যদি পবিত্র দূতের অস্তিত্ব থাকে, তাহলে তারা কী করে? If good Angels exist, what do they do?

শয়তান হলো পতিত দূতদের প্রধান এ বিষয়ে আলোচনা শেষ করার আগে, পবিত্র স্বর্গদূতগণ আছে কি না সে বিষয়ে আলোচনা করা দরকার। যদি পবিত্র দূতগণেরা থাকে তাহলে তাঁদের পরিচর্যার ধরণ জানা উচিৎ। আমরা দেখলাম যে কিছু দূত শয়তানের প্রতি অনুগত হয়ে পতিত হয়েছে, সবাই নয়। আমরা বাইবেল থেকে স্পষ্ট শিক্ষা পাই যে পবিত্র স্বর্গদূগণেরা আত্মিক সত্ত্বার (spirit beings) যাঁরা ঈশ্বরের গৌরব ঘোষণা এবং তাঁর আদেশ পালন করে।

অনেক বছর আগের কথা, একদল বুদ্ধিজীবী এবং বিজ্ঞান সমাজ দূতদের অস্তিত্ব নিয়ে উপহার করেছিল, তাচ্ছিল্য করেছিল। তারা দাবি করলেন যে তারা স্বর্গদূতের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না। তারা কোনো আধ্যাত্মিক জগতের কথা বিশ্বাস করে না, এমনকি অলৌকিক্ অতিপ্রাকৃতিক ও আধ্যাত্মিক অস্তিতের (supernatural realm) ঘটনাও বিশ্বাস করে না। সাম্প্রতিক সময়ে উঠতি নতুন দর্শন ও রহস্যময় (New age philosophy) এবং ঐন্দ্রজালিক/জ্যেতির্বিদ্যা (occult), মানুষ পুনরায় তারা আধ্যাত্মিক ও অলৌকিক্ অতিপ্রাকৃতিক জগত এবং স্বর্গদূতগণের সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে শুরু করে। গত বিশ বছরে স্বর্গদূত সম্পর্কে অজস্র বই প্রকাশ পেয়েছে, কোনো নির্দিষ্ট প্রোগ্রামকে উল্লেখ না করেই বলছি, বিষয়টি অনুসরণ করে অনেক টেলিভিশন প্রোগ্রামও তৈরি হয়েছে। এসব বই এবং প্রোগ্রামগুলোতে স্বর্গদূতের যে প্রতিচ্ছবি দেওয়া হয়েছ তা বাইবেলের বর্ণনার সাথে অপরিচিত। দুঃখজনক, তারা কল্পনার উপর ভিত্তি করে এগুলো তৈরি করেছেন, এসব দূতদের কথোপকথন শাস্ত্র ভিত্তিকও নয়। মধ্যযুগে, স্বর্গদূত সম্পর্কে অধিক আগ্রহ ছিল। যখন স্বর্গদূতের গুরুত্বকে অতিরঞ্জিত করা হয়, তখন বিষয়টি সমানভাবে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। আমাদের স্বর্গদূতের অস্তিত্ব মেনে নেওয়া প্রয়োজন কারণ বাইবেলে এর কথা উল্লেখ আছে।

স্বর্গদূতের অস্তিত্ব। 

বর্তমান যুগে যখন স্বর্গদূতকে কল্পকাহিনীর রহস্যময় চরিত্র হিসেবে দেখা হয়, তখন বাইবেল পরিষ্কারভাবে স্বীকার করে যে এই আত্মার অস্তিত্ব আছে। বাইবেলে অন্ততঃ ৩০০বার “দূত” (angel) এর কথা লেখা আছে। অবশ্য বাইবেলের কোনো বিষয়কে শুধুমাত্র একবার সত্য বলা হলেও তা সম্পূর্ণ সত্য। স্বর্গদূতের কথা এতবার বলা হয়েছে যে তাঁকে অস্বীকার করা বাইবেলের কোনো ছাত্রের পক্ষে অসম্ভব। 

স্বর্গদূতের অস্তিত্ব নিয়ে ফরীশী এবং সদ্দূকীদের মধ্য উত্তপ্ত বিতর্কের বিষয় ছিল। কারণ সদ্দূকীরা স্বর্গদূত কিংবা আত্মা এবং মৃতের পুনরুত্থানে বিশ্বাস করত না (প্রেরিত ২৩:৬-৮ পদ)। 

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যে স্বর্গদূতের ধারণাটি একটা যুগের ইতিহাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, কিংবা শাস্ত্রের একটি মাত্র অংশের বর্ণনা নয়। আদিপুস্তক থেকে প্রকাশিত বাক্য অবধি ৩৪টি পুস্তকে স্বর্গদূতের কথা উল্লেখ আছে। 

পুরাতন নিয়মে, স্বর্গদূতকে বাস্তব সত্ত্বা হিসাবে দেখানো হয়েছে, কোনো কল্পিত সত্ত্বা হিসাবে নয়। তারা অন্য কাজের সাথে বার্তাবাহকের (messengers) কাজ করত (গ্রিক এবং হিব্রু উভয় ভাষায় বার্তাবাহকদেরকে দূতগণ/angels বলা হয়)। পঞ্চপুস্তক (Pentateuch) এবং বিচারকর্তৃগণের পুস্তকে অনেক আলোচনায় প্রভুর দূতগণ ঐশ্বরিক (Deity) হয়ে আবির্ভূত হয়েছে। দূত বিচারকের কাজ করেছিল যখন দায়ূদ অন্যায়ভাবে লোকগণনা করেন (২ শমূয়েল ২৪:১৬ পদ)। যিশাইয় সরাফগণ (৬:১-৩ পদ) এবং যিহেষ্কেল করূবগণের (১০:১-৩ পদ) কথা বলে। গাব্রিয়েল এবং মিখায়েলের কথা দানিয়েল বলেছেন (৯: ২০-২৭; ১০:১৩; ১২:১ পদ)। সখরিয় দূতকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি (১ অধ্যায়) এবং স্বপ্নের অনুবাদক (১-৬ অধ্যায়) বলে। গীতসংহিতায় দূতেরা হলো ঈশ্বরের সেবক যাঁরা তাঁর আরাধনা করে এবং তারা ঈশ্বরের লোকদের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে (৩৪:৭; ৯১:১১; ১০৩:২০ পদ)। 

নতুন নিয়মে আমাদের প্রভুও দূতের বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেন যে পুনরুত্থিত মানুষের অবস্থা হবে দূতদের মতো (অ-জননক্রিয়/non-procreative, মথি ২২:৩০ পদ)। তিনি বলেন কালের শেষে দূতেরা দূষ্টদের মধ্য থেকে ধার্মিকদের আলাদা করবেন (১৩:৩৯ পদ) এবং দ্বিতীয় আগমনের সময় তাঁর সাথে থাকবেন (২৫:৩১ পদ)। মথি ১৮:১০ পদে বিশ্বাসীর অভিভাবক হিসাবে দূতকে (guardian angels) দেখানো হয়েছে (ইব্রীয় ১:১৩-১৪ পদ; প্রেরিত ১২:১৫ পদ)। 

নতুন নিয়মের লেখকগণ দূতদের অস্তিত্বের কথা নিশ্চিত করেছেন। তারা লিখছেন যে দূতেরা যীশুর জন্ম, মৃত্যু, পুনরুত্থান, স্বর্গারোহণ, প্রলোভন/পরীক্ষা ও জীবনের সাথে যুক্ত ছিলেন (মথি ২:১৯ পদ; মার্ক ১:১৩ পদ; লূক ২:১৩ পদ; যোহন ২০:১২ পদ; প্রেরিত ১:১০-১১ পদ)। প্রেরিত পুস্তকে দূতেরা ঈশ্বরের সেবকদের পরিচারক, তারা প্রেরিতদের জন্য কারাগারের দুয়ার খুলে দেন (প্রেরিত ৫:১৯; ১২:৫-১১ পদ), ফিলিপ ও কর্ণীলিয়কে পরিচর্যায় নিয়ে আসেন (৮:২৬; ১০:১-৭ পদ) এবং রোম যাত্রাকালে পৌলকে ঝড়ের সময় সাহস যোগায় (২৭:২৩-২৫ পদ)।

স্বর্গদূতদের প্রকৃত, চরিত্র এবং বৈশিষ্ট্য। 

তারা সৃষ্ট সত্ত্বা।
এমন একটা সময় ছিল যখন দূতগণও ছিল না (নহিমিয় ৯:৬ পদ; কলসীয় ১:১৬ পদ)। গীতসংহিতা ১৪৮:২,৫ পদে পরিষ্কারভাবে লেখা আছে যে দূতদের সৃষ্টি করা হয়েছে। শাস্ত্রের বর্ণনানুসারে তারা সংখ্যায় অগণিত (প্রকাশিত বাক্য ৫:১১ পদ; ইব্রীয় ১২:২২ পদ)।

তারা আত্মিক সত্ত্বা।
তাদের শারীরিক কিংবা মাংসিক দেহ নাই। তাঁদের দৈহিক উপস্থিতির কথা শাস্ত্রে আছে তবে তাঁকে ধরে নিতে হবে সাময়িক ঘটনা হিসাবে।

তারা মানবিক চরিত্রে সীমাবদ্ধ নয়। 
দূতদের দৃশ্যতই শারীরিক সীমাবদ্ধতা নাই এবং এক পলোকে দূরতম স্থানে ভ্রমণ করতে পারেন (প্রেরিত ১২:৭ পদ)।

দূতদের পদ মর্যাদা ও ক্ষমতার পার্থক্য।
প্রধান দূত (archangels), দূত (angels), রাজ্য (principalities), ক্ষমতা (powers), কর্তৃত্ব (dominions), সিংহাসন (thrones), শক্তি ও প্রভুত্ব (might and authorities) (কলসীয় ১:১৬ পদ) ইত্যাদি দূতদের সম্পর্কে বলা হয়েছে। তারা উচ্চতর ক্ষমতা সম্পন্ন (গীতসংহিতা ১০৩:২০ পদ; ২ পিতার ২:১১ পদ; ২ রাজাবলি ১৯:৩৫ পদ; ২ শমূয়েল ২৪:১৫,১৬ পদ; মথি ২৮:২-৪ পদ)। একজন দূত শয়তানকে এক হাজার বছরের জন্য বেঁধে রাখবে (প্রকাশিত বাক্য ২০:১-৩ পদ)।

দূতদের কাজ।

ঈশ্বর তাঁর মানব সন্তানদের সাহায্য করতে এবং আধ্যাত্মিক কাজ চালিয়ে নিতে দূতদের ব্যবহার করেন (লূক ১:২৬-৩৮ পদ)।

তারা ঈশ্বরের বিচার কাজ এবং লক্ষ্য অনুসারে কাজ করে।
দূতদের বলা হয় ঈশ্বরের গোপন প্রতিনিধি (God's secret agents) এবং নিশ্চয়ই তারা তাই। একজন দূত বিলিয়মের পথরোধ করেছিলেন (গণনাপুস্তক ২২:২২ পদ)। কালের শেষে, মনুষ্যপুত্র তাঁর একজন দূতকে পাঠাবেন, যা-কিছূ পাপের কারণ এবং যারা পাপ কাজ করে এমন সব কিছুকে তিনি উচ্ছেদ করবেন (মথি ১৩:৪১ পদ)। রাজা হেরদ একজন দূতের প্রাণঘাতী আঘাতে মারা যান (প্রেরিত ১২:২৩ পদ)।

তারা বিশ্বাসীদের প্রদর্শক।
একজন স্বর্গদূত যোসেফকে জানান যে, মরিয়ম পবিত্র আত্মার মাধ্যমে গর্ভধারণ করেছেন। তাঁর সন্তানটি বৈধ এবং তিনি যেন মরিয়মকে ত্যাগ না করেন। তাঁকে শিশুটির নাম যীশু রাখতে বলা হয়েছিল, কারণ তিনি তাঁর লোকদের পাপ থেকে উদ্ধার করবেন (মথি ১:১৮-২১ পদ)। যখন ইথিয়পীয়দের একজন নপুংসক শাস্ত্রের অর্থ বুঝতে চাইলেন, তখন দূত ফিলিপকে তার রথের কাছে নিয়ে গেলেন। ফিলিপ লোকটির প্রয়োজন সম্পর্কে কিছুই জানতেন না কিন্তু ঈশ্বর জানতেন। একজন দরিদ্র পাপীর কাছে ফিলিপ গেলেন, এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটির পথপ্রদর্শক ছিলেন একজন দূত। যখন ফিলিপ ঐ ইথিয়পীয়দের কাছে প্রচার করলেন তখন লোকটি খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করলেন এবং উদ্ধার পেলেন (প্রেরিত ৮:২৬)। এই ঘটনা দেখায় যে খ্রীষ্টের জন্য লোকদের জয় করতে মাঝেমাঝে স্বর্গদূত আমাদের সাহায্য করেন।

তারা ঈশ্বরের লোকের সহায়ক, রক্ষক এবং শক্তি। 
যখন ঈষেবল এলিওকে খুঁজতে থাকল হত্যা করার জন্য তখন দূত তাঁকে যতœ করলেন ও রক্ষা করলেন (১ রাজাবলি ১৯:৫ পদ)। দানিয়েলকে সিংহের গর্তে ফেলা হয়েছিল, সেখানে ভয়ংকর সিংহকে নিবৃত্ত করে তাঁকে রক্ষা করেছিল ও যতœ নিয়েছিল স্বর্গদূত (দানিয়েল ৬:২২ পদ)। যখন যীশু মরুভূমিতে শয়তানের মুখোমুখি হন, তখন দূত এসে তার পরিচর্যা করে (মথি ৪:১১ পদ)। যখন ঝড়ের মধ্যে পৌলের উৎসাহের দরকার ছিল, তখন স্বর্গদূত তাকে নিশ্চিত করে যে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে (প্রেরিত ২৭:২৩-২৪ পদ)।

তারা খ্রীষ্টের দ্বিতীয় আগমনের সাথে যুক্ত থাকবে।
ঠিক যেমন যীশুর জাগতিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাথে স্বর্গদূতেরা জড়িত ছিল, ঠিক তেমন, যখন তিনি মহাগৌরবের সাথে ফিরে আসবেন, তখনও দূতেরা তার সাথে থাকবে (মথি ২৫:৩১ পদ)। ২ থিষলনিকীয় ১:৭,৮ পদে পৌল একই সত্য নিশ্চিত করেছেন। 

বর্তমান সময়ে দূতেরা ঠিক একইভাবে কাজ করে কি না তা অনিশ্চিত। ঈশ্বর অতীতে নির্দিষ্ট কাজের জন্য দূতদের বেঁছে নিয়েছিলেন, শাস্ত্র তা নিশ্চিত করে, তা স্বীকার করা অযৌক্তিকও নয়। ঈশ্বর আজও একই কাজ করতে পারেন। 

পৌলের কথা অনুসারে, আমাদের জীবনযাপন দূতেরা লক্ষ করে (১ করিন্থীয় ৪: ৯ পদ); আর আমরা কীরূপে আর কীভাবে চলছি তা দূতেরা মনোযোগসহকারে খেয়াল করে। আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং জীবনযাপন এর দ্বারা প্রভাবিত হয়। বর্তমান জগতে ধার্মিকতার জীবনযাপন করা আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ, যখন আমরা বুঝতে পারি যে খ্রীষ্টিয়ানদের গমনাগমন এবং যুদ্ধ হলো প্রথমতঃ স্বর্গ ও দূতবাহিনী সম্পর্কিত।




Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?