কেন আমি একজন ব্যাপ্টিস্ট

লেখক : পাস্টর ডগলাস হ্যামেট


“আমি তাদের সকলের একজন সঙ্গী, যারা তোমাকে ভয় করে; এবং যারা তোমার আদেশমালা পালন করে” (গীতসংহিতা ১১৯:৬৩)।

নিয়মিত গৃহ পরিদর্শনে আমি কোনো বাড়িতে গেলে যিনি বাড়ির দরজা খুলে দেন, তাকে আমার পরিচয় দিয়ে আমার আসার উদ্দেশ্য বলি। তখন ঐসব বাড়ির লোকেরা প্রায়ই বলে থাকেন, “ওহো, আমি তো অমুক গির্জায় যাই, আর আমি কোন্ মণ্ডলীতে যাই তাতে কিছু যায় আসে না কারণ আমরা তো সকলে একই জায়গায় যাওয়ার জন্য সচেষ্ট। আসলে এতে কোনো পার্থক্যের সৃষ্টি করে না।” 

প্রিয় পাঠক, আপনি প্রায়ই বিভিন্ন লোকের কাছে শুনতে পাবেন যে কোন্ গির্জাতে আপনি যান তাতে কিছু যায় আসে না। কিন্তু আমি মনে করি এতে যায় আসে এবং বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য আমি মনে করি না যে আপনি তেমন কোনো গির্জায় যোগ দেওয়ার ফলে আপনি স্বর্গে যাবেন কি যাবেন না সেই পার্থক্য সৃষ্টি করে। পৃথিবীর কোনো মণ্ডলী আপনাকে স্বর্গে নিয়ে যেতে পারবে না। একমাত্র একটি উপায়ে আপনি স্বর্গে যেতে পারবেন আর তা হলো যীশু খ্রীষ্টের ঝরিত রক্ত দ্বারা। কিন্তু একটি খাঁটি মণ্ডলীকে হতে হয় সেই প্রকারের যা প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বর চান। আর সেখানেই আপনি সঠিক পথ নির্দেশনার সুযোগ পাবেন। সেখানেই আপনি প্রভুকে আপনার মুক্তিদাতারূপে জানা ও পরিত্রাণপ্রাপ্ত হওয়ার সুযোগ বেশি পাবেন। সেজন্যই অন্ততপক্ষে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।

এটিও গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি যখন পরিত্রাণ লাভ করেন তখন একজন খ্রীষ্টিয়ান হিসাবে আপনার কাছে ঈশ্বর আশা করেন - আপনি তাঁর কথা শুনবেন। তিনি যা বলেন তা করবেন অর্থাৎ তাঁর বাধ্য থাকবেন। গীতসংহিতা ১১৯:৬৩ পদে “ভয়” শব্দটির অর্থ ‘পবিত্র হিসাবে গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা এবং আস্থা রাখা’ (ভয়ের অনুভূতি থাকা)। অর্থাৎ আপনি ঈশ্বরকে শ্রদ্ধা করেন অথবা তাঁর উপরে আস্থা রাখেন। গীতরচক এই কথা বলছেন “যারা পরিত্রাণপ্রাপ্ত, আমি তাদের সকলের একজন সঙ্গী”। তারপর তিনি বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রেখে বিশেষভাবে বলেন - যারা পরিত্রাণপ্রাপ্ত শুধু তারাই নয়, যারা ঈশ্বরের নির্দেশ সকল পালন করেন তারাও। গীতসংহিতা রচয়িতার বিবেচনায় পরিত্রাণ লাভ ছাড়াও এর মাঝে আরো কিছু আছে। তিনি কেবল পরিত্রাণপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সঙ্গী হতে চান না। যারা পরিত্রাণপ্রাপ্ত তাদের দ্বারা ঈশ্বর যে কাজ করাতে চান তারা তা করেন এবং ঈশ্বর তাদের যেমন চান তারা তেমনই হন। আজকে আমি আপনাদের কাছে এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাই যার শিরোনাম হল “কেন আমি একজন ব্যাপ্টিস্ট”। আপনি যদি একজন ব্যাপ্টিস্ট, এপিসকোপাল, কাথলিক, লুথারান, মেথডিস্ট কিংবা অন্য যা কিছু হন তাতে কি কোনো মতভেদের সৃষ্টি হয়? আসলে কি এটি কোনো ভিন্নমত সৃষ্টি করে? আমি মনে করি পার্থক্য বা মতের অমিল থাকেই। আপাতত এটি স্থগিত রেখে আমরা আলোচনা শুরু করার পূর্বে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট করতে চাচ্ছি। 

প্রথমত, আমি বিশ্বাস করি না যে, ব্যাপ্টিস্ট সকলেই স্বর্গে যাবেন। অনেক ব্যাপ্টিস্ট আছেন যারা স্বর্গে যাবেন না।

দ্বিতীয়ত, অনুরূপভাবে, আমি বিশ্বাস করি যে অন্যান্য মণ্ডলী থেকে অনেকে স্বর্গে যাবেন। পরিত্রাণপ্রাপ্ত অনেকে আছেন যারা খ্রীষ্টকে সত্যিকারার্থে তাদের মুক্তিদাতা বলে জানেন, তারা স্বর্গে যাবেন। তারা ব্যাপ্টিস্ট মণ্ডলীর সদস্য-সদস্যা না হলেও। আমি স্বর্গে যাওয়ার সম্ভাবনা সঙ্কীর্ণ করে দিচ্ছি না এবং আপনাদের একথাও বলতে চাচ্ছি না যে ব্যাপ্টিস্টগণ সকলে স্বর্গে যাবেন। আপনারা আমাকে এ বিষয়ে ভুল বুঝবেন না। পরিত্রাণ লাভের পর ঈশ্বর একজন খ্রীষ্টিয়ানের কাছে দাবি করেন যেন তিনি ঈশ্বরের বাক্য অনুযায়ী চলেন, ঈশ্বরের বাক্য দ্বারা জীবনযাপন করেন এবং ঈশ্বরের বাক্যকে জীবনে প্রয়োগ করেন। সেজন্য যখন আমরা আমাদের খ্রীষ্টিয় জীবনে বৃদ্ধি লাভ করি, আমাদের অবশ্যই সর্বদা ঈশ্বরের বাক্যের কাছে ফিরে আসতে হয় ও বলতে হয়, “ঈশ্বর তাঁর বাক্যের মধ্য দিয়ে কী শিক্ষা দেন? কাকে বা কাদের আমি পেতে পারি যিনি এই বাক্য শিক্ষা দেন ও এই বাক্য প্রচার করেন? ঐসব লোকদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক স্থাপন করতে হয়, তাদের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয়।”

এখন আমি আপনাদের তিনটি কারণ অথবা তিনটি প্রমাণ দেব যে কেন আমি বিশ্বাস করি, যতজন পরিত্রাণপ্রাপ্ত হয়েছে তাদের সকলের ব্যাপ্টিস্ট হওয়া উচিত। আপনারা হয়ত বলবেন, “প্রচারক মহাশয়, এত সঙ্কীর্ণ মনোভাবের”! হ্যা, আমি আপনাদের সঙ্গে একমত। এটি সঙ্কীর্ণতা। আমি যখন ১৯৭১ খ্রীষ্টাব্দে পরিত্রাণপ্রাপ্ত হই, কাথলিক গির্জায় গাড়ি পার্ক করার জায়গায় বসেছিলাম। আমি কাথলিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করে বড় হই। আমাকে এই বিশ্বাস করতে শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল যে কাথলিক মণ্ডলীই একমাত্র মণ্ডলী। যদি কাথলিক মণ্ডলী ত্যাগ কর, তাহলে তুমি ঈশ্বর ও স্বর্গকেও ত্যাগ করছ। কাথলিক মণ্ডলী যদি ত্যাগ কর তবে তুমি স্বর্গে যেতে পারবে না। এই হলো সেইসব, যা নাকি তখনকার দিনে আমাকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল। আমার ধারণা তারা নিজেরা এখন কিছুটা উদার হতে শুরু করেছে। কিন্তু আমাকে তখন শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল যে, এটিই সেই পথ বা উপায়। সেই রাতে আমি কাথলিক গির্জা ভবনের গাড়ি পার্ক করার জায়গায় বসেছিলাম। আমি আমার মাথা নত করে প্রভুকে বল্লাম যেন তিনি আমাকে উদ্ধার করেন। আমি সেই রাতে ঈশ্বরকে বলেছিলাম, “প্রভু, তুমি আমাকে অন্য যে কোনো মণ্ডলীতে চাও, আমি সেই মণ্ডলীতে যাব। সেটি কাথলিক মণ্ডলী হোক অথবা ব্যাপ্টিস্ট মণ্ডলী হোক। আমি যে মণ্ডলীতে এখন যাচ্ছি অথবা এই শহরের যে কোনো একটি মণ্ডলী হোক না কেন, আমার কিছুই যাবে আসবে না। আমি অন্যকিছুকে গুরুত্ব দেই না, পরোয়া করি না। কেবল তোমার বাক্য থেকে দেখিয়ে দাও কোন্ মণ্ডলীতে তুমি আমাকে যোগ দিতে বল।” কয়েক মাসের মধ্যে ঈশ্বর আমাকে দেখিয়ে দিলেন, কোন্ মণ্ডলীতে তিনি চান যেন আমি তাতে যোগ দেই। আমি ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করলাম এবং ঈশ্বরের বাক্যের প্রচার আমি মনোযোগ দিয়ে শুনলাম। আর আমি তখন যা-কিছু ঈশ্বরের বাক্য বলে বিশ্বাস করেছিলাম, সেইসব পালন করলাম এবং ঐ নির্দিষ্ট ব্যাপ্টিস্ট মণ্ডলীতে যোগ দিলাম। এখন প্রথমেই স্বীকার করছি, যেহেতু আমি অনুভব করেছিলাম যে, ঈশ্বর আমাকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন সেজন্য বাধ্যতামূলক এর মানে এই নয় যে, সেটিই সঠিক ছিল। আপনি বা আমি কি চিন্তা করি তা কোনো গুরুত্বের বিষয় নয় বা এতে কিছু এসে যায় না। ঐ রাস্তার লোকেরা কি চিন্তা করে তাতে কিছু এসে যায় না। অন্যান্য মণ্ডলীতে অন্যান্য যে সকল লোক আছেন, তারা বলেন, “ঈশ্বর আমাকে এই মণ্ডলীতে এনেছেন, সেজন্য এটি অবশ্যই ঠিক”। সুতরাং আমরা কী চিন্তা করি তাতে কিছুই এসে যায় না। ঈশ্বর কী বলেন, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ। ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি লক্ষ্য করার সময় আমাদের অবশ্যই খোলা মন হতে হবে এবং দেখতে হবে যে বাক্যের বিষয়টিতে তাঁর বক্তব্য কী?

আমি বিশ্বাস করি, যে মণ্ডলীটির সূচনা, শুরু ও গঠন যীশু করেছিলেন, সবদিক দিয়ে এর নামকরণ করা যেতে পারে একটি ব্যাপ্টিস্ট মণ্ডলী। এখন আপনাদের দেখিয়ে দেব কেন আমি এটি বিশ্বাস করি। যীশু যে মণ্ডলীটি গঠন করেছিলেন, সেটি যদি ব্যাপ্টিস্ট মণ্ডলী হয় তাহলে খ্রীষ্টিয়ান হিসাবে আপনার যে মণ্ডলীতে থাকা দরকার সেটি অবশ্যই ব্যাপ্টিস্ট মণ্ডলী হতে হবে। যীশু যদি কাথলিক মণ্ডলী গঠন করে থাকেন, তাহলে যে মণ্ডলীতে আপনার থাকা দরকার সেটি কাথলিক মণ্ডলী হতে হবে। যদি যীশু এ্যাসেমব্লি অব গড মণ্ডলী গঠন করে থাকেন, তাহলে আপনাকে সেই মণ্ডলীর হতে হবে। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি, যদি যীশু ব্যাপ্টিস্ট মণ্ডলী গঠন না করে থাকেন, তাহলে আমরা ভুল জায়গাতে আছি। আমাদের উচিত এটি বন্ধ করে দেওয়া এবং ভুলে যাওয়া। আমি বিশ্বাস করি যে যীশু একটি ব্যাপ্টিস্ট মণ্ডলী গঠন করেছিলেন। এ বিষয়ে তিনটি কারণ আছে। এই তিনটি কারণে আমি বিশ্বাস করি যীশু ব্যাপ্টিস্ট মণ্ডলী গঠন করেছিলেন। প্রথমত, শাস্ত্রের সত্যতার জন্য; দ্বিতীয়ত, ঐতিহাসিক সত্যতার জন্য; তৃতীয়ত, ধর্মতত্ত্বগত সত্যতার জন্য বা ধর্মীয় শিক্ষাগত সত্যতার জন্য।

১। শাস্ত্রের সত্যতা


প্রথমে আমরা শাস্ত্রের সত্যতা সম্পর্কিত বিষয় থেকে কথা বলব। কেন আমি বিশ্বাস করি যে যীশু ব্যাপ্টিস্ট মণ্ডলী গঠন করেছিলেন। মথি ১৬:১৮ পদে আমরা পাঠ করি, “আর আমি তোমাকে বলিতেছি, তুমি পিতর, আর এই পাথরের উপরে আমি আমার মণ্ডলী গাঁথিব, আর পাতালের দ্বার সকল তাহার বিপক্ষে বিজয়ী হইবে না।” আপনারা এখানে লক্ষ্য করবেন যে, যীশু পিতরের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “তুমি পিতর, আর এই পাথরের উপরে আমি আমার মণ্ডলী গাঁথিব”। কাথলিকরা এর ব্যাখ্যা এইভাবে করে যে, পিতর হলো পাথর যার উপর যীশু তাঁর মণ্ডলী গেঁথেছেন। পিতরের মতো পাথরের উপরে কোনো মণ্ডলী গড়ে উঠলে আমি তা ঘৃণা করতাম। যখন যীশু বলেছিলেন, “আমাকে যিরুশালেমে যেতে হবে, হত হবার জন্য ক্রুশ পর্যন্ত যেতে হবে।” পিতর তখন বলেছিল, “না প্রভু, আমি চাই না যে আপনি ক্রুশে হত হন।” এর কিছু পরে লোকেরা যীশুকে গ্রেপ্তারের সময় পিতর তার তরবারি বের করে প্রভুর পক্ষে লড়াই করতে প্রস্তুত হন্। তারপর একঘন্টাও অতিক্রম হয়নি যখন পিতর প্রভুকে অস্বীকার করেছেন এবং তীব্র কটুক্তি দিচ্ছেন, আর বলছেন যে, সে এমন কি তাঁকে (প্রভু যীশুকে) চিনেন না। এই প্রকারের একটি পাথরের উপরে মণ্ডলী প্রতিষ্ঠিত হলে আমি ঘৃণা করতাম। আমার ভয় হয়, যে সেই মণ্ডলীর পতন হতো ও শীঘ্রই ভাঙন ধরত। আপনি মথি ১৬:১৩-১৮ পদের ১৮ পদে পাবেন, “পাথর” শব্দটি প্রভু বলেন পিতর যে স্বীকারোক্তি এইমাত্র করেছেন, যে ‘যীশুই সেই খ্রীষ্ট’, তার উপরে তিনি তাঁর মণ্ডলী গেঁথে তুলবেন। এই হলো সেই পাথর, যার উপরে মণ্ডলী গঠিত হয়েছে।

যখন যীশু “মণ্ডলী” শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন তখন এটি কোনো নতুন শব্দ ছিল না যা তিনি উদ্ভাবন বা প্রকাশ করেছিলেন। ঐসব লোকদের কাছে এটি কোনো অপরিচিত শব্দও ছিল না। তাঁর সময়ে এটি ছিল একটি প্রচলিত শব্দ। যীশু তাঁর মণ্ডলী গঠন করতে যাচ্ছেন বলতে তিনি এখানে ঠিক কি বলেছিলেন? যীশু এর গঠন বলতে এমন কিসের ঘোষণা তিনি করেছিলেন যে, নরকের দরজাগুলি এর বিপক্ষে বা এর উপর কখনো প্রবল বা বিজয়ী হবে না? যীশুর সময়ে “মণ্ডলী” (জনমণ্ডলী) শব্দটি বলতে বুঝাত একটি জনসমাবেশ বা সমবেত জনতা (assembly of people)। সামাজিকভাবে সচরাচর এমন সমাবেশ ঘটে থাকে। যেমন, আমরা প্রেরিত পুস্তকে দেখি একদল নাগরিক একত্র হয়েছিল। একটি নাগরিক সভা হয়েছিল এবং এটিকে বলা হয়েছিল একটি জনসভা, একটি জনমণ্ডলী। যীশু সেই একই শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। এটি ছিল একটি জনসমাবেশ। একটি মণ্ডলী বা জনমণ্ডলী কী বা কেমন? বাইবেল শিক্ষা দেয় - মণ্ডলী হলো একটি জনসমাবেশ। একটি “আহূত” অর্থাৎ আহ্বানপ্রাপ্ত জনসমাবেশ। অন্যভাবে বলা যায়, একটি মণ্ডলী হতে হলে, আপনার এমন কোনো কিছু বিষয় থাকতে হয় যা একত্রিত বা জড়ো করা হয়েছে। একটি মণ্ডলী হতে হলে, এটিকে কোনো এক স্থান থেকে আহ্বানপ্রাপ্ত হতে হয় এবং একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে একত্রিত হতে হয়। যখন যীশু এখানে বলেছিলেন “আমি আমার মণ্ডলী গাঁথিব”, তখন অন্য কারো মণ্ডলী নয় বা অন্য কোনো রকম মণ্ডলীও নয়, এটি তাঁর মণ্ডলী। অর্থাৎ তিনি বলেছেন, “আমি আমার মণ্ডলী গেঁথে তুলতে চাই। আমার মণ্ডলী গঠিত হবে এই স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে যে আমিই সেই খ্রীষ্ট।” তারপর তিনি নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন যে নরকের দরজাগুলো তার বিপক্ষে বা তার উপর জয়লাভ করবে না।

“মণ্ডলী” শব্দটির তিনটি প্রয়োগ আমরা শাস্ত্রে দেখতে পাই। শব্দটি প্রাতিষ্ঠানিক অর্থে, স্থানীয়ভাবে ও মহিমান্বিত/গৌরবান্বিতরূপে ব্যবহৃত হয়েছে। এখন, এইসব অর্থে আমি কি বুঝাতে চাচ্ছি?

প্রথমত, প্রাতিষ্ঠানিক অর্থে। মথি ১৬:১৮ পদে যীশু এই অর্থে শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। আমি এখানে দাঁড়িয়ে আপনাদের কাছে প্রচার করছি ও বলছি আপনাদের বাইবেল পাঠ করা উচিত। এই কথায় আমি কী বুঝাতে চাই? আমি কি বলতে চাই যে, আপনাদের সকলকে আমার এখানে আর প্রচারবেদির চারিদিকে জড়ো হতে এবং আমার কাছে যে বাইবেলটি আছে সেটি পাঠ করতে আসা দরকার? না, আমি সে-কথা বলছি না। আমি বলতে চাচ্ছি যে, আপনার নিজের বাইবেলটি পাঠ করা উচিত। আপনাকে ঈশ্বরের বাক্য ভালোবাসতে হবে। যখন আমি বলি যে আপনাকে অবশ্যই বাইবেল পাঠ করতে হবে, তখন আমি এটি প্রাতিষ্ঠানিক অর্থে ব্যবহার করছি। আপনারা হয়ত বলবেন, আমি এটি আদর্শগত অর্থে ব্যবহার করছি। একদিক দিয়ে আমি সমস্ত বাইবেল সম্পর্কে বলছি, অপর দিকে একটি নির্দিষ্ট বাইবেল সম্পর্কেও বলছি।

শব্দটির দ্বিতীয় ব্যবহার স্থানীয়ভাবে অথবা স্থানীয় মণ্ডলীগতভাবে। স্থানীয় এক একটি মণ্ডলী যেমন ‘টেম্পল ব্যাপ্টিস্ট চার্চ’, ‘ফেলোশিপ ব্যাপ্টিস্ট চার্চ’, ‘ফাস্ট ব্যাপ্টিস্ট চার্চ’ ইত্যাদি।

শব্দটির তৃতীয় ব্যবহার মহিমান্বিত বা গৌরবান্বিত মণ্ডলী অর্থে। নতুন নিয়মে এই এক অর্থে কেবল দু’বার ব্যবহৃত হয়েছে। ভবিষ্যতে মণ্ডলী কীরূপ হবে সেই বিষয় বলতে, যখন আমরা প্রভুতে একত্রিত হই। সেই মণ্ডলী এখনো হয়নি। সেই মণ্ডলী এখনো পর্যন্ত ভবিষ্যতকে বুঝায়। আমরা এখন প্রকৃতপক্ষে সেটিকে মণ্ডলী বলতে পারি না, কারণ এর অস্তিত্ব এখন নেই ও বর্তমানে থাকছে না যে পর্যন্ত আমরা প্রভুর সঙ্গে সকলে মিলিত না হব।

তাহলে, আমরা দেখলাম “মণ্ডলী” শব্দটির তিন প্রকার প্রয়োগ। শাস্ত্রে মণ্ডলী শব্দটি শতাধিকবার ব্যবহারের মধ্যে সাতানব্বইবারই স্থানীয় মণ্ডলীর বিষয়ে বলা হয়েছে। যীশু সুসমাচারে ও প্রকাশিত বাক্যে এই শব্দটি বাইশবার নিজে ব্যবহার করেছিলেন। এর মধ্যে একুশবার তিনি একটি নির্দিষ্ট মণ্ডলী যিরুশালেমে, থিষলনীকিতে বা অন্য কোথাও কোনো স্থানীয় মণ্ডলী সম্পর্কে বলেছিলেন। তিনি নির্দিষ্ট মণ্ডলীর নাম উল্লেখ করেছিলেন। এখানে মথি ১৬:১৮ পদে, যীশু এই শব্দটি ২২তম বারের জন্য উল্লেখ করেছিলেন। যদি কেউ একটি শব্দ একই প্রকারে একুশবার ব্যবহার করেন, তারপর যখন আপনি তাকে সেই শব্দ বাইশতম বার বলতে শুনেন তখন তিনি কীভাবে বা কী প্রয়োজনে সেটি ব্যবহার করবেন বলে আপনি আশা করেন? একইভাবে তিনি একুশবার এটি ব্যবহার করেছিলেন এবং তা দিয়ে তিনি একই বিষয় বুঝিয়েছেন। সেজন্য প্রভু এখানে বলছেন, “যে মণ্ডলী আমি গঠন করেছি সেটি হবে স্থানীয় মণ্ডলী কিন্তু আমি একটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বলছি”। অর্থাৎ তিনি বলছেন যে, নরকের দরজাগুলো স্থানীয় মণ্ডলীসমূহের বিরুদ্ধে জয়ী হবে না। যীশু পুনরায় না আসা পর্যন্ত সর্বত্র সুসমাচার প্রচার করার জন্য মণ্ডলীসমূহ রয়েছে ও থাকবে। সেখানে সর্বদাই খাঁটি মণ্ডলীসমূহ থাকবে। বর্তমানে যেসব ধর্মীয় সম্প্রদায় চারিদিকে রয়েছে, তাদের অনেকগুলোর সঙ্গে আমাদের পার্থক্য রয়েছে। যেমন চার্চ অফ ক্রাইস্ট, মরমন, যিহোবা উইটনেস/সাক্ষী, আর্মস্ট্রংইজম, সেভেন্থ-ডে এ্যাড্ভেন্টিস্ট ইত্যাদি। তারা বলে, মণ্ডলী মরে গিয়েছিল এবং শত শত বৎসর পর্যন্ত ছিল না। যে পর্যন্ত না তারা মণ্ডলীকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলে এবং ঈশ্বর তাদের পুনরায় মণ্ডলী গঠন করার জন্য ক্ষমতা দেন সে পর্যন্ত তা জাগরিত হবে না। আমরা বলি এবং শাস্ত্র বলে (আমরা এমন বলি কারণ শাস্ত্র এমন কথা বলে), যে মণ্ডলী যীশুর সময় থেকে চলে আসছে এবং চলবে, যে পর্যন্ত না যীশু আবার আসেন। খাঁটি মণ্ডলী সর্বদা আছে ও থাকবে। তদ্রুপ খাঁটি মণ্ডলীসমূহ যখন আছে, তখন আমাদের বুঝতে হবে যে ভ্রান্ত বা খাঁটি নয় এমন মণ্ডলীসমূহও আছে। সেগুলো এই পৃথিবীতে শয়তান বপন করেছে। যীশু বলেন, “আমি আমার মণ্ডলী গাঁথব, আর নরকের দরজাগুলো এর বিরুদ্ধে বা এর উপর জয়ী হবে না।” সেজন্য আমরা এই বিষয়টিতে ফিরে এসেছি : যীশু কী প্রকারের মণ্ডলী গঠন করেছিলেন?

বর্তমানে তিন প্রকারের মণ্ডলী জগত বিশ্বাস করে


প্রথমত। কাথলিক মণ্ডলী (Catholic Church)। এই শব্দটির দ্বারা আমরা বুঝাই সার্বজনীন। এটি ‘রোমান’ কাথলিক মণ্ডলী নয়, যা হয়ত আপনারা ভাবছেন, যেহেতু আমি কাথলিক কথাটি বলছি। রোমান কাথলিক মণ্ডলী একটি দৃশ্যমান মণ্ডলীতে (visible church) বিশ্বাস করে। অর্থাৎ যে সমস্ত লোকেরা কাথলিক তারা রোমান কাথলিক মণ্ডলীর, রোমান সার্বজনীন মণ্ডলীভুক্ত (Roman Universal Church)। “কাথলিক” শব্দটির অর্থ সার্বজনীন। কিন্তু এই চিন্তা বা ধারণা ৫৯০ খ্রীষ্টাব্দের পূর্বে প্রচলিত ছিল না। সবশেষে যখন কাথলিক মণ্ডলীর জন্ম হয়েছিল অর্থাৎ এটি ঐ খ্রীষ্টাব্দের আগে কখনো ছিল না।

দ্বিতীয়ত। মার্টিন লুথার নামে এক ব্যক্তি ছিলেন। তিনি অপর একটি মণ্ডলীর সূচনা করেন। তিনি সার্বজনীন মণ্ডলীতে বিশ্বাস করতেন। তিনি অনেক বৎসর যাবৎ একটি কাথলিক মণ্ডলীর পুরোহিত ছিলেন এবং তাদের ধর্মতত্ত্ব বিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভ করেছিলেন। সেখানে তিনি কিছু কিছু বিষয় দেখলেন, যাতে একমত হতে পারেননি। কিছু বিষয় তিনি তার জীবনে মানিয়ে নিতে পারেননি। সেজন্য মার্টিন লুথার পৃথক হন এবং লুথারান মণ্ডলী গঠন করেন। তিনি অদৃশ্য এক সার্বজনীন মণ্ডলীর বিষয় প্রচার করতে থাকেন। এই মতবাদ শিক্ষা দেয় যে, দৃশ্যমান মণ্ডলীর সকলে ঈশ্বরের মণ্ডলীতে নেই কিন্তু প্রত্যেক ব্যক্তি যিনি প্রকৃতভাবে ঈশ্বরের সন্তান ছিলেন তিনি ঈশ্বরের মণ্ডলীর একটি অংশ। আপনি তাদের সবাইকে দেখতে পাবেন না এবং জানতে পারবেন না তারা কারা। তবে তারা বাইরে অর্থাৎ সব জায়গাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এই অদৃশ্য ধারণা আজকালকার অধিকাংশ “মণ্ডলীতে” প্রবেশ করেছে। আমরা যখন এইরকম অন্যান্য “মণ্ডলী” সম্পর্কে বলি তখন দেখতে পাই যে প্রায় সবকয়টি মণ্ডলী এটি থেকে এইভাবে বেরিয়ে এসেছে, যাকে বলা হয় প্রোটেস্টান্ট আন্দোলন। আমরা ব্যাপ্টিস্ট, যেহেতু কোনো প্রোটেস্টান্ট মণ্ডলী নই।

তৃতীয়ত। এই প্রকারের মণ্ডলী হলো সেই শ্রেণীর মণ্ডলী, যে মণ্ডলীর বিষয়ে শাস্ত্র শিক্ষা দেয়। সেটি অত্যন্ত মৌলিকভাবে, স্থানীয় এক নতুন নিয়মের মণ্ডলী (a local New Testament Church)। শাস্ত্রে অন্য আর কোনো রীতিনীতি বা প্রথা নেই। দৃষ্টি দেওয়ার মতো অন্য আর কোনো পথ নেই। শাস্ত্রের মধ্যে এটি হলো সেই জায়গা যার বিষয়গুলো অনেকে গুলিয়ে ফেলেন। তারা বলে থাকেন যে যখন কেউ পরিত্রাণ লাভ করে, তখন তাদের মণ্ডলীতে গ্রহণ করা হয় কারণ তারা পরিত্রাণপ্রাপ্ত। তারা যে বিষয়টি বলে সেটি হলো সার্বজনীন অদৃশ্য মণ্ডলী। শাস্ত্রের মধ্যে এ ধরনের কোনো বিষয় নেই। যখন কেউ পরিত্রাণ লাভ করে, ঈশ্বর তাকে ঈশ্বরের পরিবারে গ্রহণ করেন। এখানে একটি পার্থক্য রয়েছে। কেবল ঈশ্বরের পরিবারের লোক হওয়ার কারণে তারা কিন্তু মণ্ডলীর কোনো অংশ হয় না। তারা কোনো মণ্ডলীর সদস্য হয় না, যে পর্যন্ত না তারা কোনো স্থানীয় মণ্ডলীর সঙ্গে যুক্ত হয়। তবে তারা যখন পরিত্রাণ লাভ করে তখন ঈশ্বরের পরিবারের লোক হয়। আমাদের ঈশ্বরের পরিবার এবং ঈশ্বরের মণ্ডলীর মধ্যে পার্থক্যটি শিক্ষা দেওয়া দরকার। যতজন পরিত্রাণ লাভ করেছে, তারা প্রত্যেকে ঈশ্বরের পরিবারের এক একজন সদস্য কিন্তু ঈশ্বরের পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্য একটি স্থানীয় মণ্ডলীতে থাকে না। 

কখন মণ্ডলীর সূচনা বা শুরু হয়েছিল? মথি ১৮ অধ্যায়ে যীশু মণ্ডলী সম্পর্কে একটি আদেশ দেন। তিনি বলেন, “যদি তোমার ভাই তোমার নিকটে কোনো অপরাধ করে, তবে গিয়া, যেখানে কেবল তুমি ও সে-ই থাক, তখন সেই দোষ তাহাকে বুঝাইয়া দেও; যদি সে তোমার কথা শুনে, তুমি নিজের ভাইকে জয় করিলে। কিন্তু যদি সে না শুনে, তবে আর দুই একজনকে সঙ্গে লইয়া যাও, যেন দুই কিংবা তিনজন সাক্ষীর মুখে সমস্ত কথা নিষ্পত্তি হয়। আর যদি সে তাহাদের কথা অমান্য করে, তাহা ম-লীকে বল।” যদি মণ্ডলীতে কেউ কারো বিরুদ্ধে অপরাধ করে সেই বিষয়ে যীশু এখানে তাঁর শিষ্যদের শিক্ষা দিচ্ছেন। তিনি তাদের বলেন, যদি কোনো সমস্যার সমাধান না হয়, তাদের সেই বিষয়টি মণ্ডলীর কাছে বলতে হবে। যদি সেখানে মণ্ডলী বলে কোনো কিছু না থাকত, যীশু কি তাদের বলতেন মণ্ডলীর কাছে গিয়ে কিছু বলতে? আমি তা বিশ্বাস করি না। আপনি নিশ্চয় উপলব্ধি করেছেন, এ সময়ে মণ্ডলীর অস্তিত্ব অবশ্যই ছিল। সঠিক অর্থে একটি মণ্ডলীর ব্যাখ্যা দিতে আমি কি বলেছিলাম? এটি একটি সুনির্দিষ্ট আহ্বানে একসঙ্গে সমবেত দল বা সমাবেশ।  

এখন একটি সমস্যার বিষয় বলছি যা অনেকের আছে। কখন মণ্ডলীর সূচনা,  শুরু বা গঠন হয়েছিল? অধিকাংশ লোকেরা বলেন যে, পঞ্চাশত্তমী থেকে মণ্ডলীর সূচনা হয়েছিল। কিন্তু বাইবেল সে শিক্ষা দেয় না। ঈশ্বরের সমুদয় বাক্যের মধ্যে আপনি একটিও শাস্ত্র অংশ পাবেন না যা বলে যে, মণ্ডলীর সূচনা হয়েছিল পঞ্চাশত্তমীর দিন। তাহলে কখন এর সূচনা হয়েছিল? আসুন আমরা লূক ৬:১২ পদটি পাঠ করি, “আর সেইসব দিনের কোন এক সময়ে তিনি প্রার্থনা করিবার জন্য বাহির হইয়া পর্বতে গেলেন, আর ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করিতে করিতে সারারাত যাপন করিলেন।” এটি যীশুর বিষয় বলছে। যদি যীশু সমস্ত রাত ঈশ্বরের সঙ্গে প্রার্থনায় যাপন করে থাকেন তাহলে নিশ্চয় বিরাট কিছু ঘটতে যাচ্ছিল এবং ঘটেছিল। ১৩ পদটি দেখুন, “আর যখন দিবস হইল, তিনি তাঁহার কাছে শিষ্যদের ডাকিলেন, আর তাঁহাদের মধ্য হইতে বারোজনকে মনোনীত করিলেন, আর তাঁহাদের তিনি ‘প্রেরিত’ নাম দিলেন।” প্রভু ১২ জনকে প্রেরিতশিষ্যে আহ্বান করেছিলেন। তাহলে কি এখানে কোনো মণ্ডলীর সূচনা ও গঠন হয়েছিল? শাস্ত্রের আরো একটি পদ আমাদের দেখা দরকার। সেটি ১করিন্থীয় ১২:২৮ পদ, “আর ঈশ্বর মণ্ডলীতে কয়েকজনকে স্থাপন করিলেন, প্রথমত প্রেরিতগণকে।” প্রভু প্রথমে যাদের মণ্ডলীতে স্থাপন অর্থাৎ বিশেষ পদে বসিয়েছিলেন তারা ছিলেন প্রেরিতশিষ্য। কখন তিনি প্রেরিতশিষ্যদের মণ্ডলীর মধ্যে স্থাপন করেছিলেন? লূক ৬:১৩ পদে আছে। তাহলে আমরা দেখি যে যীশু তাঁর প্রচার কাজের এই সময়টিতে তিনি তাঁর মণ্ডলীর সূচনা ও গঠন করেছিলেন। 

একথা বলার পক্ষে আমার কী কী যুক্তি আছে? প্রথমত, যীশু বলেছিলেন, আমি আমার মণ্ডলী গাঁথব। সেজন্য যীশু জগতে থাকাকালীন কোনো সময়ে এটির আরম্ভ করতে হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, যদি যীশু তাঁর শিষ্যদের শিক্ষা দানের সময়ে, তাদের মণ্ডলীর কাছে যাওয়ার নির্দেশ দেন এবং সেই সঙ্গে মণ্ডলীকে নির্দেশাদি প্রদান করেন, তাহলে মথি ১৮ অধ্যায় এবং লূক ৬ অধ্যায় অনুসারে মণ্ডলী অবশ্যই বিরাজমান ছিল। আমরা আরো দেখি ইব্রীয় ২:১২ পদে যীশু বলছেন যে, তিনি মণ্ডলীর মধ্যে প্রশংসা গান করবেন। ঈশ্বরের বাক্যের মধ্যে কেবল একবার মথি ২৬ অধ্যায়ে, শেষ ভোজের সময়ে আমরা দেখি যীশু মণ্ডলীর মধ্যে গান করেছিলেন। যীশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে আহার করেছিলেন এবং তিনি বাইরে যাওয়ার পূর্বে একটি গান করেছিলেন। সেজন্য আমরা দেখি এই সময়ের পূর্বে মণ্ডলীর অস্তিত্ব থাকা প্রয়োজন ছিল। তারপর আমরা ১করিন্থীয় ১২ অধ্যায় বিবেচনা করি। সেখানে আমাদের বলা হয়েছে যে, তিনি প্রথমে প্রেরিতদের নিযুক্ত করেছিলেন। যেহেতু তিনি মণ্ডলীতে প্রেরিতদের নিযুক্ত করে শুরু করেছিলেন, সেক্ষেত্রে মণ্ডলী অবশ্যই ছিল। একটি মণ্ডলী বলতে কী বুঝায় তা স্মরণ করলে, মথি ২৬ অধ্যায়ের পূর্বে, মথি ২৮ অধ্যায়ের পূর্বে এবং লূক ৬ অধ্যায়ের পূর্বেও যে মণ্ডলী অবশ্যই ছিল তা বিশ্বাস করা যায়। কারণ উপরক্ত শাস্ত্র অংশগুলোতে আমরা দেখতে পাই যে, যীশু খ্রীষ্ট যখন তাঁর শিষ্যগণকে আহ্বান করেছিলেন তখনই তিনি তাঁর মণ্ডলীর সূচনা করেছিলেন। তাঁরা ছিলেন একটি আহূত অর্থাৎ আহ্বানপ্রাপ্ত সংগঠন। তাঁরা যেন মানুষ ধরতে পারেন এবং তাঁর মণ্ডলী গঠন করেন। যীশু তাঁর নামের জন্য অন্যান্য লোকদের কাছে যাওয়ার নির্দেশ দেন। আমরা মথি ৪:১৮-২০ পদগুলোতে মণ্ডলীর ঠিক সূচনাটি পাই। সেখানে এরূপ লেখা আছে, “আর যীশু, গালীল সমুদ্রের তীর দিয়া হাঁটিতে হাঁটিতে দেখিলেন, দুই ভাই, শিমোন, যাঁহাকে পিতর বলা হয়, ও তাঁহার ভাই আন্দ্রিয়, সমুদ্রে জাল ফেলিতেছেন; কারণ তাঁহারা জেলে ছিলেন। আর তিনি তাঁহাদিগকে বলিলেন, আমার পিছনে আইস, আমি তোমাদিগকে মানুষ-ধরা জেলে করিব। আর তখনই তাঁহারা জাল পরিত্যাগ করিয়া তাঁহার অনুসরণ করিলেন।”  

ঈশ্বরের বাক্য থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে পঞ্চাশত্তমী দিনের পূর্বে মণ্ডলীর সূচনা বা গঠন হয়েছিল। একজনকে যদি শাস্ত্রের প্রতি বিশ্বস্ত হতে হয়, তাহলে তার আর বিশ্বাস করার অন্য কোনো পথ নেই যে, মণ্ডলীর সূচনা বা শুরু হয়েছিল পঞ্চাশত্তমীর দিনে। আমি আরো বিশ্বাস করি যে, লূক ৬ অধ্যায়ে যখন যীশু তাঁর শিষ্যদের মণ্ডলীতে স্থাপন করেছিলেন তার পূর্বেই মণ্ডলীর সূচনা হয়েছিল অর্থাৎ গাঁথা হয়েছিল। মণ্ডলীতে প্রেরিতদের স্থাপন করতে হলে অবশ্যই একটি মণ্ডলী থাকতে হবে, যেখানে তাঁদের স্থাপন করা যায়। লোকদের জগতের থেকে আহ্বান করে একটি সংগঠনের মধ্যে গ্রহণ করা এবং মণ্ডলীভুক্ত করা যেন খ্রীষ্টের জন্য প্রাণগুলোর অর্থাৎ মানব হৃদয়ে পৌঁছানো যায় এবং মানুষ-ধরা জেলে হওয়া যায়। এর প্রথম লিখিত উদাহারণ পাওয়া যায় মথি ৪ অধ্যায়ে। 

আজকের দিনে প্রকৃতপক্ষে এটি কী বুঝায়? যদি যীশু তাঁর মণ্ডলীর সূচনা করে থাকেন, তাহলে কী ধরনের মণ্ডলীর সূচনা তিনি করেছিলেন? যদি যীশু একটি মণ্ডলীর সূচনা করেন সেটি কি এখনো আছে? প্রথম প্রশ্নটির উত্তরে আমরা বলি, যীশু সত্যই একটি মণ্ডলীর সূচনা করেছিলেন, কারণ তিনি বলেছিলেন, “আমি আমার মণ্ডলী গাঁথিব” এবং যীশু মিথ্যা বলেন না। তিনি তাঁর শিষ্যদের মণ্ডলীতে এইসব করতে উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন। সেজন্য যীশুর সময়ে মণ্ডলীর সূচনা বা গেঁথে তোলা হয়েছিল। মথি ২৬ অধ্যায়ে আমরা দেখি, যীশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে প্রভুর ভোজ গ্রহণ করেছেন। তিনি তাদের কি বলেছিলেন? “আমি পুনরায় না আসা পর্যন্ত তোমরা ইহা কর।” তিনি এখানে কি বলেছিলেন? তিনি বলেছিলেন যে, প্রভুর ভোজ স্থানীয় মণ্ডলীতে দেওয়া হলো। তিনি সেই একই কথা বলেছিলেন যা, পূর্বে তিনি মথি ১৬ অধ্যায়ে বলেছেন। নরকের দরজাগুলো মণ্ডলীর বিরুদ্ধে বা এর উপর প্রবল বা জয়ী হবে না। অর্থাৎ যখন থেকে যীশু তাঁর মণ্ডলী গঠন করেছেন যে পর্যন্ত না সেই মহানন্দের দিনে অর্থাৎ জীবিতদের তুলে নিতে (rapture) তিনি পুনরায় না আসেন, সেই পর্যন্ত মণ্ডলীসমূহ সবসময় সুসমাচার প্রচার করতে থাকবে। সর্বদাই হবে! তাই আজ আমাদের সকলেরই একটি কথা “বেশ! তাহলে আসুন, যীশু যে মণ্ডলীটির সূচনা বা গঠন করেছিলেন তা খুঁজে বের করি।”

কী ধরনের মণ্ডলী যীশু গেঁথে তুলেছিলেন? এই কথা জানতে চাইলে আজ Christian Church নামে একটি মণ্ডলী রয়েছে, যারা লাফ দিয়ে উঠে বলবে “যীশু একটি Christian Church সূচনা বা শুরু করেছিলেন। আমরা প্রেরিত পুস্তকে দেখতে পাই, আন্তিয়খিয়াতে তাদের প্রথম খ্রীষ্টিয়ান বলা হয়েছিল।” আমি নামগুলো নিয়ে অগ্রসর হবো না। আর আমি এই কথাও বলতে চাই না যে প্রথম দিনেই দরজার উপরে যীশু ব্যাপ্টিস্ট মণ্ডলী নামটি দিয়ে শুরু করেছিলেন। কারণ আমি বিশ্বাস করি না যে, তিনি তা করেছিলেন। তখনকার ঐসব দিনে তাদের কোনো নাম ছিল না। ঐ সময়ে খ্রীষ্টিয়ানদের খ্রীষ্টিয়ান বলে ডাকা হতো। তারা এই খেতাব বা নামটি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের কাছ থেকে পেয়েছিল। এই নামকরণ ঈশ্বর তাদেরকে করেননি। সেজন্য আমি বলতে চাই যে, ঠিক এই কারণে বাহ্যিক দিক দিয়ে কোনো মণ্ডলীর নাম ‘খ্রীষ্টিয়ান’ বিচার করলে এই বুঝায় না যে, ভিতরেও সেটি আছে। দরজার বাইরের নামের বিষয়ে আমরা খুবই সতর্ক থাকবো।

আমি এটাও মনে করি না যে, ‘খ্রীষ্ট মণ্ডলী’ (Church of Christ) এবং ‘চার্চ অব গড‘ (Church of God) এগিয়ে আসবে আর তারা তাদের নিজেদের নামের গুণের যোগ্য সমর্থনে শাস্ত্রের অন্য কোনো পদের অংশ উল্লেখ করবে। কিন্তু আপনি তাদের নিয়ে ঐ একই সমস্যায় পড়বেন। আপনি নাম দিয়ে চলতে পারেন না। আসুন, আমরা একটু থামি এবং এখানে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করি। দেখি কোনো উত্তর পাই কি না। আপনি যদি প্রেসবিটেরিয়ান মণ্ডলীতে কোনো প্রেসবিটেরিয়ান পালকের দ্বারা বাপ্তাইজিত হন, তবে আপনি কি হতে পারেন? আপনি কি একজন ‘মরমন’ (Mormon) হবেন? কখনোই না। আপনি হবেন একজন প্রেসবিটেরিয়ান। মনে করুন যে, আপনি কোনো মেথডিস্ট দ্বারা বাপ্তাইজিত হয়ে একজন মেথডিস্ট হলেন, ঠিক তাই। এখন একটি প্রশ্ন করি, কে যীশুকে বাপ্তাইজিত করেছিলেন? যোহন বাপ্তাইজক। যেহেতু যীশু যোহন বাপ্তাইজক দ্বারা বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন, তদ্বারা যীশু কি হয়েছিলেন? একজন ব্যাপ্টিস্ট। 

প্রেরিত এক অধ্যায়ে বাইবেল বলে যে শিষ্যগণ যিহুদার পরিবর্তে অন্য একজনকে ১২তম শিষ্যরূপে গ্রহণ করেছিলেন। কারণ যিহুদা আত্মহত্যা করেছিল। সেই শিষ্যটির প্রয়োজনীয় বিষয়ের মধ্যে একটি ছিল যে, তার যোহন বাপ্তাইজকের দ্বারা বাপ্তাইজিত হওয়া। প্রেরিতগণ সকলেই যোহন বাপ্তাইজকের দ্বারা বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন। অতএব, যীশু যদি ব্যাপ্টিস্ট হন এবং সমস্ত শিষ্যগণকে যোহন বাপ্তাইজকের দ্বারা বাপ্তাইজিত হতে হয়েছিল। এর ফলে তারা সবাই ব্যাপ্টিস্ট হয়েছিলেন। যীশু প্রথমে ব্যাপ্টিস্টদের নিয়ে তাঁর মণ্ডলীর সূচনা করেছিলেন, তাতে প্রথম মণ্ডলীটি কী হয়? এটি মণ্ডলীটিকে ব্যাপ্টিস্ট করে। আবার আমি একথা বলছি না যে, যেহেতু যোহনকে বলা হতো যোহন বাপ্তাইজক আর সে-কারণে এটি ব্যাপ্টিস্ট মণ্ডলী হয়েছে। আমি বলতে চাচ্ছি যে যদি কোনো ব্যক্তির কোনো নামের উপরে দাবি থাকে, ব্যাপ্টিস্টদেরও সেই অধিকার আছে। 

অনেকে বলবে, “ভালো, যোহন বাপ্তাইজককে (John the Baptist) ব্যাপ্টিস্ট বলা হতো কারণ তিনি বাপ্তাইজ করতেন।” আপনি এই কথা প্রায়ই বিভিন্ন লোকদের কাছ থেকে শুনে থাকেন। আপনি কি জেনেছেন শাস্ত্র কী শিক্ষা দেয়? ঈশ্বর তাঁকে যোহন বাপ্তাইজক (John the Baptist) নাম দিয়েছিলেন তাঁর দ্বারা কাউকে বাপ্তাইজিত করার পূর্বেই। আপনি সেটি মথি তিন অধ্যায়ে পাবেন। যোহনকে বলা হয়েছে যোহন বাপ্তাইজক (John the Baptist), যে সময়ে তিনি কোনো ব্যক্তিকে বাপ্তাইজ করেননি। তিনি তাঁর পরিচর্যার কাজে বেরিয়ে আসার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন যেন প্রভুর জন্য লোকদের জয় করেন। যোহন যখন একজনকেও বাপ্তাইজিত করেননি তখন ঈশ্বর বলেন, “যোহন বাপ্তাইজক প্রান্তরে গিয়ে প্রচার করতে থাকেন।” কেন ঈশ্বর তাঁকে যোহন বাপ্তাইজক (John the Baptist) বলেছিলেন? কারণ যোহন ১:৬ পদে বাইবেল বলে, “ঈশ্বর হইতে একজন মানুষ প্রেরিত হইয়াছিলেন।” যোহন ১:৩৩ পদ বলে, ঈশ্বর তাঁকে বাপ্তাইজ করতে পাঠিয়েছিলেন, ঈশ্বর তাঁকে একজন ব্যাপ্টিস্ট (বাপ্তাইজক) করেছিলেন। 

ব্যাপ্টিস্ট নামটি অন্য সবকিছু থেকে বেশি আধ্যাত্মিক। আমাকে একথাটি একটু আগেই বলতে দিন। ভালো অথবা খাঁটি মণ্ডলী হওয়ার জন্য আপনাকে দরজার বাইরে “ব্যাপ্টিস্ট” নামটি বসিয়ে দিতে হবে না। বৎসরের পর বৎসর ধরে অনেক মণ্ডলী ছিল যারা তাদের ব্যাপ্টিস্ট বলে পরিচয় দেয়নি, কিন্তু তারা খাঁটি মণ্ডলী ছিল। আজও অনেক মণ্ডলী থাকতে পারে যাদের দরজায় ব্যাপ্টিস্ট নাম লেখা নেই, কিন্তু তারা ভালো মণ্ডলী। আমি একথাও বলতে চাই : আমার এখনো কোনো মণ্ডলীতে যেতে হয় যার দরজায় ব্যাপ্টিস্ট নাম লেখা ছিল না। যার সম্পর্কে আমি বলতে পারি যে, সেটি এক খাঁটি মণ্ডলী ছিল। পরবর্তীতে অনুসন্ধানের পর আমি সাধারণত দেখতে পাই যে তারা পরিত্রাণের পরিকল্পনা থেকে বিচ্ছিন্ন এবং বাপ্তিস্ম থেকে বিচ্ছিন্ন। আমি বিষয়টি প্রতিবার লক্ষ্য করেছি। তার অর্থ এই নয় যে “ব্যাপ্টিস্ট” নাম ধারণ না করলে কোনো মণ্ডলী হওয়া অসম্ভব। আমি কেবল তাদের সম্পর্কে বলতে চাচ্ছি যে, এর ভিতরে যাই হোক শাস্ত্রানুযায়ী সঠিক থাকতে হয়। তবু আমি সঠিকভাবে তেমন কোনো একটি মণ্ডলীরও দেখা পাইনি।

সেজন্য আজ একটি মণ্ডলী গঠন আর সেটিকে ব্যাপ্টিস্ট মণ্ডলী বলতে পারার অধিকার শাস্ত্রসম্মত হওয়ায় যীশু বলেছিলেন, “আমি আমার মণ্ডলী গাঁথিব। আমার মণ্ডলী কালক্রমে বিলীন হবে না, ভেঙ্গে পড়বে না, শেষ হয়ে যাবে না। এটি আমার সময় থেকে সর্বদাই থাকবে যে পর্যন্ত না আমি আবার আসি।” অতএব, বর্তমান দিনে যত মণ্ডলী আছে, এদের মধ্যে কতক খাঁটি মণ্ডলী অবশ্যই থাকবে। এটি হয়ত হবে কাথলিক, এপিসকোপাল, লুথারান, মেথডিস্ট, প্রেসবিটেরিয়ান, ব্যাপ্টিস্ট কিংবা অন্য কোনো একটি। বর্তমান দিনে অবশ্যই একটি খাঁটি মণ্ডলী থাকতে হবে। তার অর্থ সেইসব মণ্ডলী ইতোমধ্যেই স্বাভাবিকভাবে বাদ পড়ে গেছে, যারা বলেন, “অনেক বৎসর পর্যন্ত মণ্ডলী হারিয়ে গিয়েছিল, আর তারপর আমরা তাকে পুনরায় আবিষ্কার করেছি।” আমরা যে সুসমাচার প্রচার করি তা হারিয়ে গিয়েছিল, একথা বলার দরুন তারা ইতোমধ্যেই কিন্তু বাতিল হয়ে গেছে। কারণ যীশু বলেছেন, মণ্ডলী কখনো হারিয়ে যাবে না। তা যদি না হয় তাহলে যীশু মিথ্যাবাদী হন।

মথি ২১:২৫ পদে দুই প্রকার বাপ্তিস্মের কথা বলা হয়েছে। যীশু প্রধান যাজক এবং প্রাচীনবর্গদের (ব্যবস্থাবেত্তাদের) সঙ্গে কথা বলার সময়, তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করেন, “যোহনের বাপ্তিস্ম কোথা হইতে হইয়াছিল? স্বর্গ হইতে, না মানুষ হইতে?” যীশু এখানে আমাদের কাছে আপনা হতেই দুই ধরনের বাপ্তিস্মের কথা বলেছেন। স্বর্গের বাপ্তিস্ম এবং মানুষের বাপ্তিস্ম। স্বর্গের বাপ্তিস্ম আসে ঈশ্বর হতে। স্বর্গের বাপ্তিস্ম ঈশ্বরের দ্বারা স্বীকৃত। স্বর্গের বাপ্তিস্ম ঈশ্বরের দ্বারা সূচনা করা হয়েছিল। মানুষের বাপ্তিস্ম মানুষের দ্বারা স্বীকৃত। মানুষের দ্বারা প্রচলিত, মানুষের দ্বারা কৃত এবং সম্পূর্ণভাবে মানুষের দ্বারা পরিচালিত। পার্থক্য এই যে, বাইবেল বলে স্বর্গ হতে একজন লোককে পাঠানো হয়েছিল তাঁর নাম ছিল যোহন। ঈশ্বর যোহনকে পাঠিয়েছিলেন বাপ্তিস্ম দিতে। যোহনের বাপ্তিস্ম খাঁটি বাপ্তিস্ম ছিল। আমাদের এমন মণ্ডলী খুঁজে পাওয়া দরকার যে মণ্ডলীর সূচনা যোহনের সময়ে। এটি সেই মণ্ডলী যার স্বর্গীয় বাপ্তিস্ম আছে। যীশু আপনা হতেই বাপ্তিস্মকে দুই প্রকারে বিভক্ত করেছেন। হয় এটিকে হতে হবে ঈশ্বরের বাপ্তিস্ম অথবা মানুষের বাপ্তিস্ম। হয় আপনি মানুষের দ্বারা বাপ্তাইজিত হতে পারেন অথবা ঈশ্বরের দ্বারা, দুটির মধ্যে একটি। 

২। ঐতিহাসিক সত্যতা


আসুন, এখন আমরা ঐতিহাসিক চিরন্তন সত্যের দিকে অগ্রসর হই। আমি যুক্তরাষ্ট্র এবং জগতের অধিকাংশ প্রধান ও মুখ্য ম-লীর তালিকা প্রস্তুত করেছি এবং আমি আপনাদের জানাতে চাই যে কখন তাদের সূচনা বা শুরু হয়েছিল। যদি কোনো মণ্ডলীর সূচনা বা শুরু যীশুর সময়ের পরে হয়ে থাকে কিংবা অন্য কোনো সময় হয়ে থাকে তবে সেই মণ্ডলীর সূচনা বা গঠন যীশু করেননি। যে তারিখগুলো আপনাদের দিতে যাচ্ছি সেগুলো আমি আবিষ্কার করিনি, তারিখগুলো তারাই দিয়েছে যে কখন তাদের শুরু বা গঠন হয়েছিল।

প্রথমটি, খ্রীষ্ট-যীশুতে-সকলেই-এক মণ্ডলীর সহভাগিতা (All-One-in-Christ Church Fellowship)
মি: হৃদয় রঞ্জন সমাদ্দার তার সঙ্গীদের নিয়ে ১৯৪৭ খ্রীষ্টাব্দের ৮ই জুন কলিকাতায় তিনি ‘খ্রীষ্ট-যীশুতে-সকলেই-এক মণ্ডলীর সহভাগিতা-পৈরিতিক ও ভাববাদিক’ নামে একটি নতুন মণ্ডলী স্থাপন করেন। এই সাথে তিনি নিজেকে খ্রীষ্ট যীশুর দ্বিতীয় আগমনে অগ্রগামী দূত, ঈশ্বরের দাস ও শেষকালীন প্রেরিত বলে ঘোষণা করে দাবি করেন যে, যীশু খ্রীষ্টের আসন্ন দ্বিতীয় আগমনের জন্য মনোনীতদের প্রস্তুত করার জন্য ঈশ্বর তাকেই নিযুক্ত করেছেন। এই মণ্ডলী বর্তমানে সহভাগিতা মণ্ডলী বা দল বলে সকলের কাছে পরিচিত। মি: সমাদ্দারের প্রতিষ্ঠিত মণ্ডলীর নেতৃত্ব সম্পূর্ণ ব্যক্তি-কেন্দ্রিক। এই মণ্ডলীর সদস্যদের কেবল একটি কাজই করণীয় আছে, তা হলো মি: সমাদ্দারের নির্দেশ অন্ধের মতো পালন করা। হৃদয় বাবুর ধারণা প্রকৃত খ্রীষ্টিয় তত্ত্ব তিনিই উপলব্ধি করেছেন, ঐশ্বরিক প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত হয়েছেন তিনিই এবং তিনিই প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। তিনি একাধিকবার প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দ্বিতীয় আগমনের নির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কে ভাববাণী প্রচার করছেন এবং এই প্রত্যাদেশের প্রভাবেও তার ২/১ জন সহকারী ও সহকারিনী বহুবার ভাববানী প্রচার করেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রতিবারেই তারা নিরাশ হয়েছেন, কারণ তার ভাববাণী সফলতা এ পর্যন্ত দেখা যায়নি।  

ফোর-স্কোয়ার গসপেল চার্চ (Four-Square Gospel Chruch) 
এ্যামি এস ম্যাকফারসন (Amy S. McPherson) নামে এক মহিলা ১৯২৩ সালে এই মণ্ডলীর শুরু করেছেন। এদের আরম্ব হয়েছে আজুসা স্ট্রিট মিশন, লস্ এনজেলস্, ক্যালিফোরর্নিয়ায়। এটি একটি পেন্টিকস্টাল মণ্ডলী যার সৃষ্টি হয় পরভাষায় কথা বলার ভিত্তিতে। তারা নিজেদের অযোগ্য করে ফেলেছে এ কারণে যে তাদের গঠন বা শুরু হয়েছিল ১৯২৩ সালে।

এ্যাসেমব্লিজ অব গড (এ জি চার্চ) (Assemblies of God Church) 
এই দলটির সূচনা বা আরম্ব ১৯১৪ সালে। এদেরও শুরু হয় ঐ একই কারণে আজুসা স্ট্রিট মিশন, লস্ এনজেলস্, ক্যালিফোরর্নিয়া হতে। তারাও নিজেদের অযোগ্য করেছে। অন্যান্য সমস্ত পেন্টিকস্টাল দলের যাত্রার শুরু বা তাদের উৎপত্তি ছিল আজুসা স্ট্রিট মিশন থেকে। একজন লোক এই মিশনের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি পরভাষায় প্রচার করতে এবং তা শিক্ষা দিতে আরম্ভ করেছিলেন। তিনি লোকদের কাছে আসতেন, তাদের কপালে হাত দিয়ে চেপে ধরতেন কিছুটা ঝাঁকি দিতেন, পিছনে ধাক্কা দিতেন যে পর্যন্ত না তারা পরভাষায় কথা বলতে শুরু করে ও মেঝেতে পড়ে যায় এবং গড়াগড়ি দিতে থাকে। সেটি ছিল প্রথম যা আমরা হলি রোলার মুভমেন্ট (Holly Roller movement) অথবা পেন্টিকস্টাল মুভমেন্ট (Pentecostal movement) বলে জানি। অথবা আপনারা যে-কোনো নামকরণ করতে পারেন। এইসব দল এর আগের দলটি থেকে শুরু হয়েছিল।

চার্চ অব দ্যা ন্যাজ্যারিণ (Nazarenes) 
ন্যাজ্যারিনদের শুরু হয়েছিল ১৮৮৫ সালে এফ. এস. ব্রিসির (F.S. Breese) দ্বারা। এই ন্যাজ্যারিণরা মেথডিস্ট মণ্ডলী থেকে বেরিয়ে আসা একটি দল। কারণ তারা অনুভব করল যে মেথডিস্ট মণ্ডলী, মেথডিস্ট শৃঙ্খলার শিক্ষাগুলো পরিত্যাগ করেছে। সেটি ছিল একটি পুস্তক যার দ্বারা ঐ সময়ে মেথডিস্ট মণ্ডলী পরিচালিত হতো। মেথডিস্ট থেকে বেরিয়ে এসে তারা ‘চার্চ অব দ্যা ন্যাজ্যারিণ’ নাম ধারণ করে। ন্যাজ্যারিণরা বিশ্বাস করে যে একজন লোক তার পরিত্রাণ হারাতে পারেন। তারা বিশ্বাস করে যে মানুষ এমন একটি স্থানে পৌঁছাতে পারে যেখানে তিনি আর কখনো পাপ করেন না। তারা বাপ্তিস্মে জল ছিটানো ও জলে ডুবানো উভয় পদ্ধতিতে বিশ্বাস করে। আপনার ইচ্ছামতো যে-কোনোভাবে বাপ্তিস্মের পদ্ধতি তারা ব্যবহার করবে। একজন লোক পরিত্রাণপ্রাপ্ত হতে পারেন এবং ন্যাজ্যারিণ হতে পারেন কিন্তু ধর্মীয় মতবাদের দিক দিয়ে তারা সবকিছুকে গুলিয়ে ফেলেছে। একজন পরিত্রাণপ্রাপ্ত লোক এ্যাসেমব্লি অব গডের হতে পারে। একজন পরিত্রাণপ্রাপ্ত লোক ফোর-স্কোয়ার গসপেলের হতে পারে। কিন্তু তারা অনেকগুলো মতবাদের দ্বারা নিজেদের গুলিয়ে ফেলেন।

যিহোবা উইটনেস/সাক্ষী (Jehovah's Witness) 
এটি শুরু হয় ১৮৮৪ সালে। এদের প্রতিষ্ঠাতা চার্লস রাসেল (Charles Russell)। তারা বিশ্বাস করেন না যে যীশুই খ্রীষ্ট। তারা বিশ্বাস করেন না যে যীশু ঈশ্বর। তারা বিশ্বাস করেন না যে কেবল অনুগ্রহেই পরিত্রাণ লাভ করা যায়। তারা বিশ্বাস করেন স্বর্গে যেতে হলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ খবর নিতে হবে, ভালো ভালো কাজ করতে হবে, ভালো জীবনযাপন করতে হবে ইত্যাদি। যিহোবা উইটনেসরা এমন কিছুই না যে, ঈশ্বর তাদের লাভ করার জন্য তাদের নিকটবর্তী হবেন। যিহোবা উইটনেসদের মধ্যে কেউ যে পরিত্রাণপ্রাপ্ত লোক আছেন এ বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে। এর সহজ কারণ হলো যে তারা খ্রীষ্টের ঈশ্বরত্বকে অস্বীকার করে। বাইবেলের ২য় যোহনে এ কথা বলে যে, যদি কেউ খ্রীষ্টে না থাকে, সে ব্যক্তি খ্রীষ্টের কেউ নয়। যেহেতু তারা এই ধর্মশিক্ষা অনুযায়ী চলে না, সেজন্য নিশ্চিতভাবে তাদের পরিত্রাণ সম্পর্কে সন্দেহ রয়েছে।

খ্রীষ্টিয়ান সায়েন্স মুভমেন্ট (Christian Science movement) 
১৮৬১ খ্রীষ্টাব্দে এই দলটি শুরু হয়েছিল মেরি বেকার গ্লোভার প্যাটারসন ফ্রাই ইডি (Mary Baker Glover Patterson Fry Eddy) এর দ্বারা। কীভাবে এতগুলো শব্দের লম্বা নাম এলো? করণ মহিলাটি কোনো স্বামীর সঙ্গে বেশিদিন থাকতে পারেনি। আর যখনই তিনি একজনকে ত্যাগ করেছেন, পরক্ষণে স্বামীরূপে আর একজনকে খুঁজে নিয়েছেন। এ কারণে তার ঐ দীর্ঘ নাম হয়। তার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ছিল। তিনি একটি ছোট বই লিখেছিলেন যার নাম Key of the Scripture. বইটিতে বাইবেলকে নিয়ে সম্পূর্ণরূপে কাটা-ছেঁড়া করা হয়েছে। বইটিতে বলা হয়েছে, ঈশ্বর যা বলেছেন তা ঠিক নয়। যখন ঈশ্বর কোনো কথা বলেছেন, তিনি প্রকৃতভাবে যা বুঝাতে চেয়েছেন তাই তিনি আমাদের (ঐ দলকে) বলেছেন (তাদের ঐ) বইটিতে। আপনি যদি কখনো তার কোনো লেখা পাঠ করেন, তাহলে দেখবেন তিনি তার লেখায় যা বলেছেন তা আপনি নিজেও বিশ্বাস করতে পারবেন না। এমনকি সেটি কারো পক্ষে বোধগম্য হবে কি না তাও আপনি বুঝতে পারবেন না। তারা অসুস্থ হওয়াতে বিশ্বাস করে না। আপনি যদি মৃত্যুপথযাত্রী হন, হার্ট এ্যাটাকে মারা যেতে থাকেন অথবা রক্তক্ষরণের জন্য মারা যেতে থাকেন, তারা বলবে এসব আপনার মিথ্যা কল্পনামাত্র। আপনি যদি সঠিক চিন্তা করতে পারেন, আপনি ভালো হয়ে যাবেন এবং মারা যাবেন না। যদিও এটি কোনো আশ্চর্যজনক বিষয় নয় যে মেরি বেকার গ্লোভার প্যাটারসন ফ্রাই এডি নিজেও মারা গেছেন। স্পষ্টত তিনি কখনো তার মনকে সম্পূর্ণরূপে সহজ সরল করতে পারেননি। তারা চিকিৎসায় বিশ্বাস করতেন না। কারণ তারা মনে করতেন তারা কখনো প্রকৃতপক্ষে অসুস্থ হয় না। তবু তিনি ডাক্তারদের কাছে গিয়েছিলেন।

সেভেন্থ-ডে এ্যাড্ভেন্টিস্ট (Seventh Day Adventists) 
এই ম-লীর শুরু হয় ১৮৪৩ খ্রীষ্টাব্দে উইলিয়াম মিলার (William Miller) এবং ইলেন জি হোয়াইট (Ellen G. White) এর দ্বারা। মূলত উইলিয়াম মিলার এটির প্রতিষ্ঠাতা। তিনি প্রত্যেককে বলতে থাকেন যে, যীশু অমুক তারিখে পুনরায় ফিরে আসছেন। তারা সবাই সাদা পোশাক পরে পাহাড়ের উপরে গিয়ে দাঁড়াতেন আর যীশুর আগমনের জন্য অপেক্ষা করতেন। কিন্তু যীশু আসতেন না। সেজন্য তিনি নতুন করে তারিখ দিতেন এবং বলতেন, “আমার ভুল হয়ে গেছে। তিনি কয়েক মাসের মধ্যে আসছেন।” সেজন্য তারা আবার সাদা পোশাক পরে গিয়ে দাঁড়াতেন এবং যীশু আসতেন না। সেজন্য উইলিয়াম মিলার দুঃখবোধ করতেন এবং তিনি হতবুদ্ধি অর্থাৎ বিব্রত অবস্থায় পরতেন। তিনি কোথাও গিয়ে আত্মগোপন করতেন। তখন ইলেন জি হোয়াইট নামে এক মহিলা ঐ দলের একটি অংশকে নিয়ে একটি দল গঠন করলেন যার নাম সেভেন্থ-ডে এ্যাড্ভেন্টিস্ট। তিনি বলেন যে যীশু ঠিকই ফিরে এসেছিলেন কিন্তু যখন তিনি দেখলেন যে সকলে শনিবারের পরিবর্তে রবিবার আরাধনায় মিলিত হচ্ছে তখন তিনি পুনরায় স্বর্গে ফিরে চলে যান। সেজন্য এটি তার অর্থাৎ ইলেন জি হোয়াইট এর কাজ যেন তিনি পুনরায় একটি সঠিক ম-লীর আরম্ব করেন। তিনি সেভেন্থ-ডে এ্যাড্ভেন্টিস্ট ম-লীর শুরু করেন এবং এ বিষয়ে একটি ছোট বই লেখেন যা তারা বিশ্বাস করেন। তারা কর্মের দ্বারা পরিত্রাণে বিশ্বাস করেন। নির্দিষ্ট প্রজাতির মাছ-মাংস ইত্যাদি খাওয়ার দ্বারা এবং বিভিন্ন কাজ করার দ্বারা নিজেদের ভালো করেন। তারা বিশ্বাস করেন স্বর্গে যেতে হলে আপনাকে অবশ্যই শনিবার দিন পালন করতে হবে বা মিলিত হতে হবে। মূলত তারা একটি কর্মবাদী দল।

মরমন (Mormons)
মরমন নামের এই দলটির উৎপত্তি নিম্নরূপ। ১৮৩০ খ্রীষ্টাব্দে যোষেফ স্মিথ (Joseph Smith) নামে এক ব্যক্তির উদয় হয়। তার কাছে এক স্বর্গদূতের আবির্ভাব হয়েছিল। তিনি বলেন যে তার নাম মরোনি (Moroni)। মনে করা হয় যে ঐ ব্যক্তির সবচেয়ে ভালো নাম হবে শেষের “ ি” মাত্রাটি বাদ দেওয়া। তাতে এর সঠিক উচ্চারণ হবে মরোন (Moron)। যাহোক, মরোনি দেখা দেন এবং যোষেফ স্মিথের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি তাকে কিছু সোনার চাকতি বা ফলকের কথা বলেছিলেন যেগুলো উত্তোলন করা হয়েছিল এবং যোষেফ স্মিথ ঐগুলোকে সম্ভবত মরমন পুস্তকে রূপান্তরিত করেন। মরমনরা বিশ্বাস করেন না যে, যীশুই ঈশ্বর। তারা বহুগামিতায় (একই কালে একাধিক বিবাহ) বিশ্বাস করেন। তারা বলেন যে, বর্তমানে তারা এমনটি আর করেন না কিন্তু তাদের গ্রন্থসমূহ এই একাধিক বিবাহ সম্পর্কে শিক্ষা দেয়। প্রকৃতপক্ষে, তাদের গ্রন্থে একথা বলা হয়েছে যে, যদি তোমরা বহুগামিতায় বিশ্বাস না কর তাহলে তোমাদের স্বর্গরাজ্যের বাইরে রাখা হবে। তাদের নিয়মাদির অনেক শিক্ষা এবং বিভিন্ন ধর্মীয় পুস্তক পরস্পর বিরোধী। কিন্তু কেন? এর উত্তর বা কোনো ব্যাখ্যা তারা আপনাকে দিতে পারবে না।

খ্রীস্টিয়ান চার্চ (Christian Church) বা ডিসাইপলস্ অব ক্রাইস্ট (Disciples of Christ) বা চার্চ অব ক্রাইস্ট (Church of Christ) 
এই চার্চ এর শুরু হয় ১৮২৭ সালে আলেকজা-ার ক্যাম্পবেল (Alexander Campbell) নামে এক ব্যক্তির দ্বারা। তিনি বিশ্বাস করতেন এবং শিক্ষা দিতেন যে, একজন লোক তার পরিত্রাণ হারাতে পারে এবং পরিত্রাণের জন্য বাপ্তিস্ম অপরিহার্য। আপনি বাপ্তাইজিত না হলে স্বর্গে যেতে পারবেন না। ক্যাম্পবেলের মৃত্যুর পর এই দলটি বিভক্ত হয়। এখন একটি খ্রীস্টিয়ান চার্চ আছে যারা যন্ত্র সঙ্গীত ব্যবহার করেন। চার্চ অব ক্রাইস্ট দল তাদের গির্জায় পিয়ানো বা কোনো বাদ্য যন্ত্র ব্যবহার করতে দেয় না।

মেথডিস্ট মণ্ডলী (Methodist Church) 
১৭২৯ সালে জন ওয়েসলী (John Wesley) এই মণ্ডলী গঠন করেন। তারা এ্যাংলিকান মণ্ডলী (Anglican Church) থেকে বেরিয়ে আসেন। প্রকৃতপক্ষে তাদের উদ্দেশ্য ছিল বেরিয়ে না আসার। বাস্তবে, জন ওয়েসলী কখনো এ্যাংলিকান মণ্ডলী পরিত্যাগ করেননি। তিনি মারা যাওয়ার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত এ্যাংলিকান মণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। তিনি একটি বই লিখেছেন যার নাম মেথডিস্ট ডিসিপ্লিন (Methodist Discipline). যাতে তারা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করতেন এবং এটির শিক্ষায় অনুগত থাকতেন। তারা এখন অনেক বিভক্ত হয়েছে। উক্ত বইতে এই শিক্ষা দেয় যে, মানুষকে পাপশূন্য অবস্থাতে সম্পূর্ণ পবিত্রতায় অবশ্যই আসতে হবে। উক্ত বইতে আরো শিক্ষা দেয় যে, বাপ্তিস্ম একটি সাক্রামেন্ট (পবিত্র ধর্মানুষ্ঠান) যা পরিত্রাণের জন্য অপরিহার্য। বাপ্তিস্মের মাধ্যমে আপনি উদ্ধার পেতে পারেন। তারা শিক্ষা দেয় যে, শিশুদেরও বাপ্তাইজিত হওয়া দরকার। যখন শিশুদের বাপ্তিস্ম দেওয়া হয় তখন তাদের ঈশ্বরের পরিবারের ও ঈশ্বরের রাজ্যের সদস্য করা হয়। তারা যদি সেই বাপ্তিস্ম পর্যন্ত বেঁচে থাকে তো স্বর্গে যাবে। যদি তারা ঐ পর্যন্ত বেঁচে না থাকে তবে তারা তাদের পরিত্রাণ হারাবে ও নরকে যাবে। এটি মেথডিস্ট মণ্ডলীর শিক্ষা।

কোয়েকার মণ্ডলী (Quaker Church)
এই মণ্ডলী ১৭২৯ সালে জর্জ ফক্স (George Fox) নামে এক ব্যক্তির দ্বারা গঠন হয়। তারা পরিপূর্ণ শুদ্ধতায় বিশ্বাস করেন এবং পরিত্রাণ হারিয়ে ফেলাতেও বিশ্বাস করেন। তারা এমন একটি মণ্ডলী যারা বিভিন্ন অপ্রচলিত শব্দ ব্যবহার করেন। তারা খুবই পবিত্রচেতা একটি দল হলেও তাদের শিক্ষা ভুল।

কংগ্রেগেশনাল মণ্ডলী (Congregational Church) 
১৬০২ সালে এই মণ্ডলী গঠন হয়। এটি এপিসকোপাল মণ্ডলী (Episcopal Church) ভেঙে তৈরি হয়েছে। এদেরও অনেক অদ্ভুত বিশ্বাস আছে। তারা স্বর্গ ও নরকে বিশ্বাস করেন না। তারা কুমারীর গর্ভে জন্ম বিশ্বাস করেন না। তারা অনন্ত নিশ্চয়তায় বিশ্বাস করেন। যেহেতু তাদের বিশ্বাস অনুসারে যখন কোনো স্বর্গ বা নরক নেই, সেহেতু তারা জানেন না কেন তাদের অনন্ত নিশ্চয়তা দরকার। তারা শিশুদেরও বাপ্তিস্ম দেন। 

এপিসকোপাল মণ্ডলী (Episcopal Church - চার্চ অফ ইংল্যান্ড) 
১৫৪০ খ্রীষ্টাব্দে রাজা অষ্টম হেনরি (King Henry VIII) এই মণ্ডলী গঠন করেন। তার এক স্ত্রী ছিল যাকে তিনি ডিভোর্স দিতে চেয়েছিলেন। ১২ বৎসর বয়সে তিনি বিবাহ করেন এবং ২০ বৎসর পরে অপর একটি স্ত্রীলোককে দেখে তার ভালো লাগে এবং তাকে বিবাহ করতে চান। সেজন্য তিনি সেই বিবাহের ব্যবস্থা এবং আগের স্ত্রীকে ডিভোর্সেরও ব্যবস্থা করতে সচেষ্ট হন। পোপ বিষয়টি জানতে পেরে তাকে বলেন যে এমন কর্ম তিনি করতে পারেন না। সেজন্য রাজা অষ্টম হেনরি সাহসের সঙ্গে বিপদের ঝুঁকি নিয়ে বলেন, “আমরা পোপের ক্ষমতা অস্বীকার করি। আমি মণ্ডলীর প্রধান।” আর তখনই তিনি এপিসকোপাল মণ্ডলীর সূচনা করেন। তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দেন ও এ্যান্ বোলেন্কে (Anne Boleyn) বিবাহ করেন। পরে তিনি তাকে হত্যা করেন ও অপর এক মহিলাকে বিবাহ করেন। তার আরও কয়েকটি স্ত্রী ছিল। 

এপিসকোপাল মণ্ডলীর বিশ্বাস, আপনি সাক্রামেন্ট দ্বারা উদ্ধার পাবেন। যেমন বাপ্তিস্ম, প্রভুর ভোজ ইত্যাদি। এই মণ্ডলীও কর্মের দ্বারা পরিত্রাণ লাভ বুঝায়।

প্রেসবিটেরিয়ান মণ্ডলী (Presbyterian Church)
১৫৩৫ খ্রীষ্টাব্দে জন ক্যালভিনের (John Calvin) দ্বারা এই মণ্ডলীর উৎপত্তি হয়। প্রেসবিটেরিয়ান মণ্ডলী একটি ভিন্ন ধরনের দল। তারা কাথলিক মণ্ডলী থেকে বেরিয়ে এসেছে। জন ক্যালভিন একজন ভূতপূর্ব পুরোহিত ছিলেন। তিনি শিক্ষা দিয়েছেন এবং মণ্ডলী বিশ্বাস করেছে যে, একজন লোকের মুক্তিলাভ আগে থেকেই নিরূপিত বা নির্ধারণ করা হয়েছে (predestined to be saved)। অর্থাৎ ঈশ্বর মনোনীত করেন যে কে স্বর্গে এবং কে নরকে যাবে। তাদের বিশ্বাসে ঈশ্বরের দ্বারা মুক্তির বিষয়টি আপনার জন্য পূর্ব হতে মনোনয়ন এবং পূর্ব হতেই স্থির করা হয়েছে। তিনি অনন্ত নিশ্চয়তায় বিশ্বাস করতেন। আপনি যদি মনোনীত হয়ে থাকেন, তবে চিরকালের জন্য সুরক্ষিত এবং আপনি কোনো মতে তা হারাতে পারেন না। এখানে প্রভুকে আপনার মুক্তিদাতারূপে গ্রহণ করার মতো কোনো বিষয়ই নেই। এটি সম্পূর্ণ ঈশ্বরের বিষয়। তিনি আপনাকে পূর্ব হতে নিরূপণ করেছেন। এ ধরনের পরিত্রাণের জন্য বাপ্তিস্মেরও প্রয়োজন আছে। 

লুথারান মণ্ডলী (Lutheran Church)
১৫১৭ খ্রীষ্টাব্দে মার্টিন লুথার (Martin Luther) এই মণ্ডলীর শুরু করেন। এটি আসলে ছিল প্রোটেস্টান্ট রিফরমেশন বা ধর্মীয় সংস্কার। মার্টিন লুথার কাথলিক মণ্ডলী থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। তিনি উইটেনবার্গ মণ্ডলীর দরজাতে তার পঁচানব্বইটি ধারা বা দফা প্রেক দিয়ে গেঁথে দিয়েছিলেন। সেগুলো ছিল, কেন তিনি কাথলিক মণ্ডলীর সঙ্গে একমত না তার ৯৫টি কারণ। তিনি তার মণ্ডলীর শুরু করেন যাতে বিশ্বাস করেন যে একজন লোক সাক্রামেন্টসমূহ পালনের দ্বারা পরিত্রাণ লাভ করে। পরিত্রাণের জন্য আপনাকে অবশ্যই একটি মণ্ডলীর সদস্য হতে হবে, বাপ্তিস্মপ্রাপ্ত হতে হবে, প্রভুর ভোজ গ্রহণ করতে হবে ইত্যাদি। তারা আরো বিশ্বাস করেন আপনি আপনার পরিত্রাণ হারাতে পারেন। 

ডাচ রিফর্মড চার্চ (Duch Reformed Church)
১০৫০ খ্রীষ্টাব্দে এই মণ্ডলীর আরম্ব হয়। এটিও কাথলিক মণ্ডলী থেকে বেরিয়ে আসে এবং এটি মূলত কাথলিক বিশ্বাস অনুসরণ করে।

গ্রিক অর্থডক্স মণ্ডলী (Greek Orthodox Church)
এই ম-লীর শুরুও ১০৫০ খ্রীষ্টাব্দে। এটিও কাথলিক মণ্ডলী থেকে বেরিয়ে আসে এবং কাথলিক বিশ্বাসের অধিকাংশ বিষয় তারা পালন করে।

রোমান কাথলিক মণ্ডলী (Roman Catholic Church)
৫৯০ খ্রীষ্টাব্দে এই মণ্ডলীর শুরু হয়। প্রকৃত পক্ষে এটি ৩৭৫ খ্রীষ্টাব্দে গঠিত হতে শুরু করে, যখন কন্স্টান্টাইন্ (Constantine) তার লোকদের নদীর মধ্য দিয়ে গমন করান এবং সবাইকে বাপ্তাইজিত করেন। যখন তারা তাদের ঘোড়াগুলো চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল তখন তিনি বলেছিলেন, “তোমরা এখন খ্রীস্টিয়ান”। ৫৯০ খ্রীষ্টাব্দে অষ্টম গ্রেগরি (Gregory VIII) নামে একজন সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং নিজেকে প্রথম পোপ বলে ঘোষণা করেন। এভাবে সেটি ছিল কাথলিক মণ্ডলীর মূল সূত্রপাত।

এ পর্যন্ত যতগুলো মণ্ডলী সম্পর্কে আমরা আলোচনা করেছি সেগুলো সব কাথলিক মণ্ডলী থেকে বেরিয়ে এসেছে। তাদের কতগুলো সরাসরি কাথলিক মণ্ডলী থেকে বেরিয়ে এসেছে অথবা তারা অন্য একটি দলের থেকে পৃথক হয়েছে যা পূর্বে কাথলিক মণ্ডলীভুক্ত ছিল। অর্থাৎ তাদেরকে বলা যায় প্রকৃত প্রোটেস্টান্ট। মাঝে মধ্যে এমন কারো সঙ্গে আপনার দেখা সাক্ষাৎ হতে পারে যে তারা বলবে ব্যাপ্টিস্টরা প্রোটেস্টান্ট। কিন্তু তা সত্য নয়।

ব্যাপ্টিস্ট কোনো প্রোটেস্টান্ট নয়
একজন প্রোটেস্টান্ট হলেন তিনি, যিনি ঐ কাথলিক মণ্ডলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন বা বেরিয়ে এসেছেন। কাথলিকদের বহু পূর্ব থেকেই ব্যাপ্টিস্টরা সর্বত্র ছিল যা কখনো ধারণা বা চিন্তা করা হয়নি। এখন আপনারা বলবেন, আপনি এটি কেমন করে প্রমাণ করবেন? হ্যাঁ, আমার কাছে একটি বই আছে। আমি সেখান থেকে কিছু উদ্বৃতি আপনাদের দিতে চাই। জুইংলি নামে এক ব্যক্তি ছিলেন, যিনি রিফরমেশন বা ধর্ম সংস্কারের সময়ে লুথার ও কাথলিকদের সঙ্গেও কাজ করেছিলেন। তিনি বলেন “এ্যানা-ব্যাপ্টিস্টদের সংগঠনটি নতুন কিছু নয় কিন্তু ১৩০০ বছর ধরে এটি ম-লীর মধ্যে বিরাট সমস্যার সৃষ্টি করে আসছে।” মোস্হীম, যিনি একজন লুথারান ঐতিহাসিক ছিলেন। তিনি লিখেছেন, “লুথার এবং ক্যালভিনের আবির্ভাবের পূর্বে ইউরোপের প্রায় সবকটি দেশে গোপনভাবে লোকেরা ছিল, যারা বর্তমান ডাচ্ ব্যাপ্টিস্টদের নীতিমালার প্রতি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে অনুগত।” রবার্ট বার্কলী, একজন কোয়েকার। তিনি বলেন, “একথা বিশ্বাস করার কারণ আছে যে প্রেরিতদের সময় থেকে ইউরোপ মহাদেশে কিছু গুপ্ত খ্রীস্টিয়ান দল ছিল যারা ব্যাপ্টিস্ট বলে পরিচয় দিত।” জন উইটেনব্যাক, একজন মেথডিস্ট ঐতিহাসিক বলেছেন, “আমি অনায়াসে বা সহজে স্বীকার করব না যে, বিগত ১০০ খ্রীষ্টাব্দের সময়ে কোনো ব্যাপ্টিস্ট মণ্ডলী ছিল। যদিও নিঃসন্দেহে সেই সময়ে ব্যাপ্টিস্টগণ ছিল, কারণ সব খ্রীস্টিয়ানই ছিল ব্যাপ্টিস্ট।” 

আলেকজান্ডার ক্যাম্পবেল খ্রীস্টিয়ান চার্চ এবং চার্চ অব ক্রাইস্টের প্রতিষ্ঠাতা বলেছেন, “প্রেরিতদের সময় থেকে আজ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ব্যাপ্টিস্টদের চেতনায় বিশ্বাসীদের দল ছিল এবং তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে জনতার ঐতিহাসিক দলিল প্রত্যেক শতাব্দীতে উপস্থাপন করা যায়।” স্যার আইজাক নিউটন নামে একজন ইংরেজ দার্শনিক বলেছেন, “বর্তমান ব্যাপ্টিস্ট, যাদের পূর্বে এ্যানা ব্যাপ্টিস্ট বলা হতো, তারাই একমাত্র সম্প্রদায় যারা কখনো পোপীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিজেদের চিহ্নিত করেনি।” অন্য কথায়, আমরা কখনো কাথলিক মণ্ডলীর মধ্যে ছিলাম না। যেসব ঐতিহাসিকেরা এসব মন্তব্য প্রকাশ করেছেন তারা সকলেই অন্য মণ্ডলীভুক্ত ছিলেন। ব্যাপ্টিস্ট নয়।

এখন আমি ঐতিহাসিক ভিত্তিতে কয়েকটি বিবৃতি দেব। ব্যাপ্টিস্টগণ সব সময় ব্যাপ্টিস্ট নামে পরিচিত ছিল না। তাদের নাম ছিল মন্টানিস্টস, ওয়ালডেনসীয়, মেনোনাইট ইত্যাদি। বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া দরকার যে, আজকে যারা মেনোনাইট তারা ধর্মতত্ত্বের দিক দিয়ে পূর্বের মেনোনাইটের সঙ্গে এক নয়। যীশুর সময় থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন নামে এরা পরিচিত ছিল। আপনি ইতিহাস থেকে তাদের খুঁজে বের করতে পারেন। তাদের মধ্যে একটি নাম এ্যানা-ব্যাপ্টিস্ট। তাদের এই নাম দেওয়ার কারণ ছিল এই যে, তারা পুনরায় বাপ্তাইজ করত। এ্যানা শব্দটির অর্থ “পুনরায়”। পুনঃবাপ্তিস্ম দাতাগণ। তাদের এরূপ বলা হতো কারণ তারা অন্যদের পুনরায় বাপ্তিস্ম দিতো, যখন ঐসব লোক তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে আসত। যখন অন্যরা তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে আসত, তারা তাদের প্রকৃত আত্মিক বিশ্বাসী বলে গ্রহণ করত না। তারা তাদের পুনরায় বাপ্তিস্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করত। আসলে, এটিই ছিল শাস্ত্রসম্মত বাপ্তিস্ম। এ কারণে যে, বিষয়টি শাস্ত্র অনুসারে পুনরায় (দ্বিতীয়বার) বাপ্তিস্ম দান ছিল না। আপনি বলবেন, “কেন তারা তাদের পুনরায় বাপ্তিস্ম দিতো? তারা ঐসব লোকের বাপ্তিস্ম গ্রাহ্য করত না। কারণ তারা যে মণ্ডলী থেকে আসত সেটি খাঁটি মণ্ডলী ছিল না সেজন্য তারা ঐসব লোকদের পুনরায় বাপ্তিস্ম দান করত। এটি প্রকৃতপক্ষে পুনরায় বাপ্তাইজিত করা ছিল না, এটিই ছিল প্রকৃত বাপ্তিস্ম, কারণ তারা কখনো প্রকৃতভাবে বাপ্তাইজিত হয়নি।

৩। ধর্মতত্ত্বগত সত্যতা বা ধর্মীয় শিক্ষাগত সত্যতা


তৃতীয় কারণ আমি বিশ্বাস করি যে, ব্যাপ্টিস্টগণ ধর্মতত্ত্বগত সত্যে অর্থাৎ বাইবেল শিক্ষানুযায়ী ঠিক আছে। আমি মনে করি যে ব্যাপ্টিস্টগণ সবার থেকে দৃঢ়, সবল ও বলিষ্ঠ। 

প্রথমত, আমরা জানি যে যীশু মণ্ডলী গঠন করেছিলেন। আমরা জানি তারপর শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মণ্ডলীর অস্তিত্ব টিকে আছে যা আজও বিরাজমান। তবে এই মণ্ডলী যে কোনটি এ বিষয়ে আমরা এখনো কম বেশি অন্ধকারে আছি। ইতিহাস আমাদের বলে যে, অন্যান্য মণ্ডলীর শুরু বা গঠন হয়েছে মূলত সাম্প্রতিক কালে। প্রকৃতপক্ষে ব্যাপ্টিস্ট ছাড়া যীশুর সমকালের সবচেয়ে নিকটতম মণ্ডলী হচ্ছে কাথলিক মণ্ডলী। সেজন্য আমরা কাথলিকদের সঙ্গে কম বেশি প্রতিদ্বন্দ্বী। আমরা যদি ঈশ্বরের বাক্যের দিকে দৃষ্টি দেই ও খুঁজে দেখি যীশুর সময়ে কী ধরণের ধর্মতত্ত্ব শিক্ষা (ধর্মোপদেশ) দিতে ঈশ্বর বলেছেন। তাহলে এসব ধর্মতত্ত্বের সঙ্গে ব্যাপ্টিস্টরা বর্তমানে যা বিশ্বাস করে ও অন্যান্য মণ্ডলী বর্তমানে যা বিশ্বাস করে, তার তুলনা করতে পারবো। এই তিনটি পয়েন্টের মধ্যে এটিই হবে সর্বশ্রেষ্ঠ সমাধান।

প্রথমত। নতুন নিয়ম (New Testament) যেমন শিক্ষা দেয় আমরাও সে রকম মণ্ডলী পরিচালনার কর্ম ব্যবস্থায় বিশ্বাস করি। নতুন নিয়ম শিক্ষা দেয় যে, মণ্ডলীর বাইরের কিছু দলের লোকদের দ্বারা মণ্ডলী পরিচালনা না করুক এবং মণ্ডলীকে নির্দেশ না দিউক। রোম থেকে পোপ কাথলিক মণ্ডলীকে পরিচালনা দেন। ইংল্যান্ডের প্রধান আর্চবিশপ এপিসকোপাল (চার্চ অফ ইংল্যান্ড) মণ্ডলীকে পরিচালনা দেয়। মেথডিস্ট মণ্ডলীকে তাদের বিভিন্ন বিশপ পরিচালনা দেয়। এভাবে খোঁজ নিলে দেখা যাবে তারা সব বিষয়ে তাদের আসন বজায় রাখেন এবং প্রচারকদের নির্দেশ দেন কি করতে হবে ও কোথায় যেতে হবে। কিন্তু ব্যাপ্টিস্টগণ অন্যরকম। পালকের দ্বারা ব্যাপ্টিস্টগণ এমনভাবে পরিচালিত হয় না। তারা কোনো বিশপের দ্বারা পরিচালিত হয় না যিনি পালকের উপরে থাকেন। তারা স্থানীয় মণ্ডলীর লোকদের দ্বারা পরিচালিত হয়। সেই মণ্ডলীর সদস্যদের ভোটে স্থির করা হয় যে কাকে মণ্ডলীতে গ্রহণ করা হবে কি হবে না। এটি সদস্যদের উপরে নির্ভর করে যে তারা কোনো স্থান, গৃহ বা ভবন ক্রয় করবে কি না। সদস্যদের ভোটের উপরে নির্ভর করে মণ্ডলীর কার্যক্রম কী হবে। এটি সদস্যদের বিষয়। এটি একটি গণতন্ত্র কিন্তু খ্রীষ্টের প্রভুত্বের অধীনে। তারা সর্বদা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রভুর দিকে তাকায় এবং তাঁর বাক্যে যে নির্দেশনা আছে সেগুলো অনুসরণ করে।

দ্বিতীয়ত। ব্যাপ্টিস্টগণ এবং আদি মণ্ডলীসমূহ সকল বিশ্বাসীর যাজকত্ব বিশ্বাস করে। অন্য কথায়, পরিত্রাণপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অধিকার আছে স্থির করার যে, তারা কী বিশ্বাস করবে এবং তারা কী করতে চায়। যখন আমি একথা বলি, তখন আমি বুঝাতে চাচ্ছি না যে আপনি যেমন চান তেমনই বিশ্বাস করবেন। কিন্তু আপনার অধিকার আছে আপনার ইচ্ছামতো বিশ্বাস করার। এখানে একটি বড় পার্থক্য। আপনি দেখুন, আপনি ইচ্ছা করলে বিশ্বাস করতে পারেন যে বিষ আপনার ক্ষতি করবে না। সেই বিশ্বাস করার জন্য আমি আপনাকে বাঁধা দেব না। আমি আপনাকে হয়ত অন্যভাবে বুঝাতে চেষ্টা করব। কিন্তু আমার কথা শোনা বা না শোনার অধিকার আপনার আছে। সেই বিষ প্রথমবারের মতো পান করার পর হয়ত আপনি বুঝতে পারবেন যে আমি ঠিক বলেছিলাম। সেজন্য আমি যা বলতে চাচ্ছি সেটি এই যে, প্রত্যেকের তার ইচ্ছামতো বিশ্বাস করার অধিকার আছে। এ্যাসেমব্লিজ অব গড, প্রেসবিটেরিয়ান এবং আর সকলের অধিকার আছে তাদের ইচ্ছামতো বিশ্বাস করার। আমি সেই অধিকারকে খর্ব করতে চাই না বরং সমর্থন করি। আমি তাদের অধিকারের পক্ষে। প্রকৃতপক্ষে, বর্তমান আমেরিকানদের যে সরকার রয়েছে সেটি ব্যাপ্টিস্টদের জন্যই হয়েছে। 

টমাস জেফারসন (Thomas Jefferson) নামে এক ব্যক্তি ব্যাপ্টিস্ট মণ্ডলীর কয়েক মাইল দূরে বাস করতেন। তিনি ঐ মণ্ডলীর পালককে লিখে জানালেন, “আপনার মণ্ডলীতে যে ধরনের পরিচালনার কর্মব্যবস্থা রয়েছে, আমি চাই যখন আমাদের সরকার চালু হবে তখন আমেরিকার কলোনীসমূহে যেন তদ্রুপ হয়।” টমাস জেফারসন ঐ ধরনের প্রশাসন চালু করেছিলেন। তারপর অন্যান্যরা আসেন এবং সংবিধান রচনা করতে সাহায্য করেন যা কোনো ব্যাপ্টিস্ট ধরন বা আদর্শ অনুযায়ী সরকার পরিচালনার কর্ম ব্যবস্থাকে কার্যকর করে। সেজন্য ঐ বিষয়ে আমরা অর্থাৎ ব্যাপ্টিস্টরাই একান্তভাবে দায়িত্বপূর্ণ ছিলাম। ব্যাপ্টিস্টগণ সবসময়ই অন্যান্য মণ্ডলীর উপর অত্যাচার করার বিরোধী ছিল। অন্যকথায়, কাথলিকদের অধিকার আছে বেঁচে থাকার; প্রেসবিটেরিয়ানদের অধিকার আছে বেঁচে থাকার এবং ব্যাপ্টিস্টদেরও অধিকার আছে বেঁচে থাকার। যদিও প্রেসবিটেরিয়ানরা সেই সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে একটি যারা বিগত দিনগুলোতে অনেক বর্বরোচিত ও নিষ্ঠুর হত্যাকা- করেছে। তারা লোকদের হত্যা করত শুধু ভিন্নভাবে টুপি পরার কারণে। তারা বিশ্বাস করত মণ্ডলীর পরিচালনার কর্মব্যবস্থা এবং দেশের প্রশাসন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযোগ আছে। কাথলিক মণ্ডলীও তাদের বিশ্বাস অনুসারে বিশ্বাস বা না চলার কারণে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ হত্যা করেছে। ইতিহাসে আমরা দেখি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে মতভেদের কারণে, তাদের অনুরূপ অন্যেরা বিশ্বাস না করার করণে অনেককে হত্যা করেছে।  

তৃতীয়ত। আমরা বিশ্বাস করি এবং আদি মণ্ডলী বিশ্বাস করত, মণ্ডলীর সদস্যগণ হবে নতুন জন্মপ্রাপ্ত। অর্থাৎ যখন কোনো ব্যক্তি পরিত্রাণ লাভ করেন, তখন তিনি মণ্ডলীভুক্ত হতে পারেন। যে পর্যন্ত না কোনো ব্যক্তি পরিত্রাণ লাভ করেন, তার স্থানীয় মণ্ডলীর একজন বলে কোনো দাবি থাকে না। যে সমস্ত মণ্ডলীর কথা আমরা আলোচনা করেছি, তাদের মধ্যে প্রায় প্রত্যেকটি মণ্ডলী বিশ্বাস করে যে, একজন হারানো ব্যক্তি মণ্ডলীতে যোগ দিতে পারেন। আর যখন তিনি মণ্ডলীতে যোগ দেন, তখন পরিত্রাণ লাভ করেন। এই কাজটি তারা বাপ্তিস্ম দিয়ে সম্পন্ন করে থাকে। এর দ্বারা তাদের ঈশ্বরের রাজ্যের মধ্যে আনয়ন করে। এসব মণ্ডলীর মধ্যে অনেকে আবার কোলের ও ছোট শিশুদেরও বাপ্তিস্ম দেয়। খুব ছোট বিধায় তারা পরিত্রাণপ্রাপ্ত নয়। অথচ বাপ্তিস্ম দিয়ে এদের মণ্ডলীতে গ্রহণ করে। কিন্তু বাইবেল শিক্ষা দেয়, মণ্ডলীতে যোগদানের পূর্বে একজনকে অবশ্যই পরিত্রাণপ্রাপ্ত হতে হবে। পরিত্রাণের সঙ্গে বাপ্তিস্ম এবং মণ্ডলীর সদস্য লাভের কোনো সম্পর্ক নেই।

চতুর্থত। আমরা বিশ্বাস করি যে কেবল দুটি মাণ্ডলিক ধর্মানুষ্ঠান বিধি আছে। আমরা ঐ দুটিকে সাক্রামেন্ট বলি না। সাক্রামেন্ট এমন এক ধারণা দেয় যে, প্রভুর ভোজ গ্রহণ অথবা বাপ্তাইজিত হওয়ার দরুন আপনাকে স্বর্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঈশ্বরের নিকট হতে আপনি কিছু ভালো নম্বর পেলেন। বিষয়টি সাধারণত অন্যান্য অধিকাংশ মণ্ডলী বিশ্বাস করে। কিন্তু বাইবেল এ ধরনের কিছু শিক্ষা দেয় না। বাইবেল শিক্ষা দেয় যে, যখন কোনো ব্যক্তি প্রভুর ভোজ গ্রহণ করেন, এতে তিনি প্রভুর মৃত্যু স্মরণার্থক উৎসব পালন করেন। এটি একটি চিত্রের মতো যা প্রকাশ করে যে, প্রভুতে তাদের প্রতি কী ঘটেছে। এর সঙ্গে তাদের পরিত্রাণের কোনো সম্পর্ক নেই।

পঞ্চমত। আমরা সার্বজনীন মণ্ডলীতে বিশ্বাস করি না। আমরা দেখেছি যে এসব অন্যান্য মণ্ডলী বিশ্বাস করে যে, সমস্ত খ্রীষ্টিয়ানদের নিয়ে একটি সার্বজনীন মণ্ডলী গঠিত। ঐতিহাসিকভাবে ব্যাপ্টিস্টগণ স্থানীয় মণ্ডলীতে বিশ্বাস করত। অনেক মণ্ডলী “ব্যাপ্টিস্ট” কথাটি দরজার সামনে স্থাপন করে কিন্তু ভিতরে তারা ব্যাপ্টিস্ট নয়। এ কারণে আমরা কখনো কখনো অন্যান্য ব্যাপ্টিস্ট মণ্ডলী থেকে আগত ব্যক্তিদের বাপ্তিস্ম না দিয়ে সদস্যরূপে গ্রহণ করতে পারি না। এটি কেবল এজন্য যে সেই মণ্ডলী কয়েকটি অপরিহার্য এবং প্রধান প্রধান ধর্মশিক্ষা অমান্য করেছে যা একটি খাঁটি মণ্ডলী গঠনের জন্য অন্তরায় বা বাধাস্বরূপ। এখানে এই কথা বলা হচ্ছে না যে, ঐসব মণ্ডলীর লোকেরা পরিত্রাণপ্রাপ্ত নয় অথবা তাদের কতক লোক স্বর্গে যাবে না। এখানে বলা হচ্ছে যে, তারা (ঐসব মণ্ডলী) শাস্ত্রসম্মত বা শাস্ত্রনুযায়ী নয়, সেজন্য তারা বাপ্তিস্ম দেওয়ার অধিকার হারিয়েছে।

ষষ্ঠত। আমরা বিশ্বাস করি না যে, বাপ্তিস্ম আপনাকে পরিত্রাণ দান করবে। কিন্তু পরিত্রাণের পর বাধ্যতার চিহ্ন বা কার্যস্বরূপ বাপ্তিস্ম আসে। এখন আমি আপনাদের কিছু উদ্বৃতি দিচ্ছি। এপিসকোপাল (চার্চ অফ ইংল্যান্ড) মতবাদ বলে, “বাপ্তিস্ম দ্বারা আমি খ্রীষ্টের একজন সদস্য, ঈশ্বরের সন্তান এবং স্বর্গরাজ্যের প্রজা হওয়ার অধিকারী হই।” আপনি কি এর মধ্যে কোনো ভুল দেখতে পেলেন? প্রেসবিটেরিয়ান স্বীকারোক্তিতে এ রকম লেখা আছে, “বাপ্তিস্ম নতুন নিয়মের একটি সাক্রামেন্ট। যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা আদিষ্ট। এটি কেবল একটি দৃশ্যমান মণ্ডলীতে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিই নয়, ঐশ্বরিক অনুগ্রহ লাভের চিহ্ন এবং একটি সিলমোহর বা মুদ্রাঙ্ক। এটা খ্রীষ্টের সঙ্গে যুক্ত হওয়া, পুনর্জন্ম, পাপের ক্ষমা লাভ এবং যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের কাছে নিজেকে প্রদান যেন জীবনের নতুনতায় চলতে পারে।” অর্থাৎ এটি একটি সাক্রামেন্ট যা আপনাকে পরিত্রাণের পথে নিয়ে যায়। 

মেথডিস্টদের অনুষ্ঠান পদ্ধতিতে লেখা আছে, “পবিত্র সাক্রামেন্টের জন্য এই জল শুচিকৃত হলো। শিশুটির বাপ্তিস্ম দান গ্রাহ্য কর যেন সে তোমার অনুগ্রহের পূর্ণতা লাভ করে, চিরকাল বিশ্বস্ত এবং মনোনীত শিশুদের মধ্যে থাকে।” তারা বলে যে, আপনি আপনার পরিত্রাণ হারিয়ে ফেলতে পারেন। বাপ্তিস্ম তাদেরকে পরিত্রাণের মাঝে নিয়ে যায়। তারপর তারা যত বড় হয়, তাদের এই স্বীকৃতি পুনরায় নতুনভাবে করতে হয়। এভাবে শুধু কয়েকটি বিভিন্ন দলের বিষয় আলোচনা করা হলো। এভাবে আমরা আরো অনেক কিছুই দেখতে পারি। মণ্ডলীর অত্যাবশ্যক বিষয়গুলোর মধ্যে বাপ্তিস্ম একটি যা একটি মণ্ডলীকে খাঁটি মণ্ডলী করে। শাস্ত্রসম্মত বাপ্তিস্মের ক্ষেত্রে চারটি বৈশিষ্ট্য আছে।

এক : বাপ্তিস্ম অবশ্যই জলের নিচে করতে হবে। এটি অবশ্যই অবগাহন (জলে ডুবিয়ে) হতে হবে।

দুই : বাপ্তিস্ম কেবলমাত্র পরিত্রাণপ্রাপ্ত ব্যক্তির জন্য হতে হবে।

তিন : বাপ্তিস্ম অবশ্যই উপযুক্ত এবং সঠিক কারণের জন্য হতে হবে। এটি মানুষকে উদ্ধার করার জন্য করা নয়। যেহেতু সেই ব্যক্তি পরিত্রাণপ্রাপ্ত সেজন্য এটি একটি চিত্রের মতো।

চার : বাপ্তিস্ম উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের দ্বারা হতে হবে। এর দ্বারা আমি একটি খাঁটি মণ্ডলীকে বুঝাতে চাই, যে মণ্ডলীকে যীশু স্বীকার করেন। এটি কি মানুষের দ্বারা বাপ্তিস্ম নাকি ঈশ্বরের দ্বারা বাপ্তিস্ম? যদি কোনো মণ্ডলী অন্য কোনো মণ্ডলীর বাপ্তিস্ম মেনে নেয় যা প্রকৃতপক্ষে শাস্ত্রসম্মত কোনো মণ্ডলী নয়, তাহলে মণ্ডলী হিসাবে তাদের অধিকার হারায়। এটি একই বিষয় হবে যদি আমরা তাদের বাপ্তিস্ম অনুসারে গ্রহণ করি। যেমন কোনো পরিত্রাণপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে গ্রহণ করা এবং কোনো প্রোটেস্টান্ট মণ্ডলীতে গিয়ে তাদের দ্বারা বাপ্তাইজিত হওয়া। আমরা সেটি করতে পারি না, কারণ শাস্ত্র অনুসারে এটি ঠিক হবে না। সেক্ষেত্রে একটি খাঁটি মণ্ডলী হিসাবে আমাদের যে অধিকার তা থেকে বঞ্চিত হব। 

সপ্তমত। অনুগ্রহেই পরিত্রাণ। কেবল অনুগ্রহে। যদি কাউকে স্বর্গে যেতে হয়, তাহলে তার একটিমাত্র পথ। আর তা হলো প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে। খ্রীষ্টই তাদের জন্য সেই ব্যবস্থা করেছেন। যখন কোনো ব্যক্তি পরিত্রাণ লাভ করে, এটি নির্ভর করে না সে কি করছে, এটি নির্ভর করে না সে কি করতে যাচ্ছে। এটি কেবল নির্ভর করে যে যীশু তাদের জন্য কি করেছেন। এই হলো পরিত্রাণ এবং এই হলো বর্তমান পৃথিবীর অন্য সমস্ত ম-লীর সঙ্গে আমাদের শতকরা ৯৯ ভাগ পার্থক্যে থাকা। আমি একথা বলতে চাই, অন্যান্য ম-লীর বিশ্বাস সম্পর্কে যেসব বিষয় আমি আপনাদের ইতোপূর্বে বলেছি, সে বিষয়গুলো ঐসব মণ্ডলী বিশ্বাস করে। আপনি ঐসব মণ্ডলীতে অনেক কিছু দেখবেন যা মণ্ডলীর বিশ্বাসের সঙ্গে মেলে না। তদ্রুপ ব্যাপ্টিস্ট মণ্ডলীসমূহেও বিভিন্ন বিষয়ে এখানে সেখানে দ্বিমত দেখতে পাবেন। তারা সম্পূর্ণরূপে একমত নয়। আপনি এসব মণ্ডলীর যে কোনো একটিতে ব্যতিক্রম খুঁজে পাবেন। কিন্তু আপনি যদি অনুসন্ধান করেন, তবে আরো খুঁজে পাবেন, যে ঐসব মণ্ডলী ঈশ্বরকে হারিয়ে ফেলেছে। বর্তমানে এমন মণ্ডলী থাকাও সম্ভব যাদের নাম “ব্যাপ্টিস্ট” নয় কিন্তু শাস্ত্রসম্মত। যেমন পূর্বে বলেছি, আমাকে এখনো শাস্ত্রসম্মত এমন মণ্ডলী খুঁজে পেতে হবে যার গায়ে ব্যাপ্টিস্ট লেখা নেই। ইতিহাসে আমি তাদের অনেক পাই কিন্তু বর্তমানে একটিও পাই না। এই মণ্ডলীসমূহ পরিত্রাণ সম্পর্কে যা বিশ্বাস করে এতেই তাদের অনেকের মধ্যে বড় পার্থক্য। তাদের মধ্যে অধিকাংশ অনুগ্রহের প্রতি কিছু যোগ করতে চেষ্টা করে। অথচ কেবল অনুগ্রহের দ্বারাই পরিত্রাণ।

আমাদের একটি ঐতিহ্য আছে। ব্যাপ্টিস্ট হিসাবে আমাদের কিছু গর্ব করার আছে। আমরা গর্ব করতে পারি এ কারণে যে আমরা ঈশ্বরের বাক্যের উপরে দাঁড়িয়ে আছি। এটি হলো সবকিছুর সংক্ষিপ্ত সার। আমরা কি পবিত্র বাইবেল বিশ্বাস করি অথবা করি না? যদি বাইবেল বিশ্বাস করি, তবে আসুন বাইবেল অনুসারে চলি। এমন কথা অন্যান্য ম-লী অবিশ্বাস্য হলেও বলে থাকে যে, “হ্যাঁ, আমরা বাইবেল বিশ্বাস করি। তবে এমন কিছু কিছু বিষয় আছে যা আমরা করতে চাই কিংবা কিছু বিষয় যুক্ত করতে চাই আর কিছু বাদও দিতে চাই। ঈশ্বরের বাক্যের সাথে যে একেবারেই লেগে থাকতে হবে এমনটা আমরা কখনো চাই না।” 

আপনি যদি কোনো মেথডিস্ট পালকের সঙ্গে কথা বলেন এবং জিজ্ঞাসা করেন কেন আপনি লোকদের উপরে জল ছিটান? তিনি আপনাকে বলবেন, এটি কাজের সুবিধার জন্য। যদি আপনি বলেন, শাস্ত্র জলে ডুবানোর বিষয় শিক্ষা দেয় কী? তিনি বলবেন “আমি জানি ও বুঝতে পারি সেটি সত্য; কিন্তু জল ছিটানো আরো সহজ। আমাদের বাপ্তিস্ম দেওয়ার জন্য বড় জায়গা তৈরি করতে হবে না এবং আমাদের ভিজতে হবে না। এটি বেশি সুবিধাজনক।” তারা আপনার কাছে স্বীকার করবে। তারা জানে বাইবেল কি বলে। কিন্তু তারা তাদের নিজেদের মতো চলে। আমরা কি এই পবিত্র গ্রন্থটি বিশ্বাস করছি অথবা আমরা পবিত্র গ্রন্থটি বিশ্বাস করছি না? এইটি শেষ বা চূড়ান্ত প্রশ্ন। যদি আমরা বাইবেল বিশ্বাস করি এবং তা অনুশীলন করি, আমাদের অধিকার আছে এজন্য গর্ব করার। আমি এর দ্বারা বুঝাতে চাচ্ছি না যে, আমরা বাইরে গিয়ে লোকদের থুথু দেব যারা আমাদের মতো বিশ্বাস করে না। তারা যেভাবে বিশ্বাস করে সেভাবে করার অধিকার তাদের আছে। আমি তাদের লাথি মারতে যাব না। আমি তাদের ভালোবাসব। সেই সঙ্গে আমি উপলব্ধি করব যে তারা শাস্ত্র অনুসারে চলে না। যদি আমরা একতা চাই, এই সমস্ত মণ্ডলীকে একত্র করতে চাই, যেমন তারা বলে থাকে, তাহলে আসুন ঈশ্বরের বাক্য অনুসারে আমাদের একতা হোক। তাহলে সেখান থেকে আমরা একত্রে চলতে পারব। আমাদের একটি উত্তরাধিকার আছে। আমরা সে কারণে গর্ব করতে পারি। আমি একজন ব্যাপ্টিস্ট সেজন্য আমি গর্বিত। 








Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?