নতুন জন্ম

পুনরায় জন্ম (নতুন জন্ম) The New Birth

সুসমাচার প্রচারক জন ওয়েলেসলি-কে একজন ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে কেন তিনি “তোমাদের অবশ্যই পুনরায় জন্ম হওয়া আবশ্যক” এই একই বিষয় নিয়ে বারবার প্রচার করছেন। 

প্রচারক তাকে উত্তর দিয়েছিলেন, ‘কারণ তোমাদের পুনরায় জন্ম হওয়া আবশ্যক’।

আপনি কি পুনরায় অর্থাৎ নতুন জন্মলাভ করেছেন? নতুন জন্ম হওয়া ছাড়া আপনার নরক যন্ত্রণা থেকে উদ্ধার পাওয়ার কোনো আশা নেই, এমনকি গৌরবময় স্বর্গ সুখভোগ করতে পারছেন না। প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বলেছেন, “তোমাদের নতুন জন্ম হওয়া আবশ্যক” যোহন ৩:৭ পদ।

এমন কী কী বিষয় ধারণা করা যায় যা কখনই নতুন জন্ম নয়।

নতুন জন্ম কখনো ধর্মাচরণ, ধর্মীয় আচার পালনে নয়। 

নীকদীম নামে একজন ফরিসী, একজন ধর্মনিষ্ঠ গোড়া ধর্মকর্ম পালনের ব্যক্তি ছিলেন। তিনি যিহূদীদের মহাপর্ব সেই নিস্তার পর্ব, পাস্কা পর্বসহ ধর্মের সমস্ত পর্ব নিয়মিত পালন করতেন, দান-দশমাংশ দান করতেন, প্রার্থনা করতেন, বিভিন্ন পর্বে বলি উৎসর্গ করতেন, বিধি-ব্যবস্থা পালন করতে চেষ্টা করতেন। তিনি ধর্মীয় জীবনের সমস্ত কিছু মানতেন এবং পালন করতেন, নিয়মের বাইরের দিকটাও খুব যতেœর সংগে মেনে চলতেন। আর এই নীকদীমকেই কিনা প্রভু যীশু বলেছেন “তোমার পুনরায় জন্ম হওয়া আবশ্যক”। বিধি-ব্যবস্থা পালন, মণ্ডলীতে যুক্ত হওয়া, উপাসনায় উপস্থিত থাকা, বাপ্তাইজিত হওয়া বা ধর্মীয় মতবাদে আগ্রহ থাকাটা আপনাকে রক্ষা করতে পারে না। এমনকি এখন যারা অনেকেই নরকে আছেন তারাও কিন্তু ঐ সমস্ত কিছু সম্পূর্ণভাবে করেছিলেন। তাহলে এখন আপনার কী হবে? ঐ সেই ব্যক্তি নীকদীমের যদি নতুন জন্ম (পুনরায় জন্ম) হতে হয় তাহলে আপনারও নতুন জন্ম হওয়া আবশ্যক।

নতুন জন্ম কোনো নৈতিকতায় নয়, কোনো আদর্শ জীবনযাপনে নয়। 

আপনি হয়তো সব সময়ই যেকোনো শ্রেষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ আচরণবিধি মেনে চলার চেষ্টা করে আসছেন, যেমন মথি ৭:১২ বলা আছেন যে, তোমরা অপরের কাছ থেকে যা ব্যবহার আশা কর তাদের প্রতিও তেমনি ব্যবহার কর। যাহোক আপনি সঠিক সময় সমস্ত খরচের বিল পরিশোষ করছেন, প্রতিবেশীদের প্রতি ভালো ব্যবহার করে আসছেন, কোনো প্রকার দণ্ড বা শাস্তিতে নাই, ঋৃণগ্রস্থ নন, কারাগারে যান নাই, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও আকর্ষণীয় একটি জীবনযাপন করছেন, উন্নত ও নৈতিক জীবনযাপন আপনার, কিন্তু তবুও এসবেও আপনাকে রক্ষা করতে পারে না।

এমন কোনো কথা বলা নাই যে আমাদের প্রভু সেই ভীর করা জনতাকে উদ্দেশ্য করে, দ্বিধান্বিত অস্থির সেই পিলাতকে, দুমুখী সেই ভণ্ড ঈষ্করিয়োতীয় যিহুদাকে বলেছেন “তোমাদের পুনরায় জন্ম হওয়া আবশ্যক” কেন? আর এ কারণেই আপনি বলতে পারেন, ‘আমি তো জানি যে আমি ঈষ্করিয়োতীয় যিহুদার মতো ঘৃণ্য ভণ্ড ব্যক্তি আমি নই, এমনকি সেই পিলাতের মতো এতো ব্যক্তিও তো আমি নই, আর এদের মতো মানুষদেরই তো নতুন জন্ম হওয়া প্রয়োজন, কিন্তু আমি তো তাদের মতো নই। আমি কিন্তু কখনই খ্রীষ্টকে চুমু দিয়ে তাঁর শত্রুদের কাছে তাঁকে ধরিয়ে দিতে যাবো না। আমি তো কখনই খ্রীষ্টকে প্রহার করতে যাব না আর তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ করতে যাব না আর যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করার জন্য চিৎকার করা রক্ত-পিসাসু হিংস্র মানুষদের কাছে তাঁকে ছেড়ে দিতে যাব না। সমাজে অপরাধীদের, সন্ত্রাসীদের, খুনি গুণ্ডাদের, ব্যভিচারীদের, বেশ্যাদের, মিথ্যাবাদীদের, মাতালদের, জুয়ারিদেরই পুনরায় জন্ম হওয়া প্রয়োজন, কিন্তু আমার নয়। আমি সব সময়-ই ঠিক আছি।”

পাঠক, আপনি কি বুঝতে পেরেছেন যে ঈশ্বর-পুত্র এই পুনরায় জন্ম, নতুন জন্মের বিষয় এই কথাগুলো ঠিক তাকেই বলেছিলেন যিনি কিনা স্বর্গ লাভ করার জন্য যা কিছু ভালোভালো করার তাই তিনি করেছিলেন? কোনো সন্দেহ নাই যে ঐ ব্যক্তি কখনো অসৎ, অপরাধী, মদ্যপ, কিংবা জুয়ারী ছিলেন। তিনি যথার্থই একজন ভালো স্বামী ছিলেন, তিনি একদমই একজন ভালো প্রতিবেশী ছিলেন, তিনি সব সময়ই একজন নির্ভেজাল নৈতিকগুণের এবং ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন। আর এই ব্যক্তিকেই যদি পুনরায় জন্ম হওয়ার প্রয়োজন হয়ে থাকে, তাহলে আপনার অবস্থাটা কী, আপনি কী করবেন। যেখানে নীকদীমের মতো ব্যক্তির পুনরায় জন্ম হওয়া হওয়া ছাড়া স্বর্গে যাওয়া তার কোনো আশা ছিল না, সেখানে আপনি কীভাবে, কী করে, কেমন করে, কেমনে স্বর্গের আশা করতে পারেন?

নতুন জন্ম এমন নয় যে নিজেকে কিছুটা উন্নত করা, কিছুৃটা সংশোধন বা সংস্কার করা। 

এমনকি আপনি যদি আপনার ঘৃণ্য জঘন্য, নোংরামির, নিকৃষ্টতার সমস্ত কিছু ছেড়ে দেন বা বন্ধ করে দেন, তাতেও আপনি নতুন জন্ম লাভ করতে পারবেন না। আপনার সমস্যা বাইরের দিকটা নয়, কিন্তু আপনার ভিতরে, আপনার হৃদয়ে অন্তরে। আপনার বাহ্যিক, বহিরাবরণ অর্থাৎ বাইরের চেহারার সাজানো গোছানোর আকর্ষণীয়তার প্রয়োজন নাই, কিন্তু অভ্যন্তরিক পুনর্জন্মের ব্যাপার। শয়তান সব সময় আপনাকে মিথ্যা ভ্রান্ত শান্তিতে থাকাতে চায়। যীশু নামে আমাদের সতর্ক করা হয়েছে, আপনি পুনরায় জন্ম না হওয়া পর্যন্ত পরিতৃপ্ত বা সন্তুষ্ট হবেন না। 

নতুন জন্ম কী?

এটা এমন একটি রহস্য এমন একটি বিষয় যা কিনা আপনি ব্যাখ্যা করতে পারবেন না, কিন্তু এর বাস্তবতা ও প্রকৃত সত্য যা কোনো ব্যক্তি এর অন্য কোনো ব্যাখ্যা করতে পারে না। “বায়ু যে দিকে ইচ্ছা করে, সেই দিকে বহে, এবং তুমি তাহার শব্দ শুনিতে পাও; কিন্তু কোথা হইতে আইসে, আর কোথায় চলিয়া যায়, তাহা জানে না; পবিত্র আত্মা হইতে জাত প্রত্যেক জন সেইরূপ” (যোহন ৩:৮ পদ)। নীকদীম যেমন বাতাসের ব্যাখ্যা বুঝতে পারে নাই, এমনকি কোনো ব্যক্তিই বুঝতে পারে না তেমনি নতুন জন্মের ব্যাখ্যাও কেউ বুঝতে পারে না।

কিন্তু বাতাস এমন একটি বাস্তব ও সত্য বিষয় যা কোনো মানুষই এর ব্যাখ্যা করতে পারে না। কেবল একজন বোকা বলবে, “আমি বাতাস বিশ্বাস করি না কারণ আমি বাতাস কখনও দেখিনি, আমি বাতাস বুঝতে পারি না।” দেখুন বাতাস গাছের ডালগুলো কীভাবে নাড়া দিচ্ছে। আপনি কখনো বাতাসের বাস্তবতাকে অস্বীকার করতে পারবেন না! আপনি পবিত্র আত্মা দেখতে পারেন না। আপনি পবিত্র আাত্মাকে ব্যাখ্যা করতে পারেন না। কিন্তু আপনি তাঁর পরাক্রমশালী শক্তি, তাঁর মহৎ ক্ষমতায় কোনো লম্পটকে তার খারাপ পথ থেকে সরিয়ে আনতে দেখবেন, মিথ্যাবাদীকে ন্যায়পরায়ণ করতে দেখবেন, মদ্যপ্য মাতালকে শান্ত ও স্বাভাবিক হতে দেখবেন, ঈশ্বরনিন্দুককে প্রার্থনা করতে দেখবেন, আর এর পরেও এর বাস্তবতাকে ও প্রকৃত সত্যকে তারা অস্বীকার করতে চেষ্টা করে।

এই নতুন জন্ম ঈশ্বরেরেই কর্ম, যিঁনি একজন নিঃস্ব/তুচ্ছ, হারিয়ে যাওয়া, দোষী সাব্যস্ত হওয়া, নরকে যাওয়ার যোগ্য পাপী যিনি কিনা প্রভু যীশুকে গ্রহণ করায় একটি নতুন বৈশিষ্ট্য লাভ করেন, ঈশ্বরের সন্তান হন এবং নতুন আচরণে এক নতুন জীবন শুরু করেন। এটাই দ্বিতীয় জন্ম, একটি আধ্যাত্মিক জন্ম। 

দৈহিক জন্মগ্রহণে জীবন শুরু হয়। আত্মিক জীবন সেভাবেই শুরু হয় - কোনো মণ্ডলীতে যোগ দেওয়াতে নয়, এমনকি ধর্মাচরণে, ধর্মীয় আচার পালন করার কোনো ব্যক্তি হওয়াতেও নয়। আপনি এভাবে ঈশ্বরের পরিবারে যোগ দিতে পারেন না, আপনাকে অবশ্যই নতুন জন্মে অর্থাৎ পুনরায় জন্মগ্রহনেই জন্মগ্রহণ করতে হবে। একজন ব্যক্তি একটি সত্য কথা বলেছেন যে, “আপনি কাউকে খ্রীষ্টিয়ান বানাতে পারবেন না” হ্যাঁ এটাই সত্য কথা। খ্রীষ্টিয়ান তৈরি হয় না, তারা জন্মগ্রহণ করেন।

একটি জন্ম হলো একটি নতুন জীবনের অস্তিত্ব, যাতে তার পিতামাতার আচরণ, স্বভাব, প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যে রয়েছে। আপনি যখন প্রথমবার জন্মগ্রহণ করেছিলেন তখন আপনাকে পুরানো আচরণ ও প্রকৃতির অংশীদার করা হয়েছিল, আমরা সকলেই আদমের কাছ থেকে পেয়েছি পাপের প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য ও আচরণ। আপনি যখন পুনরায় জন্মগ্রহণ করেন তখন আপনি “ঈশ্বরীয়/স্বর্গীয় স্বভাবের” (২ পিতর ১:৪ পদ) হয়ে থাকেন। অর্থাৎ মানুষের খারাপ ইচ্ছার দরুন জগতে যেসব নোংরামী জমা হয়েছে তা থেকে রক্ষা পেয়ে এই নতুন জন্মগ্রহণে ঐশ্বরিক স্বভাবের, ঈশ্বরের প্রকৃতির সহভাগী হয়।

এ বিষয়ে কি আপনার জন্য সত্য? 

আপনার কি ঐশ্বরিক স্বভাব/বৈশিষ্ট্য রয়েছে?

আপনি যে ধরনেরই ধর্মীয় পেশাই তৈরি করুন না কেন, আপনি নৈতিকভাবে যতই ভালো ব্যক্তি হন না কেন, আপনি যতক্ষণ না সেই স্বর্গীয় স্বভাবের হয়ে থাকেন, আপনি পরিত্রাণপ্রাপ্ত নন। আপনি যখনই, যে মুহুর্তেই তাঁর পুত্রকে গ্রহণ করে থাকেন তখনই ঈশ্বর আপনাকে নতুন স্বভাব বা প্রকৃতি দিয়ে থাকেন। এটা হয় সঙ্গে সঙ্গেই, তৎক্ষণাৎ-ই।  আপনি কখনো ক্রমে ক্রমে, ধীরে ধীরে নতুন করে জন্মগ্রহণ করতে পারেন না। 

আপনি যখন পুনরায় অর্থাৎ নতুন জন্মগ্রহণ করেন তখন আপনি একটি নতুন জীবনযাপন শুরু করেন। আপনি যখন প্রথমবার জন্মগ্রহণ করেছিলেন তখন এটাই ঘটেছিল, আপনি এমন জীবনযাপন শুরু করেছিলেন যা আপনি জন্মের আগে কখনও যাপন করেননি। 

অনেকে মনে করেন তারা স্বর্গে যাচ্ছেন এই কারণে যে, তারা প্রচার সভায় উপস্থিত হয়ে বেদীর কাছে কান্নাকাটি করেছিলেন। কিন্তু আপনাকে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে যে আপনি নতুন জন্মপ্রাপ্ত হয়েছেন। যে ব্যক্তি কিনা মদে মাতাল, গালিগালাজপূর্ণ, ঈশ্বর নিন্দুক ছিলেন তাকেও দেখার মতো পরিবর্তন হতে দেখা যেতে পারে, এমনকি আপনার মধ্যেও তাই, কিন্তু তবুও আপনি যিনি পাপের গভীরে তলিয়ে যাননি, আপনি যখন নতুন জন্মগ্রহণ করেন তখন নিশ্চিতভাবে অবধারিত পরিবর্তন হয়ে থাকেন এবং পরিবর্তন হতে বাধ্য। প্রভু যীশু খ্রীষ্টের প্রতি, তাঁর বাক্যের প্রতি এবং তাঁর লোকদের প্রতি নতুন মনোভাব নতুন দৃষ্টিভঙ্গি হবে। 

আপনি কি নিশ্চিত যে আপনার নতুন জন্ম হয়েছে? 

আপনি হয়তো সঠিক দিন ক্ষণ ও তারিখ জানতে পারেন না যে আপনি কবে খ্রীষ্ট্রের প্রতি বিশ্বাস  ও আস্থা রেখেছেন, কিন্তু আপনাকে অবশ্যই বলতে সক্ষম হতে হবে যে, “আমি এখন জানি আমি পুনরায় জন্মগ্রহণ করেছি (নতুন জন্ম লাভ করেছি)”। আপনি যদি এই পবিত্র বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে থাকেন, আমি আপনাকে অনুরোধ করবো যেন আপনি এখনই প্রভু যীশুকে গ্রহণ করুন। এখন যোহন ৩:৩৬ পদটি পাঠ করুন এবং বিষয়টি বিশ্বাস করুন “যে কেহ পুত্রে বিশ্বাস করে, সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে”

আপনাকে অবশ্যই কেন নতুন জন্মপ্রাপ্ত হতে হয়।

কারণ প্রভু যীশু খ্রীষ্ট নিজেই বলেছেন সেজন্যই। 

নতুন জন্ম হওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, এর এক নিষ্পত্তি হওয়া উচিত।

কারণ আপনার পাপেপূর্ণ স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। 

আমরা আমাদের সমস্ত স্বভাব আচরণ আর বৈশিষ্ট্য আদমের কাছ থেকে পেয়েছি যা পতন ঘটায়, যা দূষিত নীতিভ্রষ্ট হওয়া এবং সম্পূর্ণভাবে নষ্ট চরিত্রের। ঈশ্বর মানুষের হৃদয় ও অন্তর সম্পর্কে বলেছেন যে, “অন্তঃকরণ সর্বাপেক্ষা বঞ্চক, তাহার রোগ অপ্রতিকার্য, কে তাহা জানিতে পারে?” (যিরমিয় ১৭:৯ পদ)। অর্থাৎ মানুষের অন্তর সবকিছুর চেয়ে ঠগবাজ, প্রবঞ্চক আর আরোগ্যের অতীত, তাকে কোনো রকমে ভালো করা যায় না। কেউ-ই মানুষের অন্তর বুঝতে পারে না। আপনার এইসব পুরাতন স্বভাব আর ঐসব বৈশিষ্ট্য আচরণ নিয়ে আপনি নিজে কখনই স্বর্গে আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন না, আমোদপূর্ণ সময় কাটাতে পারবেন না। 

আপনি যদি এখন উপাসনায়, আরাধনায়, প্রার্থনা কোনোভাবেই সুখ ও আনন্দ খুঁজে না পান, তাহলে আপনি কীভাবে স্বর্গে সুখ ও আনন্দ উপভোগ করার আশা করতে পারেন?  

স্বর্গ হলো একটি পবিত্র স্থান। আপনি যখন নতুন জন্মলাভ করেন, ঈশ্বর আপনাকে একটি পবিত্র স্বভাব বৈশিষ্ট, নির্দিষ্ট গুণ ও নির্দিষ্ট ধরণের চরিত্র দিয়ে থাকেন যাতে আপনি নিজেই স্বর্গে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। 

আপনি নিজের কোনো চেষ্টায় নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন না।

ইফিষীয় ২:৮ পদ, “কেননা অনুগ্রহেই, বিশ্বাস দ্বারা তোমরা পরিত্রাণ পাইয়াছ; এবং ইহা তোমাদের হইতে হয় নাই, ঈশ^রেরই দান”, ৯ পদ, “তাহা কর্মের ফল নয়, যেন কেহ শ্লাঘা না করে।” অর্থাৎ ঈশ্বরের দয়ায় এবং আমাদের বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে আমরা পাপ থেকে উদ্বার পাই। এটা আমাদের নিজেদের দ্বারা হয়নি, তা ঈশ্বরেরই দান। এটা কাজের ফল হিসাবে দেওয়া হয়নি, যেন কেই গর্ব করতে না পারে তার নিজের কর্মকে। 

তীত ৩:৫ পদ “তিনি আমাদের কৃত ধর্মকর্মহেতু নয়, কিন্তু আপনার দয়ানুসারে, পুনর্জন্মের স্নান ও পবিত্র আত্মার নূতনীকরণ দ্বারা আমাদিগকে পবিত্রাণ করিলেন” অর্থাৎ আমাদের নিজেদের কোনো সৎ কাজের জন্য আমাদের ভালো ভালো কাজের কারণে তিনি আমাদের উদ্ধার করেননি, কিন্তু তাঁর করুণার জন্যই তা করলেন। পবিত্র আত্মার দ্বারা আমাদেও নতুন জন্ম দান করে আর আমাদের নতুনভাবে সৃষ্টি করে তিনি আমাদের অন্তর ধূয়ে পরিষ্কার করলেন আর এইভাবেই তিনি আমাদের উদ্ধার করলেন। 

এখন ঈশ্বরের পবিত্র বাক্য থেকে এই দুইটি উক্তি হালকাভাবে নেবেন না। এসব পদগুলো বারবার পাঠ করুন যতক্ষণ না সত্য আপনাকে দৃঢ়ভাবে জাগিয়ে তোলে। আপনি নিজেকে নিজেই উদ্ধার করতে পারেন না - আপনাকে অবশ্যই নতুন জন্ম হতে হবে।  

কীভাবে নতুন জন্মগ্রহণ।

যোহন ১:১১ পদ “তিনি নিজ অধিকারে আসিলেন, আর যাহারা তাঁহার নিজের, তাহারা তাঁহাকে গ্রহণ করিল না” ১২ পদ, “কিন্তু যত লোক তাঁহাকে গ্রহণ করিল, সেই সকলকে, যাহারা তাঁহার নামে বিশ্বাস করে তাহাদিগকে, তিনি ঈশ্বরের সন্তান হইবার ক্ষমতা দিলেন” ১৩ পদ, “তাহারা রক্ত হইতে নয়, মাংসের ইচ্ছা (শারীরিক কামনা) হইতে নয়, মানুষের (পুরুষের বাসনা) ইচ্ছা হইতেও নয়, কিন্তু ঈশ্বর হইতে জাত” 

এই জন্ম ‘রক্ত হইতে নয়’। 

আপনার মা-বাবা খ্রীষ্টিয়ান হওয়ার কারণে যে আপনিও খ্রীষ্টিয়ান তা কিন্তু নয়। উত্তরাধিকার সূত্রে পরিত্রাণ আপনি আপনার মা-বাবার থেকে পেয়ে থাকেন না। যদিও আপনার দলের লোকেরা পরিত্রাণপ্রাপ্ত হতে পারেন, কিন্তু যদি আপনি নিজে নতুন জন্মের না হয়ে থাকেন, আপনি একজন হারানো ব্যক্তি।

এই জন্ম ‘মাংসের ইচ্ছা (শারীরিক কামনা) হইতে নয়’। 

এই নতুন জন্ম হওয়া আপনার নিজের প্রয়াসে, নিজের উদ্যমে এমনকি নিজের মনের জোরে নয়। এভাবে আপনি ব্যর্থ হবেন, আপনি সফল হবেন না। তাহলে এভাবে চেষ্টা করাটা কেন বন্ধ করা উচিত নয়? এভাবে নিজের চেষ্টা করার পরিবর্তে, যিঁনি আপনার পাপ থেকে পরিত্রাণের জন্য ক্রুশে তাঁর রক্ত ঝরিয়েছেন, মৃত্যুবরণ করেছেন এবং আপনার প্রভু হওয়ার জন্য পুনরায় যিনি পুনরুত্থিত হয়েছেন তাঁকে বিশ্বাস করুন, তাঁকে গ্রহণ করুন, তাঁর উপর নির্ভর করুন।

আমি যদি আপনাদের মধ্যে কাউকে জিজ্ঞাসা করতাম যে আপনি ঈশ্বরের সন্তান কি না, আপনি বলতেন, ‘আমি ঠিক নিশ্চিত না, কিন্তু আমি ঠিক তেমন নই কিন্তু আমি আমার যথাসাধ্যভাবে এবং আস্তে আস্তে তাঁর সন্তান হওয়ার চেষ্টা করছি। মনে করুন আপনি যদি মি: কমল বাড়ৈ এর কাছে জানতে চান যে তিনি মি: ও মিসেস বাড়ৈ এর সন্তান কি না, আর এতে তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমি ঠিক নিশ্চিত নই, কিন্তু আমি আমার যথাসাধ্যভাবে এবং আস্তে আস্তে তাদের সন্তান হওয়ার চেষ্টা করছি।’ এ কেমন হাস্যকর আর বোকার মতো কথা। উনি তাদের সন্তান নন্ কারণ তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের সন্তান হবার জন্য কিন্তু উনি তাদের পরিবারেই জন্মগ্রহণ করেছেন। আপনি যদি ঈশ্বরের সন্তান হন, এটা এই কারণে নয় যে আপনাকে এর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু এই কারণে যে আপনি তাঁর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন। 

এই জন্ম কখনো ‘মানুষের (পুরুষের বাসনা) ইচ্ছা হইতেও নয়’। 

এই নতুন জন্ম মানুষের কিছু ধর্মীয় রীতিনীতি, ভাবধারা, মত, পদ্ধতি, কায়দাকানুনে কিংবা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে ঘটানো যায় না। বিশেষ কোনো মানুষের দ্বারা কিংবা কোনো বিশেষ প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের দ্বারা এমন কিছু করার মাধ্যমে আপনাকে ঈশ^রের একজন সন্তান করতে পারবে না। আপনি যে সমস্ত স্থানে সচরাচর গিয়ে থাকেন সেখানকার ধর্মীয় বিভিন্ন প্রকার আচার-অনুষ্টানের মাধ্যমে, ধর্মীয় বিশ্বাসসূত্র মন্ত্র মুখস্থ করার মাধ্যমে এমনকি মানুষের তৈরি পদ্ধতি, কায়দাকানুন ও আচার-অনুষ্ঠানের বিধি-নিয়ম প্রথা পালন করতে পারেন, কিন্তু এই সমস্ত কিছুতে আপনাকে কোনো ভাবেই রক্ষা করতে পারবে না। কলসীয় ২ অধ্যায় ৮ পদের বলা আছে যে এসব মানুষের বংশ পরম্পরাগত মস্তিষ্কজাত চিন্তাধারা কিন্তু খ্রীষ্টের সংগে এসব শিক্ষার কোনো সম্বন্ধ নাই। এসব মানুষের গড়া চলতি নিয়ম আর জগতের নানা রীতিনীতির উপরেই তা ভরসা করে।      

আমি একজন ব্যক্তির সাক্ষ্য শুনেছিলাম তিনি বলেছেন, ‘গত দুই বছর যাবৎ আমাদের মণ্ডলীর বাইবেল স্কুলের আমি প্রেসিডেন্ট, কিন্তু গত দুই মাস আগেও আমি পরিত্রাণপ্রাপ্ত ছিলাম না’। কোনো একজন ২২ মাস ধরে বাইবেল স্কুলের প্রেসিডেন্ট, মণ্ডলীর সদস্য, ঈশ্বর এবং বাইবেল বিশ্বাসী, কিন্তু এই কারণে হারানো যে তিনি কখনো নতুন জন্মের অধিকারী ছিলেন না।

‘কিন্তু ঈশ্বর হইতে জাত’। প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বলেছেন তোমাকে অবশ্যই “আত্মা হইতে” জন্ম হতে হবে

এই জন্ম ঈশ্বর হতে জাত, আত্মা হতে জন্ম হলো ঈশ্বরের কাজ, আপনার নিজের কোনো প্রকার কাজে নয়। ঈশ্বর হতে এই জাত হলো একটি অলৌকিক্ কর্ম। একমাত্র ঈশ্বর এই জাত হওয়া সম্পন্ন করতে পারেন। ঈশ্বর যদি আপনার জীবনে কোনো কর্ম না করেন আপনি কখনই নতুন জন্মের অধিকারে নন্। আপনার ভূমিকা হলো আপনার সম্পর্কে অতীত ইতিহাস যা ঈশ্বর ধরে রেখেছেন তা বিশ্বাস করা যে আপনি হারানো ব্যক্তি এবং আপনার এখন খ্রীষ্টকে প্রয়োজন এবং তাঁকে আপনার মুক্তিদাতা বলে গ্রহণ করা প্রয়োজন, এমনকি তাঁকে আপনার একান্ত নিজের প্রভু বলে স্বীকার করা প্রয়োজন। যীশু খ্রীষ্ট ঈশ্বরের ধার্মিকতা এবং তাঁর ন্যায়বিচারকে সন্তুষ্ট করে কালভেরিতে ক্রুশে রক্ত ঝরিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন, যাতে তিনি আপনার পাপ এবং শাস্তি নিজের উপর বহন করতে পারেন। তিনি আজ পুনরুত্থিত এবং এক মাংসে আসল দেহ ও অস্থিতে ঈশ্বরের মানুষরূপে মহান ও উচ্চ মহিম্বানিত এর দক্ষিণে বসে আছেন। যখন আপনি তাঁকে গ্রহণ করেন আপনি পরিত্রাণপ্রাপ্ত হবেন কারণ পৌল বলেছেন আমরা “খ্রীষ্ট যীশুতে বিশ্বাস দ্বারা, ঈশ্বরের পুত্র হইয়াছে” (গালাতীয় ৩:২৬ পদ)।

আপনি কখনো কম্যুনিয়ন, খ্রীষ্টপ্রসাদ, প্রভুর ভোজ গ্রহণের মাধ্যমে খ্রীষ্টকে গ্রহণ করতে পারেন না। আপনি বিশ্বাসের মাধ্যমে খ্রীষ্টকে গ্রহণ করেন। ঠিক তাঁকে বলুন যে আপনি তাঁকে আপনার একান্ত নিজের প্রভু বলে গ্রহণ করেছেন।

আমার একজন বন্ধু তিনি সুসমাচার প্রচারক, তিনি বললেন যে তিনি তার পরিত্রাণপ্রাপ্ত হওয়ার আগে তিনি সান্ডে স্কুল পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। একজন মহিলা আমাকে বললেন তিনি তার পরিত্রাণপ্রাপ্ত হওয়ার আগেই ৩৮ বছর মণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।

অনন্ত জীবন প্রাপ্তির জন্য খুব দেরী হওয়ার আগেই আমি আপনার জন্য বলছি, আপনার পরিবারের জন্য বলছি, যীশুকে নিয়েই বলছি, এই বিষয়ে তুচ্ছ করবেন না, বিষয়টিকে ছোট করে দেখবেন না। পুনুরুত্থিত প্রভুর পায়ের কাছে নত হন এবং তাঁকে বলুন আপনি তাঁকে গ্রহণ করেছেন। “পুত্রকে যে পাইয়াছে, সে সেই জীবন পাইয়াছে; ঈশ্বরের পুত্রকে যে পায় নাই, সে সেই জীবন পায় নাই” (১ যোহন ৫:১১ পদ)। 

এখনই মাথা নত করুন আর বলুন: “প্রভু আমি একজন অপরাধী, অসহায় নিরুপায় একজন পাপী। আমি বিশ্বাস করি তুমি আমার পাপের জন্য ক্রুশে কষ্টভোগ করেছ এবং আমার পরিবর্তে মৃত্যুবরণ করেছ, আমার পাপের শাস্তির জন্য তুমি আমার পবিবর্তে পরিশোধ করেছ আর তাই তুমি পুনরায় উত্থাপিত হয়েছে। আমি তোমরা নাম ধরে আহ্বান করে আমার পাপের জন্য ক্ষমা চাই এবং আমাকে অনন্ত জীবন দান কর।” আমেন। 

এখন রোমীয় ১০:১৩ পদটি পাঠ করুন: “যে কেহ প্রভুর নামে ডাকে, সে পরিত্রাণ পাইবে” 

আপনি প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে আহ্বান করে থাকলে, তিনি বলবেন তুমি রক্ষা পেয়েছ!

দেখুন যোহন ৬:৪৭ পদ: “সত্য, সত্য আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে বিশ্বাস করে, সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে”

আপনি কি তাঁকে বিশ্বাস করেছেন, আপনি কি পরিত্রাণের জন্য তাঁর প্রতি আস্থা, ভরসা ও নির্ভর করেছেন? তাঁকে কি স্বীকার করেছেন? তাহলেই তিনি বলবেন, ‘তুমি অনন্ত জীবন লাভ করেছ!’

আজ আপনি এইটুকু পাঠ করে অবশ্যই নতুন জীবন সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পেরেছেন।  তাই এখনই আপনার সত্য সত্যিই আন্তরিকভাবে ঈশ্বরের পুনরুত্থিত পুত্রকে গ্রহণ গ্রহণ করার জন্য উপযুক্ত সময়। জীবন্ত ঈশ্বরের দিকে মন ফিরিয়ে আর যীশু খ্রীষ্টকে বিশ্বাসের মাধ্যমে তাঁকে আপনার মুক্তিদাতা এবং প্রভু বলে গ্রহণ করার এখনই উপযুক্ত সময়। যীশু খ্রীষ্টের প্রতি আস্থা, ভরসা ও নির্ভর করে তাঁকে স্বীকার করুন যে তিনি আপনার সমস্ত পাপ দূর করেছেন। আপনি এখনই তাঁর প্রতিজ্ঞার উপর স্থির থাকুন। “পুত্রকে যে পাইয়াছে, সে সেই জীবন পাইয়াছে” (১ যোহন ৫:১২ পদ)। আপনার চমৎকার একটি সুযোগ হলো মানুষের সামনে তাঁকে আপনার প্রভুরূপে সাক্ষ্য দেবার। আমেন।


Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?