প্রণাম, কদমবুসি এবং মস্তক অবনত করে অন্যের পায়ের ধুলা নিজের কপালে লেপন

প্রণাম, কদমবুসি এবং মস্তক অবনত করে অন্যের পায়ের ধুলা নিজের কপালে লেপন, মানুষকে প্রণিপাত করা সম্পর্কে কয়েকটি কথা। 

সনাতন ধর্মে বলে প্রতিটি জীবের মধ্যেই ঈশ্বর বাস করেন আর সেই ঈশ্বরকে অভিবাদন জানানই হলো প্রমাণ ও নমস্কার।

নমস্কার হাত জোড় করে কপালে ঠেকিয়ে করতে হয় আর প্রাণাম করতে হয় ষষ্টাঙ্গ বা অষ্টাঙ্গ ভাঙ্গিতে, আত্মসমর্পণ।

বয়স্করা পূজনীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাই তাদের পা ছুয়ে এমন সম্ভাষণ বা অভিনন্দন প্রদান। 

হিন্দুধর্মাবলম্বী এবং বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের মধ্যে এমনটা দেখা যায়। এসব তাদেরই শিক্ষা।

ব্রাক্ষ্মণের “পদপ্রান্তে প্রণিপাত”, সাধারণ কোনো হিন্দু ব্রাক্ষ্মণের সামনে এলেই ব্রাক্ষ্মণ তার বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল উঁচু করে ধরে রাখতো, আর সেই হিন্দু তার কপাল সেই আঙুলের মাথায় ঠেকাতো। আর ব্রাক্ষ্মণ যখন সেই বুড়ো আঙুল টেনে নিতো তখনই সেই হিন্দু তার কপাল তুলে নিতে পারতো।
ব্রাক্ষ্মণ ধর্মে এ রীতি আদিম। 

এদেশের হিন্দুরা খ্রীষ্টিয়ান অর্থাৎ খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হলে এই হিন্দুয়ানী ব্রাক্ষ্মণ্য প্রথা “পদপান্তে প্রণিপাতকে”-ই খ্রীষ্টিয়ানদের প্রণাম ও প্রণিপাতে পরিণত করে দিয়েছে।
এক কথায় সম্পূর্ণ হিন্দুয়ানী প্রথাকে খ্রীষ্টিয়ান পরিবারে ভালো কাজ হিসেবে চালু হয়ে গিয়েছে।
অনেকে এ কাজকে “সিজদা” বলেই অভিহিত করেছেন।

এভাবেই লোকেরা পরিবারের বয়ষ্কদের, গুরুজনদের, এমনকি পালক/পাস্টরদের, পুরোহিতদের, শিক্ষকদের, বড় লোকদের পা ছুয়ে তাদের পায়ের ধুলা নিজের কপালে লোপন করে।

কদমবুসি পদচুম্বন, পায়ে হাত ঠিকিয়ে সেই হাত মুখের কাছে এনে চুম্বন করাকে কদমবুসি বলে।

কদমবুসি সম্পর্কে আর একটি কথা হলো এর রীতি এই পাক-ভারতের আলিম, পীরের দরবার এবং পরিবারেই দেখা যায়।
অন্যান্য মুসলিম সমাজে এর নাম-নিশানাও নাই।
কদমবুসির সময় এমন ভঙ্গি করা যাবে না যা সিজদার মতো দেখায়।

সিজদার জন্য একমাত্র আল্লার সামনের মাথা নত করা যায়, অন্য কারও সামনে নয়।

এ কারণে একথা অনায়াসেই বলা যেতে পারে যে, কদমবুসির এ কাজটি এ দেশীয় হিন্দু সমাজ থেকে মুসলিম সমাজে এসে তা মুসলমানী রূপে গ্রহণ করেছে। 

যাহোক কথায় আছে “আমিও মানুষ তুমিও মানুষ ভক্তি দেব কেন তোমার পায়ে”

আমাদের এমন সব রীতি পালন করার মতো এমন কোনো শিক্ষা বাইবেলে নাই। 

ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষা - যীশু শয়তানকে বলেছেন, . . 
“কেননা লেখা আছে, তোমার ঈশ্বর প্রভুকেই প্রণাম করিবে, কেবল তাঁহারই আরাধনা করিবে” (মথি ৪:১০ পদ; লূক ৪:৮ পদ)

প্রেরিতশিষ্য পিতরের সাথে কর্ণীলিয়র সাক্ষাৎ -
“তখন কর্ণীলিয় তাঁহার সহিত দেখা করিয়া তাঁহার চরণে পড়িয়া প্রণাম করিলেন। কিন্তু পিতর তাঁহাকে উঠাইলেন, বলিলেন, উঠুন; আমি নিজেও মনুষ্য” (প্রেরিত ১০:২-২৬ পদ)

দর্শনে যে স্বর্গদূত প্রেরিতশিষ্য যোহনকে সমস্ত কিছু দেখাতে ছিলেন সে সম্পর্কে যোহন বলেছেন, . . 
“আমি ভজনা করিবার জন্য তাঁহার চরণের সম্মুখে পড়িলাম। আর তিনি আমাকে করিলেন, দেখিও এমন কর্ম করিও না; আমি তোমার সহদাস, এবং তোমার ভ্রাতা ভাববাদিগণের ও এই গ্রন্থে লিখিত বচন পালনকারিগণের সহদাস; ঈশ্বরেরই ভজনা কর” (প্রকাশিত বাক্য ২২:৮-৯ পদ; ১৯:১০ পদ)।

প্রভু যীশু নিজেই প্রণাম গ্রহণ করেছেন কারণ তিনি ইম্মানুয়েল (আমাদের সহিত ঈশ্বর) : . . . 

পূর্বদেশ থেকে পণ্ডিতেরা সেই রাজার রাজা, প্রভুর প্রভু, শিশু যীশুকে প্রণাম জানাতে বহু দূর থেকে এসেছিলেন। 

“হেরোদ বাজার সময়ে যিহূদিয়ার বৈৎলেহমে যীশুর জন্ম হইলে পর, দেখ, পূর্বদেশ হইতে কয়েক জন পণ্ডিত যিরূশালেমে আসিয়া কহিলেন, যিহূদীদের যে রাজা জন্মিয়াছেন, তিনি কোথায়? কারণ আমরা পূর্বদেশে তাঁহার তারা দিখিয়াছি, ও তাঁহাকে প্রণাম করিতে আসিয়াছি” মথি ২:১-২ পদ)

যীশুর পার্থিব পরিচর্যাকালে তিনি প্রণাম গ্রহণ করেছেন কেননা তিনি ঈশ্বরপুুত্র, তিনিই ঈশ্বর (ত্রিত্বের একজন) . . 
“তাহারা তাঁহাকে (যীশুকে) প্রণাম করিয়া মহানন্দে যিরূশালেমে ফিরিয়া গেলেন” (লূক ২৪:৫২ পদ)

এভাবে যদি আপনারা নিচে উল্লেখ করা পবিত্র বাইবেলের পদগুলো দেখেন, আপনারা দেখবেন যীশু সকলের প্রণাম গ্রহণ করেছেন, কিন্তু তিনি কখনো কাউকে এজন্যে বারণ করেননি বা তিরষ্কারও করেননি।

“সে কহিল, বিশ্বাস করিতেছি, প্রভু; আর সে তাঁহাকে (প্রভু যীশুকে) প্রণাম করিল” (যোহন ৯:৩৮ পদ)

পাঠ করুন: মথি ৮:২; ৯:১৮; ১৪:৩৩; ১৫:২৫; ১৮:২৬; ২৮:৯ পদ। মার্ক ৫:৬; ১৫:১৯ পদ। লূক ২৪:৫৩ পদ।
এমনকি যীশুকে বিদ্রুপ আর তিরষ্কার করার সময়ও তাঁকে নমষ্কার জানানো হয়েছে, তাঁকে প্রণাম জানানো হয়েছে। দেখুন : মার্ক ১৫:১৯ পদ

এখন অনেকে বলেন যে মানুষের মন রক্ষার জন্য এসব করতে হয়।

আমরা যদি জেনে থাকি যে এসব খ্রীষ্টিয় শিক্ষা নয়, তাহলে এসব কাজ করা উচিত নয়।
খ্রীষ্টিয় কোনো শিক্ষাই স্বেচ্ছায়, জেনেশুনে লঙ্ঘন করা অত্যন্ত কঠিন কাজ।

এসব কাজ চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
এসব আমাদের বয়স্ক মানুষদের বোঝাতে হবে।
খ্রীষ্টয় শিক্ষায় যা নয় তা করাও ঠিক নয়।

আমরা পরষ্পর আলিঙ্গন করতে পরি, তাদের হাতে, কপালে চুমু দিতে পারি।
আর এভাবে করলে সবার মন জয় করা যায়, আর এতে তারা কোনো অভিযোগ করবেন না।

আর তখন হেসে হেসে হয়তো এটাও বলে দিতে পারা যায় যে, আসলে পা ধরে প্রণাম করাটা বাইবেলে নাই।

পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে গেলে আরেকজনের সামনে মাথা নত করতে হয়।
কিন্তু খ্রীষ্টিয় শিক্ষায় একমাত্র ঈশ্বর ছাড়া অন্য কারও সামেন মাথ নত করা নিষেধ।

তাই যে-কাউকে পা ছুঁয়ে প্রণাম করা খ্রীষ্টবিরোধী।
এসব কাজ সম্পূর্ণ পাপ, আর যিনি এ কাজ করেন আর যিনি তাতে রাজি-খুশি হন তারা সবাই পাপ করছেন।

কারণ এ কাজ ঠিক মূর্তিপূজা সাদৃশ্য।
মানবতার পক্ষে চরম অপমাননাকর।
তাই এই প্রথা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।

সাধু পৌল থিষলনীকীয়দের বলেছেন যারা যীশু খ্রীষ্টকে গ্রহণ করেছিল . . 
“আর তোমরা কিরূপে প্রতিমাগণ হইতে ঈশ্বরের দিকে ফিরিয়া আসিয়াছ, যেন জীবন্ত সত্য ঈশ্বরের
সেবা করিতে পার”
(১ থিষলনীকীয় ১:৯ পদ)

প্রণিপাত একমাত্র ঈশ্বরের সামনেই মাথা নত করা, অন্য কারও সামনে নয়।

“দেখিও, দর্শনবিদ্যা ও অনর্থক প্রতারণা দ্বারা কেহ যেন তোমাদিগকে বন্দি করিয়া না যায়; তাহা মনুষ্যদের পরম্বরাগত শিক্ষার অনুরূপ, জগতের অক্ষরমালার অনুরূপ, খ্রীষ্টের অনুরূপ নয়” (কলসীয় ২:৮ পদ)


Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?