প্রভু যীশু খ্রীষ্টের এ জগতে আগমনের ১৫টি উদ্দেশ্য


 প্রভু যীশু খ্রীষ্টের এ জগতে আগমনের ১৫টি উদ্দেশ্য. . 

কেন ঈশ্বরপুত্র প্রভু যীশু খ্রীষ্ট স্বর্গের সেই আনন্দধাম ছেড়ে . 
. . এই পাপ-পঙ্কিলতায় পরিপূর্ণ এই পৃথিবীতে এসেছিলেন . . 
. . তা অনেকের কাছেই বোধগম্য নয়, . .  . .                       . . অনেকেই যীশুর আগমনের গুরুত্ব বুঝতে পারেন না।


কী এমন কারণ ছিল যে . .
        . . যীশু খ্রীষ্টকে এই নোংরা পৃথিবীতে আসতে হয়েছিল? 

যীশুর জন্য কি সেই স্বর্গপুরী, . . 
. . সেই মনোহর স্থান যা আমাদের কল্পনার চেয়েও সুন্দর, .  
. . সেই স্থানে থাকাটাই উপযুক্ত ছিল না?

ভেবে দেখুন, . . 
        . . ঐ রকম একটা মধুর স্থান ছেড়ে কেউ কি . . 
. . এভাবে এমনতর জগতে আসতে চাইবে? . . 
. . আমার তা মনে হয় না। 

কিন্তু প্রভু যীশু খ্রীষ্ট এসেছিলেন। 

কেন যীশু স্বর্গের মতো একটা সুখকর স্থান ছেড়ে, . . 
. . তাঁর পিতার সেই কোল ছেড়ে এই পৃথিবীতে এসেছিলেন? 

পৃথিবীতে যীশুর আসার উদ্দেশ্য কী? 

আমরা বাইবেল থেকে সে বিষয়ে ১৫টি উদ্দেশ্য দেখতে পাই, . . 
. . যার কারণে যীশু খ্রীষ্টকে এ পৃথিবীতে আসতে হয়েছিল।

১। যীশু জগতে পাপীদের মুক্তির জন্য এসেছিলেন। 

“এই কথা বিশ্বাসযোগ্য এবং সম্পূর্ণভাবে গ্রহণের যোগ্য যে, পাপ থেকে পাপীদের উদ্ধার করবার  জন্যই খ্রীষ্ট যীশু জগতে এসেছিলেন” ১তীমথিয় ১:১৫ পদ।  

২। যীশু জগতে পাপীদের আহ্বান করতে এসেছিলেন, পাপীদের আহ্বান করতে যেন তারা মন ফিরায়।

 যীশু বলেছেন . . “পাপ থেকে মন ফিরাবার জন্য আমি ধার্মিকদের ডাকতে আসিনি  বরং পাপীদের  ডাকতে এসেছি যেন তাহারা মন ফিরায়” লূক ৫:৩২ পদ।

৩। যীশু জগতে হারানোদের অন্বেষণ করতে , পাপীদের তালাস করতে আর তাদের উদ্ধারের জন্য এসেছিলেন।

“. . যারা হারিয়ে গেছে তাদের খোঁজ করতে ও পাপ থেকে উদ্ধার করতেই মনুষ্যপুত্র এসেছেন” লূক ১৯:১০ পদ 

৪। যীশু জগতে সকলের জীবনের সঠিক পথ দেখাতে এসেছিলেন এবং মুক্তির মূল্যরূপে নিজের প্রাণ দিতে এসেছিলেন। 

যীশু বলেছেন . . “মনে রেখো মনুষ্যপুত্র সেবা পেতে আসেননি বরং সেবা করতে এসেছেন এবং  অনেক লোকের মুক্তির মূল্য হিসাবে তাদের প্রাণের পরিবর্তে নিজের প্রাণ দিতে এসেছেন” মথি ২০:২৮ পদ।

৫। যীশু জগতে একজন রাজা হতে এসেছিলেন আর সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য বহন করতে এসেছিলেন। 

“পীলাত যীশুকে বললেন, “তাহলে তুমি কি রাজা? যীশু বললেন, “আপনি ঠিকই বলেছেন যে, আমি  রাজা। সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেবার জন্য আমি জন্মেছি আর সেই জন্যই আমি জগতে এসেছি।  যে  কেউ সত্যের সে আমার কথা শোনে” যোহন ১৮:৩৭ পদ। 

৬। যীশু জগতে তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করতে এসেছিলেন। 

যীশু বলেছেন . . “কারণ আমি আমার ইচ্ছামত কাজ করতে আসিনি, বরং যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁরই ইচ্ছামত কাজ করতে স্বর্গ থেকে নেমে এসেছি” যোহন ৬:৩৮ পদ। 

৭। যীশু জগতে, জগতের আলো হতে এসেছিলেন। 

যীশু বলেছেন . . “আমি এই জগতে আলো হিসাবে এসেছি যেন আমার উপরে যে বিশ্বাস করে  সে অন্ধকারে না থাকে। যদি কেউ আমার কথা শুনে সেইমত না চলে তবে আমি নিজে তার বিচার  করি না, কারণ আমি মানুষকে দোষী প্রমাণ করতে আসিনি বরং মানুষকে পাপ থেকে উদ্ধার  করতে এসেছি” যোহন ১২:৪৬,৪৭ পদ।

৮। যীশু জগতে এসেছিলেন যেন জগতের মানুষ পরিপূর্ণ জীবন পেতে পারে। 

যীশু বলেছেন . . “আমি এসেছি যেন তারা জীবন পায়, আর সেই জীবন যেন পরিপূর্ণ হয়” যোহন ১০:১০ পদ।  

৯। যীশু জগতে, জগতের বিচার করতে এসেছিলেন। 

“যীশু বললেন, আমি এই জগতে বিচার করবার জন্য এসেছি, যেন যারা দেখতে পায় না তারা  দেখতে পায় এবং যারা দেখতে পায় তারা অন্ধ হয়” যোহন ৯:৩৯ পদ। 

১০। যীশু জগতে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসংবাদ প্রচার করতে এসেছিলেন।

“যীশু তাঁদের বললেন, “চল, আমরা কাছের গ্রামগুলোতে যাই যেন আমি সেখানেও প্রচার করতে পারি, কারণ সেইজন্যই তো আমি এসেছি”  মার্ক ১:৩৮ পদ। 

১১। যীশু জগতে ক্রুশে মৃত্যুবরণ করতে এসেছিলেন। 

যীশু বলেছেন . . “আমার মন এখন অস্থির হয়ে উঠেছে। আমি কি এই কথাই বলবো, ‘পিতা, যে  সময় এসেছে সেই সময়ের হাত থেকে আমাকে রক্ষা কর’? কিন্তু এরই জন্য তো আমি এই সময়  পর্যন্ত এসেছি” যোহন ১২:২৭ পদ।

১২। যীশু জগতে ধর্মের বিধি-ব্যবস্থা পূর্ণ করতে এসেছিলেন। 

যীশু বলেছেন . . “এই কথা মনে কোরো না, আমি মোশির আইন-কানুন আর নবীদের লেখা বাতিল  করতে এসেছি। আমি সেগুলো বাতিল করতে আসিনি বরং পূর্ণ করতে এসেছি” মথি ৫:১৭ পদ।

১৩। যীশু জগতে মানুষদের পৃথক করতে এসেছিলেন। 

যীশু বলেছেন . . “আমি পৃথিবীতে শান্তি দিতে এসেছি এই কথা মনে কোরো না। আমি শান্তি দিতে  আসিনি রবং মানুষকে মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এসেছি; ছেলেকে বাবার বিরুদ্ধে, মেয়েকে  মায়ের বিরুদ্ধে, বৌকে শাশুড়ীর বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এসেছি” মথি ১০:৩৪,৩৫ পদ। 

(খ্রীষ্ট এখানে বুঝিয়েছেন যে, সত্যকে গ্রহণ করা আর আত্মিয়স্বজন-পরিজনদের মধ্যে কোনটি উপযুক্ত তা বেছে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে প্রায়ই মতানৈক্য কিংবা বিভেদের কারণ হয়।)

১৪। যীশু জগতে এসেছিলেন কারণ পিতা (ঈশ্বর) তাঁকে পাঠিয়েছেন। 

“যীশু পুনরায় তাঁহাদের প্রতি বলিলেন, তোমাদের প্রতি শান্তি হউক; আমার পিতা যেমন আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন, তদ্রূপ আমিও তোমাদের পাঠাই” যোহন ২০:২১ পদ।

 ক।  আমাদের পাপের জন্য ক্ষমা লাভার্থে যজ্ঞ বলি দিতে (প্রায়শ্চিত্ত করতে) পিতা যীশুকে পাঠিয়েছেন।

“আমরা যে ঈশ্বরকে ভালোবেসেছিলাম তা নয়, কিন্তু তিনি আমাদের ভালোবেসে তাঁর  পুত্রকে  পাঠিয়ে দিয়েছিলেন, যেন পুত্র তাঁর নিজের জীবন-উৎসর্গের দ্বারা আমাদের পাপ দূর  করে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করেন। এটাই হলো ভালোবাসা” ১যোহন ৪:১০ পদ। 

খ।  পিতা যীশুকে পাঠিয়েছেন আর যীশুকে জগতের সেই মুক্তিদাতারূপে দিয়েছেন। 

“ঈশ্বর মানুষকে এতো ভালোবাসলেন যে, তাঁর একমাত্র পুত্রকে তিনি দান করলেন, যেন যে  কেউ সেই পুত্রের উপরে বিশ্বাস করে সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায়। ঈশ্বর  মানুষকে দোষী প্রমাণ  করবার জন্য তাঁর পুত্রকে জগতে পাঠাননি, বরং মানুষ যেন পুত্রের  দ্বারা পাপ থেকে উদ্ধার পায়  সেইজন্য তিনি তাঁকে পাঠিয়েছেন। যে সেই পুত্রের উপরে  বিশ্বাস করে তার কোনো বিচার হয় না, কিন্তু যে বিশ্বাস করে না তাকে দোষী বলে আগেই স্থির করা হয়ে গেছে, কারণ সে ঈশ্বরের একমাত্র পুত্রের  উপর বিশ্বাস করেনি” যোহন ৩:১৬-১৮ পদ।

  গ।  পিতা যীশুকে পাঠিয়েছেন আমাদের অপরাধ থেকে ফিরে আসার মাধ্যমে আমরা যেন আশীর্বাদস্বরূপ হই। 

“আমাদের প্রত্যেককে মন্দ পথ থেকে ফিরিয়ে আশীর্বাদ করবার জন্যই ঈশ্বর তাঁর দাস  যীশুকে ঠিক করে প্রথমে আপনাদের কাছে পাঠিয়েছিলেন” প্রেরিত ৩:২৬ পদ। 

 ঘ।  পিতা তাঁর পুত্রকে আমাদের উপর বিধিব্যবস্থার অভিশাপ থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পাঠিয়েছেন। 

“কিন্তু সময় পূর্ণ হলে পর ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে পাঠিয়ে দিলেন। সেই পুত্র স্ত্রীলোকের গর্ভে  জন্মগ্রহণ করলেন এবং আইন-কানুনের অধীনে জীবন কাটালেন, যেন আইন-কানুনের  অধীনে থাকা লোকদের তিনি মুক্ত করতে পারেন, আর ঈশ^রের সন্তান হিসাবে আমাদের  গ্রহণ করতে পারেন” গালাতীয় ৪:৪-৫ পদ। 

ঙ। ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে মানুষের হৃদয়ে নতুন শক্তি যোগানের জন্য পাঠিয়েছেন। সেই শক্তি বা ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বিধি-ব্যবস্থার ধার্মিকতা পরিপূর্ণ করতে মানুষকে সক্ষম করে তোলার জন্য।

“মানুষের পাপ-স্বভাবের দরুন আইন-কানুন শক্তিহীন হয়ে পড়েছিল, আর সেইজন্য  আইন-কানুন যা করতে পারেনি ঈশ্বর নিজে তা করেছেন। তিনি পাপ দূর করবার জন্য  নিজের নিষ্পাপ পুত্রকে মানুষের স্বভাব দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন এবং তাঁর পুত্রের মধ্য দিয়ে  পাপের করে তার শক্তিকে বাতিল করে দিলেন। তিনি তা করলেন যেন পাপ-স্বভাবের  অধীনে না চলে পবিত্র আত্মার অধীনে চলবার দরুন আমাদের মধ্যে আইন-কানুনের দাবি-দাওয়া পূর্ণ হয়” রোমীয় ৮:৩,৪ পদ।

১৫।  যীশু জগতে ঈশ্বরের প্রেম স্থাপন করতে এসেছিলেন।

“আমরা যে ঈশ্বরকে ভালোবেসেছিলাম তা নয়, কিন্তু তিনি আমাদের ভালোবেসে তাঁর পুত্রকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন, যেন পুত্র তাঁর নিজের জীবন-উৎসর্গের দ্বারা আমাদের পাপ দূর করে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট  করেন। এটাই হলো ভালোবাসা” ১যোহন ৪:১০ পদ।

যীশু খ্রীষ্টের এই পৃথিবীতে আসার সমস্ত উদ্দেশ্যই মানুষকে নিয়েই। 

 যে মানুষকে ঈশ্বর তাঁর নিজের মতো, তাঁর সাদৃশ্যে তৈরি করেছিলেন, সেই মানুষ তাঁর অবাধ্য হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে পাপ করে ঈশ্বর থেকে দূরে সরে গেল। 

কিন্তু ঈশ্বর চান যেন মানুষ তাঁর কাছে পুনরায় আসতে পারে। 

সেজন্য তিনি তাঁর পুত্রকে এই জগতে পাঠালেন, যেন তিনি ঈশ্বর এবং মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন হন। 

তিনি এ জগতে এসেছেন আপনার এবং আমার সকলের জন্য। তাঁর আসার সমস্ত উদ্দেশ্য আপনি এবং আমি। 

সেজন্য যীশু খ্রীষ্টের এই পৃথিবীতে আসার উদ্দেশ্য যেন আমাদের জীবনে সফল হয়। 

আপনি কি সেই নিশ্চয়তায় আছেন, যে নিশ্চয়তা দিতে প্রভুর আগমন?

আপনি কি সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত যে যীশু খ্রীষ্টের এ জগতে আসার উদ্দেশ্য আপনার জীবনে পূর্ণ হয়েছে? 

আপনি কি দৃঢ় চিত্তে বলতে পারেন, . .

“আমি জানি প্রভু আমার জন্য এ পৃথিবীতে এসেছেন।
আমি তাঁকে আমার মুক্তিদাতারূপে গ্রহণ করেছি। 
আমি জানি যে পিতার সাথে আমার আর কোনো ব্যবধান নেই।
আমি মৃত্যুর পরে অবশ্যই তাঁর কাছে যাচ্ছি।” 

আপনি যদি তাই বলতে না পারেন, তবে আপনার জীবনে তাঁর আসার উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়নি। 

মনে রাখবেন ঈশ্বর তাঁর আসার উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ হতে দেবেন না।
তিনি আপনার কাছ থেকে তার শোধ নেবেন।
খ্রীষ্টের পরিশোধিত মূল্য যদি আপনি গ্রহণ না করেন, তবে সেই মূল্য আপনাকে দিতে হবে। 
আর তা হবে চরম মূল্য, যা আপনাকে যুগ যুগ ধরে দিয়ে যেতে হবে ভয়ংকর সেই নরক কুণ্ডে। 

তাই এখনো যদি আপনি প্রভুকে আপনার মুক্তিদাতারূপে গ্রহণ না করে থাকেন, তবে এখনই আপনি তাঁকে গ্রহণ করুন।
তাঁর সম্মুখে আপনি নিজেকে নত করুন।
আপনার সমস্ত মন্দতা থেকে মন পরিবর্তন করে খ্রীষ্টের প্রতি আপনার মন সমর্পন করুন। 
তাঁকে আপনার হৃদয়ে আহব্বান করুন।

আরো বলা যায় . . . 

“. . তুমি তাঁহার নাম যীশু (মুক্তিদাতা) রাখবে; করণ তিনিই আপন প্রজাদিগকে তাহাদের পাপ হইতে উদ্ধার করিবেন”  মথি ১:২১ পদ।

“. . যেন তিনি (যীশু খ্রীষ্ট) মূল্য (ক্রুশে তাঁর রক্ত ঝরানো এবং তাঁর মৃত্যু) দিয়া ব্যবস্থার অধীন লোকদিগকে মুক্ত করেন, যে আমরা দত্তকপুত্রত্ব প্রাপ্ত হই” গালাতীয় ৪:৪ পদ। 

পাঠ করুন : লূক ৪:১৮-১৯ পদ।


Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?