কেন যীশুকে নবি, যাজক এবং রাজা বলা হয়েছে? (১৬ নং পাঠ)
পুরাতন নিয়মে - নবি (prophet), যাজক (priest) এবং রাজা (king), এনাদের দায়িত্বগুলো আলাদা আলাদা ধরণের ছিল, তাঁদের অভিষেকের কারণে তাদের শুচিকরণ কাজ করতে হতো।
১ রাজাবলি ১৯:১৬ পদ, “অবেলমহোলানিবাসী শাফটের পুত্র ইলীশায়কে অভিষেক কর”
যাত্রাপুস্তক ৩০:৩০ পদ, “হারোণকে ও তাহার পুত্রগণকে আমার যাজন কর্ম করণার্থে অভিষেক করিয়া পবিত্র করিলেন”
২ শমূয়েল ৫:৩ পদ, “তাহারা ইস্রায়েলের উপরে দায়ূদকে রাজপদে অভিষেক করিলেন”
মসিহ (Messiah) যে আসছেন তাদেরকে সেসব ভবিষ্যদ্বাণীর কাজগুলো পূর্ণ করতে হতো।
নবি/ভাববাদি (prophet) হিসাবে খ্রীষ্ট আমাদের কাছে ঈশ্বরের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
যাজক (priest) হিসাবে তিনি আমাদের পক্ষে ঈশ্বরের সামনে দাড়ান।
রাজা (king) হিসেবে তিনি ঈশ্বরের অনুগ্রহপূর্ণ ক্ষমতায় শাসন করেন।
যীশু খ্রীষ্ট নবি/ভাববাদী (Jesus Christ the Prophet)
ঈশ্বর ইস্রায়েলের কাছে প্রকাশ করেন যে তিনি মোশির মতো একজন নবিকে উত্তোলন/তুলে ধরবেন করবেন।
দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১৮ পদ, “আমি উহাদের জন্য উহাদের ভ্রাতৃগণের মধ্য হইতে তোমার সদৃশ এক ভাববাদী উৎপন্ন করিব, ও তাঁহার মুখে আমার বাক্য দিব; আর আমি তাঁহাকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিব, তাহা তিনি উহাদিগকে বলিবেন।”
পঞ্চাশত্তমীর পরে, পিতর যখন মন্দির এলাকায় প্রচার করছিলেন, তখন তিনি দ্বিতীয় বিবরণের এই অংশটা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন যে মোশির মতো সেই নবিই হলেন খ্রীষ্ট।
প্রেরিত ৩:১৭-২৪ পদ (২২-২৩) পাঠ করুন।
যীশুর সময় যারা ছিলেন তারাও স্বীকার করেন যে তিনি হলেন সেই ভাববাণীর পূর্ণতা
যোহন ৬:১৪ পদ, “উনি সত্যই সেই ভাববাদী, যিনি জগতে আসিতেছেন”
যোহন ৭:৪০ পদ, “সেই সকল কথা শুনিয়া লোকসমূহের মধ্যে কেহ কেহ বলিল, ইনি সত্যই সেই ভাববাদী”
যীশু নিজেকে . . নবি (prophet) বলেন,
লূক ১৩:৩৩ পদ, “যাহা হউক, অদ্য, কল্য ও পরশ^ আমাকে গমন করিতে হইবে; কারণ এমন হইতে পারে না যে, যিরূশালেমের বাহিরে কোনো ভাববাদী বিনষ্ট হয়”
তিনি নবির মতো ক্ষমতায় ঈশ্বরের রাজ্য সম্পর্কে কথা বলেন।
মথি ৫-৭ অধ্যায় পাঠ করুন।
মথি ২২:৩৬-৪০ পদ পাঠ করুন।
ভবিষ্যতে কী ঘটবে সে সম্পর্কে তিনি অনেকবার বলেছেন
মথি ২৪:১-৫১ পদ পাঠ করুন।
লূক ১৯:৪১-৪৪ পদ পাঠ করুন।
পিতর নিশ্চিত করেন যে পুরাতন নিয়মের নবিদের মধ্যে খ্রীষ্টের আত্মা ছিলো।
খ্রীষ্ট নিজের দুঃখভোগ আর তাঁর মহিমা সম্পর্কে শিষ্যদের কাছে ভাবিষ্যদ্বাণী করেন, পিতর এ সম্পর্কে উল্লেখ করেন
১ পিতর ১:১০-১২ পদ পাঠ করুন।
যীশু খ্রীষ্ট যাজক (Jesus Christ the Priest)
একটি আত্মিক অর্থাৎ ঐশ্বরিক প্রতিজ্ঞার মাধ্যমে মসিহের যাজকত্ব সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
গীতসংহিতা ১১০:৪ পদ পাঠ করুন।
খ্রীষ্ট হারোণের বংশে জন্মগ্রহণ করেননি, মল্কিষেদকের রীতি মতো ঐশ্বরিক অর্থাৎ ঈশ্বরের কাছ থেকে তাঁর যাজকত্ব অভিষিক্ত হয়েছিল।
ইব্রীয় ৫:৬,১০ পদ পাঠ করুন।
খ্রীষ্টের জগতে যাজকত্ব (Christ's earthly priesthood)
যীশু যাজকত্ব করার জন্য উপযুক্ত ছিলেন।
তিনি ছিলেন সঠিক মানুষ আর তিনি ঈশ্বর কর্তৃক আহূত এবং যেসব কাজ ঈশ্বরের তাই তিনি করতেন।
তিনি “পাপনিমিত্তক নৈবেদ্য উৎসর্গ” অর্থাৎ পাপ মোচনের উৎসর্গ সম্পন্ন করেন।
ইব্রীয় ৫:৪, ১০ পদ পাঠ করুন।
যাজকগণ উৎসর্গের মাধ্যমে মানুষ এবং ঈশ্বরের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করতেন।
এগুলোকে পাপের প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে ধরা হতো।
লেবীয় পুস্তক ১:৪; ৪:২৯,৩১,৩৫ পদ পাঠ করুন।
লেবীয় পুস্তক ৫:১০; ১৬:৬ পদ পাঠ করুন।
লেবীয় পুস্তক ১৭:১১ পদ পাঠ করুন।
বেদিতে অবিরাম/পরপর পোড়ান উৎসর্গ দ্বারা অবিরাম/অবিরত প্রায়শ্চিত্তের সুযোগকে বোঝানো হতো।
এসব উৎসর্গই যথেষ্ট ছিল না।
এগুলো মানুষকে শুচি করতে পারেনি।
এর মাধ্যমে মানুষ পাপ থেকে মুক্ত হতে পারেনি কিংবা তাদের বিবেক ধৌত হয়নি।
ইব্রীয় ১০:১-৪ পদ; ৯:৯ পদ পাঠ করুন।
এগুলো ছিল সেই উত্তম বিষয়ের ছায়া, যাঁর আগমনের কথা।
ইব্রীয় ১০:১ পদের সাথে তুলনা করুন . . ইব্রীয় ৯:৯,২৩,২৪ পদ পাঠ করুন।
পুরাতন নিয়ম বলে যে মসিহ্ এসব পশু বলির প্রতিকল্প বা বদলী হবেন অর্থাৎ সেই স্থান দখল করবে
গীতসংহিতা ৪০:৬-৮ পদ পাঠ করুন।
ইব্রীয় ১০:৫-৯ পদ পাঠ করুন।
এসব উৎসর্গৎগুলো যীশু খ্রীষ্টের অন্যের জন্য দুঃখকষ্ট আর তাঁর মৃত্যু চিহ্নিত করত।
ঈশ্বরের মেষশাবক হিসাবে তিনি আমাদের পাপস্বরূপ আর আমাদের জন্য অভিশপ্ত হলেন।
তাঁর রক্ত আমাদের সকল পাপ থেকে মুক্ত করে
২ করিন্থীয় ৫:২১ পদ পাঠ করুন।
গালাতীয় ৩:১৩ পদ পাঠ করুন।
১ যোহন ১:৭ পদ পাঠ করুন।
১ করিন্থীয় ১৫:৩ পদ পাঠ করুন।
জগতের পরিচর্যার সময় খ্রীষ্ট যাজক এবং বলি-উৎসর্গ (priest and offering) উভয়ই ছিলেন।
এখন, ক্রুশারোহন, পুনরুত্থান এবং স্বর্গারোহনের মধ্য দিয়ে, খ্রীষ্ট স্বর্গে যাজকের মতো মধ্যস্ততা শুরু করেছেন।
খ্রীষ্টের স্বর্গে যাজকত্ব (Christ's heavenly priesthood)
যীশু জগতে থাকতে তার অনুসারিদের জন্য যা করতেন এখন স্বর্গে পিতার পাশে থেকে বিশ্বাসীদের জন্য তাই করছেন।
বর্তমানে আমাদের প্রধান যাজক (High Priest) পিতার সিংহাসনের ডান পাশে বসে স্বর্গের পবিত্র স্থানে পরিচর্যা করছেন।
ইব্রীয় ৮:১-৩ পদ পাঠ করুন।
ইব্রীয় ৯:২৪ পদ পাঠ করুন।
খ্রীষ্টের এই মধ্যস্থতা তাঁর লোকদের উৎসাহ ও আশা যোগায়।
ইব্রীয় ৭:২৫ পদ পাঠ করুন।
পৌল চমক লাগিয়ে বলেন, “কে দোষী করিবে? এবং কে বিচার করবে?”
প্রশ্নের উত্তর হলো, কেউ করবে না কারণ খ্রীষ্ট আমাদের মধ্যস্থতাকারী; তিনি পিতার ডান পাশে থেকে আমাদের পক্ষে অনুরোধ করছেন।
রোমীয় ৮:৩৪ পদ
খ্রীষ্ট আমাদের মধ্যস্থতা হিসাবে পুরাতন নিয়মের যাজকের মতো ঈশ্বরের সিংহাসনের সামনে হাত তুলে তিনি দাঁড়িয়ে থাকেন না।
তিনি পিতার ডান পাশে বসে আছেন।
প্রতীকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পুরাতন নিয়মের যাজক কখনো বসতেন না কারণ তাঁদের কাজ কখনো শেষ ছিল না।
অন্যদিকে খ্রীষ্ট যে উৎসর্গ করেছেন তা একবারই, পুনরায় কখনো আর উৎসর্গ করতে হবে না।
এর ভিত্তি হলো সকলের জন্য একজনই, তাই তিনি-ই লোকেদের জন্যে অনুরোধ করছেন।
যীশু চোখের জল ফেলে আর্তনাধ করে একজন কঠিন মনের ঈশ্বরের সামনে আমাদের জন্য অনুরোধ করছেন না।
আমাদের স্বর্গীয় মহাযাজক হিসাবে তিনি পিতার কাছে তাঁর খুশি মতো চান, পিতা সব সময় তাঁর অনুরোধ শুনেন এবং পুরণ করেন।
যীশু খ্রীষ্ট রাজা (Jesus Christ the King)
যিশাইয় একটি শিশুর জন্মের ভাববাণী করেছিলেন, যার কাধের উপর জগতের শাসন ভার প্রতিষ্ঠিত।
যিশাইয় ৯:৬ পদ পাঠ করুন।
যীশু গাধার পিঠে চড়ে যিরূশালেমে যান।
এ বিষয় সাধু মথি সখরিয় পুস্তক থেকে একটি অনুচ্ছেদ উল্লেখ করেন।
আর সেখানে তিনি একজন রাজার কথা বলেন।
সেই রাজাই হলেন নাসরতীয় যীশু।
মথি ২১:৪,৫ পদ পাঠ করুন।
সখরিয় ৯:৯ পদ পাঠ করুন।
যীশুর জীবনের শুরুর দিকে তাঁকে রাজা ঘোষণা করা হয়েছিল।
প্রাচ্যের পণ্ডিতেরা তাকে “যিহুদীদের যে রাজা” বলে ছিলেন।
মথি ২:১,২ পদ পাঠ করুন।
যখন পিলাত তাঁকে প্রশ্ন করলেন, “তুমি কি যিহূদীদের রাজা?”
যীশু উত্তর দিলেন, “তুমিই বলিলে” অর্থাৎ তিনি তাই।
মথি ২৭:১১ পদ পাঠ করুন।
প্রকাশিত বাক্যে তাঁকে “রাজার রাজা এবং প্রভুর প্রভু” বলা হয়েছে।
প্রকাশিত বাক্য ১৯:১৩,১৬ পদ পাঠ করুন।
যীশু বলেছিলেন তাঁর জাগতিক পরিচর্যার ভিতর দিয়ে তাঁর রাজত্বের প্রথম ধাপ শুরু হয়েছিল।
তখন থেকে “ঈশ্বরের রাজ্য” বা “স্বর্গরাজ্য” উভয়ই এখন আছে এবং তা ভবিষ্যতের আশা।
পৌল লিখলেন যে ঈশ্বর আমাদের অন্ধকারের রাজ্য থেকে মুক্ত করে তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্টের রাজ্যে সমর্পণ করলেন।
কলসীয় ১:১৩ পদ পাঠ করুন।
এই রাজ্যটি আমাদের সামনে যে দৃশ্যমান রাজ্য রয়েছে তা কিন্তু নয়।
এটি তো জগতের রাজ্য নয় ।
যোহন ১৮:৩৬ পদ পাঠ করুন।
জগতের রাজ্যে যা-কিছু আছে, যেমন খাদ্য ও পানীয় ইত্যাদি, এখানে তা নয়।
এখানে আছে পবিত্র আত্মার মধ্য দিয়ে শান্তি, ধার্মিকতা এবং আনন্দ।
রোমীয় ১৪:১৭ পদপাঠ করুন।
মথি ৬:৩১-৩৩ পদ পাঠ করুন।
বর্তমান সময়ে জগতে, খ্রীষ্টের রাজ্যের প্রজারা সৈনিক হয়ে ছড়িয়ে আছে আর তারা সুসমাচরের যোদ্ধা।
সকল খ্রীষ্টিয়ান নিজেদেরকে খ্রীষ্টের প্রজা মনে করে।
যদিও অনেক অপ্রত্যাশিত প্রভাব তাঁদের আত্মিক উন্নতিকে বাধাগ্রস্ত করে।
তীত ২:১১-১৪ পদ পাঠ করুন।
অনন্তকালিন রাজত্ব।
যখন যীশু আবার ফিরে আসবেন তখন তাঁর জগতের রাজত্ব শুরু হবে।
প্রকাশিত বাক্য ১৯:১১-২২:১-২১ পদ।
যীশুর জাগতিক রাজত্ব প্রতিষ্ঠার আগে তখন একটি মহাযুদ্ধ সংঘটিত হবে, তাঁর রাজ্যের রাজধানী প্রতিষ্ঠিত হবে যিরূশালেমে।
প্রথম তূরিধ্বনি আর যীশুর যুদ্ধের ঘোষণা মণ্ডলী শুনবে।
তিনি তাঁর লোকদের তাঁর সঙ্গে স্বর্গে ডেকে নেবেন।
পরবর্তীতে মহাক্লেশ শুরু হবে, যারা অবশিষ্ট থাকবে তারা তা ভোগ করবে।
মথি ২৪-২৫ অধ্যায় পাঠ করুন।
এরপর খ্রীষ্ট মহাপ্রতাপে ও গৌরবে সাধুগণকে নিয়ে ফিরে আসবেন শয়তানকে বদ্ধ করতে আর হাজার বছর রাজত্ব করবেন।
প্রকাশিত বাক্য ২০:৪-৬ পদ।
যখন হাজার বছরের রাজত্ব শেষ হবে তখন গগ ও মগগের যুদ্ধ শুরু হবে।
রাজাদের রাজা নিমিষে এ যুদ্ধে জয় করবেন।
অনন্তকালের জন্য তিনি . . রাজত্ব করবেন।
গাব্রিয়েল মরিয়মের কাছে ঘোষণা করলেন যীশু যাকোবের বংশের উপর রাজত্ব করবেন।
তাঁর রাজত্ব কখনো . . শেষ হবে না।
লূক ১:৩০-৩৩ পদ পাঠ করুন।
যিশাইয় ৯:৭ পদ পাঠ করুন।
একমাত্র যীশু খ্রীষ্টকে গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে লোকেরা তাঁর অনন্তকালীন রাজত্বের নাগরিক হতে পারে।
যোহন ৩:৩ পদ, “যীশু উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, সত্য সত্য, আমি তোমাকে বলিতেছি, নূতন জন্ম না হইলে কেহ ঈশ্বরের রাজ্য দেখিতে পায় না।”
Comments