বাপ্তিস্ম সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা - বাপ্তিস্ম সম্পর্কে বাইবেল কী শিক্ষা দেয়?


Baptism : The Facts Are Clear. by Michael R. Dixon

শাস্ত্রানুসারে, বাইবেলে আছে : 

“প্রভু এক, বিশ্বাস এক, বাপ্তিস্ম এক”  ইফিষীয় ৪:৫ পদ।

আজকের দিনে বাপ্তিস্ম সম্পর্কে এদিক সেদিক অনেক রকম অনেক কিছুই বলা হয়। অনেকে বলেন, বাপ্তিস্ম আপনাকে পাপ থেকে মুক্তি দেয়; অনেকে বলেন, ‘যীশু’ এবং এর সঙ্গে ‘বাপ্তিস্ম’ যুক্ত হয়ে আপনাকে পাপ থেকে মুক্তি দেয়। অনেকে বলেন, বাপ্তিস্ম পাপ ধুয়ে দেয়। এ ছাড়াও অনেকে বলেন, বাপ্তিস্ম আদি (?) পাপ ধুয়ে দেয়। আর যা-ই হোক না কেন বাইবেল কী বলে? একজন ব্যক্তি তাহলে সত্য কীভাবে জানতে পারে? সহজ সরলভাবে সত্য বাইবেলের কাছে যান, পাঠ করুন আর দেখুন বাইবেল কী বলে। এই পুস্তিকাটির উদ্দেশ্য হলো ঈশ্বরের বাক্য থেকে বাইবেলের সত্য প্রমাণ করা।

কারো বিশ্বাসকে কোনো অবস্থাতেই ঠাট্টা বা মজা করার উদ্দেশ্যে নয়। আমার উদ্দেশ্য হলো বাইবেল কী বলে তা ঠিকভাবে দেখানো। এ কথাও ঠিক যে অনেকে অসন্তুষ্ট হবেন। কিন্তু তারা বিবেচনা করে দেখবেন যে, বাইবেল যা বলে তা তারা গ্রহণ করবেন কি না কিংবা বাইবেল যা বলে তা তারা অস্বীকার করতে পারবেন কি না! বাইবেলই হলো নির্ভরযোগ্য জ্ঞান বা কর্তৃত্বকারী।

এই পুস্তিকাটির সর্বত্র শাস্ত্রাংশগুলোতে জোর দেওয়ার উদ্দেশ্যে বড় হরফ ব্যবহার করা হয়েছে। 

প্রথম অধ্যায় : 

বাপ্তিস্মের অর্থ 

যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যু

বাপ্তিস্ম আমাদের মৃত্যু, সমাধি ও খ্রীষ্টের সঙ্গে পুনরুত্থানকে প্রকাশ করে। বাপ্তিস্ম চিত্রিত করে আমাদের পাপের জন্য যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যু হওয়া, তাঁর সমাধিস্থ হওয়া ও আমাদের জন্য মৃত্যুকে জয় করে তাঁর পুনরুত্থান হওয়া। আমাদের পরিত্রাণপ্রাপ্ত হওয়ার পূর্বের পুরাতন মনুষ্যত্বের (খ্রীষ্ট ব্যতিরেকে ও পাপের অধীনে আমরা যেমন জীবনযাপন করতাম) মৃত্যু, পুরাতন জীবনের সমাধি ও প্রভু যীশু খ্রীষ্টেতে নতুন জীবনযাপনের জন্য পুনরুজ্জীবিত হওয়ার চিত্র বাপ্তিস্ম প্রকাশ করে।

“তোমরা কি জান না যে, আমাদের যতজন যীশু খ্রীষ্টের উদ্দেশে বাপ্তাইজিত হইয়াছি, তাঁহার মৃত্যুর উদ্দেশে বাপ্তাইজিত হইয়াছি? অতএব আমরা মৃত্যুর উদ্দেশে বাপ্তিস্ম দ্বারা তাঁহার সহিত সমাধিপ্রাপ্ত হইলাম; যেন খ্রীষ্ট যেমন পিতার মহিমা দ্বারা মৃতদের মধ্য হইতে উত্থাপিত হইলেন, আমরাও তেমনই জীবনের নূতনতায় চলি। কারণ যদি আমরা তাঁহার অনুরূপ মৃত্যুর সহিত একত্রে স্থাপিত হইয়া থাকি, আমরা তাঁহার পুনরুত্থানের অনুরূপও হইব” (রোমীয় ৬:৩-৫ পদ)

যে কারণে আমরা মৃত

“কিন্তু যখন তোমরা আপন আপন অপরাধে ও পাপে মৃত ছিলে, তখন তিনি তোমাদিগকেও জীবিত করিলেন . . এমনকি, পাপে মৃত আমাদিগকে, খ্রীষ্টের সহিত জীবিত করিলেন - অনুগ্রহেই তোমরা পরিত্রাণ পাইয়াছ” (ইফিষীয় ২:১ পদ এবং ৫ পদ)।

বাপ্তিস্মের প্রথম অংশ আমাদের পাপের জন্য প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যুকে প্রকাশ করে। এতে ঈশ্বরের দৃষ্টিতে পরিত্রাণপ্রাপ্তির পূর্বে আমাদের আত্মিক মৃতাবস্থা (আমাদের পুরাতন মনুষ্যত্ব) চিত্রিত হয়।

আদমের পাপের কারণে ‘পুরাতন মনুষ্যত্ব’ হয় মৃত :

“যেমন এক মনুষ্য দ্বারা পাপ ও পাপ দ্বারা মৃত্যু জগতে প্রবেশ করিল আর এই প্রকারে মৃত্যু (শারীরিক ও আত্মিক) সমুদয় মনুষ্যের কাছে উপস্থিত হইল, কেননা সকলেই পাপ করিল”  (রোমীয় ৫:১২ পদ)। 

আরো বলা আছে : “কারণ সকলেই পাপ করিয়াছে, আর ঈশ্বরের গৌরব-বিহীন হইয়াছে (রোমীয় ৩:২৩ পদ)।

আদম স্বেচ্ছায় ফল খেয়ে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করল; আর এর ফলে তৎক্ষণাৎ তার আত্মিকভাবে মৃত্যু ঘটল। ঐ একই সময় থেকে শারীরিক মৃত্যুর প্রক্রিয়াও শুরু হতে থাকল। আদমের পাপ স্বভাব যখন তার সন্তানদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল, তখন মৃত্যুও সমস্ত মানুষের (মনুষ্যজাতি) প্রতি প্রযোজ্য হলো। আমরা যা অর্থাৎ আমাদের স্বভাবের কারণেই আমরা পাপী, অন্য কথায় আমরা যা করি তাতেই আমরা পাপী। 

বিষয়টি একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে ব্যাখা করা যায় : 

কুকুর ঘেউ ঘেউ করে ডাকার কারণেই কুকুর নয়; সে ঘেউ ঘেউ ডাকে কারণ সে কুকুর। আপেল উৎপাদনের কারণেই গাছটি আপেল গাছ নয়; এটি আপেল গাছ আর সে কারণেই এটি আপেল উৎপাদন করে। আমারা পাপ করি বলেই আমরা পাপী নই; আমাদের পাপেপূর্ণ স্বভাবের কারণেই আমরা পাপ করি।

আমাদের পাপের পরিণতি

আমাদের পাপস্বভাবের কারণে পাপের পরিণতি হলো ঈশ্বর থেকে আমাদের পৃথক হয়ে যাওয়া। আমরা পাপের জন্য যা অর্জন করি বা পাই তা হলো অনন্ত মৃত্যু। এই অনন্ত মৃত্যু হলো অনন্তকালের জন্য নরক ভোগ। 

বাইবেল বলে : “কেননা পাপের বেতন মৃত্যু; কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহ-দান আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টেতে অনন্ত জীবন” (রোমীয় ৬:২৩ পদ)।

যেহেতু :

        বেতন হলো অর্জন করা, পাওয়া, প্রতিফল।
পাপ হলো আপনার যে অবস্থা ও যা করতে উদ্যত রয়েছেন। 
মৃত্যু হলো শারীরিক ও আধ্যাত্মিকতায় পৃথক।

“পরে মৃত্যু ও পাতাল অগ্নিহ্রদে নিক্ষিপ্ত হইল; তাহাই অর্থাৎ সেই অগ্নিহ্রদ, দ্বিতীয় মৃত্যু আর জীবনপুস্তকে যে কাহারও নাম লিখিত পাওয়া গেল না সে অগ্নিহ্রদে নিক্ষিপ্ত হইল” (প্রকাশিত ২০:১৪-১৫ পদ)।

ঈশ্বর পাপীদের ঘৃণা করেন না কিন্তু আমরা যে পাপ করি তিনি তা ঘৃণা করেন। এই পাপই ঈশ্বরের কাছ থেকে আমাদেরকে পৃথক করে কারণ ঈশ্বর পবিত্র এবং পাপ করতে পারেন না আর করবেনও না। তিনি স্বর্গে তাঁর উপস্থিতিতে কখনই পাপ বরদাস্ত করবেন না। আমাদেরকে স্বর্গে যেতে হলে যে করেই হোক এই পাপ অবশ্যই মুছে ফেলতে হবে।

নরক মানুষের জন্য সৃষ্টি হয়নি; নরক শয়তান ও তার দূতগণের (ভূতগ্রস্তদের) জন্য সৃষ্টি করা হয়েছিল। পাপের কারণে, মানুষের পতনের পরে, পাপের শাস্তির জন্য সেই প্রাণগুলো রাখার জন্য ঈশ্বরের উপযুক্ত স্থান হলো নরক। 

“পরে তিনি বামদিকে স্থিত লোকদিগকেও বলিবেন, ওহে শাপগ্রস্ত সকল, আমার নিকট হইতে দূর হও, দিয়াবলের ও তাহার দূতগণের জন্য যে অনন্ত অগ্নি প্রস্তুত করা গিয়াছে, তাহার মধ্যে যাও” (আমাকে উদ্দেশ্য করে) (মথি ২৫:৪১ পদ)।

“তবে সেই ব্যক্তিও ঈশ্বরের সেই “রোষ-মদিরা পান করিবে, যাহা তাঁহার কোপের পানপাত্রে অমিশ্রিতরূপে প্রস্তুত হইয়াছে;” এবং পবিত্র দূতগণের সাক্ষাতে ও মেষশাবকের সাক্ষাতে “অগ্নিতে ও গন্ধকে যাতনা পাইবে” (প্রকাশিত বাক্য ১৪:১০ পদ)।

আমরা শাস্ত্রে দেখেছি যে মানুষ পাপের স্বভাব নিয়েই জন্মগ্রহণ করে আর এই অবস্থায় মানুষ পূর্ণ পবিত্র পিতার দৃষ্টিতে আত্মিকতায় মৃত। যেহেতু আমরা মৃত, আমাদের শারীরিক মৃত্যুতে পাপের শাস্তি অপরিশোধিত অর্থাৎ বাকি আছে। এক অনন্ত নরকে ঐ পাপের শাস্তি দেওয়া ছাড়া ঈশ্বরের আর অন্য কোনো উপায় বা বিকল্প পথ নেই। আর সেটাই হলো দ্বিতীয় মৃত্যু।

অনেকে বুঝেন না যে এ জীবনের পাপের জন্য কেন ঈশ্বর মানুষকে অনন্তকাল ধরে শাস্তি দেন। প্রিয় পাঠক, এটি কোনো বিষয় নয় যে আপনি কতদিন ধরে বা কতটুকু পাপ করেছেন, কিন্তু কতটা পরিমাণে। অন্য কথায় তার মাত্রা, সীমা বা পরিমাণ কী তাতে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে দিন।

একটি অপরাধমূলক খুন হতে পাঁচ সেকে-ের মতো সময় লাগতে পারে, সিঁদেল চোর চুরি করতে সময় নিতে পারে ৩ ঘন্টার মতো। কোনো বিচারক কি পাঁচ সেকে-ের একটি খুনের অপরাধে একজন খুনিকে পাঁচ দিন জেলে থাকার শাস্তি দেবেন? আর ৩ ঘণ্টার অপরাধের জন্য সিঁদেল চোরকে কি তিনি ৩ বছরের জন্য জেলের শাস্তি দেবেন?

ঈশ্বরের দৃষ্টিতে অতি ক্ষুদ্র পাপ (যেমন আমরা একে ছোট ছোট অন্যায় বা ভুল বলে থাকি) তাঁর কাছে অনেক বড় ভয়ানক অপরাধ। এই ক্ষুদ্র পাপই তাঁর পবিত্রতা থেকে আমাদের পৃথক করে।

যীশু খ্রীষ্টের সমাধি

দ্বিতীয় বিষয় হলো যে বাপ্তিস্মে যীশু খ্রীষ্টের সমাধিস্থ হওয়া চিত্রিত হয়। বাপ্তিস্মে আমাদের পরিত্রাণপ্রাপ্ত হওয়ার আগের পুরাতন জীবন প্রদর্শন করে যা যীশু খ্রীষ্টের সঙ্গে সমাধিপ্রাপ্ত হয়েছে। বাপ্তিস্ম গ্রহণের সময় জলে নিমজ্জিত অর্থাৎ জলে সম্পূর্ণ ডুবানোর দ্বারা কবরস্থ হওয়া চিত্রিত হয়। (এ বিষয়ে আরো অলোচনা করা হবে দ্বিতীয় অধ্যায়ে, বাপ্তিস্মের পদ্ধতিতে)।

“অতএব আমরা তাঁহার মৃত্যুর উদ্দেশ্যে বাপ্তিস্ম দ্বারা তাঁহার সহিত সমাধিপ্রাপ্ত হইয়াছি” (রোমীয় ৬:৪ পদ)। 

পুরাতন মনুষ্য (পূর্বের পাপস্বভাব) থেকে মন পরিবর্তন।

এই সমাধি, পুরাতন মনুষ্যের অর্থাৎ পূর্বের পাপস্বভাব পরিত্যাগের ফল হলো পুরাতন মনুষ্য/পাপ থেকে মন পরিবর্তন ও খ্রীষ্টের প্রতি ফেরা।

“আমরা ত ইহা জানি যে, আমাদের পুরাতন মনুষ্য তাঁহার সহিত ক্রুশারোপিত হইয়াছে, যেন পাপদেহ শক্তিহীন হয়, যাহাতে আমরা পাপের দাস আর না থাকি, কেননা যে মরিয়াছে সে পাপ হইতে ধার্মিক গণিত হইয়াছে”  (রোমীয় ৬:৬-৭ পদ)।

পুরাতন মনুষ্য (পূর্বের পাপস্বভাব) থেকে ফিরে আসা, স্বীকার করা যে আপনি একজন পাপী :

“তুমি যদি ‘মুখে’ যীশুকে প্রভু বলিয়া স্বীকার কর, এবং ‘হৃদয়ে’ বিশ্বাস কর যে ঈশ্বর তাঁহাকে মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপন করিয়াছেন, তবে পরিত্রাণ পাইবে” (রোমীয় ১০:৯ পদ)।

হৃদয় মন ও অন্তঃকরণ থেকে একটি সহজ সরল প্রার্থনায় এর সবকিছুই তুলে ধরা হয়, যদি সত্যিকারার্থে আপনার এই রকম উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। তবে তা কিছুটা এই রকম হতে পারে :

প্রিয় ঈশ্বর, আমি পাপী। এখন আমি আমার পাপ থেকে তোমার দিকে ফিরলাম। আমাকে ক্ষমা কর; আমার হৃদয়ে এসো এবং আমাকে মুক্তি দাও। আমি এখন যীশুকে আমার মুক্তিদাতারূপে গ্রহণ করছি। আমার প্রাণের মুক্তির জন্য তোমাকে ধন্যবাদ দেই। যীশুর নামে, আমেন।

“যে কেহ প্রভুর নামে ডাকে, সে পরিত্রাণ পাইবে” (রোমীয় ১০:১৩ পদ)। 

        যে কেহ = অর্থাৎ যে কোনো ব্যক্তি, সকলে।
ডাকে = অর্থাৎ চাইতে অনুরোধ করে, তাঁকে গ্রহণ করে।
পরিত্রাণ = অর্থাৎ নতুন জন্ম, পরিবর্তিত, রূপান্তরিত!
পাইবে = অর্থাৎ পাইতে পারে না বা হতে পারে না, কিন্তু পাবেই বা হবেই

পুরাতন মনুষ্য (পূর্বের পাপস্বভাব) থেকে রেহাই।

“অতএব যেমন একজনের অপরাধ দ্বারা সকল মনুষ্যের কাছে দ-াজ্ঞা পর্যন্ত ফল উপস্থিত হইল, তেমনি একজনের ধার্মিকতার কার্য দ্বারা সকল মনুষ্যের কাছে জীবনদায়ক ধার্মিকগণনা পর্যন্ত ফল উপস্থিত হইল” (রোমীয় ৫:১৮ পদ)।

সুতরাং আদমের পাপের কারণে আমরা সকলে অপরাধী: আর খ্রীষ্টের দ্বারা সকলেরই ধার্মিক (অপরাধমুক্ত) হওয়া সম্ভব। যদি আপনি পূর্বের অংশগুলো যতœসহকারে পাঠ করেন, আপনি লক্ষ্য করবেন যে আদমের ‘এক অপরাধ দ্বারা’ বিচার উপস্থিত। বিচারটি সমস্ত মানুষের প্রতি প্রয়োগ বা কার্যকর হয়।

উপরের পদটি পাঠ করে আমরা দেখি যে, একজন সেই যীশু খ্রীষ্ট, ‘একজনের ধার্র্মিকতা’ দ্বারা ধার্র্মিকতা এসেছিল। কিন্তু আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে, ধার্মিকতা একটি বিনামূল্যের দান। একটি দান (সত্য সত্যই একটি দান হতে হলে) অবশ্যই দিতে হবে। দান আয়-রোজগারের মাধ্যমে আসে না, তা হলে এটি হয় কর্মের মজুরি। দান কখনো ফেরত নেওয়া যায় না। দান যদি দানদাতা ফেরত নেন, তাহলে এটি কোনো অবস্থাতেই দান বা উপহার হতে পারে না।

একটি দান অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে, দানটি পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে আর তা গ্রহণ করতে হবে।

“কিন্তু যত লোক তাঁহাকে গ্রহণ করিল, সেই সকলকে, যাহারা তাঁহার নামে বিশ্বাস করে তাহাদিগকে তিনি ঈশ্বরের সন্তান হইবার ক্ষমতা দিলেন” (যোহন ১:১২ পদ)। 

যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান

বাপ্তিস্মের তৃতীয়াংশে চিত্রিত হয় যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান। এটি সেই রকমই প্রকাশ হয় যে, যীশু মৃত্যু থেকে জেগে উঠেছেন, যেন আমরা পূর্বের মতো পুরাতন মনুষ্য অবস্থা থেকে অনন্ত জীবনে উত্থাপিত হই বা পুনরুজ্জীবিত হই।

“অতএব আমরা তাঁহার মৃত্যুর উদ্দেশে বাপ্তিস্ম দ্বারা তাঁহার সহিত সমাধিপ্রাপ্ত হইয়াছি; যেন খ্রীষ্ট যেমন পিতার মহিমা দ্বারা মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপিত হইলেন, তেমনি আমরাও জীবনের নূতনতায় চলি” (রোমীয় ৬:৪ পদ)। 

ঈশ্বরের সঙ্গে পুনঃপ্রতিষ্ঠা

জীবনের এই নতুনত্ব হলো নবপরিণত (নতুন) জীবন যা আমরা নতুন জন্ম লাভ করার পরে ঈশ্বরের আত্মাতে জীবনযাপন করি। ঠিক যেমন যীশু জীবনের নতুনতায় পুনরায় জেগে উঠেছেন, তেমনি পূর্বের জীবনের পাপপূর্ণ বিষয় ঝেড়ে ফেলে আমাদের আরো নবপরিণীত জীবনে চলা উচিত।

যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে বাইবেল বলে : “যীশু আমাদের অপরাধের জন্য সমর্পিত হইলেন,আমাদের ধার্র্মিক গণনার নিমিত্ত উত্থাপিত হইলেন” (রোমীয় ৪:২৫ পদ)। 

যখন পিতা ঈশ্বর মৃত্যু থেকে যীশু খ্রীষ্টকে পুনরুজ্জীবিত করলেন, তিনি নিজেই মৃত্যুঞ্জয়ী হলেন। প্রকাশ করলেন যে তিনি আমাদের জন্য মৃত্যুকে জয় করেছেন: আমাদের শারীরিক মৃত্যু হলেও, আমরা যেন আত্মিকতায় চিরজীবন বেঁচে থাকি। যে আত্মিক মৃত্যুর কারণে আমাদের সকলের জন্য অনন্তকাল নরক নির্ধারিত ছিল, তিনি সেই আত্মিক মৃত্যু জয় করেছেন।

“ধন্য আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ঈশ্বর ও পিতা; তিনি নিজ বিপুল দয়ানুসারে মৃতগণের মধ্য হইতে যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান দ্বারা, জীবন্ত প্রত্যাশার নিমিত্ত আমাদিগকে পুনর্জন্ম দিয়েছেন, অক্ষয় ও বিমল ও অজর দায়াধিকারের নিমিত্ত দিয়েছেন; সেই দায়াধিকার স্বর্গে তোমাদের নিমিত্ত সঞ্চিত রহিয়াছে” (১ পিতর ১:৩,৪ পদ) 

নতুন জীবনের শুরু

“আমরা জানি, মৃতগণের মধ্য হইতে উঠিয়াছেন বলিয়া খ্রীষ্ট আর কখনও মরেন না, তাঁহার উপরে মৃত্যুর আর কর্তৃত্ব নাই। ফলতঃ তাঁহার যে মৃত্যু হইয়াছে, তদ্বারা তিনি পাপের সম্বন্ধে একবারই মরিলেন; এবং তাঁহার যে জীবন আছে, তদ্বারা তিনি ঈশ্বরের সম্বন্ধে জীবিত আছেন। তদ্রুপ তোমরাও আপনাদিগকে পাপের সম্বন্ধে মৃত, কিন্তু খ্রীষ্ট যীশুতে ঈশ্বরের সম্বন্ধে জীবিত বলিয়া গণনা কর” (রোমীয় ৬:৯-১১ পদ)।

এর কারণ হলো আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট আমাদের জন্য সবকিছু ক্রুশেই পূর্ণ করেছেন, যেন আমরা সম্পূর্ণরূপে পূর্ণতায় তৈরি হই। আমাদের জন্য তিনি নিজেকেই উৎসর্গ করেছেন, যেন পাপ এবং মৃত্যু আর কখনো আমাদের উপরে ক্ষমতা অথবা প্রভাব বিস্তার করতে না পারে।

“উহারা বিনামূল্যে তাঁহারই অনুগ্রহে খ্রীষ্ট যীশুতে প্রাপ্ত মুক্তি দ্বারা, ধার্মিক  গণিত হয়” (রোমীয় ৩:২৪ পদ)।

কার্যত :

        ধার্মিকতা = নিরপরাধ প্রকাশ, “‘ধার্র্মিকগণিত’ পাপে লিপ্ত নয়।”

        বিনামূল্যে     কোনো প্রকার পরিশোধে নয় কিংবা কাজের বিনিময়ে উপার্জন করার মতো                                                নয়। এই দানের জন্য অন্য কেউ মূল্য পরিশোধ করেন।

       অনুগ্রহে   = অযোগ্য, অনুপযুক্ত হলেও পাওয়া অর্থাৎ পাবার উপযুক্ত না হলেও ঈশ্বর                                                    এটি প্রদান করেন।

        মুক্তি = পাপ থেকে মুক্তি।

“কেহ যদি খ্রীষ্টে থাকে, তবে নূতন সৃষ্টি হইল; পুরাতন বিষয়গুলি অতীত হইয়াছে, দেখ, সেগুলি নূতন হইয়া উঠিয়াছে” (২ করিন্থীয় ৫:১৭ পদ)। 

প্রাণের পুনর্জন্ম হয় প্রভু যীশু খ্রীষ্টে বাস করার দ্বারা, যা হয় বিশ্বাসে তাঁকে গ্রহণের মাধ্যমে। যীশু খ্রীষ্ট, এর সঙ্গে অন্য আর কিছুই যোগ দিয়ে নয় কিংবা কিছু বাদ দিয়েও নয়।

প্রথম অধ্যায় : উপসংহার

আমরা দেখেছি বাপ্তিস্ম প্রকাশ (চিত্রিত) করে :

১. যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যু
২. যীশু খ্রীষ্টের সমাধি
৩. যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান

বাপ্তিস্ম হলো :

আভ্যন্তরীণ (অন্তরের) পরিবর্তনের এক বাহ্যিক প্রকাশ (যার দ্বারা ইতোমধ্যে আমাদের                     পরিত্রাণ হয়েছে, তা প্রকাশ করে)।

আপনার পুরাতন জীবনের মৃত্যু, অতীতের সমাধি এবং খ্রীষ্টেতে নতুন জীবনে জেগে উঠার একটি             ছবি

    ঈশ্বরের প্রতি শুভজ্ঞানের বা বিবেকের একটি উত্তর বা সাড়া (প্রতিবেদন)।

যীশু খ্রীষ্টে আমাদের পরিচিতি

বাপ্তিস্ম : (পরবর্তী অধ্যায়ে নিচের বিষয়গুলো প্রমাণ করা হবে)

    বাপ্তিস্ম জল ঢেলে বা ছিটিয়ে সম্পাদন করা নয়।

    বাপ্তিস্ম শিশুদের জন্য নয়।

    বাপ্তিস্ম ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভের পথ বা চিহ্ন (Sacrament) নয়।

    ঈশ্বরের রাজ্যে পুনর্জন্ম হতে বাপ্তিস্ম কোনো নতুন জন্ম নয়।

    বাপ্তিস্ম আমাদের মৃত্যুর ক্ষমতা রক্ষা করে না।

    বাপ্তিস্ম অনন্ত জীবনের অঙ্গীকার প্রদান করে না।


দ্বিতীয় অধ্যায় :

বাপ্তিস্মের পদ্ধতি

জলে নিমজ্জিত/ডুবানো

বাপ্তিস্মের প্রকৃত উদ্দেশ্য অর্থাৎ যা আমাদের পরিত্রাণ করেছে (মৃত্যু, সমাধি ও পুনরুত্থান) তা সঠিকভাব চিত্রিত করতে, এমন একটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে যাতে সঠিকভাবে মৃত্যু, সমাধি ও পুনরুত্থানের ছবি প্রকাশ পায়। ইফিষীয় ৪:৫ পুনরায় স্মরণ করিয়ে বলে যে “প্রভু এক, বিশ্বাস এক, বাপ্তিস্ম এক।”

“পরে যীশু বাপ্তাইজিত হইয়া অমনি জল হইতে উঠিলেন; আর দেখ, তাঁহার নিমিত্ত স্বর্গ খুলিয়া গেল এবং তিনি ঈশ্বরের আত্মাকে কপোতের ন্যায় নামিয়া আপনার উপরে আসিতে দেখিলেন। আর দেখ, স্বর্গ হইতে এই বাণী হইল, ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, ইহাঁতেই আমি প্রীত” (মথি ৩:১৬-১৭ পদ)।

বাপ্তিস্মের সংজ্ঞা

 গ্রিক শব্দ ‘ব্যাপ্টাইজো’ (baptizo) থেকে বাইবেলে বাপ্তিস্ম হয়েছে। ‘ব্যাপ্টাইজো’ শব্দটির অর্থ ‘ডুবানো (Dip), গর্ভে ঝাপ দেওয়া (Plunge), নিমজ্জিত (Submerge), সম্পূর্ণ জলে নিমজ্জিত (Over whelm)’।

বাপ্তিস্ম পালন/উদ্যাপন

বাইবেলের যেসব অংশে বাপ্তিস্ম সম্পর্কে বলা হয়েছে, সেগুলো লক্ষ্য করলে নিঃসন্দেহে যে-কেউ দেখতে পাবেন যে, একজনকে বাপ্তিস্ম দিতে হলে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে জল থাকতে হবে। 

যোহন ৩:২৩ পদে বাইবেল বলে : “আর যোহনও শালীমের নিকটবর্তী ঐনোনে বাপ্তাইজ করিতেছিলেন, কারণ সেইস্থানে অনেক জল ছিল

বাইবেল স্পষ্টই জলে সম্পূর্ণ ডুবানোর (Immersion) মাধ্যমেই বাপ্তিস্ম পদ্ধতির শিক্ষা দেয়। আপনার শিক্ষার জন্য এখানে আরো শাস্ত্রের অংশ দেখানো গেল। ঈশ্বর ঠিক এমনই চান যেন বাইবেল আপনার কর্তৃত্বকারী হয়।

আর ফিলিপ ও নপুংসক উভয়ে জলমধ্যে নামিলেন আর ফিলিপ তাঁহাকে বাপ্তাইজ করিলেন। আর যখন তাঁহারা জলের মধ্য হইতে উঠিলেন, তখন প্রভুর আত্মা ফিলিপকে হরণ করিয়া লইয়া গেলেন, এবং নপুংসক আর তাঁহাকে দেখিতে পাইলেন না, ফলে তিনি আনন্দ করিতে করিতে পথে চলিয়া গেলেন” (প্রেরিত ৮:৩৮,৩৯ পদ)।

এখন, কেউ কি বলতে পারেন যে নপুংসকের বাপ্তিস্ম জল ছিটানো বা জল ঢালার মাধ্যমে হয়েছিল? আমি তা মনে করি না। তাছাড়া, বাপ্তিস্মের জন্য ছিটানো জলের পদ্ধতি তখন থেকে ৭০০ বৎসর পরে ছাড়া শুরু হয়নি। অনেক ধর্ম-প্রচারক ও পুরোহিত বাপ্তিস্মে জল ছিটানো বা জল ঢালার এই পদ্ধতি অনুশীলন করেন, যা কিনা শাস্ত্রানুযায়ী সেই আসল বাপ্তিস্মের পদ্ধতিরূপে সম্মতি দেওয়া যায় না বা একমত হওয়া যায় না।

“সমস্ত যিহূদিয়া দেশ ও যিরূশালেম-নিবাসী সকলে বাহির হইয়া তাঁহার নিকটে যাইতে লাগিল; ও নিজ নিজ পাপ স্বীকার করিয়া যর্দন নদীতে তাঁহা দ্বারা বাপ্তাইজিত হইতে লাগিল” (মার্ক ১:৫ পদ)।

বিকৃত ও অশুদ্ধভাবে ব্যবহার 

বিকৃত ও অশুদ্ধভাবে ব্যবহারের শুরু

৭৫৪ খ্রীষ্টাব্দে পোপ ২য় স্টিফেন (Stephen II) এর ‘ঘোষণা’ দ্বারা বাপ্তিস্মে ‘জল ঢালার’ (Pouring) পদ্ধতির প্রচলন শুরু হয়। জল ঢেলে বাপ্তিস্ম দানের পদ্ধতির প্রচলন শুরু হয়েছিল শুধুমাত্র শারীরিকভাবে অসুস্থ প্রার্থীদের বাপ্তিস্মের ক্ষেত্রে। 

স্পষ্টত এরূপ উদ্দেশ্য বা অভিপ্রায় কিন্তু শুরুতে ছিল না। এই সময় এই ভ্রান্ত ধারণা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল যে, বাপ্তিস্ম হলো পরিত্রাণ লাভের উপায়। এই ভ্রান্ত ধারণা পরবর্তীতে খণ্ডন করা হবে।

‘ছিটানো জলের’ পদ্ধতিকে (Sprinkling) ১৩১১ খ্রীষ্টাব্দে র‌্যাভেনায় অনুষ্ঠিত রোমান ক্যাথলিক মহসভায় Roman Catholic Council of Ravenna ‘আনুষ্ঠানিক’ বিধিরূপে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।

এখন আমি মনে করি কিংবা আপনি কি মনে করেন যে, ঈশ্বর যদি জল ছিটানো বা জল ঢেলে দেবার মাধ্যমে বাপ্তিস্ম হওয়া চাইতেন, তাহলে বাইবেলে সেভাবেই কি দৃষ্টান্ত দিতেন না?

কীভাবে জল ঢেলে বা জল ছিটিয়ে বাপ্তিস্ম দানের পদ্ধতি যীশু খ্রীষ্টের সমাধি চিত্রিত করতে পারে বা প্রকাশ করতে পারে? আপনি কি ধুলোমাটি দিয়ে শুধুমাত্র কপাল ঢেকে কোনো মৃত ব্যক্তিকে সমাধিস্থ করতে পারবেন? আমার মনে হয় না। সমাধি বলতে যা বোঝায়, সেই উদ্দেশ্য কখনোই এভাবে পূরণ হয় না। সমাধির প্রকৃত অর্থ হলো, যে ব্যক্তি মারা যায় তাকে মাটিতে পুঁতে রাখা। মনে রাখবেন, যখন কোনো কিছু মরে থাকে, তাতে পচন ধরে (তীব্র দুর্গন্ধ ছড়ায়)।

বাপ্তিস্ম যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থানও চিত্রায়িত করে। আমার তেমন কোনো ধারণা নেই যে, কীভাবে জল ছিটানো বা জল ঢেলে দেবার মাধ্যমে যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান প্রকাশ হয় বা চিত্রায়িত করে!

যদি আপনি এই রকম শিক্ষা পেয়ে থাকেন, নিজেকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন “এটা কি তাই, যা বাইবেল শিক্ষা দেয় কিংবা এটা কি তাই, যা মানুষ আমাকে শিক্ষা দিচ্ছে?” 

বিকৃত ও অশুদ্ধতার অর্থ প্রকাশ

আমরা প্রমাণ করেছি যে, যা আমাদের পরিত্রাণপ্রাপ্ত করেছে সেই যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যু, সমাধি ও পুনরুত্থানকে বাপ্তিস্ম প্রকাশ বা চিত্রিত করে। জল ছিটানো বা জল ঢালার মাধ্যমে কি যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যু, সমাধি ও পুনরুত্থান প্রকাশ পায়? তাছাড়া এগুলো কি প্রকাশ করছে যে, এদের মাধ্যমেই আমাদের পরিত্রাণ হয়? এগুলো কি আমাদের বলতে পারে যে যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যু, সমাধি ও পুনরুত্থান পরিত্রাণের জন্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়?

এতে কি সেই ইঙ্গিত করছে না যে পুরাতন মনুষ্যের ঐসব (পুরাতন পাপস্বভাব) ঝেড়ে ফেলার কোনো প্রয়োজন নেই? পুরাতন মনুষ্যের (অতীত স্বভাবের) বিষয়গুলো ঝেড়ে ফেলে পরিত্রাণের জন্য প্রয়োজন যীশু খ্রীষ্টের রক্তে পাপ ধৌত করা। একমাত্র তাঁর প্রতি ফিরে আসা (পাপ থেকে দূরে থাকা) এবং তাঁকে আপনার ব্যক্তিগত মুক্তিদাতারূপে গ্রহণের মাধ্যমে আপনি মুক্তি পেতে এবং নতুন জন্ম লাভ করে ঈশ্বরের সন্তান হতে পারেন।

এতে কি আরো এই ইঙ্গিত প্রকাশ পায় যে, আমাদের পাপের জন্য যীশু খ্রীষ্টের ক্রুশে মৃত্যুবরণ করা, কবরপ্রাপ্ত হওয়া এবং আমাদের জন্য মৃত্যুকে জয় করে পুনরুত্থিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না? 

বন্ধু আমাকে বলতে দিন যে ইব্রীয় ৯:২২ পদে বাইবেল কী বলে : “. . রক্ত সেচন ব্যতিরেকে পাপমোচন হয় না ..”

ঈশ্বর চান আমাদের সব পাপ ধুয়ে ফেলার জন্য যেন যীশু খ্রীষ্টের নিষ্কলঙ্ক, পাপবিহীন রক্ত প্রয়োগ হয়। এরা কি তাই বলছে না যে, আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ক্রুশের উপরে মৃত্যুব প্রয়োজন ছিল না? বাইবেল কী বলে! 

“তিনি আমাদের “পাপভার তুলিয়া লইয়া” আপনি নিজ দেহে কাষ্ঠের উপরে বহন করিলেন, যেন আমরা পাপের পক্ষে মরিয়া ধার্র্মিকতার পক্ষে জীবিত হই; “তাঁহারই ক্ষত দ্বারা তোমরা আরোগ্য প্রাপ্ত হইয়াছ” (১ পিতর ২:২৪ পদ)। 

যীশু খ্রীষ্ট মৃত্যু থেকে উঠেননি, এই কথা বলে এরা কি ঈশ্বরের প্রতি তীব্র নিন্দা বা ঠাট্টার সীমারেখা অতিক্রম করে যাচ্ছে না?! ঠিক তাই নয় কি? তাদের কথার চেয়ে তাদের কার্যে তাই প্রবলভাবে প্রকাশ পায়। তারা মুখে কী বলুক বা না বলুক সেটা কোনো বিষয় নয় কিন্তু ‘তাদের বাপ্তিস্ম’ তা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরে। তাদের কার্য আমাদের অন্য রকম গল্প বলে, অন্য রকম সুসমাচার চিত্রায়িত করে, যে বিষয়ে বাইবেল বলে :

“আমার আশ্চর্য বোধ হইতেছে যে, খ্রীষ্টের অনুগ্রহে যিনি তোমাদিগকে আহ্বান করিয়াছেন, তোমরা এত শীঘ্র তাঁহা হইতে অন্যবিধ সুসমাচারের দিকে ফিরিয়া যাইতেছ। তাহা আর কোন সুসমাচার নয়; কেবল এমন কতকগুলি লোক আছে, যাহারা তোমাদিগকে অস্থির করে, এবং খ্রীষ্টের সুসমাচার বিকৃত করিতে চায়। কিন্তু আমরা তোমাদের নিকটে যে সুসমাচার প্রচার করিয়াছি, তাহা ছাড়া অন্য সুসমাচার যদি কেহ প্রচার করেÑ আমরাই করি, কিম্বা স্বর্গ হইতে আগত কোন দূূতই করুক - তবে সে শাপগ্রস্ত হউক” (গালাতীয় ১:৬-৮ পদ)।

কিন্তু সত্যিকার সঠিক সুসমাচার কী? বাইবেল বলে : 

“হে ভ্রাতৃগণ, তোমাদিগকে সেই সুসমাচার জানাইতেছি, যে সুসমাচার তোমাদের নিকট প্রচার করিয়াছি, যাহা তোমরা গ্রহণও করিয়াছ, যাহাতে তোমরা দাঁড়াইয়া আছ; আর তাহারই দ্বারা, আমি তোমাদের কাছে যে কথাতে সুসমাচার প্রচার করিয়াছি, তাহা যদি ধরিয়া রাখ, তবে পরিত্রাণ পাইতেছ; নচেৎ তোমরা বৃথা বিশ্বাসী হইয়াছ। ফলতঃ প্রথম স্থলে আমি তোমাদের কাছে এই শিক্ষা সমর্পণ করিয়াছি, এবং ইহা আপনিও পাইয়াছি যে, শাস্ত্রানুসারে খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য মরিলেন, ও কবর প্রাপ্ত হইলেন, আর শাস্ত্রানুসারে তিনি তৃতীয় দিবসে উত্থাপিত হইয়াছেন”  (১ করিন্থীয় ১৫:১-৪ পদ)। 

সুসমাচার হলো :

১. খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য মরেছেন।
২. তিনি সমাধিস্থ হয়েছেন।
৩. তিনি পুনরায় উঠেছেন।

আপনি বিবেচনা করে দেখুন, জল ঢালা বা জল ছিটানোতে কি তা চিত্রিত হয়? এটি কি তাই যা জগতের অধিকাংশ লোক বলে থাকে, যা আপনাকে স্বর্গে নিয়ে যাবে? স্বর্গে যাওয়ার একমাত্র পথ হলো যীশু খ্রীষ্টকে আপনার ব্যক্তিগত মুক্তিদাতারূপে গ্রহণ করা। বিশ্বাস করা যে তিনি আপনার পাপের জন্য মৃত্যুবরণ করেছেন, সমাধিস্থ হয়েছেন, ঐ সমস্ত পাপ কবরে নিয়ে গিয়েছেন এবং তিনি পুনরায় উত্থিত অর্থাৎ পুনরুজ্জীবিত হয়েছেন। এটা দেখানোর জন্য যে, যারা তাঁকে বিশ্বাস করবে তিনি তাদের সকলের জন্য অনন্ত জীবন নিশ্চিত করেছেন। প্রকাশ করছেন যে যদিও আমরা শারীরিকভাবে মারা যেতে পারি কিন্তু আমরা অনন্তকাল জীবিত থাকব।

তৃতীয় অধ্যায় :

বাপ্তিস্মের সদস্য

শিশু বিশ্বাসী

কীভাবে একজনের বাপ্তিস্ম হওয়া উচিত আজকাল ঠিক এই ধরনের মতভেদের মধ্যে আরেকটি প্রশ্ন হলো, কে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করতে পারে? আমি আপনাকে দেখিয়েছি যে, বাপ্তিস্ম পদ্ধতির বিষয়ে বাইবেল কী বলে।

কে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করতে পারে তা অবশ্যই বাইবেল থেকে প্রমাণ করা সহজ ও সঠিক। পূর্বের যে-কোনো প্রকার ধারণা বা মত পিছনে রেখে দেখুন, ঈশ্বরের বাক্য কী বলে:

“এই যে লোকেরা আমাদেরই ন্যায় পবিত্র আত্মা প্রাপ্ত হইয়াছে কেহ কি জল নিবারণ করিয়া ইহাদের বাপ্তাইজিত হইবার বাধা দিতে পারে?”  প্রেরিত ১০:৪৭ পদ)। 

বাপ্তিস্মের জন্য আগে যা প্রয়োজন

নিঃসন্দেহে বাপ্তিস্মের পূর্বে পবিত্র আত্মা প্রাপ্ত হতে হয়। এই লোকেরা যারা “পবিত্র আত্মা প্রাপ্ত হইয়াছে” প্রথমে পরিত্রাণপ্রাপ্ত হয়েছে Ñ তাদের নতুন জন্ম হয়েছে। তারা প্রথমে যীশু খ্রীষ্টকে মুক্তিদাতারূপে গ্রহণ করেছে :

“কিন্তু যাহারা মাংসের অধীনে থাকে, তাহারা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করিতে পারে না। কিন্তু তোমরা মাংসের অধীনে নও, আত্মার অধীনে রহিয়াছ, যদি বাস্তবিক ঈশ্বরের আত্মা তোমাদিগেতে বাস করেন। কিন্তু খ্রীষ্টের আত্মা যাহার নাই, সে খ্রীষ্টের নয় আর যদি খ্রীষ্ট তোমাদিগেতে থাকেন, তবে দেহ পাপ প্রযুক্ত মৃত বটে, কিন্তু আত্মা ধার্র্মিকতা প্রযুক্ত জীবন” রোমীয় ৮:৮-১০ পদ। 

ঈশ্বরের আত্মা (পবিত্র আত্মা) ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার হৃদয় অন্তঃকরণে আসতে পারেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি তাঁকে আহ্বান বা আমন্ত্রণ করেন। যিনি খ্রীষ্টকে গ্রহণ করছেন তিনি পবিত্র আত্মাকেই গ্রহণ করেছেন।

নপুংসক ও ফিলিপের ঘটনাটি বিবেচনা করুন -

“পরে পথে যাইতে যাইতে তাঁহারা কোন এক জলাশয়ের নিকটে উপস্থিত হইলেন; তখন নপুংসক কহিলেন, এই দেখুন, জল আছে; আমার বাপ্তাইজিত হইবার বাধা কি? 

ফিলিপ কহিলেন, সমস্ত অন্তঃকরণের সহিত যদি বিশ্বাস করেন, তবে হইতে পারেন। তাহাতে তিনি উত্তর করিয়া কহিলেন, যীশু খ্রীষ্ট যে ঈশ্বরের পুত্র, ইহা আমি বিশ্বাস করি। পরে তিনি রথ থামাইতে আজ্ঞা করিলেন, আর ফিলিপ ও নপুংসক উভয়ে জলমধ্যে নামিলেন এবং ফিলিপ তাঁহাকে বাপ্তাইজ করিলেন” (প্রেরিত ৮:৩৬-৩৮ পদ)।

ফিলিপ এখানে বলেছেন যদি তিনি (ঐ নপুংসক) তার হৃদয় মন ও সমস্ত অন্তঃকরণে (১০০%) বিশ্বাস করেন যে, যীশু খ্রীষ্ট ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন, তাহলে তিনি বাপ্তাইজিত হতে পারেন। যদি কোনো ব্যক্তি তার সমস্ত হৃদয় মন ও অন্তঃকরণে বিশ্বাস করেন যে, যীশু খ্রীষ্ট ঈশ্বরের পুত্র তাহলে তিনি তাঁকে তার মুক্তিদাতারূপেই গ্রহণ করেন। কোনো ব্যক্তি যখন তার হৃদয় মন ও অন্তর থেকে বিশ্বাস করেন যে খ্রীষ্ট ঈশ্বরের পুত্র তখন তিনি আর কখনো খ্রীষ্টকে অগ্রাহ্য বা অস্বীকার করতে পারেন না। যদি আপনি বিশ্বাস করেন তাহলে আপনি স্বাভাবিকভাবেই ঐ বিশ্বাস অনুযায়ী কাজ করবেন এবং আপনাকে পরিত্রাণ করতে যীশু খ্রীষ্টকে ডাকবেন।

ফিলিপ বলেনি যে, “যদি আপনি বিশ্বাস করেন তাহলে হয়তো হতে পারে।” এরকম কথা হলে তো বোঝা যেত যে বিশ্বাস হৃদয়/অন্তঃকরণ থেকে না হয়ে তা হতো শুধুমাত্র মানষিক উন্নতি বা মানষিক উপলব্ধির বিষয়।  

কিন্তু বাইবেল বলে যে “. . ভূতেরাও তাহা বিশ্বাস করে এবং ভয়ে কাঁপে।” যীশু খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য মৃত্যুবরণ করেছেন তা জানার চেয়েও তাঁকে গ্রহণ করা হলো আরো অনেক বেশি। আপনার ঐ সমস্ত পাপ পরিষ্কার করার জন্য, আপনার হৃদয় অন্তঃকরণে আসার জন্য আপনাকে অবশ্যই তাঁকে ডাকতে হবে। বিষয়টি জানতে মনে করুন যে, সাবান আপনার হাত পরিষ্কার করতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটি আপনার হাতের ময়লা পরিষ্কারের জন্য ব্যবহৃত হয়। ঠিক সেভাবেই, আপনার সমস্ত পাপ ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করতে যীশু খ্রীষ্টের বহুমূল্য রক্ত কাজে লাগাতে হবে।

“আপনার সমস্ত অন্তঃকরণের সহিত যদি বিশ্বাস করেন!”

“আর সমাজাধ্যক্ষ ক্রীষ্প সমস্ত পরিবারের সহিত প্রভুতে বিশ্বাস করিলেন; এবং করিন্থীয়দের মধ্যে অনেক লোক শুনিয়া বিশ্বাস করিল, ও বাপ্তাইজিত হইল” (প্রেরিত ১৮:৮ পদ)। 

এই করিন্থীয়েরা শুনেছিল যে খ্রীষ্ট ছিলেন যীশু। বিশ্বাস করেছিল যে যীশু হলেন খ্রীষ্ট। আর তারপর বাপ্তাইজিত হয়েছিল। 

ঈশ্বরের অনুগ্রহে, আমি আশা করি আপনি দেখতে পেয়েছেন যে বাপ্তিস্মের প্রার্থী সবসময়ই একজন পরিত্রাণপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছিলেন। বাপ্তিস্মের পূর্বেই তিনি পরিত্রাণপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। আপনি যদি পরিত্রাণপ্রাপ্ত না হয়ে থাকেন, তাহলে বাপ্তিস্ম শুধু আপনার সবকিছু জলে ভিজিয়ে দেবে! প্রকৃত সত্য সম্বন্ধে যদি আপনার অনিশ্চয়তা থাকে, পাঠ করতে থাকুন; ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করুন যেন তিনি আপনার অন্তর খুলে সত্য দেখিয়ে দেন। 

শিশু বাপ্তিস্মে প্রতারণা

শিশু বাপ্তিস্মের উৎপত্তি

খ্রীষ্টিয় ধর্ম বিশ্বাসে এমন কোনো স্থান নেই যেখানে শয়তান তার প্রবঞ্চিত শক্তির ঝাপটা না ফেলেছে। মানুষের স্বর্গে যাবার পথে বাধা দিতে শয়তান সবকিছু করবে। এমনকি যখন মানুষ শিশু থাকে তখন তাদের ধীর গতিতে প্রতারিত করতে শুরু করে। এই সঠিক তথ্য দুটি বিবেচনা করুন।

৩৭০ খ্রীষ্টব্দের পূর্বে ‘শিশু বাপ্তিস্ম’ হওয়ার কোনো নজির নেই। সেই বৎসর প্রথম রোমের সম্রাট ভ্যালেনস (Roman Emperor Valens) জোর করে তার মৃতপ্রায় শিশুপুত্রকে ‘বাপ্তিস্ম’ দেন।

পরবর্তীতে ৪১৬ খ্রীষ্টাব্দে Catholic Council of Melta তে শিশু বাপ্তিস্মের ‘আইন’ তৈরি করা হয়। 

শিশু বাপ্তিস্মের পক্ষে যে কোনো যুক্তি শুধুমাত্র উপরোক্ত বিষয় দুটির জন্য আমার পক্ষে বিশ্বাস করা সম্ভব নয় এমন নয়, অধিকন্তু বাইবেল স্পষ্টভাবে শিক্ষা দেয় যে বাপ্তিস্ম প্রার্থীকে অবশ্যই প্রথমে বিশ্বাস করতে হবে যে যীশুই ঈশ্বরের পুত্র। হৃদয়ে বিশ্বাসের কথা না হয় নাই-বা বললাম, একটি শিশু এমনকি মানসিকভাবে কখনো তা বিশ্বাস করতে পারে না। শিশু বাপ্তিস্মের চিন্তা একেবারে অযৌক্তিক। 

শিশু বাপ্তিস্মের ভয়ানক বিপদ

শিশু বাপ্তিস্মের উপলক্ষে শিশুদের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক। কেবল বাপ্তিস্মের সময় নয় কিন্তু পরবর্তী জীবনের ক্ষেত্রেও। নিচের উদ্ধৃতিটি “বাপ্তিস্মের ধর্মানুষ্ঠান দীক্ষাস্নান এর বিষয়ে সকল                 দের  কি জানা উচিত” নামক একটি লিখিত ছোট প্রচারপত্র থেকে নেওয়া হয়েছে। ইচ্ছকৃতভাবে ফাঁকা জায়গাটিতে মণ্ডলীর নাম উল্লেখ করা হলো না। মনোকষ্টের জন্য তা বাদ দেওয়া হলো। এখানে তারা কী বলেন :

“শিশু-কিশোরদের বাপ্তাইজিত করা হয় যেন তারা ঈশ্বরের দয়া-অনুগ্রহের সুযোগ পেতে পারে, পাপ থেকে মুক্ত হতে পারে। তারা যেন পবিত্র আত্মায় পরিচালিত হতে পারে।”

এটি ভুল বা অযৌক্তিক। প্রথমত, ঈশ্বরের অনুগ্রহের অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে যেমন “অযোগ্য, অনুপযুক্ত হলেও পাওয়া অর্থাৎ পাবার উপযুক্ত না হলেও পাওয়া। কোনো কর্ম বা চেষ্টা ব্যতিরেকে অনুগ্রহে পাওয়া।” আপনার প্রতি এই অনুগ্রহের জন্য আপনাকে আর কিছুই করতে হবে না। আর সেরকম যদি আপনি কিছু করে থাকেন সেটি আপনি আপনার কর্ম দ্বারা অর্জন করে থাকেন। বাপ্তিস্ম কখনোই ঈশ্বরের দয়া-অনুগ্রহ আনতে পারে না। দ্বিতীয়ত, পাপ থেকে মুক্তি আসে শুধু যীশু খ্রীষ্টকে আপনার মুক্তিদাতারূপে গ্রহণের মাধ্যমে। স্মরণ করে দেখুন, কীভাবে বাপ্তিস্ম যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যু হওয়া, কবরস্থ হওয়া ও পুনরুত্থিত হওয়া চিত্রিত করে?

“সকলেই পাপ করিয়াছে আর ঈশ্বরের গৌরববিহীন হইয়াছে, তাঁহারই অনুগ্রহে খ্রীষ্ট যীশুতে যে মুক্তি পাওয়া যায় তাহার দ্বারা বিনামূল্যে ধার্মিক-গণ্য হয়” (রোমীয় ৩:২৩-২৪ পদ)। 

এই কারণে :

        ধার্মিক গণিত হলো = নির্দোষ বলে ঘোষণা করা।
        বিনামূল্যে হলো      = কর্ম ব্যতিরেকে অর্থাৎ আয়। না করেই পাওয়া
        অনুগ্রহে হলো   = অনর্জিত লাভ অর্থাৎ কাজ। না করে পাওয়া
        মুক্তি হলো   = পাপ থেকে মুক্তি।
        খ্রীষ্ট যীশুতে হলো  = তাঁর মাধ্যমে, বাপ্তিস্মে নয়!

পরিশেষে, আমরা দেখেছি যে, পবিত্র আত্মা ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণ করা যায় না যতক্ষণ পর্যন্ত না কোনো ব্যক্তি পরিত্রাণপ্রাপ্ত হয়।

অনেকই বলে : “আমি জানি আমি স্বর্গে যাচ্ছি কারণ আমি শিশু অবস্থায় বাপ্তিস্ম নিয়েছি।” শূকরের গাঁ ধোয়ার মতন! শয়তান তখনই প্রতারণায় জয়ী হয়েছে, যখন ঐ ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে, বাপ্তিস্ম গ্রহণের ফলে তার মুক্তি হয়েছে। শিশুবাপ্তিস্ম বহু লোকেকে তাদের বাপ্তিস্মসহ নরকে নিয়ে যাচ্ছে। বাইবেলে একজনকেও পাই না যারা বাপ্তিস্মের কারণে স্বর্গে যেতে পেরেছে বলে দাবি করে। তারা সব সময় বলে থাকে যে, ঈশ্বরের দয়া-অনুগ্রহেই তারা স্বর্গে যাওয়ার যোগ্য হয়েছে, কারণ তারা জানে যীশু খ্রীষ্টের দ্বারা মুক্তি পাওয়া যায়, এর সঙ্গে অন্য আর কিছু যোগ বা বিয়োগ করে নয়। সেই বিকৃত ছোট প্রচারপত্রে, ঐ একই বিকৃত পৃষ্ঠা পাঠ করে দেখা যায় : 

“বাপ্তিস্ম হলো আমাদের জন্য ঈশ্বরের ভালোবাসার দান। তাই যদিও শিশুরা বলতে পারে না যে, তারা ঈশ্বরকে গ্রহণ করেছে, তবুও তাদের বাপ্তিস্ম দেওয়া হয়। শিশু ও কিশোর সহ যারা সাক্রামেন্ট (Sacrament) গ্রহণ করে - ঈশ্বর তাদের সবাইকে সেই ভালোবাসার দান দেন।”

সে কি?! প্রথমে তারা বলছে আমাদের প্রতি বাপ্তিস্ম হলো ঈশ্বরের ভালোবাসার দান কিন্তু বাইবেল বলে : 

“কারণ ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাকে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়” (যোহন ৩:১৬ পদ)।

“কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহ-দান আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টেতে অনন্ত জীবন” (রোমীয় ৬:২৩ পদ)। 

“আর সেই সাক্ষ্য এই যে, ঈশ্বর আমাদিগকে অনন্ত জীবন দিয়াছেন এবং সেই জীবন তাঁহার পুত্রে আছে” (১ যোহন ৫:১১ পদ)। 

যীশু খ্রীষ্ট হলেন আমাদের জন্য ঈশ্বরের ভালোবাসার দান! ঈশ্বরের ভালোবাসার দানরূপে বাপ্তিস্মকে উল্লেখ করে বাইবেলের কোথাও এমন কোনো পদ কি আপনি দেখেছেন? ঈশ্বর আমাদের যে অনন্ত জীবন দিয়েছেন তা যীশু খ্রীষ্টেতে, বাপ্তিস্মে নয়।

দ্বিতীয়ত, তারা বলেন যে, শিশুরা বলতে পারে না তারা ঈশ্বরকে গ্রহণ করেছে। আর তখন তারা বলে যে, ঈশ্বরের ভালোবাসার দান সবাইকে দান করেন যারা সাক্রামেন্ট গ্রহণ করে। আমি হয়তো জগতের দৃষ্টিতে বুদ্ধিমান না কিন্তু নিশ্চিত জানি শিশুরা ঈশ্বরকে গ্রহণ করতে পারে না, কারণ বাইবেল বলে আপনাকে পরিত্রাণ পেতে হলে অবশ্যই আপনার পাপেপূর্ণ অবস্থা স্বীকার করে, অনুতপ্ত হয়ে ঐ অবস্থা থেকে ফিরে আসতে হবে এবং প্রভুকে ডাকতে হবে আপনার মুক্তির জন্য। আপনি কি কখনো দেখেছেন শিশুরা তা করতে পেরেছে?

মূলত শিশু বাপ্তিস্ম ছিল মানুষের দ্বারা একটি কল্পিত রচনা। এটি শিশুদের প্রতারণা করা ছাড়া আর কিছুই করে না। যদি পরিত্রাণের জন্য বাপ্তিস্ম এতই গুরুত্বপূর্ণ হয়, যদি একজনের নরকে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে বাপ্তিস্ম এতই গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে পৌল কি বলেননি? 

“কারণ খ্রীষ্ট আমাকে বাপ্তাইজ করিবার জন্য প্রেরণ করেন নাই, কিন্তু সুসমাচার প্রচার করিতে” (১ করিন্থীয় ১:১৭ পদ)।

কারণ : 

“আমি খ্রীষ্টের সুসমাচার সম্বন্ধে লজ্জিত নহি; কারণ উহা প্রত্যেক বিশ্বাসীর পক্ষে পরিত্রাণার্থে ঈশ্বরের শক্তি . .” (রোমীয় ১:১৬ পদ)।

চতুর্থ অধ্যায় :

বাপ্তিস্মের উদ্দেশ্য 

ঈশ্বরের আদেশের বাধ্য হওয়া

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে একক বা একটি কারণের জন্য একজনকে বাপ্তাইজিত হওয়া উচিত সেটি হলো প্রভু যীশু খ্রীষ্টের আদেশের বাধ্য হওয়া, তাঁর পরিচয়ে পরিচিত হওয়া।

“অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর; আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি, সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও। আর দেখ আমিই যুগান্ত পর্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি” (মথি ২৮:১৯-২০ পদ)।

যোহন ১৪:১৫ পদে প্রভু আরো বলেছেন : “তোমরা যদি আমাকে প্রেম কর, তবে আমার আজ্ঞা সকল পালন করিবে”

আমি পূর্বেই বলেছি যে, বাইবেল প্রকাশ করে বাপ্তিস্ম হলো “আভ্যন্তরীণ বা অন্তরের উপলব্ধি ও অভিজ্ঞতার বাহ্যিক প্রকাশ।” যেমন শাস্ত্রে উল্লেখ আছে প্রভু যীশু খ্রীষ্ট ঈশ্বরের ইচ্ছার বাধ্য হয়েছিলেন :

“তখন যীশু বাপ্তাইজিত হইবার জন্য গালীল হইতে যর্দনে যোহনের নিকট আসিলেন। কিন্তু যোহন তাঁহাকে বারণ করিলেন, বলিলেন, আপনার দ্বারা আমারই বাপ্তাইজিত হওয়া আবশ্যক, আর আপনি আমার কাছে আসিতেছেন? আর যীশু তাঁহাকে কহিলেন, এখন সম্মত হও, কেননা এইরূপে সমস্ত ধার্মিকতা পরিপূর্ণ করা আমাদের পক্ষে উপযুক্ত। তখন তিনি তাঁহার প্রতি সম্মত হইলেন। আর যীশু, যখন বাপ্তাইজিত হইয়া অমনি জল হইতে উঠিলেন; . . আর দেখ স্বর্গ হইতে এই বাণী হইল, ‘ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, ইহাঁতেই আমি প্রীত” (মথি ৩:১৩-১৭ পদ)। 

যীশু যোহন বাপ্তাইজকের কাছে এলেন নিজে বাপ্তাইজিত হয়ে প্রকাশ করতে যে, তাঁর দ্বারা সমস্ত ধার্র্মিকতা পরিপূর্ণ হতে চলছে, আর তিনি যা করতে যাচ্ছেন, তা দেখাতে। এতে চিত্রিত হয় বা প্রকাশ হয় যে, তাঁর দ্বারা আমরা পরিত্রাণ পাব। এটি যীশুর পুরাতন মনুষ্য (পাপস্বভাব) পরিত্যাগ করা চিত্রিত করে না, যদিও তিনি পূর্ব থেকেই পাপবিহীন ছিলেন। এতে চিত্রিত হয়েছে যে আমাদের সমস্ত পাপ তাঁর উপর ন্যস্ত বা সমর্পিত হয়েছে। সেই সঙ্গে এতে আমাদের পরিত্রাণের জন্য তাঁর মৃত্যু, সমাধি ও পুনরুত্থানও চিত্রিত বা প্রকাশ হয়েছে Ñ যাতে সমস্ত ধার্মিকতা পরিপূর্র্ণ হয়।

এতে তাঁর মাধ্যমে আমাদের জন্য মৃত্যুকে জয় করা চিত্রিত বা প্রকাশিত হয়েছে। দেখানো হয়েছে যে, যদিও আমরা শারীরিকভাবে মৃত্যুবরণ করতে পারি কিন্তু আমরা অনন্তকাল বেঁচে থাকব।

ঈশ্বরের মণ্ডলীতে সদস্য ভুক্ত

পরিত্রাণ ঈশ্বরের দয়া ও অনুগ্রহের দ্বারা হয়। পরিত্রাণ আমাদেরকে খ্রীষ্টিয়ান করে তুলে, একজন নতুন জন্মের বিশ্বাসী করে রাখে। বাপ্তিস্ম ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতায়, আমাদের কোনো ম-লীর সদস্য করে।

“তখন যাহারা তাঁহার কথা গ্রাহ্য করিল, তাহারা বাপ্তাইজিত হইল; তাহাতে সেই দিন কমবেশ তিন হাজার লোক তাঁহাদের সহিত সংযুক্ত হইল” (প্রেরিত ২:৪১ পদ)।   

তাদের মধ্যে যারা তার কথা গ্রহণ করল তারা পরিত্রাণ পেল। তারা বাপ্তাইজিত হলো; কীসের দ্বারা তাদের পরিত্রাণ হয়েছে, সেই বিষয়টি তারা প্রকাশ করল। তারা স্থানীয় বিশ্বাসীদের সঙ্গে সংযুক্ত হলো, একত্রিত হলো এবং একটি ম-লীর সদস্যভুক্ত হলো।

১ করিস্থীয় ১২:১৩ পদটি বিবেচনা করুন। “ফলতঃ আমরা কি যিহূদী কি গ্রীক, কি দাস কি স্বাধীন, সকলেই এক দেহ হইবার জন্য একই আত্মাতে বাপ্তাইজিত হইয়াছি, এবং সকলেই এক আত্মা হইতে পায়িত হইয়াছি”

বাপ্তিস্মের দ্বারা আমরা একটি মণ্ডলীতে যুক্ত হই। মণ্ডলী হলো প্রভুর কার্য এগিয়ে নেবার জন্য বাপ্তিস্মপ্রাপ্ত বিশ্বাসীদের সমবেত একটি দল (একটি দেহ)।

আবারো বলছি, ঈশ্বরের সন্তান হবার জন্য পরিত্রাণের মাধ্যমে আমরা তাঁর পরিবারে জন্মগ্রহণ করি; আর বাপ্তিস্মের মাধ্যমে আমরা বিশ্বাসী সমাবেশের সদস্য হই। 

আমরা শাস্ত্রের আরেকটি অংশ দেখি :

“আর এখন উহার প্রতিরূপ বাপ্তিস্ম অর্থাৎ মাংসের মালিন্যত্যাগ নয়, কিন্তু ঈশ্বরের নিকটে সৎসংবেদের নিবেদন - তাহাই যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান দ্বারা তোমাদিগকে পরিত্রাণ করে” (১ পিতর ৩:২১ পদ)। 

এই কারণে :

উহার প্রতিরূপ হলো = প্রতীকস্বরূপ, সাদৃশ্যযুক্ত।
নিবেদন হলো = সাড়া দেওয়া।

পদটিতে ‘মাংসের মালিন্যত্যাগ নয়’ বলেছে। বন্ধুগণ মাংসের মালিন্য হলো পাপ। একমাত্র যীশু পারেন আমাদের ঐ পাপ থেকে নির্র্দোষ করতে। বাপ্তিস্ম হলো সেই পরিবর্তনের একটি উত্তর বা সাড়া দেওয়া, যা পরিত্রাণের কারণে যীশু আমাদের জীবনে সাধন করেছেন। ইতোমধ্যে যে পরিবর্তন অর্জিত হয়েছে এটি হলো তার একটি প্রতিকৃতি, একটি নিদর্শন।

পঞ্চম অধ্যায় :

বাপ্তিস্ম সম্পর্কে অসত্য বিষয়

শুরুতে, আমি এ বিষয়টির উপর জোর দিতে চাই যে, কিছু লোক আছেন যারা ভ্রান্ত মতবাদ শিক্ষা দেন। সেসব ভ্রান্ত মতবাদ-এ অধ্যায়ে যুক্তিসহ খণ্ডন করা হবে। এই ধরনের ভ্রান্ত মতবাদে শিক্ষা দেওয়া হয় যে, বাপ্তিস্ম দ্বারা পরিত্রাণ হয় (যা আদৌ পরিত্রাণ নয়)। মূলত তাদের শিক্ষা হলো যে, যীশু খ্রীষ্ট তাঁর নিজের দ্বারা আপনাকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্রাণ করতে পারেন না।

এই অধ্যায়ের উদ্দেশ্য হলো কেন নিঃসন্দেহে বাপ্তিস্মের অসত্যগুলো মিথ্যা, তা ব্যাখ্যা করা। অন্য ‘মণ্ডলীদের’ নিয়ে ঠাট্টা-তামাসা করার উদ্দেশ্য আমার নয়। আমার উদ্দেশ্য হলো প্রকৃত সত্য বিষয়গুলোকে স্পষ্ট ও অল্পকথায় বলা। যদি আলোচনার এই বিষয়ে আপনার কোনো সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে এ সমস্যা আপনার সঙ্গে আমার নয় কিন্তু এই সমস্যা ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে আপনার। এই বিষয়ে আপনি বরং ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলুন। 

১ নং অসত্য : বাপ্তিস্ম হলো নতুন জন্ম।

ভুল, অযৌক্তিক কথা। নতুন জন্ম হলো পুনর্জন্ম। আর বাপ্তিস্ম সেই নতুন জন্ম হওয়া নয়। 

ঈশ্বরের বাক্য বলে : “কিন্তু যত লোক তাঁহাকে গ্রহণ করিল, সেই সকলকে, যাহারা তাঁহার নামে বিশ্বাস করে, তাহাদিগকে, তিনি ঈশ্বরের সন্তান হইবার ক্ষমতা দিলেন। তাহারা রক্ত হইতে নয়, মাংসের ইচ্ছা হইতে নয়, মানুষের ইচ্ছা হইতেও নয়, কিন্তু ঈশ্বর হইতে জাত” (যোহন ১:১২-১৩ পদ)। 

অনেকেই যেমন তাঁকে গ্রহণ করেছিল, তেমন অনেকেই সেইরূপভাবে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করেনি। ঈশ্বরের সন্তান হওয়া হলো ঈশ্বরের পরিবারের অংশীদার হওয়া, ঈশ্বরের একটি শিশু হওয়া। 

যাদের জন্ম হয়েছিল :

        রক্ত হইতে নয়          = অর্থাৎ মানবীয় বংশকুলে নয়
        মাংসের ইচ্ছা হইতে নয়      = অর্থাৎ কর্মের মাধ্যমে নয়
        মানুষের ইচ্ছা হইতে নয়      = অর্থাৎ পালক পুরোহিত পোপের মাধ্যমে নয়

হয়তো আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে, আমরা কোন্ পরিবারের, কিন্তু তাতে কিছু যায়-আসে না। রাজকীয় বা যাজকীয় পরিবার দিয়ে বিচার করা যাবে না, কারণ এই জন্ম রক্ত হতে নয়। এই রকম হওয়া কোনো পালক, পোপ বা পুরোহিতের কোনো কর্ম বা ঘোষণায় নয়। এরা কখনো আপনাকে একজন নতুন জন্মপ্রাপ্ত ঈশ্বরের সন্তান করতে পারেন না বা সেরকম কোনো ঘোষণা দিতে পারেন না।

বাইবেল বলে, কিন্তু ঈশ্বর হইতে। যার অর্থ হলো নতুন জন্ম অবশ্যই ঈশ্বরের নিয়মানুসারে হতে হবে। নতুন জন্ম বিষয়ে তাঁর পরিকল্পনা খুবই সহজ সরল। যীশু খ্রীষ্টকে মুক্তিদাতারূপে গ্রহণের মাধ্যমে আপনার পুনর্জন্ম হয়।

এই শর্ত বা চুক্তি সর্বশক্তিমান ঈশ্বর নির্ধারণ করেছেন। আপনি এখানে বসে ঈশ্বরের অস্তিত্বকে প্রত্যাখান করতে পারেন কিন্তু তারপরও এই শর্ত বা চুক্তি বলবৎ আছে। যখনই আপনি মারা যাচ্ছেন আর অনন্তের পথে পা বাড়াচ্ছেন, তখনই জানতে পারবেন যে ঈশ্বরের সেই শর্ত বা চুক্তি আপনার প্রতিও প্রয়োগ হতে শুরু করছে। আর সেটি কি স্বর্গ কিংবা নরকে হবে, সেটা নির্ভর করছে আপনার উপর!

২ নং অসত্য : বাপ্তিস্ম পাপের অপরাধ ধুয়ে ফেলে।

ভুল, অযৌক্তিক কথা। বাইবেল কখনো বলে না বাপ্তিস্ম কোনো কিছু মুছে ফেলে। বাপ্তিস্ম শুধু চিত্র দ্বারা প্রকাশিত, একটি প্রতীক। 

বাইবেল বলে : “যিনি বিশ্বস্ত সাক্ষী, মৃতগণের মধ্যে প্রথমজাত ও পৃথিবীর রাজাদের কর্তা, সেই যীশু খ্রীষ্ট হইতে, অনুগ্রহ ও শান্তি তোমাদের প্রতি বর্তুক। যিনি আমাদিগকে প্রেম করেন, ও নিজ রক্তে আমাদের পাপ হইতে আমাদিগকে ধৌত করিয়াছেন” (প্রকাশিত বাক্য ১:৫ পদ)।  

যীশু খ্রীষ্ট আমাদের পাপের শাস্তির দায় মুছে দিয়েছেন কিন্তু তারপরও হয়তো বা আমরা পাপ করতে পারি। সেজন্য, যখন তিনি আমাদের পাপের জন্য মরেছেন - তিনি আমাদের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সব পাপের জন্যই মরেছেন। 

বাপ্তিস্মের জলে কি পাপ ধুয়ে ফেলা হয়েছে? না, কখনো নয়! বাপ্তিস্মেই কি সবকিছু? না, কখনো নয়! কিন্তু তাঁর নিজের রক্তে-ই! 

বাইবেল বলে : “তোমরা কেহ কেহ সেই প্রকার লোক ছিলে; কিন্তু তোমরা প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামে ও আমাদের ঈশ্বরের আত্মায় আপনাদিগকে ধৌত করিয়াছ, পবিত্রীকৃত হইয়াছ, ধার্মিক গণিত হইয়াছ” (১ করিন্থীয় ৬:১১ পদ)। 

বাইবেল অবশ্য রক্তের বিষয়ে আরো বলে :

        “. . তিনি নিজ রক্ত দ্বারা ক্রয় করিয়াছেন . .” (প্রেরিত ২০:২৮ পদ)।
        “. . তাঁহার রক্তে যখন ধার্মিক গণ্য হইয়াছি . .” (রোমীয় ৫:৯ পদ)। 
        “. . তাঁহার রক্ত দ্বারা মুক্তি . .”  (ইফিষীয় ১:৭ পদ)।
        “. . খ্রীষ্টের রক্ত দ্বারা নিকটবর্ত্তী হইয়াছি . .” (ইফিষীয় ২:১৩ পদ)।

৩ নং অসত্য : বাপ্তিস্ম আমাদের মৃত্যুর প্রভাব থেকে মুক্তি দেয় ও অনন্ত জীবনের প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। 

ভুল, অযৌক্তিক কথা। বাইবেল বলে, যীশু খ্রীষ্ট আমাদের মৃত্যু থেকে মুক্ত করেছেন, পাঠ করুন . .  

“সেই সাক্ষ্য এই যে, ঈশ্বর আমাদিগকে অনন্ত জীবন দিয়াছেন এবং সেই জীবন তাঁহার পুত্রে আছে। পুত্রকে যে পাইয়াছে, সে সেই জীবন পাইয়াছে; ঈশ্বরের পুত্রকে যে পায় নাই, সে সেই জীবন পায় নাই” (১ যোহন ৫:১১-১২ পদ)।

ঈশ্বর আমাদের অনন্ত জীবন দিয়েছেন; এই অনন্ত জীবন দিয়েছেন গ্রহণের জন্য। কিন্তু এই জীবন আছে যীশু খ্রীষ্টে। যথাযথভাবে এই অনন্ত জীবন পাবার জন্য আপনাকে অবশ্যই যীশু খ্রীষ্টকে আপনার মুক্তিদাতারূপে গ্রহণ করতে হবে। বাপ্তিস্মে অনন্ত জীবন হয় না।

যীশু খ্রীষ্ট, আমাদের প্রভু বলেন : “সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে আমার উপর বিশ্বাস করিয়াছে সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে” (যোহন ৬:৪৭ পদ)।

আমাদের প্রভু কি বলেছেন, “যে বিশ্বাস করে আর বাপ্তাইজিত হয় . .”?  - না, তিনি সেই কথা বলেননি!

এই বিষয়ে প্রভু যা বুঝিয়েছেন, তাই বলেছেন এবং যা বলেছেন, তাই বুঝিয়েছেন।

প্রভু যীশু খ্রীষ্ট আরো বলেছেন : “. . আমিই পথ ও সত্য ও জীবন; আমা দিয়া না আসিলে কেহ পিতার নিকটে আইসে না” (যোহন ১৪:৬ পদ)। 

৪ নং অসত্য : পাপ থেকে মুক্তির জন্য আপনাকে অবশ্যই বাপ্তিস্ম নিতে হবে।

ভুল, অযৌক্তিক কথা। প্রথমত, এই ধারণার জন্য যে শাস্ত্রাংশ ‘লিখিত প্রমাণ’ হিসাবে ব্যবহৃত হয়, আসুন আমরা তার উপর একবার চোখ বুলাই।

“পিতর তাহাদিগকে কহিলেন, মন ফিরাও এবং তোমরা, প্রত্যেক জন তোমাদের পাপমোচনের নিমিত্ত যীশু খ্রীষ্টের নামে বাপ্তাইজিত হও; তাহা হইলে পবিত্র আত্মারূপ দান প্রাপ্ত হইবে” (প্রেরিত ২:৩৮ পদ)। 

        প্রথমত, . . ‘নিমিত্ত’ কথাটির অর্থ ‘এই উদ্দেশ্যে’ করা যেতে পারে।
        দ্বিতীয়ত, . . নিমিত্ত’ কথাটির অর্থ ‘এই কারণে বা এই জন্যে’ করা যেতে পারে। 

আমরা দেখি যে ঐ উভয় অর্থই একটি একক পদে বোঝানো হয়েছে। যীশুর দ্বারা কুষ্ঠ রোগে পূর্ণ রোগীটির সুস্থ হওয়ার সেই অংশটি লক্ষ্য করুন।

“তখন তিনি হাত বাড়াইয়া তাহাকে স্পর্শ করিলেন, কহিলেন, আমার ইচ্ছা, তুমি শুচিকৃত হও; আর তখনই তাহার কুষ্ঠ চলিয়া গেল। পরে তিনি তাহাকে আজ্ঞা দিলেন, এই কথা কাহাকেও বলিও না, কিন্তু যাজকের নিকটে গিয়া আপনাকে দেখাও, এবং তাহাদের কাছে সাক্ষ্য দিবার জন্য তোমার শুচিতা-লাভের নিমিত্ত মোশির আজ্ঞানুসারে নৈবেদ্য উৎসর্গ কর” (লূক ৫:১৩-১৪ পদ)।

আজকের দিনে ঈশ্বরের বাক্যে ব্যবহৃত শব্দগুলোর অর্থ যেভাবে করা হয় তা বাদ দিয়ে ঐসব শব্দ বা অক্ষরগুলোর ঈশ্বর যে অর্থ করেন, তার প্রতি মনোনিবেশ করে সত্যিকারভাবে কীভাবে আপনি বাইবেল অধ্যয়ন করবেন Ñ এই অংশটি সত্যই তার একটি সুন্দর উদাহরণ। 

প্রথমবারের মতো ১৪ পদে জন্য শব্দটি ‘এই উদ্দেশ্যে’ বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে। ‘তাহাদের কাছে সাক্ষ্য দিবার জন্য’ প্রভু লোকটিকে যাজকের কাছে গিয়ে নিজেকে দেখাতে বলেছেন। আমরা দেখতে পাই যে, এখানে জন্য শব্দটি ‘এই উদ্দেশ্যে’ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। তাদের কাছে সাক্ষ্য দেবার উদ্দেশ্যে (প্রদর্শন করতে) প্রভু তাকে যাজকদের কাছে গিয়ে নিজেকে দেখাতে বলেছেন। গ্রিক শব্দ সাক্ষ্যের অর্থ ব্যাখ্যা করা হয়েছে ‘সাক্ষ্য প্রদানকারী অথবা সাক্ষ্য প্রমাণ’ রূপে।

দ্বিতীয়বারের মতো ১৪ পদে নিমিত্ত শব্দটি ‘এই কারণে’ বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রভু লোকটিকে যাজকের কাছে যেতে এবং তার শুচিতার কারণে তাকে নৈবেদ্য উৎসর্গ করতে বলেছেন। ১৩ পদে লেখা আছে “আর তখনই তাহার কুষ্ঠ চলিয়া গেল।” সুতরাং আমরা দেখতে পাই যে প্রভু তার শুচি হওয়ার কারণে তাকে নৈবেদ্য উৎসর্গ করতে বলেছেন। লোকটিকে শুচি হওয়ার জন্যে (উদ্দেশ্যে) নৈবেদ্য উৎসর্গ করতে বলা হয়নি, কারণ সে ইতোমধ্যেই শুচিকৃত হয়েছিল। এখানে বিষয়টি লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে, যীশু লোকটিকে যাজকের নিকটে প্রেরণ করলেন, কারণ ব্যবস্থানুযায়ী কেবলমাত্র একজন যাজকই এক ব্যক্তিকে শুচি বা অশুচি বলে ঘোষণা দিতে পারতেন।

বর্তমানে প্রচলিত ভাষায় আজ আমরা যেসব শব্দের সঙ্গে পরিচিত, তা ব্যবহার করে এ বিষয়টি আরো বিষদভাবে বোঝানো যেতে পারে : 

আমরা যখন বলি একজনকে খুনের নিমিত্ত জেলে রাখা হয়েছে। আমরা এর অর্থ ‘খুন করার উদ্দেশ্যে’ করি না, কিন্তু আমরা আসলে ‘খুনের কারণে’ কথাটা বুঝি।

সুতরাং আমরা প্রেরিত ২:৩৮ পদ সম্পর্কে এ উপসংহারে আসতে পারি যে ‘পাপমোচনের নিমিত্ত’ এর অর্থ ‘পাপমোচনের কারণে।’ যদি ‘পাপমোচনের উদ্দেশ্যে’ বলি, তাহলে আমাদের ঈশ্বরের বাক্যকে অস্বীকার করা হবে, যেহেতু বাইবেল একমাত্র যীশু খ্রীষ্টের রক্তে পাপমোচন করার কথা বলে।

উপসংহার

বাপ্তিস্ম হলো যা আমাদের পরিত্রাণ করেছে সেই যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যু, সমাধি এবং পুনরুত্থানের সহজ সরল চিত্র। পরিত্রাণ এমন একটি বিষয় নয় যে, আপনি কোনো কিছু করার মাধ্যমে তা অর্জন করেন; এটি এমন একটি বিষয় যা আপনি গ্রহণের মাধ্যমে পেতে পারেন। যা-কিছু করার তা প্রায় দুই হাজার বৎসর পূর্বে কালভেরিতে ক্রুশের উপর যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমেই করা হয়েছে।

“কেননা অনুগ্রহেই, বিশ্বাস দ্বারা তোমরা পরিত্রাণ পাইয়াছ; এবং ইহা তোমাদের হইতে হয় নাই, ঈশ্বরেরই দান; তাহা কর্মের নয় যেন কেহ শ্লাঘা না করে” (ইফিষীয় ২:৮,৯ পদ)।

পরিত্রাণ বাপ্তিস্মে নয় কিন্তু যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে হয় Ñ আমাদের মুক্তিদাতা যীশু খ্রীষ্ট, বাপ্তিস্ম আমাদের মুক্তিদাতা নয়।

প্রিয় বন্ধু, ঈশ্বর ইতোমধ্যে যা-কিছুই করেছেন তার সঙ্গে আর অন্যকিছু যোগ করার চেষ্টা করবেন না। যদি আপনি এর সঙ্গে কিছু যোগ দেবার চেষ্টা করেন, তা আপনার ‘নিজের দ্বারা’ হলো; আর আপনার নিজের দ্বারা বা অন্য কোনো কিছুতে আপনার পরিত্রাণ হয় না। ঈশ্বর সকল উপায়ে, সম্পূর্ণ নিজের দ্বারা, সম্পূর্ণভাবে রক্ষা করেছেন। যদি তিনি তা না করতে পারতেন তবে তিনি মহান ঈশ্বর হতে পারতেন না, পারতেন কি?

কোনো কিছু যোগ দেওয়া এবং কিছু বাদ দেওয়া ব্যতিরেকেই পরিত্রাণ হয় যীশু খ্রীষ্টেই। এর সঙ্গে আর কোনো কিছু যোগ করে আপনি পরিত্রাণ পেতে পারেন না। এর থেকে কিছু বাদ দিয়েও আপনি পরিত্রাণ পেতে পারেন না।

অপ্রস্তুতভাবে অনন্তের পথে পা বাড়াবেন না; একবার আপনার মৃত্যু হলে খুবই দেরি হয়ে যাবে। ঈশ্বরের কাছে আরেকটি দিনের সুযোগ নেবেন না। তাঁর অমৃত দয়া-অনুগ্রহ আহ্বান করুন। আপনার পরিত্রাণের জন্য তাঁকে ডাকুন। আপনি তাঁর কাছে আসবেন, এই আশায় তিনি আপনার জন্য অপেক্ষা করে আছেন।

“যাচ্ঞাা কর, তোমাদিগকে দেওয়া যাইবে; অন্বেষণ কর, পাইবে, দ্বারে আঘাত কর, তোমাদের জন্য খুলিয়া দেওয়া যাইবে” (মথি ৭:৭ পদ)। 

Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?