উদ্দিপনা সভা, জাগরণী সভা, Revival meeting এর আয়োজন কেন, এর উপকারীতা কী?
মণ্ডলীর পালক যখন বুঝতে পারেন যে . .
মণ্ডলীর সভ্যসভ্যাদের মধ্যে অনেকে অনেক কিছুতে হতাশায় ভুগছেন,
রোগভোগে কাতর, ধার-দেনায় জর্জরিত,
আপনজন কেউ মারা যাওয়ায় শোকে আছেন,
চাকরীতে, ব্যবসায় এছাড়াও পারিবারিক অশান্তিসহ অনেক কিছু থাকে,
যাতে সভ্যসভ্যারা মণ্ডলীতে নিয়মিত হতে পারছেন না,
বিশ্বাসী ভাইবোনদের মধ্যে যোগাযোগ রাখছেন না,
আর তখনই আত্মিক উদ্দিপনার (Revival meeting) প্রয়োজন হয়,
আর মণ্ডলীর পালক এর প্রয়োজন এর গুরুত্ব বুঝে
এমনই এক আত্মিক উদ্দিপনা সভা আয়োজন করেন।
এই আত্মিক উদ্দিপনা সভা নতুন কোনো প্রাণ জয় করার জন্য নয়,
কিন্তু মণ্ডলীর সভ্যসভ্যাদের প্রভুর বাক্যে উদ্দীপ্ত করা,
আত্মিকভাবে তাদের জাগিয়ে তোলা।
উদ্দিপনা সভায় ঈশ্বরের বাক্য প্রচারই হলো প্রধান বিষয়,
যদিও প্রার্থনা থাকে, আরাধনা সঙ্গীত থাকে, তবে বাক্যের প্রচার হলো গুরুত্বপূর্ণ।
পরিশেষে সভ্যসভ্যাদের চমৎকার চমৎকার সাক্ষ্য থাকে যা তিনি এই উদ্দিপনা সভা থেকে উপকৃত হয়েছেন, আত্মিকভাবে জেগে উঠেছেন।
এমনকি অনেকে এই সভাতেই নতুনভাবে প্রভুর আহ্বান পান তাঁর নাম প্রচার করার জন্য, আমেন।
অনেক সময় মণ্ডলীর অবস্থা যখন ঢিলেঢালা হয় তখন আমরা বুঝতে পারি
একটা উদ্দীপনা (Revival) সভার আয়োজনে এ অবস্থার উন্নতি হবে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো কাদের মধ্যে উদ্দীপনা (Revive) আসবে?
অপরিত্রাণপ্রাপ্ত,
যাদের মধ্যে ঈশ্বরীয় জীবন নাই, তাদের মধ্যে কি উদ্দীপনা সম্ভপর?
কারণ অপরিত্রাণপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আদমের পাপেই বাস করছে।
কিন্তু খ্রীষ্টবিশ্বাসী যারা, যীশুতে বিশ্বাস দ্বারা অনন্ত মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়েছেন,
নতুন জীবন লাভ করেছেন যেমন লেখা আছে,
“ফলতঃ কেহ যদি খ্রীষ্টে থাকে, তবে নূতন সৃষ্টি হইল; পুরাতন বিষয়গুলি অতীত হইয়াছ, দেখ সেইগুলি নূতন হইয়া উঠিয়াছে” (২ করিন্থীয় ৫:১৭ পদ)।
তারা অনন্ত জীবন পেয়েছেন, পেয়েছেন উপচয়পূর্ণ জীবন যেমন যীশু বলেছেন
“আমি আসিয়াছি, যেন তাহারা জীবন পায় ও উপচয় পায়” যোহন ১০:১০ পদ।
এ রকম অনেকে আছেন, যারা প্রভুর সান্নিধ্য থেকে, সহভাগিতা থেকে দূরে চলে যান,
ফলে তাদের জীবনে আত্মিক উদ্দীপনা কমে যায়।
এর অর্থ হলো তারা তাদের পরিত্রাণ হারালো না, কিন্তু পরিত্রাণের . . আনন্দ থেকে বঞ্চিত তারা।
দায়ূদ নিজের কথা বলেছেন . .
“তোমর সম্মুখ হইতে আমাকে দূর করিও না, তোমার পবিত্র আত্মাকে আমা হইতে হরণ করিও না। তোমার পরিত্রাণের আনন্দ আমাকে পুনরায় দেও, ইচ্ছুক (উদার) আত্মা দ্বারা আমাকে ধরিয়া রাখ ” (গীতসংহিতা ৫১:১১,১২ পদ)।
দাউদ ঘৃণিত পাপে পতিত হয়ে ঈশ্বরের আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন, পবিত্র আত্মার সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন তাই আর্তস্বরে ঈশ্বরের কাছে ঐ আনন্দ, আশীর্বাদ ফিরে পাওয়ার জন্য ক্রন্দন করেছিলেন। তিনি তা প্রাপ্তও হয়েছিলেন।
ঠিক ঐ রকমভাবে আমরা খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা যারা আমরা প্রভুকে ব্যক্তিগত মুক্তিদাতা বলে জেনেছি অথচ কোনোভাবে পাপে আবদ্ধ হয়ে তাঁর সান্নিধ্য থেকে দূরে যাই, তখন আমরা পরিত্রাণের আনন্দ হারাই।
ঠিক তখনই আমাদের ঐ অবস্থা থেকে ফিরে আসার জন্য উদ্দীপনা সভা খুবই আবশ্যকীয় হয়ে পড়ে, যার মাধ্যমে আমরা সুযোগ পাই নিজেদের সংশোধন করে ঈশ্বরের কাছে নিজেদের সমর্পণ করার, আর হারিয়ে যাওয়া আত্মিক আনন্দকে পুনরুদ্ধার করার।
উদ্দীপনার (Revival) মূল বিষয় হলো, ঈশ্বরের বাক্য।
ঈশ্বরের বাক্য শোনার জন্য আমাদের আকাঙ্খিত হতে হবে, সুযোগ নিতে হবে।
অনেক সময় আমরা মণ্ডলীর পরিচালক/প্রচারকের দিকে তাকিয়ে গীর্জায় যাই, সভায় যাই।
আমরা মনে করি, আমাদের বিচার বিবেচনায় যারা ভালো প্রচারক, ভালো বক্তা, সুন্দরভাব গুছিয়ে প্রার্থনা করতে পারেন, ভালো গান করতে পারেন শুধু তাদের মাধ্যমেই আমরা আশীর্বাদ পেতে পারি।
কিন্তু দাউদ বলেছেন, . .
“ঈশ্বর সদাপ্রভু যাহা বলিলেন, আমি তাহা শুনিব; কেননা তিনি আপন প্রজাদের, আপন সাধুগণের কাছে শান্তির কথা বলিবেন; কিন্তু তাহারা পুনর্বার মূর্খতায় না ফিরুকে” (গীতসংহিতা ৮৫:৮ পদ)।
সমস্ত প্রচার সভা থেকেই আমরা ঈশ্বরের রব শুনতে পাব যদি আমরা তাঁর বাক্য শুনতে আগ্রহী হই।
পালক/প্রচারক যে-ই হোক না কেন, তার মাধ্যমেই ঈশ্বর আমাদের কাছে তাঁর কথা প্রকাশ করেন। কারণ ঈশ্বরের বাক্য স্বয়ং ঈশ্বরের আত্মাই প্রকাশ করে, বক্তা নয়, শুধু তাঁকে ব্যবহার করেন মাত্র।
আমরা কি উদ্দীপ্ত হতে পরেছি ?? নাকি এখনো হারানো অবস্থাতেই আছি।
যারা হারানো তাদের উদ্দীপনা আসবে না।
উদ্দীপনা আসবে খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের যারা পিতার সম্মুখে ভুল করেন আবার আত্মায় তারা উজ্জিবীত হন।
কখনই যদি উদ্দীপ্ত না হতে পারেন আপনি হারানো অবস্থাতেই আছেন।
সাধু দায়ুদের কথা স্বরণ করুন।
আজকাল বিভিন্ন আত্মিক সভা শুরুতে জাগতীক ধরনধারণে গানবাজনা আর হিন্দুদের মতো পূজায় আরতি, নাচানাচি করা ছাড়া মনে হয় তাদের আত্মিক সভায় লোকদের আকৃষ্ট করা যাচ্ছে না।
এই হলো সভার আত্মিকশূণ্য আয়োজকদের আয়োজন।
জগতের বিভিন্ন মন-মানসিকতার বিভিন্ন লোকদের বিভিন্ন রকমের সুরের গান আর তাদের মতো তালেতালে নাচানাচি আত্মিক সভায় স্থান পাচ্ছে সভার উদ্বোধনীতে, প্রচার শুরুতে ।
সভায় ধর্মগুরুদের কীভাবে আপ্যায়ন করা হলো কীভাবে তাদের সভায় বরণ করা হলো, কেমন হলো সভায় খাওয়াদাওয়া সেসব ছবি সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকে পোস্ট হয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু প্রচারকেরা কী প্রচার করলেন, উপস্থিতি লোকেরা ঈশ্বরের বাক্যে কেমন অনুপ্রাণিত হলো, আত্মিক উদ্দিপনায় তারা কী সাক্ষ্য নিয়ে বাড়ী ফিরে গেল তার কোনো কথা নাই।
তারপর সভা শেষে আয়-ব্যায়ের হিসাব আসবে এবার সভা খুব ভালো হয়েছে, বহু লোক হয়েছে, সভার খরচের চেয়ে আয় ভালো হয়েছে, আয়োজনটা ভালো ছিল।
শয়তান খুবই সু-কৌশলে তার ফন্দি খাঁটিয়ে যাচ্ছে।
এভাবে মানুষের সবকিছুর আয়োজন যেন অসার আর শূণ্যই থেকে যায় ।
আর হাহাকার হৃদয়ে আত্মিক পনর্জাগরণ, উদ্দিপনা বিলুপ্তই থেকে যায়।
আসুন সাধু দয়ূদের আর্তনাধের সাথে এই প্রার্থনা করি . .
“তুমিই কি আবার আমাদিগকে সঞ্জীবিত করিবে না, যেন তোমার প্রজাগণ তোমাতে আনন্দ করে” গীতসংহিতা ৮৫:৬ পদ
Comments