ইসমাইল না কি ইসহাক? (Ishmael or Isaac?)

ইসমাইল না কি ইসহাক? (Ishmael or Isaac?)

ঈদ-উল-আজহা হিজরি সনের জিলহজ মাসের ১০ তারিখে সারা দুনিয়ার সমস্ত দেশে মুসলমানদের মধ্যে পশু কোরবানির উৎসব। মুসলিম সম্প্রদায় বলেন যে আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইব্রাহিম (আ.) নিজের ছেলে হজরত ইসমাইল(আ.)- কে কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময়ের অপার কুদরতে হজরত ইসমাইল(আ.)- এর পরিবর্তে একটি দুম্বার কোরবানি হয়ে যায়। হজরত ইব্রাহিম (আ.)- এর সেই ত্যাগের মহিমার কথা স্বরণ করে মুসলিম সম্প্রদায় জিলজহ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ লাভের জন্য পশু কোরবানি করে থাকেন। এই ঈদ তাদের ত্যাগের উৎসব।

আমরা বাইবেল থেকে জানি যে অব্রাহাম ঈশ্বরকে কতটা ভালোবাসে তার একটা পরীক্ষা নিওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ঈশ্বর। অব্রাহামের জন্য এটা ছিল একটা মহাপরীক্ষা। নিজ পুত্রকে ঈশ্বরের উদ্দেশে হোমার্থে বলিদান করা আর এটা ঈশ্বরের আদেশ। বলিদানের উদ্দেশ্যে অব্রাহাম ছেলেকে হত্যা করার জন্য যেই তিনি ছোরা তুললেন, ঠিক তখনই ঈশ্বরের দূত স্বর্গ থেকে অব্রাহামকে ডেকে বললেন, “অব্রাহাম! থামো! ছেলেটিকে হত্যা করো না! এবার আমি বুঝেছি তুমি ঈশ্বরকে সম্মান কর ও তাঁর প্রতি তোমার বাধ্যতার তুলনা হয় না। কারণ তুমি তোমার একমাত্র পুত্রকে পর্যন্ত তাঁর কাছে বলিদান করতে প্রস্তুত।”

তখন অব্রাহাম চারিদিকে তাকাতে লাগলেন। দেখলেন, কাছেই ঝোপের মধ্যে একটা ভেড়া শিং আটকে বাঁধা পড়ে আছে। তিনি ইসহাকের বাঁধন খুলে দিলেন এবং ঐ ভেড়াকে এনে বেদীর ওপরে বলি দিলেন। এটি ছিল ঈশ্বরের উদ্দেশে হোমবলি। অব্রাহাম সেই স্থানের নাম রাখলেন, “যিহোবা-যিরি”, এর অর্থ‘ঈশ্বর জোগান।’

যাহোক আমার প্রশ্ন হলো ঈশ্বর অব্রাহাম (ইব্রাহিম’কে) তার বৃদ্ধ বয়সে কোন্ পুত্র সন্তানের প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, ইশ্মায়েল/ইসমাইল(Ishmael) না-কি ইসহাক/ইসাক’কে (Isaac)?

কোরান বলে ইসাক/ইস্হাক’কে (১১. সূরা হূদ ১১:৬৯-৭৩; ১৬. সূরা হিজর ১৫:৫১-৫৩)। মুসলিন বিশ্ব বিশ্বাস করে ইশ্মায়েল/ইসমাইল’কে। ইসহাক ও ইসমাইল, এই দুইজন-ই তো আর হতে পারে না, হবে একজনকে।

ঈশ্বর অব্রাহামকে তার কোন্ পুত্রকে তাঁর জন্য যবেহ বা কোরবানি দিতে বলেছিলেন? উত্তরটা হলো যে, যে পুত্র প্রতিজ্ঞাত ঠিক তাকে। এই পুত্র কোন্ জন? এই ঘটনাটি ১১. সূরা হূদ; ১৫. সূরা হিজর এবং ৩৭. সূরা সাফ্ফাত এ পাওয়া যায়।

সূরা ১১(হূদ) এ বলা আছে: (আল-কুরআনুল করীম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

৬৯- “আমার ফিরিশতাগণ তো সুসংবাদ লইয়া ইব্রাহীমের নিকট আসিল। তাহারা বলিল, ‘সালাম’। সেও বলিল, ‘সালাম’। সে অবিলম্বে এক কাবাবকৃত গো-বৎস লইয়া আসিল।

৭০- সে যখন দেখিল তাহাদের হস্ত উহার দিকে প্রসারিত হইতেছে না, তখন তাহাদেরকে অবাঞ্ছিত মনে করিল এবং তাহাদের সম্বন্ধে তাহার মনে ভীত সঞ্চার হইল। তাহারা বলিল, ‘ভয় করিও না, আমার তো লূতের সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হইয়াছি।’

৭১- আর তাহার স্ত্রী দণ্ডায়মান এবং সে হাসিয়া ফেলিল। অতঃপর আমি তাহাকে ইসহাকের ও ইসহাকের পরবর্তী ইয়া’কূবের সুসংবাদ দিলাম।

৭২- সে বলিল, ‘কী আশ্চর্য’! সন্তানের জননী হইব আমি, যখন আমি বৃদ্ধ এবং এই আমার স্বামী বৃদ্ধ! ইহা অবশ্যই এক অদ্ভুত ব্যাপার!’

৭৩- তাহারা বলিল, ‘আল্লাহ্র কাজে তুমি বিস্ময় বোধ করিতেছ? হে পরিবারবর্গ! তোমাদের প্রতি রহিয়াছে আল্লাহর অনুগ্রহ ও কল্যাণ। তিনি তো প্রশংসার্হ ও সম্মানার্হ।”

সূরা ১৫(হিজর) এ বলা আছে:

৫১- “আর উহাদেরকে বল, ইব্রাহীমের অতিথিদের কথা,

৫২- যখন উহারা তাহার নিকট উপস্থিত হইয়া বলিল, ‘সালাম’, তখন সে বলিয়াছিল, ‘আমরা তো তোমাদের আগমনে আতঙ্কিত।’

৫৩- উহারা বলিল, ‘ভয় করিও না, আমরা তো তোমাকে এক জ্ঞানী পুত্রের শুভ সংবাদ দিতেছি।”

আমরা যদি প্রকাশক, হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ এর অনুবাদ দেখি যা আল কোরআন একাডেমী পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত। ১১. সূরা হূদ ৭১-৭২

“তার স্ত্রী- (সেখানে) দাঁড়িয়ে ছিলো, (এদের কথাবার্তা শুনে) সে হাসলো, অতপর আমি তাকে(তার ছেলে) ইসহাক ও তার পরবর্তী (পৌত্র) ইয়াকুবের (জন্মের) সুসংবাদ দিলাম। সে(এটা শুনে) বললো, কি আশ্চর্য! আমি সন্তান জন্ম দেবো, আমি তো(এখন) বৃদ্ধা(হয়ে গেছি,) আর এই(যে) আমার স্বামী, (সেও তো) বৃদ্ধ হয়ে গেছে; (এমন কিছু হলে) এটা(আসলেই হবে) একটা আশ্চর্যজনক ব্যাপার।”

সূরা ৩৭. সূরা(সাফ্ফাত) উপযুক্ত কারণটা দেয়, যে বিষয়ে অব্রাহাম সেই পুত্রের জন্য আগেই প্রার্থনা করেছিলেন :

১০০“হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এক সৎকর্মপরায়ণ সন্তান দান কর।”

হে মালিক, আমাকে তুমি একজন নেক সন্তান দান করো।

১০১“অতঃপর আমি তাহাকে এক স্থিরবুদ্ধি পুত্রের সুসংবাদ দিলাম।”

এরপর আমি তাকে একজন ধৈর্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম।
১০২“অতঃপর সে যখন তাহার পিতার সঙ্গে কাজ করিবার মত বয়সে উপনীত হইল তখন ইবরাহীম বলিল, ’বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে আমি যবেহ্ করিতেছি, এখন তোমার অভিমত কি বল? সে বলিল, ‘হে আমার পিতা! আপনি যাহা আদিষ্ট হইয়াছেন তাহাই করুন। আল্লাহ্র ইচ্ছায় আপনি, আমাকে ধৈর্যশীল পাইবেন।”

সে যখন তার পিতার সাথে দৌড়াদৌড়ি করার মতো বয়সের অবস্থায় উপনীত হলো, তখন সে ছেলেকে বললো, হে বৎস, আমি স্বপ্নে দেখি, আমি যেন তোমাকে যবাই করছি, বলো এ ব্যাপারে তোমার অভিমত কি? স্বপ্নের কথা শুনে সে বললো, হে আমার স্নেহপরায়ণ আব্বাজান, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি অবিলম্বে তা পালন করুন, ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে এ সময়েও ধৈর্যশীলদের মাঝে পাবেন।

১০৩“যখন তাহারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করিল এবং ইবরাহীম তাহার পুত্রকে কাত করিয়া শায়িত করিল”

অতপর যখন তারা(পিতাপুত্র) দুজনই(আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছার সামনে) আত্মাসমর্পণ করলো এবং সে তাকে(যবাই করার উদ্দেশে) কাত করে শুইয়ে দিলো।

১০৪“তখন আমি তাহাকে আহ্বান করিয়া বলিলাম, ‘হে ইব্রাহীম!”

তখন আমি তাকে ডাক দিলে বললাম, হে ইবরাহীম।

১০৫“তুমি তো স্বপ্নাদেশ সত্যই পালন করিলে! -- এইভাবেই আমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে পুরস্কৃত করিয়া থাকি।”

তুমি আমার(দেখানো) স্বপ্ন সত্য প্রমাণ করেছো, (আমি তোমাদের উভয়কেই মর্যাবান করবো, মূলত) আমি এভাবেই সৎকর্মশীল মানুষদের পুরষ্কার দিয়ে থাকি!

১০৬“নিশ্চয়ই ইহা ছিল এক স্পষ্ট পরীক্ষা।”

এটা ছিলো(তাদের উভয়ের জন্যে) একটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা মাত্র!

১০৭“আমি তাহাকে মুক্ত করিলাম এক কুরবানীর বিনিময়ে।”

(এ কারণেই) আমি তার(ছেলের) পরিবর্তে (আমার নিজের পক্ষ থেকে) একটা বড়ো কোরবানী (-র জন্তু সেখানে) দান করলাম।

১০৮“আমি ইহা পরবর্তীদের স্বরণে রাখিয়াছি।”

(অনাগত মানুষদের জন্যে এ বিধান চালু রেখে) তার স্বরণ আমি অব্যাহত রেখে দিলাম)
১০৯“ইব্রাহীমের উপর শান্তি বর্ষিত হউক।”

শান্তি বর্ষিত হোক ইবরাহীমের উপর।

সূরা ৩৭ এ, অব্রাহাম যে সৎকর্মপরায়ণ/নেক সন্তান আল্লাহর কাছে থেকে চেয়ে নিলেন তা নামে উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু সূরা ১১:৭১ আয়াতে সেই সন্তানকে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

কোরান বলে, সে ছিল“সৎকর্মপরায়ণ/নেক সন্তান” যা অব্রাহাম চেয়ে ছিলেন, যে সন্তানকে ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তাকে দেওয়ার জন্য, যাকেই ঈশ্বর আদেশ করেছিলেন যবাই করার জন্য। সেই পুত্রের নাম ইসাক/ইস্হাক (Ishaq/Isaac). যদিও আরবরা বিশ্বাস করেন যে আল্লাহ সেই সন্তানের প্রতিজ্ঞা করেছিলেন আর পরবর্তীতে অব্রাহাম সেই সন্তানকেই যবেহ করেছিলেন যিনি ছিলেন ইশ্মায়েল/ইসমাইল(Ishmael)। কোরানে মনোযোগ দিলেই সত্য জানা যাবে যে সেখানে কী বলা আছে।

তাহলে এখন কোরান অনুযায়ী - ইসাক/ইস্হাক (Ishaq/Isaac) নাকি ইশ্মায়েল/ইসমাইল(Ishmael) ?

আমাদের বাইবেলের শিক্ষা মতে ইসহাক ছিলেন অব্রাহামের আশ্চর্য পুত্র, যিনি ঈশ্বরের দ্বারা প্রতিজ্ঞাত ছিলেন এবং উত্তরাধিকারে অব্রাহামের জন্য আশির্বাদ (আদিপুস্তক ১৫:১-৬; ১৭:১৫-২১; ১৮:৯-১৪; ২১:১-৮; মথি ১:২; ৮:১১; ২২:৩২; লূক ৩:৩৪; ১৩:২৮; ২০:৩৭; প্রেরিত ৩:১৩; ৭:৮,৩২; রোমীয় ৯:১০; গালাতীয় ৪:২৮; ইব্রীয় ১১:৯,১৭,১৮,২০; যাকোব ২:২১ পদ)

ইসহাক আবারো প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দৃষ্টান্তস্বরূপ। যীশুর মতো, ইসহাকের ছিল আশ্চর্য রকমের জন্ম, ছিল নিজের(প্রতীকস্বরূপ) বলি দেবার মতো উৎসর্গ; ছিল পিতার দ্বারা এক বিবাহের কন্যা/কনে দান; পিতা কন্যাকে ভালোবাসতেন; উত্তরাধিকারে বিত্তবান পিতার বিশাল সম্পদের অধিকারী।

Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?