকে অশুচি করে। কেননা ভিতর হইতে, মানুষদের অন্তঃকরণ হইতে, কুচিন্তা বাহির হয় Ñ বেশ্যাগমন, ব্যাভিচার, নরহত্যা, চুরি, লোভ, দুষ্টতা, ছল, লম্পটতা, কুদৃষ্টি, নিন্দা, অহংকার, ও মূর্খতা; এই সকল মন্দ বিষয় ভিতর হইতে বাহির হয়, আর মানুষকে অশুচি করে।”
১।  মন্দ চিন্তা কোথা থেকে আসে?
২।  এই পদগুলোর মধ্যে মন্দ চিন্তাগুলো কী কী বলুন;
৩।  এই সকল মন্দ চিন্তা ভিতর হইতে আইসে, এবং মানুষকে কী করে?
গ।     আমরা নিজেদের জন্য বেঁচে থাকতে পারি না এবং একই সময় ঈশ^রের ইচ্ছাও পালন করতে পারি না।
১।     যে পর্যন্ত যিনি তার নিজের নিয়ন্ত্রণে (আত্মনিয়ন্ত্রণে) থাকেন, সে পর্যন্ত কেহই ঈশ^রের অনুসরণ করতে পারে না।
২।    যীশু খ্রীষ্ট বলেছেন, দেখুন, লূক ৯:২৩ পদ,
    “. . . কোন মানুষ যদি আমার পিছনে আসিতে ইচ্ছা করে, সে নিজেকে অস্বীকার করুক, প্রতিদিন নিজের ক্রুশ তুলিয়া লউক, আর আমার পশ্চাদগামী হউক।”
সমস্যা সমাধানে মানুষের চেষ্টা
    প্রত্যেকের একটি বিবেক রয়েছে, অন্যায় কার্যের সময়ে অন্তরে একটি ধ্বনি তার নিজের সঙ্গে কথা বলে। এই অন্তরের ধ্বনি বা ব্যক্ত ইচ্ছা প্রকাশ করে যে, “তুমি ঈশ^রের ব্যবস্থা লঙ্ঘন করেছ। তুমি দোষী।” মানুষ যখন ঈশ^রের অবাধ্য হয়ে স্বাধীনভাবে চলতে থাকে, তখন সে অপরাধের এই দুর্বহ বোঝা কাঁধে তুলে নেয়।
    এই যন্ত্রণাদায়ী বিবেকহেতু এবং ঈশ^রের ক্রোধের ভয় প্রযুক্ত মানুষ নানাভাবে চেষ্টা করে তার সমস্যা সমাধানের জন্য। আমরা পরবর্তী পাঠগুলোতে মানুষের নিরাময় এবং ঈশ^র কর্তৃক মুক্তির উপায়সমূহ নিয়ে আলোচনা করব।
প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখুন
৪র্থ পাঠ
১।    হাবাকে প্রতারিত করার পর ঈশ^র সর্পকে কী অভিশাপ দিলেন?

                

২।        এদন উদ্যানে ঘটনাটি ঘটার পরিণামে ঈশ^র মানুষকে শয়তানের বিষয় কী দেখালেন বা শয়তানকে কী হতে দেখা গেছে?

                    
৩।     ঈশ^র হবার উপর বিচারের কী রায় দিলেন?

                


৪।    ঈশ^র আদমের উপর বিচারের কী রায় দিলেন?

                


৫।    আদিপুস্তক ৩:১৫ পদে পবিত্র বাইবেল বলে “. . . তোমার মাথা চূর্ণ করিবে, এবং তুমি তাহার পা চূর্ণ করবে।” পদটি কার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে?

                


৬।     আদম ও হবা ঈশ^রের অবাধ্যতার পরিণাম ছিল মৃত্যু, কিন্তু কীরূপ মৃত্যু?

                


৭।    আত্মিক মৃত্যুর বর্ণনা দিন।

                


৮।         আদমের পাপের ফল কি কেবল আদমই ভোগ করল?  আপনার উত্তরে ব্যাখ্যা দিন।

                    


৯।    কিছু কিছু লোক জীবনটাকে খুব শূন্য ও অকেজো অনুভব করে এবং কেন?

                


        




১০।     মানুষ যখন ঈশ^রের বিরোধিতা করে, তখন তার কী পরিণতি হয় বা কী ঘটে?

                


        



১১।     মানুষের পাপ স্বভাবের অবস্থা কীরূপ হয়?

                


        

১২।     ইফিষীয় ২:২ পদে “যে আত্মা এখন অবাধ্য সন্তানগণের মধ্যে কাজ করে” এর অর্থ বর্ণনা করুন?

                


        




১৩।     অনন্ত মৃত্যু কী?

                



১৪।     মথি ১০:২৮ পদে যীশু খ্রীষ্ট এখানে কাকে ভয় করতে বলেছেন?

                


        

১৫।     পাপের ব্যাখ্যা কী?

                


        


১৬।     পাপের মূল কারণ কী?

                


১৭।     মানুষের অন্তরঃকরণ থেকে কী বের হয়?

                


        


১৮।     আমরা কি একই সময়ে নিজেদের জন্য বেঁচে থেকে ঈশ^রের ইচ্ছা পালন করতে কি পারি?

                


        




১৯।    পাপ সম্পর্কে রোমীয় ৩:২৩ পদে কী বলে?

                

৫ম পাঠ
মানুষের পথ
আমরা ১ম ও ২য় পাঠে পবিত্র বাইবেলের নির্ভরযোগ্য সত্যতার প্রমাণ পেয়েছি ও বুঝতে পেরেছি যে, একদিন ঈশ^র, পবিত্র বাইবেলে প্রাপ্ত সত্য দ্বারা আমাদের বিচার করবেন।
৩য় ও ৪র্থ পাঠে আমরা দেখেছি যে, শুরুতে মানুষ সৃষ্টি করা হয়েছিল মূলত যেন ঈশ^রের সঙ্গে তার একটি সম্পর্ক গড়ে উঠে। তবুও মানুষ পাপে পতিত হলো এবং তার পাপের কারণে সে ঈশ^র থেকে বিচ্ছিন্ন হলো।
আমরা দেখেছি :
মানুষ অপরাধে এবং পাপে আত্মিকাবে মৃত। ইফিষীয় ২:১ পদ
মানুষের বিচার হয়ে গেছে। যোহন ৩:১৮ পদ
মানুষের উপরে ঈশ^রের ক্রোধ থাকে। যোহন ৩:৩৬ পদ
মানুষ পাপের এক দাস ছিল। রোমীয় ৬:১৭ পদ
মানুষ হারিয়ে গেছে আর হারানো মানুষ যীশু খ্রীষ্টের দ্বারা উদ্বার পায়। লূক ১৯:১০ পদ
মানুষ কীভাবে ঈশ^রের সম্মুখে তাদের পাপ মুছে ফেলার চেষ্টা করে?
ঈশ^রের সঙ্গে পুনরায় একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে অথবা সুসম্পর্কের প্রচেষ্টায় মানুষ খোদার সম্মুখে তাদের পাপ মুছে ফেলার জন্য অনেক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আপনি পূর্বের আলোচনা পাঠটি স্মরণ করে দেখুন, আদম এবং হবা ডুমুর গাছের পাতা দিয়ে তাদের পাপকে আবরণ দেবার বা চাপা দেবার চেষ্টা করেছিল। তাতে কাজ হলো না বলেই তারা নিজেদেরকে ঈশ^রের সম্মুখ থেকে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করেছিল। (আদিপুস্তক ৩:৮ পদ) আপনার কি মনে হয়, যে লোকেরা কি আজও তেমনি করে চলছে? তারা কি ঈশ^রের সম্মুখ থেকে নিজেদেরকে লুকোবার চেষ্টা করে থাকে?  হ্যাঁ  না-কি  না?
ক।       অনেকে সৎ বা ভালো কার্য দ্বারা পাপ থেকে মুক্তির (পরিত্রাণের, উদ্বারের) চেষ্টা করে।
কিন্তু ঈশ^র বলেন, মানুষের সৎকর্ম ডুমুর গাছের পাতা ছাড়া আর কিছুই নয়। পাপ ঢেকে রাখার জন্য মানুষেরই চেষ্টা সৎকর্মের দ্বারা, ভালো ভালো কাজের দ্বারা, কিন্তু ঈশ^র তা গ্রহণ করবেন না!
১।      পড়–ন, ইফিষীয় ২:৮,৯ পদ,
         আমরা কীসে মুক্তি, পরিত্রাণ বা উদ্বার পাব  “কেননা অনুগ্রহেই (দয়ায়), বিশ^াস দ্বারা” কি আমাদের পরিত্রাণ করতে পারে না? “কর্মের ফল নয়, পাছে কোন মানুষ শ্লাঘা (আত্ম-প্রশংসা, গর্ব) করে।”
    অর্থাৎ ঈশ^রের দয়ায় বিশ^াসের মধ্য দিয়ে আমরা পরিত্রাণ পাই। এটা আমাদের নিজেদের দ্বারা হয়নি, এটা ঈশ^রের দান। এটা কাজের ফল হিসাবে দেওয়া হয়নি, যেন আমরা কেউ গর্ব করতে না পারি।
২।      পড়–ন, যিশাইয় ৬৪:৬ পদ, 
    “আমাদের সর্বপ্রকার ধার্মিকতা মলিন বস্ত্রের সমান।”
    অর্থাৎ আমাদের সব সৎ কাজ নোংড়া কাপড়ের মতো।
মানব দৃষ্টিভঙ্গিতে ভালো কাজের মূল্য রয়েছে। তবে ঐ ভালো কাজ ঈশ^রের দৃষ্টিতে কোনো কাজের নয়। কারণ আমাদের করা ভালো ভালো কর্ম মূল পাপরূপ সমস্যার কোনো সমাধান দেয় না এবং এসব আমাদের পাপ মোচনের কাজে কোনো ভূমিকা রাখে না, যা একমাত্র ঈশ^রেরই কাজ।
খ।       অনেকে ধর্মকর্ম করায় পাপ থেকে মুক্তির চেষ্টা করে।
একজন ধর্মকর্মে আগ্রহী লোক তার ধর্মবিশ্বাস এবং ধর্মীয় রীতিনীতি খুবই নিষ্ঠার সঙ্গে মেনে চলে। ধর্মের রীতিনীতি পালনে সে খুবই সতর্ক এবং এতেই তার বিশ্বাস।
পড়–ন, রোমীয় ২:১৭-২৯ পদ,
একজন ধার্মিক যিহূদী সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে সাধু পৌল ২৮ পদে বলেছেন যে, “কেননা বাহিরে এক যে, সে যিহূদী নয়।”
অর্থাৎ বলা হয়েছে Ñ কেবল বাইরের দিক থেকে যে যিহূদী সে আসল যিহূদী নয়।
পৌল পরিশেষে ২৯ পদে বলেছেন,“কিন্তু আন্তরিক যে সেই যিহূদী।”  অর্থাৎ, অন্তরে যে যিহূদী সে-ই আসল যিহূদী। 
যে ব্যক্তি তার নিজের অন্তরে ঈশ^রকে কাজ করার সুযোগ দেয়, তখন প্রশংসা এবং গৌরব পাবার যোগ্য কে?  মানুষ না-কি ঈশ^র?
একজন ধর্মকর্মে আগ্রহী লোক তার সব রকম ধর্মীয় কর্মকা-ে নিজে ধার্মিক হতে চেষ্টা করে। কিন্তু তখনো তার অন্তরে মন্দতা থেকে যায়। ধর্মীয় কর্মকা- কখনো আমাদের সব পাপ মোচন করতে পারে না। বাহ্যিক দৃষ্টিতে তাকে ভালো দেখা যায়, কিন্তু ঈশ^র দেখেন অন্তঃকরণ। তিনি আমাদের পাপেপূর্ণ অন্তঃকরণ দেখতে পান। সুতরাং অন্তঃকরণের পরিবর্তন ছাড়া বাহ্যিক ধর্মকর্ম ঈশ^রের দৃষ্টিতে ঐ ডুমুর গাছের পাতার মতন।
গ।     অনেকে বাপ্তিস্ম (জলে অবগাহন) দ্বারা পাপ থেকে মুক্তির চেষ্টা করে।
অন্যান্য অনেকে ঈশ^রের দৃষ্টিতে প্রকৃত ধার্মিক প্রমাণ করার চেষ্টায় বাপ্তিস্ম নিয়ে থাকে। কিন্তু এক ব্যক্তি তার পাপ থেকে মুক্তির জন্য এবং ঈশ^রের দৃষ্টিতে তার অপরাধ মুছে ফেলার বিষয়ে বাপ্তিস্মের উপযুক্ততার বিষয়ে পবিত্র বাইবেল কী বলে?
ইফিষীয় ২:৮ পদ, ঈশ^রের দয়া অনুগ্রহে পরিত্রাণের উপায় কী? তাহলো “বিশ^াস”, কিন্তু বাপ্তিস্মে নয়।
তীত ৩:৪ পদ,
“কিন্তু যখন আমাদের মুক্তিদাতা ঈশ^রের মধুর স্বভাব এবং মানবজাতির প্রতি প্রেম প্রকাশিত হইল, তখন তিনি আমাদের কৃত ধর্মকর্মহেতু নয়, ”
অর্থাৎ যখন আমাদের মুক্তিদাতা ঈশ^রের দয়া ও ভালোবাসা প্রকাশিত হলো তখন তিনি আমাদের উদ্ধার করলেন। আমাদের দ্বারা কোনো সৎ ও ভালো কাজের কারণে তিনি আমাদের পরিত্রাণ করেননি।
এই পদ অনুসারে আমরা কীসে রক্ষা পাব না? “কৃত ধর্মকর্মহেতু নয়” অর্থাৎ আমাদের দ্বারা কোনো সৎ ও ভালো কাজের কারণে আমরা রক্ষা পাবো না। কীভাবে আমাদের সমস্ত পাপ পরিষ্কার করা যায়?
ইফিষীয় ৫:২৬ পদ, “তিনি জল¯œান দ্বারা বাক্যে তাহাকে শুচি করিয়া পবিত্র করেন” অর্থাৎ তিনি . . পবিত্র করবার জন্য তাঁর বাক্যের মধ্য দিয়ে পানিতে ধূয়ে . . ”  
বাইবেল খুলে পড়–ন লূক ২৩:৩২-৩৩,৩৯-৪৩ পদ। ক্রুশের উপর এক চোর পরিত্রাণ পেয়েছিল। সে কি কখনো বাপ্তাইজিত হয়েছিল। এর উত্তর হলো কখনোই না।
আপনার এই বাইবেল আলোচনা থেকে বাপ্তিস্মের দ্বারা আপনার পাপ কতটুকু মুছে ফেলার কথা বলে?    
সম্পূর্ণভাবে?  ,  কিছুটা?  ,  কোনোভাবেই না?        
ঘ।     অনেকে সরলতা বা সততার দ্বারা পাপ থেকে মুক্তির চেষ্টা করে।
অনেকে বিশ্বাস করে যে সহজ ও সরলভাবে তারা যা কিছুই বিশ্বাস করুক না কেন, ঈশ^রের সদয় সান্নিধ্য ও তাঁর দয়া পেতে তাই-ই যথেষ্ট। তারা শুধুমাত্র যা চিন্তা করে তা-ই সর্বোত্তম আর তাতে ঈশ^র সন্তুষ্ট হবেন, আর তিনি তাদের স্বর্গে গ্রহণ করবেন।
কিন্তু ভেবে দেখুন, ঈশ^র হিতোপদেশ ১৪:১২ পদ কী বলেন,
“একটি পথ আছে, যাহা মানুষের দৃষ্টিতে সরল; কিন্তু তাহার পরিণাম মৃত্যুর পথ।” অর্থাৎ একটা পথ আছে যেটা মানুষের চোখে ঠিক মনে হয়, কিন্তু সেই পথের শেষে থাকে মৃত্যু।
মানুষ যেমন চিন্তা করে, ঈশ^র তেমনি চিন্তা করেন না। স্বর্গে প্রবেশের জন্য মানুষ যে পথটি সরল মনে করে ঈশ^র তা গ্রহণ করেন না। প্রকৃতপক্ষে ঐসব উপায় অনন্ত মৃত্যুর পথ, ঈশ^রের থেকে চির বিচ্ছেদ হওয়া। আমরা ৪র্থ পাঠে দেখেছি যে, মানুষের পাপের শেষ পরিণতি মৃত্যু। শারীরিক এবং আত্মিক মৃত্যু উভয়ই হলো ঈশ^র থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া। আমাদের উপর এই বিচ্ছেদের প্রভাব শুধুমাত্র বর্তমানেই নয়, কিন্তু এর প্রভাব আমাদের উপরে অনন্তকালব্যাপী।
রোমীয় ৬:২৩ পদ,
“কেননা পাপের প্রতিফল মৃত্যু।” পাপ যে বেতন দেয় তা মৃত্যু। পাপের পারিশ্রমিক হলো মৃত্যু।
প্রকাশিত বাক্য ২০:১৩-১৫ পদ,
“আর সমুদ্র নিজের মধ্যবর্ত্তী মৃতদিগকে সমর্পণ করিল, এবং মৃত্যু ও কবর নিজেদের মধ্যবর্তী মৃতদিগকে সমর্পণ করিল, এবং তাহারা প্রত্যেকে আপন আপন কার্যানুসারে বিচারিত হইল। পরে মৃত্যু ও  পাতাল (কবর) অগ্নিহ্রদে নিক্ষিপ্ত হইল; তাহাই, অর্থাৎ সেই অগ্নিহ্রদ, দ্বিতীয় মৃত্যু। আর জীবন-পুস্তকে যে কাহারও নাম লিখিত পাওয়া গেল না, সে অগ্নি হ্রদে নিক্ষিপ্ত হইল।”
অর্থাৎ যেসব মৃত লোকেরা সমুদ্রের মধ্যে ছিল, সমুদ্র তাদের তুলে দিল। এছাড়া মৃত্যু ও কবরের মধ্যে যে সব মৃত লোকেরা ছিল, মৃত্যু ও কবর তাদেরও ফিরিয়ে দিল। প্রত্যেককে তার কাজ অনুসারে বিচার করা হলো। পরে মৃত্যু ও কবরকে আগুনের হ্রদে ফেলে দেওয়া হলো। এই আগুণের হ্রদে পড়াই হলো দ্বিতীয় মৃত্যু। যাদের নাম সেই জীবন-পুস্তকে পাওয়া গেল না, তাদেরও আগুনের হ্রদে ফেলে দেওয়া হলো।
প্রতিটি মানুষের নিজেদের পাপ ঢাকার চেষ্টা এবং ঈশ^রের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টা শুভ নয়। একজন মানুষ তার পরিত্রাণ এবং ঈশ^রের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে হলে, তাকে অবশ্যই ঈশ^রের শর্ত সাপেক্ষে ঈশ^রের কাছে আসতে হবে, তার নিজের শর্ত সাপেক্ষে নয়। ঈশ^রের দ্বারা পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে আমরা পরবর্তী পাঠে আলোচনা করব।








প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখুন
৫ম পাঠ
১।    ঈশ^রের সম্মুখে মানুষ যে চারটি উপায়ে তাদের পাপ মুছে ফেলার চেষ্টা করে তার তালিকা লিখুন।

ক।                                      
   
       

খ।

       

গ।

       

ঘ।













৬ষ্ঠ পাঠ
ঈশ^রের পথ
আমাদের বুঝতে হবে যে, ঈশ^রের বাক্যের সমস্ত সঙ্কল্প, বিবেচনা, যুক্তি আমাদের নিজেদের অনুসরণ, মনোযোগী ও সত্য বলে মেনে নেওয়া ছাড়া, সম্পর্কহীন অন্য আর কোনো যুক্তি বা অভিপ্রায় নেই। আজকের এই আলোচনায় ঈশ^রের দ্বারা আমাদের পরিত্রানের পথ বা আমাদের পাপ সকল মুছে ফেলতে ঈশ^র যে পথ দেখিয়েছেন পবিত্র বাইবেলের সেই অংশগুলো পাঠ করব!
আবরণীর প্রয়োজনে-বস্ত্র অথবা ডুমুর বৃক্ষের পাতা। আদিপুস্তক ৩:২১ পদ
ঈশ^রের আবরণীয় পশুর চর্ম দ্বারা আদম ও হবার লজ্জা ঢাকার বিষয়ে চারটি সত্য জানা যায়।
ক।     আদম ও হবা এক প্রকার ঘাগরা জাতীয় (হাঁটুর নিচ পর্যন্ত) আবরণীর প্রয়োজন ছিল।
১।     আদিপুস্তক ৩:৭ পদ অনুসারে পাপের প্রথম ফলাফল কী ছিল?
    “তাহাতে তাঁহাদের উভয়ের চোখ খুলিয়া গেল, এবং তাঁহারা বুঝিতে পারিলেন যে তাঁহারা উলঙ্গ; আর ডুমুরগাছের পাতা সিলাইয়া ঘাগ্রা তৈরি করিয়া লইলেন।”
২।    পুনরায় ৭ পদ অনুসারে আদম ও হবা যে উলঙ্গ তা বুঝতে পেরে তারা কী করলেন? “ডুমুর বৃক্ষের পাতা সিলাইয়া ঘগ্রা  তৈরি করিয়া লইলেন।”                    
৩।     ঈশ^র কি সম্মত ছিলেন যে আদম ও হবার উলঙ্গতা গোপন রাখা প্রয়োজন? হ্যাঁ না-কি না।
    আদিপুস্তক ৩:২১ পদ,
     “আর সদাপ্রভু ঈশ^র আদম ও তাঁহার স্ত্রীর জন্য চামড়ার বস্ত্র তৈয়ার করিয়া তাঁহাদিগকে পরাইলেন।”
৪।     আদম ও হবা তাদের উলঙ্গতা অবশ্যই বুঝতে পেরেছিল, যার কারণে তারা যেমনি মানসিকভাবে, তেমনি শারীরিক প্রয়োজনে তাদের বস্ত্র বা আবরণীর প্রয়োজনবোধ করেছিল। অর্থাৎ এটি ছিল তাদের পাপ সম্পর্কিত একটি ব্যাপার। আদম এবং হবা অনুভব করতে পেরেছিল যে তারা পাপ করেছে, ফলে ঈশ^রের সঙ্গে নর-নারীদের একে অন্যের মধ্যে সম্পর্কের যেন এক গোলমাল বেঁধে গেল।
খ।     আমাদের নিজেদের তৈরি আবরণী কার্যকারী নয়।
পরবর্তী পাঠে এই পদের বিষয়ে জানব যে, আমাদের নিজেদের জন্য নিজেদের যোগ্যতায় যে-কোনো আবরণী তৈরি করি না কেন তা উপযুক্ত নয়। যে-রকম আদম ও হবার ক্ষেত্রে দেখা যায়। আমরা লক্ষ্য করি যে, তারা যে ডুমুর গাছের পাতা দিয়ে যে আবরণী প্রস্তুত করেছিলেন, ঈশ^র তা গ্রহণ করেননি। এমনকি আমরা যে আবরণীর চেষ্টা করি না কেন, তা-ও তিনি গ্রহণ করবেন না, যেমনটি আমরা পূূর্বের পাঠে দেখেছি!
গ।     ঈশ^রকেই আবরণীর যোগান দিতে হবে!
তৃতীয় এবং প্রধান শিক্ষাটি এই যে আমাদের পাপের জন্য ঈশ^রকেই আবরণীর যোগান দিতে হবে, কেননা পাপরূপ সমস্যার সমাধানে একমাত্র ঈশ^রই যোগ্য।
১।     আদিপুস্তক ৩:২১ পদ অনুসারে,
    আদম ও হবার জন্য কে উপযুক্ত আবরণী প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন? “আর সদাপ্রভু ঈশ^র আদম ও তাঁহার স্ত্রীর জন্য চামড়ার বস্ত্র তৈরি করিয়া তাঁহাদিগকে পরাইলেন।”
২।     উল্লেখ নেই যে, আদম ও হবার লজ্জার আবরণের জন্য ঈশ^র কী বা কোন্ জাতের পশু হত্যা করেছিলেন, অনেকে বিশ্বাস করেন যে, সম্ভবত মেষ। ঈশ^র কী বা কোন্ জাতের পশু হত্যা করেছিলেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো আদম এবং হবার পরিধেয় বস্ত্রের জন্য তিনিই একমাত্র ঈশ^র যিনি পশু হত্যা করেছিলেন।
৩।     আদম এবং হবা যখন এদন উদ্যান ত্যাগ করে, তখন তারা পিছনে একটি উৎসর্গীকৃত রক্তাক্ত বলি উপলব্ধি করেছিল Ñ যা ছিল তাদের পাপের পরিণাম।
৪।     আমরা এখন শিখতে যাচ্ছি যে, এই পতনের ঘটনা এবং অন্যান্য ঘটনা যীশু খ্রীষ্টকে কেন্দ্র করেই সেই অর্থই প্রকাশ হয় যে তিনিই আমাদের একমাত্র যোগ্য মুক্তিদাতা এবং তাঁর ধার্মিকতা আমাদের আবরণ স্বরূপ।
৫।     আর তারই একটি স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায় যোহন ১:২৯ পদে,
    যীশু খ্রীষ্টকে “ঈশ^রের মেষশাবক” বলা হয়েছে “যিনি জগতের পাপভার লইয়া যান।”
ঘ।     প্রাণীটিকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল!
এই বিষয়টি আমাদের ৪র্থ আলোচনা পাঠে নিয়ে যায়; যদি আদম এবং হবাকে পশুর চামড়ার দ্বারা আবরণ দিতে হয় তাহলে একটি পশুকে জীবন দিতে হয়েছে।
১।    একইভাবে আমাদের যীশু খ্রীষ্টের ধার্মিকতার বস্ত্র পরিধান করতে হবে, তাই সেই চামড়ার নিদর্শনে কি-না যীশুকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে।
২।     ইব্রীয ৯:২২ পদ অনুসারে পাপের ক্ষমার জন্য কী আবশ্যক?
        “আর ব্যবস্থানুসারে প্রায় সকলেই রক্তে শুচিকৃত হয়, আর রক্তপাত ব্যতিরেকে পাপমোচন হয় না।”
        অর্থাৎ মোশির আইন-কানুন মতে প্রায় প্রত্যেক জিনিসই রক্তের দ্বারা শুচি করা হয় এবং রক্তপাত না হলে পাপের ক্ষমা হয় না।
৩।     অপরাধী যেন জীবন পেতে পারে সেজন্য নিষ্পাপ ধার্মিক ব্যক্তির মৃত্যুবরণ করা প্রয়োজন ছিল।
     ১পিতর ৩:১৮ পদ,
    “কারণ খ্রীষ্টও একবার পাপসমূহের জন্য দুঃখভোগ করিয়াছিলেন Ñ সেই ধার্মিক ব্যক্তি অধার্মিকদের জন্য Ñ যেন আমাদিগকে ঈশ^রের নিকটে লইয়া যান। তিনি মাংসে হত, কিন্তু আত্মায় জীবিত হইলেন।”
    অর্থাৎ যীশু খ্রীষ্টও পাপের জন্য একবারই মরেছিলেন। ঈশ^রের কাছে আমাদের নিয়ে যাবার জন্য সেই নির্দোষ লোকটি পাপীদের জন্য, অর্থাৎ আমাদের জন্য মরেছিলেন। শরীরে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল, কিন্তু আত্মায় তাঁকে জীবিত করা হয়েছিল।
৪।     সেই নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তখন কোনো মৃত্যুই ছিল না। আদম এবং হবার মনের মধ্যে দু’টি চিন্তা অবশ্যই স্থান পেয়েছিল।
ক।    মৃত্যু এক সহজাত (জন্মগত প্রবৃত্তি) আতঙ্ক। এই সময়ে তারা সম্ভবত অনুমান করে নিশ্চয় উপলব্ধি করতে পেরেছিল, যে পাপের পরিণামেই যদি এই মৃত্যু হয়, তাহলে পাপ তার চেয়েও ভয়ঙ্কর।
খ।     দ্বিতীয়তঃ তারা বুঝতে পেরেছিল যে, এক আশ্চর্যজনকভাবে ঈশ^রের অনুগ্রহ তারা পেতে থাকবে। ঈশ^রের আদেশ লঙ্ঘনের কারণে তাদের জীবন কেড়ে নেবার পূর্ণ অধিকার তাঁর ছিল। তিনি তাদের বুঝিয়েছেন যে, পাপের পিছে পিছে মৃত্যু অবশ্যই অনুসরণ করে। তথাপি, তিনি তাঁর অনুগ্রহ প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন যে, তাদের স্থানে একজন নিষ্পাপ ব্যক্তির মৃত্যু সম্ভবপর।
৫।     এভাবে ঈশ^র দেখিয়েছেন যে, আদম ও হবা Ñ পাপের প্রতিটি অপরাধীদের জন্য প্রতিদান হিসাবে একটি নিষ্পাপ-নিষ্কলঙ্ক একটি প্রাণীর বলি হওয়া সম্ভব। আমাদের পাপের মুক্তির জন্য ঈশ^রের দ্বারা উৎসর্গীকৃত এই বলির চিত্রে সেটিই বিবেচিত হয়।
হোম বলির প্রথা Ñ (যজ্ঞীয় প্রথা)
ক।     বলির সূূচনা Ñ
মানুষের পতনের ফলে যজ্ঞীয় বলির প্রথা প্রকাশ হয়। এটি ঈশ^রের সান্নিধ্যে আসার একটি মাধ্যম। ঈশ^রের কার্যে আদম ও হবার ডুমুর গাছের পাতার প্রয়োজন হয় না (আদিপুস্তক ৩:৭,২১ পদ) একটি শর্তে, পাপের আবরণ হয় একমাত্র রক্ত বিসর্জনেই।
১।      পূূর্বের যজ্ঞীয় বলির প্রথার প্রচলিত রীতির ঘটনা পবিত্র বাইবেলে দেখা যায়।
ক।  হেবল-এর দ্বারা      আদিপুস্তক ৪:১-৭ পদ
খ।  নোহ-এর দ্বারা           আদিপুস্তক ৮:২০ পদ
গ।  যাকোব-এর দ্বারা        আদিপুস্তক ৩১:৫৪ পদ
ঘ।  ইয়োব-এর দ্বারা       ইয়োব ১:৫; ৪২:৮ পদ
২।     ঈশ^রের প্রজাদের এদন ত্যাগ কালে ঈশ^রের সান্নিধ্য পাবার জন্য এক হোম বলি উৎসর্গের বিষয় জেনে ছিল এবং তার অনুশীলন করে চলেছিল।
    পাঠ করুন যাত্রাপুস্তক ১০:২৫ পদ,
    “মোশি কহিলে, আমাদের ঈশ^র সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করণার্থে আমাদের হস্তে বলি ও হোমদ্রব্য সমর্পণ করা আপনার কর্তব্য।” 
    কার উদ্দেশ্যে এই বলি উৎসর্গ ছিল?                        ।
খ।      দুই ভাইয়ের কাহিনী (আদিপুস্তক ৪:১-১৬ পদ)
আদিপুস্তক ৩ অধ্যায়ে আমরা মানব জাতির পাপের সূচনা সম্পর্কে জানতে পারি। ৪ অধ্যায়ে আমরা তাদের পাপের ফল লক্ষ্য করি। ৪র্থ অধ্যায়ে লক্ষ্য করি মানুষ পাপ দ্বারা কী ভয়াবহরূপে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। আদমের অবিশ্বাস ও তার অবাধ্যতার দ্বারা সে ঈশ^র থেকে দূরে চলে গিয়েছিল এবং সেই পাপ এমনই ছিল যে, সে তার নিজের উপরে আর সমগ্র মানব জাতির উপরে ঈশ^রের বিচার ডেকে নিয়ে এলো। আমাদের পর্যায়ক্রমে মানব জন্মের মাধ্যমে আপনার ও আমার মধ্যেও ঐ একই পাপের স্বভাব রয়েছে।
১।      ঈশ^র জীবন দাতা।
২।     কয়িন এবং হেবল দু’জনেই হোম যজ্ঞ উৎসর্গ করার জন্য ঈশ^রের নিকটে এসেছিল।
৩।      তারা উভয়েই প্রয়োজনীয় এবং সম্মানজনক পেশায় নিযুক্ত ছিল।  
         আদিপুস্তক ৪:২ পদ পাঠ করুন,
    “হেবল মেষপালক ছিল, ও কয়িন কৃষক ছিল।” হেবল ভেড়ার পাল চরাত আর কয়িন জমি চাষ করত।
    হেবলের পেশা কী ছিল?                        ।
         কয়িনের পেশা কী ছিল?                        ।   
৪।    তাদের সঙ্গে ঈশ^রের সম্পর্কের মধ্যে দুই ধরনের পার্থক্য ছিল। হেবল তার বিশ্বাসের কারণে, ঈশ^রের কর্তৃত্বে সমর্পিত হয়েছিল। অন্যদিকে কয়িন, অবিশ্বাসের কারণে ঈশ^রের নির্দেশ অমান্য করেছিল।
    আদিপুস্তক ৪:৩ পদ পাঠ করি,
    “পরে কালানুক্রমে কয়িন উপহাররূপে সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে ভূমির ফল উৎসর্গ করিল।”
    অর্থাৎ, পরে এক সময়ে কয়িন সদাপ্রভুর কাছে তার জমির ফসল এনে যজ্ঞ করল।
হেবল এবং কয়িন ঈশ^রের আরাধনা করার জন্য একটি নির্ধারিত স্থানে উপহার এনেছিল। তাদের উৎসর্গের মাধ্যমে তাদের প্রতি ঈশ^রের দৃষ্টিগোচরের জন্য ঈশ^রের প্রতি তারা উৎসর্গ দান করত। তাই তারা ঈশ^রের নিকটে উপহার নিয়ে আসল। ইব্রীয় ১১:৪ পদে উল্লেখ করে যে, ‘বিশ^াসে’ হেবল একটি উপহার উৎসর্গ করল।
৫।    ঈশ^র কয়িনের উপহার গ্রহণ করলেন না। কয়িনের উপহারে এমন কী গলদ ছিল যে, ঈশ^র তার যজ্ঞ আয়োজন আর গ্রহণ করলেন না (আদিপুস্তক ৪:৩ পদ)? কেউ হয়তো বলবে, “কয়িনের উপহারে আমি তো কোনো অন্যায় বা ভুল দেখি না।” এটা আপনার দৃষ্টিভঙ্গি। কিন্তু ঈশ^রের মত অনুসারে নয়। ঈশ^রের ইচ্ছাই গুরুত্বপূর্ণ।
    ৫ম পদ অনুসারে কয়িনের উপহার সম্পর্কে ঈশ^র কী চিন্তা করেছিলেন?
         “কিন্তু কয়িনকে ও তাহার উপহার গ্রাহ্য করিলেন না।”
ক।     মানব স্বভাব মন্দ তাই কয়িনের নিয়ে আসা উপহারটি প্রত্যাখ্যান করা হলো। ঈশ^র একটি রক্ত উৎসর্গ আশা করেছিলেন যা মুক্তিদাতাকে ইঙ্গিত করে, যিনি পৃথিবীতে আগমন করবেন। ঈশ^র কয়িনের নিকট থেকে ঐ মোতাবেক উপহারের আশা করেছিলেন, তার নিজের হাতের কর্মফল (ভূমির ফল) নিয়ে আসায় নয়।
খ।     কয়িনের নিয়ে আসা সেই উপহার অগ্রাহ্য করা হলো যেন, মানুষের কার্যসমূূহ ঈশ^রের প্রতি উপস্থাপন করতে না পারে।
তীত ৩:৪,৫ পদ আমাদের জানায়,
“আমাদের কৃত ধর্মকর্মহেতু নয়, কিন্তু আপনার দয়ানুসারে পুনর্জন্মের ¯œান ও পবিত্র আত্মার নূতনীকরণ দ্বারা আমাদিগকে পরিত্রাণ করিলেন।”
অর্থাৎ, কোনো সৎ বা ভালো কাজ করার জন্য তিনি আমাদের উদ্ধার করেননি বা পরিত্রাণ দেননি, তাঁর করুণার জন্যই তা করলেন। পবিত্র আত্মার দ্বারা নতুন জন্ম দান করে ও নতুনভাবে সৃষ্টি করে তিনি আমাদের অন্তর ধুয়ে পরিষ্কার করলেন, আর এভাবেই তিনি আমাদের উদ্ধার করলেন।
চরিত্রের ব্যবধানে কয়িন ও হেবলের মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল তা না, কিন্তু পার্থক্যটি ছিল তাদের নিয়ে আসা উপহারে।
৬।     ঈশ^র হেবলের উপহারের হোম বলি (যজ্ঞ) গ্রহণ করলেন (আদিপুস্তক ৪: ৪ পদ)
ক।    যজ্ঞের উপহারস্বরূপ হেবল ঈশ^রের নিকটে কী উপহার এনেছিল?
        “হেবলও নিজের পালের প্রথমজাত কয়েকটি পশু ও তাহাদের মেদ উৎসর্গ করিল।”
খ।    ঈশ^র হেবলের উপহার সম্পর্কে কী বিবেচনা করলেন?
    “তখন সদাপ্রভু হেবলকে ও তাহার উপহার গ্রাহ্য করিলেন।”
গ।     এই কাজে হেবল ঈশ^রের সঙ্গে একমত প্রকাশ করল যে, সে একজন পাপী এবং ঈশ^রই পারেন তার অনন্ত শাস্তি ক্ষমা করতে। সুতরাং সে ঈশ^রের আদেশমালা অনুসরণ করল। সে ঈশ^রের পদ্ধতি অনুসারে কাজ করল।
গ।          নিস্তার পর্ব
যাত্রাপুস্তকে ই¯্রায়েল জাতির ইতিহাস সম্পর্কে এবং ঈশ^র কীভাবে তাদেরকে মিসর দেশের দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছিলেন সেই ইতিহাস আমরা পাই। লোকেরা বহু বৎসর পর্যন্ত দাসত্বে বন্দি ছিল, আর ঈশ^র মোশিকে ফরৌণের (মিসর রাজার) কাছে এই দাবি নিয়ে পাঠালেন, যে ঈশ^রের প্রজাদেরকে ছেড়ে দিতে হবে। ফরৌণ এই ভেবে সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করল যে, এত কাজের লোকদের ছেড়ে দিলে সে লোকসানে পড়বে। এই রকম উত্তরে ঈশ^র মিসরে কয়েকটি আঘাত পাঠালেন, এটাই প্রমাণ করে যে, এটি শুধুমাত্র মানুষের বিরোধিতাই নয়, বরং ঈশ^রের আদেশ করা। ফরৌণ রাজা তখনো ঈশ^রের কথা শুনতে চাইল না। সুতরাং যাত্রাপুস্তক ১২ অধ্যায়ে ঈশ^র ই¯্রায়েল সন্তানদের আদেশ করলেন যেন প্রত্যেক পরিবার একটি করে মেষ বলি দেয় এবং সেই রক্ত তাদের ঘরের দরজার দুই বাজুতে ও কপালিতে লেপন করে। অত্যন্ত স্পষ্ট আদেশ দেওয়া হয়েছিল।
    যাত্রাপুস্তক ১২:৩-৭ পদ,
    “সমস্ত ই¯্রায়েল ম-লীকে এই কথা বল, তোমরা এই মাসের দশম দিনে তোমাদের পিতৃবংশ অনুসারে প্রত্যেক পরিবার এক এক বাড়ীর জন্য এক একটি ভেড়ার বাচ্চা লইবে। আর ভেড়ার বাচ্চা ভোজন করিতে যদি কাহারও পরিজন অল্প হয়, তবে সে ও তাহার গৃহের নিকটবর্তী প্রতিবাসীদের প্রাণিগণের সংখ্যানুসারে একটি ভেড়ার বাচ্চা লইবে। তোমরা এক এক জনের খাওয়ার ক্ষমতা অনুসারে ভেড়ার বাচ্চা গুণিয়া লইবে। তোমাদের সেই ভেড়ার বাচ্চাটি নির্দোষ ও এক বৎসরের পুংশাবক হইতে হইবে; তোমরা ভেড়াপালের কিম্বা ছাগপালের মধ্য হইতে তাহা লইবে; আর এই মাসের চতুর্দশ দিন পর্যন্ত রাখিবে; পরে ই¯্রায়েল ম-লীর সমস্ত সমাজ সন্ধ্যাকালে সেই বাচ্চাটি জবাই করিবে। আর তাহারা তাহার সামান্য রক্ত লইবে, এবং যে যে গৃহমধ্যে ভেড়ার বাচ্চার মাংস খাইবে, সেই সেই গৃহের দরজার দুই বাজুতে ও চৌকাঠে তাহা লেপিয়া দিবে।”
যে মেষশাবকটি (ভেড়ার বাচ্চা) মনোনীত করা হবে, সেটি চৌদ্দ দিন পর্যন্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে, এটি নিখুঁত বা অসুস্থ কি-না। তারপর সেই মেষটি হত্যা করে তার রক্ত একটি পাত্রে রেখে দরজার বাজুতে এবং কপালিতে লেপন করতে হয়েছিল।
যাত্রাপুস্তক ১২:১২-১৩ পদ,
“কেননা সেই রাত্রিতে আমি মিসর দেশের মধ্য দিয়া যাইব, এবং মিসর দেশের মানুষের ও পশুর যাবতীয় প্রথমজাতকে আঘাত করিব, এবং মিসরের যাবতীয় দেব-দেবতার বিচার করিয়া শাস্তি দিব; আমিই সদাপ্রভু। অতএব তোমরা যে যে গৃহে থাক, তোমাদের পক্ষে ঐ রক্ত নিশানাস্বরূপ সেই সেই গৃহের উপরে থাকিবে; তাহাতে আমি যখন মিসর দেশকে আঘাত করিব, তখন সেই রক্ত দেখিলে তোমাদিগকে ছাড়িয়া আগে যাইব, সংহারক আঘাত তোমাদের উপরে পড়িবে না।”  
    তারপর ঈশ^র তাদের বলেন যে, তিনি সমস্ত মিশর দেশের প্রথমজাতদের (জন্ম হওয়া প্রথম সন্তান) হত্যা করবেন, এই কারণে যে, তারা ঈশ^রের আদেশ অমান্য করেছে। রক্ষা পাবার একমাত্র উপায় ঈশ^রের দেওয়া মুক্তির পদ্ধতি অনুসরণ করা। যারা একটি মেষশাবক হত্যা করে তার রক্ত লেপন করেছিল, তারাই রক্ষা পেয়েছিল। আর যারা ঈশ^রের আদেশমালা অগ্রাহ্য করেছিল, পরদিন সকালে দেখা গেল যে, তাদের প্রথম জাতদের (জন্ম হওয়া প্রথম সন্তান) মৃত্যু হয়েছে।


ঘ।      বলির উদ্দেশ্য
পুরাতন নিয়মের বলি ছিল একটি মাধ্যম যার দ্বারা পাপী মানুষ পবিত্র ঈশ^রের সান্নিধ্যে আসতে পেরেছিল। অন্য আর কোনো মাধ্যম গ্রহণীয় ছিল না।
ঙ।     বলির অর্থ (তাৎপর্য)
১।     ঈশ^রের সঙ্গে সম্পর্ক ও সহভাগিতা রক্ষা করার জন্য পুরাতন নিয়মের বিশ^াসীদের পক্ষে বলির প্রথা পালনের প্রয়োজন ছিল।
    বিশ^াসের মাধ্যমে বলি দেওয়ায় রত থাকত।
    এই কাজগুলো পরিত্রানের জন্য ছিল না।
    এই কাজগুলো পরিত্রানের উদ্দেশ্যে পরিচালনা করা হতো না।
    বলিগুলো ছিল একজনের স্পষ্ট বর্ণনা যিনি নিষ্কলঙ্ক নির্দোষ বলিস্বরূপ হবেন।
২।     নতুন নিয়ম সেই অতীতের বলি উৎসর্গের প্রতি লক্ষ্য রেখে মানুষের স্বার্থে খ্রীষ্টের পরিচর্যা ও তাঁর উত্তম পালকের কার্যের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করে।
পড়ৃন, ইফিষীয় ৫:২ পদ,
“আর প্রেমে চল, যেমন খ্রীষ্টিও তোমাদিগকে প্রেম করিলেন এবং আমাদের জন্য ঈশ^রের উদ্দেশ্যে, সৌরভের জন্য, উপহার ও বলিরূপে নিজেকে পেশ করিলেন।”
অর্থাৎ, খ্রীষ্ট যেমন আমাদের প্রেম করেছিলেন এবং আমাদের জন্য ঈশ^রের উদ্দেশ্যে সুগন্ধযুক্ত বলি হিসাবে নিজেকে দিয়েছিলেন।
পড়–ন, ইব্রীয় ৯:১৪ পদ, আপনি যেন জীবন্ত ঈশ^রের সেবা করতে পারেন, তাই মৃত (অকর্ম, বাজে) কার্য থেকে কীসে আপনাকে শুচি করবে?
“যিনি অনন্তজীবী আত্মা দ্বারা নির্দোষ বলিরূপে নিজেকেই ঈশ^রের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করিয়াছেন, সেই খ্রীষ্টের রক্ত তোমাদের সংবেদকে মৃত ক্রিয়াকলাপ হইতে কত না অধিক নিশ্চয় শুচি করিবে, যেন তোমরা জীবন্ত ঈশ^রের আরাধনা করিতে পার।”
অর্থাৎ যিনি অনন্ত পবিত্র আত্মার মধ্য দিয়ে ঈশ^রের কাছে নিজেকে নিখুঁত বলি হিসাবে দান করলেন সেই যীশুর রক্ত আমাদের বিবেককে নিষ্ফল কাজকর্ম থেকে আরও কত না বেশী করে শুচি করবে, যাতে আমরা জীবন্ত ঈশ^রের আরাধনা করতে পারি।
পড়ৃন, ইব্রীয় ৯:১৫-২৮ পদ।
২৮ পদ, “তেমনি খ্রীষ্টিও অনেকের পাপের বোঝা তুলিয়া লইবার জন্য একবার উৎসৃষ্ট (উৎসর্গীকৃত) হইয়াছেন।”
অর্থাৎ সেভাবে অনেক লোকের পাপের বোঝা বইবার জন্য খ্রীষ্টকে একবারই বলি দেওয়া হয়েছে।
চ।      লেবীয়দের বলি ও যজ্ঞ উৎসর্গ Ñ পদ্ধতি।
১।     পুরাতন নিয়মের বিশ^াসীদের লেবীয় পদ্ধতির আরাধনার গুরুত্ব আমাদের কল্পনা করা কঠিন। ই¯্রায়েলদের ঈশ^র তাঁর বিশেষ জাতিরূপে মনোনীত করেন এবং তিনি তাদের আরাধনার জন্য একটি বিশেষ কেন্দ্রস্থল স্থাপন করলেন, সেটি হলো ধর্মধাম (ঞধনবৎহধপষব)। তখনকার বিশ^াসীরা যদি তাদের প্রভুর কাছে তাদের ভক্তি উৎসর্গ প্রকাশ করতে চাইত, তবে তা হতে হতো ধর্মধামে। ঈশ^রের উৎসর্গ অর্পণ করার মূল উপাদানের মাধ্যম ছিল বিভিন্ন ধরনের উপহার যার বিবরণ লেবীয় পুস্তকে প্রথম সাতটি অধ্যায়ে বর্ণিত আছে। এগুলো বিভিন্ন প্রকার উপহার, যেগুলো ই¯্রায়েল কর্তৃক বেদীর কেন্দ্র স্থলে নিয়ে আসতে হতো।
২।    লেবীয় উপহার, এ নামটি এসেছে লেবীয় বংশ থেকে। ই¯্রায়েলদের অবশিষ্টাংশ লোকদের পক্ষে যজ্ঞ উৎসর্গ করার জন্য ঈশ^র এই লেবীয় বংশ থেকে পুরোহিত বা যাজক মনোনীত করেছিলেন। ই¯্রায়েল সন্তানগণ মিশর দেশ পরিত্যাগ করার এবং প্রতিজ্ঞাত দেশে (কনান দেশ) প্রবেশের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করার সময় থেকেই ঈশ^র কর্তৃক এই উৎসর্গ যজ্ঞ আরম্ভ হয়েছিল। ঈশ^র চেয়েছিলেন যেন একটি উপায়ে তারা তাদের পাপের প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করতে পারে এবং ঈশ^রের প্রতি তাদের ভক্তি আরাধনা প্রকাশ করতে পারে। আমরা পরে অবশ্য জানতে পারব যে, এই উৎসর্গ যজ্ঞ নিদর্শন ছিল আমাদের পাপের জন্য খ্রীষ্টের মহান ত্যাগ স্বীকার।
ছ।          রক্ত যজ্ঞের ব্যাখ্যা
সকল রক্ত যজ্ঞ প্রায়শ্চিত্তের উদ্দেশ্যেই উৎসর্গ করা হতো। অপরাধীর নির্দোষের জন্য এই প্রায়শ্চিত্তের বিনিময়ে সমাধা হয়েছে। প্রায়শ্চিত্ব ছিল ঈশ^রের একটি উপায়, মৃত্যুর বদলে পুনর্মিলন বা প্রতিকার। উৎসর্গীকৃত বলির পশুগুলোর বিশেষ যোগ্যতার দরকার ছিল। নিচে সাধারণ যোগ্যতার বিশেষ গুণ দেওয়া গেল।
 ১।    বলির পশুটি অবশ্যই হতে হবে নিখুঁত, ঈশ^রের নির্দেশ অনুসারে নিখুঁত (লেবীয় ২৭:৯-১১ পদ)। বড় পশুগুলোর মধ্যে যেগুলো জাওর বা জাবর কাটে (গিলিত খাদ্য মুখে এনে পুনরায় চর্বণ করে) এবং দ্বিক্ষুর বিশিষ্ট, সেগুলো ব্যবহার করা যাবে।
২।    যে-কোনো উৎসর্গীকৃত পশুটি হতে হবে গৃহপালিত (বন্য নয় কিন্তু উৎসর্গদাতার পালিত হতে হবে)। বন-জঙ্গল থেকে শিকার করা কোনো পশু প্রকৃত উৎসগের্র উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না।
৩।    সকল পশু কম হলেও ৮ দিন বয়সের হতে হবে। নতুবা স্বভাবিক কারণেও পশুটির মৃত্যু হতে পারে।
৪।    পশুটির মান ঠিক সেই রকমই থাকবে যেন তার যৌবনের অতীত না হয় (জীবনের প্রথমাবস্থা/যুবা)। (লেবীয় ৯:৩; ১২:৬ পদ)।
৫।    ইব্রীয় ১০:৪ পদ,
    “কারণ ষাঁড়ের কি ছাগলের রক্ত যে গোনাহ্ দূর করিবে, ইহা হইতেই পারে না।”
    অর্থাৎ, ষাঁড় ও ছাগলের রক্ত কখনই পাপ দূর করতে পারে না।
    এই পদ অনুসারে পাপের মূল্য পরিশোধে এই রক্তের দ্বারা কি সম্ভব ছিল?  হ্যাঁ না-কি না।
৬।     ইব্রীয় ৯:১১-১৪ পদে আমরা দেখি যে, একমাত্র খ্রীষ্টের রক্ত পাপ দূর করতে পারে।
“কিন্তু খ্রীষ্ট, আগামী উত্তম উত্তম বিষয়ের মহাযাজকরূপে উপস্থিত হইয়া, যে মহত্তর ও সিদ্ধতর তাঁবু যাহা হাতে তৈরি করা নয়, অর্থাৎ এই সৃষ্টির অসম্পর্কীয়, সেই তাবু দিয়া Ñ ছাগদের ও গোবৎসদের রক্তের গুণে নয়, কিন্তু নিজ রক্তের গুণে Ñ একবারে পবিত্র স্থানে প্রবেশ করিয়াছেন, ও অনন্তকালীন মুক্তি উপার্জন করিয়াছেন। কারণ ছাগদের ও ষাঁড়দের রক্ত এবং অশুচিদের উপরে ছিটানো গাভীভস্ম যদি দেহের (মাংসের) শুচিতার জন্য পবিত্র করে, তবে, যিনি অনন্তজীবী আত্মা দ্বারা নির্দোষ বলিরূপে নিজেকেই ঈশ^রের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করিয়াছেন, সেই খ্রীষ্টের রক্ত তোমাদের সংবেদকে মৃত ক্রিয়াকলাপ হইতে কত অধিক না নিশ্চয় শুচি করিবে, যেন তোমরা জীবন্ত ঈশ^রের আরাধনা করতে পার!”
অর্থাৎ খ্রীষ্ট এসেছিলেন ভবিষ্যতের সব উন্নতির বিষয়ের মহা-পুরহিত হয়ে। আরও মহৎ ও আরও ভালো আরাধনা-তাম্বুতে ঈশ^রের আরাধনা-কাজ করার জন্য তিনি এসেছিলেন। এই তাম্বু মানুষের হাতে তৈরী নয়, অর্থাৎ তা জগতের কোনো জিনিষ নয়। ছাগল ও বাছুরের রক্ত নিয়ে খ্রীষ্ট সেই মহাপবিত্র স্থানে ঢোকেননি। তিনি নিজের রক্ত নিয়ে এরবারই সেখানে ঢুকেছিলেন। এভাবে তিনি চিরকালের জন্য পাপ থেকে মুক্তির উপায় করলেন। যারা অশুচি হতো তাদের উপর ছাগল ও ষাঁড়ের রক্ত বা বাছুর-পোড়ানো ছাই ছিটানো হতো; তাতে তাদের বাইরের শরীরটাই কেবল শুচি হয়ে পরিষ্কার হতো। কিন্তু যিনি অনন্ত পবিত্র আত্মার মধ্য দিয়ে ঈশ^রের কাছে নিজেকে নিখুঁত বলি উৎসর্গ হিসাবে দান করলেন সেই যীশুর রক্ত আমাদের বিবেককে নিষ্ফল কাজকর্ম থেকে আরও কত না বেশী করে শুচি করবে, যাতে আমরা জীবন্ত ঈশ^রের সেবা করতে পারি। 
পাপের মূূল্য দিতে অবশ্যই একজন নিষ্পাপ মানব জীবনের বলি দ্বারা হতে হবে। পশুর রক্ত মানুষের জীবনের তুল্য নয়। সমস্ত পশু বলি একটি মাত্র উদ্দেশ্য ছিল যে আগামীতে এ রকমই হবে, যখন খ্রীষ্ট এ জগতে আসবেন এবং মানুষের পাপের মূল্য দিতে তার প্রাণ উৎসর্গ করবেন।
আমাদের পরবর্তী পাঠে আমরা আপনাকে দেখাবো খ্রীষ্ট আপনার পাপ সকল মুছে ফেলতে কী করেছেন! আমরা আরো দেখব, কীভাবে তিনি অসংখ্য ভাববাণী পূর্ণ করেছেন, যার দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, তিনি বিশ্বের একমাত্র মুক্তিদাতা।
বিগত পাঠগুলোতে আপনি কী শিক্ষা লাভ করেছেন, যা আপনার কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে।

















প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখুন
৬ষ্ঠ পাঠ
১।    কেন আদম এবং হবার বস্ত্রের প্রয়োজন হলো?
       

        


        

২।    আদম এবং হবা তাদের উলঙ্গতা ঢাকার জন্য কী চেষ্টা করেছিল, তারা কি কৃতকার্য হয়েছিল?

            
        


৩।    ডুমুর গাছের পাতার আবরণের তুলনায় আমাদের সমস্ত পাপ ঢাকার চেষ্টা কীরূপ?

                     


        

৪।    যে চর্ম দ্বারা ঈশ^র আদম এবং হবা উলঙ্গতার আবরণ দিয়েছিলেন, তা কীসের আবরণস্বরূপ?

                


        


৫।    আদম এবং হবাকে বস্ত্র পরিধান করার জন্য ঈশ^রকে কী করতে হয়েছিল এবং আমাদের ধার্মিকতার বস্ত্র পরিধান করার জন্য খ্রীষ্টকে কী করতে হয়েছিল?

                


        


৬।    ঈশ^র কীরূপে আদম এবং হবার উপরে অনুগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন?

                


        




৭।    ঈশ^র আদম এবং হবার ডুমুর গাছের পাতা গ্রাহ্য করলেন না, এর দ্বারা পবিত্র বাইবেল কী শর্ত প্রকাশ করে?

            


        


৮।    কয়িন এবং হেবল ঈশ^রের নিকট কী উপহার উৎসর্গ করেছিলেন?

                


        

৯।    কয়িনের উপহারে কী ভুল ছিল?

                


        


১০।    কয়িল এবং হেবল সম্পর্কে পবিত্র বাইবেলের প্রধান লক্ষ্যবস্তু কী?

                    


        


১১।        পুরাতন নিয়মে মিসরে দ্বাসত্বে বন্দি ই¯্রাযেলদের কেন তাদের দরজার বাজুতে রক্ত লেপন করেছিল?

                    


        




১২।    পুরাতন নিয়মের প্রায়শ্চিত্ত্ব কার্যের জন্য পশু বলির প্রয়োজনীয়তা কেন ছিল?

                    


        




১৩।    একমাত্র নিষ্পাপ বলি কে ছিলেন, যিনি তাঁর রক্ত দিয়ে আমাদের পাপের মূল্য দিতে পারবেন?   

                    


        













৭ম পাঠ
মানুষের জন্য যীশু খ্রীষ্ট যা করেছেন
আমরা ১ম ও ২য় পাঠে পবিত্র বাইবেলের নির্ভরযোগ্য সত্যতার প্রমাণ পেয়েছি ও বুঝতে পেরেছি যে, একদিন ঈশ^র পবিত্র বাইবেলের প্রাপ্ত সত্য দ্বারা আমাদের বিচার করবেন।
৩য় ও ৪র্থ পাঠে দেখেছি যে, সৃষ্টির শুরুতে, মানুষ সৃষ্টি করা হয়েছিল মূলত যেন ঈশ^রের সঙ্গে মানুষের একটি সম্পর্ক গড়ে উঠে। তবুও মানুষ পাপে পতিত হলো ও পাপের কারণে মানুষ তখন ঈশ^র থেকে বিচ্ছিন্ন হলো।
পরে  ৫ম ও ৬ষ্ঠ পাঠে দেখেছি যে, মানুষ তার পাপ ও দোষ মুছে ফেলার জন্য যা কিছুই করুক না কেন, সে তার পাপ মুছে ফেলার জন্য নিজে কিছুই করতে পারে না। তাই, ঈশ^র মানুষের পাপের ভয়াবহতা দেখে এর বদলে চরম মূল্য দিতে বলির ব্যবস্থা করলেন।
এখন আমরা অত্যন্ত চমৎকার একটি কাহিনীতে যাবো যা এখনো বলা হয়নি! ঈশ^র মানুষের পাপের মূল্য দিয়েছেন। কাহিনীটি যীশু খ্রীষ্টের বিষয় ও আপনার পাপের জন্য তাঁর মূল্য দান।
আপনার কি মনে পড়ে যে যীশুর পরিচয় দিতে গিয়ে যোহন কী বলেছিলেন?
পড়–ন, যোহন ১:২৯ পদ,
“পরদিন যোহন যীশুকে তাহার নিকটে আসিতে দেখিলেন, আর বলিলেন, ঐ দেখ, ঈশ^রের মেষশাবক, যিনি এই জগতের সেই পাপ লইয়া যান।” 
    এই সূচনাটি আমাদের পুরাতন নিয়মের বলির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আমাদের পাপের কারণে বলির জন্য যীশুকে মেষস্বরূপ ঘোষণা করা হয়েছিল। পুরাতন নিয়মে বিশেষ প্রয়োজনে এই মেষ ছিল উপযোগী।
ক।     বলির মেষটি হতে হবে নিষ্কলঙ্ক এবং নিখুঁত। যীশু ছিলেন নিষ্কলঙ্ক, নিখুঁত।
    পড়–ন, ১পিতর ১:১৮-১৯ পদ,
    “তোমরা ত জান, তোমাদের পিতৃপুরুষগণের সমর্পিত অলীক আচার ব্যবহার হইতে তোমরা ক্ষয়ণীয় বস্তু দ্বারা, রৌপ্য বা স্বর্ণ দ্বারা, মুক্ত হও নাই, কিন্তু নির্দোষ ও নিষ্কলঙ্ক মেষশাবকস্বরূপ খ্রীষ্টের বহুমূল্য রক্ত দ্বারা মুক্ত হইয়াছ।”
    অর্থাৎ বলা হয়েছে Ñ তোমরা জান, জীবন পথে চলবার জন্য তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া বাজে আদর্শ থেকে সোনা বা রূপার মত ক্ষয় হয়ে যাওয়া কোনো জিনিষ দিয়ে তোমাদের মুক্ত করা হয়নি; তোমাদের মুক্ত করা হয়েছে নির্দোষ ও নিখুঁত মেষ-শিশু যীশু খ্রীষ্টের অমূল্য রক্ত দিয়ে।
    পড়ৃন, ১পিতর ২:২২ পদ,
    “তিনি পাপ করেন নাই, তাঁহার মুখে কোন ছলও পাওয়া যায় নাই।”
পড়ৃন, ১পিতর ৩:১৮ পদ,
    “কারণ খ্রীষ্টও একবার পাপের জন্য দুঃখভোগ করিলেন, সেই ধার্মিক অধার্মিকদের জন্য, মাংসে হত হইলেন, কিন্তু আত্মায় জীবিত হইলেন যেন তিনি আমাদিগকে ঈশ^রের নিকট লইয়া যান।”
    অর্থাৎ বলা হয়েছে Ñ খ্রীষ্টও পাপের জন্য একবারই মরেছিলেন। ঈশ^রের কাছে আমাদের নিয়ে যাবার জন্য সেই নির্দোষ লোকটি পাপীদের জন্য, অর্থাৎ আমাদের জন্য মরেছিলেন। শরীরে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল, কিন্তু আত্মায় তাঁকে জীবিত করা হয়েছিল।

খ।    উৎসর্গীকৃত যজ্ঞের বলির মেষকে ঈশ^রের অনুমোদনযোগ্য হতে হবে।
    যীশু অবশ্যই পিতা-ঈশ^রের অনুমোদনের যোগ্য ছিলেন। নিচে লেখা ভবিষ্যদ্বাণীগুলো বিবেচনা করুন যে তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি জগতের পাপের জন্য বলিস্বরূপ হতে উপযুক্ত ও যোগ্য ছিলেন। পুরাতন নিয়মের ভাববাণী ও তার পূর্ণতায় যীশু খ্রীষ্টের জীবনে দেখুন।
    আমাদের প্রভু তাঁর পার্থিব পরিচর্যার দ্বারা ভবিষ্যতবাণী পূর্ণ হয়েছিল।
    পুরাতন নিয়মে মুক্তিদাতার প্রত্যাশিত পার্থিব পরিচর্যা কার্য সম্বন্ধে ৩৭টি মৌলিক ভবিষ্যতবাণী রয়েছে। পৃথিবীতে অবস্থানকালে যীশু খ্রীষ্ট প্রতিটি ভবিষ্যতবাণী হুবহু পূর্ণ করেছিলেন। নিচের পদগুলোর কয়েকটি পূর্ণতার বিষয়ে ভেবে দেখুন : (আপনার পবিত্র বাইবেল খুলে নিচে দেওয়া পদের বিবরণ দেখতে পারেন)
১।     তিনি কুমারী (অবিবাহিতা সতী) কন্যার গর্ভে জন্মগ্রহণ করবেন Ñ
            তুলনা করুন: যিশাইয় ৭:১ পদের সঙ্গে মথি ১:২২, ২৩ পদ
২।     তাঁকে দায়ূদের সেই সিংহাসন দত্ত হবে Ñ
             তুলনা করুন: ২শমূয়েল ৭:১২,১৩ পদের সঙ্গে লূক ১:৩১,৩২ পদ
৩।     তাঁর নাম রাখা হবে ইম্মানূয়েল, এই নামের অর্থ হলো, আমাদের সংগে ঈশ^র Ñ
        তুলনা করুন: যিশাইয় ৭:১৪ পদের সঙ্গে মথি ১:২৩ পদ 
৪।     তাঁর আপন লোকদের দ্বারা তিনি অগ্রাহ্য হবেন Ñ
        তুলনা করুন: যিশাইয় ৫৩:৩ পদের সঙ্গে যোহন ১:১১ ও ৭:৫ পদ  
৫।    তিনি বৈৎলেহমের গ্রামে জন্মগ্রহণ করবেন Ñ
        তুলনা করুন: মীখা ৫:২-৩ পদের সঙ্গে মথি ২:৫-৬ ও ২:১ পদ  
৬।    প-িতেরা তাঁকে দেখতে আসবেন ও তাঁকে উপহার দেবেন Ñ
        তুলনা করুন: যিশাইয় ৬০:৩,৬,৯ পদের সঙ্গে মথি ২:১১ পদ
৭।    তিনি কিছুকালের জন্য মিশরে থাকবেন Ñ
        তুলনা করুন: হোশেয় ১১:১ পদের সঙ্গে মথি ২:১৫ পদ
৮।    তাঁর জন্মস্থানে শিশু হত্যা হবে Ñ
        তুলনা করুন: যিরমিয় ৩১:১৫ পদের সঙ্গে মথি ২:১৭-১৮ পদ
৯।    তিনি অনেককে সুস্থ করবেন Ñ
        তুলনা করুন: যিশাইয় ৫৩:৪ পদের সঙ্গে মথি ৮:১৬-১৭ পদ
১০।    তিনি পরজাতিদের (অ-যিহূদীদের) সঙ্গে নম্র ব্যবহার করবেন Ñ
    তুলনা করুন: যিশাইয় ৯:১-২; ৪২:১-৩ পদের সঙ্গে মথি ১২:১৭-২১ পদ
১১।    তিনি দৃষ্টান্তে কথা বলবেন Ñ
        তুলনা করুন: যিশাইয় ৬:৯,১০ পদের সঙ্গে মথি ১৩:১০-১৫ পদ
১২।    তিনি যিরূশালেমে বিজয় যাত্রা করবেন Ñ
        তুলনা করুন: সখরিয় ৯:৯ পদের সঙ্গে মথি ২১:৪-৫ পদ
১৩।    শিশুরা তাঁর প্রশংসা গান করবেন Ñ
        তুলনা করুন: গীতসংহিতা ৮:২ পদের সঙ্গে মথি ২১:১৬ পদ
১৪।    তিনি কোনের প্রস্তর থেকে অগ্রাহ্য হবেন Ñ
        তুলনা করুন: গীতসংহিতা ১১৮:২২,২৩ পদের সঙ্গে মথি ২১:৪২ পদ
১৫।    তাঁর অলৌকিক কার্য অনেকে বিশ্বাস করবে না Ñ
        তুলনা করুন: যিশাইয় ৫৩:১ পদের সঙ্গে যোহন ১২:৩৭,৩৮ পদ

১৬।    তাঁর শিষ্য ৩০টি রৌপ্যমুদ্রার বিনিময়ে তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে Ñ
    তুলনা করুন: গীতসংহিতা ৪১:৯; ৫৫:১২-১৪; সখরিয় ১১:১২,১৩ পদের সঙ্গে
    মথি ২৬:১৪-১৬ পদ
১৭।    তাঁর অস্থি ভগ্ন হবে না Ñ
    তুলনা করুন: গীতসংহিতা ৩৪:২০; যাত্রাপুস্তক ১২:৪৬; গণনাপুস্তক ৯:১২ পদের সঙ্গে যোহন ১৯:৩৩-৩৬ পদ
১৮।    তাঁর মৃত্যুর দিকে যাত্রা হবে Ñ
        তুলনা করুন: সখরিয় ১২:১০ পদের সঙ্গে যোহন ১৯:৩৭ ও মথি ২৭:৩৮ পদ
১৯।    তিনি ধনবানের কবরে কবরপ্রাপ্ত হবেন Ñ
        তুলনা করুন: যিশাইয় ৫৩:৯ পদের সঙ্গে মথি ২৭:৫৭-৬০ পদ
২০।    তিনি মৃতদের থেকে উত্থাপিত হবেন Ñ
        তুলনা করুন: গীতসংহিতা ১৬:১০ পদের সঙ্গে মথি ২৮:২-৭ পদ
গ।    একজন পুরোহিতের দ্বারা এই বলি উপস্থিত করা হয়েছিল।
    উৎসর্গ বলি দেবার জন্য পুরোহিতের কাছে নিয়ে যেতে হয়েছে যিনি পবিত্র ঈশ^র দ্বারা নিয়োজিত ছিলেন। পুরোহিত তখন এটিকে পবিত্র ঈশ^রের কাছে উৎসর্গ করবেন। শাস্ত্রে মজার সত্য বিষয়টি হলো এই যে, যীশু খ্রীষ্ট কেবল পুরোহিতই ছিলেন না, কিন্তু তিনি আমাদের বলি উপহারও হয়েছিলেন! যীশু পুরোহিতরূপে যোগ্য ছিলেন যিনি আমাদের পাপের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করলেন।
    আমরা পূর্বের আলোচনায় লক্ষ্য করেছি যে, আমরা আমাদের পাপের মূল্য প্রদান করতে পর্যাপ্ত তেমন কিছুই করতে পারি না। এই কারণেই যীশু পৃথিবীতে এসেছিলেন যেন তিনি আমাদের সকলের পাপের মূল্য প্রদান করতে পারেন। তিনি কখনো পাপ করেননি আর এই একটি মাত্র কারণে তিনি অন্যদের পাপের মূল্য প্রদানে একমাত্র যোগ্য ছিলেন। নিচের পদটি বিবেচনা করে দেখুন:
১।     ইব্রীয় ২:১৭ পদ,
    “সর্ববিষয়ে আপন ভ্রাতৃগণের তুল্য হওয়া তাঁহার (যীশুর) উচিত ছিল, যেন তিনি প্রজাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করিবার জন্য ঈশ^রের উদ্দেশ্য কার্যে দয়ালু ও বিশ্বস্ত মহা-যাজক হন।”
    অর্থাৎ বলা হয়েছে, Ñ যীশুকে সব দিক থেকে তাঁর ভাইদের মত হতে হলো, যেন তিনি একজন দয়ালু ও বিশ^স্ত মহা-পুরোহিত হিসাবে ঈশ^রের সেবা করতে পারেন! এর উদ্দেশ্য হলো, তিনি যেন নিজের মৃত্যুর দ্বারা মানুষের পাপ দূর করে ঈশ^রকে সন্তুষ্ট করেন।
এই পদ অনুসারে, আপনি এমনকি করেছিলেন যে, যে কারণে যীশু খ্রীষ্টকে এই পৃথিবীতে আগমণের প্রয়োজন হয়েছিল?
২।    ইব্রীয় ৯:১১-১৪ পদ,
    “কিন্তু খ্রীষ্ট, আগত উত্তম উত্তম বিষয়ের মহা-যাজকরূপে উপস্থিত হইয়া, যে মহত্তর ও সিদ্ধতর তাম্বু অহস্তকৃত, অর্থাৎ এই সৃষ্টির অসম্পর্কীয়, সেই তাম্বু দিয়া Ñ ছাগদের ও গোবৎসদের রক্তের গুণে নয় কিন্তু তাঁর নিজ রক্তের গুণে Ñ একবারে পবিত্র স্থানে প্রবেশ করিয়াছেন, আমাদের জন্য অনন্তকালীন মুক্তি করিয়াছেন। কারণ ছাগদের এবং বৃষদের রক্ত এবং অশুচিদের উপরে প্রোক্ষিত গাভীভষ্ম যদি মাংসের শুচিতার জন্য পবিত্র করে, তবে, যিনি অনন্তজীবি পবিত্র আত্মা দ্বারা নির্দোষ বলিরূপে নিজেকেই ঈশ^রের উদ্দেশে উৎসর্গ করিয়াছেন, সেই খ্রীষ্টের রক্ত তোমাদের সংবেদকে মৃত ক্রিয়কলাপ হইতে কত অধিক নিশ্চয় শুচি না করিবে, যেন তোমরা জীবন্ত ঈশ^রের আরাধনা করিতে পার।”
    অর্থাৎ বলা হয়েছে Ñ খ্রীষ্ট এসেছিলেন ভবিষ্যতের সব উন্নতির বিষয়ের মহা-পুরোহিত হয়ে। আরও মহৎ ও আরও ভালো উপাসনা-তাম্বুতে ঈশ^রের সেবা করার জন্য তিনি এসেছিলেন। এই তাম্বু মানুষের হাতে তৈরি নয়, অর্থাৎ তা জগতের কোনো জিনিষ নয়। ছাগল ও বাছুরের রক্ত নিয়ে খ্রীষ্ট সেই মহাপবিত্র স্থানে ঢোকেননি। তিনি নিজের রক্ত নিয়ে একবারই সেখানে ঢুকেছিলেন। এইভাবে তিনি চিরকালের জন্য পাপ থেকে মুক্তির উপায় করলেন। যারা অশুচি হতো তাদের উপর ছাগল ও ষাঁড়ের রক্ত বা বাছুর-পোড়ানো ছাই ছিটানো হতো; তাতে তাদের বাইরের শরীরটাই কেবল শুটি হয়ে পরিষ্কার হতো। কিন্তু যিনি অনন্ত পবিত্র আত্মার মধ্য দিয়ে ঈশ^রের কাছে নিজেকে নিখুঁত উৎসর্গ হিসাবে দান করলেন সেই যীশুর রক্ত আমাদের বিবেককে নিষ্ফল কাজকর্ম থেকে আরও কত না বেশী করে শুচি করবে, যাতে আমরা জীবন্ত ঈশ^রের সেবা করতে পারি!
এসব পদ অনুসারে, খ্রীষ্ট কি পশুতে না-কি তাঁর নিজ বৈশিষ্ট্য উৎসর্গ করেছেন?
এসব পদ অনুসারে, খ্রীষ্ট কার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন?
৩।    রোমীয় ৪:২৫ পদ,
    “যিনি (যীশু) আমাদের অপরাধের জন্য সমর্পিত হইলেন, আর আমাদের ধার্মিক গণনার জন্য উত্থাপিত হইলেন।”   
    অর্থাৎ বলা হয়েছে Ñ আমাদের পাপের জন্য যীশুকে মৃত্যুর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল এবং আমাদের ধার্মিক বলে গ্রহণ করার জন্য তাঁকে মৃত্যু থেকে জীবিত করা হয়েছিল।
        এই পদ অনুসারে কাদের উপকারের জন্য যীশু খ্রীষ্ট এসেছিলেন?
৪।     ১যোহন ২:২ পদ,
    “আর তিনিই আমাদের পাপার্থক প্রায়শ্চিত্ত, আর কেবল আমাদের জন্য নয়, কিন্তু সমস্ত জগতের পাপের জন্যও বটে।”   
    অর্থাৎ বলা হয়েছে Ñ আমাদের পাপ দূর করার জন্য খ্রীষ্ট তাঁর নিজের জীবন বলি দিয়ে ঈশ^রকে সন্তুষ্ট করেছেন। কেবল আমাদের পাপ নয়, কিন্তু সমস্ত মানুষের পাপ দূর করার জন্য তিনি তা করেছেন।
এই পদ অনুসারে, পাপের জন্য খ্রীষ্টে মূল্য প্রদানে কতজন অন্তর্ভুক্ত? এ-ক্ষেত্রে কি আপনাকে অন্তর্ভুক্ত করে, আপনাকে গণনা করা হয়?
৫।     ইব্রীয় ৫:১ পদ,
    “বস্তুতঃ প্রত্যেক মহা-যাজক মনুষ্যদের মধ্যে হইতে গৃহীত হইয়া মনুষ্যদের পক্ষে ঈশ^রের উদ্দেশ্য কার্যে নিযুক্ত হন, যেন তিনি পাপার্থক উপহার ও বলি উৎসর্গ করেন।”
    অর্থাৎ বলা হয়েছে Ñ লোকদের পক্ষ হয়ে ঈশ^রের সেবা করার জন্য প্রত্যেক মহা-পুরোহিতকে মানুষের মধ্য থেকে বেছে নিয়ে নিযুক্ত করা হয়, যেন তিনি মানুষের পাপের জন্য পশু উৎসর্গ করেন এবং অন্যান্য জিনিসও উৎসর্গ করেন।
এই পদ অনুসারে, একজন পুরোহিতের উদ্দেশ্য কী ছিল?
৬।     ইব্রীয় ৭:২৬ ও ২৭ পদ,
“বস্তুতঃ আমাদের জন্য এমন এক মহা-পুরোহিত উপযুক্ত ছিলেন, যিনি পবিত্র, অহিংসুক, বিমল, পাপিগণ হইতে পৃথককৃত, এবং স্বর্গ সকল অপেক্ষা উচ্চীকৃত। ঐ মহা-পুরোহিতদের ন্যায় প্রতিদিন অগ্রে নিজ পাপের, পরে প্রজাবৃন্দের পাপের জন্য বলি উৎসর্গ করা ইহাঁর পক্ষে আবশ্যক নয়, কারণ আপনাকে উৎসর্গ করাতে ইনি সেই কার্য একবার সাধন করিয়াছেন।” 
অর্থাৎ বলা হয়েছে Ñ এই রকম একজন পবিত্র, দোষশূন্য ও খাঁটি মহা-পুরোহিতই আমাদের দরকার ছিল। তিনি পাপী মানুষের চেয়ে আলাদা এবং ঈশ^র তাঁকে আকাশের চেয়েও উপরে তুলেছেন। অন্যান্য মহা-পুরোহিত যেমন প্রথমে নিজের ও পরে অন্যদের পাপের জন্য পশু বলি দিতেন, সেইভাবে এই পুরোহিতের তা করার দরকার ছিল না, কারণ তিনি চিরকালের মতো একবারই নিজের জীবন উৎসর্গ করে সেই কাজ শেষ করেছেন।
এই পদ অনুসারে . . .
যীশু খ্রীষ্টের কি ব্যক্তিগত কোনো পাপ ছিল?
যীশু খ্রীষ্ট কি তাঁর নিজের ব্যাক্তিগত পাপের জন্য মূল্য পরিশোধের প্রয়োজন ছিল?
মানুষের পাপের মূল্য পরিশোধের জন্য যীশু খ্রীষ্টের কতবার মৃত্যুর প্রয়োজন?
৭।     ইব্রীয় ১০:১২-১৪ পদ,
    “কিন্তু ইনি পাপার্থক একই যজ্ঞ চিরকালের জন্য উৎসর্গ করিয়া ঈশ^রের দক্ষিণে উপবিষ্ট হইলেন, এবং তদবধি অপেক্ষা করিতেছেন যে পর্যন্ত তাঁহার শত্রুগণ তাঁহার পাদপীঠ না হয়, কারণ যাহারা পবিত্রীকৃত হয়, তাহাদিগকে তিনি একই নৈবেদ্য দ্বারা চিরকালের জন্য সিদ্ধ করিয়াছেন।”
    অর্থাৎ বলা হয়েছে Ñ যীশু কিন্তু পাপের জন্য চিরকালের মতো একটি মাত্র উৎসর্গ করে ঈশ^রের ডান দিকে বসলেন। আর তখন থেকে যতদিন না তাঁর শত্রুদের তাঁর পায়ের তলায় রাখা হয় ততদিন পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করছেন, কারণ যাদের আলাদা করা হয়েছে ঐ একটি উৎসর্গের দ্বারা তিনি চিরকালের জন্য তাদের পূর্ণতা দান করেছেন।
এই পদগুলো অনুসারে, যীশু খ্রীষ্টের কতবার মৃত্যুবরণ করার প্রয়োজন ছিল? এই পদগুলো অনুসারে, পাপের মূল্য প্রদানের স্থায়িত্বতা কতদিনের জন্য কার্যকারী?
৮।     ইব্রীয় ১০:১৯-২২ পদ,
    “অতএব, হে ভ্রাতৃগণ, যীশু আমাদের জন্য ‘তিরস্করিণী’ দিয়া, অর্থাৎ আপন মাংস দিয়া, যে পথ সংস্কার করিয়াছেন, আমরা সেই নূতন ও জীবন্ত পথে, যীশুর রক্তের গুণে পবিত্র স্থানে প্রবেশ করিতে সাহস প্রাপ্ত হইয়াছি, এবং ঈশ^রের গৃহের উপরে নিযুক্ত মহান্ এক যাজকও আমাদের আছেন; এই জন্য আইস, আমরা সত্য হৃদয় সহকারে বিশ্বাসের পূর্ণ নিশ্চয়তায় (ঈশ^রের) নিকটে উপস্থিত হই; আমরা ত হৃদয়প্রোক্ষণ-পূর্বক মন্দ হইতে মুক্ত, ও শুচি জলে স্নাত দেহবিশিষ্ট হইয়াছি।”
    অর্থাৎ বলা হয়েছে Ñ যীশু খ্রীষ্টের রক্তের গুণে সেই মহাপবিত্র স্থানে ঢুকবার সাহস আমাদের আছে। খ্রীষ্ট আমাদের জন্য একটা নতুন ও জীবন্ত পথ খুলে দিয়েছেন, যেন আমরা পর্দার মধ্য দিয়ে, অর্থাৎ তাঁর শরীরের মধ্য দিয়ে ঈশ^রের সামনে উপস্থিত হতে পারে। এছাড়া আমাদের একজন মহান পুরোহিতও আছেন, যাঁর উপরে ঈশ^রের পরিবারের লোকদের ভার দেওয়া হয়েছে। সেজন্য বিশ^াসের মধ্য দিয়ে যে নিশ্চয়তা আসে, এস আমরা সেই পরিপূর্ণ নিশ্চয়তায় খাঁটি অন্তরে ঈশ^রের সামনে যাই; কারণ দোষী বিবেকের হাত থেকে আমাদের অন্তরকে রক্ত ছিটিয়ে শুচি করা হয়েছে এবং পরিষ্কার জল দিয়ে আমাদের শরীরকে ধোয়া হয়েছে।
এই পদগুলোতে, এমন কী অর্থ প্রকাশ করে, যার দ্বারা আমাদের ঈশ^রের সান্নিধ্য পাবার সুযোগ রয়েছে?
এই পদগুলোতে আমরা কতটুকু নিশ্চিত হতে পারি যে, তিনি আমাদের গ্রহণ করবেন যদি আমরা তাঁর ইচ্ছানুসারে তাঁর কাছে আসি?
যীশু খ্রীষ্ট মানুষের জন্য যা করেছেন আর তাঁর প্রতি তখনই অত্যন্ত অসম্মানে অবজ্ঞা করা হবে, যখন ঈশ^রের প্রতি মানুষ তার নিজের করণীয় সৎকর্ম (ভালো কাজ) উপহার দেবার চেষ্টার চিন্তা করে। এভাবে তুলনা করলে দেখা যায় যে, মনে করুন কোনো এক ব্যক্তি আপনাকে একটি সুন্দর বাড়ি কিনে দিলেন যার মূল্য ১০ লক্ষ্য টাকা আর বাড়িটি একেবারে বিনামূল্যেই পেয়ে গেলেন, আপনার কিছুই ব্যয় করতে হলো না, আপনি বাড়িটি উপহারস্বরপ পেলেন। যাহোক, আপনি তার কাছে ঋণী থাকতে চান না, আর আপনি ঐ ঘরের মূল্য পরিশোধ করার চেষ্টা করছেন Ñ আপনি পরিশোধের জন্য আপনার সব সবকিছু কুড়িয়ে এক জায়গায় জড়ো করলেন, তাতে দেখা গেল বড় এক বস্তা আবর্জনা হলো সেই মূল্য। কিন্তু যীশু খ্রীষ্ট আপনার জন্য যা করেছেন তার মূল্য কখনোই পরিশোধ করতে পারেন না।
খ্রীষ্ট আপনার জন্য যা-কিছু করেছেন, তা ছিল আমাদের সম্পূর্ণ নিশ্চিত প্রয়োজন অনুযায়ী, যার জন্য কিনা তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে, আর সে-ক্ষেত্রে আপনার অন্য কোনো উপায়ে স্বর্গে যাওয়া কি সম্ভব?
খ্রীষ্ট যদিও-বা সমগ্র জগতের পাপের জন্য মৃত্যুবরণ করেছেন, তবুও তাঁর মৃত্যু আপনার জন্য উপযুক্ত বা শুভ নয় যতক্ষণ না আপনি তাঁর মূল্য প্রদানের প্রতি সম্পূর্ণ মনোযোগ দেন। আর এটিই আমাদের পরবর্তী আলোচনার বিষয়।


















প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখুন
৭ম পাঠ
১।    পুরাতন নিয়মে বলির মেষের জন্য উপযোগী কী কী বিষয় প্রয়োজন ছিল?

ক।                                      
   
খ।

গ।

২।    যীশু এবং পুরাতন নিয়মের বলির মেষের মধ্যে কোন্ বিষয়টি মিল ছিল?

                


        




৩।    যীশু কেন আমাদের পাপের মূল্য প্রদানে একমাত্র যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন?

                


৪।    আমরা এমন কী করেছিলাম যে কারণে যীশুকে জগতে আগমনের প্রয়োজন হয়েছিল?

                


৫।    কালভেরীতে যীশুর ক্রুশীয় মৃত্যুতে তিনি কত লোকের পাপের জন্য মূল্য প্রদান করলেন?

                


৬।    মানুষের পাপের জন্য যীশুকে কতবার মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল?

                
৭।    পাপের জন্য খ্রীষ্টের মূল্য প্রদানের স্থায়িত্বতা কতদিনের জন্য কার্যকারী?
   
                
৮ম পাঠ
যীশু খ্রীষ্টের প্রতি আপনার প্রতিক্রিয়া
আমরা লক্ষ্য করে দেখেছি যে, খ্রীষ্ট সকলের জন্য মৃত্যুবরণ করেছেন। সুতরাং পাপ আবরণ বা আচ্ছাদনের সম্ভাবনা রয়েছে এবং ঈশ^রের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করার সম্ভাবনা জগতের সকল মানুষেরই রয়েছে। তথাপি এও সত্য যে, সকলেই স্বর্গে প্রবেশ করবে না।
মথি ৭:১৩,১৪ পদ, “তোমরা সঙ্কীর্ণ দ্বার দিয়া প্রবেশ কর; কেননা সর্বনাশে যাইবার দ্বার প্রশস্ত ও পথ পরিসর, ও অনেকেই তাহা দিয়া প্রবেশ করে; কেননা জীবনে যাইবার দ্বার সঙ্কীর্ণ ও পথ দুর্গম, আর অল্প লোকেই তাহা পায়।”
অর্থাৎ, সরু দরজা দিয়ে ঢোকো, কারণ যে পথ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় তার দরজাও বড় এবং রাস্তাও চওড়া। অনেকেই তার মধ্য দিয়ে ঢোকে। কিন্তু যে পথ জীবনের দিকে নিয়ে যায় তার দরজাও সরু, পথও সরু। খুব কম লোকেই তা খুঁজে পায়।
উপরের কথার আলোকে এটিই স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, সকলেই যে স্বর্গে প্রবেশ করবে, তা নয়। তুলনামুলক সংখ্যায় অল্প, যাদের অনেকে স্বর্গে প্রবেশ করতে পারবে। কেন অনেকে স্বর্গে প্রবেশ লাভ করবে এবং অনেকের ফিরে আসতে হবে? স্বর্গে প্রবেশ লাভের জন্য আমাদের করণীয় কী? আমরা জানি, এটি কোনো ব্যক্তির শ্রেষ্ঠতা বা মন্দতার উপরে নির্ভর করে না, কারণ ঈশ^রের দৃষ্টিতে আমরা সকলেই পাপী। কোনো ব্যক্তি জীবিতকালে মোট কয়টি ধর্মকর্ম সাধন করেছে, তার উপরে নির্ভর করে নয়। কোনো ব্যক্তি কোন্ বংশ, জাত, কুল বা কোন্ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছে, তার উপর ভিত্তি করেও নয়। পবিত্র বাইবেল আমাদের বলে যে, শুধুমাত্র যারা ঈশ^রের কাছে আসে ও নিজেদের পাপের কারণে ঈশ^রের প্রদানকৃত মূল্য গ্রহণে তাঁর সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করে, তারাই ঈশ^রের গ্রহণযোগ্য ও একমাত্র তারাই স্বর্গে যাবে। যাদের ঈশ^রের সঙ্গে একটি সুসম্পর্ক রয়েছে ও স্বর্গের নিশ্চয়তা রয়েছে পবিত্র বাইবেল তাদেরকে বিভিন্নভাবে চিহ্নিত করে।
প্রেরিত ৪:১২ পদ,    
“আর অন্য কাহারও কাছে পরিত্রাণ নাই; কেননা আকাশের নীচে মনুষ্যদের মধ্যে দত্ত এমন আর কোন নাম নাই; যে নামে আমাদিগকে পরিত্রাণ পাইতে হইবে।”
পরিত্রাণ আর কারও কাছে পাওয়া যায় না, কারণ সারা পৃথিবীতে আর এমন কেউ নেই যার নামে আমরা পরিত্রাণ পেতে পারে।
রোমীয় ৫:১০ পদ,
“কেননা যখন আমরা শত্রু ছিলাম, তখন যদি ঈশ^রের সহিত তাঁহার পুত্রের মৃত্যু দ্বারা সম্মিলিত হইলাম, তবে সম্মিলিত হইয়া কত অধিক তাঁহার জীবনে পরিত্রাণ পাইব।”
আমরা যখন ঈশ^রের শত্রু ছিলাম তখন তাঁরই পুত্রের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাঁর সংগে আমাদের মিলন হয়েছে। এভাবে মিলন হয়েছে বলে খ্রীষ্টের জীবন দ্বারা আমরা নিশ্চয়ই পরিত্রাণ পাব।
যোহন ৩:৭ পদ,
“বিস্মিত হইও না যে আমি তোমাকে বলিলাম, তোমাদের পুনরায় জন্ম হওয়া আবশ্যক।”
আমাদের নতুন করে জন্ম হওয়া দরকার, এতে আশ্চর্য হবার কিছুই নাই।
মথি ১০:৩২;৩৩ পদ,
“অতএব যে কেহ মনুষ্যদের সাক্ষাতে আমাকে স্বীকার করে, আমিও আপন স্বর্গস্থ পিতার সাক্ষাতে তাহাকে স্বীকার করিব। কিন্তু যে কেহ মনুষ্যদের সাক্ষাতে আমাকে অস্বীকার করে, আমিও আপন স্বর্গস্থ পিতার সাক্ষাতে তাহাকে অস্বীকার করিব।”
যে কেউ মানুষের সামনে যীশুকে স্বীকার করে তিনিও তাঁর স্বর্গস্থ পিতার সামনে তাকে স্বীকার করবেন। কিন্তু যে কেউ মানুষের সামনে তাঁকে অস্বীকার করে তিনিও তাঁর স্বর্গস্থ পিতার সামনে তাকে অস্বীকার করবেন।
রোমীয় ১০:১০ পদ,
“কারণ লোকে সেই হৃদয়ে বিশ^াস করে ধার্মিকতার জন্য, আর সেই মুখে স্বীকার করে, পরিত্রাণের জন্য।”
অর্থাৎ, অন্তরে বিশ^াস করবার ফলে ঈশ^র মানুষকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করেন আর মুখে স্বীকার করবার ফলে পাপ থেকে উদ্ধার করেন।
১যোহন ৫:১ পদ,
“যে কেহ বিশ^াস করে যে, যীশুই সেই খ্রীষ্ট, সে ঈশ^র হইতে জাত; এবং যে কেহ জন্মদাতাকে প্রেম করে, সে তাঁহা হইতে জাত ব্যক্তিকেও প্রেম করে।”
অর্থাৎ, যারা বিশ^াস করে যে যীশুই সেই খ্রীষ্ট (মশীহ্), ঈশ^র থেকেই তাদের জন্ম হয়েছে। যারা পিতাকে ভালোবাসে তারা তাঁর সন্তানকেও ভালোবাসে।
যোহন ১:১২ পদ,
“কিন্তু অনেকে যেমন তাঁহাকে গ্রহণ করিল, সেই সকলকে, যাহারা তাঁহার নামে বিশ্বাস করে তাহাদিগকে তিনি ঈশ^রের সেই সন্তান হইবার ক্ষমতা দিলেন।”
অর্থাৎ, যতজন যীশু খ্রীষ্টের উপর বিশ^াস করে তাঁকে গ্রহণ করল তাদের প্রত্যেককে তিনি ঈশ^রের সন্তান হবার অধিকার দিলেন।
    এসব প্রতিজ্ঞাত শর্তাবলী এবং আরো অন্যান্য বিষয়ের দ্বারা একজন খ্রীষ্টিয়ান হবার পূর্ণ অঙ্গীকার প্রদর্শন করে। প্রকৃতপক্ষে একজনের পক্ষে চিন্তা করা বা বলা সম্ভব যে তিনি একজন খ্রীষ্টিয়ান, কিন্তু বাস্তবে অনেকেই খ্রীষ্টের নয়। প্রকৃত পরিত্রাণ আমাদের অনুভূতি, আমাদের ধারণার উপরে নির্ভর করে না, বরং প্রকৃত পরিত্রাণ নির্ভর করে ঈশ^রের বাক্যের উপরে। সর্বোপরি, এই অবস্থায় ঈশ^রই একমাত্র ব্যক্তি যাঁর উপর আমরা বিশ^াস করতে পারি এবং নির্ভর করতে পারি।
মথি ৭:২১ পদ,
“যাহারা আমাকে প্রভু, প্রভু বলে, সকলে সেই স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করিতে পাইবে না, কিন্তু সেই যে আমার পিতার ইচ্ছা পালন করে যিনি স্বর্গে আছেন।”
অর্থাৎ, যারা যীশুকে প্রভু প্রভু বলে তারা প্রত্যেকে যে স্বর্গ রাজ্যে যেতে পারবে তা নয়, কিন্তু যারা যীশুর স্বর্গস্থ পিতার ইচ্ছা পালন করে সে-ই যেতে পারবে।
    প্রকৃত পরিত্রাণ যখন ঈশ^রের বাক্যের উপর নির্ভর করে, তখন আমাদের নিশ্চিতভাবে জানতে হবে যে আমাদের পরিত্রাণ লাভের প্রয়োজনে ঈশ^র কী বলেছেন। আমাদের এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া খুবই প্রয়োজন যে, এক ব্যক্তি ঈশ^রের সন্তান হওয়াতে তার জীবনে কী পরিণতি বা কী ঘটে।
প্রেরিত ২০:২১ পদ,
“ঈশ^রের প্রতি মন পরিবর্তন আর আমাদের প্রভু যীশুর প্রতি বিশ^াস বিষয়ে যিহূদী ও গ্রিকদের নিকটে সাক্ষ্য দিয়া আসিতেছি।”
বিশেষ জোর দিয়ে জানানো হচ্ছে যে, পাপ থেকে মন ফিরিয়ে অর্থাৎ মন পরিবর্তন করে ঈশ^রের দিকে ফিরতে হবে এবং আমাদের প্রভু যীশুর উপর বিশ^াস আনতে হবে।
    এই পদটিতে পরিত্রাণের একান্ত প্রয়োজনীয় দু’টি উপাদান রয়েছে, আর তা হলো মন পরিবর্তন এবং বিশ^াস। পাপের জন্য খ্রীষ্টের মৃত্যু আমাদের ব্যক্তিগত মূল্যস্বরূপ হতে হলে এই দু’টি বিষয় এড়ানো যায় না অর্থাৎ বিষয় দু’টি অপরিহার্য।
    আমাদের প্রভু মন পরিবর্তনকে পরিত্রাণের সম্পূর্ণ অপরিহার্য (অতি প্রয়োজনীয়) বিষয় বলে বিবেচনা করেছেন, মন-ফিরানো শব্দটি পবিত্র বাইবেলে প্রায় শতাধিকবারের মতো ব্যবহৃত হয়েছে।
লূক ১৩:৩ পদ,
“আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তাহা নয়; বরং, মন না ফিরাও, তোমরা সকলেই তদ্রƒপ বিনষ্ট হইবে।”
অর্থাৎ, মন পরিবর্তন না করলে সবাই বিনষ্ট হবে।
    অতি প্রয়োজনীয় আর একটি বিষয় হলো বিশ^াস। বিশ^াস পবিত্র বাইবেলের একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ।
ইফিসীয় ২:৮ পদ,
“কেননা অনুগ্রহেই, বিশ^াস দ্বারা তোমরা পরিত্রাণ পাইয়াছ আর ইহা তোমাদের হইতে হয় নাই, ঈশ^রেরই দান”
অর্থাৎ, ঈশ^রের দয়ায় বিশ^াসের মধ্য দিয়ে আমরা পাপ থেকে উদ্ধার পাই। এটা কারোর নিজেদের দ্বারা হয় না, এটা ঈশ^রেরই দান। যেন কেউ গর্ব করতে না পারে।
    প্রকৃতপক্ষে মন পরিবর্তন ও বিশ^াস হাতে হাত মিলিয়ে চলে। এই পাঠে আমরা দু’টি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ লক্ষ্য করব এবং দেখব শব্দ দু’টি কীভাবে কার্য সাধন করে।
    মন পরিবর্তন/জবঢ়বহঃধহব (অনুশোচনা, অনুতপ্ত হওয়া ও ফিরে আসা)
ক।     পাঁচটি কারণে মন পরিবর্তন কেন গুরুত্বপূর্ণ
    ১।     বাপ্তিস্মদাতা যোহন প্রকাশ্যে লোকদের প্রতি মন পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে প্রচারকাজ শুরু করেন।
        মথি ৩:১,২ পদ,
        “সেই দিনগুলিতে যোহন বাপ্তাইজক উপস্থিত হইয়া যিহূদিয়ায় প্রান্তরে প্রচার করিলেন; আর বলিলেন, মন ফিরাও কেননা স্বর্গ-রাজ্য সন্নিকট হইল।”
        অর্থাৎ, যোহন যিহূদিয়ার মরুভূমিতে এসে এই বলে প্রচার করতে লাগলেন, মন ফিরাও কারণ স্বর্গ রাজ্য কাছে এসে গেছে।
    ২।    যীশুও লোকদের মন পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে তাঁর সেবাকাজ শুরু করেছেন।
        মথি ৪:১৭ পদ,
        “সেই অবধি যীশু প্রচার করিতে আরম্ভ করিলেন; বলিতে লাগিলেন, মন ফিরাও, কেননা স্বর্গ-রাজ্য সন্নিকট হইল।”
        অর্থাৎ, যীশুও এই বলে প্রচার করতে লাগলেন, মন ফিরাও কারণ স্বর্গ রাজ্য কাছে এসে গেছে।
    ৩।     যীশু স্বর্গে যাবার পূর্বে, তিনি তাঁর শিষ্যদের কী প্রচার করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন? 
        পাঠ করুন, লূক ২৪:৩৬-৫৩ পদ
    লূক ২৪:৪৭ পদ,
    “আর তাঁহার নামে পাপমোচনার্থক মন পরিবর্তনের কথা সর্বজাতির কাছে প্রচারিত হইবে Ñ যিরূশালেম হইতে আরম্ভ করা হইবে”
    অর্থাৎ, সমস্ত জাতির কাছে খ্রীষ্টের নামে এই খবর প্রচার করা হবে যে, মন পরিবর্তন করলে পাপের ক্ষমা পাওয়া যায়।
        ৪।    ঈশ^র সকল মানুষের কী চান?
    ২পিতর ৩:৯ পদ,
    “প্রভু তাঁহার প্রতিশ্রুতি পালনে বিলম্ব করেন না, যেমন কোন কোন মানুষেরা বিলম্বতা জ্ঞান করে; কিন্তু তোমাদের পক্ষে অসীম সহিষ্ণুতা দেখান; ইচ্ছা নয় কেহ যে বিনষ্ট হয়, বরং সকলে যেন মনপরিবর্তন পর্যন্ত পৌঁছায়।”
    অর্থাৎ, কেউ ধ্বংস হয়ে যায় এটা প্রভু চান না, রবং সবাই যেন মন পরিবর্তন করে এটাই তিনি চান।
        ৫।    সর্বস্থানের সব মানুষকে ঈশ^র কী আদেশ দিয়েছেন?
    প্রেরিত ১৭:৩০ পদ,
    “ঈশ^র সেই অজ্ঞানতার কাল উপেক্ষা করিয়াছিলেন, কিন্তু এখন সর্বস্থানের সকল মনুষ্যকে মনপরিবর্তন করিতে আজ্ঞ দিতেছেন।”
    এখন ঈশ^র সব জায়গায় সব লোককে মন ফিরাতে, মন পরিবর্তন করতে আদেশ দিচ্ছেন।
    খ।     প্রকৃত মন পরিবর্তন কী?
        ১।     পবিত্র বাইবেলের সম্মতিতে বা ইচ্ছায় মন পরিবর্তন চার ভাগে বিভক্ত।
    কোনো এক ব্যক্তির জীবনে মন পরিবর্তন ঘটতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার নিজের অন্তঃকরণের পাপপূর্ণ অবস্থা উপলব্ধি করতে না পারে যে, একজন পাপীর পক্ষে তার পাপী জীবন ঈশ^রের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ বিরুদ্ধাচরণ করা হচ্ছে। তারপর এই মনোভাব পরিবর্তনের ইচ্ছা এবং উদ্দেশ্যের প্রতি তার মন পরিচালিত করে।
            ক।     মন পরিবর্তন Ñ আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির একটা পরিবর্তন।
    রোমীয় ৩:১০ পদ,
    “যেমন লেখা আছে, ধার্র্মিক কেহই নাই,না, একজনও নাই।”
    অর্থাৎ, নির্দোষ কেউ নাই, একজনও নাই।
    রোমীয় ৩:২৩ আয়াত,
    “কেননা সকলেই পাপ করিয়াছে ও ঈশ^রের গৌরব-বিহীন হইয়াছে।” 
    অর্থাৎ, কারণ সবাই পাপ করেছে এবং ঈশ^রের প্রশংসা পাবার অযোগ্য হয়ে পড়েছে।   
             পাপের বিভিন্ন দিক বা ভাব রয়েছে। পাপ হলো :
                ১।     বিধি-ব্যবস্থা (ঈশ^রের কথা) লঙ্ঘন করাই পাপ
                        বিধি-ব্যবস্থা (ঈশ^রের কথা) ছাড়াইয়া যাওয়া পাপ (লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়া) Ñ
                    ১যোহন ৩:৪ পদ,
    “যে কেহ পাপ করে সে ব্যবস্থালঙ্ঘনও (ঈশ^রের কথাও) অমান্য করে। আর ব্যবস্থালঙ্ঘনই (ঈশ^রের কথা অমান্য করাই) পাপ।”
    অর্থাৎ, যারা পাপ করে তারা ঈশ^রের কথা অমান্য করে। পাপ হলো ঈশ^রের কথা অমান্য করা।
                ২।     ভুল পথ চলা (পথ-ভ্রান্তি) পাপ
                        সঠিক পথ ছেড়ে ভিন্ন পথে যাওয়া Ñ
                    যাকোব ৫:২০ পদ,
    “তবে জানিও, যে ব্যক্তি কোন পাপীকে তাহার পথ-ভ্রান্তি হইতে ফিরাইয়া আনে, সে তাহার প্রাণকে মৃত্যু হইতে রক্ষা করিবে”
    অথাৎ, এই কথা জেনে রাখা ভালো Ñ যদি কেউ একজন পাপীকে ভুল পথ থেকে ফিরিয়ে আনে তবে সে তাকে মৃত্যু থেকে রক্ষা করে।
                ৩।     অবাধ্যতা পাপ
    ঈশ^রের থেকে দূরে থেকে নিজের জীবন নিজে পরিচালনায় পছন্দ করা Ñ
    ইফিষীয় ২:২ পদ,
    জগতের চিন্তাধারা অনুসারে আমরাও এক সময় সেই অবাধ্যতা আর পাপের মধ্যে চলাফেরা করতাম।
                ৪।     ব্যবস্থায় (ঈশ^রের কথায়) না থাকলে পাপ
                         আত্মিক অরাজকতা Ñ
                    রোমীয় ৫:১৩ পদ,
        মোশীর আইন-কানুন দেবার আগেই জগতে পাপ ছিল, কিন্তু আইন-কানুন
         (বিধান) না থাকলে তো পাপকে পাপ বলে ধরা হয় না।
                ৫।     বিশ^াস না করলে পাপ
                         ঈশ^র যে বিশ^াসের যোগ্য তা বিশ^াস না করাই Ñ ঈশ^রের অবমাননা করা
                    ১যোহন ৫:১০ পদ,
                    যারা ঈশ^রের কথায় বিশ^াস করেনি তারা তাঁকে মিথ্যাবাদী বানিয়াছে।
                ৬।     অধার্মিকতা পাপ
                         ঈশ^রের আদর্শ বা মান অনুরূপ উপযুক্ত না হলে Ñ
                    রোমীয় ৬:১৩ পদ,
    আমরা বরং ঈশ^রের হাতে নিজেদের তুলে দিই এবং ন্যায় কাজ করার হাতিয়ার হিসাবে আমাদের সম্পূর্ণ শরীরকেই ঈশ^রকে দিয়ে দেই।
                ৭।     অধর্ম পাপ
                         অন্যায়, অবিচার, দুষ্টতা Ñ
                    মথি ২৪:১২ পদ,
                    দুষ্টতা বেড়ে যাবে বলে অনেকের প্রেম/ভালোবাসা খুব কমে যাবে।
    আমাদের উপলব্ধি করা প্রয়োজন যে, উপরের শব্দগুলো আমাদের পতনের প্রকৃত ব্যাখা দেয় যা আমাদেরকে ঈশ^রের থেকে পৃথক রাখে। আমাদের মানব হৃদয় প্রকৃত মন পরিবর্তনের বিশেষ প্রস্তুতির জন্য এই সত্য উপলব্ধি করা প্রয়োজন।
            খ।     মন পরিবর্তন Ñ ঈশ^র সম্পর্কে মনের এক পরিবর্তন।
    নতুন নিয়মে ‘মন-পরিবর্তন/ৎবঢ়বহঃ শব্দটির অর্থ কারো ‘মনের এক পরিবর্তন অথবা দৃষ্টিভঙ্গির এক পরিবর্তনকে বুঝায়।’
    পরিত্রাণ লাভের পূর্বে কেউ হয়তো চিন্তা করবে যে, সে তো তেমন খারাপ লোক নয়, কিন্তু আমরা যখন পবিত্র বাইবেলে জানতে পারি যে, ঈশ^র সম্পর্কে ও পাপ-সম্পর্কে কী বলে, তখন আমরা দেখি যে ঈশ^র তিনি পবিত্র ঈশ^র, যিনি পাপ ঘৃণা করেন। যখন কোনো ব্যক্তি ঈশ^রের দৃষ্টিভঙ্গিতে নিজের প্রতি দৃষ্টিপাত করে, তখন সে তার পাপের লজ্জাষ্কর অবস্থা ও তার নিজেকে পরিবর্তন করার সম্পূর্ণ অক্ষমতা বুঝতে পারে। 
    মন পরিবর্তন হলো পাপ, ঈশ^র এবং নিজের প্রতি যে বোধ তার পরিবর্তন। মন পরিবর্তন শুধুমাত্র ঈশ^রের দৃষ্টি থেকে আমাদেরকে পাপীরূপে দেখার বিষয় নয়, কিন্তু আমাদের দেখার বিষয় হলো ঈশ^রই একমাত্র ধার্মিকতার উৎস। তিনিই একমাত্র, যিনি সত্যতায় আমাদের বলতে পারেন সঠিক কী।
    হবক্কুক ১:১৩ পদ,
    “তুমি এমন নির্মলচক্ষু যে, মন্দ দেখিতে, আর দুষ্কার্যের প্রতি দৃষ্টিপাত করিতে পার না।”
    অর্থাৎ, ঈশ^র এত খাঁটি যে, তিনি দুষ্কর্মের/মন্দের দিতে তাকাতে পারেন না এবং অন্যায় সহ্য করতে পারেন না।
    রোমীয় ২:২ পদ,
    “আর আমরা জানি, যাহারা এইরূপ আচরণ করে, তাহাদের বিরুদ্ধে ঈশ^রের বিচার সত্যের অনুযায়ী।”
    অর্থাৎ, আমরা জানি যারা নিজের দোষ না দেখে শুধু অন্যদের দোষ দেয় ঈশ^র তাদের ন্যায্য বিচারই করবেন।
    রোমীয় ৩:৪ পদ,
    “তাহা কখনও নয়; বরং ঈশ^র সত্য প্রতিপন্ন হউন, কিন্তু প্রতিটি মানুষ মিথ্যাবাদী, যেমন লেখা আছে, যে ‘তুমি যেন তোমার বাণীতে ধর্মময় বলিয়া প্রতিপন্ন হও, আর তোমার বিচারকালে যেন জয় লাভ কর।”
    অর্থাৎ, সব মানুষ মিথ্যাবাদী হলেও ঈশ^র সব সময় সত্যবাদী। পবিত্র বাইবেলে লেখা আছে, “কাজেই তোমার রায় ঠিক, তোমার বিচার নিখুঁত।”
            গ।     মন পরিবর্তন অনুভূতির (মনোভাবের) এক পরিবর্তন।
                পাপের জন্য দুঃখ এবং ক্ষমা লাভের ইচ্ছা মন পরিবর্তনেরই দৃষ্টিভঙ্গি।
                দায়ুদের প্রার্থনার মধ্যে তীব্র মানসিক অস্থিরতা ও আবেগ লক্ষ্য করুন :
    গীতসংহিতা ৫১:১ পদ,
    “হে ঈশ^র, তোমার দয়ানুসারে আমার প্রতি কৃপা কর; তোমার করুণার বাহুল্য অনুসারে আমার অধর্ম সকল মার্জনা কর।”
    একজন পাপীর গভীরভাবে অনুতপ্ত হওয়া, তার পাপ থেকে ফেরা, মন পরিবর্তন করা Ñ হে ঈশ^র তোমার অটল ভালোবাসার জন্য আমার প্রতি দয়া কর, তোমার অসীম করুণার জন্য তোমার প্রতি আমার সব বিদ্রোহ ক্ষমা কর।
    ২করিন্থীয় ৭:৯ পদ,
    “এখন আমি আনন্দ করি; তোমাদের মনোদুঃখ হইয়াছে সেই জন্য নয়, কিন্তু তোমাদের মনোদুঃখ যে মনপরিবর্তন-জনক হইয়াছে, কারণ ঈশ^রের মতানুযায়ী মনোদুঃখ তোমাদের হইয়াছে, যেন আমাদের দ্বারা তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত না হও।”
    অর্থাৎ, নিজের পাপের জন্য মনোদুঃখ পাওয়াতে আনন্দের কিছু নাই, বরং পাপের জন্য মনোদুঃখিত হয়ে মন ফিরানো, মন পরিবর্তন করায় আনন্দের বিষয় হয়। ঈশ^রের ইচ্ছামতই পাপী মনোদুঃখ পায় আর এর জন্য কারোর ক্ষতি হয় না।
    এই পদ অনুসারে মনোদুঃখ কী অবস্থায় পরিণত করেছিল?
            ঘ।     মন পরিবর্তন হলো কোনো এক উদ্দেশে পরিবর্তন
    এই অপরিহার্য বিষয় কোনো ইচ্ছার, কোনো স্বভাব ও কোনো এক উদ্দেশ্যে এই পরিবর্তনের অর্থপ্রকাশ হয়। এটি পাপ থেকে অন্তরের পরিবর্তন।
            ১।     ঈশ^রের কাছে আমাদের পাপ স্বীকারের দ্বারা পরিবর্তনের এই উদ্দেশ্য প্রকাশ পায়। পূর্বে আমরা আমাদের পাপ অবহেলা বা লুকাতে চেষ্টা করেছি।
                কিন্তু হিতোপদেশ ১৫:৩ পদ,
                “সদাপ্রভুর চক্ষু সর্বস্থানেই আছে, তাহা অধম ও উত্তমদের প্রতি দৃষ্টি রাখে”
                অর্থাৎ, প্রভুর চোখ সবখানেই আছে; তা ভালো ও খারাপ লোকদের উপর নজর রাখে।
                এই কথানুসারে আপনার যে-কোনো পাপ কি ঈশ^রের দৃষ্টি থেকে লুকানো সম্ভব?
    গীতসংহিতা ৩৮:১৮ পদ,
    “আমি আপন অপরাধ স্বীকার করিব, আমি আমার পাপের জন্য অনুতাপ করিব।”
    একজন পাপীর কথা Ñ আমার দোষ আমি স্বীকার করছি; আমার পাপের জন্য আমার মন দুশ্চিন্তায় ভরা।
    এই পত অনুসারে একজন ব্যক্তি যিনি অনুতপ্ত, তিনি তার পাপের বিষয়ে কী করেন?
    বরং আমরা বলতে পারি যে, একজন ব্যক্তি যিনি তার পাপ সম্পর্কে সততা রক্ষা না করেন অর্থাৎ ন্যায়বান না হন, তাহলে তিনি মন পরিবর্তন করেননি অর্থাৎ তার পাপের জন্য অনুতপ্ত হননি।
            ২।     পাপ পরিত্যাগের দ্বারা এই পরিবর্তন প্রকাশ পায়।   
    যিশাইয় ৫৫:৭ পদ,
    “সেই দুষ্ট আপন পথ, আর সেই অধার্র্মিক ব্যক্তি আপন সঙ্কল্প ত্যাগ করুক; আর সে সদাপ্রভুর প্রতি ফিরিয়া আইসুক, আর তিনি তাহার প্রতি করুণা করিবেন; আর আমাদের ঈশ^রের প্রতি, কেননা তিনি প্রচুররূপে ক্ষমা করিবেন।”
    অর্থাৎ, দুষ্ট লোক তার পথ ত্যাগ করুক আর খারাপ লোক তার সব চিন্তা ত্যাগ করুক। সে প্রভুর দিকে ফিরুক, তাতে তিনি তার উপর মমতা করবেন; আমাদের ঈশ^রের দিকে ফিরুক, কারণ তিনি সম্পূর্ণভাবেই ক্ষমা করবেন।
   
    হিতোপদেশ ২৮:১৩ পদ,
    “যে আপন অধর্ম সকল ঢাকে, সে কৃতকার্য হইবে না, কিন্তু যে স্বীকার করে আর তাহা ত্যাগ করে করুণা পাইবে।”
    অর্থাৎ, যে লোক নিজের পাপ গোপন করে তার উন্নতি হয় না, কিন্তু যে তা স্বীকার করে ত্যাগ করে সে করুণা পায়।
    পাপ পরিত্যাগ অর্থ Ñ পাপের দিকে ফিরে যাবার ইচ্ছাকে না বলা।
    ঈশ^র কী প্রতিজ্ঞা করেন?
    যিশাইয় ৪৪:২২ পদ,
    “আমি তোমার ঘন অন্ধকারের ন্যায় অপরাধ সকল, আর তোমার মেঘের ন্যায় পাপ সকল ঘুচাইয়া ফেলিয়াছি; আমার প্রতি ফির, কেননা আমি তোমাকে মুক্ত করিয়াছি।”
    অর্থাৎ, বলা হয়েছে Ñ মেষের মতো করে তোমার সব অন্যায় আর সকাল বেলার কুয়াশার মতো করে তোমার সব পাপ আমি দূর করে দিয়েছি। তুমি আমার কাছে ফিরে এস, কারণ আমিই তোমাকে মুক্ত করেছি।
    ইব্রীয় ১০:১৭ পদ,
    “আর তাহাদের পাপ সকল ও অপরাধ সকল আর কখনও স্মরণে আনিব না”
    অর্থাৎ, ঈশ^র বলেছেন যে তিনি পাপ থেকে মন পরিবর্তনকারীদের পাপ ও অন্যায় আর কখনও মনে রাখবেন না। 
                ৩।      ঈশ^রের কাছে ফিরে আসার মাধ্যমে এই পরিবর্তন প্রকাশ পায়।
অপরিত্রাণপ্রাপ্তদের প্রতিটি পদক্ষেপই হলো ঈশ^রে থেকে দূরে থাকা। পাপের পথ থেকে ফিরে আসা তেমন কিছুই মঙ্গলজনক নয় যদি-না আমরা ঈশ^রের দিকে ফিরি।
১থিষলনীকীয় ১:৯ পদ,
“কারণ তাহারা নিজেরা আমাদের বিষয় প্রকাশ করিয়া থাকে যে, তোমাদের নিকটে আমরা কিরূপে উপস্থিত হইয়াছিলাম আর তোমরা কিরূপে প্রতিমাগণ হইতে ঈশ^রের দিকে ফিরিয়া আসিয়াছ, যেন জীবন্ত সত্য ঈশ^রের সেবা করিতে পার।”
এখানে বলা হয়েছে যে পৌল আনন্দিত হয়েছিলেন, কারণ থিষলনীকীয় লোকেরা দেব-দেবীদের কাছ থেকে ফিরে জীবন্ত এবং সত্য ঈশ^রের কাছে ফিরেছিল।
পৌল আগ্রিপ্প রাজার কাছে তার সাক্ষ্যে বলেছিলেন যে, যীশু খ্রীষ্ট তাকে লোকদের অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসার দায়িত্ব দিয়েছেন।
প্রেরিত ২৬:১৮ পদ,
“যেন তুমি তাহাদের চক্ষু খুলিয়া দেও, যেন তাহারা অন্ধকার হইতে জ্যোতির প্রতি; আর শয়তানের কর্তৃত্ব হইতে ঈশ^রের প্রতি ফিরিয়া আইসে, যেন আমাতে বিশ্বাস করণ দ্বারা পাপের মোচন ও পবিত্রীকৃত লোকদের মধ্যে অধিকার প্রাপ্ত হয়।”
অর্থাৎ, তাদের চোখ খুলে দেবার জন্য ও অন্ধকার থেকে আলোতে এবং শয়তানের শক্তির হাত থেকে ঈশ^রের কাছে ফিরিয়ে আনার জন্য যীশু খ্রীষ্ট পৌলকে তাদের কাছে পাঠাচ্ছেন, যেন যীশুর উপর বিশ^াসের ফলে তারা পাপের ক্ষমা পায় এবং যাদের পবিত্র করা হয়েছে তাদের মধ্যে স্থান পায়।
    গ।     মন পরিবর্তনের (অনুতাপ ও অনুশোচনার) বিষয়গুলো
        ১।     ঐশ্বরিক Ñ মন পরিবর্তন হলো ঈশ^রেরই একটি দান।
        ক।     প্রেরিত ১১:১৮ পদ,    
        “এই সকল কথা শুনিয়া তাঁহারা চুপ করিয়া রহিলেন, আর ঈশ^রের গৌরব করিলেন, কহিলেন, তবে ত ঈশ^র পরজাতীয় লোকদিগকেও জীবনার্থক মন-পরিবর্তন দান করিয়াছেন।”
        ঈশ^র পরজাতীয়দের অর্থাৎ অ-যিহূদীদেরও জীবন পারার জন্য মন পরিবর্তন করতে সুযোগ দিয়েছেন।
        খ।    ২তীমথিয় ২:২৫ পদ,
            “মৃদুভাবে বিরোধিগণকে শাসন করা তাহার উচিত; হয় ত খোদা তাহাদিগকে মনপরিবর্তন দান করবেন, যেন তাহারা সত্যের তত্ত্বজ্ঞান প্রাপ্ত হয়।”
            অর্থাৎ, যারা বিরোধীতা করে তাদের ন¤্রভাবে শিক্ষা দিতে হবে এই আশায় যে ঈশ^র তাদের মন পরিবর্তন করার সুযোগ দিচ্ছেন, যাতে ঈশ^রের সত্যকে তারা গভীরভাবে বুঝতে পারে।
        গ।    প্রেরিত ৫:৩০,৩১ পদ,
            “আর তাঁহাকেই (যীশু খ্রীষ্টকে) ঈশ^র অধিপতি ও মুক্তিদাতা করিয়া দক্ষিণ হস্ত দ্বারা উন্নত করিয়াছেন, যেন ইস্রায়েলকে মনপরিবর্তন ও পাপমোচন দান করেন।”  
            অর্থাৎ, যাঁকে (যীশু খ্রীষ্টকে) ক্রুশে টাংগিয়ে হত্যা করা হয়েছিল, ঈশ^র সেই যীশুকেই মৃত্যু থেকে জীবিত করে তুললেন। ঈশ^র তাঁকেই রাজা ও উদ্ধারকর্তা হিসাবে নিজের ডান পাশে বসবার গৌরব দান করেছেন, যাতে তিনি ই¯্ররাইলদের পাপ থেকে মন পরিবর্তন করার সুযোগ দিয়ে পাপের ক্ষমা দান করতে পারেন।
            এই পদ অনুসারে কে মন পরিবর্তনের ও ক্ষমার দান প্রদান করেন?
        ২।     মানবোচিত বোধ Ñ মন পরিবর্তনে প্রতি হৃদয়ের কোমল অনুভূতি রয়েছে।
        ক।     পাঠ করুন, প্রেরিত ২:৩৭,৩৮,৪১ পদ,
            “এই কথা শুনিয়া তাহাদের হৃদয়ে যেন শেল-বিদ্ধ হইল, আর তাহারা পিতরকে ও অন্য প্রেরিতদিগকে বলিতে লাগিল, ভ্রাতৃগণ, আমরা কি করিব? (৩৮ পদ) তখন পিতর তাহাদিগকে কহিলেন, মনফিরাও, আর তোমরা প্রত্যেক জন তোমাদের পাপমোচনের নিমিত্ত যীশু খ্রীষ্টের নামে বাপ্তাইজিত হও; (৪১ আয়াক) . . . তখন যাহারা তাঁহার কথা গ্রাহ্য করিল, তাহারা বাপ্তাইজিত হইল . . .।”
            ইসরাইল জাতি যখন পিতরের কাছ থেকে নিশ্চিতভাবে জানতে পারল যে যাঁকে তারা ক্রুশের উপরে হত্যা করেছিল ঈশ^র সেই যীশুকেই প্রভু এবং খ্রীষ্ট Ñ এই দুই পদেই নিযুক্ত করেছেন। তখন এই কথা শুনে তাদের মনে আঘাত পেল। তারা পিতর ও শিষ্যদের জিজ্ঞাসা করল, “ভাইয়েরা, আমরা কী করব? উত্তরে পিতর বললেন, “আপনারা প্রত্যেকে পাপের ক্ষমা পাবার জন্য মন ফিরান এবং মন পরিবর্তনের কারণে যীশু খ্র্রীষ্টের নামে বাপ্তাইজিত হন। এরপর পিতরের কথা যারা গ্রহণ করল, যারা বিশ^াস করল তারা বাপ্তাইজিত হলো।  
            খ।     সুসমাচার শোনার পর, মানুষের কী করতে হবে? (৩৮ আয়াত)
    ঘ।     মন পরিবর্তনের ফলাফল
        ১।     মন পরিবর্তনের কারণে স্বর্গে আনন্দ হয়।
    পাঠ করুন, লুক ১৫:১০ পদ,
    “. . . একজন পাপী মন ফিরাইলে ঈশ^রের দূতগণের সাক্ষাতে আনন্দ হয়।”
    একজন পাপী মন পরিবর্তন করলে, মন ফিরালে ঈশ^রের দূতগণদের মধ্যে আনন্দ হয়।
    লুক ১৫:৭ পদ,
    “. . . একজন পাপী মন ফিরাইলে স্বর্গে আনন্দ হইবে।”
    একজন পাপী মন ফিরালে, মন পরিবর্তন করলে স্বর্গে আরও বেশী আনন্দ হয়।
    এই পদ দু’টি অনুসারে কী এমন বিষয়ের জন্য স্বর্গে আনন্দ উপস্থিত হয়?
        ২।     মন পরিবর্তন পাপের ক্ষমা ও দ- থেকে রেহাই দেয়।
    পাঠ করুন, যিশাইয় ৫৫:৭ পদ,
    “দুষ্ট আপন পথ, অর্ধামিক আপন সঙ্কল্প ত্যাগ করুক; আর সে সদাপ্রভুর প্রতি ফিরিয়া আইসুক, তাহাতে তিনি তাহার প্রতি করুণা করিবেন; আমাদের ঈশ^রের প্রতি ফিরিয়া আইসুক, কেননা তিনি প্রচুররূপে ক্ষমা করিবেন।”
    অর্থাৎ বলা হয়েছে Ñ দুষ্ট লোক তার পথ ত্যাগ করুক আর খারাপ লোক তার সব চিন্তা ত্যাগ করুক। সে প্রভুর দিকে ফিরুক, তাতে তিনি তার উপর মমতা করবেন; আমাদের ঈশ^রের দিকে ফিরুক, কারণ তিনি সম্পূর্ণভাবেই ক্ষমা করবেন।
    প্রেরিত ৩:১৯ পদ,
    “অতএব তোমরা মন ফিরাও, ও ফির, যেন তোমাদের পাপ মুছিয়া ফেলা হয়।”
    এইজন্য পাপীরা মন ফিরিয়ে করে, মন পরিবর্তন করে ঈশ^রের দিকে ফিরুক যেন তাদের পাপ মুছে ফেলা হয়।
    মনপরিবর্তনে কী হয়?
    ৩।     যারা মন পরিবর্তন করে ও বিশ^াস করে তাহাদের মধ্যে পবিত্র আত্মা বাস করেন।
    পাঠ করুন, রোমীয় ৮:৯ পদ, পৌল একজন অনুতপ্ত পাপীকে বলতে গিয়ে বলেছেন, “কিন্তু তোমরা মাংসের অধীনে নও, আত্মার অধীনে রহিয়াছে; যদি বাস্তবিক ঈশ^রের আত্মা তোমাদিগেতে বাস করেন। কিন্তু খ্রীষ্টের আত্মা যাহার নাই. সে তাঁহার নয়।”
    অর্থাৎ, ঈশ^রের অত্মা যদি একজন অনুতপ্ত পাপীর অন্তরে বাস করেন তবে সে তো পাপ-স্বভাবের অধীন নয় বরং পবিত্র আত্মার অধীন। যার অন্তরে খ্রীষ্টের আত্মা নাই সে খ্রীষ্টের নয়।
ঈশ^রের সেই বাক্য মন পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তাকে অতি মহৎ বলে প্রকাশ করেছে। এর চেয়ে অধিক আর কিছুই হতে পারে না। এই সকল বিষয় আমাদের ঈশ^রকে দেবার মতো এমন কিছু নয়, কিন্তু প্রকৃত মুক্তির লক্ষ্যে হৃদয়ের একটি মনোভাব।
বিশ^াস ঋধরঃয
আপনার নিজের পবিত্র বাইবেল খুলে প্রেরিত ২:১৪-৪০ পদ পাঠ করুন। পিতর খ্রীষ্টকে নিছক একজন মানুষ বা ধর্মধ্বজী ভ-রূপে দেখতে যিহূদীদের আহ্বান করেননি, কিন্তু একজন প্রতিশ্রুত সেই খ্রীষ্ট যার বিষয়ে অঙ্গীকার করা হয়েছে এবং তাঁকে সেই মুক্তিদাতারূপে দেখতে আহ্বান করেছিলেন। প্রেরিতদের কার্য বিবরণে শিষ্যদের কার্যে ও বিশ^াসের ভিত্তির মাধ্যমে যুক্তি দেখিয়ে যিহূদীদের বিশ^াস করালেন যে সেই যীশুই ছিলেন সেই খ্রীষ্ট।
একজন লোক যার উপরে বা তিনি যা কিছুতে বিশ^াস ও আস্থা রাখেন, তিনি তার উপর নির্ভর করেই তার জীবন পরিচালিত করেন। কারো ব্যক্তিত্ব, দর্শন বা বিবেচনার উপর তিনি যা আস্থা রাখেন, তার দ্বারাই তার ধর্ম নির্ধারিত করেন। এখন বিশ^াসকে আরো একটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয়রূপে বিবেচনা করে আলোচনা করি।
ক।     বিশ^াসের সঠিক বর্ণনা
    ১।     বিশ^াস হলো কোনো ব্যক্তি বা বিষয়ের উপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখা যা তার প্রতিজ্ঞানুসারে কার্যসাধন করবে।
    ২।    সর্বশক্তিমান ঈশ^রের উপর আমাদের বিশ^াস করার কারণে মানুষের অভাব ও সমস্যায় সম্পর্ক রাখতে ঈশ^রের মহাশক্তি ও সাহায্য পাবার প্রতিশ্রুতি দাবি করা যায়।
    ৩।    প্রভু যীশু খ্রীষ্টে ত্যাগের বিনিময়ে, খ্রীষ্ট নিজ ধার্মিকতার বস্ত্রে (আবরণ) পাপীদের আচ্ছাদন করেন। খ্রীষ্টের প্রতি এই বিশ^াস পাপীদের পরিত্রাণ (মুক্তি) আনয়ন করে এবং পবিত্র ঈশ^রের সম্মুখে পাপীকে নিষ্পাপরূপে দাঁড় করায়।
    ২করিন্থীয় ৫:২১ পদ,
    “যিনি পাপ জানেন নাই, তাঁহাকে তিনি আমাদের পক্ষে পাপস্বরূপ করিলেন, যেন আমরা তাঁহাতে ঈশ^রের ধার্মিকতাস্বরূপ হই।”
    অর্থাৎ, বলা হয়েছে Ñ যীশু খ্রীষ্টের মধ্যে কোনো পাপ ছিল না; কিন্তু ঈশ^র আমাদের পাপ তাঁর উপর তুলে দিয়ে তাঁকেই পাপীদের জায়গায় দাঁড় করালেন, যেন খ্রীষ্টে সংগে যুক্ত থাকবার দরুন ঈশ^রের পবিত্রতা আমাদের পবিত্রতা হয়।
খ।     বিশ^াসের উৎস
    বিশ^াসের উৎস কী? এটি পিতা ঈশ^র, পুত্র ঈশ^র ও পবিত্র আত্মা ঈশ^র এর একত্রিত কর্ম।
        ১।    পিতা ঈশ^র বিশ^াস দান করেন।
            ইফিষীয় ২:৮ পদ অনুসারে বিশ^াস কী? Ñ “ইহা সেই ঈশ^রেরই দান।”   
            রোমীয় ১২:৩ পদ, “যাহাকে যে পরিমাণে বিশ^াস বিতরণ করিয়াছেন।”
            তিনি কে?                    ।
        ২।    পুত্র ঈশ^র বিশ^াসকে পূর্ণাঙ্গ করেন।
    ইব্রীয় ১২:২ পদ,
    “আমাদের বিশ^াসের সেই প্রতিষ্ঠাতা ও সিদ্ধতার সাধক যীশুর প্রতি দৃষ্টি রাখি।”
    অর্থাৎ, আমাদের চোখ যীশুর উপর স্থির রাখি যিনি বিশ^াসের ভিত্তি ও পূর্ণতা।
    কার প্রতি আমরা বিশ্বাসের চোখ বা দৃষ্টি রাখি?                    ।
        ৩।    পবিত্র আত্মা ঈশ^র বিশ^াসে পরিচালনা করেন।
            পবিত্র আত্মা ঈশ^র সেই বিশ^াসের দান পরিচালনা করেন।
    গালাতীয় ৫:২২ পদ,
    “কিন্তু আত্মার ফল প্রেম, আনন্দ, শান্তি, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য, মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, মৃদুতা, ইন্দ্রিয়দমন . . .।”
    অর্থাৎ, পবিত্র আত্মার ফল হলো Ñ প্রেম, আনন্দ, শান্তি, সহ্যগুণ, দয়ার স্বভাব, ভালো স্বভাব, বিশ^স্ততা, ন¤্রতা ও নিজেকে দমন।
    ১করিন্থীয় ১২:৯ পদ,
    “. . . সেই আত্মাতে বিশ্বাস, আর এক জনকে সেই একই আত্মাতে আরোগ্য সাধনের নানা অনুগ্রহ-দান . . .।”
    অর্থাৎ, সেই একই আত্মার দ্বারা বিশ^াস বা রোগ ভালো করবার ক্ষমতা বা আশ্চর্য কাজ করবার ক্ষমতা বা নবি হিসাবে ঈশ^রের বাক্য বলবার ক্ষমতা বা ভালো ও মন্দ আত্মাদের চিনে নেবার ক্ষমতা দেওয়া হয়।
গ।     বিশ^াসের প্রয়োজনীয়তা
        অনেকে ঈশ^রকে সুখী করতে আকাক্সক্ষী হয়। কিন্তু ঈশ^রকে সন্তুষ্ট করতে কী প্রয়োজন?
    ইব্রীয় ১১:৬ পদ,
    “কিন্তু বিনা বিশ^াসে তাঁহাকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়। কারণ সে যে ঈশ^রের নিকটে উপস্থিত হয়, তাহার ইহা বিশ^াস করা আবশ্যক যে তিনি আছেন, আর সে যে তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরষ্কারদাতা।”
    অর্থাৎ, বলা হয়েছে Ñ বিশ^াস ছাড়া ঈশ^রকে সন্তুষ্ট করা অসম্ভব, কারণ ঈশ^রের কাছে যে যায়, তাকে বিশ^াস করতে হবে যে, ঈশ^র আছেন এবং যারা তাঁকে অন্তর দিয়ে খোঁজে, তিনি তাদের ফিরাইয়া দেন না। যারা তাঁর ইচ্ছামত চলে তারা তাঁর হাত থেকে তাদের পাওয়া পায়।
    আপনার পবিত্র বাইবেল খুলে আরো পাঠ করুন, মথি ৮:১০; ৮:১৩; মার্ক ১০:৪৬-৫১ পদ।
        শাস্ত্রের এই অংশে গুরুত্বপূর্র্ণ বিষয়টি কী?  বি                 ।
ঘ।     বিশ^াসের অর্থ
        ১।    প্রথমত আমরা যে ভুল ধারণায় আছি সেগুলো চিহ্নিত করা প্রয়োজন।
        ক।    ‘আস্থা’ শব্দটি প্রায়ই একই অর্থে যা ‘বিশ^াস’-এ ব্যবহৃত হয়, কিন্তু অনেক সময়ে এই আস্থা বিশ^াসের একটি মাত্র উপযোগী বিষয়ে মানুষের সেই জ্ঞান বা উপলব্ধির অংশ হিসাবে দেখানো হয়েছে। অন্য কথায়, একজন মানুষ তার বোধশক্তিতে কিছু সঠিক বিষয়ে জানতে ও বুঝতে পারেন। সেটি হচ্ছে এক আস্থা। কিন্তু যখন তার ঐ আস্থা কার্যে পরিণত হয়, তখনই তা বিশ^াসে রূপ নেয়। যেমন কোনো ব্যক্তি উড়োজাহাজের বিষয়ে সব কিছু জানতে ও বুঝতে পেরে সত্য সত্যই তিনি আস্থা রাখেন যে, তিনি সেই উড়োজাহাজে উঠবেন। কিন্তু যখন তিনি উড়োজাহাজের ভিতরে প্রবেশ করেন, তখনই সেই আস্থা তার বিশ^াসে পরিণত হয় ও নির্ভরতা থাকে যে এটি তাকে তার গন্তব্য স্থানে নিয়ে যাবে। কার্যত এটিই আস্থা হয়।
        খ।    ‘প্রত্যাশা’ এমন কিছু যা ভবিষ্যতে ঘটবে বা পাওয়া যাবে। আর ‘বিশ^াস’ অতীত, বর্তমান, এবং ভবিষ্যতের সবকিছুতেই স্থাপন হয়।
        গ।    খ্রীষ্টিয়ান শিক্ষার সার সংক্ষেপ অর্থাৎ ‘সেই বিশ^াসে স্থির বা বিশ^াসের বশবর্তী হওয়া’ যেমন শাস্ত্রে উল্লেখ করে Ñ পাঠ করুন . . .
            প্রেরিত ৬:৭ পদ, “. . বিস্তর লোক বিশ^াসের বশবর্তী হইল;”
            অনেকে খ্রীষ্টিয় বিশ^াসকে মেনে নিলেন।
            ১তীমথিয় ৪:১ পদ, “. . কতক লোক ভ্রান্তিজনক আত্মাদিগকে ও ভূতদের শিক্ষামালায় মন দিয়া বিশ^াস হইতে সরিয়া পড়িবে;”
            কিছু লোক খ্রীষ্টিয় ধর্ম-বিশ^াস থেকে দূরে সরে যাবে এবং ছলনাকারী আত্মা ও ভূতদের, মন্দ আত্মাদের শিক্ষার দিকে ঝুঁকে পড়বে।
            ১তীমথিয় ৬:১০ পদ, “. . কতক লোক (খ্রীষ্টিয়) বিশ^াস হইতে বিপথগামী হইয়াছে;”
            অনেকে খ্রীষ্টিয় ধর্ম-বিশ^াস থেকে সরে গিয়ে নিজেদের উপর অনেক দুঃখ ডেকে এসেছে।
            যিহূদা ৩, “. . . একবার সমর্পিত বিশ^াসের পক্ষে প্রাণপণ করিতে তোমাদিগকে আশ্বাস দিয়া লেখা আবশ্যক।”
            ভ- গুরুরা যারা নিজেদের বিশ^াসী বলে দাবি করত তাদের সম্বন্ধে সাবধান করার জন্য যিহূদা বলেছেন যে, খ্রীষ্টিয় ধর্ম-বিশ^াস যা ঈশ^র তাঁর লোকদের চিরকালের জন্য দিয়েছেন, সেই বিশ^াসের পক্ষে প্রাণপণ যুদ্ধ করতে চিঠি লিখে আদেশ দেন।
        ঘ।    ‘নির্ভর’ শব্দটি পুরাতন নিয়মে এক বৈশিষ্টে ব্যবহার করা হয়েছে, তেমনি নতুন নিয়মে ‘বিশ^াস’।
        ২।    বিশ^াস কী?
    পরিত্রাণের ক্ষেত্রে বিশ^াস হলো ঈশ^রের নিকটে প্রাণের (একজনের) প্রত্যাবর্তন; যেমন মন পরিবর্তন হলো সেই প্রাণ (ব্যক্তির) পাপ থেকে ফেরা।
    পবিত্র বাইবেল বিশ^াসকে অন্তরের কার্যকে প্রকাশ করে। এজন্য জ্ঞানসম্পন্নে (বিচক্ষণে), এক আবেগে ও স্বেচ্ছায় পরিবর্তনে এটি যুক্ত।
ঙ।     বিশ^াসের তিনটি দিক
    ১।     জ্ঞান, উপলব্ধি ও বিচক্ষণতার যোগ্যতা বা গুণ Ñ বিশ্বাসযুক্ত এই যোগ্যতা পবিত্র বাইবেলে যেন ঈশ^রেরই প্রকাশ। পবিত্র বাইবেল মানুষের পাপেপূর্ণ সত্যতা, খ্রীষ্ট একমাত্র মুক্তিদাতা, পাপমুক্তির শর্ত এবং ঈশ^রের প্রতিশ্রুতিগুলো অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
    রোমীয় ১০:১৪ পদ,
    “তবে তাহারা যাঁহাতে বিশ^াস করে নাই, কেমন করিয়া তাঁহাকে ডাকিবে? আর যাঁহার কথা শুনে নাই, কেমন করিয়া তাঁহাতে বিশ^াস করিবে? আর প্রচারক না থাকিলে কেমন করিয়া শুনিবে?”
    অর্থাৎ, বলা হয়েছে Ñ যারা ঈশ^রের উপর বিশ^াস করেনি কেমন করে তারা তাঁকে ডাকবে? ঈশ^রের বিষয় যারা শোনেনি কেমন করে তারা তাঁর উপর বিশ^াস করবে? প্রচারক না থাকলে কেমন করেই বা তারা শুনবে?
    পদ্ধতিটি লক্ষ্য করুন . . . একজন সুসংবাদ প্রচারকের প্রচারের কারণে শ্রবণ করে বা শোনা, শ্রবণের বা শোনার কারণে বিশ^াস আসে আর বিশ^াসের কারণে আহ্বান করে বা ডাকে।
    রোমীয় ১০:১৭ পদ,
    “অতএব বিশ^াস শ্রবণ হইতে আর শ্রবণ ঈশ^রের বাক্য দ্বারা হয়।”
    অর্থাৎ, বলা হয়েছে Ñ ঈশ^রের বাক্য শুনবার ফলেই বিশ^াস আসে, আর খ্রীষ্টের বিষয় প্রচারের মধ্য দিয়ে সেই বাক্য শুনতে পাওয়া যায়।
    এই পদ অনুসারে আপনি এমন কী শ্রবণ করবেন যাতে আপনি বিশ^াস স্থাপন করতে পারেন? ঈশ^রের                     ।  
    গীতসংহিতা ৯:১০ পদ,
    “যাহারা তোমার নাম জানে, তাহারা তোমাতে বিশ^াস রাখিবে; কেননা, হে সদাপ্রভু, তুমি তোমার অন্বেষণকারীদিগকে পরিত্যাগ কর নাই।”
    অর্থাৎ, বলা হয়েছে Ñ যারা ঈশ^রকে জানে তারা যেন তাঁর উপর ভরসা করে, কারণ যারা সদাপ্রভু ঈশ^রকে গভীরভাবে জানতে চায় তাদের কখনও তিনি ত্যাগ করেনি।
            শাস্ত্রের  সাক্ষ্য প্রমাণে বিশ^াসের কারণেই প্রকৃত বিশ^াস উৎপত্তি হয়।
    ২।    আবেগ বা অনুভূতির যোগ্যতা বা গুণ Ñ বিশ^াসের সেই আবেগময় গুণ হলো ব্যক্তি প্রয়োজনে এবং খ্রীষ্টের প্রদান করা সেই প্রাণের মুক্তির জাগরণ।
    মার্ক ১২:৩২-৩৪ পদ,
    “অধ্যাপক তাহাকে কহিল, বেশ, গুরু, আপনি সত্য বলিয়াছেন যে, তিনি এক, আর তিনি ব্যতীত অন্য নাই; আর সমস্ত, অন্তঃকরণ, সমস্ত বুদ্ধি, সমস্ত প্রাণ ও সমস্ত শক্তি দিয়া তাঁহাকে প্রেম করা আর প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করা সমস্ত হোম ও বলিদান হইতে শ্রেষ্ঠ। তখন সে বুদ্ধিপূর্বক উত্তর দিয়াছে দেখিয়া যীশু তাহাকে কহিলেন, ঈশ^রের রাজ্য হইতে তুমি দূরবর্তী নও। ইহার পরে তাঁহাকে কোন প্রশ্ন করিতে মানুষের সাহস হইল না।”
    অর্থাৎ, বলা হয়েছে Ñ সেই অধ্যাপক বললেন, “গুরু খুব ভালো কথা। আপনি সত্যি কথাই বলেছেন যে, ঈশ^র এক এবং তিনি ছাড়া আর কোনো প্রভু নাই। আর সমস্ত অন্তঃকরণ, সমস্ত বুদ্ধি ও সমস্ত শক্তি দিয়ে তাঁকে প্রেম করা এবং প্রতিবেশীকে নিজের মতো প্রেম করা পশু ও অন্য সব বলিদানের চেয়ে অনেক বেশী দরকারী।
            শাস্ত্রের উপরের এই পদ থেকে বিশ্বাসের গুরুত্বপূর্ণ দিকটি আপনি লিখুন।
    ---------------------------------------------------------------------------------
    ---------------------------------------------------------------------------------
    ---------------------------------------------------------------------------------
    ---------------------------------------------------------------------------------
    ৩।     ঐচ্ছিক (স্বেচ্ছাকৃত) যোগ্যতা বা গুণ Ñ বিশ^াসের এই গুণ হলো আবেগ ও জ্ঞানে (অবগতিতে) উপযুক্তভাবে অধিক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়া।
    যদি কোনো নর-নারী ঈশ^রের সেই প্রকাশ এবং তাঁর দেওয়া সেই পরিত্রাণ সত্যানুযায়ী গ্রহণ করেন এবং পবিত্র বাইবেলের সেই ঈশ^রকে প্রেম ও তাদের জন্য খ্রীষ্ট যা-কিছু সাধন করেছেন তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, তাহলেই তারা নিজেরা উপযুক্তভাবে খ্রীষ্টকে মনোনয়ন করতে মনস্থির করবেন।
    স্বেচ্ছার এই যোগ্যতার গুণে তিনি ঈশ^রের দ্বারা পরিচালিত হবার জন্য তার অন্তঃকরণ ঈশ^রের প্রতি সমর্পণ করেন। এটি হলো কোনো ব্যক্তির জীবনে স্বেচ্ছায় খ্রীষ্টকে প্রভুরূপে গ্রহণ করার একটি মনোনয়নের আবেদন জানানো।
    বিশ^াস, আস্থা ও নির্ভর শব্দটি প্রায়ই আত্মসমর্পণ এবং অঙ্গীকারার্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। শাস্ত্র বারবার জোরালভাবেই প্রকাশ করে চলছে যে, খ্রীষ্টকে অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে, মানুষের অবশ্যই কতটা দায়িত্ব বা ঝুঁকি নিতে হবে।
    আপনার পবিত্র বাইবেল খুলে লূক ১৪:২৬-৩৩ পদ পাঠ করুন, আর এর মর্মকথা কী তা বিবেচনা করুন।
চ।     বিশ^াস পরিত্রাণের জন্ম দেয়।
        বিশ^াস কীভাবে আবার পরিত্রানের জন্ম দেয়?
        ১।     আমাদের জানতে হবে ঈশ^র পবিত্র বাইবেলে কী বলেন।
    ঈশ^রের বাক্যের জ্ঞানেই তো বিশ^াস গড়ে উঠে, আর এই বিশ^াসই তো খ্রীষ্টকে আমাদের জীবনে আহ্বানের অনুপ্রেরণা জোগায়।
    রোমীয় ১০:১৪ পদ,
    “তবে তাহারা যাঁহাতে বিশ্বাস করে নাই, কেমন করিয়া তাঁহাকে ডাকিবে? আর যাঁহার কথা শুনে নাই, কেমন করিয়া তাঁহাতে বিশ্বাস করিবে? আর প্রচারক না থাকিলে কেমন করিয়া শুনিবে?”
    অর্থাৎ, বলা হয়েছে Ñ কিন্তু যাঁর উপর তারা বিশ^াস করেনি তাঁকে কেমন করে ডাকবে? যাঁর বিষয় তারা শোনেনি তাঁর উপর কেমন করে বিশ^াস করবে? প্রচারক না থাকলে তারা কেমন করেই বা শুনবে?
    ঈশ^র তাঁর বাক্যে যেসব কথা তিনি বলেছেন তা সত্য বলে গ্রহণ করাই হলো বিশ^াস। আমাদের জীবনের সন্দেহ, আত্মবিশ্বাসহীন আচরণের জন্য ঈশ^রের বাক্যের সেই সত্যের প্রতি আমরা যেন দৃষ্টিপাত করি। আমরা আমাদের পাপাচারের জন্য আমরা আমাদের পাপ ও ব্যর্থতা ঈশ^রের কাছে স্বীকার করব। খ্রীষ্টের মাধ্যমে পরিত্রানের সেই আলোকিত দান, আমরা ঈশ^রের কাছে এই দানের জন্য প্রার্থনা করব যা আমরা কখনোই অর্জন করতে পারি না।
        ২।    ঈশ^রের বাক্য আমাদের সত্য বলে গ্রহণ করতে হবে।
    গীতসংহিতা ১১৯:১৬০ পদ,
    “সেই আদি হইতে তোমার বাক্য সত্য, আর তোমার ধর্মময় প্রত্যেক বিচার সকল চিরস্থায়ী।”
    অর্থাৎ, ঈশ^রের সমস্ত বাক্য সত্য; তাঁর প্রত্যেকটি ন্যায়পূর্ণ আইন চিরকাল স্থায়ী।
    যোহন ১৭:১৭ পদ,
    “তোমার সত্যে তাহাদের পবিত্র কর; তোমার বাক্যই সত্যস্বরূপ।”
    ঈশ^রের সত্যের দ্বারা বিশ^াসীদের পবিত্র করার জন্য প্রার্থনা। কারণ ঈশ^রের বাক্য সেই সত্য।
    ঈশ^রের বাক্যের জ্ঞান অত্যন্ত প্রয়োজন, কিন্তু এই বাক্য অনুসারে কাজ করার পূর্বে আমাদের তাতে বিশ^াস করতে হবে।
    ৩।    আমরা যা সত্য বলে জানি এবং স্বীকার করি তা আমাদের অবশ্যই ব্যক্তিগতভাবে গ্রহণ করতে হবে।
        ক।    ঈশ^রের বাক্য জানার দাবি করা এবং তা সত্য বলে গ্রহণ করার ভেতর তেমন কোনোই লাভ হবে না, যদি আমরা নিজেরা আমাদের বিশ^াসের লক্ষ্যবস্তু (ব্যক্তি) সেই খ্রীষ্টকে গ্রহণ না করি।
        খ।    ইব্রীয় ৪:২ পদ,
            “কেননা যেরূপ উহাদের নিকটে তদ্রƒপ আমাদের নিকটেও সুসংবাদ প্রচারিত হইয়াছিল, তথাপি সেই সুসংবাদে উহাদের কোন ফল দর্শিল না, শ্রোতাদের কাছে তাহা বিশ^াসের সহিত মিশ্রিত ছিল না।”
            অর্থাৎ, বলা হয়েছ Ñ ই¯্রায়েলদের কাছে যেমন সুসংবাদ প্রচার করা হয়েছিল তেমনি আমাদের কাছেও করা হয়েছে। কিন্তু সেই সুসংবাদ ই¯্রায়েলদের কোনই লাভ হয়নি, কারণ তারা তা শুনে বিশ^াস করেনি।
        গ।     খ্রীষ্ট স্বর্গে থেকে এসেছেন তা জানা সম্ভব হয়েও তাঁকে মুক্তিদাত ও প্রভু বলে উপেক্ষা করা হচ্ছে। খ্রীষ্ট আমাদের মুক্তিদাতা আর তাঁর কাছে আমাদের অন্তঃকরণ (চিত্ত ও মন) ও সব ইচ্ছা সমর্পণ না করেও খ্রীষ্টকে পবিত্র বাইবেলের দাবি বলে অনেকে স্বীকার করতে পারি।
        ঘ।     আমরা আমাদের বোধশক্তিতে যা জানি ও সত্য বলে হৃদয়ে যা গ্রহণ করি তার প্রতি আমাদের ইচ্ছার একটি নিবিড় সাড়াদানের দাবি রাখে বিশ^াস। প্রাণের ইচ্ছায় যার প্রতি বিশ^াস করেছি সেই খ্রীষ্টকে হাত বাড়িয়ে গ্রহণ করার একটি কাজ হলো এই।
        ঙ।     প্রকৃত বিশ^াস সবসময়ই সেই ইচ্ছার একটি স্থির অর্থ প্রকাশ করে অর্থাৎ একটি সিদ্ধান্তে অন্তর্ভূত হয়। এই নিশ্চিতে যে যীশু পরিত্রাণ করতে সমর্থ এবং তিনি মুক্তিদাত হতে এই পৃথিবীতে এসেছিলেন, এসব সত্যতায় আমাদের অবশ্যই ব্যক্তিগতভাবে সাড়া দিতে হবে।
    যোহন ১:১২ পদ,
    “কিন্তু অনেকে যেমন তাঁহাকে গ্রহণ করিল, সেই সকলকে, যাহারা তাঁহার নামে বিশ^াস করে তাঁহাদিগকে তিনি ঈশ^রের সেই সন্তান হইবার অধিকার দিলেন।”
    অর্থাৎ, যতজন যীশু খ্রীষ্টের উপর বিশ^াস করে তাঁকে গ্রহণ করল তাদের প্রত্যেককে তিনি ঈশ^রের সন্তান হবার অধিকার দিলেন।
    রোমীয় ১০:১৩ পদ,
    “কারণ যে কেহ সেই প্রভুর সেই নামে ডাকিবে পরিত্রাণ পাইবে।
 
বিশ^াসের একটি সুন্দর উদাহরণ হলো বিবাহ। একটি শুভ বিবাহ হলো কোনো ছেলের বা মেয়ের বিষয়ে কিছু জানা ও চূড়ান্ত পর্যায় তার প্রতি অগ্রসর হওয়া এবং সেই মেয়ে বা ছেলের একে অন্যের প্রতি তাদের ভাব প্রকাশ করা, আর শেষ পর্যায়ে একটি অঙ্গীকার স্থাপন করা।
 
আপনার বিশ^াসের জ্ঞান বা উপলব্ধির দৃষ্টিভঙ্গি Ñ বিশ^াসের প্রথম গুণ জ্ঞান বা উপলব্ধি, আর এই জ্ঞানের সঙ্গে বিবাহের পূর্বে প্রেম নিবেদনের বিষয় তুলনা করা যেতে পারে। এই একটি সময় যখন একে অন্যকে জানার সুযোগ হয়, আর দেখারও সুযোগ হয় যে, যেসব বৈশিষ্ট তারা আশা করে থাকে সেসব চরিত্র তাদের একে অন্যের মধ্যে আছে কি-না, যার দ্বারা তাদের বিবাহে একটি শুভ ফল এনে দিতে পারে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। যদি তাদের মধ্যে কোনো একজনের চরিত্র ভালো না হয় বা নির্ভরযোগ্য না হয়, তাহলে পরে সমস্যা দেখা দেবে।
 
একইভাবে খ্রীষ্টের ক্ষেত্রেও তাই। আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে ঈশ^র, যিনি দেহে গঠন হলেন Ñ তিনি কে। আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে, বুঝতে হবে যে খ্রীষ্টকে আপনার জন্য এ জগতে আসতে হয়েছিল, কারণ Ñ আপনি নিষ্পাপ হতে ও ঈশ^রের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে অক্ষম। আপনি কি বুঝতে পেরেছেন এবং বিশ^াস করতে পেরেছেন যে যীশু খ্রীষ্টই সেই একমাত্র মূল্য, যে মূল্য পিতা ঈশ^র আপনার পাপের জন্য গ্রহণ করেবেন?
 
বিশ^াসের আবেগপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি Ñ বিশ^াসের দ্বিতীয় গুণ অন্তঃকরণের জাগরণকে দ্বিতীয় ধাপে তুলনা করা যায়। এটি প্রেমে পড়ার মতো; যা প্রকৃত জ্ঞান বা উপলব্ধির পার্শ্বে সম্পূর্ণ জ্ঞান ও বোধে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ।
 
একইভাবে খ্রীষ্টের ক্ষেত্রেও তাই। কোনো নর অথবা নারী যিনি ঈশ^রের সম্মুখে তাদের পাপাচরণ বুঝতে পারে ও উপলব্ধি করতে পারে যে তাদের পাপ ঢাকতে বা দূর করতে আর অন্য কারোর মাধ্যমে নয় কেবল খ্রীষ্ট তাঁর মৃত্যুতেই সেই পাপের চরম মূল্য প্রদান করেছেন এবং তার এই স্পষ্ট উপলব্ধিতেই তার খ্রীষ্টের হবার ইচ্ছা জাগে। আপনি কি চান যেন আপনার পাপের ক্ষমা হোক এবং খ্রীষ্টই আপনার জীবনের পরিচালক হন?
 
বিশ^াসের ঐচ্ছিক দৃষ্টিভঙ্গি Ñ পরিশেষে, বিবাহ অনুষ্ঠানে মৌখিক একটি অঙ্গীকার রয়েছে। এই সময়ে নব-দম্পতি, ভবিষ্যতে তাদের সামনে যা কিছুই ঘটুক না কেন তারা একসঙ্গে থাকবে এবং একে অন্যকে ভালোবাসবে বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। তারা একে অন্যের অঙ্গীকারের বিষয় জগতকে জানাতে বিবাহ অনুষ্ঠানে সকলের সামনে তাদের প্রতিজ্ঞার কথা মুদ্রাঙ্কিত করে।
 
একইভাবে খ্রীষ্টকে গ্রহণের ক্ষেত্রেও তাই। অনেকে জানে যে, যীশু তিনি কে, আর উপলব্ধি করে যে, তাদের পাপ থেকে মুক্তির জন্য একজন উদ্ধারকারী প্রয়োজন। অনেকে খ্রীষ্টের হতে যে-কোনো মূল্যে হোক না কেন অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু খ্রীষ্টকে গ্রহণ অথবা তাঁর নামে ডাকতে সর্বশেষে একটি বিষয়ে অবশ্যই নজর দিতে হবে যে, জীবন পরিবর্তনের অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে এই বিষয়টি অঙ্গীকারে একবারেই হয়ে থাকে। ঠিক যেমন আপনার পুনরায় আর বিবাহিত হবার প্রয়োজন হয় না, তদ্রƒপ এ ক্ষেত্রে এও সত্য যে আপনি একবারই খ্রীষ্টকে গ্রহণ করেন, দ্বিতীয়বার নয়। আপনি যেমন আপনার বিবাহের বিশেষ ঐ মুহূর্তের কথা ভুলতে পারেন না, তেমনি আপনার জীবনে একবারই খ্রীষ্টকে গ্রহণ করার অভিজ্ঞতা থাকে এবং তাঁকে ভুলতে পারেন না আর এতেই আপনার স্বর্গ এবং ক্ষমার একমাত্র প্রত্যাশার সবকিছু। আপনি কি এখন এবং এখনই আপনার পাপেপূর্ণ অবস্থার কথা স্বীকার করবেন, আর খ্রীষ্টকে আপনার জীবনে প্রভু এবং মুক্তিদাতারূপে আসতে প্রার্থনা করবেন? 
 
যীশু খ্রীষ্টকে এমন একজন ব্যক্তিরূপে আপনার কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে, যিনি তাঁর মৃত্যুতে আপনার পাপের জন্য মূল্য প্রদান করেছেন। আপনাকে অবশ্যই একটি বিবেচনা বা মনোনয়ন করতে হচ্ছে। আপনি কি গতানুগতিকভাবে পাপ করেই যাবেন এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে প্রত্যাখ্যান করবেন? অথবা আপনি কি তাঁকে আপনার জীবনে গ্রহণ করতে এবং আপনার প্রভু এবং মুক্তিদাতা হবার সুযোগ দেবেন?
 
কোনো একজন বলেছেন, “প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে ঐশ^রিক একটি শূন্যতা রয়েছে এবং কেবল মাত্র ঈশ^র পারেন সে শূন্যতা পূর্ণ করতে।” এ কথা সত্য। ঈশ^র আমাদের নির্দিষ্ট গভীর আভ্যন্তরীণ অনুভূতির অভাব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, যা একমাত্র ঈশ^রই আমাদের অন্তরে বাস করে সেই অভাব তিনি পূরণ করতে পারেন। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো “আপনি এখন যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে কী করবেন, যেমন আপনি জানতে পারছেন যে তিনি একমাত্র মুক্তিদাতা?”
 
আপনি কি পাপ পরিত্যাগ করে যীশু খ্রীষ্টকে আপনার পাপের মূল্য প্রদানকারীরূপে গ্রহণ করতে ও এখনই তাঁকে আপনার জীবন পরিচালনার সুযোগ দেবেন?
 
এই ধারাবাহিক পবিত্র বাইবেল আলোচনার এটিই শেষ পাঠ। আমাদের পরবর্তী খ্রীষ্টিয় জীবনে সার্বিক বৃদ্ধির সহায়তার জন্য আরো একটি আলোচনা পাঠ রয়েছে। আপনি চাইলে আমরা আপনাকে এই শিক্ষাদানে সাহায্য করব, যেন আপনি পবিত্র বাইবেল এবং যীশু খ্রীষ্টের শিক্ষার বিষয়ে আরো জ্ঞান অর্জন করতে পারেন।  এই পাঠ্যালোচনা শেষ করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
 

প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখুন

৮ম পাঠ


১।         স্বর্গে প্রবেশের জন্য অবশ্য করণীয় বিষয়টি কী?
       
                    


        




২।        ধার্মিকতা ও পরিত্রাণের বর্ণনা দেয় এমন দু’টি শর্তের নাম করুন?

ক।                                      
   
খ।

৩।         প্রকৃত পরিত্রাণ কীসের উপর নির্ভর করে?

                    


৪।        পরিত্রানের জন্য অতি প্রয়োজনীয় দু’টি উপাদান কী কী?

ক।                                      
   
খ।

৫।        মন-পরিবতন কী?

ক।                                      
   
খ।

গ।

ঘ।



৬।        বিশ্বাস সঠিক বর্ণনা দিন (সংক্ষেপে)।

                    


        




৭।        বিশ্বাসের তিনটি দিক কী কী?

ক।                                      
   
খ।

গ।



Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?