খ্রীস্টিয়ানিট অর্থাৎ খ্রীষ্ট বিশ্বাস কি শুধু স্বেতাঙ্গদের অর্থাৎ সাদা মানুষেরই?

একবার একজন আমাকে প্রশ্ন করলেন “আপনি কেন সাদাদের খ্রীষ্টিয়ান ধর্ম প্রচার করেন?”

খ্রীষ্টিয়ানিটি কি শুধু স্বেতাঙ্গদের-ই?

“খ্রীষ্টিয়ান” কথাটা যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যু আর তাঁর পুনরুত্থানের পরপরই প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল।

এই পরিচয়টা তাদেরকেই দেওয়া হয়েছিল যারা যীশুকে তাদের একমাত্র মুক্তিদাতা ও প্রভু বলে তাঁকে গ্রহণ করেছিল, স্বীকার করেছিলে যে তিনি ঈশ্বর-পুত্র, তিনি জগতে পাপীদের মুক্তির জন্য ক্রুশে রক্ত ঝরিয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন, তৃতীয় দিনে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন আর তিনি যে জীবনধারা শিখিয়েছিলেন তার দৃষ্টিান্ত/উদাহরণ হয়ে উঠেছিল। 

ঠিক সেই সময় থেকে খ্রীষ্টিয়ানিটি অর্থাৎ খ্রীষ্টিয় বিশ্বাস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, দেশের সরকারদের প্রভাবিত করেছে আর মানুষের জীবনধারা পরিবর্তন করেছে।

খ্রীস্টিয়ানিটির একটি শিক্ষা হলো সমস্ত মানুষের সাধারণ উৎস “আর তিনি (ঈশ্বর) এক ব্যক্তি হইতে মনুষ্যদের সকল জাতিকে উৎপন্ন করিয়াছেন, যেন তাহারা সমস্ত ভূতলে বাস করে; তিনি তাহাদের নির্দিষ্ট কাল ও নিবাসের সীমা স্থির করিয়া দিয়াছেন; যেন তাহারা ঈশ্বরের অন্বেষণ করে, যদি কোনো মতে হাতড়াইয়া হাতড়াইয়া তাঁহার উদ্দেশ পায়, অথচ তিনি আমাদের কাহারও হইতে দূরে নহেন।” (প্রেরিত ১৭:২৬, ২৭ পদ)।

অর্থাৎ পৃথিবীর সমস্ত ভূতলে বাস করার জন্য মানুষের সমস্ত জাতিকে এক রক্ত দিয়ে তৈরি করেছেন . . তাদের প্রভুর সন্ধান করা উচিত। 

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছে যে সমস্ত মানুষের রক্ত একই আর মানুষের রক্ত পশু/জানোয়ার থেকে আলাদা।

ভারতীয়, চাইনিজ, কৃষ্ণাঙ্গ আর অ্যাংলো সবারই একই ধরনের রক্তসেল (রক্তকণিকা)।

সমস্ত মানুষের মধ্যে প্রত্যেকটা রক্তের গ্রুপ পাওয়া যায়, যেমন A, B, AB আর O.   

যোহন ৩:১৬ পদ আমাদের বলে যে “কারণ ঈশ্বর জগতকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্রকে দান করলেন, যেন যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।”

যীশু জগতের সকলের জন্য মৃত্যুবরণ করেছেন।

২ পিতর ৩:৯ পদ পাঠ করলে আমরা বুঝতে পারব যে, ঈশ্বর আমাদের জন্য ধৈর্যশীল, তিনি চান না যে কেউ বিনষ্ট হয় বরং তিনি চান যেন পাপীরা তাদের পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়। তিনি পাপীদের মন পরিবর্তনের জন্য আরো সময় দিচ্ছেন।

যীশু খ্রীষ্ট প্রথম যিহূদীদেরকে পরিত্রাণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। 

“এমনকি যারা তাঁর নিজের, তারা তাঁকে গ্রহণ করেনি” (যোহন ১:১১ পদ)।

প্রায় দুই হাজার বছর আগে যীশু যখন পৃথিবীতে এসেছিলেন, তখন তিনি যিহূদীদের মধ্যে থাকতেন।

তাদের মধ্যে কেউ কেউ তাঁকে গ্রহণ করেছিল, কিন্তু শাসকেরা আর অনেকে তাকে নিয়ে ঠাট্টা করত, তাঁকে হয়রানি করত, যন্ত্রণা দিত, কষ্ট দিত, এমনকি তাঁকে ক্রুশে বিদ্ধ করেছিল। 

কারণ তারা তাঁর সুসমাচার শুনতো না, যীশু তখন তাঁর শিষ্যদেরকে অযিহূদীদের কাছে, পরজাতিদের কাছে পাঠিয়েছিলেন।

পরজাতিরা হলো বিশ্বের সমস্ত দেশের মানুষ যারা যিহূদী জাতির মধ্যে নয়। 

মহান দায়িত্ব অর্পণে (কর্মভারে), খ্রীষ্ট তাঁর অনুসারীদের বলেছিলেন, . . “অতএব তোমরা যাও আর সমস্ত জাতিকে শিক্ষা দাও” (মথি ২৮:১৯ পদ)।

নতুন নিয়েমের সেই প্রাথমিক প্রেরিতশিষ্যেরা আর মণ্ডলীর নেতারা শিখিয়েছিলেন যে খ্রীষ্টিয় বিশ্বাস (খ্রিস্টিয়ানিটি) হলো সকলের জন্য। 

প্রেরিত ১০:৩৪,৩৫ পদ পাঠ করলে জানা যায় যে . . তখন পিতর বলতে শুরু করলেন, আমি বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছি যে ঈশ্বরের কাছে কোনো পক্ষপাতিত্ব নেই। যিহূদীরাই যে কেবল তাঁর প্রিয়পাত্র তাই নয়। কিন্তু ঈশ্বরকে যে ভয় করে ও সদাচরণ করে সে যে জাতির লোকই হোক না কেন সে তাঁর কাছে গ্রাহ্য হয়।

খ্রীষ্টিয়ানরা যখন যিহূদী আর অন্যান্যদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছিল তখন তারা পৃথিবীর সমস্ত প্রান্তে পালিয়ে গিয়েছিল, ছড়িয়ে পরেছিল আর বহু দেশের মানুষের কাছে খ্রীষ্টের সুসমাচার প্রচার করেছিল।

প্রেরিতশিষ্য পৌল রোমীয় পুস্তকের ৩ অধ্যায়ের ২৯ পদে লিখেছেন যে ঈশ্বর কি কেবল যিহূদীদেরই ঈশ্বর? তিনি কি অ-যিহূদীদের (পরজাতিদের) ঈশ্বর নন। হ্যাঁ তিনি অ-যিহূদীদেরও ঈশ্বর।

প্রেরিত ১৩:৪৭ পদ পাঠ করলে দেখতে পাই যে মিশনারি পৌলকে ঈশ্বর বলেছিলেন যে, আমি তোমাকে অ-যিহূদীদের কাছে, অন্য জাতিদের কাছে আলোর মত করেছি, যেন তোমার মধ্য দিয়ে পৃথিবীর সারা জায়গায় সমস্ত লোকের পরিত্রাণ পায়” 

ফিলিপ একজন ইথিওপিয়ানকে প্রভু যীশুর সুসমাচারের সাক্ষ্য দিয়েছিলেন আর তাকে প্রভুর পথে এনেছিলেন পরিশেষে তাকে তার পরিত্রাণের সাক্ষ্য অনুযায়ী তার সম্মতিতে তাকে জলে বাপ্তাইজিত করেছিলেন।

ইথিওপিয়া একটি আফ্রিকান দেশ আর এই লোকটি একজন কালো ব্যক্তি বলে মনে করা হয়।
প্রেরিত ৮:২৬-৪০ পদ পাঠ করলে জানা যায়।

বর্তমানে সাধারণ দূর-দূরত্বের ভ্রমণ করা আর বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ বৃদ্ধির সাথে খ্রীষ্টের সুসমাচার সমস্ত দেশের মানুষদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে আর তারা খ্রীষ্টের সুসমাচার গ্রহণ করছে।
এমনকি তাড়নার মধ্যেও অনেক দেশের খ্রীষ্টিয়ানরা বিশস্ত থাকছে।

সমস্ত মানুষ তাদের গায়ের রং যাই হোক না কেন, প্রত্যেকে তদের পাপের জীবন ছেড়ে দিয়ে আর যীশুকে তাদের নতুন মানুষ করার অনুমতি দিয়ে খ্রীষ্টিয়ান হতে পারে।


Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?