সৃষ্টি The Creation. জগতকে সৃষ্টি করা হয়েছে, না কি নিজ নিজে তৈরি হয়েছে? Was the Universe Created or did it evolve?

আমরা আদিপুস্তকে সৃষ্টি বর্ণনাতে বিশ্বাস করি এবং এসব যেভাবে বর্ণিত সেভাবেই বিশ্বাসযোগ্য, কিন্তু রূপক বা আলংকারিকভাবে নয়। ঈশ্বর সম্পূর্ণ তাঁর নিজের প্রতিমূর্তি এবং তাঁর ইচ্ছা অনূসারে মানুষকে সৃষ্টি করেন। সুতরাং মানুষ বিবর্তনের ধারায় সৃষ্ট নয় (not a matter of evolution or evolutionary change of species)। অথবা দীর্ঘ সময়ের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নিন্মতর থেকে উচ্চতর আকৃতি লাভ করেনি। সকল প্রাণী ও উদ্ভিদ সরাসরি ঈশ্বরের নিয়মে নিজ প্রজাতিতে (after their kind) সৃষ্টি হয়েছে।

জগতকে সৃষ্টি করা হয়েছে, না কি নিজ নিজে তৈরি হয়েছে? 

বাইবেলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌলিক শিক্ষা হলো সৃষ্টি, ঈশ্বর ও শাস্ত্রের বিপক্ষগণ তা জানেন। বাইবেলের এই মৌলিক সত্য সম্পর্কে তাদের তীব্র আক্রমণ চলমান আছে। যদি সৃষ্টি সম্পর্কে বাইবেলের বর্ণনার উপর থেকে বিশ্বাস ধ্বংস করা যায়, তাহলে অবশিষ্টগুলো অর্থাৎ অন্যান্য সমস্ত ধ্বংস করা সহজ হবে। যদি মানুষকে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি এবং তাঁর ইচ্ছা অনুসারে সৃষ্টি করা না হয় তাহলে মানুষের অবাধ্যতা ও পতন থেকে উদ্ধার করার জন্য কোনো মুক্তিদাতারও প্রয়োজন নেই। তাহলে বাইবেলের গুরুত্ব খুব সীমিত আর অসমাপ্ত হলো, এর সৃষ্টি বর্ণনা সামান্য একটা অনগ্রসর আদিম সমাজ সম্পর্কিত অবৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনী, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মাত্র। 

যখন আমরা এই মহাবিশ্বের উৎপত্তির কাছে আসি, বিশেষতঃ এই গ্রহ, যাকে আমরা পৃথিবী বলে জানি, তখন এর ধারণাগুলো নিয়ে বিজ্ঞান কিছু সংশয় প্রকাশ করতে পারে, কিন্তু সন্তোষজনক কোনো সঠিক উত্তর তারা দিতে পারে না। অপরদিকে, বাইবেলে সবকিছুই সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে, আমরা বিশ্বাসের মাধ্যমে বুঝতে পারি যে সবকিছুই ঈশ্বর বাক্য দ্বারা সৃষ্টি করেছেন (ইব্রীয় ১১:৩ পদ)। বাইবেলের প্রথম বাক্যটিই উচ্চারণ করা হয়েছে সংশয়হীনভাবে, সুনিশ্চিতভাবে। সেই অনুসারে ঈশ্বর হলেন সৃষ্টির আধ্যাত্মিক স্থপতি (divine architect) (আদিপুস্তক ১:১ পদ)। এখানে “আদি” (Genesis) শব্দের অর্থ হলো “আদিতে/শুরু” (beginning)। আদিপুস্তক হলো শুরু/আরম্ব সম্পর্কিত পুস্তক (a book of beginnings) (যেমন, আমাদের জগৎ, মানুষ, পাপ, উদ্ধার ইত্যাদি)। জগৎ সম্পর্কে বাইবেল ভিত্তিক যে ধারণা এই পুস্তক তার ভিত্তি।

আদিপুস্তক হলো সত্য ইতিহাস, কল্পকাহিনী নয়। 

আদিপুস্তকের প্রথম সাতটি অধ্যায় সত্য ইতিহাস হিসাবে অপরাপর অন্যান্য যে কোনও অধ্যায়ের চেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছে। এর একটা কারণ হলো ঐ সময়ের আদিপুস্তকের ঘটনাবলির সমর্থনে নিরপেক্ষ কোনো প্রামাণ্য দলিল নাই। ফলে বিজ্ঞানের সাথে মতভেদ তৈরি হয়, যা-কিনা তাদের অনুমান ভিত্তিক। অনেক শতাব্দী ধরে বহু বিজ্ঞানী স্বীকার করেছেন যে বাইবেলে উল্লেখিত সৃষ্টির বর্ণনা সত্য। অনেক বিজ্ঞানী আদিপুস্তক ১ অধ্যায়ের বর্ণনাগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য হিসাবে গ্রহণ করতে আগ্রহী। কিন্তু তারা মনে করেন যে এটি ধর্মীয়ভাবে সত্য (religious truths) প্রকাশ করেছে মাত্র। তারা প্রতিটি ঐতিহাসিক ঘটনাকে নিখুঁতভাবে অনুসন্ধন করতে চায় বৈজ্ঞানিক দৃশ্যকোন থেকে, যেখানে তারা মনে করেন যে কেবল পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণের মধ্য দিয়ে কোনো ঘটনা প্রমাণিত হিসাবে ধরা হয়। অনেক ঐতিহাসিক ঘটনাই কঠিন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আবার অনেক বিজ্ঞানী কোনো প্রমাণ ছাড়াই বলে থাকেন এই বর্ণনাগুলো মানুষের মনগড়া গল্প যা তাঁদের জীবনের সাথে যোগ করে দেওয়া হয়েছে। এই বিজ্ঞানীরাই বিজ্ঞান ভিত্তিক নয়। তারা নিজেদের যৌক্তিক নীতিমালা নিজেরাই অনুসরণ করে না। ঈশ্বর আদিপুস্তকে সৃষ্টি সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছেন তা যে অসত্য সে সম্পর্কে তাদের হাতে কোনো পরীক্ষিত প্রমাণ নেই। ঈশ্বর কীভাবে জগৎ সৃষ্টি করেছেন, সে বিষয় তাদের পরীক্ষণ প্রণালীর এখনও অপরিপক্ক। তারা এক বিরাট ও জটিল ধারণার মধ্যেই রয়ে গেছেন।

আদিপুস্তকের বর্ণনাগুলো সত্য ইতিহাস, বাস্তব লোকজন সম্পর্কে প্রতিবেদন এবং বিস্তৃত স্থান ও কালের ঘটনা।

মোশি আদিপুস্তক ১-১১ অধ্যায়ে ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো বর্ণনা করতে যে ধরনের কৌশল অনুসরণ করেন, ঠিক একই প্রকার কৌশল বাকি অধ্যায়গুলোতেও অনুসরণ করেন। 

লেখক এগার অধ্যায়ের পরে তার কৌশল বদল করেননি কিংবা তিনি এমন কোনো ইঙ্গিত দেননি যে তিনি কাল্পনিক অলীক ইতিহাসের দিকে চলছেন। বরং পুস্তকটি সুসংগঠিত, এর ইতিহাসভুক্ত ঘটনাগুলো বাইবেলের অবশিষ্ট অংশের ভিত্তি। এখানে প্রকৃত স্থান ও লোকের কথা উল্লেখ আছে এবং তারা কতকাল বেঁচে ছিলেন তাও আছে। অলীক বা কল্পকাহিনীতে স্থানকাল নির্দিষ্ট থাকে না কারণ তারা ইতিহাস থেকে তাঁদের চরিত্র সরাতে চায়।

বাইবেলের অপরাপর যে কোনও লেখকগণ এবং এমনকি যীশু নিজেও আদিপুস্তকের এই শুরুর দিকের অধ্যায়গুলোকে বাস্তব ইতিহাস বলে বিবেচনা করতেন। 

যেভাবে আদিপুস্তকে বর্ণনা করা হয়েছে, গীতসঙ্গীতার লেখকও সেভাবে জগৎ সৃষ্টি করার জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। একইভাবে তিনি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়েছেন ইস্রায়েলকে মিশর থেকে উদ্ধার করার জন্য (গীতসংহতা ১৩৬ অধ্যায়; যাত্রাপুস্তক ৬:১ পদ)।

ফরীসীরা স্ত্রী পরিত্যাগ সম্পর্কে যীশুকে প্রশ্ন করলেন। যীশু আদিপুস্তকের ঐ পদগুলো উল্লেখ করলেন, যেখানে আদম ও হবাকে সৃষ্টি সম্পর্কে লেখা আছে। আর এভাবে তিনি দেখালেন যে বিবাহের মাধ্যমে নারী ও পুরুষ কীভাবে একদেহ হয়ে যায় (মথি ১৯:৪-৬ পদ)। যীশু তাঁর শ্রোতাগণকে খুব পরিচিত কথাগুলোই বলছিলেন, তাঁর কথার আক্ষরিক অর্থাৎ হুবহু অর্থ না করায় প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। যদি যীশুকে এ ক্ষেত্রেই বিশ্বাস করা না যায় অর্থাৎ যদি তিনি বিশ্বাস্য না হন, তবে কোথায় তাঁকে বিশ্বাস করা যাবে, কোথায় তিনি বিশ্বাস্য হবেন?

সৃষ্টি সম্পর্কে বাইবেলের বর্ণনাগুলো মৌলিকভাবেই সৃষ্টি সম্পর্কিত প্রাচীন কল্পকাহিনীগুলো থেকে পৃথক।  

আসলে, আদিপুস্তকের মূল উদ্দেশ্যই হলো নিকটবর্তী পূর্ব সংস্কৃতির সৃষ্টি সম্পর্কিত প্রাচীন কল্পকাহিনীগুলোর ভ্রান্তিসমূহ সত্যের দ্বারা সংশোধন করা।

সৃষ্টি সম্পর্কে বাইবেল কী শিক্ষা দেয়।

ঈশ্বর সৃষ্টি থেকে পৃথক ও স্বতন্ত্র কিন্তু এর মধ্য দিয়ে প্রকাশিত। 
যেমন আমরা একজন স্থপতিকে তার কাজ দেখে জানতে পারি, তেমনি আমরা ¯্রষ্টাকে জানতে পারি তাঁর সৃষ্টি দেখে (রোমীয় ১:২০ পদ)। যদি কোনো নির্মাণের পরিকল্পনা, ছক এবং নকশা আগুনে পুড়েও যায় তবুও তার স্থপতি থাকবে। ঠিক একইভাবে ঈশ্বর তাঁর সৃষ্টি থেকে আলাদা, মুক্ত, পৃথক থাকেন। ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন (আদিপুস্তক ১:১ পদ)। 

আদিপুস্তক পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করেনি কীভাবে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন কিন্তু খুব জোড়ালভাবে দাবি করা হয়েছে যে তিনি কাজটি করেছেন। বলা হয়েছে “আদিতে/শুরুতে” (In the beginning), সুতরাং খ্রীস্টানদের কাছে এটা কোনো বিবেচ্য বিষয় নয় যে পৃথিবীর বয়স কতো। 

শুরুর তারিখ নিরূপণ করা আমাদের দরকার নেই। কোনো কৌতুহলী প্রশ্নের উত্তর আমাদের লক্ষ্য নয়। এই যেমন, যেহেতু স্থান ও কাল (since space and time) জগৎ সৃষ্টির সাথে সম্পৃক্ত, সুতরাং শুরুর আগে ঈশ্বর কোথায় কীভাবে ছিলেন? আমরা কাল ও মহাশূন্য পূর্বকার সম্পর্কে কল্পনা করতে পারি না। জগৎ ঈশ্বরেরই, এটা নিয়ে বেশি কথা বলার এমন কী আছে? (গীতসংহিতা ২৪:১ পদ)। তিনি তাঁর বাক্যের শক্তিতে এটা করেছেন (গীতসংহিতা ৩৩:৬-৯ পদ)। তিনি ত্রিত্ব-ঈশ্বর (a triune God) হিসেবে এই কাজ করেছেনঃ যিনি পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মা (আদিপুস্তক ১:২ পদ; যোহন ১:১-৪ পদ)।

জগৎ চিরস্থায় নয়।
সৃষ্টি সম্পর্কে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যা আদিপুস্তক ১:১ পদে উল্লেখ করা হয়েছে, সেই জগৎ ও জীবন সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারের সাথে তেমন কোনো অমিল বা বেমানান নাই। এর একটা শুরু/আরম্ভ (beginning) অবশ্যই ছিল। শতাব্দির অধিককাল ধরে এককালে বিজ্ঞানীরা ভাবত জগৎ অনন্তকাল ধরে ছিল। কিন্তু এখন দেখা গেল যে ঘটনা তা নয়। অনেক বিজ্ঞানী এখন আবার “মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব” ('Big Bang' theory)-কে মেনে নিয়েছে। যদিও অনেক বিজ্ঞানী জোড়ালোভাবে বলে যে এই তত্ব বাইবেলের বর্ণনাকে বাতিল করে দেয়, এমনকি যদি খ্রীষ্টিয়ানরা স্বীকার নাও করে যে সৃষ্টি এভাবে হয়েছে, তবুও তত্বটি যা ইঙ্গিত করে তা হলো যে পৃথিবীর একটা শুরু (beginning) ছিল। 

বাইবেল যা বলেছে বিজ্ঞান তা কোনো দিন বলতে পারত না। আর তা হলো সৃষ্টির শুরুতেই, ঈশ্বর কহিলেন (spoke) আর পৃথিবী দৃশ্যমান হলো (গীতসংহিতা ৩৩:৯ পদ)। রবার্ট জ্যাস্ট্রো তার লেখা “ঈশ্বর এবং জ্যোতির্বিদগণ” (Robert Jastrow, in his book, God and the Astronomers) বইয়ে লিখেছেন :

“বিষদ বর্ণনা আলাদা, কিন্তু দরকারি উপাদানগুলো জ্যোতির্বিজ্ঞানে এবং বাইবেলের আদিপুস্তকে একই। আমরা বিজ্ঞানীরা অস্পষ্ট শুরুর প্রমাণ খুঁজে পেতে চেষ্টা করতাম না কারণ বর্তমান অবধি সমৃদ্ধভাবেই তা আমাদের ছিল। যেমন অতীতের ঘটনার কারণ ও তার ফলাফলের ধারাবাহিকতা নির্ণয়ের অসাধারণ সাফল্য আছে। কারণ বিজ্ঞানীরা বেঁচে থাকে যুক্তির ক্ষমতাতে বিশ্বাস করার মধ্য দিয়ে, গল্পের শেষ হয় দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে। সে এক পর্বত ব্যর্থতা পরিমাপ করে; সে সর্বোচ্চ চূড়া জয় করতে উদ্যত; যখন সে নিজেকে শেষ পাথরটির উপর টেনে তুলে, তখন সে একদল ঐশতাত্বিকের কাছে প্রশংসিত হন যাঁরা বহুশতাব্দী ধরে আদর্শ হয়ে থাকে।”

বাইবেল শিক্ষা দেয় যে ঈশ্বর কোনো প্রাক অস্তিত্ব (ex nihilo) অর্থাৎ পূর্বেই বিদ্যমান থাকা (preexisting materials) বস্তু থেকে জগৎ সৃষ্টি করেননি। কোনো “কিছুই না” (out of nothing), কিছুই ছিল না এমন (শূন্য) অবস্থা থেকে কোনো কিছুর সৃষ্টি করেন (ইব্রীয় ১১:৩ পদ)। শুরুতেই ঈশ্বর তাঁর বাক্যের মাধ্যমে জগতকে বাস্তব রূপ দেন। আমাদের দেখা ও জানা কতগুলো জিনিস আছে যার নির্দিষ্ট আকার/রূপ দেওয়া হয়। কাঠ মিস্ত্রি কাঠ দিয়ে চেয়ার তৈরি করেন; ভাস্কর পাথর থেকে ভাস্কর্য তৈরি করেন। কোনো কিছু না (শূন্য) থেকে সৃষ্টি করার বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে আমাদের অভিজ্ঞতার বাইরে। ঈশ্বর সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং সবকিছুই করেছেন কোনো কিছুই না (শূন্য) থেকে। সুতরাং বলতে হয় যে ঈশ্বর সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন আর তাঁকে বাদ দিয়ে বা তাঁকে ছাড়া কোনো কিছুরই চিরস্থায়িত্ব নেই। 

ঈশ্বর শয়তানকে সৃষ্টি করেননি। মানুষ প্রথম থেকে সেই শুরু থেকেই শয়তানের সমস্যাটির মুখোমুখি। যদি ঈশ্বর পবিত্র হয়ে থাকেন আর তিনি শয়তানকে সৃষ্টি না করেন, তাহলে কেন তিনি তাকে থাকতে অনুমতি দিলেন? যদিও যথেষ্ট সন্তোষজনক উত্তর এর নেই, তবুও এভাবে বলা যায়, ঈশ্বর তাঁর গভীর প্রজ্ঞার গুণে ঐ অবস্থার সম্ভাবনা গ্রাহ্য করেছিলেন যার কারণে মানব জাতির মধ্যে পাপ থাকার সুযোগ পায়। কিন্তু আমাদের পাপের জন্য তাঁর পুত্রের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে চুড়ান্ত বিজয় অর্জন নিশ্চিত হয়েছে। এটি ছিল তাঁর সময়োচিত উপযুক্ত পদক্ষেপ।

উপসংহার 

এখানে আলোচনার পুরো বিষয়টি ছিল ঈশ্বরের বাক্যের কর্তৃত্বের বিপরীতে মানুষের অভিমত। মানুষের অভিমত বলতে আমরা অধিকাংশের বা জগৎ ও মানুষ সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাকে বুঝিয়েছি; যেগুলো অধিকাংশ বৈজ্ঞানিক দল/সম্প্রদায় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বর্তমানে বিশ্বাস করে এবং শিক্ষা দেয়।

লী স্ট্রোবেল (Lee Strobel) তার “বিশ্বাস জনক ব্যাপার” (The case for Faith) গ্রন্থে, উইলিয়াম প্রভিন (William Provine) যিনি একজন বির্বতনবাদি (evolutionist), ক্যার্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, তাঁকে উদ্ধৃতি করে লিখেন, যদি ডারউইন সত্য হয়, তবে “পাঁচটি অপরিহার্য বিষয় আছে, ঈশ্বর আছেন এমন কোনো প্রমাণ নেই; মৃত্যুর পরে কোনো জীবন নাই; ভালো ও মন্দের কোনো নিখাদ ভিত্তি নাই; জীবনের ভীন্নরূপ কোনো অর্থ নাই; এবং মানুষের কোনো স্বাধীন ইচ্ছা নাই।” ঈশ্বর নেই, মৃত্যুর পরে জীবন নাই, ভালো এবং মন্দ নাই, জীবন অর্থহীন, স্বাধীন ইচ্ছা নাই, এগুলো ডারউইন-ই মানুষকে দিয়েছেন। কীভাবে বিজ্ঞান এগুলো প্রমাণ করল যে, ঈশ্বর নাই, মৃত্যুর পরে জীবন নাই, ভালো এবং মন্দ নাই, জীবন অর্থহীন, স্বাধীন ইচ্ছা নাই? কোনো বিজ্ঞানী ঈশ্বরকে তার বোতলে ঢুকিয়ে পরিমাপ করতে বা তার দৈর্ঘ, প্রস্থ ও উচ্চতা মাপতে পারে না। অথবা তাঁর মহাকাশ গবেষণার মাধ্যমে তাঁর সিংহাসনের দিকে তাকাতে পারে না। জগতের বিজ্ঞানীরা ঈশ্বরকে বুঝবার মতো বিজ্ঞতা তারা লাভ করেনি। বুদ্ধিমানেরা বাইবেলে ঈশ্বর যা প্রকাশ করেছেন তা বিশ্বাস করেন। 

আমাদের যে আশা আছে সে সম্পর্কে উত্তর দিতে (১ পিতর ৩:১৫ পদ) প্রেরিত পিতর আমাদের সব সময় প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। অন্যভাবে বলা যায় যে, আমরা অবশ্যই প্রস্তুত থাকব প্রত্যুত্তর দিতে এবং বিশ্বাস দৃঢ় করতে। সৃষ্টির বর্ণনা আমাদের বিশ্বাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সৃষ্টি সম্পর্কে গভীর ধারণা না থাকার কারণে শত্রুরা সুযোগ পায়। সৃষ্টি সম্পর্কেই সবচেয়ে বেশি আঘাত আসে। শাস্ত্র অনুসারে পৃথিবী কোনো দূর্ঘটনাক্রমে সৃষ্টি হয়নি। এটা সুচিন্তিত নকশার ফল। বিভিন্ন যে প্রজাতি আছে জগতে তা মিশ্র সংযোগে হয়নি। এগুলো স্বর্গীয় পরিকল্পনা (আদিপুস্তক ১:২৪ পদ)। মানুষ লক্ষ বছরের বির্বতনের ফল নয়, বরং ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি। তাঁর চুড়ান্ত লক্ষ্য হলো ঈশ্বরের সাথে সহভাগিতা (আদিপুস্তক ১:২৭ পদ)।




Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?