ঈশ্বর কেন এমন মরণব্যাধি দিচ্ছেন, এসব কী শেষ কালের লক্ষণ?

করোনাভাইরাস সংক্রামক ব্যাধির সংগে আমরা এখন পরিচিত হয়েছি। এর আগেও ইবোলা নামে আরেকটি ছোঁয়াচে রোগের কথা শুনেছি। এ দুটো রোগই মহামারী আকারে ছড়িয়ে পরেছে। এ রোগের লক্ষণ, শরীরে তাপমাত্র বেড়ে যায়, সর্দি হাঁচি কাশিসহ শ্বাসযন্ত্রের এবং ফুসফুসের সংক্রমণ, গলাব্যথা ও ক্লান্তি।

আমাদের অনেকেরই  প্রশ্ন, ঈশ্বর কেন এমন মরণব্যাধি দিচ্ছেন, এসব কী শেষ কালের লক্ষণ?

বাইবেলে বিশেষভাবে পুরাতন নিয়মে বহু এমন ঘটনা উল্লেখ আছে যে ঈশ্বর তাঁর লোকদের উপর এবং তাঁর শত্রুদের উপর কঠিন কঠিন সব মহামারী প্রয়োগ করেছিলেন।

“আমার সর্বপ্রকার আঘাত প্রেরণ করিব; . . আমার প্রভাব তোমাকে দেখাই . . ” যাত্রাপুস্তক ৯:১৪,১৬ পদ।

ঈশ্বর ইস্রালীয়দের ফরৌণের দাসত্ব থেকে ও মিসর থেকে তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য করতে মিশরে পীড়াদায়ক সব মহামারীর দুর্যোগে আঘাত করেছিলেন। তাদের উপর এমন সব আক্রমনের থেকে ঈশ্বরের লোকেরা ঐসব আঘাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল।

“অতএব তোমরা যে যে গৃহে থাক, তোমাদের পক্ষে ঐ রক্ত চিহ্নস্বরূপে সেই সেই গৃহের উপরে থাকিবে; তাহাতে আমি যখন মিসর দেশকে আঘাত করিব, তখন সেই রক্ত দেখিলে তোমাদিগকে ছাড়িয়া অগ্রে যাইব, সংহারের আঘাত তোমাদের উপরে পরিবে না” যাত্রাপুস্তক ১২:১২ পদ।

“আর কহিলেন, তুমি যদি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর কথায় মনোযোগ কর, তাঁহার দৃষ্টিতে যাহা ন্যায্য তাহাই কর, তাঁহার আজ্ঞাতে কর্ণপাত কর, ও তাঁহার বিধি সকল পালন কর, তবে আমি মিসরীয়দিগকে যে সকল রোগে আক্রান্ত করিলাম, সেই সকলেতে তোমাকে আক্রমণ করিতে দিব না; কেননা আমি সদাপ্রভু তোমার আরোগ্যকারী” যাত্রাপুস্তক ১৫:২৬ পদ।

এভাবে তিনি রোগ-ব্যাধি এবং অন্যান্য সমস্যায় তাঁর সার্বভৌম নিয়ন্ত্রণের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

ঈশ্বর তাঁর লোকদের অবাধ্যতার পরিণতি সেই মহামারী সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন।

“আর যদি তোমরা আমার বিপরীত আচরণ কর, ও আমার কথা শুনিতে না চাও, তবে আমি তোমাদের পাপনুসারে তোমাদিগকে আরও সাত গুণ আঘাত করিবে।” লেবীয় ২৬:২১ পদ।    

“আমি নিয়ম লঙ্ঘনের প্রতিফল দিবার জন্য তোমাদের উপরে খড়্গ আনিব, তোমরা আপন আপন নগরের মধ্যে একত্রীভূত হইবে, আমি তোমাদের মধ্যে মহামারী পাঠাইব, এবং তোমরা শত্রুহস্তে সমর্পিত হইবে” লেবীয় ২৬:২৫ পদ।

দুইটি আলাদা আলাদ ঘটনায় ঈশ্বর বিভিন্ন অবাধ্যতার জন্য ১৪,৭০০ জন মানুষকে, আবার ২৪,০০০ জন মানুষকে ধ্বংস করেছিলেন।

“যাহারা কোরহের ব্যাপারে মারা পড়ে, তাহারা ছাড়া আরও চৌদ্দ সহ¯্র সাত শত লোক ঐ মহামারীতে মারা পড়িল” গণনা পুস্তক ১৬:৪৯ পদ।,

“যাহারা ঐ মহামারীতে মরিয়াছিল, তাহারা চব্বিশ সহস্র লোক” গণনা পুস্তক ২৫:৯ পদ।

মোশিকে ব্যবস্থা দেওয়ার পর, ঈশ্বর লোকদের তা পালন করতে বললেন আর তা না হলে তাদের উপর অনেক ভোগান্তির আদেশ দিয়েছিলেন, এর মধ্যে এমন কিছু যা বর্তমানের করোনাভাইরাস ও ইবোলার মতই . . 

“সদাপ্রভু ক্ষয়রোগ, জ্বর, জ্বালা, প্রচণ্ড উত্তাপ ও খড়্গ এবং শস্যের শোষ ও ম্লানি রোগ দ্বারা তোমাকে আঘাত করিবেন . .” দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:২২ পদ।

এসব ঈশ্বরের দ্বারা বহু ধরনের মহামারী ও রোগের কয়েকটি উদাহরণ।  

আমাদের প্রেমময় ও করুণাময় ঈশ্বর তাঁর লোকদের প্রতি এমন ক্রোধ ও রোষ দেখিয়েছেন যা কল্পনা করা অনেক সময় কঠিন। কিন্তু ঈশ্বরের শাস্তি সব সময়ই অনুতাপ আর পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে।

ঈশ্বর শলোমনকে বলেছিলেন, . . 
“আমি যদি আকাশ রুদ্ধ করি, আর বৃষ্টি না হয়, কিম্বা দেশ বিনষ্ট করিতে পঙ্গপালদিগকে আজ্ঞা করি, অথবা আপন প্রজাদের মধ্যে মহামারী প্রেরণ করি, আমার প্রজারা, যাহাদের উপরে আমার নাম কীর্তিত হইয়াছে, তাহারা যদি নম্র হইয়া প্রার্থনা করে ও আমার মুখের অন্বেষণ করে, এবং তাহাদের কুপথ হইতে ফিরে, তবে আমি স্বর্গ হইতে তাহা শুনিব, তাহাদের পাপ ক্ষমা করিব ও তাহাদের দেশ আরোগ্য করিব” ২বংশাবলি ৭:১৩-১৪ পদ

এখানে আমরা দেখতে পাই ঈশ্বর নিজেই তার লোকদের প্রতি বিপর্যয়, কষ্ট, দুর্ভোগ এনেছিলেন যেন তারা অনুতাপ করে, অনুশোচনা করে, মন ফিরায় আর তারা তাঁর সন্তানরূপে তাদের স্বর্গীয় পিতার কাছে ফিরে আসে।

নতুন নিয়মে যীশু, মথি ৯:৩৫; ১০:১; মার্ক ৩:১০ পদগুলোতে উল্লেখ আছে যে যীশু অনেক স্থানে গিয়ে মানুষের রোগ ব্যাধিতে কষ্ট ও দুর্ভোগে জর্জরিত অবস্থা দেখলেন। তিনি তাদের প্রতি করুণাবিষ্ট হলেন -

“সর্বপ্রকার রোগ ও ব্যাধি আরোগ্য করিতে করিলেন।” 

যীশু তাঁর শিষ্যদেরও ক্ষমতা দিলেন যেন তারা
“যেন তাঁহারা . . সর্বপ্রকার রোগ ও ব্যাধি আরোগ্য করিতে পারেন” 

ইস্রায়েলদের কাছে তাঁর শক্তি প্রদর্শন করার জন্য ঈশ্বর যেমন মহামারী ও রোগ ব্যবহার করতে বেঁছে নিয়েছিলেন, ঠিক তেমনী যীশুও সত্যই ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন কি না তা যাচাই করার জন্য একই শক্তি দেখিয়ে দিতে নিরাময় করেছিলেন। তিনি শিষ্যদের তাদের পরিচর্যাকে যাচাই করার জন্য একই নিরাময় শক্তি দিয়েছিলেন।

“পরে তিনি সেই বারো জনকে একত্রে ডাকিয়া তাঁহাদিগকে সমস্ত ভূতের উপরে, এবং রোগ ভাল করিবার জন্য, শক্তি ও কর্তৃত্ব দিলেন” লূক ৯:১ পদ। 

ঈশ্বর এখনও তাঁর নিজের উদ্দেশ্যে অসুস্থতার অনুমতি দেন, তবে কখনও কখনও রোগ এমনকি দুনিয়াজোড়া মহামারীটা শুধুমাত্র পাপের জগতে বাস করার পরিণতি। মহামারীর একটা নিদিষ্ট আধ্যাত্মিক কারণ আছে কি না তা নির্ধারণের কোনো উপায় নাই তবে আমরা জানি যে সমস্ত কিছুর উপরে ঈশ্বরের  সার্বভৌম নিয়ন্ত্রণ আছে।

“যেহেতু সকলই তাঁহা হইতে ও তাঁহার দ্বারা ও তাঁহার নিমিত্ত . . ” রোমীয় ১১:৩৬ পদ।,

যারা প্রভুকে জানেন আর তাঁকে ভালোবাসেন তাদের ভালোর জন্য সমস্ত কিছু একসাথ কাজ করবেন তিনি,

“আর আমরা জানি, যাহারা ঈশ্বরকে প্রেম করে, যাহারা তাঁহার সঙ্কল্প অনুসারে আহূত, তাহাদের পক্ষে সকলই মঙ্গলার্থে একসঙ্গে কার্য করিতেছে” রোমীয় ৮:২৮ পদ

ইবোলা আর করোনাভাইরাস জাতীয় অসুস্থতা ছড়িয়ে পড়া মহামারীগুলো ঠিক সেই আগের ঘটনারই ধারাবাহিক যা শেষ কালে অংশ। যীশু শেষ দিনের সাথে যুক্ত ভবিষ্যতের দুর্দশাগুলো উল্লেখ করেছিলেন,

“বৃহৎ বৃহৎ ভূমিকম্প এবং স্থানে স্থানে দুভিক্ষ হইবে, আর আকাশে ভয়ঙ্কও ভয়ঙ্কও লক্ষণ ও মহৎ মহৎ চিহ্ন হইবে” লূক ২১:১১ পদ।

প্রকাশিত বাক্যের ১১ অধ্যায়ের ৬ পদে, . . দুইজন সাক্ষীর ক্ষমতা থাকবে। 

“আকাশ রুদ্ধ করিতে তাঁহাদের ক্ষমতা আছে, যেন তাঁহাদের ভাববাণী কথনের সমস্ত দিন বৃষ্টি না হয়; এবং জল রক্ত করিবার জন্য জলের উপরে ক্ষমতা এবং যতবার ইচ্ছা করেন পৃথিবীকে সমস্ত আঘাতে আঘাত করিবার ক্ষমতা তাঁহাদের আছে।”

প্রকাশিত বাক্য ১৬ অধ্যায়ে বর্ণনানুযায়ী সপ্তম স্বর্গদূত ঈশ্বরের রোষের চূড়ান্ত, ভয়াবহ ও প্রচণ্ড বিচারাজ্ঞা ধারাবাহিকভাবে সাতটি বাটী অর্থাৎ দুর্দশা চালাবেন। 

মহামারী রোগের উপস্থিতি ঈশ্বরের নির্দিষ্ট পাপের বিচারের সাথে আবদ্ধ বা নাও হতে পারে। এসব শুধুমাত্র পাপের জগতে বাস করার পরিণতি হতে পারে। যেহেতু কেউ যীশু আগমনের সময় জানে না, তাই আমাদের অবশ্যই জগতব্যাপী মহামারীটি প্রমাণ করতে হবে যে আমরা শেষকালে বাস করছি। যারা যীশু খ্রীষ্টকে মুক্তিদাতা হিসাবে জানে না, তাদের জন্য রোগ ব্যাধিগুলো স্মরণ করিয়ে দেওয়া উচিত যে এই পৃথিবীতে জীবন চিরকালের জন্য নয় এবং যে কোনোও মুর্হূতে হারিয়ে যেতে পারে, মৃত্যু হতে পারে। মহামারী তো খারাপ, নরক আরও খারাপ হবে।

খ্রীষ্টিয় বিশ্বাস অবশ্য পরিত্রাণের নিশ্চয়তা আর চিরন্তন প্রত্যাশার কারণ আমাদের জন্য খ্রীষ্টের রক্তকে ক্রুশে বর্ষণ করেছিলেন।

যিশাইয় ৫৩:৫ পদ; ২করিন্থীয় ৫:২১ পদ; ইব্রীয় ৯:২৮ পদ।


Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?