যীশু নাম সর্বকালে ও সর্বস্থানের আজ আমার আপনার এক মহা-মূল্যবান জয়ধ্বনি।
যে যীশু নাম সমুদয় নাম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ!!
“এই কারণ ঈশ্বর তাঁহাকে (যীশুকে) অতিশয় উচ্চপদান্বিতও করিলেন, এবং তাঁহাকে সেই নাম দান করিলেন, যাহা সমুদয় নাম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ; যেন যীশুর নামে স্বর্গ মর্ত্য পাতালনিবাসীদের “সমুদয় জানু পাতিত হয়” ফিলিপীয় ২:৯ পদ।
আমরা জানি না যে যীশু খ্রীষ্ট কবে এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন আর জানা তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যিঁনি জন্মেছিলেন। মথি, যীশু খ্রীষ্টের জন্ম ও তাঁর জীবনের প্রথমে উল্লেখ্য দশটি খেতাব বা নাম প্রকাশ করেছেন। প্রভুর গৌরব ও প্রশংসার জন্য এসব খেতাব ও তার বৈশিষ্ট্য জানা প্রয়োজন, যার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা আমি দিলাম।
খ্রীষ্ট - মুক্তিদাতার জন্মের বর্ণনায়, যীশুর শিষ্য মথি তাঁকে যীশু খ্রীষ্ট বলে উল্লেখ করেছেন (মথি ১:১৮ পদ)। হিব্রু ভাষায় যেমন তাঁকে ‘মশীহ’ তদ্রুপ গ্রিক ভাষায় ‘খ্রীষ্ট’ (যোহন ৪:২৫ পদ) বলা হয়েছে।
এর অর্থ “একজন অভিষিক্ত” আর পুরাতন নিয়মের প্রথায় বিশেষভাবে তেমনি ‘অভিষিক্ত ভাববাদী’, ‘অভিষিক্ত মহাযাজক’ (যাত্রাপুস্তক ২৯:৭ পদ, ১শমূয়েল ১০:১ পদ, ১রাজাবলি ১৯:১৬ পদ)।
ঈশ্বরের সেবার জন্য তৈল দ্বারা অভিষিক্ত হয়ে বিশেষ এক কাজে স্বর্গীয় প্রতিনিধিত্বে মনোনীত (লেবীয় পুস্তক ৮:১২ পদ)।
‘অভিষিক্ত যীশু’ অর্থাৎ ‘খ্রীষ্ট’ ক্রুশের উপর আমাদের পাপ বহন করে ঈশ্বরের বিশেষ কাজটি সমাধা করেছেন।
পবিত্র আত্মা শিশু - যীশুর বিষয়ে প্রথম থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল যে, তাঁর কোনো মানবীয় পিতা ছিল না।
মরিয়ম ছিল তাঁর মা, কিন্তু তিনি পবিত্র আত্মায় গর্ভধারণ করেছিলেন।
এক স্বর্গদূত, যোষেফকে বললেন, “. . . মরিয়মকে গ্রহণ করিতে ভয় করিও না, কেননা তাঁহার গর্ভে যাহা জন্মিয়াছে, তাহা পবিত্র আত্মা হইতে হইয়াছে” মথি ১:২০ পদ।
মরিয়ম কুমারী ছিলেন, তাঁর অনেক খ্যাতি ছিল, আর এই কুমারী পবিত্র আত্মায় অলৌকিকভাবে প্রসূতি হয়েছিলেন।
এই শিশু ছিলেন একজন পবিত্র আত্মা শিশু।
পুত্র - স্বর্গীয় দূত যোষেফকে জানালেন যে, পুত্র হয়ে শিশুটি জন্মগ্রহণ করতে যাচ্ছে (মথি ১:২১ পদ)।
বর্তমান আধুনিক চিকিৎসা যুগের আগেও গর্ভের ভ্রূণটির লিঙ্গ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছিল, যোষেফ ও মরিয়ম জানতেন যে তাদের একটি অনুপম পুত্র সন্তান হতে যাচ্ছে।
এই ছিল যিশাইয় ভাববাদীর ৭০০ বছর আগেকার সরাসরি পূর্ণ হওয়া দুটি ভাববাণী।
“এক কন্যা গর্ভবতী হইয়া পুত্র প্রসব করিবে”, এবং “একটি বালক . ., একটি পুত্র আমাদিগকে দত্ত হইয়াছে” যিশাইয় ৭:১৪; ৯:৬ পদ।
যীশু, মুক্তিদাতা - শিশুটির বিশেষ বৈশিষ্ট্যমূলক একটি নাম থাকবে।
দূতটি যোষেফকে বলেছিল, “তুমি তাঁহার নাম যীশু রাখিবে” (মথি ১:২১ পদ)।
যীশু সেই গ্রিক যিহোশূয়ের নাম থেকে, যার অর্থ “প্রভু মুক্তিদাতা”।
শিশুদের নাম দেবার অধিকার থাকে গুরুজনদের।
এ কারণেই আদমকে সকল পশু পাখিদের নাম দেবার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল (আদিপুস্তক ২:১৯ পদ)।
আর সেই একই কারণে পিতা মাতারা জন্মের সময় আমাদের নাম দিয়ে থাকেন।
কিন্তু যোষেফ ও মরিয়মের এই শিশুটির নাম দেবার সুযোগ ছিল না।
ঈশ্বর নামটি তুলে দিলেন।
তাদেরকে বলা হয়েছিল যেন শিশুটিকে যীশু নামে ডাকা হয়।
“কারণ তিনিই আপন প্রজাদিগকে তাহাদের পাপ থেকে মুক্তি দেবেন।”
একমাত্র যীশু পারেন আমাদের পাপ থেকে রক্ষা করতে।
ইম্মানূয়েল - যখন কুমারী কন্যা একটি পুত্র গর্ভে ধারণ করতে পেরেছিলেন তখনই যিশাইয়ের এই শিশুর জন্মের বিষয়ে ভাববাণীটি পূর্ণ হয়েছিল, আর এর মধ্যে আরেকটি বিষয় ছিল যে, জগৎ এই পুত্রকে ইম্মানূয়েল বলে ডাকতে পারবে, যার অর্থ “আমাদের সহিত ঈশ্বর” (মথি ১:২৩ পদ)।
যখন যীশু সেই রাতে বৈৎলেহমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তখন এই ঘটনাটি সব সময়ের জন্য আর একবারই মাত্র ঘটেছিল, আর তা হলো ঈশ্বর এক মানুষ হলেন।
দুটি বৈশিষ্ট্যে - স্বর্গীয় এবং মানবীয়, ঈশ্বর-মানব ঐক্যতায় চিরদিনের জন্য যুক্ত হয়েছিলেন - যীশু খ্রীষ্ট।
ঈশ্বর আর দীর্ঘকাল সেই স্বর্গেই কেবল বাস করেন নাই; এখন তিনি মানুষের মধ্যে বাস করেন।
খ্রীষ্টের জন্মেই ঈশ্বর আমাদের সঙ্গে চিরদিনের জন্য বাস করেন।
প্রথমজাত - মরিয়ম যোষেফের সঙ্গে বাগদত্তা হয়েছিলেন, কিন্তু যীশু, মরিয়মের প্রথমজাত পুত্র জন্ম না হওয়া পর্যন্ত তারা কখনই স্বামী স্ত্রী হতে পারেননি (মথি ১:২৫ পদ)।
একটি পরিবারের জন্য প্রথম পুত্র সন্তান হওয়া মহা আনন্দের বিষয় হয় আর বিশেষ দায়িত্বের সুযোগও হয়।
কিন্তু মিশরে তখন প্রথমজাত হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুতে ভয়ঙ্কর এক রাতে পরিণত হয়েছিল।
নিস্তারপর্বের ফল যেমন, প্রভু মোশীকে আদেশ করেছিলেন,
“ইস্রায়েল-সন্তানদের মধ্যে মনুষ্য হউক কিম্বা পশু হউক, গর্ভ উম্মোচক সমস্ত প্রথমজাত ফল আমার উদ্দেশ্যে পবিত্র কর; তাহা আমারই” (যাত্রাপুস্তক ১৩:২ পদ)।
মরিয়মের প্রথমজাত পুত্র ঈশ্বরের ছিলেন, কারণ তিনি ঈশ্বরেরই পুত্র ছিলেন।
রাজা - বৈৎলেহমে যীশুর জন্মের কিছুদিন পরে, পূর্বদেশীয় পণ্ডিতেরা যিরূশালেমে খোঁজ নিতে এলেন, “যিহূদীদের যে রাজা জন্মিয়াছেন, তিনি কোথায়?” (মথি ২:২ পদ)।
যখন হেরোদ এই কথা শুনতে পেলেন, তিনি ভাবনায় পড়লেন।
তিনি অবশ্যই তার নিজের কথা চিন্তা করলেন, ‘আমি তো জানতাম আমিই যিহূদীদের রাজা।
কিন্তু এই পণ্ডিতেরা তো আরো ভালো জানেন।’
রাজা হলো দেশের প্রভু আর এই উচ্চ পদস্থ এর খোঁজে পণ্ডিতেরা এই ‘রাজা’ খেতাবটি উল্লেখ করে পূর্ব দেশ থেকে এসেছিলেন।
তিনি ছিলেন পৃথিবীর রাজা। পণ্ডিত ব্যক্তিরা একমনে সেই রাজার খোঁজ করে চলছিলেন।
অধ্যক্ষ/শাসনকর্তা - যখন হেরোদ সমস্ত প্রধান যাজক ও ধর্মগুরুদের খোঁজ নিতে বললেন যে কোথায় সেই মসিহ জন্মিবেন, তখন এই ধর্মীয় গুরুরা ভাববাদী মীখার কথা উল্লেখ করে বললেন “
“আর তুমি, হে যিহূদা দেশের বৈৎলেহম, তুমি যিহূদার অধ্যক্ষদের মধ্যে কোনো মতে ক্ষুদ্রতম নও, কারণ তোমা হইতে সেই অধ্যক্ষ উৎপন্ন হইবেন, যিনি আমার প্রজা ইস্রায়েলকে পালন করিবেন” মথি ২:৬ পদ।
এই অধ্যক্ষ বা শাসনকর্তা ইস্রায়েলের যত্ম নেবেন, যেভাবে একজন মেষপালক একপাল মেষের যত্ম নেন। এই অধ্যক্ষ সেই প্রভু, আর এই প্রভু আমার পালক।
শিশু - কেমন এক আশ্চর্যের বিষয় যে ঈশ্বর মানুষ হয়ে আসতে সেরকম কোনো শক্তিশালী যোদ্ধা হয়ে আসেন নাই, কিন্তু তেমনই ঠিক কোমল, নিরীহ সরল শিশুর মত হতে চাইলেন।
সময় মত সেই পূর্ব দেশীয় পণ্ডিত ব্যক্তিরা সেই গৃহে এসে পৌঁছিলেন, “তাঁহারা গৃহমধ্যে গিয়া শিশুটিকে তাঁহার মাতা মরিয়মের সহিত দেখিতে পাইলেন” (মথি ২:১১ পদ)।
এখানেই তাঁরা সেই শিশুটির সামনে ভুমিষ্ঠ হলেন আর প্রণাম করলেন, আর তাদের সঙ্গে করে আনা সোনা, সুগন্ধি-ধুপ ও গন্ধরস তাঁকে উপহার দিলেন।
ইনি ছিলেন যিশাইয় ভাববানী পূর্ণ হওয়া দীর্ঘকালব্যাপী প্রত্যাশিত সেই শিশু “
“কারণ একটি বালক আমাদের জন্য জন্মিয়াছেন” (যিশাইয় ৯:৬ পদ), যে শিশুটিকে বলা হয় আশ্চর্যমন্ত্রী, শক্তিমান ঈশ্বর, অনন্তকালীন পিতা, শান্তিরাজ।
এই শিশুটি কখনই একটি সাধারণ শিশুর মত ছিলেন না।
নাসরতীয় - সাধু মথির লেখা যীশুর জন্মের বিবরণে যোষেফ ও মরিয়মের সঙ্গে এই শিশু যীশু নাসরতে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।
“যেন ভাববাদিগণ দ্বারা কথিত এই বচন পূর্ণ হয় যে, তিনি নাসরতীয় বলিয়া আখ্যাত হইবেন” মথি ২:২৩ পদ।
সম্ভবত এ প্রসঙ্গে এক অঙ্কুর যা যিশয়ের বংশ থেকে উৎপন্ন হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
যিশাইয় ভাববাণী করেছিলেন . .
“আর যিশয়ের গুঁড়ি হইতে এক পল্লব নির্গত হইবেন, ও তাহার মূল হইতে উৎপন্ন এক চারা ফল প্রদান করিবেন। আর সদাপ্রভুর আত্মা . . . তাঁহাতে অধিষ্ঠান করিবেন” (যিশাইয় ১১:১,২ পদ।
যীশু হবেন একজন নাসরতীয়, নাসরতের একজন বসবাসকারী, কিন্তু তিনি অনন্তকাল রাজত্ব করতে - পূর্ব থেকে নির্দিষ্ট এক আসনে সেই দায়ূদ সিংহাসনেও বসবেন।
যাবপাত্রে শিশুটি সাধারণ কোনো শিশু নয়, আর তিনি আজকের কোনো সাধারণ ব্যক্তিও নন।
তিনি যীশু খ্রীষ্ট - মশীহ, সেই মুক্তিদাতা, ইম্মানূয়েল, রাজার রাজা প্রভুর প্রভু, তিনিই ঈশ্বর, আমাদের একমাত্র সহায় আর এই নামের উদ্দেশ্যে আজ আমাদের প্রার্থনা।
“তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক” (মথি ৬:৯)।
ঈশ্বরের নাম কোনো নিন্দিত বা তুচ্ছের বিষয় নয়, কারণ এই নাম “সমুদয় নাম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ” ফিলিপীয় ২:৯ পদ।
এ জন্যই ঈশ্বরের আদেশ . .
“তোমরা ঈশ্বর সদাপ্রভুর নাম অনর্থক লইও না, কেননা যে কেহ তাঁহার নাম অনর্থক লয়, সদাপ্রভু তাহাকে নির্দ্দোষ করিবেন না” (যাত্রপুস্তক ২০:৭ পদ)।
জগতের সকলে আজ আমরা পাপ করেছি, আমরা আমাদের পাপাচারণে তাঁর নামের অগৈারব করেছি, ঈশ্বর আমাদের সর্বোৎকৃষ্ট, পরম কৃতিত্বে সৃষ্টি সাধন করেছিলেন।
ঈশ্বর তাঁর প্রতিমূর্তি ও স্বভাব-বৈশিষ্ট্য ষ্পষ্টভাবে প্রকাশ করার জন্য আমাদের সৃষ্টি করেছিলেন।
কিন্তু মানুষ আত্ম-অহঙ্কারী হয়ে নিজের ইচ্ছামত চলতে চাইলো।
ঈশ্বরের প্রতি মানুষ আর নম্র ও নত হতে চাইল না, সুতরাং মানুষ তার সৃষ্টিকর্তার স্বভাব ও বৈশিষ্ট থেকে বঞ্চিত হলো।
কিন্তু ক্ষমাশীল ঈশ্বর তিনি আবার এই বঞ্চিত মানুষদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে উদ্ধার করে তাঁর সন্তান হবার অধিকার দিলেন (যোহন ১:১২ পদ)।
তাই, যদি আপনার স্বর্গে যাবার পরিকল্পনা থাকে, তাহলে আপনার ধন্য যীশু খ্রীষ্টের নামের মাধ্যমে যেতে হবে, কারণ . .
“আর অন্য কাহারও কাছে পরিত্রাণ নাই; কেননা আকাশের নীচে মনুষ্যদের মধ্যে দত্ত এমন আর কোনো নাম নেই, যে নামে আমাদিগকে পরিত্রাণ পাইতে হবে” প্রেরিত ৪:১২ পদ।
“যে কেহ প্রভুর নামে ডাকে, সে পরিত্রাণ পাইবে (রোমীয় ১০:১৩ পদ।
যীশু নাম সর্বকালে ও সর্বস্থানের আজ আমার ও আপনার একটি মহা-মূল্যবান জয়ধ্বনি।
আমেন ! আমেন !! আমেন !!!
Comments