বন্ধু হতে চান?

রিডার্স ডাইজেস্ট অবলম্বনে 

বিখ্যাত দাশনিক এরিস্টটল বলেছেন, দু’টি দেহের এক অভিন্ন আত্মার মিলনই হলো বন্ধুত্ব। পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুরতম সম্পর্ক হলো বন্ধুত্ব। একজন ভালো বন্ধু হতে পারে কোনো ব্যক্তির জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কেননা একজন ভালো বন্ধুর সংস্পর্শে কারও জীবন হতে পারে ফুলে-ফুলে শোভিত। অন্যদিকে একজন খারাপ বন্ধু কারও জীবনে চরম সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। সেই প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ বন্ধুত্ব গড়ার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে চলছে। এর কিছুতে সে হয়েছে সফল এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যর্থ। কেননা মানুষ যখন কোনো ব্যক্তি বা বস্তু সম্পর্কে তার চিন্তাধারা বদল করে তখন একই সাথে তার মনের অবস্থারও পরিবর্তন ঘটে। প্রকৃতপক্ষে কোনো ব্যক্তির সার্বিক উন্নতি, জয়লাভ এবং সাফল্য নির্ভর করে তার নিজের উপর, কিন্তু এর পেছনে একজন নিঃস্বার্থ বন্ধুর অবদান অপরিমেয়। তাই ব্যক্তি জীবনে একজন ভালো বন্ধু হতে পারে জীবন রক্ষাকারী টনিক। যারা এখনও জীবনে এমন বন্ধুর সাক্ষাত পাননি তারা নিচের পন্থাগুলো অনুশীলন করুন দেখবেন অচিরেই আপনি হয়ে উঠেছেন সকলের মধ্যমনি এবং এদের মাঝেই পেয়ে যাবেন আপনার কাক্সিক্ষত বন্ধুটি।

১। অন্যের প্রতি আগ্রহী হোন : কোনো কাজের সফলতা অর্জন করতে হলে সর্বাগ্রে যে কাজটি প্রয়োজন তা হলো ঐ কাজের প্রতি আগ্রহ। আগ্রহ থাকলে যে কোনো কাজে সফলতা অবশ্যম্ভবী। আপনি সর্বদা নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকলে কেউ আপনার প্রতি তেমন আগ্রহ দেখাবে না। নিজের প্রতি সকলের আগ্রহ সৃষ্টি করাতে হলে আপনাকে হতে হবে অন্যের প্রতি সমান আগ্রহী। সুতরাং আপনি অন্যের কোনো সমস্যায় আগ্রহ নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করুন। দেখবেন ধীরে ধীরে সে আপনার একজন ভালো বন্ধুত্বে পরিণত হয়েছে।

২। অন্যের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করুন : কোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে মনোভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে কাজ করে। যখন কোনো ব্যক্তির সাথে আলাপচারিতা শুরু করবেন তখন সর্বদা তার মনোভাব অনুযায়ী কথা বলুন। কখনোই আপনার ইচ্ছাকে অগ্রাধিকার দেয়ার চেষ্টা করবেন না কেননা তাহলেই শুরু হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। সুতরাং সঙ্গীর মনোভাবকে প্রাধান্য দিন দেখবেন শুরু হয়েছে বন্ধুত্বের বন্ধন।

৩। হাসিমুখে কথা বলুল : একটি সুন্দর হাসি ভুলিয়ে দিতে পারে যে কোনো দুঃখ। সুতরাং, সর্বদা হাসি-খুশি ও প্রফুল্ল থাকুন। যখনই কারও সাথে কোনো কথা বলবেন তখনই আন্তরিকতার সাথে হেসে কথা বলুন। আপনার মেজাজ খারাপ থাকলেও অন্তত কৃত্রিম হাসি দিয়ে কথা বলুন। দেখবেন এর ফলে সবাই আপনাকে সাদরে গ্রহণ করছে। কেননা আপনি ভালো করেই জানেন গোমড়ামুখো ব্যক্তিকে কেউ তেমন পছন্দ করে না। যেমনটি করেন না আপনি। সুতরাং সবার সাথে হেসে কথা বলুন দেখবেন বন্ধুত্ব কত সহজ।

৪। অন্যের সমালোচনা থেকে দুরে থাকুন : অযথা কারও সমালোচনা করবেন না। কেননা পৃথিবীতে যতগুলো খারাপ অভ্যাস রয়েছে পরচর্চা বা সমালোচান তাদের মধ্যে অন্যতম। আপনি যখন কাউকে সমালোচনা করবেন দেখবেন বিপরীতভাবে আপনিও সমালোচিত হচ্ছেন। সমালোচনা একে অন্যের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে থাকে। সুতরাং একে পাশে সরিয়ে রেখে বন্ধুত্ব ব্যবহার করুন।  

৫। অহংকার ও হিংসা-বিদ্বেষ ঝেড়ে ফেলুন : কথায় আছে অহংকার পতনের মূল। অহংকারীকে কেউই পছন্দ করে না। নিজের বাড়তি কিছু থাকলে তা নিয়ে অহংকার না করে সবার সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করুন। তেমনি কেউ কোনো কাজে সাফল্য লাভ করলে তাকে হিংসা না করে উৎসাহ দিন। হিংসা-বিদ্বেষ এমন এক প্রকার বিষ যা মনকে কলুষিত করতে তৎপর থাকে। সুতরাং হিংসা ও ঘৃণার পথ ত্যাগ করে অহিংসার পথে চলুন দেখবেন বন্ধুত্ব অনিবার্য।

৬। অন্যের বিপদে সাহায্য করুন : কেউ কোনো বিপদে পড়লে অকৃত্রিমভাবে তার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ান। কেননা বিপদে যারা এগিয়ে আসে তারাই প্রকৃত বন্ধু। অন্যের বিপদে সাহায্য করুন দেখবেন আপনার বিপদে বন্ধুর অভাব হবে না।

৭। জ্ঞানের পরিধি বাড়ান : মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো তার প্রজ্ঞা ও জ্ঞান। আপনার জ্ঞানের পরিধি যত বাড়তে থাকবে দেখবেন আপনার জানার আগ্রহও তত বাড়বে এবং মনমানসিকতাও হবে অনেক উদার।

৮। অন্যের প্রশংসা করুন : প্রশংসা অনেক ক্ষেত্রে সাফল্যের চাবিকাঠি। কেউ কোনো ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করলে এবং কোনো কাজে সাফল্য লাভ করলে প্রাণ খুলে প্রশংসা করুন। দেখবেন আপনার অনুরূপ সাফল্যে আপনি সমান তালে প্রশংসা পাচ্ছেন। সুতরাং অপরের প্রশংসা করুন দেখবেন সবাই আপনাকে ভালো বন্ধু হিসাবে গণ্য করছে।

৯। আত্ম-বিশ্বাসী হোন : নিজের উপর আত্মাবিশ্বাসী গড়ে তুলুন। কেননা কোনো সম্পর্ক উন্নয়ন এবং প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আত্ম-বিশ্বাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আত্মাবিশ্বাস এমন একটি বস্তু যা আপনাকে করে তুলবে সাহসী ও প্রতিদ্বন্দী হিসাবে। সুতরাং বন্ধুত্ব গঠনের জন্য আত্ম-বিশ্বাসী হয়ে উঠুন।

১০। অন্যের কথার গুরুত্ব দিন ও অপরকে কথা বলতে দিন : সব সময় নিজেকে বড় করে তুলে ধরবেন না, কেননা এর ফলে সকলের আপনার প্রতি বিরূপ ধারণা আসবে। কেউ কোনো কথা বললে মনোযোগ সহকারে শুনুন এবং তার কথার গুরুত্ব দিন। এছাড়া সব সময় নিজে কথা না বলে অন্যকে কথা বলার সুযোগ দিন। দেখবেন এর ফলে আপনি হয় উঠেছেন অন্যদের আগ্রহের পাত্র। সুতরাং কারও মন জয় করতে হলে অবশ্যই তাকে গুরুত্ব দিন। দেখবেন বন্ধুত্ব অবশ্যম্ভাবী।

উপযুক্ত পন্থাগুলো অনুসরণ করুন দেখবেন অচিরেই আপনি হয়ে উঠেছেন সকলের প্রিয় পাত্র। আর সকলের প্রিয় পাত্র হওয়ার মাঝেই লুকিয়ে আছে বন্ধুত্বের হাতছানি।



Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?