শয়তান কি আমাদের দিয়ে পাপ করায়? না কি সে পাপ করতে আমাদের প্রলোভনে ফেলে।


শয়তান কি আমাদের দিয়ে পাপ করায়?

শয়তানের ছাড়া কি পাপ করা যেতে পারে?
শয়তানের প্রভাব ছাড়া কি আমরা কোনো পাপ করতে পারি?
লুসিফর যখন পাপ করে, যে কিনা জগতে প্রথম পাপ করে, তখন শয়তানটা কোথায় ছিল?
পাপ করার প্রবণতায় এই লুসিফর কি ঈশ্বরের দ্বারা সৃষ্ট?
কক্ষনই নয়!!

পতনের আগে, লুসিফর চালচলনে নির্দোষ ছিল, রক্ষাকরী করূব হিসাবে তাকে অভিষেক করা হয়েছিল, সে ছিল পবিত্র আর পাপবিহীন।

বাইবেলে, যিহিষ্কেল ২৮:১৩-১৫ পদে উল্লেখ আছে . . 
“তুমি ঈশ্বরের উদ্যান এদনে ছিলে, সর্বপ্রকার বহুমূল্য প্রস্তর, চুণি, পীতমণি, হীরক, বৈদূর্যমণি, গোমেদক, সূর্যকান্ত, নীলকান্ত, হরিণ্মণি ও মরকত, এবং স্বর্ণ তোমার আচ্ছাদন ছিল, তোমার ঢাকের ও বাঁশীর কারুকার্য তোমার মধ্যে ছিল; তোমার সৃষ্টিদিনে এই সকল প্রস্তুত হইয়াছিল। তুমি অভিষিক্ত আচ্ছাদক করূব ছিলে, আমি তোমাকে স্থাপন করিয়াছিলাম, তুমি ঈশ্বরের পবিত্র পর্বতে ছিলে; তুমি অগ্নিময় প্রস্তর সকলের মধ্যে গমনাগমন করিতে। তোমার সৃষ্টিদিন অবধি তুমি আপন আচারে সিদ্ধ ছিলে; শেষে তোমার মধ্যে অন্যায় পাওয়া গেল।”

কিন্তু একটা দিন এলো যেদিন দর্প অহংকারের জন্ম হলো, পাপ তার অন্তরে গজিয়ে উঠলো।

১৭ পদে লেখা আছে -
“তোমার চিত্ত তোমার সৌন্দর্যে গর্বিত হইয়াছিল; তুমি নিজ দীপ্তি হেতু আপন জ্ঞান নষ্ট করিয়াছ; আমি তোমাকে ভূমিতে নিক্ষেপ করিলাম, রাজগণের সম্মুখে রাখিলাম, যেন তাহারা তোমাকে দেখিতে পায়।”

যিশাইয় ১৪:১৩-১৪ পদ দেখুন -
“তুমি মনে মনে বলিয়াছিলে, ‘আমি স্বর্গারোহণ করিব, ঈশ্বরের নক্ষত্রগণের ঊর্ধ্বে আমার সিংহাসন উন্নত করিব; সমাগম-পর্বতে, উত্তরদিকের প্রান্তে, উপবিষ্ট হইব; আমি মেঘরূপে উচ্চস্থলীর উপরে উঠিব, আমি পরাৎপরের তুল্য হইব।”

নিজের ইচ্ছায় থাকার অধিকার তার ছিল।
নিজের পছন্দে ধার্মিকতায় এবং পাপবিহীনভাবে স্বর্গে মহা আনন্দে জীবনযাপন করার চমৎকার সুযোগ যেমন তার ছিল তেমনি নিজের পছেন্দে স্বর্গ থেকে পতিত হবার বিষয়ও তার ছিল।
সে ঈশ্বরের দেওয়া নিজ পছন্দ অনুযায়ী স্বাধীন ইচ্ছায় চলার সেই চমৎকার মহা দানের ক্ষমতার অপব্যবহার করলো।

হবা শয়তানের প্রলোভনে পাপ করেছিল।

আদিপুস্তক ৩:১-৪ পদে লেখা আছে যে -
“সদাপ্রভু ঈশ্বরের নির্মিত ভূচর প্রাণীদের মধ্যে সর্প সর্বাপেক্ষা খল ছিল। সে ঐ নারীকে কহিল, ঈশ্বর কি বাস্তবিক বলিয়াছেন, তোমরা এই উদ্যানের কোন বৃক্ষের ফল খাইও না? নারী সর্পকে কহিলেন, আমরা এই উদ্যানস্থ বৃক্ষ সকলের ফল খাইতে পারি; কেবল উদ্যানের মধ্যস্থানে যে বৃক্ষ আছে তাহার ফলের বিষয় ঈশ্বর বলিয়াছেন, তোমরা তাহা ভোজন করিও না, স্পর্শও করিও না, করিলে মরিবে। তখন সর্প নারীকে কহিল, কোন ক্রমে মরিবে না।”

হবা প্রভাবিত হয়েছিল শয়তানের দ্বারা কিন্তু তার প্রতি ঈশ্বরের অবাধ্য হওয়ার জন্য কোনো জোর খাটানো হয়নি। এমনটা হবার নিজের ইচ্ছায় বেছে নেবার বিষয় ছিল যে সে ঐ সর্পের কথা শুনবে কি শুনবে না। 
কিন্তু আদমের ব্যপারে কী?
শয়তান কি আদমের পাপ করার ব্যাপারে সরাসরি জরিত ছিল না কি পরক্ষভাবে কাজটি সেরেছিল?
হবা যখন আদমকে সেই নিষিদ্ধ ফল খেতে দিয়েছিল তখন কি শয়তান/সর্প সেখানে সরাসরি হাজির ছিল?

আদিপুস্তক ৩:৬ পদটি দেখুন -
“. . তখন সে (হবা) তাহার ফল পাড়িয়া ভোজন করিলেন। পরে আপনার মত নিজ স্বামীকে দিলেন, আর তিনিও ভোজন করিলেন।”

আদম কিন্তু হবাকে দোষারোপ করেছিল, সর্পকে নয়।
আদম ভালো করেই জানতো যে এই ফলটি খাওয়াটা ভুল, কিন্তু হবার প্রতি তার ভালোবাসার কারণে ফলটি খেয়েছিল। ঐ ফলটা আদম খাবে-কি খাবে না এ বিষয়ের আদমের নিজেস্ব ইচ্ছা বা পছন্দ ও বিবেচনার বিষয় ছিল।
নিজ ইচ্ছায় পছন্দ অনুযায়ী বেছে নেওয়ার ক্ষমতা এই মহান দানটি ঈশ^র মানবজাতির প্রতি এখনো দিয়ে থাকেন। প্রতিটা মানুষের নিজ পছন্দ অনুযায়ী চলার অর্থাৎ স্বাধীন ইচ্ছার চলার এই চমৎকার দানটি রয়েছে।
সঠিকভাবে এই পছন্দ অনুযায়ী বেঁছে নেওয়ার ক্ষমতায় আমরা ধার্মিকগণিত হই, কিন্তু নিজ ইচ্ছায় পছন্দে এর ভুল ব্যবহার করলে আমরা পাপ করি।

আমাদের সমস্ত পাপ করার জন্য, দুঃখকষ্ট, ক্ষতি, অসুস্থতার জন্য এমনকি মৃত্যুর জন্য শয়তানকে দোষারোপ বা দায়ী করাটা কি ঠিক হয়?
আমরা নিউজে, খবরের কাগজে দেখে থাকি যে অনেকে তাদের নিজেদের অপকর্মের জন্য, নিজেদের দুষ্কর্মের জন্য চুড়ান্ত শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ভোগ করে থাকে।
এভাবে তাদের মৃত্যু হওয়ার জন্য হয়তো আমাদের কষ্ট হয় তবে তাদের জীবনের অনেক অনেক গুপ্ত ঘটনা আমাদের কাছে অজানা।
কে তাদের এমন মৃত্যুর জন্য দায়ী?
তার জীবনের এমন অবস্থার জন্য আমরা কি শুধু শয়তানকেই দোষারোপ করতে পারি, না কি ওর জীবনে সমস্ত ভুল নিজের ইচ্ছায় বা পছন্দে করার কারণেই এমন অবস্থা তার হলো?

শয়তান একটা প্রতারক, প্রবঞ্চক।
শয়তান পৃথিবীর সমস্ত লোকদের ভুল পথে চালাতে চেষ্টা করে।
শয়তান কি আমাদের দিয়ে পাপ করায়?
তা কিন্তু নয়, শয়তান আমাদের প্রলোভন দেখায়, সে খুব চেষ্টা করে আমরা যেন পাপ করি।

প্রলোভন কী পাপ?
না, এটা পাপ নয়।
প্রলোভন যত ভীষণই হোক না কেন তা পাপ নয়, কিন্তু সেই প্রলোভনকে নিজের ইচ্ছায়, নিজের পছন্দে কাজে লাগানোই পাপ।

শয়তান আমাদের প্রভুকে প্রলোভনে ফেলেছিল।
তাঁকে ভীষণভাবে লোভ দেখানো হলেও যীশু খ্রীষ্ট পাপ করেননি।

আমরা শয়তানের প্রলোভনে পড়ে আমরা স্বেচ্ছায় পাপ করি।
আমাদের পাপের জন্য শয়তান দায়ী নয়।
যখন আপনার জীবনে ভীষণ প্রলোভন আসবে তখন মনে করবেন না যে, আপনি খুব খারাপ খ্রীষ্টিয়ান।
খ্রীষ্টিয়ানরা পাপ না করলেও শয়তান তাদের দোষী সাব্যস্ত করতে চায়।
যখন আমরা প্রলোভনকে আমাদের মধ্যে আসতে দিয়ে সেই কাজ করি তখনই পাপ করি।

বাইবেল আমাদের শয়তানের ছলনার বিষয় সতর্ক করে।
শয়তান আমাদের পিছনে লেগে আছে আর সে আমাদের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য এবং পরিকল্পনা সম্পর্কে আমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে সাংঘাতিকভাবে লেগে থাকে।

ঈশ্বর আমাদের ভালোবাসেন, তিনি আমাদের প্রতি ক্ষিপ্ত নন।
কিন্তু যিনি আমাদের প্রতি ক্ষিপ্ত সে হলো শয়তান।
ঈশ্বর নন, কিন্তু শয়তানই ভুলিয়ে, বিভ্রান্ত করে আমাদের জীবনকে নষ্ট করতে চায়।

ঈশ্বরের ইচ্ছা যেন শয়তানকে কোনো সুযোগই না দেই।

সত্য আর মিথ্যা আমাদের কাছে প্রকাশ আছে, আমরা আমাদের সঠিক পছন্দে চলতে সেই গুণ ঈশ্বর আমাদের দিয়েছেন।

“কারণ আমরা সত্যের বিপক্ষে কিছুই করিতে পারি না, কেবল সত্যের সপক্ষে করিতে পারি।” ২করিন্থীয় ১৩:৮ পদ। 

Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?