উইলিয়াম টিনডেলের কাহিনী। ইংরেজী ভাষায় অনুবাদকৃত বাইবেলের প্রথম মুদ্রণের ইতিহাস।

(অনুবাদ)

ইতিহাসের সত্য ঘটনাগুলো তো সবাই জানতে চায় . . . টিলডেল একজন সত্যিকারের ব্যাপ্টিস্ট, যাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় . . . তাঁর মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয় . . . শুধুমাত্র বাইবেল ইংরাজিতে অনুবাদ করার জন্য। 

“সেই সুসমাচার সম্বন্ধে আমি দুষ্কর্মকারীর ন্যায় বন্ধনদশা পর্যন্ত ক্লেশভোগ করিতেছি; কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য বদ্ধ হয় নাই। এই কারণ আমি মনোনীতদের নিমিত্ত সকলই সহ্য করি, যেন তাহারাও খ্রীষ্ট যীশুতে স্থিত পরিত্রাণ অনন্তকালীয় প্রতাপের সহিত প্রাপ্ত হয়” (২তীমথিয় ২:৯,১০ পদ)।

প্রায় ৫০০ বছর আগে।
কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করারো প্রায় একশ বছর আগে, মেনটজ নামের একটি পুরানো শহরে বাস করতেন জন গুজফ্লেম নামে একটি ছেলে। তার মা পশুর চামড়া দিয়ে পুরোহিতদের লেখার উপযোগী এক ধরনের পাণ্ডুলিপির কাগজ তৈরি করে তাদের সংসারের খরচ যোগাতেন। জনের একটি শখ ছিল যে সময় পেলেই সে কাঠ বা অন্যকিছুর উপর তার ছুরিটি দিয়ে নকশা বা খোদাই করতো। একদিন সে আগুনের পাশে বসেছিল যেখানে তার মা একটা পাত্রে বেগুনী রং গরম করছিলেন। জন অনেকটা আনমনেই এক টুকরো কাঠের উপর খোদাই করে কেটে নিজের নাম লিখেছিল। হঠাৎ নিজের নামের অক্ষর খোদাই করে কাটা একটি কাঠের টুকরো ওই রং এর পাত্রটির উপর পরে গেল। জন তাড়াতাড়ি সেটাকে পাত্র থেকে তুললো ঠিকই, কিন্তু হাত ফসকে সেটা আবারো পরে গেল - এবার মায়ের তৈরি করা পশুর চামড়ার এক টুকরো কাগজের উপর যা পাশেই পরে ছিল। কাঠে খোদাই করা ওই অক্ষরটি পরেছিল উপুড় হয়ে আর সে যখন সেটাকে সেখান থেকে তুললো, পশুর চামড়ার ওই কাগজটিতে দেখা গেল ইংরেজী “h” অক্ষরটির স্পষ্ট ছাপ পরে গেছে।

মুদ্রণের আবিষ্কার হলো।
সময় বয়ে যায়। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। কিন্তু মেনটজ শহরের সেই ছেলেটি কিছুতেই ভুলতে পারছে না তার পুরোনো বাড়িতে আগুনের পাশে একদিন হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঐ ঘটনাটির কথা। তখন থেকেই তার মাথায় ধারণা জন্মে যে নতুন বই তৈরি করার জন্য একটি সহজাত পদ্ধতি বের করা যেতে পারে, যাতে করে একটি বই বা তার একাধিক সংস্করণ প্রকাশ করার জন্য অযথা বারবার কষ্ট করে পুরোটা হাতে লিখে নকল করার কোনো প্রয়োজন না হয় - যা এতদিন পর্যন্ত একমাত্র পদ্ধিতি হিসেবে প্রচলিত ছিল। এই চিন্তাটিকে বাস্তবে রূপ দিতে সে প্রথমে কাঠ কেটে ছোট ছোট অক্ষর তৈরি করলো। তারপর সেগুলোকে রং-এ ডুবিয়ে বিভিন্নভাবে ছাপ দিয়ে দেখতে লাগলো এবং আস্তে আস্তে একটা পদ্ধতি তৈরি করে ফেললো যার মাধ্যমে সুবিন্যস্ত করে যে-কোনো লেখাকে হুবহু যতবার খুশি মুদ্রণ করা সম্ভব। এবং এভাবেই সে একদিন প্রতিষ্ঠা করলো পৃথিবীর সর্বপ্রথম মুদ্রণ প্রকাশনী। তাইতো মুদ্রণ শিল্প সম্পর্কে লেখা এযাবতকালের সকল ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে লেখা তার নাম - জন গুটেনবার্গ (জার্মান ভাষায় তার নামের উচ্চারণ)।

কোনো ইংরেজি বাইবেল ছিল না।
১৪৫৪ সালের কথা। সে বছরেই কনস্টান্টিনোপল নামক স্থানে খ্রীস্টিয়ানদের এবং টার্কস-দের মধ্যে একটি ভয়াবহ যুদ্ধ বাঁধে আর শহর থেকে খ্রীস্টিয়ানদের বের করে দেওয়া হয়। কনস্টান্টিনোপল ছিল তখনকার দিনে পৃথিবীর শ্রেষ্টতম শহর আর বেশীরভাগ উচ্চশিক্ষা গ্রহণের বিদ্যালয়গুলো ছিল ওখানেই। গ্রিসের এই শহরটি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে গ্রিক পণ্ডিতেরা এক সময় সারা ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েন এবং বসবাস করতে শুরু করেন। এই পণ্ডিতদের সবাই প্রায় একই সময়ে অনেকটা হঠাৎ করেই যেন পুরানো যে ল্যাটিন বাইবেল এতকাল পাঠ করে এসেছিল তার বদলে গ্রিকদের নতুন বাইবেলের প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে তা পড়তে শুরু করলো। তারা সেসময়ে কথায় কথায় অনেক মানুষকে বোঝালেন যে, সকলের যদি নিজের নিজের ভাষায় বাইবেল থাকতো তাহলে কী চমৎকারই না হতো, তাহলে প্রত্যেকেই তা পড়তে সমর্থ হতো। নতুন ভাষা শিক্ষা এবং নতুন মুদ্রণ প্রকাশনীর আবিষ্কারের ফলে তাদের চিন্তা আর শুধু চিন্তাতেই থেমে থাকলো না।

উইলিয়াম টিন্ডেল।
ব্যাপারটা প্রথম শুরু হয় ইংল্যান্ডের একটি পুরানো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে; যেখানে উইলিয়াম টিনডেল নামে এক তরুণ তাঁর শিক্ষা গ্রহণ করছিলেন। তিনি নিজে একজন গ্রিক পণ্ডিত ছিলেন আর গ্রিক ভাষায় লেখা নতুন নিয়মের আসল সংস্করণটি তাঁর পাঠ করা ছিল। গ্রিক ভাষায় লেখা নতুন নিয়মের শিক্ষা তাঁকে এতটাই আলোচিত ও উজ্জীবিত করেছিল যে তিনি তাঁর চারপাশের সবাইকে এ-বিষয়ে জানানোর জন্য অধীর হয়ে উঠেলেন।

একদিন কিছু ছাত্র বাইবেলের প্রতি এই নতুন আগ্রহের কথা বলছিল। হঠাৎ একজন বলে উঠলেন : ”বাইবেলের কোনো দরকার নাই। তাই সকলের পাঠ করার জন্য এটি ইংরেজিতে অনুবাদের কথা বলাটাও বোকমী। মানুষের একমাত্র যা দরকার তা হচ্ছে পোপের বলা কথাগুলো পালন করা। ঈশ্বরের রীতিনীতির কী প্রয়োজন, পোপের রীতিনীতিই তো আমাদের জন্য যথেষ্ট।”

উইলিয়াম টিনডেল হটাৎ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে তার মুষ্ঠিবদ্ধ হাত দিয়ে টেবিলে আঘাত করে চিৎকার করে বললেন, “আমি পোপকে মানি না আর তার কোনো রীতিনীতিও আমি মানি না; আর ঈশ্বর যদি আমাকে সেই সুযোগ দেন, আমি একদিন ইংল্যান্ডের যে ছেলেটি লাঙ্গল চাষ করে তাকেও স্বয়ং পোপ বাইবেলের বিষয়ে যা জানেন, তার থেকে অধিক শিক্ষায় শি্িক্ষত করে ছড়বো।”

তার কোনো দম্ভোক্তি বা অহংকার ভাব ছিল না। 
তার কথায় কোনো দম্ভোক্তি বা অহংকারের ভাব মোটেই ছিল না। উইলিয়াম টিনডেল এমন কথা বলেই থেমে থাকলেন না, বরং অচিরেই একটা ইংরেজি বাইবেল তৈরির কাজে লেগে গেলেন - যা সকলেই পাঠ করতে পারবে। হামফ্রে মনমাউথ নামে একটি ধনী ব্যক্তি তাকে তার বাড়িতে কাজটি করতে দিলেন এবং দিনরাত তিনি কাজ করে যেতে লাগলেন, এই আশায় যে কোনো প্রকাশক নিশ্চয়ই এটি প্রকাশ করবে যখন তার কাজটি শেষ হবে।

পোপ - প্রচণ্ড ক্ষমতাধর একজন।
টিনডেল বোধ হয় ভুলেই গিয়েছিলেন যে পোপ কতটা ক্ষমতাধর ছিলেন। আর পোপ যা কোনোদিনই চাইতেন না তাহলো বাইবেল ইংরেজিতে অনুবাদ হোক। তাই ইংল্যান্ডের প্রায় সকল কর্তৃপক্ষই এ-সময় টিনডেলের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় এবং খুব শীঘ্রই অবস্থা এমন পর্যায়ে চলে যায় যে তার পরম বন্ধু মনমাউথও আর তাকে সাহায্য করতে সাহস পায়নি। টিনডেল খুব দুঃখের সাথে উপলব্ধি করলেন, “ইংল্যান্ডের কোথাও বাইবেলের অনুবাদ করার চেষ্টা একেবারেই বৃথা।”

তাই বলে কি তিনি থেমে গেলেন? না, উইলিয়াম টিনডেল হাল ছাড়ার লোক ছিলেন না। তিনি শুধু ইংল্যান্ড ছেড়ে দিলেন এবং জার্মানীর হ্যামবার্গ-এ থাকার উদ্দেশ্যে গেলেন। সেখানেও তার জীবনের কোনো নিরাপত্ত খুব একটা ছিল না। ইংরেজ ক্যাথলিক বিশপ ও পুরোহিতরা তার কাজ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে এতটাই ক্রোধান্বিত ছিলেন যে তারা তার পেছনে গুপ্তচর লাগিয়ে রাখলেন যেন কোনো প্রকারেই তিনি যেন কোনো বন্ধু তৈরি করতে ও তার বাইবেল প্রকাশ করতে না পারেন।

কোলনে একটি প্রকাশনী ছিল। তিনি সেখানে গেলেন এবং অবশেষে এমন একজন প্রকাশক পেলেন যারা তার প্রথম ইংরেজী বাইবেল প্রকাশের জন্য রাজী হলেন। তিনি তার এ-কাজের বিষয়টি গোপন রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন, যেহেতু তিনি জানতেন যে তার বইয়ের কাজ প্রায় শেষের পর্যায়ে রয়েছে তা জানতে পারলে ইংরেজ ক্যাথলিক বিশপেরা তাকে ধরে নিয়ে যাবে।

একদিন হঠাৎ তিনি একটা সতর্কবাণী পেলেন যে তিনি যেন তার জীবন নিয়ে পালিয়ে যান। একজন ক্যাথলিক পুরোহিত নাকি মাতাল একজন প্রকাশনের কাছে জানতে পেরেছেন যে তার ইংরেজি বাইবেলের প্রকাশনার কাজ প্রায় শেষ এবং তাকে গ্রেপ্তার করতে আসছে। এ-রকম খবর পেয়ে তিনি কোনো রকমভাবে তার অমূল্য কাগজগুলো নিয়ে ঐ শহর ছেড়ে পালিয়ে চলে এলেন ওয়ার্মস্-এ, যেখানে মার্টিন লুথার বসবাস করতেন।

জার্মানীতে হলো মুদ্রণ ও প্রকাশনা।
এখানেই মুদ্রিত হলো প্রথম ইংরেজী বাইবেল। দু’টি আকারে বাইবেলের বই বানানো হলো, একটি বড় এবং একটি ছোট আকারে; কারণ তিনি ভাবলেন যে বড়গুলো যদি কখনো ইংরেজ ক্যাথলিক বিশপদের হাতে পড়ে, তাহলে ছোটগুলো অন্ততঃ তিনি লুকিয়ে রক্ষা করতে পারবেন।

যা-হোক এখন কাজ ছিল এগুলোকে ইংল্যান্ডে পৌঁছানো। কাপড় ও বিভিন্ন বিক্রয়যোগ্য জিনিষপত্রের পিপায় করে, কাপড়ের গাট্টির ভেতর, ফুলের গাদার তলায়, মোটকথা যতভাবে লুকিয়ে সম্ভব সমস্ত উপায়ে বাইবেলগুলো ইংল্যান্ডে পাঠানো হলো।

পৌঁছুতে কি পারলো এগুলো? হ্যাঁ, পারলো তো বটেই এবং অসংখ্য, অনেক অনেক। আর ক্যাথলিক বিশপেরা অচিরেই আবিষ্কার করলো যে এগুলো বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি সমুদ্র বন্দরে কড়া নজর রাখা হলো, অফিসারেরা প্রচুর বাইবেলের প্যাকেট উদ্ধার করলো এবং পুড়িয়ে নষ্ট করে ফেললো। কিন্তু আরো বাইবেল আসলো। তারা সেগুলোকে থামাতে পারলো না আর মজার বিষয় হচ্ছে যে, দেখা গেল এর বেশিরভাগ তাদেরই হাতে গিয়ে পড়লো যারা এগুলো পড়তে চাইছিল।

শত্রুরাই সাহায্য করলো।
অবশেষে লন্ডনের ক্যাথলিক বিশপের মাথায় একটি বুদ্ধি এলো। বিশপ ঠিক করলেন যে, জার্মানীর একজন ধনী ব্যবসায়ীর মাধ্যমে তিনি ঐ বইয়ের যতগুলো কপি প্রিন্ট করা হয়েছে তার সবগুলো কিনে নেবেন! ফলে সমুদ্র পার হয়ে ইংল্যান্ডে আসবার মতো আর কোনো বাইবেলই থাকবে না। তবে বিশপ জানতেন না যে, যে ধনী ব্যবসায়ীকে তিনি এ-কাজ করতে বলেছিলেন, তিনি আসলে টিনডেইলেরই একজন বন্ধু ছিলেন।

টিনডেইলের বন্ধুটি দেখলেন যে টিনডেইলকে সাহায্য করার এটা একটা সুবর্ণ সুযোগ। তিনি জানতেন যে সে-সময়ে টিনডেইলের প্রচুর টাকার দরকার ছিল প্রকাশকদের করা কাজের বাকী টাকা পরিশোধের জন্য আর নতুন বাইবেল প্রকাশের কাজ শুরু করার জন্য। তাই তিনি বিশপকে বললেন, “মহাশয়, আমি অত্যন্ত আনন্দ বোধ করবো আপনার এ-কাজটি করে দিতে পারলে। তবে এরজন্য টাকার প্রয়োজন হবে, কারণ জার্মানীর যে লোকটির কাছে এ বইগুলো আছে তিনি বেশ উচ্চমূল্য হাঁকছে।”

“আমার প্রিয় মহোদয়,” বিশপ বললেন, “এইগুলোকে আমার জন্য সংগ্রহ করতে যা করতে হয় করুন, সমস্ত কপি, কারণ সেগুলো অতি নিকৃষ্টমানের বই। আপনার যা-ই খরচ হোক না কেন, আমি তা আনন্দ সহকারেই আপনাকে সেই অর্থ দেবো, কেননা আমি এর সমস্ত কপি নিজ হাতে পুড়িয়ে ফেলে এইসব মুদ্রিত কপিগুলোর শেষ দেখতে চাই।”

টাকার যোগাড় হলো।
ঐ ধনী ব্যবসায়ীর জন্যে ব্যাপারটি কি মজারই না ছিল। তিনি টিনডেইলের কাছে গেলেন, বেশ ভালো দামে তার বইগুলো কিনলেন আর সেগুলো নিয়ে এলেন ইংল্যান্ডে। আর ওদিকে টিনডেইল সরাসরি লেগে গেলেন তাঁর নতুন প্রকাশনার কাজে, কারণ তার কাছে এখন অঢেল টাকা। বাইবেলগুলো সব পুড়িয়ে ফেলার সময় বেচারা ক্যাথলিক বিশপ তো ভেবেছিলেন যে, আর কখনোই ইংরেজি বাইবেলের একটাও পাওয়া যাবে না। তাই তার মনের অবস্থাটা শুধু একবার ভেবে দেখুন যখন তিনি জানতে পারলেন যে আগের যে-কোনো সময়ের চেয়ে বেশী বাইবেল এখন ইংল্যান্ডে আসছে। আর এতো পরিমাণে আসতে থাকলো যে তার পুলিশ বাহিনী বা তার পদস্থ কর্মকর্তারা কোনোভাবেই তা রুখতে পারলো না।

“এটা কীভাবে সম্ভব হলো?” টিনডেইলকে সাহায্য করার অপরাধে গ্রেপ্তারকৃত একজনকে জিজ্ঞেস করা হলো। “আপনাকে তাহলে সত্যি কথাটাই বলি মহাশয়”, জবাবে বললো লোকটা, “আপনি নিজেই হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি আমাদেরকে বাইবলেগুলো প্রকাশ করার জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় টাকা দিয়েছিলেন!” এতেই ভালো কাজ হলো - তিনি সম্ভবত উন্মাদ হয়ে গিয়েছিল।

টিনডেইল, একজন ‘এনা ব্যাপ্টিস্ট’ যাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মেরে তার দেহ পুড়িয়ে ফেলা হয় - ঈশ্বরের বাক্যকে অনুবাদ করার জন্য।
তিনি এতটাই উন্মাদ ছিলেন যে গোটা ইংল্যান্ডেকে তিনি টিনডেইলের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তুললেন। বড় বড় সব ক্যাথলিক পুরোহিতেরা এ-বিষয়ে প্রচার করতে লাগলেন, যারা বেশিরভাগই মনে করতেন যে সাধারণ মানুষের ভাষায় বাইবেল থাকাটা অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ এবং ক্ষতিকর বলে প্রতিপন্ন হবে - শুধুমাত্র সামান্য কিছু সাহসী ও জ্ঞানী ব্যক্তি যারা মনে করতেন যে এর ফলে ইংল্যান্ডের ভালো বই মন্দ হবে না। শেষ পর্যন্ত টিনডেইল জয়ী হলেন, কারণ তাঁর বাইবেল তখন সমস্ত জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল। একজন বুড়ো বিশপ তাই বিষন্নভাবে বললেন, “এটি আমার সকল ক্ষমতা শেষ করে দিয়েছে এবং অন্য যে-কোনো শক্তিকে অকেজো করে দিয়েছে, যা দিয়ে আমরা কাউকে বাধা দেব।”

সুতরাং বাইবেলটি ইংল্যান্ডে এলো এবং ইংল্যান্ড থেকে সারা পৃথিবীতে। কিন্তু যে মানুষটি পৃথিবীতে এটি দিলেন, তিনি কখনোই জানতে পারলেন না কি অসাধারণ এক জয় তিনি পেয়েছেন। জার্মানীর ছোট্ট একটি শহরে পৃথিবী থেকে যতটা সম্ভব দূরে পালিয়ে থাকাটা; রাস্তায় হাঁটতে ভয়, ইংরেজ ক্যাথলিক বিশপ বা স্বয়ং রোমের পোপের কোনো গুপ্তচর তাকে দেখে না ফেলে, দিনরাত লুকিয়ে কাজ করা যেন সবাই তার বাইবেলটি পেতে পারে ঠিক এমনই এক চোরসুলভ জীবন তিনি অতিবাহিত করছিলেন; দু’চোখে ইংল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। ইংল্যান্ডকে তিনি তার জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসতেন। তার শত্রুরা বন্ধুবেশে তার কাছে লোক পাঠাতো, যারা তাকে দেশে ফিরে আসার জন্য কতই না কাকুতি-মিনতি করতো। কিন্তু আসলে তারা কী চায় তা তিনি জানতেন। তিনি জানতেন যে, ইংল্যান্ডে পা দেওয়া মাত্রই তাকে প্রথমে গ্রেপ্তার ও পরে হত্যা করা হবে।

টিনডেইলের বিশ্বাসঘাতকতারূপে একজন যিহূদা।
তার সমস্ত শত্রু যে কেবল ইংল্যান্ডেই ছিল, তা কিন্তু নয়। ফিলিপস্ নামে একজন লোক ছিল, যাকে তিনি সৎ ও বিশ্বাসী বলেই মনে করতেন। কিন্তু ফিলিপস্ আসলে ছিলেন একজন গুপ্তচর মাত্র যাকে পোপ পাঠিয়েছিলেন টিনডেইলকে ফাঁদে ফেলার জন্য। এক রাতে টিনডেইল যখন সন্ধ্যায় মুক্ত বাতাসে কিছুক্ষণ হাঁটার জন্য বাড়ি থেকে বের হলেন, তখন একদল লোক তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে ফেলে এবং তুলে নিয়ে যায় একটি অন্ধকার কারাগারে।

একজন আত্মোৎসর্গকারী।
কোনো বিচার হলো না। তারা জানতো যে তারা টিলডেইলকে মেরে ফেলতে যাচ্ছে। টিনডেইল নিজেও জানতেন। তাই হাসতে হাসতে তিনি তার জীবন উৎসর্গ করলেন, কেননা যে লক্ষ্য তিনি নিজের জন্য স্থির করেছিলেন তা তিনি সম্পন্ন করেছেন। বাইবেল এখন ইংরেজিতে, যে ভাষায় সব মানুষ পড়তে পারে। মৃত্যুদণ্ডাপ্রাপ্ত অপরাধীকে দগ্ধ কবার আগে যে শূল বা গোঁজা জাতীয় খুঁটির সঙ্গে বাঁধা হতো ঠিক সেখানেই একদিন ওরা টিনডেইলকে নিয়ে গেল। ওখানেই প্রথমে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারা হলো আর তার দেহ পুড়িয়ে ফেলা হলো। তিনি শেষ মুহূর্তে একবার অনুমতি চাইলেন ইংল্যান্ডে তার কয়েকটি বার্তা পৌঁছাবার জন্য, কিন্তু তারা তা নাকচ করে দিল।

তিনি তার চোখ বন্ধ করলেন ও ভক্তিভরে প্রার্থনা করলেন, “হে ঈশ্বর দয়া করে তুমি ইংল্যান্ডের রাজার চোখ খুলে দিও।”

সাহসী নির্ভীক বীর উইলিয়াম টিনডেইল। কোনো মানুষ তার চেয়ে বেশী কখনো ত্যাগ স্বীকার করেননি। আজ আমরা যে বাইবেল পড়ি তা আমাদের জন্য একমাত্র তার কারণেই সম্ভব হয়েছে, আজ পর্যন্ত যত অনুবাদ হয়েছে প্রথম অনুবাদটির ফলেই তা হয়েছে।

আমি যখনই তার কথা ভাবি আমার অবশ্যই মনে পড়ে স্বয়ং যীশুর সেই বাণীটির কথা “মেষদিগের জন্য আমি আপনি প্রাণ সমর্পণ করি” নিশ্চয়ই উইলিয়াম টিনডেইল যীশুর পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিলেন।  

Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?