মরিয়মের একটিই মাত্র আদেশ যা স্বর্গে যেতে বাধ্য থাকতে হয়।

আমন্ত্রিত যীশুর মা মরিয়ম গালীলের কান্না নগরে বিয়ে বাড়িতে এসে জানতে পারলেন এদের দ্রাক্ষারস শেষ হতে চলছে।
তারা একটি বড় সমস্যার মধ্যে তলিয়ে যাচ্ছে।
মরিয়ম নিজে এর জন্যে কিছুই করতে পারছেন না, যদিও তিনি যীশুর গর্ভধারিণী মাতা।
তিনি তাদের এই দুর্দশা দেখে তাঁর যীশুর কথা মনে পড়লো যে তিনিই একমাত্র যিনি মুক্তিদাতা (ইম্মানুয়েল) সংকটজনক মুহূর্তে সবকিছুর সমাধান করতে পারেন।
মরিয়ম তাদের এই দূরাবস্থায় চাকরদের একটি আদেশ দিলেন, যা আজও আমাদের প্রত্যেকের অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা উচিত।

যদি আপনার স্বর্গে যাবার ইচ্ছা থাকে তাহলে যীশুর মা মরিয়মের একমাত্র একটি আদেশের প্রতি মনোযোগ দিতে হয়। “তাঁহার মাতা (যীশুর মা) সেই পরিচারকদের বলিলেন, ইনি তোমাদিগকে যাহা কিছু বলেন তাহা কর।” শাস্ত্রের এটিই একমাত্র উল্লেখ করা আদেশ যা-কিনা মরিয়ম বিপদে পড়া, নিরুপায়, অসহায় লোকদের দিয়েছেন, তাই অত্যন্ত দৃঢ় নিশ্চিতে আর নিঃসন্দেহে জগতের সকলের তাই এই কথায় মনোযোগ দেওয়া উচিত - “ইনি তোমাদিগকে যাহা কিছু বলেন তাহা কর।” 

জগত আজ শান্তির অভাবে মহাসংকটে।
প্রভু যীশু দু’হাজার বছর আগেও ঈশ্বরের সাদৃশ্যে শ্রেষ্ট সৃষ্টি  সেই মানুষের দূরাবস্থা, অস্থিরতা, ছিন্নভিন্ন, পালক বিহীন অবস্থা (মথি ৯:৩৬ পদ); মানুষের অসহায় অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকা (মথি ১৪:১৪ পদ); অনাহারীদের দেখে তিনি অন্তরে কষ্ট পেয়েছিলেন, তাঁর করুণা হয়েছিল (মথি ১৫:৩২ পদ)।
আজও কি আমরা সেই অবস্থায় নেই?
তিনি এখনো জগতের প্রতি করুণাবিষ্ট।
তিনি জানেন আমাদের শান্তি প্রয়োজন কারণ জগৎ কখনোই শান্তি দিতে পারে না।
আমাদের প্রাণের উপযুক্ত একমাত্র শান্তির স্থান হলো স্বর্গ, তাইতো তিনি বলেছেন আমরা যেন জগতের শান্তির চেষ্টায় বিচলিত না হই, তিনি আমাদের জন্য শান্তির স্থান প্রস্তুতকারী। 

এই অশান্ত সংকটময় জগতের থেকে আমাদের সকলের লক্ষ্য যখন শান্তিপুরী স্বর্গে যাওয়া, তখন আমাদের সকলের বাইবেলকে লক্ষ্য করা উচিত যে মরিয়ম আমাদের সব সময়ের জন্য একটিবার মাত্র কী আদেশ দিয়েছিলেন - “ইনি তোমাদিগকে যাহা কিছু বলেন তাহা কর”
এই ইনি সেই “যীশু” কী করতে বলেছেন?
আপনার কি স্বর্গে যাবার ইচ্ছা আছে?
যদি থাকে তাহলে দেখুন যে কেন আপনি মরিয়মের আদেশে মনোযোগ দেওয়া উচিত আর যীশু যা বলেছেন সে কথায়।

যীশু বিভিন্নভাবে বুঝিয়েছেন যে তিনিই একমাত্র যিনি আপনার আমার মুক্তিদাতা, একমাত্র উদ্ধারকর্তা, আর তিনিই একমাত্র যিঁনি স্বর্গের পথ পদর্শক।

যোহন ১৪:৬ পদ, “যীশু তাহাকে বলিলেন, আমিই সেই পথ, সেই সত্য ও সেই জীবন। আমা দিয়া বিনা, সেই পিতার নিকটে মানুষ আসিতে পারে না।”

তিনি কখনো আপনার পরিত্রাণের জন্য জগতের কোনো সাধু ব্যক্তিদের উপর, মণ্ডলীর কর্তাদের উপর, এমনকি তাঁর মা মরিয়মের উপরে নির্ভর করতে বলেন নাই।

সাধু পিতর নিজেও যীশুকে জেনে এ কথাই বলেছেন যে “অন্য কাহারও কাছে পরিত্রাণ নাই; কেননা আকাশের নীচে মনুষ্যদের মধ্যে দত্ত এমন আর কোন নাম নাই, যে নামে আমাদিগকে পরিত্রাণ পাইতে হইবে” প্রেরিত ৪:১২ পদ।

সাধু পিতরের নিজেরও কথা “কিন্তু আপনার (যীশুর) কথায় আমি জাল ফেলিব লূক ৫:৫ পদ। 

যীশু বলেছেন যেন তাকেই আমরা আস্থা রাখি, ভরসা করি, নির্ভর করি ও বিশ্বাস করি, কারণ তিনিই একমাত্র উপায় যার মাধ্যমে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

যোহন ৩:৩৬ পদ, “যে সেই পুত্রের উপর বিশ্বাস করে সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে; আর যে সেই পুত্রে বিশ্বাস করে না, সে জীবন দেখিতে পাইবে না, কিন্তু ঈশ্বরের সেই ক্রোধ তাহার উপরে থাকে।”

তিনি বলেন নাই যে পরিত্রাণের জন্য বিশেষ কোনো ত্যাগ স্বীকার করা প্রয়োজন বা ভালো ভালো নির্দিষ্ট কোনো কর্মের প্রয়োজন, রোমীয় ৪:৫ পদ, “যে কার্য করে না, কিন্তু তাঁহাতে (খ্রীষ্টের) বিশ্বাস করে যিনি সেই ভক্তিহীনকে ধার্মিক-গণ্য করেন,তাহার বিশ্বাসই ধার্মিকতা বলিয়া গণিত হয়।”

যীশু বলেন অনন্ত জীবন এমন একটি বিষয় যা তিনি প্রদান করেন। যোহন ৫:২৪ পদ, “সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলি, যে ব্যক্তি আমার বাক্য শুনে আর যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন তাঁহার উপর বিশ্বাস করে, সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে, আর বিচারে আনীত হইবে না, কিন্তু মৃত্যু হইতে জীবনে পার হইয়া গিয়াছে।”

তিনি বলেন নাই এটি মুখস্থ/কণ্ঠস্থ করার বা শেখার জীবন যা পালন করার উপর নির্ভর করে আমাদের অনন্ত জীবন লাভ বা হারানো অবস্থা থেকে উদ্ধার।

তিনি বলেছেন, যোহন ১০:২৮ পদ, “আমি তাহাদের অনন্ত জীবন দান করি, আর তাহারা কখনই বিনষ্ট হইবে না, আর কোন মানুষ আমার হস্ত হইতে তাহাদের কাড়িয়া লইবে না।”

যীশু একমাত্র ঈশ্বরের বাক্যে নির্ভর করতে বলেন, যোহন ১২:৪৮ পদ, “সে যে আমাকে অগ্রাহ্য করে, আর আমার কথা সকল গ্রহণ না করে, তাহার যেন বিচারক আছে; সেই বাক্য যাহা আমি বলিয়াছি, তাহাই সেই শেষদিনে তাহার বিচার করিবে।”

তিনি বলেন নাই পুরুষানুক্রমে ধর্মগত ঐতিহ্যে মানুষের আদেশ, পরম্পরাগত শিক্ষাই হলো প্রভু যীশু খ্রীষ্টের বাক্য।

মার্ক ৭:৭,১৩ পদ, “ইহারা অনর্থক আমার আরাধনা করে, মনুষ্যদের আদেশ ধর্মসূত্র বলে শিক্ষা দেয়। এইরূপে তোমাদের সমর্পিত পরস্পরাগত বিধি দ্বারা তোমরা ঈশ্বরের বাক্য নিষ্ফল করিতেছ; আর এই প্রকার অনেক ক্রিয়া করিয়া থাক।”

এখনিই হতে পারে আপনার পরিত্রাণ এবং নিশ্চিতভাবে জানা যে আপনি অনন্ত জীবনে আছেন, যদি আপনি সম্পূর্ণ বিশ্বাসে একমাত্র প্রভু যীশু খ্রীষ্টের উপর আস্থা, ভরসা ও নির্ভর করেন, আর যদি আপনার নিজের ধর্মকর্মের উপর, সাতটি সাক্রামেন্ট (দীক্ষাস্নান, হস্তার্পণ, খ্রীষ্টপ্রসাদ, পুনমিলন, রোগীলেপন, যাজকত্ব ও বিবাহ) অথবা অন্য যা-কিছু আপনাকে রক্ষা করতে পারে বলে এতদিন আপনি ধারণা করে আছেন সেসব থেকে বিরত থাকেন।

যীশুই হলেন মুক্তিদাতা। আপনি কি বিশ্বাস করেন, না-কি করেন না, যে তিনি আপনাকে পরিত্রাণ করতে পারেন?

১ যোহন ৫:১৩ পদ, “তোমরা যাহারা ঈশ্বরের পুত্রের নামে বিশ্বাস করিতেছ, আমি তোমাদিগকে এই সকল কথা লিখিলাম, যেন তোমরা জানিতে পার যে, তোমরা অনন্ত জীবন পাইয়াছ।”

এই মুহূর্তে যদি আপনি সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের দিকে মন ফিরিয়ে এবং যীশু খ্রীষ্টকে আপনার মুক্তিদাতা ও প্রভুরূপে বিশ্বাস করেন . . এই মুহূর্তেই আপনি চিরদিনের জন্য মুক্তি পাবেন।

হ্যাঁ, মরিয়ম সম্পর্কে ঈশ্বর যত কথাই বলেন, আমরা তাঁর সব কথাই বিশ্বাস করি। যেসব মানুষেরা বাইবেল সম্পর্কিত যে-কোনো ভিত্তিহীন নাগাল ধরে আছে আমরা ঐসব বিশ্বাস প্রত্যাখ্যান করি।

আমরা বিশ্বাস করি মরিয়ম ছিলেন একজন সতী নারী। প্রভু যীশুর মা হওয়ার জন্য তিনি ঈশ্বরের দ্বারা মনোনীত হয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি কুমারী অবস্থায় খ্রীষ্টের জন্ম দিয়েছিলেন। অন্যদিকে আমরা মরিয়মের কাছে প্রার্থনা করি না বা তাঁর মূর্তিও তৈরি করি না।

কারণ বাইবেলের শিক্ষা হলো, “তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকেই প্রণাম করিবে, কেবল তাঁহারই আরাধনা করিবে” লূক ৪:৮ পদ।

বাইবেল আরো শিক্ষা দেয় যে প্রার্থনা স্থির একই ধারায় সরাসরি পিতার প্রতি উৎসর্গীত হবে।

শিষ্যেরা যখন যীশুকে বলেছিলেন, “আমাদের প্রার্থনা শিখান,” তিনি প্রথমেই বলেছিলেন, “তোমরা যখন প্রার্থনা কর . . এই মত প্রার্থনা করিও; হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ, . .” এর পরে প্রার্থনার প্রয়োজনীয় অন্যান্য বিষয় শিখালেন।

যীশু একবার একদল লোকদের বলেছিলেন, “তোমরা কেন প্রভু, প্রভু, বলিয়া ডাক, অথচ আমি যাহা যাহা বলি, তাহা কর না?” লূক ৬:৪৬ পদ। যীশু যেহেতু পিতার কাছে আমাদের প্রার্থনা করতে বলেন, আসুন, আমরা তাই-ই করি।

যখন যারা মরিয়মের কাছে প্রার্থনা করতে চায়, তারা কারণটি বলেন যে তিনি যেহেতু যীশুর মা, তাই মরিয়ম যীশুর কাছে চাইবামাত্র তিনি তাঁকে সবকিছুই দিতে রাজী থাকেন।

মার্ক ৩:৩১-৩৫ পদের অংশটুকু পাঠ করুন, যে আমি এতক্ষণ সত্য বলছি কি-না।
“তাঁহার মাতা ও তাঁহার ভ্রাতৃগণ আসিলেন, ও বাহিবে দাঁড়াইয়া তাঁহাকে ডাকিয়া পাঠাইলেন। তখন তাঁহার চারিদিকে লোক বসিয়াছিল; তাহারা তাঁহাকে কহিল, আপনার মাতা ও আপনার ভ্রাতৃগণ বাহিরে আপনার অন্বেষণ করিতেছেন। তিনি উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, আমার মাতা কে? আমার ভ্রাতৃরাই বা কাহারা? পরে যাহারা তাঁহার চারিদিকে বসিয়াছিল, তিনি তাহাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া কহিলেন, এই দেখ, আমার মাতা ও আমার ভ্রাতৃগণ; কেননা যে কেহ ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সেই আমার ভ্রাতা ও ভগিণী ও মাতা”

বাইবেলে এমন কোনো দৃষ্টান্ত নেই, যেখানে কেউ যীশু অথবা পিতার কাছে যেতে মরিয়মের মাধ্যমে চেষ্টা করেছেন।

এর পরিবর্তে দেখি, “একমাত্র ঈশ্বর আছেন; ঈশ্বর ও মানুষ্যদের মধ্যে একমাত্র মধ্যস্থও আছেন, তিনি মানুষ, খ্রীষ্ট যীশু, তিনি সকলের জন্য মুক্তির মূল্যরূপে নিজেকে প্রদান করেছেন” ১তিমথিয় ২:৫-৬ পদ।

যীশু বলেন, “আমি সেই পথ, সেই সত্য ও সেই জীবন। আমা দিয়া বিনা, সেই পিতার নিকটে মানুষ আসতে পারে না” যোহন ১৪:৬ পদ।

খ্রীষ্টই একমাত্র মধ্যস্থ। ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সরাসরি যোগাযোগ রাখতে তিনি আমাদের পাপ দূর করেছেন যা কিনা আমাদের ঈশ্বরের থেকে পৃথক রেখেছিল, কাজেই আমরা এখন সরাসরি ঈশ্বরের কাছে যেতে পারি।

ইতিহাস বল্ছে, মরিয়মের কাছে প্রার্থনা উৎসর্গ করা শুরু হয় ৪র্থ শতাব্দীর শেষে। তবে দৃঢ নিশ্চিতে বলা যায় যে মরিয়ম জীবিত থাকলে তাঁর প্রতি এই এরকম নিয়ম বা চর্চা করতে দিতেন না। সরাসরি একমাত্র ঈশ্বরের নিকটে প্রার্থনা উৎসর্গ করা উচিত বলে, একজন ধার্মিক মহিলারূপে, তিনি নিজে কখনোই প্রার্থনা গ্রহণ করতেন না। 

ইতালিতে Roman Catholicism এর একেবারে মাঝখানে, মরিয়মের বিভিন্ন মূর্তির প্রতি লোকদের প্রার্থনা করার প্রবণতা রয়েছে।
সাধারণত তারা বিশ্বাস করে যে প্রতিটি মূতির পৃথক পৃথকভাবে এক একটির বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে।
তাদের অনেকে বিশেষ উপায়ে আরোগ্য সাধনের শক্তি পাওয়ার জন্য এসব মূর্তির উপর আস্থা রাখে।
অনেকে প্রাকৃতিক বিভিন্ন দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে এসব মূর্তির উপর আস্থা রাখে। অনেকে কর্ম-পেশায় বিভিন্ন উন্নতির জন্য এসব মূর্তির কাছে গিয়ে ধ্যান করে।
এ ধরণের আরো অনেক রকমের বিশ্বাসের জন্য তাদের মণ্ডলীতে মণ্ডলীতে মূর্তিগুলো রাখে যাতে ভক্তি শ্রদ্ধা ও পূজায় তারা বিশেষ উৎসাহ পায়।
ফলস্বরূপ, বহু দূর পর্যন্ত মরিয়মের বহু মূর্তির পাশ দিয়ে তারা চলতে থাকে, তারা মনে করে এর কোনো-না কোনো একটি মূর্তিই তাদের সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারে।
স্পষ্টত বুঝা যায় এটি পুতুল পূজা ছাড়া আর কিছুই নয়, বিষয়টি ঠিক সেই তাঁকে নিয়ে নয় যাকে নিয়ে এখানে আলোচনা হচ্ছে, এখানে বলতে সে-ই একই মরিয়ম, যার দ্বারা ঐসব কোনো কিছুই হয় না।
মরিয়মের কর্ম-ক্ষমতা কখনো কোনো একটি মূর্তি থেকে আরেকটি মূর্তিতে পরিবর্তন হয় না।

বরং, যে মহিলারা এই লেখাটি পাঠ করছেন, তাদের অনেকের মতোই খাঁটি একজন স্ত্রীলোক সেই যীশুর মা মরিয়মের দিকে দৃষ্টি দেই।
আমাদের বিশ্বাস তিনি একজন ভালো স্ত্রীলোক ছিলেন, কারণ ঈশ্বর তাঁকে বিশেষ একটি কাজের জন্য মনোনীত করেছিলেন যার মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর নাম-সুনাম, প্রসিদ্ধি লাভ করবেন এবং তাঁর অবলম্বনে সেরকম বিশেষ একটি দৃষ্টান্তের সৃষ্টি হবে।
যাহোক, বিশ্বাস করার মতো কোনো কারণ নেই যে তিনি নিষ্পাপ অবস্থায় গর্ভধারণ করেছিলেন।
কারণ খ্রীষ্টের জন্মের পরে তাঁকে শুচিকরণের জন্য বলি উৎসর্গ করতে মন্দিরে দেখতে পাই (লূক ২:২২-২৪ পদ)।
এই হলো সেই একই বিধান যা সকল হিব্রু মহিলাদের সন্তান প্রসবের পরে পালন করতে হয় (লেবীয় ১২ অধ্যায়), মরিয়মকেও সেবরম করতে হয়েছিল।
এর সঙ্গে আরো বলা যায়, মরিয়ম, যীশুর মা মনোনীত হওয়ার কারণে তাঁর নিজের প্রার্থনায় ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি নিজে “আমার ত্রাণকর্তা ঈশ্বর” বলে ডেকেছেন (লূক ১:৪৭ পদ)।
বিনা পাপে তাঁর জন্মগ্রহণ হয়ে থাকলে, তাঁর শুচিকরণের জন্য কিংবা ত্রাণকর্তা, ত্রাতা পরমেশ্বরের কোনোটির প্রয়োজন হতো না।

চার্চ অব রোম শিক্ষা দেয়, মরিয়মকে ঈশ্বরের মা বলে ডাকা উচিত, এই অভিব্যক্তি বাইবেলে কোথাও প্রকাশ হয়নি।
তাদের যুক্তি হলো যে তিনি হলেন যীশুর মাতা, আর তিনিই ঈশ্বর।
যদিও প্রথম পলকে যুক্তিটি উত্তম বলে মনে করা হয়, যদি তিনি ঈশ্বরেরই মা হয়ে থাকেন, তাহলে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে, স্রষ্ট্রার মা ছিলেন সৃষ্ট (creature was the mother of the creator) : আর তা হলো ঈশ্বর প্রসঙ্গে যিনি কি-না সম্পূর্ণ অস্তিত্বে অনন্তকাল ধরেই আছেন (আদিপুস্তক ১:১ পদ; যোহন ১:১-৩,১৪ পদ) তাঁরই মা হলেন এই মরিয়ম যিনি ইতিহাসের কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ে তাঁর জন্ম হয়েছিল।

বাইবেল এমনতর শিক্ষা দেয় না, বরং এর পরিবর্তে এই শিক্ষাই দেয় যে ঈশ্বর যিনি সব সময়েই বিদ্যমান অর্থাৎ আছেন, আর তাঁর সঙ্গে কুমারীর মারফত জন্ম কোনো মানবীয় বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরুন। মরিয়ম এ ধরনের খ্রীষ্টের মানব সহজাত গুণাবলী বৈশিষ্ট্যের মাতা ছিলেন, কিন্তু খ্রীষ্টের ঐশ্বরিক সত্তা বা বৈশিষ্ট্যের নয় যা তিনি সম্পূর্ণ অস্তিত্বে অনন্তকাল ধরে বিদ্যমান (যোহন ৮:৫৭-৫৮ পদ), এ ব্যাপারে তালগোল-পাকানোর যুক্তি এড়াতে, আমরা ঈশ্বরের জননীর শর্ত ব্যবহার করতে পছন্দ করি না।

বাইবেল যখন শিক্ষা দেয় যে, খ্রীষ্টের জন্মে মরিময় ছিলেন কুমারী, এতে আমাদের বিশ্বাস করাতে কোনো যুক্তি দেয় না যে তিনি সমস্ত জীবন কুমারী ছিলেন।
আসলে মরিয়ম বাধ্য ছিলেন ঈশ্বরের, যিনি বিবাহিত লোকদের বিষয়ে বলেছেন যে মানুষ মা বাবাকে ছাড়বে ও তার স্ত্রীর সঙ্গে এক হয়ে দু’জনে একদেহ হবে (ইফিষীয় ৫:৩১ পদ; মথি ১৯;৬ পদ)।

মরিয়ম ও যোষেফ সম্পর্কে বিশেষভাবে বলতে গেলে বাইবেল স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয় : “যে পর্যন্ত ইনি পুত্র প্রসব না করিলেন, সেই পর্যন্ত যোষেফ তাঁহার পরিচয় লইলেন না, আর তিনি পুত্রের নাম যীশু রাখিলেন” (মথি ১:২৫ পদ)।
বাইবেলের এই অংশে স্পষ্ট প্রমাণে প্রকৃত অবস্থা নিশ্চিত করে যে যীশুর জন্মের আগে মরিয়মের সঙ্গে যোষেফের মিলন হয়নি, আরেকটি অংশে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে যে যীশুর জন্মে মরিয়ম কুমারী ছিলেন। বলা হচ্ছে, “যে পর্যন্ত ইনি পুত্র প্রসব না করিলেন, সেই পর্যন্ত যোষেফ তাঁহার পরিচয় লইলেন না” অর্থাৎ পুত্র প্রসব করার আগে মরিয়মের সঙ্গে যোসেফের কখনও মিলন হয়নি।

ইচ্ছাপূর্বক কিছুকাল কাছে না থাকার বাধাদায়ক ছিল, যে কারণে তাদের কোনো সম্বন্ধ ছিল না, কিছুদিন পরে মরিয়মের একটি পুত্রসন্তান হলো।
কুমারী অবস্থায় খ্রীষ্টের জন্মের পরেও মরিয়মের কুমারিত্ব থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা তাঁর জন্য সবসময় ছিল। এর চেয়ে বরং সত্য বিষয়টি প্রকাশ করে যে যীশু খ্রীষ্টের জন্মের পরে মরিয়ম ও যোষেফ নিয়মমাফিক স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আর কুমারী ছিলেন না।

মরিয়মের সমস্ত জীবনকাল কুমারী জীবন বজায় রাখার সিদ্ধান্ত যদি ঈশ্বরের ইচ্ছায় স্ত্রীলোকের জন্য বিবাহ হওয়ায় বাধ্য না থাকতেন, তাতে সত্যিকারে তাঁর সম্মান ভক্তি শ্রদ্ধা থাকতো না।

যদি মনে করেন লেখাটি কোনো মণ্ডলী-বিরোধী, তাহলে ভালো হয় আপনি আপনার বিশ্বাস পুনরায় পরীক্ষা করুন।

যীশু যা কিছু বলেছেন যা আদেশ করেছেন তা যদি কেউ প্রত্যাখ্যান করেন - তিনিই খ্রীষ্ট-বিরোধী। মথি ১২:৩০, “যে আমার সপক্ষ নয়, সে আমার বিপক্ষ” 

সহায়ক-সূত্র :
Mary's command or Catholics-Fellowship Tract Leagus; Answers to my Catholic friends by Thomas F. Heinze; Way of LIfe Encyclopedia of the Bible & Christianity. 

Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?