খ্রীষ্টিয়ানদের জন্য সতর্কতা - অন্য কোনো সুসমাচারে বিশ্বাসী কি না যাচাই করুন

 খ্রীষ্টিয়ানদের জন্য সতর্কতা - অন্য কোনো সুসমাচারে বিশ্বাসী কি না যাচাই করুন

সাধু পৌলের পরিত্রাণপ্রাপ্ত হবার পর বিশ্বাসীদের জীবন সম্পর্কে সাধু পৌলের সাবধানতা, যা তিনি গালাতীয় ১:৮-৯ পদে বলেছেন, “কিন্তু আমরা তোমাদের নিকটে যে সুসমাচার প্রচার করিয়াছি, তাহা ছাড়া অন্য সুসমাচার যদি কেহ প্রচার করে Ñ আমরাই করি, কিংবা স্বর্গ হইতে আগত কোন দূতই করুক Ñ তবে সে শাপগ্রস্ত হউক। আমরা পূর্বে যেরূপ বলিযাছি, তদ্রƒপ আমি এখন আবার বলিতেছি, তোমরা যাহা গ্রহণ করিয়াছ, তাহা ছাড়া আর কোন সুসমাচার যদি কেহ তোমাদের নিকটে প্রচার করে, তবে সে শাপগ্রস্ত হউক।” তার এ কথায় কিন্তু সুসমাচার প্রচার এগিয়ে যাচ্ছিলেন।   

কলসীয় (১:১) মণ্ডলীর প্রতি পত্রের দ্বিতীয় অধ্যায়ের এই পদগুলোতে প্রেরিত পৌল মণ্ডলীর সদস্যদের বিশেষভাবে পরামর্শ দিচ্ছেন, “তাঁহাতেই বদ্ধমূল ও সংগ্রথিত হইয়া প্রাপ্ত শিক্ষানুসারে বিশ্বাসে দৃঢ়ীভূত হও।” দৃঢ়ীভূত শব্দটির অর্থ - “অনমনীয়, শক্ত, অটল বা দৃঢ়ভাবে স্থাপিত। দৃঢ়চেতা, নিশ্চিত, প্রতিষ্ঠিত”। ইফিষের মণ্ডলীকে পৌল লিখেছিলেন, “যেন আমরা আর বালক বা শিশু না থাকি, মনুষ্যদের ঠকামিতে, ধূর্ততায়, ভ্রান্তির চাতুরিক্রমে তরঙ্গাহত এবং যে সে শিক্ষাবায়ুতে ইতস্ততঃ পরিচালিত না হই” ইফিষীয় ৪:১৪ পদ। এটি ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষা সম্পর্কে একজনের আত্মিক অপরিপক্কতার চিহ্ন যে সে তার নিজের অবস্থানে দৃঢ় না।

আমরা দেখেছি আর নিজেরাও জানি যে দৃঢ়ীভূত হতে হলে শিক্ষা অপরিহার্য। এ-কারণে আমাদের প্রভু তাঁর দায়িত্বভার অর্পণের প্রথম মণ্ডলীকে এই আদেশ দিয়েছিলেন “আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি, সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দাও” মথি ২৮:২০ পদ।

ভ্রান্ত শিক্ষা বা মতবাদগুলোর “ক্ষতিকর ধর্ম বিরোধীতার” বিপক্ষে নিজেকে রক্ষা ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার একমাত্র উপায় হলো ঈশ্বরের বাক্যে দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করা। যেমন শিকড় বিহীন একটি গাছ অল্প বাতাসে সহজেই মাটিতে পড়ে যায়, তেমনি একজন খ্রীষ্টিয়ান যার ঈশ্বরের বাক্যের উপরে জ্ঞানের ভিত্তি নেই সে বর্তমানে প্রবাহমান প্রচলিত শিক্ষা বা মতবাদের বাতাসের দ্বারা যে-কোনো দিকে আন্দোলিত বা পরিচালিত হতে পারে।

যেসব সম্পর্কে আমাদের সতর্ক হতে বলা হয়েছে সেসব আমাদের জন্য কলসীয় ২:৮ পদে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এসবের লক্ষ্য এই যে তারা আমাদের “বন্দি” করে। এখানে বন্দি শব্দটির অর্থ এই বুঝায় না “সর্বনাশ অথবা ক্ষয় করা” বরং বুঝায় “লুণ্ঠন করা” যেমন যুদ্ধে লুন্ঠিত দ্রব্যের মতো। তাহলে দেখা যাচ্ছে বর্তমানকালের ভ্রান্ত শিক্ষকেরা তাদের সঙ্গে ঈশ্বরের দ্বারা অভিষিক্ত মণ্ডলী যা আপনাকে বিশ্বাসে দৃঢ়ীভূত বা সুদৃঢ় করে তা থেকে অন্যত্র লুট করে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। 

সতর্ক হওয়া সম্পর্কে শিক্ষাগুলো অধ্যয়ন করলে আর ধ্যান করলে দেখা যাবে যে উপরে উল্লেখ করা ভুলগুলোর একটি বা বহু শিক্ষার ক্ষতিকর এবং মারাত্মক বলে চিহ্নিত করার কারণগুলো পাওয়া যাবে। ধর্মমত বিরোধীতার অভিযোগ এতই গুরুতর ধরনের যে এর অবস্থান এবং যে ব্যক্তি তা ধারণ করে তাকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করা প্রয়োজন - তীত ৩:১০ পদ।

বিভিন্ন শিক্ষা বা মতবাদ আমাদের পরীক্ষা করতে হয়। এ ধরণের শিক্ষা এবং ঐসব শিক্ষা যিনি দিয়ে থাকেন তাকে প্রত্যাখ্যান করা প্রয়োজন। যদি মণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে কাউকে করতে দেখা যায়, সেই ব্যক্তিকে শাসন করা প্রয়োজন নচেৎ স্থানীয় মণ্ডলী যৌথভাবে যীশু খ্রীষ্টে সমবিশ্বাসীদের সহভাগিতা থেকে তাকে বঞ্চিত করতে হয়।

যে সাতটি কারণে ভ্রান্ত শিক্ষা বা উপদেশ আমাদের বর্জন করতে হয়।

আমাদের শাস্ত্র বচন হলো মথি ১৫:১-২০ পদ। অনুগ্রহপূর্বক শাস্ত্রাংশটি পাঠ করুন।

অনেকে প্রায়ই বেশ জোরালোভাবে বলে থাকেন যে আপনারা চলমান শিক্ষাকে বিঘ্নিত করছেন, ভ্রান্ত শিক্ষা বলে তার বিরুদ্ধে কথা বলছেন। অনেকে বুঝতে চায় না যে ভয়ানক পরিণতি দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে আর মিথ্যা শিক্ষা সহনীয়ভাবে মেনে নেওয়া হচ্ছে। কিছুকালের জন্য ভ্রান্ত শিক্ষার ঘটনাগুলো ক্ষতি করে না বলে মনে হতে পারে, কিন্তু আসলে কিন্তু তা নয়।

ভ্রান্ত শিক্ষার যে-কোনো শিক্ষা বা উপদেশ যা বাইবেলের, ঈশ্বরের বাক্যের উপর ভিত্তি নাই। “কেননা আমি তোমাদিগকে সুশিক্ষা দিব; তোমরা আমার ব্যবস্থা ত্যাগ করিও না” হিতোপদেশ ৪:২ পদ। ঈশ্বরের থেকে যদি শিক্ষা না আইসে, তাহলে এর উৎপত্তির জন্য সেখানে মাত্র দু’টি সম্ভ্যব্য অন্য উৎস থাকে। প্রথমত, পাপেপূর্ণ লোকদের থেকে শিক্ষা আসে যা সবকিছুর জন্য কলুষিত উৎস। “ইহারা অনর্থক আমার আরাধনা করে, মনষ্যদের আদেশ ধর্মসূত্র বলিয়া শিক্ষা দেয়” মার্ক ৭:৭ পদ। দ্বিতীয়ত, শয়তান হলো সেই প্রধান প্রতারক আর এই হলো ঈশ্বরের শত্রু যার কাছ থেকে শিক্ষা আসে। “কিন্তু আত্মা স্পষ্টই বলিতেছেন, উত্তরকালে কতক লোক ভ্রান্তিজনক আত্মাদিগকে ও ভূতগণের শিক্ষামালায় মন দিয়া বিশ্বাস হইতে সরিয়া পড়িবে” ১ তীমথিয় ৪:১ পদ। সেজন্য আমরা সমস্ত শিক্ষার জন্য মাত্র তিনটি উৎস দেখতে পারি।

কিছু কিছু লোক আছেন যারা একেবারেই কোনো সময়ই উপদেশ শুনতে চান না বা শিক্ষা গ্রহণ করতে চান না। তারা শিক্ষার মর্ম বোঝেন না, বা বাইবেলের উপর এর গুরুত্ব স্থাপন করেন না। বহু প্রচারকদের বিভিন্নভাবে টিকিয়ে রাখা হচ্ছে যারা অল্পসল্প প্রচার করেন বা কোনো সময়ই জোরালো কোনো উপদেশ বা শিক্ষা তারা দিচ্ছেন না।

বাইবেলে শিক্ষা বা উপদেশ (doctrine) কথাটি ৫৫ বার পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৪৯বার পাওয়া যায় নতুন নিয়মে। শব্দটি অন্য কোনোভাবে যুক্ত নয় যা এই গ্রিক শব্দ থেকে অনুবাদ হয়েছে। এগুলো গ্রিক শব্দ "didache" শব্দ থেকে এসেছে। শব্দটি মূলত ‘শিক্ষা বা উপদেশ’ অর্থ প্রকাশ করে, আর তা যুক্তিসম্মতভাবে ঈশ্বরের থেকেই এসেছে। সম্পূর্ণ বাইবেলের শিক্ষাই হলো উপদেশ বা শিক্ষা। শিক্ষা বা উপদেশ ব্যতিরেকে খ্রীষ্টিয়ানত্ব একবোরে শূন্য খোসায় পরিণত হয়, আর হয় নিষ্ফল বা মূল্যহীন। কোনো প্রচারক যদি অটুট বা নির্ভরযোগ্য শিক্ষা না দেন বা উপদেশ না দেন তাহলে তিনি কোনো কিছুই প্রচার করছেন না, তার দ্বারা যা-ই হোক না কেন, বা যা-কিছুই করা হোক না কেন তাতে আত্মিক কোনো ফল প্রকাশ পায় না। তার মুখ বন্ধ করা উচিৎ আর তার আহূত পেশা পরিবর্তন করা উচিৎ, আর তার অন্য কোনো কিছু বিক্রি করার দালালী করা উচিৎ। (ইন্সুরেন্স বা কোনো কিছু বিক্রি করার দালালী কাজে অন্যায় বা নিয়মের লঙ্ঘন নাই।)

বাস্তবিক বাইবেল বিশ্বাসীদের সুনির্দিষ্টভাবেই ভ্রান্ত মতবাদ, শিক্ষায় অন্তর্ভূক্ত না হবার জন্য সতর্ক করে দেয়। “তোমরা বহুবিধ এবং বিজাতীয় শিক্ষা দ্বারা বিপথে চালিত হইও না” ইব্রীয় ১৩:৯ পদ।

আমরা ৭টি কারণ বিবেচনা করি কেন আমাদের ভ্রান্ত শিক্ষা এড়িয়ে যাওয়া উচিত ও প্রকাশ করা উচিত।

১। প্রথাগত, পরম্পরাগত, চিরাচরিত বিধির উপর ভ্রান্ত শিক্ষার ভিত্তি।

“তখন যিরূশালেম হইতে ফরীশীরা ও অধ্যাপকেরা যীশুর নিকটে আসিয়া কহিল, আপনার শিষ্যগণ কি জন্য প্রাচীনদের পরম্পরাগত বিধি লঙ্ঘন করে? কেননা আহার করিবার সময়ে তাহারা হাত ধোয় না” মথি ১৫:১-২ পদ।

ভ্রান্ত শিক্ষা সত্যিকারে কখনো ঈশ্বরের বাক্যের উপর ভিত্তি স্থাপন করে না। তারা প্রায়ই বাইবেল বিকৃত করে, পেঁচিয়ে ভিন্ন অর্থ করে তাদের মতবাদ বা শিক্ষাকে খাঁটি প্রমাণ করার চেষ্টা করে, কিন্তু তাদের মতবাদ বা শিক্ষা মানবীয় প্রথাগত বা চিরাচরিত অভ্যাসের উপর ভিত্তি। পৌল কলসীয় ২ অধ্যায়ে উল্লেখ করা মানবীয় পরাম্পরাগত শিক্ষার বিপদের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। ৪ পদ “এই কথা বলিতেছি, যেন কেহ প্ররোচক বাক্যে তোমাদিগকে না ভুলায়” ৮ পদ “দেখিও, দর্শনবিদ্যা ও অনর্থক প্রতারণা দ্বারা কেহ যেন তোমাদিগকে বন্দি করিয়া লইয়া না যায়; তাহা মনুষ্যদের পরাম্পরাগত শিক্ষার অনুরূপ, জগতের অক্ষরমালার অনুরূপ, খ্রীষ্টের অনুরূপ নয়” ২২ পদ “ঐ সকল বিধি মনুষ্যদের বিবিধ আদেশ ও ধর্মসূত্রের অনুরূপ” কলসীয় ২:৪,৮,২২ পদ।

ভ্রান্ত শিক্ষা খ্রীষ্টের নিন্দুক বা তাঁর কুৎসাকারী। কলসীয় ২ অধ্যায় যীশু খ্রীষ্টকে উচ্চ প্রশংসা করে বা তাঁকে মর্যাদাসম্পন্ন করে। ভ্রান্ত শিক্ষা লোকদের খ্রীষ্টের থেকে ভিন্ন পথে চালিত করে। লক্ষ্য করুন এখন তিনি তাদের খ্রীষ্টের প্রতি ফেরাবার লক্ষ্যে চেষ্টা করেছেন। খ্রীষ্টের কথা বলতে তিনি ৩ পদে লিখেছেন, “ইহাঁর মধ্যে জ্ঞানের ও বিদ্যার সমস্ত নিধি গুপ্ত রহিয়াছে।” ৬ পদে, “অতএব খ্রীষ্ট যীশুকে, প্রভুকে যেমন গ্রহণ করিয়াছ, তেমনি তাঁহাতেই চল” ৭ পদে, “তাঁহাতেই বদ্ধমূল ও সংগ্রথিত হইয়া প্রাপ্ত শিক্ষানুসারে বিশ্বাসে দৃঢ়ীভূত হও এবং ধন্যবাদ সহকারে উপচিয়া পড়।” ৯ পদে, “কেননা তাঁহাতেই ঈশ্বরত্বের সমস্ত পূর্ণতা দৈহিকরূপে বাস করে” ১০ পদে, “এবং তোমরা তাঁহাতে পূর্ণীকৃত হইয়াছ, যিনি সমস্ত আধিপত্যের ও কর্তৃত্বের মস্তক” কলসীয় ২:৩,৬,৯,১০ পদ।

আজকের দিনে ভ্রান্ত শিক্ষার রীতি বা ব্যবহার। রোমান ক্যাথলিকেরা মরিয়মের আরাধনা করে এবং তাকে ঈশ্বর-জননী অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তার মা বলে ডাকে। এ বিষয় বাইবেলের কোথাও পাওয়া যায় না, কিন্তু ৪৩১ খ্রীষ্টাব্দে এফেসাসের মহাধর্মসভায় এটি গ্রহণ করা হয়। ক্যাথলিক পুরোহিতেরা খ্রীষ্টযাগে বা মিসায় খ্র্রীষ্টের পুনরায় বলি (যজ্ঞবলি) উৎসর্গ পরিচালনা করেন। মানুষের এই আচরণ ৩৯৪ খ্রীষ্টাব্দে শুরু হয় আর এর দ্বারা ঈশ্বরের পবিত্রতাকে নিন্দা করা হয়। তারা পারগেটরি অর্থাৎ শুচ্যগ্নিস্থানের মতবাদে বিশ্বাস করে, যেখানে মানুষেরা মৃত্যুর পরে স্বর্গে যাবার আগে তাদের পাপের জন্য শাস্তি ভোগ করে। এটি কিছুই নয় কিন্তু মানুষের প্রথাগত বা পরাম্পরাগত শিক্ষা মাত্র, আর এটি শুরু হয়েছিল ৫৯৩ খ্রীষ্টাব্দে। ১০৭৯ খ্রীষ্টাব্দে শুরু হয়েছিল যাজকদের কৌমার্য প্রথা। পুরোহিতদের বিবাহ করা প্রত্যাখ্যান করা হয়, এ কারণে অগণিত পুরোহিতদের সমকামী হতে জানা যায় এবং অন্যান্যদের ব্যভিচার করতে প্রলুব্ধ করে। এই হলো ধর্মের একটি অংশ যা-কিনা মানুষের প্রথাগত বা পরাম্পরাগত শিক্ষার উপর ভিত্তি।

একজন পুরোহিতের নিকট পাপ স্বীকার করা, ১২১৫ খ্রীষ্টাব্দে যাজকদের মহাসভাতে পোপ ৩য় ইন্নোসেন্ট এর দ্বারা এই রীতি আরোপ করা হয়। এটি সত্য থেকে চরমভাবে প্রস্থান, যা মানুষের একটি মন্দ প্রথা বা আচার।  

এক্যুমেনিকাল মুভমেন্ট বা বিশ্বজনীন আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শয়তান রোমান ক্যাথলিক পৈরিতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমস্ত মণ্ডলীদের ঐক্য গড়ার প্রয়াস চালাচ্ছে। এটি বিশ্ব চার্চ পরিষদ (WCC) এবং জাতীয় চার্চ পরিষদের (NCC) লক্ষ্যে থাকা একটি বিষয়। অধিকাংশ প্রটেস্ট্যান্ট সম্প্রদায় এসব পৈরিতিক চার্চ পরিষদের অংশস্বরূপ। 

আন্ত-মাণ্ডলিক প্রতিষ্ঠান ও ভ্রান্ত শিক্ষাসমূহ। ভেদাভেদের প্রাচীর ভাঙার  উদ্দেশ্যে এখন আন্ত-মাণ্ডলিক প্রতিষ্ঠান সমস্ত ডিমোমিনেশকে একসঙ্গে আনছে। উপরে উল্লেখ করা ক্যাথলিকদের ভ্রান্ত শিক্ষা সরানো যাবে না বলে ধরে নিয়ে তারা রোমান ক্যাথলিকদের ভ্রাতৃত্ব গ্রহণ করছে। তারা আমাদের এবং রোমান ক্যাথলিকদের, ক্যারিসমেটিকদের ও উদারপন্থীদের সেই শিক্ষা বা মতবাদ এবং ব্যবহার গ্রহণ করাতে চাইছে। তারা আমাদের এসব লোকদের খ্রীষ্টেতে ভাই বলাতে এবং তাদের সঙ্গে সহভাগিতা করাতে চাইছে।

আন্ত-মাণ্ডলিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রমিজ কিপার একটি - এটি বিংশ শতাব্দীতে অত্যন্ত মারাত্মক, ভ্রান্তিজনক এবং বিপদজনক উঠতি আন্দোলন। এটি বাইবেল বিশ্বাসীদের ও বাইবেল মতের বিরুদ্ধবাদীদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার দেওয়াল ভাঙানোর জন্য এই বিশ্বজনীন, যা-কিনা শয়তানের চাতুরী। এটি ছোট ছোট স্বাধীন ব্যাপ্টিস্ট মণ্ডলীর ভিতরে মানুষের তৈরি মণ্ডলী প্রয়োগ করানো। এটি সঠিক ও সত্য মণ্ডলীর মতবাদগত অবস্থা উত্তরোত্তর দুর্বল করা, পালকের নেতৃত্ব ও ক্ষমতাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাওয়া। মূলভিত্তিগত মণ্ডলীর অবশ্যই তাদের সকল বল ও শক্তি দ্বারা প্রতিরোধ করা উচিৎ।

২। ভ্রান্ত মতবাদ বা শিক্ষা আজ্ঞা লঙ্ঘন করে।

“. . তোমরাও আপনাদের পরম্পরাগত বিধির জন্য ঈশ্বরের আজ্ঞা লঙ্ঘন কর কেন? . . এইরূপে তোমরা আপনাদের পরম্পরাগত বিধির জন্য ঈশ্বরের বাক্য নিষ্ফল করিতেছ” মথি ১৫:৩,৬ পদ। বহু লোকেরা মনে করেন যে মানুষের ধর্মীয় পরম্পরাগত বিধি কোনো ক্ষতি সৃষ্টি করে না। অবশ্যই বহু ক্ষতি করে, কারণ তারা ঈশ্বরের শিক্ষার লঙ্ঘন করে। এসব পদের অংশে, আমরা পাই যে ধর্মকর্মের যিহূদীরা পরম্পরাগত বিধি প্রয়োগ করতো, সুতরাং তারা ঈশ্বরের বাধ্য ছিল না (৪-৬ পদগুলো দেখুন)। ধনবান লোকেরা তাদের পিতা এবং মাতাকে সমাদর করতো না। পিতাদের এবং মাতাদের প্রয়োজন ছিল, আর তারা তাদের ভার বহন করতে বাধ্য ছিল। সে যা-হোক, তারা বলেছিল, এটি একটি দান, আর এই ভার বহন এভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছিল। তারা বলেছিল, ঈশ্বরের প্রতি আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এর জন্য আমরা পিতা বা মাতার সাহায্য করতে পরবো না। এটি ছিল একেবারে পাপপূর্ণভাবে তাদের অর্থনৈতিক দায়িত্ব থেকে মুক্তি পাবার চেষ্টা।

তারা পুরোপুরিভাবে ঈশ্বরের বাক্য লঙ্ঘন করেছে। তারা পাপের গভীরে ছিল। পৌল এ-ধরনের পাপেপূর্ণ হৃদয়ের অন্তস্থলের অবস্থা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। “যদি কেহ আপনার স্বজনের, বিশেষতঃ আপনার পরিজনের জন্য চিন্তা না করে, তবে সে বিশ্বাস অস্বীকার করিয়াছে এবং অবিশ্বাসী অপেক্ষা নিকৃষ্ট হইয়া পড়িয়াছে” ১ তীমথিয় ৫:৮ পদ। তারা একেবারেই ঈশ্বরের বিধি প্রত্যাখ্যান করেছিল। “সদাপ্রভু কার্য করিবার সময় হইল, কেননা লোকে তোমার ব্যবস্থা খন্ডন করিয়াছে” গীতসংহিতা ১১৯:১২৬ পদ। 

যারা ভ্রান্ত শিক্ষা প্রচারে সাহায্য করে বা এসবে উৎসাহ দেয়, ভিন্নতা বা অন্য কোনো শিক্ষা/মতবাদ গ্রহণ করাতে তারা তাদের নিজেদের পথে থাকে, তারা বাইবেলের শিক্ষাকে উপেক্ষা করে।

ঈশ্বরের শিক্ষাসমূহকে অকার্যকর পরিণত করা। শাস্ত্র পেঁচিয়ে বাঁকিয়ে আর মুচড়িয়ে তাদের কার্যকলাপ ঢাকতে ভ্রান্ত মতবাদ বা শিক্ষার প্রচলন করে। আমরা প্রত্যেকে জানি যে “. . তোমার বার বার অসুখ হয় বলিয়া কিঞ্চিৎ দ্রাক্ষারস ব্যবহার করিও” ১ তীমথিয় ৫:২৩ পদ পদে কী বলা হয়েছে তা জানি। এ-সম্পর্কে বহু শাস্ত্রপদ রয়েছে যা-কিনা উত্তেজক মদ পানীয়রূপে গ্রহণ করতে সতর্ক করে আর এসব লোকেরা স্বভাবতঃই তা অগ্রাহ্য করে।

আন্ত-মাণ্ডলিক প্রতিষ্ঠান আর জানামতো অন্যান্য যারা বিরোধী পক্ষগুলোর ব্যাপারে আপোস করে তারা তেজ দেখিয়ে মথি ৭:১ পদটি তুলে ধরে “তোমরা বিচার করিও না, যেন বিচারিত না হও।” তারা এই অধ্যায়ের অন্যান্য পদগুলো সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করে যেমন “ভাক্ত ভাববাদিগণ হইতে সাবধান; তাহারা মেষের বেশে তোমাদের নিকটে আইসে, কিন্তু অন্তরে গ্রাসকারী কেন্দুয়া” মথি ৭:১৫ পদ। আপনি যদি তাদের বিচার বিবেচনা না করেন তাহলে কীভাবে তাদের বুঝতে পারবেন যে তারা ভাক্ত ভাববাদী বা ভ্রান্ত প্রচারক? মেষের ছাপ ধারণ করায় আপনি কীভাবে নেকড়ের পরিচয় জানতে পারবেন, তারা মেষ না নেকড়ে আপনি যদি বিচার না করেন তাহলে কীভাবে জানবেন?

তারা ফল এবং বৃক্ষ সম্পর্কিত শাস্ত্র পদটি গ্রাহ্য করে না, অবহেলা করে। “তোমরা তাহাদের ফল দ্বারাই তাহাদিগকে চিনিতে পারিবে। লোকে কি কাঁটাগাছ হইতে দ্রাক্ষাফল, কিংবা শিয়ালকাঁটা হইতে ডুমুরফল সংগ্রহ করে? সেই প্রকারে প্রত্যেক ভাল গাছে ভাল ফল ধরে, কিন্তু মন্দ গাছে মন্দ ফল ধরে। ভাল গাছে মন্দ ফল ধরিতে পারে না, এবং মন্দ গাছে ভাল ফল ধরিতে পারে না। যে কোন গাছে ভাল ফল ধরে না, তাহা কাটিয়া আগুনে ফেলিয়া দেওয়া যায়। অতএব তোমরা উহাদের ফল দ্বারাই উহাদিগকে চিনিতে পারিবে” মথি ৭:১৬-২০ পদ। আপনাকে ফলের দ্বারাই গাছের বিচার করতে হচ্ছে। এভাবেই ভ্রান্ত প্রচারকদের বা ভ্রান্ত গুরুদের বিচার করতে পারেন।

যীশু দু’টি দ্বারের এবং দু’টি পথের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। প্রশস্ত পথ সর্বনাশে পরিচালিত করে এবং সঙ্কীর্ণ পথ অনন্ত জীবনে নিয়ে যেতে পরিচালনা করে। আপনি কীভাবে জানতে পারবেন যে কোন্টি সঙ্কীর্ণ পথ, যদি আপনি বিচার বা পরীক্ষা করতে না এগিয়ে আসেন? “সঙ্কীর্ণ দ্বার দিয়া প্রবেশ কর; কেননা সর্বনাশে যাইবার দ্বার প্রশস্ত ও পথ পরিসর, এবং অনেকেই তাহা দিয়া প্রবেশ করে; কেননা জীবনে যাইবার দ্বার সঙ্কীর্ণ ও পথ দুর্গম, এবং অল্প লোকেই তাহা পায়” মথি ৭:১৩-১৪ পদ। খ্র্রীষ্ট আদেশ করেছেন যেন আমরা ন্যায় বিচারে বিচার করি। “দৃশ্য মতে বিচার করিও না, কিন্তু ন্যায় বিচার কর” যোহন ৭:২৪ পদ। পৌল করিন্থীয় মণ্ডলীকে ঐ চরম বিষয়ে তিরস্কার করে বলেছেন, যখন তিনি তাদের বলেছেন যে তিনি ইতোমধ্যে মণ্ডলীতে থাকা ব্যভিচারের বিচার করেছেন (১ম করিন্থীয়)। তিনি সম্পূর্ণ মণ্ডলীর নিজেকে বিচার করতে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। (দেখুন ১ করিন্থীয় ৫:১-১৩ পদ)।

যখন যীশু বলেছেন, “তোমরা বিচার করিও না, যেন বিচারিত না হও” (মথি ৭:১ পদ) তখন তিনি ভণ্ডামিপূর্ণ বিচারের বিষয় বলেছেন। আপনি যদি ২ থেকে ৫ পদ পর্যন্ত পাঠ করেন, আপনি নিশ্চিতভাবে বিষয়টি বুঝতে পারবেন।

৩। ভ্রান্ত শিক্ষা হলো ভণ্ডমি। ৭ ও ৮ পদ।

যীশুর দিনে ভ্রান্ত গুরুরা সব সময়ই অন্যের বিচার করতো, আর বিষয়টি তারা ভণ্ডামিপূর্ণতায় করে থাকতো, ঠিক যেমন তিনি মথি ৭:১-৫ পদে এই বিষয়ে সতর্ক করেছেন, আমাদের কথায়, তিনি তাদের ভণ্ডামি আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন “কপটীরা, যিশাইয় তোমাদের বিষয়ে বিলক্ষণ ভাববাণী বলিয়াছেন, এই লোকেরা ওষ্ঠাধরে আমার সমাদর করে, কিন্তু ইহাদের অন্তঃকরণ আমা হইতে দূরে থাকে” মথি ১৫:৭-৮ পদ।

ভণ্ড বা ভণ্ড তপস্বী হলো একটি শব্দ যার অর্থ করা যেতে পারে “মঞ্চ বা নাট্যাভিনেতা বা ভান/ছলনাকারী” হিসেবে। এরা হলো তারা-ই যারা ভ্রান্ত গুরু। আজ অনেক ধর্মীয় দল রয়েছে যারা কিনা ভ্রাতৃত্ববোধ/ভ্রাতৃসঙ্ঘ বা ভ্রাতৃসমাজ-এর কথা বলে, আর আপনি যদি তাদের গ্রহণ না করেন তাহলে তারা অত্যন্ত প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠতে পারে এবং আপনাকে ঘৃণা করতে পারে। এরা প্রেমের কথা বলে এবং আন্তরিকতা দেখায়, কিন্তু তারা যে বিশ্বাসে আছে তার মধ্যে কোনো প্রেম বা আন্তরিকতা দেখতে পাওয়া যায় না।

৪। ভ্রান্ত শিক্ষা বা মতবাদ অসার আরাধনা পরিচালনা করে।

সমস্ত ভ্রান্ত শিক্ষা অসার আরাধনা পরিচালনা করে। এটি শূন্য, ফাঁকা, অর্থহীন, অকাজের আর এসব আচরণ যাদের আছে তারা ক্ষতিকর ও অনিষ্ট সাধন করে। “ইহারা অনর্থক আমার আরাধনা করে, মনুষ্যদের আদেশ ধর্মসূত্র বলিয়া শিক্ষা দেয়” মথি ১৫:৯ পদ। মানুষের সমস্ত আদেশ ভ্রান্ত শিক্ষায় গড়া, কারণ তারা তাদের এসব বিষয় বাইবেল থেকে পায়নি। যখন কোনো ধর্মীয় দল বা ভ্রান্ত ধর্মীয় দল বলে থাকে যে ‘আমাদের অবশ্যই একসঙ্গে উদারপন্থী, ভ্রান্ত শিক্ষার মণ্ডলী ও মরিয়ম পূজারীদের সঙ্গে এক হতে হয়’, তখন এরা ভ্রান্ত শিক্ষা দিচ্ছে। যখন তারা বলে যে আমাদের অবশ্যই হঠকারী ক্যারেজমাটিক বিপথগামী, যেমন আজকালকার ঘোষিত শেষকালীল প্রেরিত বা ক্যারেজমাটিক মণ্ডলী, তারা আমাদের অসার আরাধনায় যুক্ত করতে চাইছেন।

বাইবেল আমাদের এসব ভ্রান্ত ভাববাদী, তাদের ভ্রান্ত শিক্ষা ও অসার আরাধনা সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়। “কিন্তু আত্মা স্পষ্টই বলিতেছেন, উত্তরকালে কতক লোক ভ্রান্তিজনক আত্মাদিগতে ও ভূতগণের শিক্ষামালায় মন দিয়া বিশ্বাস হইতে সরিয়া পড়িবে। ইহা এমন মিথ্যাবাদীদের কপটতায় ঘটিবে, যাহাদের নিজ সংবেদ তপ্ত লৌহের দাগের মত দাগযুক্ত হইয়াছে” ১ তীমথিয় ৪:১-২ পদ। বহু লোক এখন সত্য থেকে পৃথক হচ্ছে। তারা মনে করে যে তারা সঠিক, কিন্তু আসলেই তারা শয়তানের আত্মায় চালিত এবং ভ্রষ্ট পথে থাকে, কুকর্ম করতে সেদিকে কান পাতে। এই হলো সত্যিকারার্থে তাই যে বিষয়ে শাস্ত্র শিক্ষা দিচ্ছে।

ঈশ্বরের বাক্য আমাদের আবারো বহুবিধ, বিচিত্র, অচেনা, অজানা ও বিজাতীয় শিক্ষা দ্বারা চলতে সতর্ক করে দিয়েছে। “তোমরা বহুবিধ এবং বিজাতীয় শিক্ষা দ্বারা বিপথে চালিত হইও না; কেননা হৃদয় যে অনুগ্রহ দ্বারা স্থিরীকৃত হয়, তাহা ভাল; খাদ্য বিশেষ অবলম্বন করা ভাল নয়, তদাচারীদের কোন সুফল দর্শে না” ইব্রীয় ১৩:৯ পদ।

৫। ভ্রান্ত শিক্ষা বা মতবাদ কলুষিত করে, অশুচি করে।

ভ্রান্ত গুরুরা প্রায়ই বাইবেলের শিক্ষার এবং উপদেশের উপর ভুল দিকটি গ্রহণ করে। ফরীশীদের চিন্তা অধৌত হাতে খাবার গ্রহণ করলে অশুচি হয়। তারা কখনোই বুঝতে পারেনি যে তাদের মুখেই ভ্রান্ত শিক্ষার আচরণ বা কার্যকলাপ প্রকাশ পাচ্ছে, যা-কিনা মানুষকে নোংরা বা কলুষিত করছিল। যীশু তাদের এভাবে অনিশ্চিত নিয়মের কথা বললেন যে “মুখের ভিতরে যাহা যায়, তাহা যে মনুষ্যকে অশুচি করে, এমন নয়, কিন্তু মুখ হইতে যাহা বাহির হয়, তাহাই মনুষ্যকে অশুচি করে” মথি ১৫:১১ পদ।

আমরা ভ্রান্ত গুরুদের প্রতি লক্ষ্য করছি, যারা মেষদের আবরণ থেকে এসেছে। “ভাক্ত ভাববাদিগণ হইতে সাবধান; তাহারা মেষের বেশে তোমাদের নিকটে আইসে, কিন্তু অন্তরে গ্রাসকারী কেন্দুয়া” মথি ৭:১৫ পদ। বিশ্বস্ত পালকেরা তাদের মণ্ডলীর লোকদের এসব ধর্মীয় উদারপন্থীদের, ক্যারেসমেটিক, আধুনিকবাদ এবং রোমান ক্যাথলিকদের বিষয়ে সতর্ক করবে। এভাবে চললে জনপ্রিয়তা পাওয়া যাবে না বা অনেকেই তা গ্রাহ্য করবে না। কিন্তু আমাদের অবশ্যই এমন করতে হবে, যদি আমাদের খ্রীষ্টের সত্যে চলতে ও থাকতে হয়। দুর্বল ও দায়িত্বজ্ঞানহীন একজন পালক যিনি এরূপ করবেন না, তিনি দেখতে থাকবেন যে মেষের আবরণের শিয়ালেরা তার দলের লোকদের চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।               

তাদের ভ্রান্ত শিক্ষাগুলোকে যীশুর দ্বারা তাড়ি বা খামির বলা হয়েছে “যীশু তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরা সতর্ক হও, ফরীশী ও সদ্দূকীদের তাড়ি হইতে সাবধান থাক” মথি ১৬:৬ পদ। এই ভ্রান্ত শিক্ষা হলো একটি শক্তিশালী উপকরণ। অল্প তাড়ি বা খামির জন্য সম্পূর্ণ রুটি বা কোনো প্রকার পিঠা বা কেক ফুলে উঠতে পারে বা বৃদ্ধি পেতে পারে, এভাবে পিঠা তৈরির করায় পাত্রটি পূর্ণ হয়। (জানা যায় যে বর্তমানে গরুকে তাড়ি খাওয়ানো হয় যেন গরুটি মোটা তাজা হয়) এমনকি এভাবেও, ভ্রান্ত শিক্ষা বৃদ্ধি পায়, ফুলে ফেপে উঠে, বিষ দ্বারা সত্যকে অপবিত্র, কলুষিত করে। বিষয়টি হলো ঠিক তাই যা আজকের ধর্মকর্মের জগতে হয়ে চলছে। 

২ পিতরের সম্পূর্ণ অধ্যায়গুলো ভ্রান্ত গুরুদের সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়। যদিও আমরা সবকিছু উল্লেখ করতে পারছি না, তবে এই পদগুলো বিবেচনা বা চিন্তা করি, “প্রজাবৃন্দের মধ্যে ভাক্ত ভাববাদিগণও উৎপন্ন হইয়াছিল; সেই প্রকারে তোমাদের মধ্যেও ভাক্ত গুরুরা উপস্থিত হইবে, তাহারা গোপনে বিনাশজনক দলভেদ উপস্থিত করিবে, যিনি তাহাদিগকে ক্রয় করিয়াছেন, সেই অধিপতিকেও অস্বীকার করিবে, এইরূপে শীঘ্র আপনাদের বিনাশ ঘটাইবে” ২ পিতর ২:১ পদ। অনেকে বলে থাকে, বিভিন্ন আন্ত-মা-লিক প্রতিষ্ঠান খ্রীষ্টকে অস্বীকার করে না বা অগ্রাহ্য করে না। যখন তারা আপনাকে ভ্রান্ত শিক্ষায় চালিত মণ্ডলীদের সঙ্গে সহভাগিতা রক্ষা করতে পরিচালিত করে, তখন তারা আপনাকে খ্রীষ্টকে অস্বীকার করতে পরিচালনা দেয়। এমন কয়েকটি মণ্ডলী আছে যারা বিশ্বাস করে যে শয়তানের বড় ভাই হলো খ্রীষ্ট। তারা বলে যে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে আর ঐ মণ্ডলীর লোকেরা ঈশ্বর হতে পারেন। এই বিষয়টি যদি খ্রীষ্টকে অস্বীকার না করে, আমি জানতে চাই এই বিষয়টি তাহলে কী?

রোমান ক্যাথলিকরা মরিয়মের আরাধনা করে, যে আরাধনা খ্রীষ্টের প্রতি হওয়া উচিৎ, যা-হলো খ্রীষ্টকে অস্বীকার করা। তারা মরিয়মের কাছে প্রার্থনা করে, আর তা হলো খ্রীষ্টকে অস্বীকার করে ঈশ্বরের মহত্ত্ব বা পবিত্রতার বিষয়ে ঠাট্টা করা। তারা ভয়ংকর মিসা পরিচালনা করে, আর তা হলো খ্রীষ্টের বলি উৎসর্গ প্রত্যাখ্যান করা। তারা মরিয়মের ও সাধু ব্যক্তিদের কাছে প্রার্থনা করে আর তা হলো খ্রীষ্টকে অস্বীকার করা।

আন্ত-মাণ্ডলিক প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বের অধীনে অনেকের দ্বারা বহু লোকের মনে গভীর প্রভাব ফেলছে যা দেশের বহু স্থান পরিপূর্ণ হচ্ছে। যা কখনো পরিপক্ক একজন খ্রীষ্টিয়ানকে প্রভাবিত করে না। আমরা জানি যে বহু লোকে ভ্রান্ত মতবাদে যুক্ত রয়েছে। “আর অনেকে তাহাদের স্বৈরাচারের অনুগামী হইবে; তাহাদের কারণে সত্যের পথ নিন্দিত হইবে” (২ পিতর ২:২ পদ)। অবশ্যই কিছু কিছু নতুন জন্মের খ্রীষ্টিয়ান আছেন যারা আন্ত-মাণ্ডলিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত, কিন্তু তারা ভণ্ড গুরুদের দ্বারা প্রতারিত।

ক্যারিজমাটিক আন্দোলনে যুক্ত লোকদের দ্বারা আন্ত-মাণ্ডলিক প্রতিষ্ঠান যেমন প্রমিজ কিপার শুরু হয়েছিল। এটি আমেরিকার ভাইনইয়ার্ড ফেলোশিপ থেকে বের হয়েছে। এই সেই একই দল যারা কি-না তথাকথিত লাফিং রিভাইবেল সৃষ্টি করে। আর হ্যাঁ, যে দেওয়ালে খ্রীষ্টিয়ানদের বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে সেটি তারা ভেঙে ফেলছে। তারা শেষ পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ বিশ্বাসী বা ডিনোমিনেশন হতে চলছে। তাদের সমস্ত কিছু দেখতে শুনতে অত্যন্ত ভালো, কিন্তু তারা ভ্রান্ত শিক্ষা দ্বারা ধর্মীয় জগতকে কলুষিত করছে। “কারণ তাহারা অসার গর্বের কথা কহিয়া মাংসিক সুখাভিলাষে, লম্পটতায়, সেই লোকদিগকে প্রলোভিত করে, যাহারা ভ্রমাচারীদের হইতে সম্প্রতি পলায়ন করিতেছে” ২ পিতর ২:১৮ পদ)।

৬। ভ্রান্ত শিক্ষা সমূলে উপড়ে ফেলতে হবে। ১৩ পদ।

শিষ্যেরা শঙ্কিত ছিল, কারণ ফরীশীরা যীশুর বলা দৃঢ় শিক্ষায় বিরক্ত বা অসন্তুষ্ট হয়েছিল। “তখন শিষ্যগণ নিকটে আসিয়া তাঁহাকে কহিলেন, আপনি কি জানেন, এই কথা শুনিয়া ফরীশীরা বিঘ্ন পাইয়াছে?” মথি ১৫:১২ পদ। সেভাবে বিষয়টি আজকেও হচ্ছে, যখন আমরা ভ্রান্ত গুরুদের দ্বারা বৃদ্ধি পাওয়া সেরকম ভ্রান্ত শিক্ষা উন্মোচন করি, তখন কিছু কিছু সদিচছাপ্রসূত খ্রীষ্টিয়ানেরা উদ্বিগ্ন হয় যে আমরা আন্ত-মাণ্ডলিক প্রতিষ্ঠান, ক্যাথলিক, আর ক্যারেজমেটিকদের বিঘ্ন করছি। আমাদের উত্তর অবশ্যই যীশু যা বলেছেন তার সঙ্গে যুক্ত করতে হয়। “তিনি উত্তর করিয়া কহিলেন, আমার স্বর্গীয় পিতা যে সকল চারা রোপন করেন নাই, সে সকল উপড়াইয়া ফেলা যাইবে” মথি ১৫:১৩ পদ।

আজকের দিনে গমক্ষেতে শ্যামাঘাস বৃদ্ধি পাচ্ছে। শ্যামাঘাস হলো ভ্রান্ত গুরু এবং তাদের সন্তান-সন্ততি। শয়তান তাদেরকে বপন করেছে। দিন আসছে যখন তাদের বোকার মতো কাজ, চিন্তা, ফন্দিবাজ বা চাল-চলন সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হবে। “ক্ষেত্র - জগৎ; ভালো বীজ - রাজ্যের সন্তানগণ; শ্যামাঘাস - পাপাত্মার সন্তানগণ; যে শত্রু তাহা বুনিয়াছিল - সে দিয়াবল; ছেদনের সময় যুগান্ত; ছেদকেরা - স্বর্গদূত। “যেমন শ্যামাঘাস সংগ্রহ করিয়া আগুনে পোড়াইয়া দেওয়া যায়, তেমনি যুগান্তে হইবে” মথি ৩৮-৪০ পদ।

৭। ভ্রান্ত শিক্ষা আকস্মিক দুর্ঘটনা ঘটায়

অন্ধ যখন অন্ধকে পথ দেখায় তখন তাদের সম্মুখে হটাৎ কোনো দুর্ঘটনা ঘটে। উল্লেখ করা ভ্রান্ত শিক্ষা/মতবাদের চরম পরিণতির থেকে উদ্ধারের জন্য বা এই কারণে আমরা যতদূর পারি লোকদের কল্যানের জন্য সতর্ক হতে সাহায্য করি। “উহাদের থাকিতে দেও, উহারা অন্ধদের অন্ধ পথদর্শক; যদি অন্ধ অন্ধকে পথ দেখায়, উভয়েই গর্তে পড়িবে” মথি ১৫:১৪ পদ। অনেকেই উল্লেখ করা ভ্রান্ত শিক্ষার আত্মিকতায় অন্ধ ও গর্তে পা বাড়িয়ে থাকে। কারোর দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করা অবশ্যই প্রয়োজন, যেন তাদের প্রতি আসা ভয়ানক রোষ থেকে তারা মুক্তি পেতে পারে।

প্রতারকদের জন্য বিনাশ অপেক্ষা করছে। গর্ত হলো সেই চিরস্থায়ী নরকের আগুন যেখানে অনেকেই পড়বে। কী দুঃখজনক যে অনেকেই সংঙ্কীর্ণ দরজা দিয়ে যেতে ভ্রষ্ট হচ্ছে আর সর্বনাশের জন্য প্রশস্ত পথে প্রবেশ করছে (মথি ৭:১৩-১৪ পদ)। এটি তাদের জন্য আকস্মিক দুর্ঘটনা যারা কিনা ভ্রান্ত গুরুদের সম্পর্কে সতর্ক হতে বিফল হচ্ছে আর মেষের আবরণে বুনো হিংস্র শিয়াল তাদেরকে গোগ্রাসে গিলছে, মথি ৭:১৫-২০ পদ। বহু লোকদের জন্য প্রচ- আঘাত আসবে যারা তাদের আত্মিক গৃহ সেই প্রস্তরখণ্ডের (যীশু খ্রীষ্ট) পরিবর্তে অস্থায়ী বালির উপর তৈরি করে (মথি ৭:২৪-২৭ পদ)। বাক্যের বিপরীতে থাকা ঐসব লোকদের নিয়তি হলো ভয়াবহ প্রতারণায় থাকা। এই অংশে যীশু স্পষ্টভাবেই বর্ণনা দিয়ে বলেছেন : “যাহারা আমাকে  প্রভু, প্রভু, বলে, সকলে সেই স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করিতে পাইবে না, কিন্তু সেই, যে আমার পিতার ইচ্ছা পালন করে যিনি স্বর্গে আছেন। সেই দিন অনেকে আমাকে বলিবে, প্রভু, প্রভু, আপনার নামেই আমরা কি ভাববাণী বলি নাই? আর আপনার নামেই কি মন্দ-আত্মা ছাড়াই নাই? আর আপনার নামেই কি অনেক আশ্চর্য-কার্য করি নাই? আর তখন আমি তাহাদিগকে স্পষ্টই বলিব, আমি কখনও তোমাদিগকে জানি নাই; আমার হইতে দূর হও, তোমাদের সেই কর্ম ঘৃণার্হ ” মথি ৭:২১-২৩ পদ।

প্রতারিত ধর্মকর্মের লোকেরা নরকের পথে আছে বলে আমরা কি খুশি? অবশ্যই না। আমরা চাইবো তারা সকলে যেন সত্য জানতে পারে আর রক্ষা পায়। ভ্রান্ত শিক্ষা/মতবাদ সব সময়ই মারাত্মক, কারণ এর অনুসারীগণ ভয়াবহ ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ঈশ্বর আমাদের সাহায্য করছেন সম্ভাব্য সকল উপায়ে তাদের সত্য জানিয়ে ফিরিয়ে আনতে।

বাইবেল বিশ্বাসীদের এ-ধরণের লোকদের ত্যাগ করতে বলা হয়েছে “বিকৃতমনা ও সত্যবিরহিত লোকদের মধ্যে তুমুল কলহের সৃষ্টি হয়; এই প্রকার লোকেরা ভক্তিকে লাভের উপায় মনে করে; ঈশ্বরের লোক তুমি, এই সমস্ত হইতে পলায়ন কর, ও ধার্মিকতা, ভক্তি, বিশ্বাস, প্রেম, ধৈর্য, কোমলতা, এই সমস্তের অনুধাবন কর” ১ তীমথিয় ৬:৫ ও ১১ পদ।

যারা নিত্য নতুন শিক্ষা বা মতবাদ নিয়ে আসছে আর যারা সেসব ব্যবহার করছে বা কাজে লাগাচ্ছে আমরা তাদের কাউকেই বিশ্বাস করি না। “প্রিয়তমেরা, তোমরা সকল আত্মাকে বিশ্বাস করিও না, বরং আত্মা সকলের পরীক্ষা করিয়া দেখ, তাহারা ঈশ্বর হইতে কি না; কারণ অনেক ভাক্ত ভাববাদী জগতে বাহির হইয়াছে” ১ যোহন ৪:১ পদ। আমরা তাদের ঈশ্বরের বাক্য দিয়ে পরীক্ষা করবো। “ব্যবস্থার কাছে ও সাক্ষের কাছে (অšে¦ষণ কর); ইহার অনুরূপ কথা যদি তাহারা না বলে, তবে তাহাদের পক্ষে অরুণোদয় নাই” যিশাইয় ৮:২০ পদ।

আমাদের তাদের চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে এবং তাদের এড়িয়ে থাকতে বলা হয়েছে। “ভ্রাতৃগণ, আমি তোমাদিগকে বিনতি করিতেছি, তোমরা যে শিক্ষা পাইয়াছ, তাহার বিপরীতে যাহারা দলাদলি ও বিঘ্ন জন্মায়, তাহাদিগকে চিনিয়া রাখ ও তাহাদের হইতে দূরে থাক” রোমীয় ১৬:১৭ পদ। আমাদের আদেশ করা হয়েছে তাদের তিরস্কার করার জন্য। “এই সাক্ষ্য সত্য; এজন্য তুমি তাহাদিগকে তীক্ষèèভাবে অনুযোগ কর; যেন তাহারা বিশ্বাসে নিরাময় হয়, যিহূদীয় গল্পে, ও সত্য হইতে বিমুখ মনুষ্যদের আজ্ঞায়, মনোযোগ না করে” তীত ১:১৩ পদ। তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সহভাগিতা থাকতে পারে না। “অন্ধকারের ফলহীন কর্ম সকলের সহভাগী হইও না, বরং সেগুলির দোষ দেখাইয়া দেও” ইফিষীয় ৫:১১ পদ।

আমাদের তাদের থেকে সরে যেতে হয়। “হে ভ্রাতৃগণ, আমরা আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামে তোমাদিগকে এই আদেশ দিতেছি, যে কোন ভ্রাতা অনিয়মিতরূপে চলে, এবং তোমরা আমাদের নিকট হইতে যে শিক্ষা পাইয়াছ, তদনুসারে চলে না, তাহার সঙ্গ ত্যাগ কর” ২ থিষলনীকীয় ৩:৬ পদ। আমরা সমস্ত ভ্রান্ত শিক্ষা/মতবাদ প্রত্যাখ্যান করি, কারণ তারা নব্যতান্ত্রিক/বিপথগামী, এরা বাইবেলের শিক্ষা ও মতের বিরুদ্ধ বিশ্বাস (পোষণ) করে। “যে ব্যক্তি দলভেদী, তাহাকে দুই একবার চেতনা দিবার পর অগ্রাহ্য কর” তীত ৩:১০ পদ। আমাদের তাদের থেকে পৃথক থাকতে হয়, আর তাদের সঙ্গে সহভাগিতা করা যায় না। “অতএব তোমরা তাহাদের মধ্য হইতে বাহির হইয়া আইস, ও পৃথক হও, ইহা প্রভু কহিতেছেন, এবং অশুচি বস্তু স্পর্শ করিও না; তাহাতে আমিই তোমাদিগকে গ্রহণ করিব” ২ করিন্থীয় ৬:১৭ পদ। “অন্ধকারের ফলহীন কর্ম সকলের সহভাগী হইও না, বরং সেগুলির দোষ দেখাইয়া দেও” ইফিষীয় ৫:১১ পদ। “সর্ববিষয়ের পরীক্ষা কর; যাহা ভাল তাহা ধরিয়া রাখ। সর্বপ্রকার মন্দ বিষয় হইতে দূরে থাক।” ১ থিষলনীকীয়  ৫:২১-২২ পদ।


Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?