বড়দিনে আপনার প্রতিক্রিয়াটা কী?
বড়দিনে সত্যিকারের আনন্দের বিষয় হলো যে, দু’হাজার বছর আগে বৈলেহমে শিশু যীশু জন্মগ্রহণ করেছেন।
আমরা যখন যীশুর জন্মের সেই ঘটনা পাঠ করি, তখন আমাদের মধ্যে তিনটি বিষয় প্রকাশ পায়।
প্রথম বিষয়টা হলো,
যোষেফ গোপনে মরিয়মকে ছেড়ে দিতে চেয়েছিল।
যোষেফ ও মরিয়ম একটা নিরাপদ আর সুন্দর স্থান খুঁজে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছিলেন যেখানে শিশু জন্মগ্রহন করতে পারেন আর সেখানে পান্তশালার মালিকের একটা প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায়।
পান্তশালার মালিকের মনে যোষেফ/মরিয়মের সাথে কোনো শত্রুতা ছিল না তারা তাদের কোনো রিরোধিতা করেনি, কিন্তু পান্তশালাগুলো ছিল অত্যন্ত ভীর, অনেক চাপ।
পান্তশালাগুলো/হোটেলগুলো এতোটাই চাপে ছিল যে, যোষেফ/মরিয়মের জন্য তারা কিছুই করতে পারছিল না।
এই হলো সেরকমই একটা প্রতিক্রিয়া বা মনোভাব যা আজ কোটি কোটি মানুষের তাই হচ্ছে।
বৈথলেহমের পান্তশালার মালিকের মতো আজও খ্রীষ্টের জন্য স্থান দিতে পারছে না।
মানুষের হৃদয়ে সব স্থানে গাদিগাদি স্বার্থের আগ্রহটাই বেশী দেখা যায়।
এই না যে তারা নিজেদেরকে নাস্তিক বলে পরিচয় দেয়, এমনকি তারা যীশুর প্রকাশ্যে বিরোধিতা করার স্পর্ধাও তারা দেখায় নাই।
আজ মানুষের প্রতিক্রিয়া অর্থাৎ সমস্ত বোধ, সার্বক্ষণিক অনুভূতি হলো খ্রীষ্টবিহীন জীবনে থাকা।
বিদ্বেষ/বিরোধী মনোভাব সম্পন্ন।
হেরোদ রাজাও অন্য আরেক ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল।
পণ্ডিতব্যক্তিরা যখন “যিহূদীদের রাজা”-র খোঁজ করতে যিরূশালেমে আসে তখন হেরোদ ঠিকই আগ্রহ দেখায়,
কিন্তু এর পরে হেরোদের আসল প্রতিক্রিয়াটা ছিল শত্রুতা।
হেরোদ রাগে ফেটে পড়লো।
“তাকে ধ্বংশ কর, মায়ের কোলে থাকতে এখনই তাকে শেষ কর”
তার এই রাগত/হিংসাত্মক আর ইর্ষান্বিত পাগলামীতে তিনি বৈথলহমে দুই বছর পর্যন্ত সমস্ত ছেলে শিশুদের হত্যা করতে আদেশ দিলেন।
মথি ২:১৬ পদে এমন লেখা আছে যে, . .
হেরোদ যখন দেখলেন যে সেই পণ্ডিতেরা তার আদেশ অমান্য করে চলে গেছে তখন তিনি ক্ষেপে উঠলেন ও সৈন্য পাঠিয়ে বৈৎলেহমে ও তার আশপাশের অঞ্চলে দু’বছর ও তার কম বয়সের যত ছেলে ছিল তাদের সবাইকে হত্যা করালো, কারণ সেই পণ্ডিতেরা হেরদকে বলেছিল যে দু’বছর আগে তাঁরা সেই তারাটি প্রথম দেখতে পায়।
এই ধরণের শিশুহত্যা চালিয়েছে যেন নবজাতকেরা ধ্বংশ হয়, সেই নিশ্চিয়তা হওয়ার জন্য।
এই বিদ্বেষ আর এই শত্রুভাআপন্ন প্রতিক্রিয়া দিনেদিনে বৃদ্ধি পেয়েছে, ধীরে ধীরে চলতেই থাকছে যতক্ষণ না একটা দিনে যীশু লোকটির প্রতি সমস্ত মাতাল/উচ্ছৃঙ্খল/হিংস্রদের প্রচণ্ড গর্জন/চিৎকারে বলেছে . ,
“উহাকে ক্রুশে দেও! উহাকে ক্রুশে দাও” মথি ২৭:২২-২৬ পদ
জগতে আজও এই চিৎকার এখনো হচ্ছে।
এই জগতের লক্ষ্য হলো খ্রীষ্টের প্রতি, সেই অসাধারণ, অদ্বীতিয় ঈশ্বর-পুত্র আর মসিহের প্রতি।
যীশু যদি শুধুই সাধারণ একজন দয়ালু/নরম/শান্ত লোক হয়ে থাকে, তাহলে ভালো হয়, আর বিপদ থাকে না, কিংবা . .
যীশু যদি শুধু একজন অদ্ভুত, বিষ্ময়কর, অবাস্তব ধরণের কোনো ব্যক্তি হয়ে থাকে, তাহলে ভালো হয়, কিংবা . .
যীশু যদি ঘরে/চাচের্র দেওয়ালে লাগালো মূর্তির মতো হয়েই থাকে, তাহলে ভালো হয়, কিংবা . .
যীশু যদি কখনো নেমে এসে আমাদের কোনো সমস্যা করতে না পারে, তাহলে ঠিক ছিল।
কিন্তু ..
রাজত্ব করা খ্রীষ্ট?, . .
কর্তৃত্ব দেখানো খ্রীষ্ট?, . .
প্রভাব খাটানো খ্রীষ্ট?, . .
জীবনটাকে পরিবর্তন করা খ্রীষ্ট?
না!, . . কক্ষনই . . না!!
এমন একজন খ্রীষ্টকে কি-না - কোটি কোটি মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য নয়, অর্থাৎ তাঁকে মেনে নিতে পারেনি এখনো পর্যন্ত।
এরকম একজন খ্রীষ্ট কি-না - তাদের জীবন পথে ভয়ের/বিপদজনক,
এরকম একজন খ্রীষ্ট কি-না - ঈশ্বরের চাইতে নিজের ইচ্ছামত থাকার মূলে আঘাত আনে।
প্রতিশ্রুতি
কিন্তু অন্য আরেকভাবে প্রতিক্রিয়া/সাড়া দেওয়াটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন, সেটি এসেছিল মন্দিরের বৃদ্ধ পুরোহিতের কাছ থেকে।
যখন শিশু যীশুকে ঈশ্বরের প্রতি উৎসর্গ করার জন্য নিয়ে আসা হলো তখন শিমিয়োন শিশুটিকে কোলে নিয়ে ঈশ্বরকে বললেন,
“হে স্বামিন/সর্বাধিপতি প্রভু, এখন তুমি তোমার বাক্যনুসারে/তোমার প্রতিশ্রুতি অনুসারে তোমার দাসকে শান্তিতে বিদায় দাও, কেননা আমার নয়নযুগল, আমি স্বচক্ষে তোমার পরিত্রাণের দর্শন পাইলাম” (লূক ২:২৯-৩০ পদ)
শিমিয়োনের সারা দেওয়া বা তার প্রতিক্রিয়াটা ছিল ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতির প্রতি সাড়া দেওয়া।
এ জগতে ঈশ্বরের একমাত্র পুত্রকে পাঠানোর তাঁর ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য শিমিয়োন বুঝতে পেরেছিলেন।
শিমিয়োনের প্রতি এর বিশেষ অর্থ হলো, তিনি যে শুধু অত্যন্ত তৃপ্ত হয়েছিলেন তা নয়, কিন্তু তার সামনে সেই সত্যের কর্ম ঘটেছে সে বিষয়েই তিনি নিবিষ্ট হয়েছিলেন।
বিদ্বেষ মনোভাব তার চিন্তা থেকে দূরে ছিল, এর পরিবর্তে তিনি ঈশ্বরের পরিকল্পনা তাঁর পুত্রের মৃত্যু উৎর্গের মাধ্যমে আমাদের জন্য পরিত্রাণের যোগানে আনন্দে যীশুকে বুকে টেনে নিয়েছেন।
আপনি কি বাইবেলে স্থাপন করা ঈশ্বরের উপায়ে পরিত্রাণকে আপনার নিজেকে এখনো পরিবর্তনবিহীন রেখেছেন।
“আর অন্য কাহারও কাছে পরিত্রাণ নাই; কেননা আকাশের নীচে মনুষ্যদের মধ্যে দত্ত এমন আর কোনো নাম নাই, যে নামে আমাদিগকে পরিত্রাণ পাইতে হইবে” (প্রেরিত ৪:১২; ১০:৪৩ পদ)।
“যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে তাঁহার নামের গুণে পাপমোচন প্রাপ্ত হয়” (প্রেরিত ১০:৪৩ পদ)
খ্রীষ্টের মাধ্যমে জীবন রক্ষার কর্ম সম্পূর্ণ হয়েছে যখন তিনি মৃত্যু থেকে উত্থাপিত হয়েছেন।
প্রেরিত ২৬:২৩ পদে বলা হয়েছে যে . .
তাঁরা বলে গেছেন যে খ্রীষ্টকে মৃত্যুভোগ করতে হবে ও মৃতদের মধ্য থেকে তিনিই হবেন প্রথম পুনরুত্থিত, তিনিই ইহূদী কি অ-ইহূদী (প্রজালোক ও পরজাতীয় লোক) সবার কাছে পরিত্রাণের আলো নিয়ে আসবেন।
ঈশ্বর অন্যান্য ভিন্ন উপায়ে প্রস্তাব দিয়েছেন।
কিন্তু যীশু বলেছেন,
“আমিই পথ আমা দিয়া না আসিলে কেহ পিতার নিকটে আইসে না” (যোহন ১৪:৬ পদ)
আপনি কি খ্রীষ্টে সম্পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করেছেন যে ঈশ্বরের ক্ষমায় আর অনুগ্রহে স্বর্গে আপনার অনন্ত জীবন আর যখন এই জীবন শেষ হবে।
আমি আশা করি এই বড়দিনে সমস্ত মানুষের থেকে আপনার জন্য ঈশ্বরের দেওয়া বড় উপহার হবে যদি আপনি এতে সাড়া দেন, যদি আপনি এতে সঠিক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন।
Comments