কোরবানির গোস্ত
এ প্রশ্নটা কয়েক বছর আগে কোরবানী ঈদের দু’দিন পর এক সকালে একজন মুসলিম ভদ্রলোক আমাকে করেন। অনেক মুসলিম ভদ্রলোক ছিলেন সেখানে, এছাড়াও একজন হিন্দু ভদ্রলোকও সেখানে ছিলেন। সকালে হাটতে যাই চন্দ্রিমা উদ্যানে, অনেকে যান। হাটার পর একজন বুড়ির চায়ের টং-এ অনেকে বসেন চা খান, আমিও বসি। যাহোক আজ যারা ছিলেন তারা সবাই জানেন আমি খ্রীষ্টিয়ান আর প্রচারকও। সবাই বেশ ভদ্র, শিক্ষিত, এখন অবসর জীবন।
প্রশ্নটা আমি কয়েক সেকেন্ড ভেবে উত্তর দিলাম, আমি গোস্ত খাই। হিন্দু ভদ্রলোক আমাকে ইঙ্গিত করে বলেলেন উনারা সব খান। বুঝতে পারলাম আমার সেখানে উপস্থিত হওয়ার আগেই ঐ হিন্দু ভদ্রলোকের সাথে অন্যান্যদের এ বিষয়ে কথা হয়েছে।
অবশ্যই ওনাদের বিশ্বাস যে কোরবানির গোস্ত খেলে কিংবা কোনো দেবতাদের উদ্দেশ্যে কোনো নাড়ু, সন্দেশ, কলা, চিড়াদই এই প্রসাদ খেলে সোয়াব হবে, ভাগ্য ভালো, আশির্বাদের কারণ হবে।
এখন আমি ঘরে এসে লিখতে বসলাম।
আমরা বিশ্বাস করি না কোনো দেবতাদের (god and
goddess), এমনকি বিশ্বাস করি না তাদের উদ্দেশ্যে কোনো বলি/কোরবানির বস্তু আশির্বাদিত হলো। খাদ্য গ্রহণ করি পিতা ঈশ্বরেকে (God) কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে। ঈশ্বরকে যখন ধন্যবাদ জানিয়ে খাদ্য গ্রহণ করি তখন কি তা আগেকার দেবতাদের কোনো প্রভাব থাকে এসব খাদ্যে? ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, মমতাময়ী ঈশ্বর, করুনাময়ী ঈশ্বর, প্রেমময় ঈশ্বর যিনি আমাকে খাদ্য যুগিয়েছেন আর এর জন্য তাঁকে যে কৃতজ্ঞাসহকারে ধন্যবাদ জানাই তা তিনি গ্রাহ্য করেন, আমেন!!!!
সাধু পৌল করিন্থীয় পত্রটি লেখার সময় গ্রিসের প্রত্যেকটা শহরে অনেক মূর্তিপূজা হতো আর দেবতাদের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য উৎসর্গ করা হতো। তখন কারোর পক্ষেই সম্ভব ছিল না বলিকৃত মাংস খাওয়া থেকে নিজেদের দূরে রাখা। অর্থাৎ দেবতাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গকৃত মাংস বাজারে বিক্রী করা হতো।
সাধু পৌল সুসমাচার প্রচারের ফলে করিন্থে অনেকে মূর্তিপূজা ত্যাগ করে যীশু খ্রীষ্টকে অনুসরণ করা শুরু করল। এমনকি তাদের এমন জ্ঞানও দেখা দিল যে তারা দেবতা, মূর্তি ইত্যাদিকে কোনো কিছুই বলেই মনে করত না। তাই দেবতা বা মূর্তির কাছে বলি উৎসর্গ করা সামগ্রী তারা অনায়াসে গ্রহণ করার মানসিকতা পোষণ করত। কারণ তাদের নিশ্চিত জ্ঞান ছিল যে, মূর্তির কাছে, প্রতিমাদের কাছে খাদ্য দ্রব্য বলিদান বা উৎসর্গকরণের দ্বারা অশুচি হয় না। (১ করিন্থীয় ৮:৪-৬ পদ)। যদি কোনো খ্রীষ্ট বিশ্বাসী তার খ্রীষ্টের উপর দৃঢ় বিশ্বাসের জন্য দেবতাদের (god and
goddess) সামনে উৎসর্গকৃত কোনো দ্রব্য খায়, তাতে সে নিজেকে দোষী করে না, কারণ সে কি করছে এবং কেন করছে সেই ধর্মীয় জ্ঞান তার আছে। কিন্তু সাধু পৌল এ বিষয়টা এই কারণেই করেছিলেন যে, কিছু মানুষের দ্বারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল বিশ্বাসীদের মধ্যে দুর্বলতা প্রবেশ না করে (৭ পদ)। তিনি বলতে চেয়েছেন যে, যতক্ষণ না বিশ্বাসীরা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ জ্ঞান লাভ করে (১ করিস্থীয় ১০:২০ পদ) ততক্ষণ পর্যন্ত দুর্বল বিশ্বাসীদের স্বার্থে এরকম কাজ থেকে বিরত থাকা ভালো। কারণ যে প্রশ্নটি সাধু পৌল এখানে তুলেছেন সেটা হলো, করিন্থের লোকেরা যারা একান্তভাবে পৌত্তলিকতায় বিশ্বাস করে, তাদের সরল হৃদয় এখনও ঐ সমস্ত প্রভাব থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হয়নি। ঠিক এই সময়েই যদি তারা পরিপক্ক খ্রীষ্টিয়ানদের বলির মাংস বা অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী বা প্রসাদ গ্রহণ করতে দেখে, তাহলে তারাও বিশ্বাসে দুর্বল হয়ে পড়বে। তখন খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা তাদের ধর্মীয় জ্ঞানে অন্ধ হয়ে যদি একজন নতুন বা অল্প বিশ্বাসীদের কাছে একই কাজ করে, তাহলে সে দোষী হবে, কারণ সে নতুন বা অল্প বিশ্বাসীর বিশ্বাসের কথা চিন্তা না করেই সে কাজটা করলো আর তার ধর্মবিশ্বাসে আঘাত করলো।
বাইবেলের এই সময় অনেক পরজাতি খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হয়েছিলেন, কিন্তু তাদের অনেকেই আবার আগের রীতিতে প্রতিমার প্রদাস তৈরি করত, দেবতাদের আশির্বাদের জন্য। তাদের উদ্দেশ্যে সাধু পৌলের সতর্কতা। যেমন এখন অনেক জায়গায় হিন্দুরা খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হন আবার পুজার সময় পূজা দেন, এর যুক্তিতে তারা বলেন যে খ্রীষ্টিয়ান হয়েছি তাতে কি, পুজার সময় কি পূজা দেব না?
“ভালো, প্রতিমার কাছে উৎকৃষ্ট বলি ভোজনের বিষয়ে আমরা জানি, প্রতিমা জগতে কিছুই নয়, এবং ঈশ্বর এক ছাড়া দ্বিতীয় নাই” (১ করিন্থীয় ৮:৪ পদ)। আমাদের ঈশ্বরই জীবন্ত ঈশ্বর!!
যে খাবারই প্রভু যুগিয়ে দেন আমার দেহের জন্য উপযোগী তা আমি প্রভুকে প্রার্থনার মাধ্যমে ধন্যবাদ জানিয়ে গ্রহণ করি। কারন আমি বিশ্বাস করি জীবন্ত ঈশ্বরকে (Living God) । এখন বাজারে অনেক গরু, ছাগল, মুরগির মাংস পাওয়া যায়। এসব হত্যা করার সময় বিভিন্ন জনে বিভিন্নভাবে তাদের ধর্মীয রীতিতে মারে। আমরা সেসব কিনি, রান্না করি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়ে গ্রহণ করি, এর আগে কারা কীভাবে করলো তাতে আমার কিছু আসে-যায় না, আমরা জানতে চাই না যে এসব মারার সময় আল্লাহর নামে কালেমা পাঠ করা হয়েছিল কি-না, দোয়া করা হয়েছিল কি-না। আমি বিশ্বাস করি না কোনো খাদ্য তাদের প্রতিমার কাছে উৎসর্গ করায় বা আল্লার নামে দোয়া করায় তা আমার জন্য এ খাদ্য আশির্বাদ বা বরকত হলো। আমি শুধু এসব আমার খাবার হিসাবেই দেখলাম। এসব খাবার তাদের কোনো দোয়ার আমার কোনো মঙ্গলই হবে না যতক্ষণ না আমি আমার জীবন্ত ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়ে গ্রহণ করি।
রোমীয় ১৪:১৪ পদ।
“অতএব তোমরা ভোজন, কি পান, কি যাহা কিছু কর, সকলই ঈশ্বরের গৌরবার্থে কর।” (১ করিন্থীয় ১০:৩১ পদ)।
Comments