বিশ্ব পরিসংখ্যানে খ্রীষ্টিয়ানরা সবচেয়ে বেশী হলেও, যীশু খ্রীষ্টের পরিসংখ্যানে সবচেয়ে কম (Matthew 22:14)


বিশ্বের
পরিসংখ্যানে খ্রীষ্টিয়ানরা সবচেয়ে বেশী হলেও, যীশু খ্রীষ্টের পরিসংখ্যানে সবচেয়ে কম।

আপনার নিশ্চয় মনে আছে যীশুর কথা . .
কারণ অনেকেই আহূত কিন্তু অল্পই মনোনীত

প্রত্যেকেই কি খ্রীষ্টিয়ান?

যদি কোনো খ্রীষ্টিয়ান পাড়ায় গিয়ে অত্যন্ত ২০ জনকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে তারা খ্রীষ্টিয়ান কি না।
কোনো দেরি না করে, কারো দিকে না তাকিয়ে এককথায় বলে
ফেলবেন - তারা খ্রীষ্টিয়ান। 

তাদেরকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় যে কেন বা কী এমন কারণ যে তারা খ্রীষ্টিয়ান।

ধরণের প্রশ্ন করায় তাদের উত্তর হবে ভিন্ন ভিন্ন ধরণের যেমন, . . 

আমি জন্মসূত্রে খ্রীষ্টিয়ান,
আমি কয়েক পুরুষে খ্রীষ্টিয়ান,
আমি অন্যদের মতো কনর্ভাট খ্রীষ্টিয়ান নই,
আমি খ্রীষ্টধর্মে দীক্ষিত হয়েছি,
আমি বাপ্তাইজিত,
আমি কম্যূনিয়ন অর্থাৎ খ্রীষ্টপ্রসাদ/প্রভুর ভোজে অংশগ্রহণ করি, উপবাস থাকি,
আমি পাদ্রী-পুরোহিতদের কাছে পাপ স্বীকার করি
আমি খ্রীষ্টিয়তত্ত্ব নিয়ে পড়াশুনা করেছি,
আমি মণ্ডলীর একজন সদস্য,
আমি মণ্ডলীকে সমর্থন করি,
আমি উপাসনায় যোগ দিই, সভা সমিতিতে নিয়মিত উপস্থিত থাকি, বিভিন্ন কর্মে অংশগ্রহণ করি, আমি সব সময়ই ভালো কিছু করতে চেষ্টা করি,”

এভাবে যুক্তি দেখিয়েএছাড়ও আরও অনেক কিছুতে তাদের খ্রীষ্টিয়ান বলে দাবি করতে শোনা যায়। 

এসব উত্তরের সবকিছুই শুনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বড় ঠিকঠাক মনে হলেও দুঃখজনকভাবে একটি বিশেষ বিষয় বাদ পড়ে যায় কিন্তু . .  

বিষয়টি হলো - যীশু খ্রীষ্টকে নিয়ে।

কেন আপনি খ্রীষ্টিয়ান?
খ্রীষ্টের বিষয়ে কী?
তিনি কেন এসেছিলেন?
তাঁর ক্রুশ তাঁর শূন্য কবরের বিষয়টা কী?
যীশুর গুরুত্বপূর্ণ বাণী কী

যীশু বলেছেন, . . 
কোনো মানুষের পুনরায় জন্ম না হইলে, সে ঈশ্বরের রাজ্য দেখিতে পায় না” (যোহন : পদ) 

কীভাবে লোকেরা বলতে পারে যে তারা খ্রীষ্টিয়ান আর তাদের মধ্যে অনেকে পাপ থেকে মন পরিবর্তন করেননি, ঈশ্বরের দিকে মন ফিরাননি, নরকের পথ থেকে খ্রীষ্টকে নিজের মুক্তিদাতারূপে গ্রহণ করেননি

এসব বাদ দিয়েই অনেকখ্রীষ্টিয়ানেরাতাদের ধর্মকর্মের বড়াই, পর্বাদি পালন, আর ভালো ভালো কর্ম করায় এমন সব চিন্তা করেন যে পবিত্র ঈশ্বর তাদের কোনো পাপ দেখেও দেখেন না। 

আমি খ্রীষ্টিয়ান” - কোন  সূত্রে বলছি আমি খ্রীষ্টিয়ান!

মনে পড়ে যে রাজা আগ্রিপ সাধু পৌলকে কী বলেছিলেন? . .
তুমি অল্পেই আমাকে খ্রীস্টিয়ান করিতে চেষ্টা করিতেছ?”  প্রেরিত ২৬:২৮ পদ।

এখন প্রশ্ন হলো . . কতোক্ষণেখ্রীষ্টিয়ান”, এর মানে কতোটুকু সময়ে খ্রীষ্টিয়ান হওয়া?

খ্রীস্টিয়ানকথাটা পবিত্র বাইবেলে মাত্র তিনবারই উল্লেখ করা হয়েছে।
আন্তিয়খিয়াতেই সর্বপ্রথম শিষ্যদের বিশ্বাসীদেরখ্রীষ্টিয়াননামে ডাকা হয় (প্রেরিত ১১:২৬ পদ) উপহাস করেই খ্রীষ্টের অনুসারীদের এইখ্রীষ্টিয়াননামে ডাকা।
এখানে বিশ্বাসীদের বিদ্রুপ করেই খ্রীষ্টের অনুসারী বলা হয়েছে।

কিন্তু অবিশ্বাসীদের এই চাপিয়ে দেওয়া দুর্বহ নামকে তারা মহা আনন্দের সাথে গ্রহণ করেন। 

আর আজ পর্যন্ত খ্রীষ্টের অনুসারীরা সারা পৃথিবী জুড়েখ্রীষ্টিয়ান” নামেই পরিচিত।

দ্বিতীয়বারখ্রীষ্টিয়ানকথাটা আমরা - প্রেরিত ২৬:২৮ পদে দেখতে পাই। 

রাজা আগ্রিপ্প বিদ্রুপ করে বলেছেন যে, পৌল তোমার সাক্ষ্য এতই হৃদয়স্পর্শী যে, আমিও প্রায় কেঁদে ফেলেছি। তুমি আমাকে তো প্রায় খ্রীস্টিয়ান বানিয়েই ছাড়লে। 

এটা স্বীকার করতে হয় যে, আগ্রিপ ব্যঙ্গ করেই কথাটা বলেছেন। 

তিনি যা বুঝাতে চেয়েছিলেন : তা হলোতুমি কি মনে কর তোমার যুক্তিতর্ক আমাকে বিশ্বাসী করতে পারবে?”

তৃতীয় এবং শেষবার এইখ্রীষ্টিয়ানকথাটা দেখতে পাওয়া যায় পিতরের পত্রে।
এখানে সাধু পিতর বলেছেন, . .
কিন্তু যদি কেহ খ্রীষ্টিয়ান বলিয়া দুঃখভোগ করে, তবে সে লজ্জিত না হউক; কিন্তু এই নামে ঈশ্বরের গৌরব করুক” ( পিতর :১৬ পদ) 

পিতরের সময়ে খ্রীষ্টিয়ান হওয়ার অর্থই হলো দুঃখভোগ করা। 

প্রাথমিক মণ্ডলীতে খ্রীষ্টিয়ান নামটার যে অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, বর্তমানে সব জায়গায় সে অর্থে কিন্তু নামটা ব্যবহৃত হয় না। 

তখন এর অর্থ ছিলখ্রীষ্টের অনুসারী” 

বর্তমানে যারা খ্রীষ্টিয়ান পরিবারে/সমাজে জন্মগ্রহণ করেছে তারাই নিজেদের খ্রীষ্টিয়ান হিসাবে দাবি করেন। 

এছাড়াও জগতে এমন এক ধারণা আছে যে, কেউ যদি মুসলিম, হিন্দু কিংবা বৌদ্ধ ধর্মের না হয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই তিনি খ্রীস্টিয়ান হবেন। 

আবার বাইবেলের নামের পরিচয়েও খ্রীষ্টিয়ান ভাবা হয়।

পবিত্র বাইবেলের ভিত্তিতে খ্রীষ্টিয়ান হওয়া সম্পূর্ণ অন্য রকম। 

দিক থেকে যিনি পাপ থেকে, অবিশ্বাস থেকে, পূর্বের কোনো ধর্মকর্ম থেকে, ঈশ্বরের বিপরীত থেকে ঈশ্বরের দিকে মন ফিরিয়েছেন আর প্রভু যীশু খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে নতুনজন্ম লাভ করেছেন, কেবল তিনিই নিজেকে খ্রীষ্টিয়ান হিসাবে দাবি করতে পারেন। 

ফলতঃ কেহ যদি খ্রীষ্টে থাকে, তবে নূতন সৃষ্টি হইল; পুরাতন বিষয়গুলি অতীত হইয়াছে, দেখ, সেইগুলি নূতন হইয়া উঠিয়াছে” ২ করিন্থীয় ৫:৭ পদ

এতে কোন্ পরিবারে আপনি জন্মগ্রহণ করেছেন বা আপনার পরিবার কতো পুরুষ ধরে খ্রীষ্টিয়ান তাতে কিছুই আসে যায় না। 

আপনি যদি ব্যক্তিগতভাবে অনুসরণ করতে, . .  
যীশুকে ঈশ্বরের পুত্র বলে বিশ্বাস না করে থাকেন,
খ্রীষ্টকে আপনার মুক্তিদাতা বলে গ্রহণ না করে থাকেন,
যীশু খ্রীষ্টকে আপনার
একমাত্র প্রভু বলে গ্রহণ না করে থাকেন
তাহলে আপনি নামধারী খ্রীস্টিয়ান, প্রকৃত বিশ্বাসী নন।

যারা খ্রীষ্টের শিষ্য তারাই খ্রীষ্টিয়ান – প্রেরিত ১১:২৬ পদ
যারা খ্রীষ্ট বিশ্বাসী তারাই খ্রীষ্টিয়ান – প্রেরিত ৫:১৪ পদ
যারা আত্মিকভাবে নতুন জন্মগ্রহণ করেছেনযোহন ৩:৩ পদ
যারা জগতে প্রবাসী বলে বুঝতে পেরেছেন তাদের পরিচয়ই খ্রীষ্টিয়ান – ১ পিতর ২:১১ পদ

এখন কেন যীশু বলেছেন কারণ অনেকেই আহূত কিন্তু অল্পই মনোনীত মথি ২২:১৪ পদ

পরিত্রানের আহ্বান সবার জন্যই, তবুও অল্প সংখ্যক লোক ঈশ্বরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাদের পাপ সম্পর্কে অনুতপ্ত হয়ে, খ্রীষ্ট বিশ্বাস স্থাপন করে ঈশ্বরের রাজ্যের অধিকারী।
ঈশ্বরের অনুগ্রহের আহ্বানে সাড়া দেয়া স্বাধীন ইচ্ছার বিষয়।
আমাদের ইচ্ছাই আমাদেরকে ঈশ্বরের লোক হিসাবে মনোনীত করতে পারে বা নাও করতে পারেন।।

তাই সতর্কতার সাথে নিজের বিষয়ে চিন্তা করতে হবে, যে কোন্ অবস্থায় আর কেন নিজেকে খ্রীষ্টিয়ান বলে দাবি করা হয়।।

Comments

Popular posts from this blog

উপবাস - বাইবেলের আলোকে উপবাস

প্রতিমা পূজা এমনকি মূর্তি সম্পর্কে বাইবেল কী বলে? What does the Bible says about idolatry or even image?

ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন?