আমাদের কি মৃতদের জন্য প্রার্থনা করা উচিত? Should we pray for the souls of the dead?
কিন্তু যারা জীবনদশায় আত্মিকভাবে মৃত অবস্থায় আছেন সেই তাদের জন্য উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।
প্রার্থনা মৃতদের কবরের কাছে নয়, সমাধি স্থলে প্রার্থনা নয়।
কিন্তু জীবনদশায় আত্মিকতায় সেই মৃতদের কাছে যাওয়া উচিত।
প্রার্থনা মৃত প্রাণের জন্য করা নয়।
কিন্তু আত্মিকতায় যারা অসচেতন অবস্থায় আছেন, তাদের জন্য ভাবতে হয়।
অনেক মণ্ডলী নভেম্বর মাসের ২ তরিখ All Souls Day অর্থাৎ পরলোকগত লোকদের স্বরণ দিবস, সমস্ত মৃতদের স্বরণ অনুষ্ঠান পালন করে থাকেন।
নভেম্বরের ২ তারিখ যদি রবিবার হয় তাহলে এ পর্বটি নভেম্বরের ৩ তারিখ এ দিবসটি পালন করেন।
তারা এ দিনে সমস্ত মৃত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ প্রার্থনা অর্পণ করেন।
পোপ পঞ্চদশ বেনেডিক্ট প্রত্যেক কাথিলিক যাজককে এ দিনে তিনটি খ্রীষ্টযোগ অর্পণ করার সুযোগ দিয়েছেন।
কাথলিক মণ্ডলীর বিশ্বাস যে শুচ্যগ্নিস্থ আত্মাদের জন্য বিশেষ প্রার্থনার মাধ্যমে পূর্ণ দণ্ডমোচন এই দিনে লাভ করা হয়।
কাথলিক মণ্ডলীর শিক্ষানুযায়ী মৃত ব্যক্তিদের সেই অবস্থা বুঝায় যেখানে তারা ঈশ্বরের বন্ধু হয়ে তাঁরা অনুগ্রহ পেয়ে মারা গেছেন, কিন্তু ঈশ্বরকে দেখার জন্য তাদের পূর্ণ শুদ্ধির এখনো প্রয়োজন রয়েছে।
এই শুদ্ধি অবশ্যই নরকের শাস্তির অবস্থার সাথে তুলনা করা যায় না।
কাথলিক মণ্ডলী শুচ্যগ্নিস্থানের আত্মাদের জন্য প্রার্থনা করতে নিজেরা উৎসাহ বোধ করেন।
শুচ্যগ্নিস্থানের বিষয়ে ঘোষণা দিয়েছেন লিয়ন (১২৭৪), ফ্লোরেন্স (১৪৩৯ সালে) এবং ট্রেন্ট - এর মহাসভা।
কাথিলিক মণ্ডলী এ দিনে পরলোকগতদের স্বরণ দিবসে তাদের জন্য প্রার্থনা করেন।
কাথলিক মণ্ডলী মৃত প্রাণের জন্য অর্থাৎ মৃত ব্যক্তিদের জন্য প্রার্থনা করার শিক্ষা তাদের শাস্ত্র এপোক্রিপা (Apocrypha) থেকে 2 Maccabees 12:43-45 পদ থেকে পেয়েছে।
এখানে মৃতদের কাছে প্রার্থনা করা এবং মৃতদের পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য নৈবেদ্য প্রদান করা শেখায়।
২ ম্যাকবসি ১২:৪৩-৪৫ থেকে এই উদ্ধৃতি বিবেচনা করুন:
“তিনি একটি সংগ্রহও করেছিলেন . . এবং তা যিরূশালেমে পাঠিয়েছিলেন পাপ-উৎসর্গের জন্য।
. . কারণ তিনি যদি আশা না করতেন যে যারা ঘুমিয়ে পড়েছেন তারা আবার জেগে উঠেবে, তাহলে মৃত্যুর জন্য ক্ষমা করাটা অপ্রয়োজনীয় এবং বোকামি হবে . . তাই তিনি মৃতদের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করলেন, তারা যেন তাদের পাপ থেকে উদ্ধার পায়।”
যাহোক আমরা এপোক্রিপা পুস্তকগুলো বিশ্বাস করি না কারণ এই এপোক্রিপা আমাদের বাইবেলের ৬৬টি খণ্ডের কোনো অংশ নয়, এবং আমাদের হাতে থাকা পবিত্র ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল থেকে এপোক্রিপার খণ্ডগুলো ভিন্ন শিক্ষা দেয়।
এই এপোক্রিপা সম্পর্কে অন্য একদিন আলোচনা করব।
আমি আলোচনা করতে চাই যে . .
মানুষের জীবনে সবচেয়ে অসহায় অবস্থা হলো যখন সে মৃত।
মৃতের দেহ মন তার উপর কর্তৃত্ব করতে পারে না।
তার পাশের লোকেরা তাকে যেমন খুসি সেদিকে নাড়াচার করতে পারে।
তার কোনো কথা বলা বা তার কোনো ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারে না।
মৃতেরা অসহায়, নিদ্রায় থাকা ব্যক্তির মতো।
সাধু পৌল আত্মিকভাবে নিদ্রাগত ব্যক্তিকে মৃতদের মতই দুর্দশাগ্রস্ত বলে উল্লেখ করেছেন।
আমরা আমাদের জীবন পরিক্ষা করে দেখতে পারি যে আমরা মৃতদের মতো অবস্থায় আছি কি না?
যখন আমরা গভীর ঘুমে থাকি আমাদের সমস্ত শক্তি অক্ষম হয়ে পড়ে।
আমরা যে কতখানি দুর্বল আর অসহায় হয়ে পড়ি তা আমরাও জানি না।
আত্মিকতায় মৃত ব্যক্তির জীবনে অনুচিত ব্যবহার, অনর্থক কথা, লোভ, ব্যভিচার, কুৎসিত আলোচনা আমাদের মধ্যে সংক্রামিত হয়।
অনাত্মিক মৃত ব্যক্তির জীবনে অশুদ্ধতা, অশুচিতা, অরাজকতা আমাদের জীবনে অনায়াসে প্রবেশ করে।
আধমরা মন্দতা থেকে বাঁচার জন্য ঈশ্বরের কথা - ওহে ঘুমন্ত লোক, মৃতদের মধ্যে থেকে উঠ।
সাধু পৌলের কথা - সাবধান, তোমরা কীভাবে চলছ তা ভেবে দেখ, মূর্খের মতো না চলে বিজ্ঞের মতো চল প্রতিটি সুযোগের সদ্ব্যবহার করা কারণ এখন শয়তানের যুগ।
অবিবেচকের মতো কোনো কাজ করো না, কিন্তু প্রভুর কি ইচ্ছা তা জেনে সেইমতো কাজ কর।
আমরা, যারা জীবিত তাদের জন্য প্রার্থনা করি, মৃতদের জন্য নয়।
কারণ মানুষের মৃত্যুর পর তার আর কিছুই করার থাকে না।
আর আমরাও তাদের জন্য প্রার্থনা করে তাদের প্রাণের কিংবা আত্মিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন করতে পারি না।
Comments