পবিত্র আত্মার কাজ কী? What is the mission of the Holy Spirit?

 পবিত্র আত্মার কাজ কী?

একদিন সন্ধ্যাবেলা যীশু তাঁর শিষ্যদের তাঁর আসন্ন বিদায়, তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে বললেন।
তখন এ বিষয়টি শিষ্যদের ভীষণভাবে ব্যথিত করল।
কিন্তু তিনি তাঁদের আশ্বাস দেন যে তাঁদের অসহায় রেখে যাবেন না।
বরং তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে পবিত্র আত্মাকে তারা পাবেন।

“আমি তোমাদিগকে অনাথ রাখিয়া যাইব না, আমি তোমাদের নিকটে আসিতেছি” যোহন ১৪:১৮ পদ)।

যখন খ্রীষ্ট জগতে ছিলেন তখন তিনি যা করেছেন পবিত্র আত্মা তাঁদের জন্য তাই করবেন।
খ্রীষ্ট যেভাবে ছিলেন তিনি সেভাবে থাকবেন। 

পবিত্র আত্মা সৃষ্টির শুরু থেকেই জগতে সক্রিয় আছেন।

“পৃথিবী ঘোর ও শূন্য ছিল, এবং অন্ধকার জলধির উপরে ছিল, আর ঈশ্বরের আত্মা জলের উপরে অবস্থিত করিতেছিলেন” (আদিপুস্তক ১:২ পদ)।

পুরাতন নিয়ম জুড়ে তাঁর কাজের কথা বারবার বলা হয়েছে।
যখন যীশু জগতে ছিলেন তখন পবিত্র আত্মা মহাশক্তিতে উপস্থিত ছিলেন।
কিন্তু পঞ্চাশত্তমীর (Pentecost) দিনে তাঁর আসল কাজ শুরু হয়।

জগতে পবিত্র আত্মার কাজ

তিনি (পবিত্র আত্মা) খ্রীষ্টকে প্রকাশ করেন।

পবিত্র আত্মার প্রভাবেই কেবল যীশুকে প্রভু বলে স্বীকার করা যায়।
পৌল নিশ্চিত করেন যে পবিত্র আত্মার সাহায্য ছাডা কেউ যীশুকে প্রভু বলতে পারেন না

“এই জন্য আমি তোমাদিগকে জানাইতেছি যে, ঈশ্বরের আত্মায় কথা কহিলে, কেহ বলে না, “যীশু শাপগ্রস্ত”, এবং পবিত্র আত্মার আবেশ ব্যতিরেকে কেহ বলিতে পারে না ‘যীশু প্রভু”  (১ করিন্থীয় ১২:৩ পদ)। 

যীশু ঘোষণা করেন যে পবিত্র আত্মার মূল কাজই হবে তাঁকে মহিমান্বিত করা।

“পরন্তু তিনি, সত্যের আত্মা, যখন আসিবেন, তখন পথ দেখাইয়া তোমাদিগকে সমস্ত সত্যে লইয়া যাইবেন, কারণ তিনি আপনা হইতে কিছু বলিবেন না, কিন্তু যাহা যাহা শুনেন, তাহাই বলিবেন, এবং আগামী ঘটনাও তোমাদিগকে জানাইবেন। তিনি আমাকে মহিমান্বিত করিবেন, কেননা যাহা আমার, তাহাই লইয়া তোমাদিগকে জানাইবেন” (যোহন ১৬:১৩, ১৪ পদ)।

অনেকে ভূলবশতঃ যীশুর চেয়ে পবিত্র আত্মাকে বেশি গুরুত্ব দেয়।
এ বিষয়টি এই অনুচ্ছেদ/পদগুলোতে যীশু যা বলেছেন তার সম্পূর্ণ বিপরীত।

তিনি অভিযুক্ত করেন। 

যীশু শিক্ষা দেন যে পবিত্র আত্মার কাজ হলো জগতকে পাপ, ধার্মিকতা ও বিচার সম্পর্কে অভিযুক্ত করা

“আর তিনি আসিয়া পাপের সম্বন্ধে, ধার্মিকতার ও বিচারের সম্বন্ধে, জগতকে দোষী করেবেন” (যোহন ১৬:৮ পদ)।

প্রথমতঃ পবিত্র আত্মা, পাপ সম্পর্কে আমাদের বিরূদ্ধে কঠিন অভিযোগ গঠন করেন, বিশেষতঃ খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করতে ব্যর্থতার পাপ সম্পর্কে।

“পাপের সম্বন্ধে, কেননা তাহারা আমাতে বিশ্বাস করে না” (যোহন ১৬:৯ পদ)।

দ্বিতীয়তঃ পবিত্র আত্মা খ্রীষ্টের ধার্মিকতা গ্রহণ করতে উৎসাহ দান করে।
যীশু নিষ্পাপ জীবনযাপন করতেন, কিন্তু লোকেরা বলত তাঁর ভিতর মন্দ আত্মা ছিল।
পবিত্র আত্মা এ সব বিপথগামী লোকদের প্রতিরোধ করেছেন এবং খ্রীষ্টের ধার্মিকতা সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং আমাদের উচিৎ তাঁর ধার্মিকতা গ্রহণ করা।

তৃতীয়তঃ আত্মা আসন্ন বিচার সম্পর্কে আমাদের সতর্ক করে দেয়। পাপে অন্ধকারাছন্ন মনের পাপীরা যাতে অনুশোচনা এবং মনপরিবর্তন করে তার এটি একটি শক্তিশালী উপসঙ্গ। 

পবিত্র আত্মা পাপীকে অভিযুক্ত করে এবং তার সামনে খ্রীষ্টকে প্রকাশ করে নতুন জন্ম হওয়ার সুযোগ প্রদান করে।

পাঠ করুন : যোহন ৩:৩-১৬ পদ।

বিশ্বাসী নতুন জন্ম লাভ করার ফলে তার মধ্যে পবিত্র আত্মা বাস করে।

বিশ্বাসীর কাছে পবিত্র আত্মার কাজ।

অধিকাংশ পাঠে আমরা দেখি যে পবিত্র আত্মার সম্পর্ক হলো ঈশ্বরের লোকদের সাথে।
তাঁর পবিত্র প্রভাব বাধ্যতার দিকে পরিচালিত করে।

“. . পিতা ঈশ্বরের পূর্বজ্ঞান অনুসারে আত্মার পবিত্রকরণে আজ্ঞাবহতার জন্য ও যীশু খ্রীষ্টের রক্ত প্রোক্ষণের জন্য মনোনীত হইয়াছেন, তাহাদের সমীপে” (১ পিতর ১:১-২ পদ)।

কিছু শর্ত পূরণ না হলে কেউই পবিত্র আত্মার পরিপূর্ণ শক্তি লাভ করতে পারে না।
বিশ্বাসীদের পবিত্র আত্মাকে প্রতিরোধ, দুঃখ প্রদান এবং নিবারণ করা সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে।

“হে শক্তগ্রীবেরা এবং হৃদয়ে ও কর্ণে অচ্ছিন্নত্বকেরা, তোমরা সর্বদা পবিত্র আত্মার প্রতিরোধ করিয়া থাক; তোমাদের পিতৃপুষেরা যেমন, তোমরাও তেমনি” (প্রেরিত ৭:৫১ পদ)

“আর ঈশ্বরের সেই পবিত্র আত্মাকে দুঃখিত করিও না, যাঁহার দ্বারা তোমরা মুক্তির দিনের অপেক্ষায় মুদ্রাঙ্কিত হইয়াছে”  (ইফিষীয় ৪:৩০ পদ)

“আত্মাকে নির্বাপিত করিও না” (১ থিষলনীকীয় ৫:১৯ পদ)। 

নিচে কতোগুলো লক্ষণীয় বিষয় দেওয়া হলো, যা পবিত্র আত্মা বিশ্বাসীর জন্য করেন।

পবিত্র আত্মা বিশ্বাসীকে বাপ্তিস্ম দেন। 

এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি পরের অধ্যায়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হবে।
এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটিকে শাস্ত্রে বলা হয়েছে, “পবিত্র আত্মার বাপ্তিস্ম”-এ (the baptism of the Holy Spirit) যা ঘটে নতুন জন্মের সময়। পবিত্র আত্মায় বাপ্তিস্ম নতুন জন্মের পরে হয় না যেমন অনেকে মনে করে।

এ বিষয়ে ১ করিন্থীয় ১২:১৩ পদে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, পৌল করিন্থের খ্রীষ্টিয়ানদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন “আমরা . . সকলেই এক দেহ হইবার জন্য একই আত্মাতে বাপ্তাইজিত হইয়াছি ” (we are all baptized by one Spirit into one body).

এখানে “সকল” কথাটি দ্বারা পৌল করিন্থীয় মণ্ডলীর সব বিশ্বাসীকে বুঝিয়েছেন।
এ কথার আরেকটি প্রমাণ হলো, পৌল রোমান খ্রীষ্টিয়ানদের বলেন, যদি কেউ পবিত্র আত্মা লাভ না করে তবে তিনি খ্রীষ্টের সাথে যুক্ত নয়।

“কিন্তু তোমরা মাংসের অধীনে নও (পাপ প্রবৃত্তির বশে চলছ না) , আত্মার অধীনে রহিয়াছ, যদি বাস্তবীক ঈশ্বরের আত্মা তোমাদের মধ্যে বাস করেন। কিন্তু খ্রীষ্টের আত্মা যাহার নাই, সে খ্রীষ্টের নয়” (রোমীয় ৮:৯ পদ)।

পরিশেষে, প্রতিটি প্রকৃত খ্রীষ্টিয়ান যিনি খ্রীষ্টের সাথে যুক্ত তিনি পবিত্র আত্মায় বাপ্তাইজিত (immersed/নিমজ্জিত)।
যেভাবে আগে প্রকাশ করা হয়েছে ঠিক সেভাবে বিশ্বাসীর দেহ পবিত্র আত্মার “মন্দির” বা বাসস্থান  ("temple" or dwelling place).

“তুমি কি জান না যে, তোমরা ঈশ্বরের মন্দির, এবং ঈশ্বরের আত্মা তোমাদের অন্তরে বাস করেন? যদি কেহ ঈশ্বরের মন্দির নষ্ট করে, তবে ঈশ্বর তাহাকে নষ্ট করিবেন, কেননা ঈশ্বরের মন্দির পবিত্র, আর সেই মন্দির তোমরাই”  (১ করিন্থীয় ৩:১৬,১৭ পদ)।

পবিত্র আত্মা বিশ্বাসীকে সাহায্য করেন।

পবিত্র আত্মা সম্পর্কে ঘোষণা করতে গিয়ে খ্রীষ্ট তাঁকে প্যারাক্লিতস (Parakletos) বলেছেন।

“আমি আমি পিতার নিকটে নিবেদন করিব, এবং তিনি আর এক সহায়  (গ্রিক - প্যারাক্লিতস) তোমাদিগকে দিবেন, যেন তিনি চিরকাল তোমাদের সঙ্গে থাকেন; তিনি সত্যের আত্মা”  (যোহন ১৪:১৬ পদ), 

এই সহায় যা একটি গ্রিক শব্দ, এটিকে অনুবাদ করলে অর্থ হয় “সহায়ক” (Helper); “মন্ত্রনাদানকারী” (Counselor), “সান্তনাদানকারী” (Comforter), “মধ্যস্থকারী” (Intercessor), “শান্তিসংস্থাপক” কিংবা “সহায়” (Mediator, or, "Advocate")। যীশু নিজেকেও “প্যারাক্লিতস” বলেছেন। তিনি পিতার সামনে আমাদের “সহায়” কিংবা “মধ্যস্থকারী” ("Advocate" or "Intercessor") 

“হে আমরা বৎসেরা, তোমদিগকে এই সকল লিখিতেছি, যেন তোমরা পাপ না কর। আর যদি কেহ পাপ করে তবে পিতার কাছে আমাদের এক সহায় আছেন, তিনি ধার্মিক যীশু খ্রীষ্ট” (যোহন ২:১ পদ)। 

একজন মধ্যস্থকারী (Intercessor), শান্তিসংস্থাপক (Mediator), এবং সহায়ক (Helper) হিসাবে খ্রীষ্ট আমাদেরকে ঈশ্বরের সামনে উপস্থিত এবং ঈশ্বরকে আমাদের সামনে প্রকাশ করেন। একইভাবে পবিত্র আত্মা আমাদেরকে খ্রীষ্টের দিকে পরিচালিত এবং খ্রীষ্টের অনুগ্রহ আমাদের কাছে প্রকাশ করেন। এর মাধ্যমেই বোঝা যায় পবিত্র আত্মাকে কেন “অনুগ্রহের আত্মা”(Spirit of Grace) বলা হয়েছে।

“ভাবিয়া দেখ, যে ব্যক্তি ঈশ্বরের পুত্রকে পদতলে দলিত করিয়াছে, এবং নিয়মের যে রক্ত দ্বারা সে পবিত্রীকৃত হইয়াছিল, তাহা সামান্য জ্ঞান করিয়াছে, এবং অনুগ্রহের আত্মার অপমান করিয়াছে, সে কত অধিক নিশ্চয় ঘোরতর দণ্ডের যোগ্য না হইবে” (ইব্রীয় ১০:২৯ পদ)।

পবিত্র আত্মা খ্রীষ্ট সম্পর্কে সত্য প্রকাশ করেন।

যীশু পবিত্র আত্মাকে “সত্যের আত্মা” (Spirit of truth) বলেছেন।

“তিনি সত্যের আত্মা” (যোহন ১৪:১৫ পদ)
“সত্যের সেই আত্মা” (যোহন ১৫:২৬ পদ)
“পরন্ত তিনি, সত্যের আত্মা” (যোহন ১৬:১৩) পদ।

তাঁর কাজ হলো আমাদেরকে সেটিই স্মরণ করে দেওয়া, যা যীশু বলেছেন।

“কিন্তু সেই সহায়, পবিত্র আত্মা, যাঁহাকে পিতা আমার নামে পাঠাইয়া দিবেন, তিনি সকল বিষয়ে তোমাদিগকে শিক্ষা দিবেন” (যোহন ১৪:২৬ পদ)

এবং বিশ্বাসীকে সত্যের পথে পরিচালিত করা।

“পরন্ত তিনি, সত্যের আত্মা, যখন আসিবেন, তখন পথ দেখাইয়া তোমাদিগকে সমস্ত সত্যে লইয়া যাইবেন . . ” যোহন ১৬:১৩ পদ)। 

পবিত্র আত্মার সবচেয়ে বড় কাজ হলো যীশুকে প্রকাশ করা।

“যাঁহাকে আমি পিতার নিকট হইতে তোমাদের কাছে পাঠাইয়া দিব, সত্যের সেই আত্মা, যিনি পিতার নিকট হইতে বাহির হইয়া আইসেন- যখন সেই সহায় আসিবেন- তিনিই আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দিবেন।  “(যোহন ১৫: ২৬ পদ)

“পরন্ত তিনি, সত্যের আত্মা, যখন আসিবেন, তখন পথ দেখাইয়া তোমাদিগকে সমস্ত সত্যে লইয়া যাইবেন ; কারণ তিনি আপনা হইতে কিছু বলিবেন না, কিন্তু যাহা যাহা শুনেন, তাহাই বলিবেন, এবং আগামী ঘটনাও তোমাদিগকে জানাইবেন” (যোহন ১৬:১৩, ১৪ পদ)। 

পবিত্র আত্মা খ্রীষ্টের উপস্থিতি নিশ্চিত করেন।

এখন যীশু জগতের যেকোনো স্থানে উপস্থিত থাকতে পারেন, পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তা সম্ভব 

“যেন তিনি (পবিত্র আত্মা) চিরকাল তোমাদের সঙ্গে থাকেন, তিনি সত্যের আত্মা; জগৎ তাঁহাকে গ্রহণ করিতে পারে না, কেননা সে তাঁহাকে দেখে না, তাঁহাকে জানেও না; তোমরা তাঁহাকে জান, কারণ তিনি তোমাদের নিকটে অবস্থিত করেন ও তোমাদের অন্তরে থাকিবেন। আমি তোমাদিগকে অনাথ রাখিয়া যাইব না, আমি তোমাদের নিকটে আসিতেছি” (যোহন ১৪:১৬,১৭,১৮ পদ)। 

পবিত্র আত্মা খ্রীষ্টের প্রতিনিধি।

পবিত্র আত্মা বিশ্বাসীকে সীলমোহর করেন।

তিন ধাপের পরিত্রাণের কথা ইফিষীয় ১:১৩ পদে বলা হয়েছে।

প্রথমতঃ লোককে সত্যের বাক্য বা সুসমাচার শুনতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ তাকে সুসমাচার বিশ্বাস করতে হবে।
তৃতীয়তঃ যখন পরিবর্তীত হয, রূপান্তরিত হয় (conversion) অর্থাৎ নতুন জন্ম লাভ করে তখন পবিত্র আত্মা বিশ্বাসীকে সীলমোহর করেন (seals the believer)।
প্রাচীনকালে সীলমোহর ছিল নিশ্চয়তার প্রতীক, এটি স্বীকৃতি।
সীল মালিকানাকে নিশ্চিত করত, অঙ্গীকার প্রদান করত। কোনো কিছুর চুক্তি খাঁটি আর সত্য বলে প্রমাণ করতে, আইন ও বিধিবিধান প্রতিষ্ঠিত করতে, ব্যবসার চালান তৈরি করতে, সামরিক আদেশের জন্য সীল ব্যবহার করা হতো। 
ঈশ্বর বিশ্বাসীর মালিক, তাঁকে পাপের দাসবাজার (পাপের দাসত্ব) থেকে কিনে নিয়েছেন।

পাঠ করুন :
ইফিষীয় ১:৭ পদ;
১ করিন্থীয় ৬:২০ পদ

পবিত্র আত্মার এই সীলমোহরই হলো বিশ্বাসীর অনন্তকালীন নিরাপত্তার স্বীকৃতি (ইফিষীয় ৪:৩০ পদ)।

পবিত্র আত্মা মণ্ডলীকে পরিচালনা করেন। 

পবিত্র আত্মা খ্রীষ্টকে উপস্থিত করেন সুতরাং তিনি হলেন জগতে খ্রীষ্টের আসল প্রতিনিধি (vicar of Christ), রোমের পোপ নয়। বিশ্বাস ও আনুষ্ঠানিকতার ভিত্তি হলো বাইবেল, পবিত্র আত্মা বাইবেল অনুসারে মণ্ডলীকে পরিচালনা করেন। 

প্রৈরিতিক মণ্ডলীর (Apostolic Churches) শৃঙ্খলার সাথে পবিত্র আত্মা নিবিরভাবে যুক্ত।
পরিচর্যাকারিগণকে (missionaries) মনোনীত করতে মণ্ডলী প্রার্থনা ও উপবাসের মাধ্যমে পবিত্র আত্মার নির্দেশনা গ্রহণ করে।

পাঠ করুন : প্রেরিত ১৩:১-৪ পদ

পৌল ইফিষীয় মণ্ডলীর নেতাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে পবিত্র আত্মাই তাঁদের নিজ নিজ পদে স্থাপন করেছেন।

পাঠ করুন:  প্রেরিত ২০:২৮ পদ। 

যে সব সমস্যা মণ্ডলীর ঐক্য বিনষ্ট করে পবিত্র আত্মাই তার সমাধান করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শাস্ত্র প্রথম মণ্ডলীর সিদ্ধান্ত গ্রহণে পবিত্র আত্মার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে বর্ণনা করে।

পাঠ করুন:  প্রেরিত ১৫:১-২৯ পদ।

পবিত্র আত্মা খ্রীষ্টিয়ানদের নানাবিধ বিশেষ দান প্রদান করেন।

পবিত্র আত্মা ঈশ্বরের লোকদের বিশেষ বিশেষ দান দিয়ে থাকেন।

পুরাতন নিয়মের যুগে পবিত্র আত্মা মনোনীত কিছু লোকের কাছে এসে তাঁদের ক্ষমতা দিতেন ইস্রায়েলকে পরিচালনা করার জন্য।

পাঠ করুন:
বিচারকর্তৃগণের বিবরণ ৩:১০; ৬:৩৪; ১১:২৯ পদ)।

তিনি ভবিষ্যদ্বাণী বলার ক্ষমতা দিতেন।

পাঠ করুন:
(গণনা পুস্তক ১১:১৭, ২৫,২৬ পদ;
২ শমূয়েল ২৩:২ পদ। 

প্রাথমিক ম-লীতে নির্ধারিত কিছু খ্রীষ্টিয়ানকে পবিত্র আত্মার মাধ্যমে খ্রীষ্ট দান দেন।
পবিত্র আত্মা যোগ্য ব্যক্তিকে বিশেষ দান দিতেন যেন সমগ্র মণ্ডলী উপকৃত হয়। 

বর্তমান সময়েও ঠিক তাই হয়।
পবিত্র আত্মা খ্রীষ্টের দেহ মণ্ডলীতে যুক্ত থাকা বিশ্বাসীদের বিশেষ দান দেন।
বাইবেলে আত্মিক দানগুলো সম্পর্কে তিনটি অনুচ্ছেদ আছে।

পাঠ করুন :
রোমীয় ১২:৩-৮ পদ,
১ করিন্থীয় ১২:১-১১ পদ;
ইফিষীয় ৪: ৭-১৬ পদ

এ দানগুলো সম্পর্কে কিছু পর্যালোচনা প্রয়োজন।
যখন এদের সবগুলোকে পবিত্র আত্মার দান বলা হয় তখন তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন পার্থক্যও দেখা যায়।
রোমীয় ১২ অধ্যায়ে কতগুলো মৌলিক দানের কথা বলা হয়েছে যা প্রত্যেক মণ্ডলীতে সংঘটিত হয়।
ইফিষীয় ৪ অধ্যায় মণ্ডলীর কতগুলো পদ বা নেতার কথা বলা হয়েছে যাঁরা মণ্ডলীর কাছে ঈশ্বরের দান।
১ করিন্থীয় ১২ অধ্যায়ে কিছু নির্দিষ্ট লোককে দানের কথা বলা হয়েছে যা মণ্ডলীর পরিচর্যাকে সফল করে।
এগুলো সেই সকল দানের প্রতিক যা ঈশ্বর মণ্ডলীকে দিয়েছেন। 

আরো কিছু বিশেষ ধরণের দান বেশ মনযোগ আকর্ষণ করছে।
এগুলো বর্তমান সময়ে বেশ বিতর্কও তৈরি করছে।
বিশেষ করে কতগুলো “শব্দমালা” (glossolalia) যাকে “পরভাষা” (speaking in tongues) বলা হয়।
বাইবেলে “পরভাষা (tongue) ” বলতে বুঝায় অন্য একটি ভাষাকে যা বক্তা বুঝেন না, তাদের কাছে অজানা ভাষা, কিন্তু ঈশ্বরের দেওয়া ক্ষমতায় বলেন।

নিশ্চিতভাবেই প্রেরিত ২ অধ্যায়ের ভাষাগুলো মানব ভাষা ছিল কিন্তু বক্তাগণ বুঝতেন না (অজানা ভাষা) তবুও তারা সেই ভাষায় কথা বলেছিলেন। ১ করিন্থীয় পুস্তকে যে ভাষার কথা বলা হয়েছে তাও এই একই ভাষা, এর সাথে দ্বিমত করার কোনো যুক্তি নেই। 

চিহ্ন এবং অদ্ভুত কাজ (signs and miracles), পরভাষার মতই, এগুলো দেওয়া হয়েছিল যিহুদীদের কাছে খ্রীষ্টিয়ানদের উপদেশগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য।
 
পাঠ করুন : ১ করিন্থীয় ১৪:৫, ২১, ২২ পদ)।

কাজেই পরভাষা হলো অবিশ্বাসীদের কাছে একটি চিহ্ন কাজ যেন যা বলা হয়েছে তারা তা বুঝে বিশ্বাস করে।

পাঠ করুন: ১ করিন্থীয় ১৪:১৯-২৫ পদ।

সুস্থতার দানও একই।
নতুন নিয়মে অবিশ্বাসীদের উপকারের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়েছিল (বিশেষতঃ যিহুদী লোকদের জন্য যাঁরা চিহ্ন খুঁজত) যেন তারা চেতনা পায়।
যে বাক্য তাদের কাছে প্রচার করা হয়েছে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে।
আমরা বিশ্বাসীর সুস্থতা সম্পর্কে আর তেমন কিছু পড়িনি।

পাঠ করুন: 
১ করিন্থীয় ১১:৩০ পদ
১ তীমথিয় ৫:২৩ পদ
২ তিমথিয় ৪:২০ পদ
গালাতীয় ৪:১৩, ১৪ পদ
২ করিন্থীয় ১২:৭ পদ।

বর্তমান সময়ে বিশ্বাসীদের জন্য পরভাষা সম্পর্কে ঈশ্বরের কী কোনো উদ্দেশ্য আছে?
যদি তা থাকে, তবে এর থেকে আমাদের মনকে সরিয়ে রাখা ভুল হবে।
যদি তা না থাকে, তাহলে পরভাষা অনুশীলন করা ভুল হবে।
করিন্থীয়দের মধ্যে পরভাষা অনুশীলন করা খুব পরিচিত ব্যাপার ছিল।
মণ্ডলীতে ঝগড়া ও বিভেদ দেখা দিল কিন্তু পবিত্র আত্মার ফল- ভালোবাসা- অদৃশ্য হয়ে গেল।
পৌল ১ করিন্থীয় ১৩ অধ্যায়ে বলেন যে ভালোবাসা টিকে থাকবে কিন্তু পরভাষা থাকবে না।

আজকের মতো করিন্থীয়রা নানাবিধ দানের উপর বেশি জোর দিত, যা একদিন বন্ধ হয়ে যাবে, যখন শাস্ত্র পরিপূর্ণভাবে সংগঠিত হবে। 

আমাদের মণ্ডলীতে এখন নতুন করে আর কোনো ঈশ্বরের বাক্য দরকার নেই।
কোনো প্রেরিত দরকার নেই। আত্মস্বীকৃত অদ্ভুত কাজ সম্পাদন কর্মী দরকার নেই।
এখন যা দরকার তা হলো ঈশ্বরের বাক্যের কাছে যাওয়া।
জোড়ালোভাবে ঈশ্বরের বাক্য ঘোষণা করা।
পবিত্র আত্মার ভালোবাসা প্রচার করা।


Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?