যীশু কি শুক্রবার মৃত্যুবরণ করেছেন?
শুক্রবার, যীশু শুক্রবার মৃত্যুবরণ করেছেন এই অসত্য ধারণাটি রোমান কাথলিকদের থেকে প্রচলিত হয়ে প্রোটেস্টান্ট মণ্ডলীদের মধ্যে চলে এসেছে। আজকের দিনে যীশুর মৃত্যু দিনটিকে প্রতি বছর ‘পূর্ণ শুক্রবার’ অর্থাৎ Good
Friday রূপে পালন করা হয় - এমনকি অনেক ব্যাপ্টিস্ট ডিনোমিনেশদের তা করতে দেখা যায়, যারা কখনই প্রোটেস্ট্যান্ট নয় যা ইতিহাস বলে।
পরম্পরাগত মতবাদ বা প্রথায় এমনই ধারণা করা হয় যে যীশু খ্রীষ্ট শুক্রবার ক্রুশেহত হয়েছিলেন -- আসলেই কি তিনি সেদিন মৃত্যুবরণ করেছিলেন? শুক্রবার মাংস না খাওয়া কাথলিকদের মণ্ডলীগত একটি আইন ছিল বা এখনও তাদের তা রয়েছে, আর এই থেকে ঐ দিনটি ক্রুশে মৃত্যুর দিন ধরে নেওয়া হয়েছে। কিছু দিন আগে নিয়মটি সরিয়ে রাখা হয়েছিল, কিন্তু এখনও অনেকে তা সেচ্ছায় পালন করছে।
শাস্ত্রে মথি ১২:৪০ পদটিতে, আমাদের প্রভু যীশু বলেছেন : “কারণ যোনা যেমন তিন দিবারাত্র (তিন দিন ও তিন রাত) বৃহৎ মৎস্যের উদরে ছিলেন, তেমনি মনুষ্যপুত্রও তিন দিবারাত্র পৃথিবীর গর্ভে থাকিবেন।” (Matthew 12:40 “For as Jonas was
three days and three nights in the whale’s belly; so shall the Son of man be
three days and three nights in the heart of the earth”) কীভাবে শুক্রবার বিকেল থেকে রবিবার সকাল না হওয়া পর্যন্ত তিনটি দিন ও তিনটি রাত হতে পারে? খুব সম্ভবত, এর মধ্যে দুটি রাত আর একটি দিন থাকে আর থাকে একেরটি দিনের কিছু অংশ। এসব কথায় এবং শাস্ত্র বাদেও একটি দিন শব্দটির অর্থ কেবল আলাদা আলাদাভাবে ভাগ করে যথোপযোগী তুলনা করতে হয়। শাস্ত্র শুধু তিন দিনের কথা বলে, আমরা এসব থেকে সমান ভাগে তিনটি দিনের অর্থ বুঝে নিতে পারি। যাহোক, শাস্ত্র “তিন দিবারাত্র” (three days and three nights) নির্দিষ্ট করে দিয়েছে আর এই অনুসারে ‘তিনটি চব্বিশ-ঘন্টা’ দিনের কথা মনে জাগে।
তখনকার রোমান দিন, যিহূদী দিন, আর আমাদের এই বর্তমান দিনের পার্থক্য লক্ষ্য করা আমাদের জন্য ভালো হয়। রোমীয়দের দিনটি শুরু হয় সকাল ৬:০০ টায় আর দিনটি শেষ হয় পরের দিন সকাল ৬:০০ টায়। যিহূদীদের দিনটি শুরু হয় সূর্যাস্তে আর দিনটি শেষ হয় পরের সূর্যাস্তে (বা আসন্ন বিকেল ৬:০০টা থেকে পরবর্তী বিকেল ৬:০০টা পর্যন্ত)। আমাদের এই বর্তমান কালের দিন শুরু হয় মধ্যরাত্রে আর সমাপ্ত হয় পরবর্তী মধ্যরাত্রে।
প্রভু যীশুকে আমাদের সময়ে সকাল প্রায় ৯:০০ টায় ক্রুশের উপর প্রেক দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল আর বিকেল প্রায় ৪:০০ টা পর্যন্ত সেখানে ছিল, আর দিনটি ছিল বুধবার! তাঁকে ক্রুশ থেকে নামানো হয়েছিল ও কবর দেওয়া হয়েছিল ঐদিনের সূর্যাস্তের আগে - শাব্বাথ শুরু হবার সেই পূর্ব মুহুর্তে। বিষয়টি লক্ষ্য করা প্রয়োজন যে ঐদিনটি শুক্রবার সূর্যাস্ত বিধি-ব্যবস্থানুযায়ী সাপ্তাহিক সাধারণ শাব্বাথ (শনিবার) শুরু হওয়াটা ছিল না, কিন্তু একটি মহা শাব্বাথ (বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র সভা) - একটি নিস্তারপর্ব শাব্বাথ ছিল যা ঐ সপ্তাহের বৃহস্পতিবারে আসে! (দেখুন লেবীয় পুস্তক ২৩:৫-৭ পদ, যা আমরা তাড়ীশূন্য রুটির পর্বের সেই প্রথম দিনটি একটি শাব্বাথ দিন পেয়ে থাকি।) বৃহস্পতিবারের সূর্যাস্ত সম্পর্কে তিনি কবরে একটি দিন ও একটি রাত ছিলেন। শুক্রবার সূর্যাস্ত সম্পর্কে, তিনি দুটি দিন ও দুটি রাত কবরে ছিলেন। তারপর, পূর্ণ সেই তিন দিন ও তিন রাতের ঠিক পরে, তিনি উত্থাপিত হয়েছেন। তিনি উঠেছেন সপ্তাহের সেই প্রথম দিনে যেভাবে উদয় হয় দিন শুরু হতে (আমাদের সময়ে ঠিক শনিবার সূর্যাস্ত)। আমাদের এই বর্তমান সময় অনুযায়ী ঐ মহিলারা রবিবার খুব ভোরে কবরের কাছে আসলেন, কিন্তু খ্রীষ্ট ইতিমধ্যে উঠে চলে গেছেন। তাঁর পুনরুত্থানকে সুসমাচারে প্রচার করা “তৃতীয় দিবস সম্পর্কে” আমাদের ভাবে তা বলতে গেলে “তিন দিন পরে” উল্লেখ করতে হয়।
অনেকেই সেই পুনরুত্থান স্মরণার্থে সূর্যোদয় উপসনা করে থাকেন, এ বিষয়ে কোনো ভুল নেই। বিষয়টি আরও ভালো হয় যখন তাঁর পুনরুত্থান স্মৃতিরক্ষণার্থ অনুষ্ঠানাদি মহা অপরাহ্ন উপসনা করা হয়। অন্ততঃ আমাদের অবশ্যই সূর্যাস্ত উপাসনা করা যেতে পারে।
যীশু শনিবার আসন্ন সূর্যাস্তে উঠেছেন। আর তা ছিল আমাদের পাপসমূহের সূর্যাস্ত - কারণ আমাদের সমস্ত পাপ চিরতরে শেষ হয়ে গিয়েছে। হালেলুইয়া!!!
প্রিয় পাঠক, এই বিষয়ে আপনার কথা থাকতে পারে যে মথি ১২:৪০ পদ এবং শাস্ত্রে উল্লেখ করা অন্যান্য অংশের ভিত্তিতে আমি বলছি যে আমাদের প্রভু বুধবার ক্রুশারিত হয়েছেন। বিষয়টি যুক্তিপূর্ণ বলে আপনিও মনে করতে পারেন, কিন্তু প্রশ্ন থাকতে পারে যে তা সত্বেও খ্রীষ্টের পুনরুত্থান সেরকমভাবে প্রায় তৃতীয় দিনকে উল্লেখ করে। স্মরণ করতে হয় যে যিহূদীরা এক সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের দিন গণনা করেন। যদি খ্রীষ্ট বুধবার ক্রুশে ক্রুশারিত হন, তাহলে পুনরুত্থান পরে অন্ততঃ চতুর্থ দিন হতে হয়। আমি বিশ্বাস করি আপনি শাস্ত্রের অনুপ্রাণিত কথা বিশ্বাস করেন আর এখন এও বিশ্বাস করেন যে এর অবশ্যই কিছু ব্যাখ্যা নিশ্চয় রয়েছে, যদিও আপনি বিষয়টি বুঝতে পারছেন না।
আমি আপনার কথায় বিষয়টি সত্য বলে বলছি যে পুনরুত্থান দিনটি প্রায়ই সেভাবে তৃতীয় দিনকে উল্লেখ করে। কিন্তু এ বিষয়ে আরো যেমন “তিন দিন পরে” (মার্ক ৮:৩১ পদ); “তিন দিনের মধ্যে” (মার্ক ১৪:৩১ পদ); “তিন দিনে” (যোহন ২:১৯ পদ); তারপর আরও “তিন দিবা ও তিন রাত্র” (three days and three nights - মথি ১২:৪০) উল্লেখ রয়েছে ।
আপনার মতন আমিও শাস্ত্রের অণুপ্রানিত কথা বিশ্বাস করি, আর এসব স্পষ্ট বর্ণনার মধ্যে আমাদের সমস্যার সমাধানের জন্য সকল প্রকার ঐক্যতা অর্থাৎ সামঞ্জস্যতা খুজে বের করে নিতে হয়।
ভাষার বৈশিষ্ট্যমূলক প্রকাশভঙ্গি সম্পর্কে স্পষ্ট বর্ণনা জানতে চাইতে হয়, কারণ আমি ঐ ঐক্যতা বিশ্বাস করি। আপনি জানেন যে প্রয়োগ করার মত সেরকম বিষয় রয়েছে, যেমন একজন বলেছেন, “যদি কোনো কিছুর বিষয় যথেষ্ট পরিমানে থাকে তাহলে তার প্রয়োগটা ভালোভাবেই প্রয়োগ করা যায়।” আমাদের ভাষায় ব্যবহারে আমাদের বেশ ভুলক্রুটি হয়, প্রথমে দেখা যায় তা ব্যাকরণসংক্রান্ত অসঙ্গতা আর ভাষার ব্যবহার খারাপ হওয়ার জন্য পরিশেষে যতটুকু সুদ্ধতা আনতে চাই তা হলো ডিকসনারি যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে।
তাহলে, এখন যদি বিষয়টি যিহুদীদের মধ্যে “তৃতীয় দিবস সম্পর্কে” কোনো কথার ভাব কার্যতঃ একই রকম যেমন “তিন দিনের মধ্যে” বা “তিন দিনে” বা “তিন দিবা ও তিন রাত্র পরে” পাওয়া গিয়ে থাকে তাহলে আমাদের সমস্যা সমাধান হয়। আমি মনে করি ঈশ্বরের বাক্য নিজেই সুযুক্তিপূর্ণ এক প্রকার সমাধান পাওয়া যায়। অনুগ্রহ করে শাস্ত্র থেকে ইষ্টের
৪:১৬ পদ দেখুন, যেখানে রানী ইষ্টের উল্লেখ করে যেমন বলেছেন : “তুমি যাও, শুশনে উপস্থিত সমস্ত যিহূদীকে একত্র কর এবং সকলে আমার নিমিত্ত উপবাস কর, তিন দিবস, দিন কি রাত্রিতে কিছু আহার করিও না, কিছু পানও করিও না” এখন ৫ অধ্যায়ের ১ম পদটি দেখুন : “আর তৃতীয় দিনে ইষ্টের রাজকীয় পরিচ্ছদ পরিধান করিয়া রাজার গৃহের ভিতর প্রাঙ্গণে রাজার গৃহের সম্মুখে দাঁড়াইলেন।” আপনি এখানে স্পষ্টভাবে প্রকাশ হতে দেখছেন যে “তৃতীয় দিনে” হলো “তিন দিবস ও তিন রাত্র পরে” কার্যতঃ একই রকম।
এখন আবার ২বংশাবলি ১০:৫ পদে দেখি, যেখানে রহবিয়াম বলেছেন : “তিন দিনের পর আবার আমার নিকটে আসিও।” আর যদিও ১২ পদে পাঠ করেন : “পরে ‘তৃতীয় দিনে আমার নিকটে ফিরিয়া আসিও,’ রাজার উক্ত এই কথানুসারে যাববিয়াম এবং সমস্ত লোক তৃতীয় দিনে রহবিয়ামের নিকট উপস্থিত হইলেন।” এখানে আপনি দেখবেন যে “তৃতীয় দিনের পরে” হলো হিব্রু ভাষার বৈশিষ্টমূলক প্রকাশভঙ্গি আর ব্যবহার অনুসারে, “তৃতীয় দিন”-টির কার্যতঃ একই দাবি করে।
এখন, মথি ১২:৪০ পদটির বিষয় আমাদেরকে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে কী এই কথা নিশ্চিত করছে না যে “তেমনি মনুষ্যপুত্রও তিন দিবারাত্র পৃথিবীর গর্ভে থাকিবেন” হচ্ছে লূক ২৪:২১ পদের “এসব ছাড়া আজ তিন দিন চলিতেছে, এ সকল ঘটিয়াছে।” ভাষার ক্ষেত্রেও কার্যতঃ সেভাবে একই গণ্য করা হয়।
প্রিয় পাঠক, যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যু দিন সম্পর্কে আরো জানার প্রয়োজন রয়েছে, তাই আপনি যদি এ বিষয়ে আরও বিশ্লেষণমূলক ব্যাখ্যার প্রয়োজন মনে করেন তো পরবর্তী আরো দুটি আলোচনা দেখুন।
১। যীশু খ্রীষ্ট শুক্রবার মৃত্যুবরণ করেন নাই, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন বুধবার।
২। যীশু তিন দিবারাত্র অথবা
যীশু বাহাত্তর ঘণ্টা কবরে ছিলেন।
Comments